10-10-2025, 07:06 PM
৭(চ) এর বাকি অংশ.........
দুপুরের খাবার শেষ করে রানী যে নিজের ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি । এমন কি চা খাওয়ার জন্যও না । পুরোটা বিকেল জানালার ধারে বসে ছিলো । রাজীব যখন ওর মায়ের কবরের পাশে ছিলো , ওই সময় জান্নাত ছাড়া রানীও জানাল থেকে দৃশ্যটা দেখছে । মনে মনে ভেবছে , কি করে ও আজকের এই দিনটা ভুলে গেলো । গতকালের ঝামেলা , আজকে সকালের আনন্দ এসব কোন অজুহাত হতে পারে না ।
রানী ইচ্ছে করেই মায়ের কবরের পাশে যায়নি , ওর কাছে মনে হয়েছে গেলে মা ওকে তিরস্কার করবে , বলেবে _ রাজীব মনে রাখতে পারলো আর তুই পারলি না ?
রানী এও ভাবে নিশ্চয়ই মা এখন ওদের দেখে , রাজীবের জন্য দোয়া করছে আর ওর আচরণের জন্য মনে দুঃখ পাচ্ছে ।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে রানীর অভিমান ও বাড়তে থাকে , এক সময় এসে মনে হয় । ওর জীবনে কোন কিছুই ঠিক মত হচ্ছে না । না পড়াশুনা হচ্ছে , না কোন সম্পর্কের দাবি মেটাতে পারছে । জয়ের সাথে এই ভুল বোঝাবুঝির কারন ও নিজেই , তারপর আজকে জান্নাতের সাথেও একটু মনোমালিন্য হয়ে গেলো । জান্নাত ওর ান্ধবী অথচ আজকে কেমন রাজীবের পক্ষ হয়ে এক প্রকার ঝগড়া করলো ওর সাথে । জান্নাতের কি উচিৎ ছিলো না ওকে বোঝার , তা না করে জান্নাত ও রাজীবের পক্ষ নিলো। ধিরে ধিরে ওর সব কাছের মানুষ ওর কাছ থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে ।
রানীকে প্রচণ্ড ফ্রাস্টেশন আর অনিশ্চয়তা আঁকড়ে ধরে । ওর মনে হয় এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ও একা হয় পরবে । কিন্তু অনেক ভেবেও ওর দোষ খুজে পায় না । ভেবে ভেবে আকুল হয় , ও কি এমন করলো যে ওর কাছের মানুষ রা সবাই ওকে ত্যাগ করছে । প্রথমে জয় এখন জান্নাত । আর মা তো সেই ছোট বেলায় ই ছেড়ে গেছে । বাবা থেকেও না থাকার মতই ।
বিকেলের দিকে রানীর কিছুটা তন্দ্রা লেগে গিয়েছিলো , জানালার গ্রিলে মাথা রেখেই চোখ দুটো বুজে এসেছিলো । কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সেই তন্দ্রা কেটে যায় । কিন্তু রানীর উঠতে ইচ্ছে হয় না । বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজে। এর পর রানী বাইরের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে আবারো জানালার গ্রিলে মাথা এলিয়ে দেয় ।
এর কিছুক্ষন পর ই একটা মেয়েলি গলার আওয়াজ ওর কানে আসে । জান্নাত এসেছে , জান্নাতের গলার স্বর চিনতে ওর ভুল হয় না । রানীর বিমর্ষ মন একটু খুশি হয়ে ওঠে । ভাবে জান্নাত হয়তো দুপুরের ওই আচরণের জন্য ওর সাথে মিট্মাট করতে এসেছে। রানী জান্নাতের জন্য নিজেকে তৈরি করে নেয় , মনে মনে ঠিক করে , ও নিজেও নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইবে । আপনজনের কাছে ক্ষমা চাইতে দোষ নেই ।
রানী ওয়েট করতে থাকে , কিন্তু জান্নাত আসে না । রানী আরো ওয়েট করে , ভাবে হয়তো রাজীবের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। রানী খেয়াল করেছে এর আগে জান্নাত রাজীবের সাথে এতো কথা বলতো না । আর রাজীব তো আজন্ম মুখচোরা । কিন্তু হসপিটালে দুদিন এক সাথে থাকার পর ওদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ।
রানী আরো ওয়েট করে , কিন্তু জান্নাত আসে না । ধিরে ধিরে রানীর মনে অভিমান দানা বাধতে থাকে । বেশ কয়েকবার খিল খিল হাসির শব্দ ও শুনতে পায় রানী ।
হঠাত করে রানীর মাথায় চিন্তা আসে , শেষ পর্যন্ত রাজীব ওর সবচেয়ে কাছের ান্ধবিকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নিলো। রাজীবের হয় জান্নাতের আজকে ওকালতি , আর এখন ওকে উপেক্ষা করে নিজেদের মাঝে আড্ডা দেয়া এসব কিছুই রানীকে ভাবতে বাধ্য করছে । জান্নাত আর ওর ান্ধবী নেই , ও এখন থেকে রাজীবের বন্ধু । রাজীব ওর শৈশব কৈশোর কন্ট্রোল করেও খান্ত হয়নি , ওর সবচেয়ে প্রিয় ান্ধবিকেও কেড়ে নিয়েছে । সুধু কি তাই ? আজকে এই বিশেষ দিনটাও রাজীব ওর জন্য কঠিন করে তুলেছে । নিজে সব করেছে কিন্তু ওকে একবার ডাক দেয়ার ও প্রায়জন মনে করেনি । রানী মনে মনে ভাবে ওর ভাই কে ও যেমন সহজ সরল ভাবতো । অতটা সহজ রাজীব নয় । রাজীব একটা সাইকো , নিজেকে ভালোমানুষ প্রমান করার জন্য ও নিজের আশেপাশের মানুষদের কে ডি-ফেম করে সুকৌশলে ।
নিজেকে এভাবে একা পেয়ে রানীর কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলার কাছে জমা হয় । কিন্তু রানী কাঁদে না , কান্নার বদলে রানীর মাঝে দৃঢ় সংকল্প দেখা দেয় । ভাবে আজ থেকে ও ব্যাকস্টেবার রাজীব আর বিশ্বাসঘাতক জান্নাত কে একদম পাত্তা দেবে না।
