10-10-2025, 05:54 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (চ)
জান্নাত বেশ কয়েকবার বেল বাজানোর পর দরজা খোলে রাজীব । জান্নাত কে দরজার সামনে দেখে , রাজীব একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে । সেদিন ক্যাম্পাসে চকলেট দেয়ার পর আর তেমন একটা কথা হয়নি দুজনের মাঝে । রাজীব নিজেই একটু এড়িয়ে চলতো। ওর লজ্জা হয় জান্নাত কে দেখলে । মেয়েটা নিজে থেকে এগিয়ে এসেছিলো কিন্তু ও নির্দয় ভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তবে জান্নাতের মুখে উষ্ণ হাসি দেখে একটু আশ্বস্ত হয় রাজীব ।
এদিকে রাজীব কে ঘরের পোষাকে দেখে জান্নাত ও একটু অবাক হয় । প্রায় দৌরে এসেছিলো ও । আসলে বুদ্ধিটা মাথায় আসার পর , জান্নাত আর অপেক্ষা করতে পারছিলো না । কোন না কোন বাহানায় তো কিছুটা সময় কাছাকাছি থাকা যাবে ।
“ কি ব্যাপার আজকে যাবি না?” দরজার সামনে দারিয়েই বলে জান্নাত
“ না আজকে ছুটি নিয়েছি” রাজীব যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থেকে উত্তর দেয় । মনে মনে জান্নাতের আচরণে বেশ অবাক হয়েছে ও। জান্নাতের আচরণ দেখে মনেই হচ্ছে না যে এই মেয়েকে অল্প কিছুদিন আগে রিজেক্ট করেছে ও।
“ এই বাড়িতে আমাকে কি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে নাকি?” জান্নাত একটু সারকাস্টিক টোনে বলে ।
“ আরে না না , আয় না ভেতরে আয়” রাজীব দ্রুত দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে যায়গা করে দেয় । লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে যায় । আসলে ওই ঘটনার পর থেকে জান্নাত আর আসে না তো , তাই ওকে দেখে রাজীব একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো ।
“ রানী নিজের ঘরে আছে” জান্নাত ভেতরে ঢুকতেই রাজীব নিজ থেকেই বলে । তবে বলেই মনে হয় এমন ভাবে বলা হয়তো উচিৎ হয়নি । মনে মনে নিজেকে গালি দেয় রাজীব । এবং জান্নাতের চাহনি দেখে নিশ্চিত হয় , আসলেই এভাবে বলা উচিৎ হয়নি ।
কয়েক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের দৃষ্টিতে একটা চাপা কষ্ট ফুটে ওঠে , কিন্তু জান্নাত দ্রুত সেটা লুকিয়ে ফেলে । আবার সারকাস্টিক টোনে বলে ‘ তাই নাকি? তুই তো দেখছি আজকাল টিভি নিউজ এর মত হয়ে যাচ্ছিস , রেন্ডম নিউজ লোকজনের মুখের উপর ছুড়ে দিচ্ছিস না চাইতেই”
রাজীব লজ্জিত হয়ে হাসে , জান্নাতকে এমন খলামেলা ভাবে কথা বলতে দেখে , নিজের আড়ষ্টতা কিছুটা কমে আসে , রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে “ তুই তো দেখি একদম নিউজ রুমে বন্দি হয়ে গেছিস? এক্সাম্পল ও দিচ্ছিস নিউজ দিয়ে”
“ বাহ তোর তো ভালো উন্নতি হয়েছে , কি ব্যাপার , কিভাবে হলো?” জান্নাত একটু এগিয়ে এসে কোন গোপন কিছু জানতে চাইছে এমন ভাবে জিজ্ঞাস করে ।
উত্তরে রাজীব কিছু বলে না , সুধু হাসে ।
জান্নাত রাজীবের মুখ হাসি দেখে খুশি হয় , মনে মনে বলে ‘ এমন হাসি খুশিই থাকবি সব সময় , এটাই আমার চাওয়া , যদি আমি সেই হাসির সাক্ষি নাও হতে পারি আমার আফসোস থাকবে না’
“ আমি তোর কাছেই এসেছি , ভালো হয়েছে তুই ছুটি নিয়েছিস , চল তোর রুমে চল, কথা আছে”
