11-10-2025, 06:13 PM
তারপর কেটে গেছে কয়েক মাস।
এই সময়ের মধ্যে মধুমিতা দিহানের সঙ্গে কোনো রুপ যোগাযোগ রাখে নি—না কোনো ফোন, না কোনো টেক্সট। মধুমিতা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছে ওকে।
মধুমিতা কেন এমন করছিল, ত নিজেই ঠিক বলতে পারে না।
গত কয়েক সপ্তাহ এমন অনেক কাজই ও করেছে, যার অর্থ ও নিজেই খুঁজে পায়নি এমন সহস্র চিন্তা ওর মাথায় এসেছে যেগুলোর কোনো তাৎপর্য নেই। শুধু একটা অজানা তাড়না ওকে চালিয়ে নিয়ে গেছে।
সেই তাড়না যেটা ওকে ভেতর থেকে পীড়া দিচ্ছিলো, ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল ওর হৃদয়। সেই রাতে রিতমের সাথে কথা বলার পর থেকেই মধুমিতা চাঁপা অস্থিরতা অনুভব করছিলো, মনে হচ্ছিলো ওর ভেতরে জ্বলতে থাকা এই আগুনকে নেভাতে হবে, দমন করতে হবে লালসাকে, আর এই যে বাড়তে থাকা কাম যা গ্রাস করে নিচ্ছে ওকে এটাকে থামাতেই হবে।
মধুমিতার উদ্দেশ্য ছিলো ধোঁয়া ধোঁয়া, চিন্তা ভাবনা অগোছালো, এলোমেলো–কি করবে, কি করবে না এগুলো ভেবেই দিন কেটে যায়। কিছুই নির্ধারণ করতে পারছিলো না ও। সারাদিন অদ্ভুত এক অস্থিরতায় ভুগছিলো।
দিহানের সাথে যবে থেকে সম্পর্কে গেছে সেদিন থেকেই ওর এমন হচ্ছে। জীবন নিয়ে ভাবতে বসলেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে মধুমিতা। তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। বিকেল গুলো এতো ম্লান হয়ে যায় তখন, রাত গুলো এতো অসহনীয় অনুভূত হয় যে সবকিছু নিষঙ্গ আর নির্জন বোধ হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে মধুমিতার, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বদ্ধ পাখির মতো ছটফট করে চারদেয়ালের ঘরে।
তবে এর বিপরীত অনুভূতিও আছে, সেহলো দিহান
দিহানের কথা ভাবলেই ওর বুকের ভেতর মিষ্টি মৃদু শিহরণ বয়ে যায়, রক্তে জাগে কামনা, সারা শরীরে এমন এক ভালোলাগা কাজ করে যে অস্থির হয়ে যায় ও, হৃদকম্পন বাড়তে থাকে নিঃশ্বাস ভারী হয়।
দিহান এ কদিনে প্রায় প্রতিদিনই ফোন করতো, তবে মধুমিতা কোনো ফোন রিসিভ করে নি। একদিন মধুমিতা ওকে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছিলো, "এই সম্পর্ক আমার পক্ষে টেনে নেওয়া সম্ভব না।
আমার মন ভেতর থেকে সায় দিচ্ছে না, দিহান। এটা অবৈধ। আমরা নিজেদের জীবন সঙ্গীকে ঠকাচ্ছি। আমি আর রিতমকে ঠকাতে পারবো না। আর এটা সমাজের চোখেও ঘৃণ্য। আমি আর সেই পথে হাটবো না।” মধুমিতা আরো বলেছিলো, "এই সম্পর্ক আর নিয়ে ভাবতে পারবো না। আমাদের মধ্যে শালাজো-নন্দাই সম্পর্কই বজায় থাক। তুমি ও আর এই সম্পর্ক নিয়ে ভেবো না।” ওর কন্ঠ স্বর ছিল শান্ত, তবে বেশ দৃঢ়তা ছিল সেই কন্ঠে?
উত্তরে দিহান কিছু বলে নি, তাই ওর মনোভাব বোঝা যায় নি, ফলে বিভ্রান্ত হয়েছে মধুমিতা। কিন্তু তাই বলে মধুমিতার কথায় দিহান থেমে যায় নি, দিহানের মতো পুরুষরা থেমে যায় না। মধুমিতার অপরাধ বোধ হবে বলে দিহানেরও হবে এমন কোনো কথা আছে? মধুমিতা থামতে বললেই থামতে হবে?
বরাবরের যে হরিণ ক্ষেকো বাঘ হঠাৎ একদিন মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়ে যায় এবং ঘন ঘন সে স্বাদ পেতে থাকে, সে মানুষের মাংস আরো বেশি করে পেতে চাইবে আর তা কিভাবে আরো বেশি করে পাবে তার ফন্দি বের করবে, প্রয়োজনে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে, অপেক্ষা করবে রাতের অন্ধকারের জন্য। দিহানও তাই করছিলো। ও মোটেও মধুমিতাকে ছেড়ে দিতে রাজি ছিলো না। আসল দিহান মধুমিতার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল, মধুমিতার সাথে এই নিষিদ্ধ সম্পর্কে ওর খুব রোমাঞ্চ হচ্ছিলো বিশেষ করে ওদের গোপন মেলামেশা, এটা সবচেয়ে উত্তেজক। মধুমিতার মতো সুন্দরী নারীর সাথে এমন একটা অবৈধ সম্পর্ক করতে পেরে নিজের পৌরুষও খানিকটা গর্বিত ছিলো।
তাই দিহান ফোন করতো, মেসেজ দিতো প্রতিদিন, যদিও মধুমিতা একটারও উত্তর দিতো না।
এদিকে রিতমের সঙ্গে সম্পর্কটা আবার ঠিক করার চেষ্টা করছিল মধুমিতা। ফোন করার সংখ্যা, কথা বলার সময় সব বাড়িয়ে দিয়েছিলো। রিতমের সাথে প্রাণ খুলে হাসতে চাইতো ও, তবে পারতো না। জানি না কেন, ওর ভেতর থেকেই সে ভাবটা আসতো না, ফাঁকা মনে হতো।
দিহানের সঙ্গে কথা বলার সময় যে উত্তেজনা, যে অজানা আলোড়ন ওর বুকের ভেতর জেগে উঠতো, রিতমের সঙ্গে তেমন কিছুই হতো না। স্বামীর সঙ্গে কথা বলা কেমন যেন যান্ত্রিক লাগতো, কখনো ক্লান্তিকরও, যেন জোর করে করা। আর এই জিনিসটা মধুমিতাকে আরো অশান্ত করে দিতো।
উল্টো দিকে, দিহানের জন্য মন কেমন করছিলো ওর। ওকে ভুলতে পারছিলো না। ও যত চাইছিল দিহান ভুলতে দিহান তত বেশি করে প্রকট হচ্ছিলো।
সেদিনের সেই অভিসারের প্রতি মূহুর্তের প্রতিটি ঘটনা, কার্যকলাপ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। দিহানের সেই সুগঠিত-সমর্থ শরীর, ঘামে ভেজা আর নগ্ন, সেই দিন দেখেছিলো মধুমিতা, পেছন থেকে, যখন চার হাত পায়ে ভর দিয়ে ডগি হয়েছিলো ও।
রান্নাঘরে কাজ করতে করতে কখন যে মনটা দূরে কোথাও হারিয়ে যেত, বুঝতেই পারতো না। আর মনের অজান্তেই দিহানের কথা ভেবে ফেলছিলো, রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে দিহানকে পাশে চাইতো, ওর আদর খাওয়ার বাসনায় রক্ত ফুটতো টগবগিয়ে।
মধুমিতা নিজেকে খুব শাসন করছিলো, মনে মনে বোঝাচ্ছিলো যে না দিহানের কথা আর ভাবা যাবে না। কিন্তু বোকা মধুমিতা এটা জানতো না, মন মানব শরীরের সবচেয়ে অবাধ্য ইন্দ্রিয়, মনকে নিয়ন্ত্রণ করা বড় মুশকিল। মধুমিতা যত মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো ওর বেহায়া মন তত দিহানের জন্য আকুল হয়ে পড়তো।
রিতমের বেলা সে মন নিষ্ঠুর, পুরোপুরি রিতম বিমুখ।
যেন মধুমিতা এখন একটা নদীর মোহনায় নৌকো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিভ্রান্ত আর দিশাহারা, ওর সামনে সেই নদীর দুটো প্রবাহ, কোন নদীতে নৌকো নিয়ে যাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছিলো না।
এই দোটানা কাটানোর জন্য মধুমিতা সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতো, পরিষ্কার ঘর বার বার পরিষ্কার করতো, তিন বেলার রান্না তিন বার করতো, শশুর শাশুড়ি কোনো কাজের জন্য অনুরোধ করলে খুশি হয়ে যেতো।
কিন্তু তার মধ্যেও দিহান যে ওর মনে ঢোকার কোন গোপন রাস্তা খুঁজে পেতো মধুমিতা বুঝতো না, নাহলে সেই রাস্তাটি ও নিশ্চয়ই বন্ধ করে দিতো।
দিনের বেলা মধুমিতা যেন তেন করে নিজেকে সামলাতে পারতো, রাত গুলো হয়ে পরতো ব্যাকুল করা। সহজে ঘুম আসতে চাইতো না। মাথার ভেতর একঝাঁক চিন্তা পোকার মতো গিজগিজ করতো। তারমধ্যে অস্থির অতৃপ্ত শরীরতো আছেই। মনকে যদ্যপি ভোলানো যায় অশান্ত শরীরকে নৈব নৈব চ।
মধুমিতার এই শরীর ওকে সারারাত আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়, জ্বলছে তো জ্বলেই নেভার কোনো উপায় নেই।
সেই দুর্নিবার কামনার থেকে মধুমিতা বাঁচতে অনেক রাত অবধি বই নিয়ে বসে থাকে, বইয়ের পাতা ওল্টায়, সময় কাটে, মন বসাতে পারে কই?