****
জান্নাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষন পর রাজীব বিছানা থেকে উঠে দাড়ায় , তোষকের নিচ থেকে ডাইরি টা বের করে । তারপর নিজের টেবিলের ড্রয়ার খুলে , ডায়রিটা যত্ন সহকারে রেখে দেয় । তারপর চাবি ঘুরিয়ে সেটা নিরাপদ করে তোলে ।
ঘড়ির দিকে তাকায় রাজীব , প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে , বাইরেও আলো কমে এসেছে । জান্নাতের সাথে প্রায় এক ঘণ্টার মত ছিলো ও । অথচ মনেই হয়নি এতটা সময় পেরিয়ে গেছে । মনে হয়েছে কয়েক মিনিট ছিলো জান্নাত ।
রাজীব ঘর থেকে বের হয় , রানীর ঘরের সামনে এসে দেখে এখনো দরজা লাগানো । ভাবে হয়তো ঘুমাচ্ছে , একবার ভাবে ডাকবে, কিন্তু ডাকেনা । রাজীব ছাদে চলে আসে , অনেকদিন পর বিকেলে ছাদে উঠছে ও । আজকাল আর তেমন ওঠা হয়না । ছাদে উঠেই যে জিনিস ওর চোখে পরে সেটা হচ্ছে , শুকানোর জন্য দেয়া কাপড় গুলো এখনো ছাদেই রয়ে গেছে । রাজীব সেগুলো একটা একটা করে তুলে হাতে নেয় । কয়েকটি কাপড় তোলার পর ই চৌধুরী বাড়ির ছাদ ওর চোখের সামনে চলে আসে । আর সেখানে রাজীব দেখতে পায় জয় কে । দাড়িয়ে আছে , রাজীব আর রানীর মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে ।
জয় ও শিকদার বাড়ির ছাদের উপরে কিছু একটা নড়াচড়া দেখে এদিকে তাকায় । দুই প্রাক্তন বন্ধুর চোখাচোখি হয় । জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । জয় চায়নি এই মুহূর্তে রাজীবের সাথে অথবা রানীর সাথে দেখা হোক । এই দুর্বল মুহূর্তটা ও গোপন রাখতে চেয়েছিলো ।
রাজীবের দৃষ্টি কিছুটা নরম ।
জয় আর দাড়ায় না , দ্রুত ছাদ থেকে চলে যায় । রাজীব ও বাকি কাপড় গুলো তুলে নিচে নেমে যায় । ছাদে থাকার পরিকল্পনা বাদ দেয় ।
****
“ আরে তুই এতো সকাল সকাল?” জয় কে দেখেই জান্নাত ঠ্যাশ দিয়ে বলে ।
“ আর তুই আমাকে ফলো করার ডিসিশন কবে থেকে নিলি?” জয় উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে
“ তোকে ফলো করতে যাবো কোন দুঃখে ? বৃদ্ধ বয়সে আমার ডিপ্রেশনে পরার সখ নাই”
“ সাবকন্সাস ভাবে তো করেই ফেললি , আগে আমি ভাবতাম চৌধুরী পরিবারে সুধু আমার মাঝেই হিউমার আছে , ওয়েলকাম টু দ্যা ফ্যামেলি” জয় এই বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ।
“ যাহ ভাগ” এই বলে জান্নাত জয়ের হাত সরিয়ে দেয় ।
“ এই তোরা কি এক মুহূর্ত ঝামেলা না করে থাকতে পারিস না?” রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে আয়শা । তারপর আবার জয়ের উদ্দেশ্যে বলে “ আজকে তোর ছোট আম্মুর মৃত্যু বার্ষিকী , একবার জিয়ারত করে আসতে পারলি না? ”
“ উফ আমি তো ভুলেই গেছি” জান্নাত কপালে হাত রেখে বলে ।
“ আমি করেছি আম্মু” জয় চেঁচিয়ে বলে
“ কখন করলি, তোকে তো আজকে দেখলাম ই না”
“ এই এখন করে এলাম ছাদ থেকে”
“ ছাদ থেকে কেনো, যা সামনে গিয়ে করে আয়”
“ চল আমিও যাবো” মাঝ থেকে জান্নাত বলে
“ না না তোর যেতে হবে না মা , মেয়েদের কবরের সামনে যাওয়া ঠিক নয় “ আয়শা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে ।
এদিকে জয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে “ আম্মু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে , এখন আমি কবরের সামনে যাবো!!! ছাদ থেকে তো করেই এসেছি”
“ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা করো , ছোট বেলায় তোমাদের ছোট আম্মু কত আদর করতো ভুলে যেয়ো না , আসলে পরের ছেলে কখনো নিজের হয় না” আয়শা বেশ উস্মার সাথে বলে , কিন্তু জয় কে আর যেতেও বাধ্য করে না । সন্ধ্যা হওয়ার বাহান কাজে লেগে গেছে ্ দেখে জয় খুশি হয় । তবে জান্নাত কে বিপদে ফেলতে পিছু হটে না বলে ।
“ আমি তো তবুও মনে রেখছি , তোমার মেয়ে তো ভুলেই গেছে”
“ আমি তোর তোর মত আজাইরা থাকি না , আমার মাথায় সারাদিন প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা ঘোরে, তাই হয়তো ভুলে গেছি” জান্নাত নিজের ডিফেন্সে বলে ।
“ দুই একটা প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আমার সাথেও শেয়ার করিস , দেখি তোর কি প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আছে”
আয়শা আর দাড়ায় না , এই দুই জনের যুদ্ধ বহক্ষন চলবে আরো । ওর এতো সহ্য ক্ষমতা নেই ।
****
অনেকক্ষণ জান্নাতের সাথে লড়াই করে জয় নিজের ঘরে চলে আসে ।
