Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৮

 
ডিসেম্বরের শীতের সকাল , এই সময় ঘুম থেকে উঠতে রানীর বড্ড কষ্ট হয় । আগে রাজীব ডেকে তুলতো এখন আর ডাকে না। তাই প্রথম প্রথম কয়েকটি ক্লাস মিস হয়ে গেছে রানীর । এর প্রতিকার হিসেবে রানী দুটো ঘন্টা বাজানোর ঘড়ি কিনে এনেছে। সাথে তো মোবাইল আছেই ।
 
তাতেও রানীর হয় না , ঘুম ভাংলেও কম্বলের ওম ছেড়ে  উঠতে ইচ্ছে হয় না । তাও কোনরকম নিজেকে টেনে হিঁচড়ে তোলে । তুললে কি হবে , ঠাণ্ডা মেঝেতে পা ফেলতে ইচ্ছে হয় না । শীতল মেঝতে পা রাখলেই মনে হয় অসংখ্য সূচ পায়ের তালুতে ঢুকে একদম মস্তিস্কে গিয়ে আঘাত করে । কিছুক্ষন আলসেমি করার পর রানী মেঝেতো পা রাখে । কিন্তু এর পরের কথা চিন্তা হতেই আর শরীর চলে না । এই সাত সকালে গোসল করার কথা ভাব্লেই রানীর ইচ্ছে হয় আবার কম্বলের নিচে ঢুকে যায় । শিকদার বাড়িতে গিজারের ব্যাবস্থা কোন বাথ্রুমেই নেই । আগে রাজীব গরম পানি এনে দিতো । এখন আর দিচ্ছে না , আর রানীর নিজের পানি গরম করার ও সময় থাকে না । এখন গরম পানি করতে গেলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে ।
 
তাই রানী শীতের সকালে গোসল নামক যুদ্ধে গরম পানির রক্ষা কবজ ছাড়াই ময়দানে নেমে পরে । প্রথমেই শাওয়ারের নিচে দাড়ায় না । বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় হাত ছোঁয়ায় , তারপর পা , তারপর মুখে পানি দেয় । তারপর ধিরে ধিরে হাতে পানি নিয়ে শরীরে মাখায় তারপর শোয়ারের নিচে দাড়ায় । এতো কিছু করেও শেষ রক্ষা হয় না , সুচের মত এসে বিঁধে প্রতিটি ফোঁটা । ছিটকে বেড়িয়ে আসে শাওয়ারের নিচ থেকে । আবার দাড়ায় , আবার ছিটকে বেড়িয়ে আসে , এভাবে কয়েকবার পানির সাথে লুকুচুরি করার পর রানীর শরীরের তাপমাত্রা পানির তাপমাত্রার সাথে ম্যাচ করে যায় । ধোয়া ওঠা শীতল পানিতে গোসল সেরে বাথরুম থেকে বেরুতেই আবার আরেক প্রস্থ ঠাণ্ডা ওকে কাবু করে ফেলে । হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে দেয় ।
 
সারা শরীরে ময়েসচারাইজ্র লোশান লাগানোর পর শরীর আরো কিছুটা গরম হয় , এর পর হালকা প্রসাধনি ব্যাবহার করে , একটা সাদা লেগিন্স আর ব্রাউন ওয়ান পিস বেছে নিয়ে পরে ফেলে । ওড়নাটা গলায় কয়েক প্যাচ দিয়ে বুকের কাছে জড় করে , তারপর পশমি কারডিগ্যান উপরে চাপিয়ে নেয় ।
 
আজকাল সাজগোজের দিকে মনোযোগ কমে গেছে রানীর । না সুধু জয়ের জন্য নয় , এমনিতেও মন ভালো থাকে না , তার উপর পড়াশুনার চাপ ও আছে । অবশ্য এর জন্য রানী নিজেকেও কিছুটা দায়ি করে । ওর দোষ হচ্ছে কিছু মানুষকে নিজের পাওন ভাবা । এর মাঝে এক নাম্বারে রয়েছে রাজীব , দুই নাম্বারে জান্নাত ।
 