এভাবেই, দারুন ছটফটানির মধ্যে দিন কাটছিলো মধুমিতার।
এখন শীতের শেষ ভাগ। কোলকাতায় শীত এমনিতেও কম, চুপিচুপি আসে কয়েক মাস থাকে আবার নিশ্চুপে চলে যায়। যেন লাজুক বউটি, নিজের উপস্থিতি জানান দিতে ভারী লজ্জা। তবে শীত এ বছর বেশ জাঁকিয়ে এসেছিলো, শেষ ভাগেও যেন নিজের দাপট প্রমাণ করছে।
সেদিনও খুব শীত, আকাশ সারাদিন মেঘলা ছিলো, সন্ধ্যার দিকেতো শহরে রিতিমত কুয়াশাও পড়লো। মধুমিতা সারাদিন কাজ শেষে ফোন নিয়ে একটু আগে বসার ঘরের সোফায় বসেছিলো। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। মধুমিতা ওঠে গিয়ে খুলে দিতেই দেখলো লম্বা চওড়া সুদর্শন দিহান দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটে হাসি, ও বলে উঠলো, কেমন আছো বৌদি?
মধুমিতা ভুত দেখার মত চমকে উঠেছিলো, দিহানকে এই সময়ে ও মোটেও আশা করে নি। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে মধুমিতা সামলে নিলো নিজেকে। অবাক হওয়ার ভাব গোপন করে হাসলো মধুমিতা, বলল, দিহান! ভালো আছো? হঠাৎ এই সময়ে যে?
কেনো বৌদি? আসতে পারি না? আফটার অল শশুর বাড়ী......
না না, তা বলিনি। তুমি তো বড়লোক মানুষ। কখনো আসো না। হঠাৎ করে এলে তারউপর আবার না জানিয়ে, আই এম টোটালি সারপ্রাইজড।
দিহান মধুমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো। ও যেন ঘরোয়া আটপৌরে গৃহবধূ, শরীরে কোনো রকম অঙ্গরাগ নেই, প্রসাধনী নেই, বেশভূষা সাধারণ, তারপরও ওকে অপূর্ব সুন্দরী বলেই মনে হচ্ছিলো।
দিহান ইঙ্গিত পূর্ণ ভঙ্গিতে হাসলো, ঠাট্টার ছলে বলল, কি করবো, এতো সুন্দরী শালাজো আছে যে, থাকতে না পেরে চলে এলাম।
মধুমিতার গালে এক চিলতে লজ্জার রাঙা আভা ছড়িয়ে পড়লো। সে ভাব প্রকাশ করতে চাইলো না মধুমিতা। কিছু বলতে যাবে তার আগে দিহান বলল, মেহুলের মুখে শুনলাম বাবার নাকি শরীর অসুস্থ?
হ্যাঁ, ঐ আর কি? শশুরের শরীর কয়েক দিন ধরে খারাপ যাচ্ছে এটা ঠিক, মধুমিতা ওনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছেও গিয়ে ছিলো, তবে ও বুঝতে পারছিলো না, শুধু এই কারণেই দিহান এসেছে? শশুড়ের প্রতি ওর এতো টান? মধুমিতার শশুর মশাইয়ের তো এর আগে এর থেকে ঢের বেশি শরীর খারাপ থেকেছে, কই তখন তো দেখতে আসে নি কখনো। মধুমিতার মনে হচ্ছিলো এটা স্রেফ অজুহাত, আসল কারণ আসলে ও নিজে।
এতোক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ওঁরা এমন সময় মধুমিতার শাশুড়ি চলে এলেন, কে এসেছে দেখার জন্য। দিহানকে দেখতে পেয়ে আর আসার কারণ জানতে পেরে তিনি খুব খুশি হলেন। ওকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, আরে দিহান বাবা যে, কখন এলে, বাইরে দাঁড়িয়ে কেন, ভেতরে এসো।
দিহান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, বৌদির ইচ্ছে আমাকে বাইরে থেকেই বিদেয় করবে, হঠাৎ এসে পড়ে ওর কাজ বাড়িয়ে দিলাম, তাই।
মধুমিতা হেসে বলল, না জানিয়ে আসলে এমনই হবে। তারপর ও রান্না ঘরে চলে গেল শরবত তৈরি করতে। রান্না ঘরে এসে অনুভব করলো দিহানের সাথে কথা বলে উত্তেজিত হয়ে পরেছে ও, বুক ধুকপুক করছিলো, সারা শরীরে খুশির ছটফটানি।
হ্যাঁ সুখ অনুভব করছিলো মধুমিতা, এই ভেবে যে দিহান ওর জন্য এসেছে, ওকে দেখতে। ষোড়শী বালিকার আবেগ উথলে উঠছিলো মধুমিতার বুকে, শিহরণে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো। হাসছিল একা একাই।
এক ট্রে ভর্তি খাবার আর পানিয় নিয়ে বসার ঘরে চলে এলো মধুমিতা। ততক্ষণে শশুড় মশাইও সোফায় এসে বসেছে। আলাপচারিতা করছিলেন দিহানের সাথে।
আপনার শরীর এখন কেমন, বাবা?
এখন বেশ ভালো আছি। ভদ্রলোক খুশি খুশি মুখ করে বলল। তা মেহুলকে নিয়ে এলে না কেন?
আসলে আমি অফিস থেকে সোজা আপনাদের এখানে এলাম তো– মেহুল সকালে বলছিলো আপনার শরীর খারাপ। এই দিকে একটু কাজ ছিলো, তাই ওকে আনা সম্ভব হয় নি।
মধুমিতা এক গ্লাস জুস দিহানের হাতে দিয়ে বলল, জামাইবাবু একা এসেছে কারণ উনি আজকে থাকতে চাইছে না, তারজন্য একা এসেছে। বড়লোক মানুষ, ভাবসাব আলাদা, আমাদের বাড়িতে থাকতে যাবে কেন? মেহুলকে সাথে আনলে তো থাকতে হতো।
দিহান স্মিত হেসে উত্তর দিলো, এ তোমার মিথ্যে দোষারোপ বৌদি।
শাশুড়ি বললেন, না বাবা, বৌমা ঠিক বলেছে, তুমি তো আমাদের বাড়ি থাকোই না। আজ কিন্তু যেতে পারবে না, এসে ভালো করেছো, কয়েকদিন বেড়িয়ে যেতে হবে এখন।
সেটা তো সম্ভব নয় মা, মেহুল বাড়িতে একা.....
আমার মেয়ে কিছুকে ভয় পায় না, দিহান। ওর কথা চিন্তা করো না, থাকতে পারবে।
দিহানকে এরপর আর বেশি জোর করতে হয় নি, থাকতে রাজি হয়ে গেছিলো ও।
তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, রাত আটটা হবে। মধুমিতা রান্না ঘরে কাজ করছিলো আর ভেতরে ভেতরে অস্থির হচ্ছিলো। চিন্তায় বিভোর ও।
দিহানকে জলখাবার দিয়েই সেখান থেকে চলে এসেছিলো মধুমিতা, দিহানের সামনে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারে নি, অস্বস্তি বোধ করছিলো। বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই মধুমিতার দিকে ইঙ্গিত পূর্ণ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকছিলো দিহান, ওর দৃষ্টি প্রগাঢ়। তাই শশুর শাশুড়ির সামনে ও দৃষ্টি লক্ষ্য করে বেশি সময় সেখানে থাকে নি মধুমিতা, রান্না ঘরে কাজ আছে বলে চলে এসেছিলো।
সেই থেকে ওর ভেতর অনাবিল আকুলতা। দিহানের কথা ভেবে মধুমিতা উষ্ণ হয়ে উঠেছিলো । আজ রাতে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সেটা ওর মনকে জানাচ্ছিলো, মধুমিতাও যেন সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলো। ও কি দিহানের সান্নিধ্য পেতে আগ্রহী হয়ে পরছিলো? একরাশ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো মধুমিতার চারপাশে।
এমন সময়, হঠাৎ, দিহান নিঃশব্দে রান্না ঘরের দরজায় এসে দাড়ালো। কয়েক পলক দেখলো মধুমিতাকে। ওর ভ্রমর কালো কোমড় স্পর্শি চুল ঢেউ খেলছিল বাতাসে। শাড়ির আঁচল কোমড়ে গোঁজা, ভাঁজ পড়া বাঁকানো কোমড়ের অনেকটা অংশ বেড়িয়ে ছিলো, ফর্সা ত্বক মসৃণ আর নিটোল। পেছন ফিরে থাকায় মুখের একটা অংশ দেখা যাচ্ছিলো, সরু ভুরু, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁট–সব নিখুঁত, স্বয়ং দেবতার হাতে গড়া যেন মাটির প্রতিমা।
দিহান নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছিলো কিন্তু ঘরে ঢুকলো ঝড় হয়ে, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে। কিছু বোঝার আগেই দিহান সুদৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো মধুমিতাকে। ওকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠেছিল মধুমিতা, দিহানকে দেখতে পেয়ে বিচলিত হলো। চেষ্টা করল ওর বাহুবন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার।
দিহান ছাড়লো না দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে রাখল ওকে। মুখ নামিয়ে আনলো মধুমিতার ঘাড়ে, ওর শরীর থেকে ভেসে আসছিলো অচেনা মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। দিহান ওর গলায় নাক ঘসছিলো, শ্বাসের সাথে টেনে নিচ্ছিলো সেই মেয়েলি গন্ধ।
মৃত মধুমিতা ছটফট করছিলো। হৃদপিন্ড যেন লাফাচ্ছিলো, কাঁপন ধরে ছিলো ওর কন্ঠে, বলল, কি...কি করছো দিহান, ছাড়ো আমায়।
দিহান চোখ বুজে মধুমিতার নরম শরীরের কোমলতা অনুভব করছিলো, আবেশে বিভোর কন্ঠে বলল, না, ছাড়বো না। ওর গলার স্বর খুব নরম। অনেক দিন দূরে ছিলাম, আজ তোমায় আদর করবো, বৌদি।
না ছাড়ো, কেউ এসে পড়বে। মা বাবা বসার ঘরে আছে।
আসবে না সোনা। শান্ত কন্ঠে বলল দিহান। আমি দেখে আসলাম ওনারা নিজের ঘরে চলে গেলেন। সো নো টেনশন। আমাকে তোমায় মন খুলে ভালোবাসতে দাও।
তেজস্বিনী নারী মধুমিতা, হ্যাঁ কে হ্যাঁ আর না কে না ও মুখের ওপর তা বলে দিতে পারে। মধুমিতা আজ দোটানায় ভুগছিলো, দিহানকে মুখের উপর দৃঢ় ভাবে না বলে দিতে পারছিলো না। তবে অনেকটা শক্তি জড় করে ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। দিহানের থেকে খানিকটা দূরে সরে এসে দাঁড়ালো।
মনের ভেতর চলতে থাকা দোলাচল মুখেরও ওপর ফুটে উঠলো অনেকটা। অবশেষে দিহানের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, "দিহান থামো। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো, প্লিজ। আমিতো তোমাকে বলেছিই আমার পক্ষে এই সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না।”
শিকারি যেমন শিকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বোঝার জন্য ঠিক তেমন মধুমিতার দিকে তাকিয়ে ওর মুখের ভাব লক্ষ্য করছিল দিহান। বুঝতে চেষ্টা করছিল ওকে, ওর মনে আসলে কি চলছিল। সে অনুযায়ী দিহান পরবর্তী চাল দেবে। মধুমিতা যদি সোজা সাপটা তেজি প্রকৃতির হয় দিহান তাহলে চটপটে ধূর্ত পুরুষ। স্থির চোখে মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল, কেন বেবি? ওর কন্ঠে একরাশ কোমলতা, কেন তুমি এ সম্পর্ক শেষ করতে চাও?