যদিও জান্নাতের মাঝে ওদের সেই শেষ সাক্ষতের কোন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না । তবুও রাজীব একটু ইতস্তত করে জান্নাত কে নিজের রুমে নিয়ে যেতে । লিভিং রুমে বসার কথা একবার বলতে গিয়েও থেমে যায় । জান্নাত আবার কি মনে করে বসে, এই ভেবে ।
“ আরে চল , একা রুমে পেয়ে আমি তোর কোন এডভান্টেজ নিবো না” জান্নাত উচ্চস্বরে হেসে হেসে বলে ।
“ ধুর কি যা তা বলিস , আমি কি সেরকম কিছু বলেছি নাকি?” রাজীব ভীষণ লজ্জা পায় ,
“ বলতে হবে কেনো , তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , আমি রুমের কথা বলতেই , একদন চুপসে গেলো, চেহারাতে একটা অবলা পুরুষ ভাব চলে এলো” হি হি হি
“ বাজে , কথা রাখ , চল ভেতরে চল” রাজীব দ্রুত সিঁড়ির দিকে চলে । মনে মনে ভাবে , জান্নাত আগের চেয়ে অনেক ফ্রি আচরণ করছে আজকে , এর আগে কোনদিন এভাবে কথা বলতো না। হয়তো মনের ভাব লুকানোর জন্য এমন ঠোঁট কাটা কথাবার্তা বলছে ।
রানীর রুম পেরিয়ে যাওয়ার সময় একবার তাকায় রাজীব , দরজা ভেজানো । মনে মনে ভাবে , রানীকে ডেকে নিলে কেমন হয় । নইলে রানী যদি আবার অন্য কিছু ভেবে বসে । কিন্তু আবার নিজেই এই চিন্তা বাদ দিয়ে দেয় । ভাবে , জান্নাতের আসা যাওয়া এ বাড়িতে তো আর নতুন নয় । যদিও আগে রানীর কাছেই আসতো , রাজীবের কাছে এসেছে এবার ই প্রথম ।
ভাবতে ভাবতে রাজীব ই ঘরে প্রথম প্রবেশ করে , প্রথমেই ওর চোখ যায় বিছনায় , সেখানে ডায়রি টা এখনো পরে আছে । দ্রুত রাজীব সেটা তোষকের নিচে চালান করে দেয় । আর জান্নাত তখনি ঘরে ঢোকে । রাজীব যে কিছু একটা তোষকের নিচে দিয়েছে সেটা ওর চোখে পরে , তাই বলে “ আমাকে দেখে ঘর পরিপাটি করতে হবে না, আমার ঘরের মত অগোছালো ঘর সুধু জয়ের ঘর আছে , সেই তুলনায় তোর ঘর তো অনবেক গোছালো , দেখলে মনে হয় এই ঘরে ব্যাটা ছেলে নয় , মেয়েছেলে থাকে” বলেই জান্নাত আবারো হাসতে লাগলো । তারপর দরজাটা একটু চাপিয়ে দিলো ।
দরজা চাপাতে দেখে রাজীব ঝট করে ওই দিকে একবার চাইলো , ওর চোখ দুটো তে অবাক দৃষ্টি । এই মেয়ে চাইছেটা কি ? মনে মনে ভাবে ও
“ আরে জরুরি কথা আছে , বিজনেস মিটিং ধরে নে, তাই দরজা একটু চাপিয়ে দিলাম, অমন করে তাকানোর দরকার নেই, আর আমি দরজা পুরোপুরি লাগাইও নি , দ্যাখ এখনো ফাঁকা আছে ” এবার জান্নাত একটু বিরক্ত হয়ে বলল
রাজীব বিছানায় বসেছে আর জান্নাত রাজীবের পড়ার চেয়ারে ।
“ শোন , আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে , আমি একটা চ্যানেল খুলতে চাই সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেখানে এমি ভিডিও আপলোড করবো , আমার ইচ্ছা প্রথমে আমি সুধু ভার্সিটি আর এর আশেপাশের ব্যাপার গুলো আমার চ্যানেলে তুলে ধরবো । তারপর ধিরে ধিরে আরো বড় পরিসরে সামাজিক রাজনৈতিক বেপারগুলো নিয়ে বিস্লেসনা মুলক ভিডিও দেবো” কথাটা বলে জান্নাত রাজীবের দিকে তাকায় , রাজীবের কাছ থেকে যেন ওর প্ল্যান সম্পর্কে জানতে চায় ।
“ এসব তো অনেকেই করছে আজকাল , মন্দ না , তাছাড়া তোর ফিল্ডের সাথে মানান সই আছে” রাজীব ও নিজের অনেস্ট অপিনিওন দেয় ।
“ কিন্তু তোর হেল্প লাগবে এতে , আমি ভিডিও এডিটিং শেখার চেষ্টা করেছি , কিন্তু পারিনি , তুই তো কিছু এডিটিং এর কাজ জানিস?”