আজকাল রানী প্রায় ই দেখে জান্নাত আর রাজীব নিজেদের মাঝে কি নিয়ে যেন খুব আলোচনা করে । অনেক সময় এক সাথে কাটায় । এমন নয় যে ওরা রানী কে সাথে থাকতে নিষেধ করে , কিন্তু ওদের আঁচার আচরণে মনেও হয় না যে ওরা ওই মুহূর্তে ওকে  ওদের মাঝে চাইছে ।
 
রানী প্রথমে ভেবেছিলো রাজীব আর জান্নাতের মাঝে কোন চক্কর চলছে । সিমটম গুলো সেদিকেই ইংগিত করতো । রানী আশ্চর্য হতো এই ভেবে , জান্নাতের মত একটা প্রাক্টিকাল মেয়ে রাজীবের সাথে। কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইতো না । তবুও মেনে নিয়েছিলো রানী । এবং এই ভেবে আশ্বস্ত হয়েছিলো যাক ওরা ওদের মত সময় কাটাক । কিন্তু পরে যখন জানতে পারলো যে ওরা দুজনে মিলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কি যেন করছে , তখন রানীর খুব রাগ হলো । মনে মনে ভাবলো ,ওকে একবার বলার ও প্রয়োজন মনে করলো না? এভাবে রাজীব আর জান্নাত মিলে ওকে অবজ্ঞা করলো ?
 
সেই থেকে রানী ওই দুজনের কাছ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে দূরে সরিয়ে রাখে ।  রাজীব কে তো মুখেই বলে দিয়েছে , কিন্তু জান্নাত কে মুখে কিছু বলেনি , তবে আচরণে বুঝিয়ে দিয়েছে । রানী ভাবে ওরা যদি ওকে বাইরের মানুষ মনে করতে পারে , তাহলে ও কেনো পারবে না ? আলবৎ পারবে ।
 
তবে মাঝে মাঝে রানীর নিজেকে খুব একা লাগে , হ্যা ওর নতুন অনেক বন্ধু হয়েছে , কিন্তু সেই ছেলে বেলা থেকে একসাথে ওরা চারজন । সেই টান কাটিয়ে উঠতে পারে না । তখন খুব মন খারাপ হয় । সেই মন খারাপ ধিরে ধিরে অভিমানে রুপ নেয় । বেশি অভিমান হয় জান্নাতের উপর । রাজীবের সাথে না হয় একটা মনমালিন্য হয়েছে ওর , কিন্তু জান্নাতের সাথে তো কিছুই হয়নি। জান্নাত কেনো এমন করছে ।
 
রানী হেটে হেটে গলির মুখে আসে , আজকাল ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা অটো মেইন রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে । তাই রিক্সা পেতে বেশ সমস্যা হয় । বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে রানী রিক্সা পায় । পায়ে চালিত রিক্সা অনেক সময় লাগে । সি এন জি অটো পেলে ভালো হতো । কিন্তু তেমন একটা পাওয়া যায় না আর ওদের ব্যাবহার ও ভালো না । বিশেষ করে একা মেয়ে মানুষ পেলে যাচ্ছেতাই আচরণ করে । জান্নাত সাথে থাকলে অবশ্য এসব ব্যাপার জান্নাত ভালো ট্যাকল করতে পারে ।
 
টুক্টুক করে রিক্সা চালাচ্ছে বৃদ্ধ লোকটা , তবুও শীতের শুষ্ক বাতাস এসে বিধছে মুখে । কিছুক্ষন পর রানী নিজের নাকের অস্তিস্ত আর টের পায় না । তাই বুকের কাছে জমানো ওড়নার কিছু অংশ দিয়ে নাক ঢাকে । আর তখনি একটা বাইক সাঁ করে বেড়িয়ে যায় রানীর রিক্সার পাশ দিয়ে । কালো লেদার জ্যাকেটে জয়ের পিঠ ত্রিশ সেকেন্ডের মত দেখতে পায় রানী । মনটা আর বেশি বিষণ্ণ হয়ে ওঠে । একাকীত্ব আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে । রানী এমন একাকীত্ব জীবনে আর কোনদিন অনুভব করেনি । মনে মনে ভাবে আমার মাঝেই কোন কমতি আছে নিশ্চয়ই নয় তো একে একে সবাই কেনো আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে । 