মধুমিতা দু হাত দিয়ে আঁচলে গিট পাকাচ্ছিল। উত্তর দেওয়ার আগে এক মুহূর্ত কি যেন ভাবল। তারপর বলল, কারণ আমরা দুজনই বিবাহিত। আর বিবাহিত মানুষদের এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশনশিপ না করাই ভালো। একটু থেমে আবার বলল, দেখো দিহান, আমরা যা করছি তা মোটেও ঠিক নয়। দিস ইজ চিটিং। জীবনসঙ্গীদের ঠকাচ্ছি আমরা। নিজেদের করা প্রমিসগুলো ভঙ্গ করছি। একবার মেহুল আর রিতম এর কথা ভাবো ওরা ইনোসেন্ট, ওদের কোন দোষ নেই। তাহলে আমরা নিজেদের সুখের কথা ভেবে ওদের কষ্ট দেবো কেন? তার ওপর শেষ কিছুদিন ধরে আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছে যে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। রাতের বেলা ঘুমাতে পারি না চিন্তায়। এমন চলতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো, দিহান।
দিহান এবার মধুমিতার কথা গুলোর মর্মার্থ বুঝতে পারল। সব সহজ হয়ে গেল সবকিছু, যে স্বামীর প্রতি ভালবাসায় আর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে এত দিন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলো মধুমিতা। এবার দিহানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো, বিদ্রূপের হাঁসি, তবে তো মুছে গেল দ্রুতই। মুখে সিরিয়াস ভাব ফুটিয়ে বলল কেন ঠিক নয় বৌদি বলতে পারবে? আমরা দুজন নারী পুরুষ। যদি নিজেদের সান্নিধ্যে একটু সুখ পাই তাহলে এখানে দোষ কোথায়? দেখো তোমার আর আমার আলাদা আলাদা রেসপন্সিবিলিটিস আছে। আমি সেগুলো থেকে তোমাকে সরে আসতে বলছি না। কিন্তু এই যে আমাদের একজনের প্রতি আরেকজনের টান, কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আর কাছাকাছি থাকার সময় অনুভূত হওয়া তীব্র উত্তেজনা, এগুলি কি মিথ্যে? বলো বৌদি, মিথ্যে?
দিহান মেয়েদের নার্ভ পড়তে জানে। ও বুঝতে পারছিলো মধুমিতা এখন যতটা না বাস্তব তার থেকে বেশি আবেগপ্রবণ, সেই আবেগ দিয়েই দিহান ব্রেইন ওয়াশ করতে চাইছিলো মধুমিতাকে। তাই কথা বলছিলো এমন ভাবে যেন তা আবেগময় মনে হয়।
দিহানের কথা বলার ভঙ্গিতে এক ধরনের আকুলতা ছিল যা মধুমিতা কে বেশ ভালো মতো স্পর্শ করল। যদিও মধুমিতা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে চাইছিল না তবুও দিহানের কথায় বিহুল হয়ে মধুমিতা বলল, না, তোমার কথা মিথ্যা নয়। তবে এটা ঠিকও নয়।
কেন ঠিক নয়? কন্ঠের স্বরে জোর দিয়ে বললো দিহান।
কারণ বললাম তো তোমাকে। আমরা বিবাহিত।
এটা কোনো কারণ নয় বৌদি। হ্যাঁ আমরা বিবাহিত, সুখি ও অনেক দিক দিয়ে। কিন্তু আমাদের শরীর সুখী নয়। তোমার কথা ধর, পূর্ণ যুবতী তুমি। কতটুকু শারীরিক সুখ পেয়েছো তুমি? খুব কম। এটা ন্যায় হলো? এখন যদি এই শরীরের সুখের জন্য অন্য কোনো পুরুষের সাথে একটু সুখ খুঁজে নেও এতে দোষটা কোথায়, আমাকে বোঝাও।
এ যুক্তি অকাট্য, প্রকৃতই মধুমিতা যুবতী, নারীত্বের স্বাদ ও খুব কমই পেয়েছে, যৌনতা বলতে তো সেই রিতমের সাথে কাটানো একটা মাত্র বছর, তারপর থেকেই তো ওর জীবন ধুধু মরুভূমি।
তাই মৌন থাকলো মধুমিতা। দিহান নরম গলায় বলল, দেখো বৌদি, ভগবান এতো সুন্দর শরীর তোমাকে কি অব্যাহত রাখতে দিয়েছে? এখন যদি এই শরীরকে কাজে না লাগাও, বৃথা নষ্ট করো তাহলে কি তাকেও রুষ্ট করা হয় না?
তাই বলে পরকিয়া?
পরকিয়া বলো না বেবি, আমাদের দুজনের ফিলিংসকে এ নাম দিয়ে কলঙ্কিত করো না।
মধুমিতা চোখ নামিয়ে নিলো, আবারো আঙ্গুল দিয়ে শাড়ির আঁচলে গিট পাকাতে শুরু করলো। শরীরের ভঙ্গিতে প্রকট দ্বিধাগ্রস্থতা। অগোছালো ভাবে বলল, দিহান প্লিজ.... না। আমি পারবো না। আমি রিতমকে ভালোবেসি, তুমি জানো।
আমি রিতমকে ভালোবাসতে তো নিষেধ করি নি।
না দিহান, এটা ঠিক নয়, আমাদের উচিত নয় এটা করা।
দিহান মৃদু হাসলো। থুতুনি ধরে মধুমিতার মুখ উপরে তুললো। মধুমিতা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো দিহানের মুখে কোনো ধরনের দীধা নেই, গভীর চোখ দুটো তীব্রতায় গাঢ় হয়ে গেছে আর সে দুটো খুব বেশি স্থির।
বৌদি, ওর কণ্ঠ নরম অথচ দৃঢ়, তুমি জানো না তোমার শরীরের ভেতরে কী আগুন আছে। এমন সৌন্দর্য, এমন রুপ, ওগুলো লুকিয়ে রাখা অন্যায়। যৌনতা তো জীবনেরই এক অংশ। এটা প্রকৃতির নিয়ম। এটা প্রতারণা নয়, কাউকে আঘাত দিচ্ছি না আমরা। আমাদের শুধু সীমানা জানতে হবে, কোথায় থামা উচিত।
মধুমিতা কথা গুলো মেনে নিচ্ছিলো। বেশ শক্ত শক্ত যুক্তি, অথচ কি সরল অর্থ। মধুমিতা গলে যাচ্ছিলো।
দিহান আবার বলল, তুমি জানো না বৌদি, এ কয় মাস কি খারাপ গেছে আমার। তুমি হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে–আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। সব সময় তোমার কথা মনে পড়তো, কিছুই ভালো লাগতো না।
দিহানের কথা গুলো শুনতে মধুমিতার খুব ভালো লাগছিলো। তবে হঠাৎ করে বুক জ্বলে উঠলো, ফুঁসে উঠে বলল, ছাই আমার কথা মনে পড়তো। তখন তো দেখলাম কিভাবে বউকে চোখে হারাচ্ছিলে, এতোই মাখো মাখো যে এক রাত না শুয়ে থাকতে পারবে ন এমন অবস্থা। মধুমিতার কণ্ঠ রাগে, তেজে গমগম করছিলো। আমার জন্য যদি এতোই টান প্রথমেই রাজি হয়ে গেলে না কেন?