“ হ্যা জানি , কিন্তু তোকে শেখাতে পারবো কিনা কথা দিতে পারছি না”
“ আরে কে শিখতে চেয়েছে আপনার কাছে স্যার”
“ তাহলে?” রাজীব বুঝতে পারছে না জান্নাত এ ব্যাপারে ওর কাছ থেকে কি সাহায্য চায় ।
“ এর জন্যই আমি এসেছি, আমার প্রস্তাব হচ্ছে তুই এডিটিং ভালো করে শিখে আমাকে ভিডিও এডিট করে দে, তুই আর আমি এই চ্যানেলে পার্টনার” জান্নাতের চোখ চক চক করতে থাকে , যেন এতো ভালো একটা প্রস্তাব দিয়েছে রাজীব সেটা না করতে পারবে না এমন একটা ভাব ।
রাজীবের একবার মনে হয় হ্যা করে দেয় । আসলে ও এখন একটা চ্যানেলের হয়ে এডিটিং এর কাজ ই করে । ওর নিজের হাই এন্ড কম্পিউটার নেই বলে ওদের অফিসে গিয়ে কাজ করে দেয় । নইলে বাসায় বসেই করতে পারতো । কিন্তু রাজীব নিজেকে সংযত করে । ভাবে জান্নাতের সাথে নিজেকে এভাবে জড়ানো হয়তো ঠিক হবে না ।
এর আগে যখন জান্নাত কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো , তখন ও সত্যি ই নিজের সমস্যা গুলোর জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিলো । কিন্তু এর পর ওই ব্যাপার নিয়ে অনেক ভেবেছে রাজীব । ভেবেছে হয়তো ও কাজটা ঠিক করেনি , জান্নাত ওর সাথে থাকলে ওর সমস্যা বাড়বে না বরং কমবে । প্রায় যখন নিজেকে আশ্বস্ত করে ফেলেছে , ঠিক তখনি অন্য একটা চিন্তা এসে মাথায় ঢুকেছে । বড় আব্বুর যা আর্থিক অবস্থা , আর জান্নাতের ফুপুদের যেসব জায়গায় বিয়ে হয়েছে । তাতে করে বোঝাযায় বড় আব্বু জান্নাত কেও তেমন কারো সাথেই বিয়ে দেবে । হ্যা এটা সত্য বড় আব্বু বড় আম্মু ওকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে । কিন্তু এর মানে এই নয় যে ওকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নেবে । তাই ওদের ওই ভালোবাসা কে সম্মান জানিয়ে রাজীব জান্নাতের কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত পাকাপাকি ভাবেই নিয়েছে । কোথায় জান্নাত আর কোথায় ও । এই বাড়িটা ছাড়া ওর আব্বুর আর আছেই বা কি। আর ওর নিজের যোগ্যতাও বা কি । অথচ , জান্নাতের বড় ফুপুর বিয়ে হয়েছে যে পরিবারে তারা ছিলো আগের দিনের জমিদার, এখনো বিশাল ধনী , ছোট ফুপুর বিয়ে হয়েছে এমন ছেলের সাথে যে বিদেশে মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির সি ই ও । ওই লোকের এক বছরের স্যালারি দিয়ে রাজীব দের বাড়ির মত পাঁচটা বাড়ি কেনা যাবে । জান্নাত কে নিশ্চয়ই এমন ঘর দেখেই বিয়ে দেয়া হবে ।