অতীতের কিছু কথা জয়ের মনে পরে । আফরোজা জয় কে সত্যিই অনেক আদর করতো। মাঝে মাঝে রাজীব এই বলে নালিশ করতো যে ওর মা ওর চেয়ে বেশি জয় কে ভালোবাসে । তবে জয় আফরোজার সামনে খুব লাজুক হয়ে যেতো । কেন হয়ে যেতো সেটা মনে পরলে জয়ের এখন খুব হাসি পায় । আফরোজা খুব সুন্দরী ছিলো , আর ছোট্ট জয়ের লজ্জা পাওয়ার এটাই ছিলো কারন । সব জায়গায় জয় ছিলো হিরো , আর আফরোজার সামনে একেবারে মেনি বেড়াল । আর সেটা নিয়ে আফরোজা প্রায়ই মজা করে বলতো “ তুই কি আমার মেয়ের জামাই নাকি রে যে আমাকে দেখলেই লজ্জা পাস?” সবাই খুব হাসত তখন । আর আফরোজা জোড় করে জয় কে ধরে গালে কপালে চুমু খেতো । জয় লিজ্জায় লাল হয়ে যেতো ।
পুরনো এই সৃতি মনে হতেই জয়ের মনটা ভারি হয়ে আসে । রানীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে । মনে মনে ভাবে , তোমার মেয়ে আমাকে রেপিস্ট ভাবে ছোট আম্মু , রেপিস্ট !!! তুমি চিন্তা করতে পারো ? আজকে তুমি থাকলে এর বিচার করতে ।
****
আজকে মন ভালো থাকায় জয়ের সাথে অনেকটা সময় খুনসুটি করে কাটিয়েছে জান্নাত ।
এখন নিজের ঘরে আসতেই ওর মনে হলো , রানীর সাথে আজকে কাজটা ঠিক হয়নি , আজকে ক্যাম্পাসেও রানীর সাথে ভালো আচরন করা হয়নি । আবার বিকেল বেলা ওদের বাড়ি গিয়েও ওর সাথে দেখা না করেই চলে এসেছে । আসলে রানীর প্রতি কিছুটা রাগ থেকেই এই কাজ করেছে জান্নাত । কিন্তু এই দিনে রানীর প্রতি রাগ না দেখিয়ে ওর সাথে কিছু সময় ব্যয় করা উচিৎ ছিল বলে মনে হয় জান্নাতের ।
সেই সাথে ছোট আম্মুর মৃত্যুদিন ভুলে যাওয়া ও উচিৎ হয়নি । যদিও ওর তেমন একটা সৃতি নেই । তবে মায়ের মুখ শুনেছে । কেমন করে ছোট আম্মু কোমর বেধে ঝগড়া করতো যখন কেউ ওকে কালো বলতো । এমন কি জান্নাতের আপন ফুপুদের ও ছাড় দিতো না । যদিও পাড়াপরশি আত্মীয় স্বজনদের মুখ বন্ধ হয়নি , কিন্তু নিজের ঘরের ভেতর অন্তত এই নিয়ে তেমন কিছু সহ্য করতে হয় না জান্নাত কে । সুধু জয় মাঝে মাঝে ওর কালো হওয়ার প্রসঙ্গ তোলে, তাও সেটা দুস্টুমি করে ।
এর পর জান্নাত ব্যাস্ত হয়ে পরে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তৈরি হতে । টাকা জোগার করা তেমন কঠিন কিছু হবে না । ওর নিজের ও কিছু টাকা আছে । জান্নাত খরচ করার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকে , ফেন্সি পোশাক বা কসমেটিক্সের তেমন সখ নেই ওর । তাই ওর পকেট মানি থেকে অনেক টাকা বেঁচে যায় , তা ছাড়া নানা রকম উৎসবে ওর ফুপুরা ওকে অনেক টাকা দেয় । সেগুলোও জমানো আছে । সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার উপরে । বাকি অল্প যা লাগবে সেটা মায়ের কাছ থেকে ধার করে নেয়ার চিন্তা করে । সুধু মাত্র একটা ভালো ল্যাপ্টপ ছাড়া খুব অত্যাধুনিক কিছু কিনবে না বলে ঠিক করে জান্নাত , বেসিক ইকুইপমেন্ট দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা ওর ।
প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের লিস্ট করা , আর চ্যানেলের ব্যাপারে আর কিছু গভির চিন্তা করতে করতে অনেকটা সময় পার করে দেয় জান্নাত । এরে পর রাতের খাবার খেয়ে , কিছুক্ষন পড়াশুনা করে । তারপর পোশাক চেঞ্জ করে বিছানায় । নিজের আলাদা রুম হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই জান্নাত আবিস্কার করে যে ও মিনিমাম পোষাকে ঘুমাতে সাচ্ছন্দ বোধ করে । এমন কি কৈশোরে বেশ কয়েকবার উলঙ্গ হয়েও শুয়েছে । ওটা আরো বেশি আরামদায়ক । তবে একেবারে উলঙ্গ হয়ে শোয় না জান্নাত , শরীরে একটা ফিনফিনে ঢোলা টি সার্ট আর নিচে সুধুই একটা কটন প্যান্টি। তারপর শরীরে চাদর জড়িয়ে , এসির টেম্পারেচার ২২ তে সেট করে ঘুম । মানুষ ভাবে জান্নাত নিজের বিছানা ছেড়ে অন্য কোথাও ঘুমাতে পারে না , তাই কোন জায়গায় গিয়ে থাকতে চায় না । আসলে জান্নাত সম্পূর্ণ পোশাক পরে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না তাই অন্য কোথাও গিয়ে রাতে থাকতে চায় না ।
তবে আজকে বিছানায় শুয়েই ঘুম আসলো না , রাজীব কে রাজি করাতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ওর । বেশ কয়েকবার মন কে শাসন ও করেছে , বলেছে ‘ এই দুষ্ট মন , ওখানে তো খুব বলে এলি যে এটা প্রফেশনার পার্টনারশিপ , তাহলে এখন আহ্লাদে আটখানা কেনো হচ্ছিস? যদি উল্টো পাল্টা কিছু করিস তাহলে কিন্তু তোকে আমি ছারবো না, খুব সাবধানে থাকতে হবে , নো হাঙ্কি পাঙ্কি’
কিন্তু এই শাসনেও কোন কাজ হচ্ছে না , ওর মন ওকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে সেই সন্ধ্যা থেকেই । এখনো চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে বার বার ওর ঠোঁটে হাসি টেনে দিচ্ছে । যতবার ই মনে আসছে অনেকটা সময় রাজীবের সাথে কাটানো হবে , তখনি সেই দুষ্ট হাসিটা চলে আসছে । সেই সাথে রাজীবের তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে যখন ওর দরজা চাপিয়ে দিচ্ছিলো ।