দিহান হাসলো, তুমি খুব চালাক, বৌদি। উল্টো ভাবে এই কথার উত্তর দিতে চাইছিলো দিহান, তুমি আমার বউয়ের থেকে বেশি মূল্যবান একথা শুনতে চাও তো? তাই এই ছল, আমি বুঝেছি। আচ্ছা এটা আমার মানতে কোনো আপত্তি নেই, আমি মেহুলের থেকে তোমাকেই বেশি পছন্দ করি, মেহুল তোমার কাছে কিছুই না। তোমার সাথে যদি আমার আগে পরিচয় হতো তাহলে আমি তোমায়ই বিয়ে করতাম।
মধুমিতা লজ্জায় রাঙা হলো। তেজ আর ক্রোধ কোথায় যে পালালো তার আর হদিস পেলো না। মধুমিতা আরো দুর্বল হয়ে পরলো।
আম...আমি এটা বলতে চাই নি..... আই মিন.... ইট ইজ ইম্পসিবল। মধুমিতার কন্ঠ কাঁপছিলো। দিহানের দিকে তাকাতে পারছিলো না ও। ওর প্রতিটি যুক্তি হেরে যাচ্ছিলো দিহানের প্রখর উপস্থিতিতে।
ইম্পসিবল? পৃথিবীতে ইম্পসিবল বলতে কিছুই নেই বেবি। ইট ডিপেন্ডস অন ইয়ু। যদি তুমি কিছু চাও তাহলে সেটা সম্ভব আর যদি না চাও তাহলে অসম্ভব, বুঝেছো? আর আমি তোমার শরীরকে জানি তুমি মিথ্যে বলছো, কিন্তু তোমার শরীর মিথ্যা বলবে না। ও জানে ওর কি চাই। বলে মধুমিতার কোমড় টেনে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো দিহান, মধুমিতার বুক চেপে বসলো দিহানের বুকের নিম্নাংশে।
মধুমিতা চাইছিলো তর্ক করতে, কিন্তু ওর বুক ধুকপুক, শরীরে শিহরণ জাগছিলো, কন্ঠ কাঁপছিল। এবার ও পালিয়ে যেতে চাইছিলো, নইলে যেকোনো মুহূর্তে ওর সমস্ত বাধা বালির বাঁধের মতো ভেসে যাবে।
মধুমিতার হাত দিহানের শার্টের কলার চেপে ধরেছিল, বিশ্বাস ঘাতক সেই হাত ধীরে ধীরে দিহানের বুকে গিয়ে পড়লো, শার্টের উপর দিয়ে অনুভব করছিলো ওর খাজকাটা বুকের শক্ত মাংসপেশী গুলো।
মধুমিতার কার্যকলাপে মনে মনে হাসছিলো দিহান। নারী প্রবৃত্তি। পেটে খিদে মুখে লাজ।
দিহান....প্লিজ, আমি....আমি পারব না। আমি এমন না। মধুমিতার কণ্ঠে অনুনয়, অথচ সেই কন্ঠ ছিল নরম, প্রায় আত্মসমর্পণের মতো।
দিহান হেঁসে মধুমিতার গালের ওপর এসে পড়া এলো চুল কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো, না, তুমি এমনই। ফিসফিস করে কথা বলছিলো দিহান, গরম শ্বাস মধুমিতার খোলা কাঁধে এসে পরছিলো। কেঁপে উঠছিলো মধুমিতা। ইয়ু অলসো নো ইট, হাউ ইগার ইয়ু আর। বাট ইয়ু আর অ্যাক্টিং হেজিটেট। ডু ইয়ু নো? দেজ–ইয়ুর হিডেন ইগারনেস এন্ড ফ্রেগাইল প্রোটেস্টস মেইক ইয়ু মোর ইরেসিস্টেবল?
কেন? আমার প্রতি তোমার এত লোভ কেন? কেন আমাকে এতো চাও।
লোভ নয় বেবি, টান বলো। কি যে এক অদম্য টান আমি তোমার প্রতি অনুভব করি– তা আমি নিজেই জানি না। তোমার কথা মতো আমি কত চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যেতে, পারি, উল্টো যতবার চেষ্টা করেছি তত বার তোমার কথা মনে পরেছে।
কিন্তু আমাদের এ সম্পর্ক? এটার কি হবে? মধুমিতা জিজ্ঞেস করলো।
সমাজের চোখে আমাদের এই সম্পর্ক অবৈধ, আমাদের চোখে তো নয়। আর এটা গোপন আছে গোপনই থাক। যতক্ষণ না সমাজ এটাকে আবিস্কার করে, ততক্ষণ তো আমাদের কোনো ভয় নেই। আর আমরা তো কাউকে জানাতে যাচ্ছি না। তাই এই সমাজ এই সম্পর্কের কথা কোনো দিন জানতে পারবে না। আমরা গোপনে মেলামেশা করতে পারবো, এন্ড ইট ইজ মোর এক্সাইটিং।
তাও.... শেষে আমার খারাপ লাগে। আমার মনে হচ্ছে এটা বন্ধ করা উচিত।
দিহান এতোক্ষণ মিষ্টি স্বরে কথা বলছিলো। এবার রেগে উঠলো। ধমকের স্বরে বলল, কি তখন থেকে এক ঘ্যানঘ্যানানি করে যাচ্ছো। খারাপ লাগা এতো দিন কোথায় ছিল? এতো দিন তো সব কিছু বেশ চলছিল। এখন আমাকে পাগল করে দিয়ে পিছিয়ে আসলে তো চলবে না। দুহাত দিয়ে মধুমিতার কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাগত স্বরে দিহান কথা বলছিলো।
যদি আমার সাথে সম্পর্ক না রাখতে চাও তাহলে আজ রাতে থাকতে আমাকে জোর করলে কেন? এটার কি মানে হয় বলতো?
দিহান আরো কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু মধুমিতা আর কিছু বলতে দিলো না, হামলে পড়ে চুমু খেলো দিহানকে। পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ালো, জড়িয়ে ধরলো দিহানের গলা।
মধুমিতার চিন্তা ভাবনা ধুমায়িত হয়ে পরছিলো, চারিদিকে নীলচে ধোঁয়া। মধুমিতা আর কিছু ভাবতে পারছিলো না। এই যে ও এখন রান্না ঘরে, পর পুরুষের সাথে চুমুতে মত্ত, পাশের ঘরে শশুর শাশুড়ি, এগুলো যেন ভূলেই গেছিলো।
উল্টো শক্তিমান এক পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে ওর শরীরে তরঙ্গ খেলে যাচ্ছিলো, বুকের ভেতর দারুন ঝড়।
কয়েক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুমু খেলো ওরা, তারপর দিহান দুহাতে মধুমিতার কোমড় ধরে ওকে তুলে রান্না ঘরের কাউন্টারে এনে বসালো। মধুমিতার ভেজা ঠোঁট বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছলো, পরে নিষ্পেষণ করলো দু আঙ্গুল দিয়ে। গাঢ় কন্ঠে বললো, সো উইলিং নাউ, হাহ?
ইয়ু আর মেকিং মি সো..... মধুমিতা লাজুক ভাবে বলল।
আবার চুম্বনে আবদ্ধ হলো ওরা। এবার অনেকটা রোমান্টিক ভাবে মধুমিতাকে চুমু দিলো দিহান, সময় নিয়ে, কোমল ভাবে।
তারপর দিহান বলল, এই কানেকশনটা অনুভব করতে পারছো বেবি? এই কামনা, এই উষ্ণতা, এতোক্ষণ তুমি অস্বীকার করছিলে।
এই মুহূর্তে মধুমিতার মনে হচ্ছিলো যদি দিহান আরেকটু জোর করে তাহলে মধুমিতা এখানেই দিহানের সাথে মৈথুন করে ফেলবে, নিজের উপর কন্ট্রোল হাড়াচ্ছিলো ও। কামনারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল প্রতিটি রক্ত কনায়। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে ধরে রাখলো মধুমিতা, নিবৃত করলো সেই ভাবনা থেকে।
কেন এমন করছিলে বেবি?