****


ক্লাসে রানীর মন বসে না , ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ও তেমন ভাবে নিজেকে ইনক্লুড করতে পারে না । এতো মানুষের মাঝে থেকেও নিজেকে কেমন যেন একা একা লাগে ।  চুপচাপ এক কোনে বসে থাকে । বসে বসে নিজের একাকীত্ব নিয়েই চিন্তা করতে থাকে ।
 
এই রানী চুপচাপ কেনোগ্রুপের একটা ছেলে ওর পাশেই এসে বসে একটু নিচু স্বরেই জিজ্ঞাস করে , যেন বাকিরা শুনতে না পায় । হঠাত চিন্তা থেকে বের হয়ে রানী একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে । বিশেষ করে ছেলেটি প্রায় ওর গা ঘেঁষে বসেছে বলে । রানী নিজেকে একটু সরিয়ে নিতে চায় , কিন্তু পারে না , কারন ওর পাশে পায়েল বসে আছে । রানী ছেলেটির দিকে তাকায় , নাম আবরার , ওদের সাথেই ক্লাস করে , ইদানিং ওদের সাথে একটু বেশি মিশছে ।
 
নাহ এমনিরানী সামান্য সৌজন্য হাসি হেসে বলে ।
 
না না আমি বেশ কিছুদিন যাবত দেখছি তুমি কেমন মন মড়া থাকো, কোন সমস্যা?” ছেলেটির গলায় ওর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ পায় ।
 
আরে না , কিসের সমস্যা রানী হেসে আবরার কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে ।
 
সমস্যা থাকলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো, আরে বন্ধুরা আছে কি কাজে যদি সমস্যা না শেয়ার করতে পারোআবরার বেশ গায়ে পরা ভাব দেখায় । রানী একটু বিরক্তই হয় , তবে সেটা প্রকাশ করে না ।  মনে মনে ভাবে, গায়ে পরা ছেলে তো , চিনি না দুদিন হলো এসেছে সমস্যা শেয়ার করতে ।  
 
নাকি তুমি আমাকে বন্ধুই ভাবো না , দেখো আমি কিন্তু তোমাকে বন্ধু ভাবি , যাদের সাথে আমি মিশি, একদম মন থেকে মিশি , তাই তোমার কাছে আমার আচরন গায়ে পরা মনে হতে পারে, আসলে তেমন কিছু নয়আবরার ক্যাজুয়ালি বলে ,
 
রানী বেশ লজ্জায় পরে যায় , ও ভাবে ওর আচরণ কি এতটাই অভিয়াস ছিলো , যে আবরার বুঝে ফেললো । মনে মনে ভাবে ছি ছি ছেলেটা কি ভাববে , তাই তারাতারি বলে আরে না তেম্ন কিছুই না , একটু ডিস্টারবড আছি এই যা,”
 
তুমি চাইলে আমরা একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে পারিআবরার যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ই ছিলো ।
 
রানী মনে মনে প্রমাদ গোনে , ভাবে সুযোগ করে দিলো ও নিজেই । এই ছেলে এই কথা শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলো । না মানে আমার…” কথা শেষ করতে পারে না রানী । পাশ থেকে পায়েল বলে ওঠে , “ আরে যা না , দুটো সুখ দুঃখের কথা বলেই না হয় আয় , আমরা কি তোর মতন যে কারো ভালো দেখতে পারবো না ,আমরা কিছুই মনে করবো না
 