জান্নাত হাসে একা একা , হাসতে হাসতে বিড়বিড় করে বলে ‘ তৈরি থাকো মি.রাজীব এর পর আমার সাথে বদ্ধ ঘরে অনেক সময় পার করতে হবে , ঐটুকু তেই কেমন চুপসে গিয়েছিলো তোমার মুখ খানা, যেন আমি দরজা বন্ধ করে তোমাকে কিছু করে ফেলবো” হিহিহি করে আবার হাসে জান্নাত ।
হঠাত করেই জান্নাতের মনে হয় রাজীব কিছু একটা লুকিয়েছিলো ওকে দেখে । জান্নাত প্রথমে ভাবে আন্ডারগারমেন্টস হবে, ভেবে বেশ এমিউসড হয় , জান্নাত মনে করতো ছেলেরা এসব ব্যাপারে তেমন লজ্জা পায় না মেয়েদের মত । জয় তো ওর আন্ডারয়ার খোলাই রেখে দেয় । কিন্তু রাজীব কে দেখে তো মনে হলো বেশ লজ্জা পেয়েছে ।
পরক্ষনেই অবশ্য এই ধারনাটা বাদ দেয় জান্নাত , রাজীব আসলে তখন লজ্জিত ছিলো না । জান্নাতের কৌতূহল বৃদ্ধি পায় । রাজীব ওর ঘরের কোন একটা জিনিস লুকাচ্ছে , এটা এক ভাবে যেমন খুব সাধারন ব্যাপার , আবার তা নয় ও । জান্নাত আরো একটু ভাবে । একপর্যায়ে নিজের উপর বিরক্ত ও হয় । এই ছোট জিনিসটা নিয়ে ওর এতো কৌতূহল কেনো হচ্ছে এই ভেবে। কিন্তু কৌতূহলটা কিছুতেই দূর করতে পারে না ।
জান্নাত বুঝে যায় এই কেইস সল্ভ না করে ওর ঘুম আসবে না । তাই সম্পূর্ণ মনোযোগ টেনে একত্রিত করে । জান্নাত একবার কোথায় যেন পড়েছিলো , মানুষের চোখ অনেক কিছুই দেখে সেটা মেমরিতে সেভ করে রাখে । মানুষ ভাবে সে দেখেনি , আসলে সে দেখছে । তাই জান্নাত একাগ্রচিত্তে মনে করার চেষ্টা করে । বেশ কিছুক্ষন পর জান্নাত আবার সি জিনিসটা দেখতে পায় , হ্যা ওটা একটা বইয়ের মত জিনিস । কিন্তু রাজীব বই কেনো লুকাবে !!! ভেবে পায় না জান্নাত।
আরো কিছুক্ষন ভাবে , কি বই রাজীব ওকে দেখে লুকাবে । একবার মজার ছলে ভাবে ইরোটিক কোন বই নাতো? তবে সেই চিন্তা বাদ দেয় । মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে রাজীবের মত ছেলে ইরোটিক গল্প পড়বে , এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম ।
আরো কিছু সময় পার হয়ে যায় , জান্নাত ফ্রাস্টেটেড হয়ে পরে । মাঝে মাঝেই ওর এমন হয় । ছোট খাটো বিষয় না মেলাতে পারলে ওর ঘুম হয় না । যদিও রাজীব ওর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ , তাই বলে রাজীব ওর নিজের ঘরে ওকে দেখে কি লুকালো না লুকালো সেটা ভেবে রাতের ঘুম হারাম করার কোন কারন দেখে না জান্নাত ।
নিরুপায় হয়ে জান্নাত আবার ভাবতে থাকে । এবং বেশ অনেকক্ষণ পর , ওর মনে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখা আসে । সেটা হচ্ছে রাজীব যা লুকিয়েছে সেটা কোন বই ছিলো না , সেটা ছিলো একটা ডায়রি । হয়তো রাজীব ডাইরি লেখে এবং সেটা কাউকে জানাতে চায় না ।
জান্নাত ব্যাপারটা মীমাংসা করতে পেরে খুব শান্তি পায় , এই ভেবে যে এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে । কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই সেই ডায়রি আবার ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে । ডায়রিটা আধুনিক নয় , দেখেই মনে হচ্ছে অনেক পুরনো আর রঙচঙা ডিজাইন করা পুতি বসানো , মেয়েলি ধরনের ডায়রি । আর ডায়রির উপরে বড় বড় অক্ষরে কিছু একটা লেখা । সেই লেখা জান্নাত দেখেনি । তবে সেটা রাজীব লেখা নয় অথবা রাজীবের সম্পূর্ণ নাম ও নয় ।
ডায়রিটা রাজীবের হওয়ার সম্ভাবনা নেই । এতো আগে থেকে রাজীব ডাইরি লেখে এটা বিশ্বাস করা কঠিন । এবার অবশ্য খুব বেশি সময় নেয় না জান্নাত । অংক খুব সহজেই মিলে যায় । ওটা একটা মেয়েলি ডাইরি এবং অনেক পুরনো । জান্নাত ভাবে ওটা যেহেতু অনেক পুরনো তাই সেটা রাজীবের মায়ের , মানে আফরোজার ডায়রি । আর আজকে আফরোজার মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় রাজীব ডাইরিটা ঘেটে দেখছিলো ।
কিন্তু জান্নাত ভেবে পায় না এই ডায়রি লুকানোর কি আছে । যেহেতু রাজীব পড়তে পারছে , সেহেতু এমন কিছু সেখানে লেখা নেই যা গোপন হতে পারে ।
*****
দুপুরের খাবার শেষ করে রানী যে নিজের ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি । এমন কি চা খাওয়ার জন্যও না । পুরোটা বিকেল জানালার ধারে বসে ছিলো । রাজীব যখন ওর মায়ের কবরের পাশে ছিলো , ওই সময় জান্নাত ছাড়া রানীও জানাল থেকে দৃশ্যটা দেখছে । মনে মনে ভেবছে , কি করে ও আজকের এই দিনটা ভুলে গেলো । গতকালের ঝামেলা , আজকে সকালের আনন্দ এসব কোন অজুহাত হতে পারে না ।
রানী ইচ্ছে করেই মায়ের কবরের পাশে যায়নি , ওর কাছে মনে হয়েছে গেলে মা ওকে তিরস্কার করবে , বলেবে _ রাজীব মনে রাখতে পারলো আর তুই পারলি না ?