মধুমিতা বললো, বিকজ আই এম স্কেয়ার্ড অব বিং এডিক্টেড টু দিস।
ডোন্ট, গাড় কন্ঠে ফিসফিস করে বলল দিহান, মাতাল করা ওর স্বর, লালসায় ভরপুর। রাতের বেলা তোমার কাছে আসবো বৌদি, তোমার ঘরে, শুধু তুমি আর আমি। ইয়ু নিড এ হার্ড সেক্স টুডে। দ্যান ইয়োর মাইন্ড উইল রিফ্রেশ।
মধুমিতার পা কেঁপে উঠলো। দিহান কথায় ওর মনেও আগ্রহ দেখা দিচ্ছিলো।
আর কেউ থাকবে না, কেউ বাধা দেবে না আমাদের। না রিতম, না মেহুল না কোনো মোরাল। এই রাত শুধু আমাদের। প্লিজ ডোন্ট ডিসাপয়েন্ট মি।
মধুমিতা একটা দুর্বল হাসি হাসলো। ঐ হাসি দেখেই যা বোঝার বুঝে গেল ও, দিহানও পাল্টা হেঁসে সেখান থেকে চলে গেলো, মধুমিতা একা দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানে, অতৃপ্ত আর কামুক মনে হচ্ছিলো ওর নিজেকে।
এই সময়ের মধ্যে মধুমিতা দিহানের সঙ্গে কোনো রুপ যোগাযোগ রাখে নি—না কোনো ফোন, না কোনো টেক্সট। মধুমিতা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছে ওকে।
মধুমিতা কেন এমন করছিল, ত নিজেই ঠিক বলতে পারে না।
গত কয়েক সপ্তাহ এমন অনেক কাজই ও করেছে, যার অর্থ ও নিজেই খুঁজে পায়নি এমন সহস্র চিন্তা ওর মাথায় এসেছে যেগুলোর কোনো তাৎপর্য নেই। শুধু একটা অজানা তাড়না ওকে চালিয়ে নিয়ে গেছে।
সেই তাড়না যেটা ওকে ভেতর থেকে পীড়া দিচ্ছিলো, ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল ওর হৃদয়। সেই রাতে রিতমের সাথে কথা বলার পর থেকেই মধুমিতা চাঁপা অস্থিরতা অনুভব করছিলো, মনে হচ্ছিলো ওর ভেতরে জ্বলতে থাকা এই আগুনকে নেভাতে হবে, দমন করতে হবে লালসাকে, আর এই যে বাড়তে থাকা কাম যা গ্রাস করে নিচ্ছে ওকে এটাকে থামাতেই হবে।
মধুমিতার উদ্দেশ্য ছিলো ধোঁয়া ধোঁয়া, চিন্তা ভাবনা অগোছালো, এলোমেলো–কি করবে, কি করবে না এগুলো ভেবেই দিন কেটে যায়। কিছুই নির্ধারণ করতে পারছিলো না ও। সারাদিন অদ্ভুত এক অস্থিরতায় ভুগছিলো।
দিহানের সাথে যবে থেকে সম্পর্কে গেছে সেদিন থেকেই ওর এমন হচ্ছে। জীবন নিয়ে ভাবতে বসলেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে মধুমিতা। তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। বিকেল গুলো এতো ম্লান হয়ে যায় তখন, রাত গুলো এতো অসহনীয় অনুভূত হয় যে সবকিছু নিষঙ্গ আর নির্জন বোধ হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে মধুমিতার, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বদ্ধ পাখির মতো ছটফট করে চারদেয়ালের ঘরে।
তবে এর বিপরীত অনুভূতিও আছে, সেহলো দিহান
দিহানের কথা ভাবলেই ওর বুকের ভেতর মিষ্টি মৃদু শিহরণ বয়ে যায়, রক্তে জাগে কামনা, সারা শরীরে এমন এক ভালোলাগা কাজ করে যে অস্থির হয়ে যায় ও, হৃদকম্পন বাড়তে থাকে নিঃশ্বাস ভারী হয়।
দিহান এ কদিনে প্রায় প্রতিদিনই ফোন করতো, তবে মধুমিতা কোনো ফোন রিসিভ করে নি। একদিন মধুমিতা ওকে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছিলো, "এই সম্পর্ক আমার পক্ষে টেনে নেওয়া সম্ভব না।
আমার মন ভেতর থেকে সায় দিচ্ছে না, দিহান। এটা অবৈধ। আমরা নিজেদের জীবন সঙ্গীকে ঠকাচ্ছি। আমি আর রিতমকে ঠকাতে পারবো না। আর এটা সমাজের চোখেও ঘৃণ্য। আমি আর সেই পথে হাটবো না।” মধুমিতা আরো বলেছিলো, "এই সম্পর্ক আর নিয়ে ভাবতে পারবো না। আমাদের মধ্যে শালাজো-নন্দাই সম্পর্কই বজায় থাক। তুমি ও আর এই সম্পর্ক নিয়ে ভেবো না।” ওর কন্ঠ স্বর ছিল শান্ত, তবে বেশ দৃঢ়তা ছিল সেই কন্ঠে?
উত্তরে দিহান কিছু বলে নি, তাই ওর মনোভাব বোঝা যায় নি, ফলে বিভ্রান্ত হয়েছে মধুমিতা। কিন্তু তাই বলে মধুমিতার কথায় দিহান থেমে যায় নি, দিহানের মতো পুরুষরা থেমে যায় না। মধুমিতার অপরাধ বোধ হবে বলে দিহানেরও হবে এমন কোনো কথা আছে? মধুমিতা থামতে বললেই থামতে হবে?
বরাবরের যে হরিণ ক্ষেকো বাঘ হঠাৎ একদিন মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়ে যায় এবং ঘন ঘন সে স্বাদ পেতে থাকে, সে মানুষের মাংস আরো বেশি করে পেতে চাইবে আর তা কিভাবে আরো বেশি করে পাবে তার ফন্দি বের করবে, প্রয়োজনে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে, অপেক্ষা করবে রাতের অন্ধকারের জন্য। দিহানও তাই করছিলো। ও মোটেও মধুমিতাকে ছেড়ে দিতে রাজি ছিলো না। আসল দিহান মধুমিতার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল, মধুমিতার সাথে এই নিষিদ্ধ সম্পর্কে ওর খুব রোমাঞ্চ হচ্ছিলো বিশেষ করে ওদের গোপন মেলামেশা, এটা সবচেয়ে উত্তেজক। মধুমিতার মতো সুন্দরী নারীর সাথে এমন একটা অবৈধ সম্পর্ক করতে পেরে নিজের পৌরুষও খানিকটা গর্বিত ছিলো।
তাই দিহান ফোন করতো, মেসেজ দিতো প্রতিদিন, যদিও মধুমিতা একটারও উত্তর দিতো না।
এদিকে রিতমের সঙ্গে সম্পর্কটা আবার ঠিক করার চেষ্টা করছিল মধুমিতা। ফোন করার সংখ্যা, কথা বলার সময় সব বাড়িয়ে দিয়েছিলো। রিতমের সাথে প্রাণ খুলে হাসতে চাইতো ও, তবে পারতো না। জানি না কেন, ওর ভেতর থেকেই সে ভাবটা আসতো না, ফাঁকা মনে হতো।
দিহানের সঙ্গে কথা বলার সময় যে উত্তেজনা, যে অজানা আলোড়ন ওর বুকের ভেতর জেগে উঠতো, রিতমের সঙ্গে তেমন কিছুই হতো না। স্বামীর সঙ্গে কথা বলা কেমন যেন যান্ত্রিক লাগতো, কখনো ক্লান্তিকরও, যেন জোর করে করা। আর এই জিনিসটা মধুমিতাকে আরো অশান্ত করে দিতো।
উল্টো দিকে, দিহানের জন্য মন কেমন করছিলো ওর। ওকে ভুলতে পারছিলো না। ও যত চাইছিল দিহান ভুলতে দিহান তত বেশি করে প্রকট হচ্ছিলো।
সেদিনের সেই অভিসারের প্রতি মূহুর্তের প্রতিটি ঘটনা, কার্যকলাপ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। দিহানের সেই সুগঠিত-সমর্থ শরীর, ঘামে ভেজা আর নগ্ন, সেই দিন দেখেছিলো মধুমিতা, পেছন থেকে, যখন চার হাত পায়ে ভর দিয়ে ডগি হয়েছিলো ও।
রান্নাঘরে কাজ করতে করতে কখন যে মনটা দূরে কোথাও হারিয়ে যেত, বুঝতেই পারতো না। আর মনের অজান্তেই দিহানের কথা ভেবে ফেলছিলো, রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে দিহানকে পাশে চাইতো, ওর আদর খাওয়ার বাসনায় রক্ত ফুটতো টগবগিয়ে।
মধুমিতা নিজেকে খুব শাসন করছিলো, মনে মনে বোঝাচ্ছিলো যে না দিহানের কথা আর ভাবা যাবে না। কিন্তু বোকা মধুমিতা এটা জানতো না, মন মানব শরীরের সবচেয়ে অবাধ্য ইন্দ্রিয়, মনকে নিয়ন্ত্রণ করা বড় মুশকিল। মধুমিতা যত মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো ওর বেহায়া মন তত দিহানের জন্য আকুল হয়ে পড়তো।
রিতমের বেলা সে মন নিষ্ঠুর, পুরোপুরি রিতম বিমুখ।
যেন মধুমিতা এখন একটা নদীর মোহনায় নৌকো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিভ্রান্ত আর দিশাহারা, ওর সামনে সেই নদীর দুটো প্রবাহ, কোন নদীতে নৌকো নিয়ে যাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছিলো না।
এই দোটানা কাটানোর জন্য মধুমিতা সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতো, পরিষ্কার ঘর বার বার পরিষ্কার করতো, তিন বেলার রান্না তিন বার করতো, শশুর শাশুড়ি কোনো কাজের জন্য অনুরোধ করলে খুশি হয়ে যেতো।
কিন্তু তার মধ্যেও দিহান যে ওর মনে ঢোকার কোন গোপন রাস্তা খুঁজে পেতো মধুমিতা বুঝতো না, নাহলে সেই রাস্তাটি ও নিশ্চয়ই বন্ধ করে দিতো।
দিনের বেলা মধুমিতা যেন তেন করে নিজেকে সামলাতে পারতো, রাত গুলো হয়ে পরতো ব্যাকুল করা। সহজে ঘুম আসতে চাইতো না। মাথার ভেতর একঝাঁক চিন্তা পোকার মতো গিজগিজ করতো। তারমধ্যে অস্থির অতৃপ্ত শরীরতো আছেই। মনকে যদ্যপি ভোলানো যায় অশান্ত শরীরকে নৈব নৈব চ।
মধুমিতার এই শরীর ওকে সারারাত আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়, জ্বলছে তো জ্বলেই নেভার কোনো উপায় নেই।
সেই দুর্নিবার কামনার থেকে মধুমিতা বাঁচতে অনেক রাত অবধি বই নিয়ে বসে থাকে, বইয়ের পাতা ওল্টায়, সময় কাটে, মন বসাতে পারে কই?