পায়েল কথা গুলো সবাইকে শুনিয়েই বলে , আর সবাই এই শুনে হা হা হি হি করতে শুরু করে দেয় । রানী আবরারের দিকে তাকায় , মিট মিট হাসছে । রানীর কাছে মনে  হয় এটা আবরার আর পায়েলের প্রি প্ল্যান করা ছিলো । রানী এখন চাইলে উঠে যেতে পারে , কিন্তু সেটা কি ভালো দেখাবে ? মনে মনে ভাবে রানী ।
 
রানী উঠে দাড়ায় , মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় , অল্প কিছু কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে আবরার যা চাইছে তা হবে না এখানে ।
 
কিছুটা দূর গিয়ে দাড়ায় রানী , আবরার ও এসে পাশে দাড়ায় , রানী কিছু বলে ওঠার আগেই আবরার বলে ওঠে দেখো তুমি বুঝে গেছো আমি এই ব্যাপারটা পায়েলের সাথে প্ল্যান করে করেছি , এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি , আসলে অনেক দিন যাবত তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি , তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে এই কাজ করেছি , আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, আমি আশা করবো আমার এই আচরণ দিয়ে আমাকে বিচার করবে না, এটা ছিলো শেষ চেষ্টা”  
 
রানী এর উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না , নিজেই নিজের দোষ শিকার করে ফেললে আসলে বলার কিছুই থাকে না , রানী দু হাত বুকের কাছে ভাজ করে দাড়িয়ে জিজ্ঞাস করে ওকেবুঝতে পারলাম , তা কিসের জন্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণের এতো চেষ্টা , তাছাড়া একা কথা বলার ই দরকার কেনো? আর এতোবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও যখন ব্যারথ হয়েছো , তখন তো বুঝে যাওয়ার কথা আমি হয়তো ইন্টারেস্টেড নই।”    কথা গুলো বলার সময় রানীর কণ্ঠ বেশ কঠিন শোনায় , এতটা কঠিন ভাবে রানী নিজেও বলতে চায়নি ।
 
তার আগে একটা কথা বলি , কিছু মনে করো না আবরার অনুমতি চাওয়ার মত করে বলল । রানী কিছু বলল না ,  চুপ করেই রইলো ।
 
আর আবরার সেই চুপ থাকা কে রানীর সম্মতি ধরে নিয়ে বলল তোমার ব্যাপারে আমার একটা অব্জারভেশন আছে , সেটা হচ্ছে তুমি যে আমার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড নও এমনটা কিন্তু  নয়।
 
মানে?” রানী বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাস করলো । মনে মনে ভাবে- এই ছেলে বলতে চায় কি ? সে কি নিজেকে জ্যোতিষ ভাবে নাকি , যে ওর মনের কথা সব বুঝে ফেলেছে এমন ভাব নিচ্ছে । আর এই কথা বলে কি ছেলেটা বলতে চাইছে যে ওর কোন আচরনে ছেলেটা বুঝতে পারেছে , যে ও এই ছেলের প্রতি ইন্টারেস্টেড ।
 
আমি বলতে চাচ্ছি ইন্টারেস্টেড হওয়ার জন্য আগে তো আমাকে নোটিস করতে হবে , তুমি আমাকে নোটিস ই করোনি। সুধু আমাকেই নয় , এই যে তুমি আমাদের সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছ , ঘুরে বেড়াচ্ছ , কিন্তু তুমি যেন এখানে থেকেও নেই । তোমার মন অন্য কোথাও আছে , তোমাকে যে একটু খেয়াল করবে সেই বলে দিতে পারবে তুমি খুব একাকি বোধ করছো”   
 
রানী আবরারের দিকে তাকায় , বেশ ভালো করেই তাকায় । এর আগেও যে দেখেনি এমন নয় , ক্লাসের সময় দেখছে , ক্যাম্পাসে হাটাচলার সময় দেখছে । তা ছাড়া বেশ কিছুদিন যাবত একি সার্কেলের সাথেই দুজন আছে । কিন্তু আজকের মত ভালো করে কোনদিন তাকায়নি । ছেলেটির চেহারায় এমন কোন বিশেষ কিছু নেই যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে , খুবই সাধারন ছেলে , মাঝারি উচ্চতা , গায়ের রং শ্যামলা । পরনে ফুল স্লিভ চেক সার্ট আর জিন্স , পায়ে স্যান্ডেল । তবে চোখ দুটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ।   
 