“ রাজীব নিজের ডিসিশন দেয়ার আগে একটা কথা শুনে রাখ , আমাদের মাঝে আগে যা হয়েছে , ওই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তুই আমার এই প্রস্তাব বিবেচনা কর । আর তোর সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটা কথা বলে রাখি, আমি ওই রকম মেয়ে না যে তুই আমাকে রিজেক্ট করেছিস বলে আমি তোকে হন্ট করে বেড়াবো, যদি তাই ভেবে থাকিস তুই আমাকে এখনো চিনিস নি, আমার যথেষ্ট আত্মসম্মান আছে” রাজীবের ভাব গতি দেখে জান্নাত বুঝে ফেলেছে , রাজীব কি বলতে চায় । তাই একটু ঝাঁঝের সাথে বলে কথাগুলো । সেই প্রথম থেকেই নিজের মনের আসল ভাব লুকিয়ে সহজ আচরণ করে যাচ্ছে যেন রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত আগের কথা মনে রাখেনি । কিন্তু এই ছেলে এখনো দোমনায় ভুগছে দেখে , আর রাগ চেপে রাখতে পারছে না জান্নাত ।
রাজীব আর কিছু বলার সাহস পায় না , জান্নাতের মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে না করলে তুলকালাম হয়ে যাবে । তাই রাজীব অন্য পন্থা নেয় । বলে “ কিন্তু আমি তো অন্য একটা জায়গায় আছি এখন”
“ প্রথমে একটু স্ট্রাগল হবে , কিন্তু একবার যদি সফল হই তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না” জান্নাত রাজীব কে কনভিন্স করার চেষ্টা করে ।
রাজীব একটু চুপ করে থাকে , তারপর নিজের কথা গুলো গুছিয়ে আনে , উল্টা পাল্টা বলে জান্নাতের মনে কষ্ট দিতে চায় না । ভেবে চিন্তে বলে “ দ্যাখ জান্নাত তুই হয়তো বুঝবি না আমার ব্যাপারটা , শরীর খারাপ নিয়ে আব্বু যেভাবে কাজ করে টাকা আয় করছে , ওই টাকা থেকে পকেট মানি নিতে আমার ইচ্ছা হয় না , তাই বর্তমান চাকরিটা আমার খুব দরকার”
“ তোর পকেট মানি আমি দেবো” উত্তেজনায় কথা টা বলে ফেলেই জান্নাত বুঝতে পারে ভুল বলে ফেলেছে , রাজীবের মুখের হাসি দেখেই ও বুঝতে পারে কথাটা রাজীব কে হার্ট করেছে । ঠিক ই তো রাজীব কেনো তাকা নেবে ওর কাছ থেকে । জান্নাত নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভাবে বলে “ সরি , এটা বলা আমার উচিৎ হয়নি”
রাজীব ও বুঝতে পারে জান্নাত কথাটা মিন করেনি । তাই বলে “ আরে না আমি কিছু মনে করিনি “ তারপর হঠাত ওর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে , বলে “ আচ্ছা প্রথম দিকে তোর সপ্তাহে কয়টা ভিডিও দেয়ার ইচ্ছে আছে ?”