এভাবেই, দারুন ছটফটানির মধ্যে দিন কাটছিলো মধুমিতার।
এখন শীতের শেষ ভাগ। কোলকাতায় শীত এমনিতেও কম, চুপিচুপি আসে কয়েক মাস থাকে আবার নিশ্চুপে চলে যায়। যেন লাজুক বউটি, নিজের উপস্থিতি জানান দিতে ভারী লজ্জা। তবে শীত এ বছর বেশ জাঁকিয়ে এসেছিলো, শেষ ভাগেও যেন নিজের দাপট প্রমাণ করছে।
সেদিনও খুব শীত, আকাশ সারাদিন মেঘলা ছিলো, সন্ধ্যার দিকেতো শহরে রিতিমত কুয়াশাও পড়লো। মধুমিতা সারাদিন কাজ শেষে ফোন নিয়ে একটু আগে বসার ঘরের সোফায় বসেছিলো। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। মধুমিতা ওঠে গিয়ে খুলে দিতেই দেখলো লম্বা চওড়া সুদর্শন দিহান দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটে হাসি, ও বলে উঠলো, কেমন আছো বৌদি?
মধুমিতা ভুত দেখার মত চমকে উঠেছিলো, দিহানকে এই সময়ে ও মোটেও আশা করে নি। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে মধুমিতা সামলে নিলো নিজেকে। অবাক হওয়ার ভাব গোপন করে হাসলো মধুমিতা, বলল, দিহান! ভালো আছো? হঠাৎ এই সময়ে যে?
কেনো বৌদি? আসতে পারি না? আফটার অল শশুর বাড়ী......
না না, তা বলিনি। তুমি তো বড়লোক মানুষ। কখনো আসো না। হঠাৎ করে এলে তারউপর আবার না জানিয়ে, আই এম টোটালি সারপ্রাইজড।
দিহান মধুমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো। ও যেন ঘরোয়া আটপৌরে গৃহবধূ, শরীরে কোনো রকম অঙ্গরাগ নেই, প্রসাধনী নেই, বেশভূষা সাধারণ, তারপরও ওকে অপূর্ব সুন্দরী বলেই মনে হচ্ছিলো।
দিহান ইঙ্গিত পূর্ণ ভঙ্গিতে হাসলো, ঠাট্টার ছলে বলল, কি করবো, এতো সুন্দরী শালাজো আছে যে, থাকতে না পেরে চলে এলাম।
মধুমিতার গালে এক চিলতে লজ্জার রাঙা আভা ছড়িয়ে পড়লো। সে ভাব প্রকাশ করতে চাইলো না মধুমিতা। কিছু বলতে যাবে তার আগে দিহান বলল, মেহুলের মুখে শুনলাম বাবার নাকি শরীর অসুস্থ?
হ্যাঁ, ঐ আর কি? শশুরের শরীর কয়েক দিন ধরে খারাপ যাচ্ছে এটা ঠিক, মধুমিতা ওনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছেও গিয়ে ছিলো, তবে ও বুঝতে পারছিলো না, শুধু এই কারণেই দিহান এসেছে? শশুড়ের প্রতি ওর এতো টান? মধুমিতার শশুর মশাইয়ের তো এর আগে এর থেকে ঢের বেশি শরীর খারাপ থেকেছে, কই তখন তো দেখতে আসে নি কখনো। মধুমিতার মনে হচ্ছিলো এটা স্রেফ অজুহাত, আসল কারণ আসলে ও নিজে।
এতোক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ওঁরা এমন সময় মধুমিতার শাশুড়ি চলে এলেন, কে এসেছে দেখার জন্য। দিহানকে দেখতে পেয়ে আর আসার কারণ জানতে পেরে তিনি খুব খুশি হলেন। ওকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, আরে দিহান বাবা যে, কখন এলে, বাইরে দাঁড়িয়ে কেন, ভেতরে এসো।
দিহান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, বৌদির ইচ্ছে আমাকে বাইরে থেকেই বিদেয় করবে, হঠাৎ এসে পড়ে ওর কাজ বাড়িয়ে দিলাম, তাই।
মধুমিতা হেসে বলল, না জানিয়ে আসলে এমনই হবে। তারপর ও রান্না ঘরে চলে গেল শরবত তৈরি করতে। রান্না ঘরে এসে অনুভব করলো দিহানের সাথে কথা বলে উত্তেজিত হয়ে পরেছে ও, বুক ধুকপুক করছিলো, সারা শরীরে খুশির ছটফটানি।
হ্যাঁ সুখ অনুভব করছিলো মধুমিতা, এই ভেবে যে দিহান ওর জন্য এসেছে, ওকে দেখতে। ষোড়শী বালিকার আবেগ উথলে উঠছিলো মধুমিতার বুকে, শিহরণে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো। হাসছিল একা একাই।
এক ট্রে ভর্তি খাবার আর পানিয় নিয়ে বসার ঘরে চলে এলো মধুমিতা। ততক্ষণে শশুড় মশাইও সোফায় এসে বসেছে। আলাপচারিতা করছিলেন দিহানের সাথে।
আপনার শরীর এখন কেমন, বাবা?
এখন বেশ ভালো আছি। ভদ্রলোক খুশি খুশি মুখ করে বলল। তা মেহুলকে নিয়ে এলে না কেন?
আসলে আমি অফিস থেকে সোজা আপনাদের এখানে এলাম তো– মেহুল সকালে বলছিলো আপনার শরীর খারাপ। এই দিকে একটু কাজ ছিলো, তাই ওকে আনা সম্ভব হয় নি।
মধুমিতা এক গ্লাস জুস দিহানের হাতে দিয়ে বলল, জামাইবাবু একা এসেছে কারণ উনি আজকে থাকতে চাইছে না, তারজন্য একা এসেছে। বড়লোক মানুষ, ভাবসাব আলাদা, আমাদের বাড়িতে থাকতে যাবে কেন? মেহুলকে সাথে আনলে তো থাকতে হতো।
দিহান স্মিত হেসে উত্তর দিলো, এ তোমার মিথ্যে দোষারোপ বৌদি।
শাশুড়ি বললেন, না বাবা, বৌমা ঠিক বলেছে, তুমি তো আমাদের বাড়ি থাকোই না। আজ কিন্তু যেতে পারবে না, এসে ভালো করেছো, কয়েকদিন বেড়িয়ে যেতে হবে এখন।
সেটা তো সম্ভব নয় মা, মেহুল বাড়িতে একা.....
আমার মেয়ে কিছুকে ভয় পায় না, দিহান। ওর কথা চিন্তা করো না, থাকতে পারবে।
দিহানকে এরপর আর বেশি জোর করতে হয় নি, থাকতে রাজি হয়ে গেছিলো ও।
তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, রাত আটটা হবে। মধুমিতা রান্না ঘরে কাজ করছিলো আর ভেতরে ভেতরে অস্থির হচ্ছিলো। চিন্তায় বিভোর ও।
দিহানকে জলখাবার দিয়েই সেখান থেকে চলে এসেছিলো মধুমিতা, দিহানের সামনে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারে নি, অস্বস্তি বোধ করছিলো। বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই মধুমিতার দিকে ইঙ্গিত পূর্ণ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকছিলো দিহান, ওর দৃষ্টি প্রগাঢ়। তাই শশুর শাশুড়ির সামনে ও দৃষ্টি লক্ষ্য করে বেশি সময় সেখানে থাকে নি মধুমিতা, রান্না ঘরে কাজ আছে বলে চলে এসেছিলো।
সেই থেকে ওর ভেতর অনাবিল আকুলতা। দিহানের কথা ভেবে মধুমিতা উষ্ণ হয়ে উঠেছিলো । আজ রাতে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সেটা ওর মনকে জানাচ্ছিলো, মধুমিতাও যেন সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলো। ও কি দিহানের সান্নিধ্য পেতে আগ্রহী হয়ে পরছিলো? একরাশ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো মধুমিতার চারপাশে।
এমন সময়, হঠাৎ, দিহান নিঃশব্দে রান্না ঘরের দরজায় এসে দাড়ালো। কয়েক পলক দেখলো মধুমিতাকে। ওর ভ্রমর কালো কোমড় স্পর্শি চুল ঢেউ খেলছিল বাতাসে। শাড়ির আঁচল কোমড়ে গোঁজা, ভাঁজ পড়া বাঁকানো কোমড়ের অনেকটা অংশ বেড়িয়ে ছিলো, ফর্সা ত্বক মসৃণ আর নিটোল। পেছন ফিরে থাকায় মুখের একটা অংশ দেখা যাচ্ছিলো, সরু ভুরু, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁট–সব নিখুঁত, স্বয়ং দেবতার হাতে গড়া যেন মাটির প্রতিমা।
দিহান নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছিলো কিন্তু ঘরে ঢুকলো ঝড় হয়ে, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে। কিছু বোঝার আগেই দিহান সুদৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো মধুমিতাকে। ওকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠেছিল মধুমিতা, দিহানকে দেখতে পেয়ে বিচলিত হলো। চেষ্টা করল ওর বাহুবন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার।
দিহান ছাড়লো না দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে রাখল ওকে। মুখ নামিয়ে আনলো মধুমিতার ঘাড়ে, ওর শরীর থেকে ভেসে আসছিলো অচেনা মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। দিহান ওর গলায় নাক ঘসছিলো, শ্বাসের সাথে টেনে নিচ্ছিলো সেই মেয়েলি গন্ধ।
মৃত মধুমিতা ছটফট করছিলো। হৃদপিন্ড যেন লাফাচ্ছিলো, কাঁপন ধরে ছিলো ওর কন্ঠে, বলল, কি...কি করছো দিহান, ছাড়ো আমায়।
দিহান চোখ বুজে মধুমিতার নরম শরীরের কোমলতা অনুভব করছিলো, আবেশে বিভোর কন্ঠে বলল, না, ছাড়বো না। ওর গলার স্বর খুব নরম। অনেক দিন দূরে ছিলাম, আজ তোমায় আদর করবো, বৌদি।
না ছাড়ো, কেউ এসে পড়বে। মা বাবা বসার ঘরে আছে।
আসবে না সোনা। শান্ত কন্ঠে বলল দিহান। আমি দেখে আসলাম ওনারা নিজের ঘরে চলে গেলেন। সো নো টেনশন। আমাকে তোমায় মন খুলে ভালোবাসতে দাও।
তেজস্বিনী নারী মধুমিতা, হ্যাঁ কে হ্যাঁ আর না কে না ও মুখের ওপর তা বলে দিতে পারে। মধুমিতা আজ দোটানায় ভুগছিলো, দিহানকে মুখের উপর দৃঢ় ভাবে না বলে দিতে পারছিলো না। তবে অনেকটা শক্তি জড় করে ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। দিহানের থেকে খানিকটা দূরে সরে এসে দাঁড়ালো।
মনের ভেতর চলতে থাকা দোলাচল মুখেরও ওপর ফুটে উঠলো অনেকটা। অবশেষে দিহানের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, "দিহান থামো। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো, প্লিজ। আমিতো তোমাকে বলেছিই আমার পক্ষে এই সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না।”
শিকারি যেমন শিকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বোঝার জন্য ঠিক তেমন মধুমিতার দিকে তাকিয়ে ওর মুখের ভাব লক্ষ্য করছিল দিহান। বুঝতে চেষ্টা করছিল ওকে, ওর মনে আসলে কি চলছিল। সে অনুযায়ী দিহান পরবর্তী চাল দেবে। মধুমিতা যদি সোজা সাপটা তেজি প্রকৃতির হয় দিহান তাহলে চটপটে ধূর্ত পুরুষ। স্থির চোখে মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল, কেন বেবি? ওর কন্ঠে একরাশ কোমলতা, কেন তুমি এ সম্পর্ক শেষ করতে চাও?