এক মুহূর্তের জন্য রানীর মুখের রেখা গুলো নমনীয় হয়ে আসে । মনে মনে ভাবে - ছেলেটি তো সত্যি কথাই বলেছে । কিন্তু আবার চেহারায় একটা কঠিন ভাব ফিরিয়ে নিয়ে আসে , আবরার ওর সাথে কথা বলার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছে সেটা এখনো ওর কাছে জাস্টিফাইড নয় ।
 
তুমি কি সবার ব্যাপারেই এমন চিন্তা ভাবনা করো নাকি?”  রানী একটু খোঁচা মেরে জিজ্ঞাস করে
 
আবরার হাসে , বলে নাহ , সবার ব্যাপারে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করার সময় বা সাধ্য দুটোর একটাও আমার নেই , তবে কিছু মানুষ আছে যারা তাদের নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে
 
বাহ খুব সুন্দর বললে তো , তোমাকে বাধ্য করে !!! তা আমার তো মনে পরছে না আমি কোনভাবে তোমাকে বাধ্য করেছিরানীর গলায় ওর রাগের তেজ ফুটে ওঠে ।
 
না না আমি ওভাবে বলিনি , আসলে তোমাকে দেখে খুব বিষণ্ণ আর একা একা মনে হয় তাই……”
 
শোন আবরার , তুমি আমাকে যেভাবে এখানে আসতে বাধ্য করেছো , তারপর ও অনেক সময় তোমার সাথে কথা বলেছি , আমার এখন যেতে হবে, আর একটা কথা শুনে রাখো আমি বিষণ্ণ ও নই একাও নই , আর নিজের অব্জারভেশন ক্ষমতার উপর বিশ্বাস একটু কমাও রানী আবরার কে বাকি কথা না বলতে  দিয়ে , খুব কঠিন স্বরে এই কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় ।
কিন্তু আবরার পিছু ছাড়ে না , “ আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত , চলো তোমাকে রিক্সা করে দেই , আমার শাস্তি হচ্ছে তোমাকে রেকর্ড পরিমান কম ভারায় আজকে রিক্সা করে দেবো , আমি রিক্সা ভাড়া করার ক্ষেত্রে ওস্তাদ লোক
 
রানী না চাইতেও ওর মুখে একটা হাসি চলে আসে । হাটা থামিয়ে আবরারের দিকে তাকায় , ছেলেটা বেশ বেহায়া , মনে মনে ভাবে। তারপর বলে এটা কি তোমার আরো কোন টেকনিক? মানে আমার ঠিকানা জোগাড় করছো?”
 
আমি তোমার ঠিকানা জানি , সুধু আমি না ক্লাসের ৫০ ভাগ ছেলে তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে”  আবরার এমন ভাবে বলল যেন এটা কোন ব্যাপার ই নয় ।
 
কি বলছো এসব রানী চোখ প্রায় কপালে তুলে ফেলে , ওর ক্লাসের ছেলেরা যাদের সাথে ওর রোজ দেখা হয় , এক রুমে বসে ক্লাস করে , ওরা চুপি চুপি ওর বেক্তিগত ইনফরমেশন কালেক্ট করছে !!!, ব্যাপারটা ভাবতেই রানীর শরীরে কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি হয় । অনেকটা এমন যেন শত শত চোখ ওর পেছন পেছন ঘুরছে ।  
 
যা সত্যি, তাই তো বললাম
 
তুমি তো আমার ক্লাসে আসা বন্ধ করে দেবে, তুমি তো ডেঞ্জারাস ছেলে”  
 
আরে না এসব নিয়ে ভেবো না , এসব খুব নিরীহ কৌতূহল , এটা সবখানেই হয়, এদের মাঝে কেউই তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে না ”
 