রানী এও ভাবে নিশ্চয়ই মা এখন ওদের দেখে , রাজীবের জন্য দোয়া করছে আর ওর আচরণের জন্য মনে দুঃখ পাচ্ছে ।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে রানীর অভিমান ও বাড়তে থাকে , এক সময় এসে মনে হয় । ওর জীবনে কোন কিছুই ঠিক মত হচ্ছে না । না পড়াশুনা হচ্ছে , না কোন সম্পর্কের দাবি মেটাতে পারছে । জয়ের সাথে এই ভুল বোঝাবুঝির কারন ও নিজেই , তারপর আজকে জান্নাতের সাথেও একটু মনোমালিন্য হয়ে গেলো । জান্নাত ওর ান্ধবী অথচ আজকে কেমন রাজীবের পক্ষ হয়ে এক প্রকার ঝগড়া করলো ওর সাথে । জান্নাতের কি উচিৎ ছিলো না ওকে বোঝার , তা না করে জান্নাত ও রাজীবের পক্ষ নিলো। ধিরে ধিরে ওর সব কাছের মানুষ ওর কাছ থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে ।
রানীকে প্রচণ্ড ফ্রাস্টেশন আর অনিশ্চয়তা আঁকড়ে ধরে । ওর মনে হয় এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ও একা হয় পরবে । কিন্তু অনেক ভেবেও ওর দোষ খুজে পায় না । ভেবে ভেবে আকুল হয় , ও কি এমন করলো যে ওর কাছের মানুষ রা সবাই ওকে ত্যাগ করছে । প্রথমে জয় এখন জান্নাত । আর মা তো সেই ছোট বেলায় ই ছেড়ে গেছে । বাবা থেকেও না থাকার মতই ।
বিকেলের দিকে রানীর কিছুটা তন্দ্রা লেগে গিয়েছিলো , জানালার গ্রিলে মাথা রেখেই চোখ দুটো বুজে এসেছিলো । কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সেই তন্দ্রা কেটে যায় । কিন্তু রানীর উঠতে ইচ্ছে হয় না । বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজে। এর পর রানী বাইরের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে আবারো জানালার গ্রিলে মাথা এলিয়ে দেয় ।
এর কিছুক্ষন পর ই একটা মেয়েলি গলার আওয়াজ ওর কানে আসে । জান্নাত এসেছে , জান্নাতের গলার স্বর চিনতে ওর ভুল হয় না । রানীর বিমর্ষ মন একটু খুশি হয়ে ওঠে । ভাবে জান্নাত হয়তো দুপুরের ওই আচরণের জন্য ওর সাথে মিট্মাট করতে এসেছে। রানী জান্নাতের জন্য নিজেকে তৈরি করে নেয় , মনে মনে ঠিক করে , ও নিজেও নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইবে । আপনজনের কাছে ক্ষমা চাইতে দোষ নেই ।
রানী ওয়েট করতে থাকে , কিন্তু জান্নাত আসে না । রানী আরো ওয়েট করে , ভাবে হয়তো রাজীবের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। রানী খেয়াল করেছে এর আগে জান্নাত রাজীবের সাথে এতো কথা বলতো না । আর রাজীব তো আজন্ম মুখচোরা । কিন্তু হসপিটালে দুদিন এক সাথে থাকার পর ওদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ।
রানী আরো ওয়েট করে , কিন্তু জান্নাত আসে না । ধিরে ধিরে রানীর মনে অভিমান দানা বাধতে থাকে । বেশ কয়েকবার খিল খিল হাসির শব্দ ও শুনতে পায় রানী ।
হঠাত করে রানীর মাথায় চিন্তা আসে , শেষ পর্যন্ত রাজীব ওর সবচেয়ে কাছের ান্ধবিকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নিলো। রাজীবের হয় জান্নাতের আজকে ওকালতি , আর এখন ওকে উপেক্ষা করে নিজেদের মাঝে আড্ডা দেয়া এসব কিছুই রানীকে ভাবতে বাধ্য করছে । জান্নাত আর ওর ান্ধবী নেই , ও এখন থেকে রাজীবের বন্ধু । রাজীব ওর শৈশব কৈশোর কন্ট্রোল করেও খান্ত হয়নি , ওর সবচেয়ে প্রিয় ান্ধবিকেও কেড়ে নিয়েছে । সুধু কি তাই ? আজকে এই বিশেষ দিনটাও রাজীব ওর জন্য কঠিন করে তুলেছে । নিজে সব করেছে কিন্তু ওকে একবার ডাক দেয়ার ও প্রায়জন মনে করেনি । রানী মনে মনে ভাবে ওর ভাই কে ও যেমন সহজ সরল ভাবতো । অতটা সহজ রাজীব নয় । রাজীব একটা সাইকো , নিজেকে ভালোমানুষ প্রমান করার জন্য ও নিজের আশেপাশের মানুষদের কে ডি-ফেম করে সুকৌশলে ।
নিজেকে এভাবে একা পেয়ে রানীর কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলার কাছে জমা হয় । কিন্তু রানী কাঁদে না , কান্নার বদলে রানীর মাঝে দৃঢ় সংকল্প দেখা দেয় । ভাবে আজ থেকে ও ব্যাকস্টেবার রাজীব আর বিশ্বাসঘাতক জান্নাত কে একদম পাত্তা দেবে না।
****
জান্নাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষন পর রাজীব বিছানা থেকে উঠে দাড়ায় , তোষকের নিচ থেকে ডাইরি টা বের করে । তারপর নিজের টেবিলের ড্রয়ার খুলে , ডায়রিটা যত্ন সহকারে রেখে দেয় । তারপর চাবি ঘুরিয়ে সেটা নিরাপদ করে তোলে ।