মধুমিতা দু হাত দিয়ে আঁচলে গিট পাকাচ্ছিল। উত্তর দেওয়ার আগে এক মুহূর্ত কি যেন ভাবল। তারপর বলল, কারণ আমরা দুজনই বিবাহিত। আর বিবাহিত মানুষদের এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশনশিপ না করাই ভালো। একটু থেমে আবার বলল, দেখো দিহান, আমরা যা করছি তা মোটেও ঠিক নয়। দিস ইজ চিটিং। জীবনসঙ্গীদের ঠকাচ্ছি আমরা। নিজেদের করা প্রমিসগুলো ভঙ্গ করছি। একবার মেহুল আর রিতম এর কথা ভাবো ওরা ইনোসেন্ট, ওদের কোন দোষ নেই। তাহলে আমরা নিজেদের সুখের কথা ভেবে ওদের কষ্ট দেবো কেন? তার ওপর শেষ কিছুদিন ধরে আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছে যে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। রাতের বেলা ঘুমাতে পারি না চিন্তায়। এমন চলতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো, দিহান।
দিহান এবার মধুমিতার কথা গুলোর মর্মার্থ বুঝতে পারল। সব সহজ হয়ে গেল সবকিছু, যে স্বামীর প্রতি ভালবাসায় আর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে এত দিন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলো মধুমিতা। এবার দিহানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো, বিদ্রূপের হাঁসি, তবে তো মুছে গেল দ্রুতই। মুখে সিরিয়াস ভাব ফুটিয়ে বলল কেন ঠিক নয় বৌদি বলতে পারবে? আমরা দুজন নারী পুরুষ। যদি নিজেদের সান্নিধ্যে একটু সুখ পাই তাহলে এখানে দোষ কোথায়? দেখো তোমার আর আমার আলাদা আলাদা রেসপন্সিবিলিটিস আছে। আমি সেগুলো থেকে তোমাকে সরে আসতে বলছি না। কিন্তু এই যে আমাদের একজনের প্রতি আরেকজনের টান, কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আর কাছাকাছি থাকার সময় অনুভূত হওয়া তীব্র উত্তেজনা, এগুলি কি মিথ্যে? বলো বৌদি, মিথ্যে?
দিহান মেয়েদের নার্ভ পড়তে জানে। ও বুঝতে পারছিলো মধুমিতা এখন যতটা না বাস্তব তার থেকে বেশি আবেগপ্রবণ, সেই আবেগ দিয়েই দিহান ব্রেইন ওয়াশ করতে চাইছিলো মধুমিতাকে। তাই কথা বলছিলো এমন ভাবে যেন তা আবেগময় মনে হয়।
দিহানের কথা বলার ভঙ্গিতে এক ধরনের আকুলতা ছিল যা মধুমিতা কে বেশ ভালো মতো স্পর্শ করল। যদিও মধুমিতা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে চাইছিল না তবুও দিহানের কথায় বিহুল হয়ে মধুমিতা বলল, না, তোমার কথা মিথ্যা নয়। তবে এটা ঠিকও নয়।
কেন ঠিক নয়? কন্ঠের স্বরে জোর দিয়ে বললো দিহান।
কারণ বললাম তো তোমাকে। আমরা বিবাহিত।
এটা কোনো কারণ নয় বৌদি। হ্যাঁ আমরা বিবাহিত, সুখি ও অনেক দিক দিয়ে। কিন্তু আমাদের শরীর সুখী নয়। তোমার কথা ধর, পূর্ণ যুবতী তুমি। কতটুকু শারীরিক সুখ পেয়েছো তুমি? খুব কম। এটা ন্যায় হলো? এখন যদি এই শরীরের সুখের জন্য অন্য কোনো পুরুষের সাথে একটু সুখ খুঁজে নেও এতে দোষটা কোথায়, আমাকে বোঝাও।
এ যুক্তি অকাট্য, প্রকৃতই মধুমিতা যুবতী, নারীত্বের স্বাদ ও খুব কমই পেয়েছে, যৌনতা বলতে তো সেই রিতমের সাথে কাটানো একটা মাত্র বছর, তারপর থেকেই তো ওর জীবন ধুধু মরুভূমি।
তাই মৌন থাকলো মধুমিতা। দিহান নরম গলায় বলল, দেখো বৌদি, ভগবান এতো সুন্দর শরীর তোমাকে কি অব্যাহত রাখতে দিয়েছে? এখন যদি এই শরীরকে কাজে না লাগাও, বৃথা নষ্ট করো তাহলে কি তাকেও রুষ্ট করা হয় না?
তাই বলে পরকিয়া?
পরকিয়া বলো না বেবি, আমাদের দুজনের ফিলিংসকে এ নাম দিয়ে কলঙ্কিত করো না।
মধুমিতা চোখ নামিয়ে নিলো, আবারো আঙ্গুল দিয়ে শাড়ির আঁচলে গিট পাকাতে শুরু করলো। শরীরের ভঙ্গিতে প্রকট দ্বিধাগ্রস্থতা। অগোছালো ভাবে বলল, দিহান প্লিজ.... না। আমি পারবো না। আমি রিতমকে ভালোবেসি, তুমি জানো।
আমি রিতমকে ভালোবাসতে তো নিষেধ করি নি।
না দিহান, এটা ঠিক নয়, আমাদের উচিত নয় এটা করা।
দিহান মৃদু হাসলো। থুতুনি ধরে মধুমিতার মুখ উপরে তুললো। মধুমিতা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো দিহানের মুখে কোনো ধরনের দীধা নেই, গভীর চোখ দুটো তীব্রতায় গাঢ় হয়ে গেছে আর সে দুটো খুব বেশি স্থির।
বৌদি, ওর কণ্ঠ নরম অথচ দৃঢ়, তুমি জানো না তোমার শরীরের ভেতরে কী আগুন আছে। এমন সৌন্দর্য, এমন রুপ, ওগুলো লুকিয়ে রাখা অন্যায়। যৌনতা তো জীবনেরই এক অংশ। এটা প্রকৃতির নিয়ম। এটা প্রতারণা নয়, কাউকে আঘাত দিচ্ছি না আমরা। আমাদের শুধু সীমানা জানতে হবে, কোথায় থামা উচিত।
মধুমিতা কথা গুলো মেনে নিচ্ছিলো। বেশ শক্ত শক্ত যুক্তি, অথচ কি সরল অর্থ। মধুমিতা গলে যাচ্ছিলো।
দিহান আবার বলল, তুমি জানো না বৌদি, এ কয় মাস কি খারাপ গেছে আমার। তুমি হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে–আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। সব সময় তোমার কথা মনে পড়তো, কিছুই ভালো লাগতো না।
দিহানের কথা গুলো শুনতে মধুমিতার খুব ভালো লাগছিলো। তবে হঠাৎ করে বুক জ্বলে উঠলো, ফুঁসে উঠে বলল, ছাই আমার কথা মনে পড়তো। তখন তো দেখলাম কিভাবে বউকে চোখে হারাচ্ছিলে, এতোই মাখো মাখো যে এক রাত না শুয়ে থাকতে পারবে ন এমন অবস্থা। মধুমিতার কণ্ঠ রাগে, তেজে গমগম করছিলো। আমার জন্য যদি এতোই টান প্রথমেই রাজি হয়ে গেলে না কেন?