“কেনো?” রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে , তবে জিজ্ঞাস করেই রানী বুঝতে পারে , এই কেনোর উত্তর ওর জানার ইচ্ছা নেই , জেনেও ওর কোন কিছু আসবে যাবে না ।
 
“ কারন ওদের এক্সপেকটেশন খুব হাই , তাই ওদের ভয় হয় , আর আমার এক্সপেকটেশন কম হওয়ায় , আমার ভয় নেই , তাই আমি এসে দাঁড়িয়েছি “
 
 
আবরারের কথা রানীর মাথায় ঢোকে না , রানী জিজ্ঞাস করতে যাবে , কিসের এক্সপেকটেশন , তার আগেই আবরার আবার বলে প্লিজ এখন জিজ্ঞাস করো না , কিসের এক্সপেকটেশন , তাহলে আমার ও বিপদ তোমার ও বিপদ
 
বিপদে পরার ইচ্ছা আমার নেইবলে রানী হাসে ।
 
কিছুক্ষনের মাঝেই আবরার রানীর জন্য রিক্সা ঠিক করে ফেলে , একদম সঠিক ঠিকানা দিয়ে দেয় । তবে ভাড়া অন্যদিনের চেয়ে দশ টাকা বেশি ।
তুমি না খুব এক্সপার্ট ?”
 
মিথ্যা বলেছি , কারন এই মিথ্যা না বললে তুমি এখনো রেগে থাকতে আর আমি এই পর্যন্ত তোমার সাথে আসতে পারতাম নাআবরার হাসতে হাসতে বলে ।
 
রানীও হাসে , মনে মনে ভাবে সত্যিই বলেছে । আবরারের ওই কথাটা ওর রাগ কিছুটা কমিয়েছে ।
 
এটা হলো একটা টেকনিক , এর মদ্ধমে রাগের বিপরীত শক্তি দিয়ে রাগান্বিত ব্যাক্তিকে আঘাত করা হয়…”
 
হয়েছে হয়েছে আমি এই টেকনিক শিখতে চাই না, আচ্ছা আসিরানী হাসতে হাসতে বলে , টেকনিক যাই হোক কাজ করেছে । এই ছেলের উপর রানী আর এখন রেগে নেই ।
 
এক মিনিট রানী ,  আবার কি কথা হবে ? “ আবরারের কণ্ঠে ডেস্পারেসন স্পষ্ট বোঝা যায় ।
 
আমি জানি না আবরার , তবে এটা জানি তোমার চাওয়া সে যত কম ই হোক , সেটা পুরুন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি চাইলেও পারবো না”  রানী বিষণ্ণ চোখে আবরারের দিকে তাকায় , আসলে ছেলেটির জন্য ওর মায়া ই হচ্ছে । ওর জন্য একজন মানুষের চাওয়া অপূরণ থেকে যাবে । এই কথটা রানীকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে । কিন্তু ওর করার ও কিছু নেই ।
 
আবরারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , “ রানী তুমি বুঝতেই পারোনি আমার এক্সপেকটেশন কম বলতে আমি কত কম বুঝিয়েছি , এই যে তুমি বললে , তুমি জানো না , এই অনিশ্চয়তার মাঝেও আমি আশা দেখতে পাই, বাই রানী আবার দেখা হবেবলে আর আবরার দাড়ায় না । রানী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আবরারের চলে যাওয়ার পথে । মনে মনে ভাবে , হঠাত করেই একটা ছেলে কোথা থেকে এসে ওর মনের অবস্থা গড়গড় করে বলে দিয়ে গেলো অথচ ওর কাছের মানুষ গুলো বুঝতেই পারছে না । অসুস্থ অবস্থায় একটা ভুলকে জয় আজো মাফ করতে পারলো না । জয় কি একবারের জন্যও ওর মুখের দিকে তাকায়নি । জয় কি আবরারের মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর একাকীত্ব টের পায় না, ওর কষ্ট বোঝে না ।
 
**** 

 
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 12-10-2025, 06:59 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)