ঘড়ির দিকে তাকায় রাজীব , প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে , বাইরেও আলো কমে এসেছে । জান্নাতের সাথে প্রায় এক ঘণ্টার মত ছিলো ও । অথচ মনেই হয়নি এতটা সময় পেরিয়ে গেছে । মনে হয়েছে কয়েক মিনিট ছিলো জান্নাত ।
রাজীব ঘর থেকে বের হয় , রানীর ঘরের সামনে এসে দেখে এখনো দরজা লাগানো । ভাবে হয়তো ঘুমাচ্ছে , একবার ভাবে ডাকবে, কিন্তু ডাকেনা । রাজীব ছাদে চলে আসে , অনেকদিন পর বিকেলে ছাদে উঠছে ও । আজকাল আর তেমন ওঠা হয়না । ছাদে উঠেই যে জিনিস ওর চোখে পরে সেটা হচ্ছে , শুকানোর জন্য দেয়া কাপড় গুলো এখনো ছাদেই রয়ে গেছে । রাজীব সেগুলো একটা একটা করে তুলে হাতে নেয় । কয়েকটি কাপড় তোলার পর ই চৌধুরী বাড়ির ছাদ ওর চোখের সামনে চলে আসে । আর সেখানে রাজীব দেখতে পায় জয় কে । দাড়িয়ে আছে , রাজীব আর রানীর মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে ।
জয় ও শিকদার বাড়ির ছাদের উপরে কিছু একটা নড়াচড়া দেখে এদিকে তাকায় । দুই প্রাক্তন বন্ধুর চোখাচোখি হয় । জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । জয় চায়নি এই মুহূর্তে রাজীবের সাথে অথবা রানীর সাথে দেখা হোক । এই দুর্বল মুহূর্তটা ও গোপন রাখতে চেয়েছিলো ।
রাজীবের দৃষ্টি কিছুটা নরম ।
জয় আর দাড়ায় না , দ্রুত ছাদ থেকে চলে যায় । রাজীব ও বাকি কাপড় গুলো তুলে নিচে নেমে যায় । ছাদে থাকার পরিকল্পনা বাদ দেয় ।
****
“ আরে তুই এতো সকাল সকাল?” জয় কে দেখেই জান্নাত ঠ্যাশ দিয়ে বলে ।
“ আর তুই আমাকে ফলো করার ডিসিশন কবে থেকে নিলি?” জয় উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে
“ তোকে ফলো করতে যাবো কোন দুঃখে ? বৃদ্ধ বয়সে আমার ডিপ্রেশনে পরার সখ নাই”
“ সাবকন্সাস ভাবে তো করেই ফেললি , আগে আমি ভাবতাম চৌধুরী পরিবারে সুধু আমার মাঝেই হিউমার আছে , ওয়েলকাম টু দ্যা ফ্যামেলি” জয় এই বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ।
“ যাহ ভাগ” এই বলে জান্নাত জয়ের হাত সরিয়ে দেয় ।
“ এই তোরা কি এক মুহূর্ত ঝামেলা না করে থাকতে পারিস না?” রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে আয়শা । তারপর আবার জয়ের উদ্দেশ্যে বলে “ আজকে তোর ছোট আম্মুর মৃত্যু বার্ষিকী , একবার জিয়ারত করে আসতে পারলি না? ”
“ উফ আমি তো ভুলেই গেছি” জান্নাত কপালে হাত রেখে বলে ।
“ আমি করেছি আম্মু” জয় চেঁচিয়ে বলে
“ কখন করলি, তোকে তো আজকে দেখলাম ই না”
“ এই এখন করে এলাম ছাদ থেকে”
“ ছাদ থেকে কেনো, যা সামনে গিয়ে করে আয়”
“ চল আমিও যাবো” মাঝ থেকে জান্নাত বলে
“ না না তোর যেতে হবে না মা , মেয়েদের কবরের সামনে যাওয়া ঠিক নয় “ আয়শা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে ।
এদিকে জয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে “ আম্মু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে , এখন আমি কবরের সামনে যাবো!!! ছাদ থেকে তো করেই এসেছি”
“ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা করো , ছোট বেলায় তোমাদের ছোট আম্মু কত আদর করতো ভুলে যেয়ো না , আসলে পরের ছেলে কখনো নিজের হয় না” আয়শা বেশ উস্মার সাথে বলে , কিন্তু জয় কে আর যেতেও বাধ্য করে না । সন্ধ্যা হওয়ার বাহান কাজে লেগে গেছে ্ দেখে জয় খুশি হয় । তবে জান্নাত কে বিপদে ফেলতে পিছু হটে না বলে ।
“ আমি তো তবুও মনে রেখছি , তোমার মেয়ে তো ভুলেই গেছে”
“ আমি তোর তোর মত আজাইরা থাকি না , আমার মাথায় সারাদিন প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা ঘোরে, তাই হয়তো ভুলে গেছি” জান্নাত নিজের ডিফেন্সে বলে ।
“ দুই একটা প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আমার সাথেও শেয়ার করিস , দেখি তোর কি প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আছে”
আয়শা আর দাড়ায় না , এই দুই জনের যুদ্ধ বহক্ষন চলবে আরো । ওর এতো সহ্য ক্ষমতা নেই ।
****
অনেকক্ষণ জান্নাতের সাথে লড়াই করে জয় নিজের ঘরে চলে আসে ।