দিহান হাসলো, তুমি খুব চালাক, বৌদি। উল্টো ভাবে এই কথার উত্তর দিতে চাইছিলো দিহান, তুমি আমার বউয়ের থেকে বেশি মূল্যবান একথা শুনতে চাও তো? তাই এই ছল, আমি বুঝেছি। আচ্ছা এটা আমার মানতে কোনো আপত্তি নেই, আমি মেহুলের থেকে তোমাকেই বেশি পছন্দ করি, মেহুল তোমার কাছে কিছুই না। তোমার সাথে যদি আমার আগে পরিচয় হতো তাহলে আমি তোমায়ই বিয়ে করতাম।
মধুমিতা লজ্জায় রাঙা হলো। তেজ আর ক্রোধ কোথায় যে পালালো তার আর হদিস পেলো না। মধুমিতা আরো দুর্বল হয়ে পরলো।
আম...আমি এটা বলতে চাই নি..... আই মিন.... ইট ইজ ইম্পসিবল। মধুমিতার কন্ঠ কাঁপছিলো। দিহানের দিকে তাকাতে পারছিলো না ও। ওর প্রতিটি যুক্তি হেরে যাচ্ছিলো দিহানের প্রখর উপস্থিতিতে।
ইম্পসিবল? পৃথিবীতে ইম্পসিবল বলতে কিছুই নেই বেবি। ইট ডিপেন্ডস অন ইয়ু। যদি তুমি কিছু চাও তাহলে সেটা সম্ভব আর যদি না চাও তাহলে অসম্ভব, বুঝেছো? আর আমি তোমার শরীরকে জানি তুমি মিথ্যে বলছো, কিন্তু তোমার শরীর মিথ্যা বলবে না। ও জানে ওর কি চাই। বলে মধুমিতার কোমড় টেনে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো দিহান, মধুমিতার বুক চেপে বসলো দিহানের বুকের নিম্নাংশে।
মধুমিতা চাইছিলো তর্ক করতে, কিন্তু ওর বুক ধুকপুক, শরীরে শিহরণ জাগছিলো, কন্ঠ কাঁপছিল। এবার ও পালিয়ে যেতে চাইছিলো, নইলে যেকোনো মুহূর্তে ওর সমস্ত বাধা বালির বাঁধের মতো ভেসে যাবে।
মধুমিতার হাত দিহানের শার্টের কলার চেপে ধরেছিল, বিশ্বাস ঘাতক সেই হাত ধীরে ধীরে দিহানের বুকে গিয়ে পড়লো, শার্টের উপর দিয়ে অনুভব করছিলো ওর খাজকাটা বুকের শক্ত মাংসপেশী গুলো।
মধুমিতার কার্যকলাপে মনে মনে হাসছিলো দিহান। নারী প্রবৃত্তি। পেটে খিদে মুখে লাজ।
দিহান....প্লিজ, আমি....আমি পারব না। আমি এমন না। মধুমিতার কণ্ঠে অনুনয়, অথচ সেই কন্ঠ ছিল নরম, প্রায় আত্মসমর্পণের মতো।
দিহান হেঁসে মধুমিতার গালের ওপর এসে পড়া এলো চুল কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো, না, তুমি এমনই। ফিসফিস করে কথা বলছিলো দিহান, গরম শ্বাস মধুমিতার খোলা কাঁধে এসে পরছিলো। কেঁপে উঠছিলো মধুমিতা। ইয়ু অলসো নো ইট, হাউ ইগার ইয়ু আর। বাট ইয়ু আর অ্যাক্টিং হেজিটেট। ডু ইয়ু নো? দেজ–ইয়ুর হিডেন ইগারনেস এন্ড ফ্রেগাইল প্রোটেস্টস মেইক ইয়ু মোর ইরেসিস্টেবল?
কেন? আমার প্রতি তোমার এত লোভ কেন? কেন আমাকে এতো চাও।
লোভ নয় বেবি, টান বলো। কি যে এক অদম্য টান আমি তোমার প্রতি অনুভব করি– তা আমি নিজেই জানি না। তোমার কথা মতো আমি কত চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যেতে, পারি, উল্টো যতবার চেষ্টা করেছি তত বার তোমার কথা মনে পরেছে।
কিন্তু আমাদের এ সম্পর্ক? এটার কি হবে? মধুমিতা জিজ্ঞেস করলো।
সমাজের চোখে আমাদের এই সম্পর্ক অবৈধ, আমাদের চোখে তো নয়। আর এটা গোপন আছে গোপনই থাক। যতক্ষণ না সমাজ এটাকে আবিস্কার করে, ততক্ষণ তো আমাদের কোনো ভয় নেই। আর আমরা তো কাউকে জানাতে যাচ্ছি না। তাই এই সমাজ এই সম্পর্কের কথা কোনো দিন জানতে পারবে না। আমরা গোপনে মেলামেশা করতে পারবো, এন্ড ইট ইজ মোর এক্সাইটিং।
তাও.... শেষে আমার খারাপ লাগে। আমার মনে হচ্ছে এটা বন্ধ করা উচিত।
দিহান এতোক্ষণ মিষ্টি স্বরে কথা বলছিলো। এবার রেগে উঠলো। ধমকের স্বরে বলল, কি তখন থেকে এক ঘ্যানঘ্যানানি করে যাচ্ছো। খারাপ লাগা এতো দিন কোথায় ছিল? এতো দিন তো সব কিছু বেশ চলছিল। এখন আমাকে পাগল করে দিয়ে পিছিয়ে আসলে তো চলবে না। দুহাত দিয়ে মধুমিতার কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাগত স্বরে দিহান কথা বলছিলো।
যদি আমার সাথে সম্পর্ক না রাখতে চাও তাহলে আজ রাতে থাকতে আমাকে জোর করলে কেন? এটার কি মানে হয় বলতো?
দিহান আরো কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু মধুমিতা আর কিছু বলতে দিলো না, হামলে পড়ে চুমু খেলো দিহানকে। পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ালো, জড়িয়ে ধরলো দিহানের গলা।
মধুমিতার চিন্তা ভাবনা ধুমায়িত হয়ে পরছিলো, চারিদিকে নীলচে ধোঁয়া। মধুমিতা আর কিছু ভাবতে পারছিলো না। এই যে ও এখন রান্না ঘরে, পর পুরুষের সাথে চুমুতে মত্ত, পাশের ঘরে শশুর শাশুড়ি, এগুলো যেন ভূলেই গেছিলো।
উল্টো শক্তিমান এক পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে ওর শরীরে তরঙ্গ খেলে যাচ্ছিলো, বুকের ভেতর দারুন ঝড়।
কয়েক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুমু খেলো ওরা, তারপর দিহান দুহাতে মধুমিতার কোমড় ধরে ওকে তুলে রান্না ঘরের কাউন্টারে এনে বসালো। মধুমিতার ভেজা ঠোঁট বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছলো, পরে নিষ্পেষণ করলো দু আঙ্গুল দিয়ে। গাঢ় কন্ঠে বললো, সো উইলিং নাউ, হাহ?
ইয়ু আর মেকিং মি সো..... মধুমিতা লাজুক ভাবে বলল।
আবার চুম্বনে আবদ্ধ হলো ওরা। এবার অনেকটা রোমান্টিক ভাবে মধুমিতাকে চুমু দিলো দিহান, সময় নিয়ে, কোমল ভাবে।
তারপর দিহান বলল, এই কানেকশনটা অনুভব করতে পারছো বেবি? এই কামনা, এই উষ্ণতা, এতোক্ষণ তুমি অস্বীকার করছিলে।
এই মুহূর্তে মধুমিতার মনে হচ্ছিলো যদি দিহান আরেকটু জোর করে তাহলে মধুমিতা এখানেই দিহানের সাথে মৈথুন করে ফেলবে, নিজের উপর কন্ট্রোল হাড়াচ্ছিলো ও। কামনারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল প্রতিটি রক্ত কনায়। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে ধরে রাখলো মধুমিতা, নিবৃত করলো সেই ভাবনা থেকে।
কেন এমন করছিলে বেবি?
মধুমিতা বললো, বিকজ আই এম স্কেয়ার্ড অব বিং এডিক্টেড টু দিস।
ডোন্ট, গাড় কন্ঠে ফিসফিস করে বলল দিহান, মাতাল করা ওর স্বর, লালসায় ভরপুর। রাতের বেলা তোমার কাছে আসবো বৌদি, তোমার ঘরে, শুধু তুমি আর আমি। ইয়ু নিড এ হার্ড সেক্স টুডে। দ্যান ইয়োর মাইন্ড উইল রিফ্রেশ।
মধুমিতার পা কেঁপে উঠলো। দিহান কথায় ওর মনেও আগ্রহ দেখা দিচ্ছিলো।
আর কেউ থাকবে না, কেউ বাধা দেবে না আমাদের। না রিতম, না মেহুল না কোনো মোরাল। এই রাত শুধু আমাদের। প্লিজ ডোন্ট ডিসাপয়েন্ট মি।
মধুমিতা একটা দুর্বল হাসি হাসলো। ঐ হাসি দেখেই যা বোঝার বুঝে গেল ও, দিহানও পাল্টা হেঁসে সেখান থেকে চলে গেলো, মধুমিতা একা দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানে, অতৃপ্ত আর কামুক মনে হচ্ছিলো ওর নিজেকে।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)