অতীতের কিছু কথা জয়ের মনে পরে । আফরোজা জয় কে সত্যিই অনেক আদর করতো। মাঝে মাঝে রাজীব এই বলে নালিশ করতো যে ওর মা ওর চেয়ে বেশি জয় কে ভালোবাসে । তবে জয় আফরোজার সামনে খুব লাজুক হয়ে যেতো । কেন হয়ে যেতো সেটা মনে পরলে জয়ের এখন খুব হাসি পায় । আফরোজা খুব সুন্দরী ছিলো , আর ছোট্ট জয়ের লজ্জা পাওয়ার এটাই ছিলো কারন । সব জায়গায় জয় ছিলো হিরো , আর আফরোজার সামনে একেবারে মেনি বেড়াল । আর সেটা নিয়ে আফরোজা প্রায়ই মজা করে বলতো “ তুই কি আমার মেয়ের জামাই নাকি রে যে আমাকে দেখলেই লজ্জা পাস?” সবাই খুব হাসত তখন । আর আফরোজা জোড় করে জয় কে ধরে গালে কপালে চুমু খেতো । জয় লিজ্জায় লাল হয়ে যেতো ।
পুরনো এই সৃতি মনে হতেই জয়ের মনটা ভারি হয়ে আসে । রানীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে । মনে মনে ভাবে , তোমার মেয়ে আমাকে রেপিস্ট ভাবে ছোট আম্মু , রেপিস্ট !!! তুমি চিন্তা করতে পারো ? আজকে তুমি থাকলে এর বিচার করতে ।
****
আজকে মন ভালো থাকায় জয়ের সাথে অনেকটা সময় খুনসুটি করে কাটিয়েছে জান্নাত ।
এখন নিজের ঘরে আসতেই ওর মনে হলো , রানীর সাথে আজকে কাজটা ঠিক হয়নি , আজকে ক্যাম্পাসেও রানীর সাথে ভালো আচরন করা হয়নি । আবার বিকেল বেলা ওদের বাড়ি গিয়েও ওর সাথে দেখা না করেই চলে এসেছে । আসলে রানীর প্রতি কিছুটা রাগ থেকেই এই কাজ করেছে জান্নাত । কিন্তু এই দিনে রানীর প্রতি রাগ না দেখিয়ে ওর সাথে কিছু সময় ব্যয় করা উচিৎ ছিল বলে মনে হয় জান্নাতের ।
সেই সাথে ছোট আম্মুর মৃত্যুদিন ভুলে যাওয়া ও উচিৎ হয়নি । যদিও ওর তেমন একটা সৃতি নেই । তবে মায়ের মুখ শুনেছে । কেমন করে ছোট আম্মু কোমর বেধে ঝগড়া করতো যখন কেউ ওকে কালো বলতো । এমন কি জান্নাতের আপন ফুপুদের ও ছাড় দিতো না । যদিও পাড়াপরশি আত্মীয় স্বজনদের মুখ বন্ধ হয়নি , কিন্তু নিজের ঘরের ভেতর অন্তত এই নিয়ে তেমন কিছু সহ্য করতে হয় না জান্নাত কে । সুধু জয় মাঝে মাঝে ওর কালো হওয়ার প্রসঙ্গ তোলে, তাও সেটা দুস্টুমি করে ।
এর পর জান্নাত ব্যাস্ত হয়ে পরে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তৈরি হতে । টাকা জোগার করা তেমন কঠিন কিছু হবে না । ওর নিজের ও কিছু টাকা আছে । জান্নাত খরচ করার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকে , ফেন্সি পোশাক বা কসমেটিক্সের তেমন সখ নেই ওর । তাই ওর পকেট মানি থেকে অনেক টাকা বেঁচে যায় , তা ছাড়া নানা রকম উৎসবে ওর ফুপুরা ওকে অনেক টাকা দেয় । সেগুলোও জমানো আছে । সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার উপরে । বাকি অল্প যা লাগবে সেটা মায়ের কাছ থেকে ধার করে নেয়ার চিন্তা করে । সুধু মাত্র একটা ভালো ল্যাপ্টপ ছাড়া খুব অত্যাধুনিক কিছু কিনবে না বলে ঠিক করে জান্নাত , বেসিক ইকুইপমেন্ট দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা ওর ।
প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের লিস্ট করা , আর চ্যানেলের ব্যাপারে আর কিছু গভির চিন্তা করতে করতে অনেকটা সময় পার করে দেয় জান্নাত । এরে পর রাতের খাবার খেয়ে , কিছুক্ষন পড়াশুনা করে । তারপর পোশাক চেঞ্জ করে বিছানায় । নিজের আলাদা রুম হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই জান্নাত আবিস্কার করে যে ও মিনিমাম পোষাকে ঘুমাতে সাচ্ছন্দ বোধ করে । এমন কি কৈশোরে বেশ কয়েকবার উলঙ্গ হয়েও শুয়েছে । ওটা আরো বেশি আরামদায়ক । তবে একেবারে উলঙ্গ হয়ে শোয় না জান্নাত , শরীরে একটা ফিনফিনে ঢোলা টি সার্ট আর নিচে সুধুই একটা কটন প্যান্টি। তারপর শরীরে চাদর জড়িয়ে , এসির টেম্পারেচার ২২ তে সেট করে ঘুম । মানুষ ভাবে জান্নাত নিজের বিছানা ছেড়ে অন্য কোথাও ঘুমাতে পারে না , তাই কোন জায়গায় গিয়ে থাকতে চায় না । আসলে জান্নাত সম্পূর্ণ পোশাক পরে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না তাই অন্য কোথাও গিয়ে রাতে থাকতে চায় না ।
তবে আজকে বিছানায় শুয়েই ঘুম আসলো না , রাজীব কে রাজি করাতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ওর । বেশ কয়েকবার মন কে শাসন ও করেছে , বলেছে ‘ এই দুষ্ট মন , ওখানে তো খুব বলে এলি যে এটা প্রফেশনার পার্টনারশিপ , তাহলে এখন আহ্লাদে আটখানা কেনো হচ্ছিস? যদি উল্টো পাল্টা কিছু করিস তাহলে কিন্তু তোকে আমি ছারবো না, খুব সাবধানে থাকতে হবে , নো হাঙ্কি পাঙ্কি’
কিন্তু এই শাসনেও কোন কাজ হচ্ছে না , ওর মন ওকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে সেই সন্ধ্যা থেকেই । এখনো চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে বার বার ওর ঠোঁটে হাসি টেনে দিচ্ছে । যতবার ই মনে আসছে অনেকটা সময় রাজীবের সাথে কাটানো হবে , তখনি সেই দুষ্ট হাসিটা চলে আসছে । সেই সাথে রাজীবের তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে যখন ওর দরজা চাপিয়ে দিচ্ছিলো ।
জান্নাত হাসে একা একা , হাসতে হাসতে বিড়বিড় করে বলে ‘ তৈরি থাকো মি.রাজীব এর পর আমার সাথে বদ্ধ ঘরে অনেক সময় পার করতে হবে , ঐটুকু তেই কেমন চুপসে গিয়েছিলো তোমার মুখ খানা, যেন আমি দরজা বন্ধ করে তোমাকে কিছু করে ফেলবো” হিহিহি করে আবার হাসে জান্নাত ।
হঠাত করেই জান্নাতের মনে হয় রাজীব কিছু একটা লুকিয়েছিলো ওকে দেখে । জান্নাত প্রথমে ভাবে আন্ডারগারমেন্টস হবে, ভেবে বেশ এমিউসড হয় , জান্নাত মনে করতো ছেলেরা এসব ব্যাপারে তেমন লজ্জা পায় না মেয়েদের মত । জয় তো ওর আন্ডারয়ার খোলাই রেখে দেয় । কিন্তু রাজীব কে দেখে তো মনে হলো বেশ লজ্জা পেয়েছে ।
পরক্ষনেই অবশ্য এই ধারনাটা বাদ দেয় জান্নাত , রাজীব আসলে তখন লজ্জিত ছিলো না । জান্নাতের কৌতূহল বৃদ্ধি পায় । রাজীব ওর ঘরের কোন একটা জিনিস লুকাচ্ছে , এটা এক ভাবে যেমন খুব সাধারন ব্যাপার , আবার তা নয় ও । জান্নাত আরো একটু ভাবে । একপর্যায়ে নিজের উপর বিরক্ত ও হয় । এই ছোট জিনিসটা নিয়ে ওর এতো কৌতূহল কেনো হচ্ছে এই ভেবে। কিন্তু কৌতূহলটা কিছুতেই দূর করতে পারে না ।
জান্নাত বুঝে যায় এই কেইস সল্ভ না করে ওর ঘুম আসবে না । তাই সম্পূর্ণ মনোযোগ টেনে একত্রিত করে । জান্নাত একবার কোথায় যেন পড়েছিলো , মানুষের চোখ অনেক কিছুই দেখে সেটা মেমরিতে সেভ করে রাখে । মানুষ ভাবে সে দেখেনি , আসলে সে দেখছে । তাই জান্নাত একাগ্রচিত্তে মনে করার চেষ্টা করে । বেশ কিছুক্ষন পর জান্নাত আবার সি জিনিসটা দেখতে পায় , হ্যা ওটা একটা বইয়ের মত জিনিস । কিন্তু রাজীব বই কেনো লুকাবে !!! ভেবে পায় না জান্নাত।
আরো কিছুক্ষন ভাবে , কি বই রাজীব ওকে দেখে লুকাবে । একবার মজার ছলে ভাবে ইরোটিক কোন বই নাতো? তবে সেই চিন্তা বাদ দেয় । মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে রাজীবের মত ছেলে ইরোটিক গল্প পড়বে , এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম ।
আরো কিছু সময় পার হয়ে যায় , জান্নাত ফ্রাস্টেটেড হয়ে পরে । মাঝে মাঝেই ওর এমন হয় । ছোট খাটো বিষয় না মেলাতে পারলে ওর ঘুম হয় না । যদিও রাজীব ওর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ , তাই বলে রাজীব ওর নিজের ঘরে ওকে দেখে কি লুকালো না লুকালো সেটা ভেবে রাতের ঘুম হারাম করার কোন কারন দেখে না জান্নাত ।
নিরুপায় হয়ে জান্নাত আবার ভাবতে থাকে । এবং বেশ অনেকক্ষণ পর , ওর মনে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখা আসে । সেটা হচ্ছে রাজীব যা লুকিয়েছে সেটা কোন বই ছিলো না , সেটা ছিলো একটা ডায়রি । হয়তো রাজীব ডাইরি লেখে এবং সেটা কাউকে জানাতে চায় না ।
জান্নাত ব্যাপারটা মীমাংসা করতে পেরে খুব শান্তি পায় , এই ভেবে যে এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে । কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই সেই ডায়রি আবার ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে । ডায়রিটা আধুনিক নয় , দেখেই মনে হচ্ছে অনেক পুরনো আর রঙচঙা ডিজাইন করা পুতি বসানো , মেয়েলি ধরনের ডায়রি । আর ডায়রির উপরে বড় বড় অক্ষরে কিছু একটা লেখা । সেই লেখা জান্নাত দেখেনি । তবে সেটা রাজীব লেখা নয় অথবা রাজীবের সম্পূর্ণ নাম ও নয় ।
ডায়রিটা রাজীবের হওয়ার সম্ভাবনা নেই । এতো আগে থেকে রাজীব ডাইরি লেখে এটা বিশ্বাস করা কঠিন । এবার অবশ্য খুব বেশি সময় নেয় না জান্নাত । অংক খুব সহজেই মিলে যায় । ওটা একটা মেয়েলি ডাইরি এবং অনেক পুরনো । জান্নাত ভাবে ওটা যেহেতু অনেক পুরনো তাই সেটা রাজীবের মায়ের , মানে আফরোজার ডায়রি । আর আজকে আফরোজার মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় রাজীব ডাইরিটা ঘেটে দেখছিলো ।
কিন্তু জান্নাত ভেবে পায় না এই ডায়রি লুকানোর কি আছে । যেহেতু রাজীব পড়তে পারছে , সেহেতু এমন কিছু সেখানে লেখা নেই যা গোপন হতে পারে ।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)