কিছুক্ষন ভাবে জান্নাত , তারপর বলে , “ এই ধর একটা”
“ হুম্ম…… কম হয়ে যায় , আর একটু বেশি দিতে হবে , দ্রুত সাবক্রাইবার বাড়ানোর জন্য, সপ্তায় দুটো ভিডিও দেয়া দরকার”
এর পর রাজীব জান্নাতের কাছে জানতে চায় কি ধরনের ভিডিও দিতে চায় জান্নাত । জান্নাত ও নিজের প্ল্যান খুলে বলে অনেক সময় নিয়ে ।
“ এই ধরনের ভিডিও এডিট করতে আমার কোন সমস্যা হবে না, আমি ওই চাকরি করা অবস্থায় ই করে দিতে পারবো” রাজিব একটু ভেবে নিয়ে বলে ।
জান্নাতের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । সুধু যে রাজীবের কথা চিন্তা করে খুশি হয় জান্নাত, এমনটি নয় , ওর চ্যানেল দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে এই ভেবেও খুশি হয় ।
“ তারপর যখন আরো বড় পরিসরে কাজ হবে , আয় হবে , তখন না হয় আমি ওই কাজ ছেড়ে দেবো” এই বুদ্ধিটা বের করতে পেরে রাজীব নিজেও কিছুটা সস্তি বোধ করে ।
জান্নাত ও ভীষণ খুশি , “ তাহলে চল আমরা পার্টনারশিপ করে ফেলি , তুই থার্টি আমি সেভেনটি “
রাজীব হাসে , সেই হাসি দেখে জান্নাত বলে , “ উহু হাসলে হবে না, প্রফেশনাল হতে হবে , তুই করবি ভিডিও এডিটিং আমি বাকি সব কাজ করবো , ডাটা সংগ্রহ , স্ক্রিপ্ট , গবেষণা তাই আমার বেশি শেয়ার , বুঝতে পেরেছিস”
রাজীব খুব মজা পায় জান্নাতের কথা বলার ধরন দেখে , হেসে বলে “ তাহলে আমিও প্রফেশনাল হওয়ার চেষ্টা করি কি বলিস, আমাকে হাই এন্ড কম্পিউটার দিতে হবে , আর আমি কোন ইনভেস্ট করতে পারবো না”
“ এতক্ষনে এসেছিস লাইনে , তাহলে আমরা পার্টনার” এই বলে জান্নাত হাত বাড়িয়ে দেয় ,
এক মুহুরত ইতস্তত করে রাজীব ও হাত বাড়িয়ে দেয় , হেন্ড শেক করে দুজনে , দুজনেই নিজেদের মনের আসল অভিবাক্তি লুকিয়ে প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করে । তবে পুরোপুরি সফল কেউ হয় না । ওরা দুজনেই একটু বেশি সময়ের জন্য একে অন্যের হাত ধরে রাখে । রাজীব ই প্রথম নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় ।
আর জান্নাত দ্রুত উঠে চলে যায় , যাওয়ার সময় বলে যায় “ আমাকে কম্পিউটারের জন্য কেমন খরচ হবে সেটা পাঠিয়ে দিস”
রাজীব ঘরেই বসে থাকে , মনে মনে ভাবে , কাজটা হয়তো ঠিক হলো না , তবে জান্নাতের খুশি দেখে সেই ভাবনাকে তেমন পাত্তা দেয়না । ভাবে নিজে সংযত থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে । বিড়বিড় করে বলে ‘ আমাকে সংযত হতেই হবে , এই মেয়েটির মুখের হাসির জন্য হলেও আমাকে সংযত হতে হবে , কারন ওর হাসি আমার কাছে অনেক দামি’
****
জান্নাত বেশ কয়েকবার বেল বাজানোর পর দরজা খোলে রাজীব । জান্নাত কে দরজার সামনে দেখে , রাজীব একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে । সেদিন ক্যাম্পাসে চকলেট দেয়ার পর আর তেমন একটা কথা হয়নি দুজনের মাঝে । রাজীব নিজেই একটু এড়িয়ে চলতো। ওর লজ্জা হয় জান্নাত কে দেখলে । মেয়েটা নিজে থেকে এগিয়ে এসেছিলো কিন্তু ও নির্দয় ভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তবে জান্নাতের মুখে উষ্ণ হাসি দেখে একটু আশ্বস্ত হয় রাজীব ।
এদিকে রাজীব কে ঘরের পোষাকে দেখে জান্নাত ও একটু অবাক হয় । প্রায় দৌরে এসেছিলো ও । আসলে বুদ্ধিটা মাথায় আসার পর , জান্নাত আর অপেক্ষা করতে পারছিলো না । কোন না কোন বাহানায় তো কিছুটা সময় কাছাকাছি থাকা যাবে ।
“ কি ব্যাপার আজকে যাবি না?” দরজার সামনে দারিয়েই বলে জান্নাত
“ না আজকে ছুটি নিয়েছি” রাজীব যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থেকে উত্তর দেয় । মনে মনে জান্নাতের আচরণে বেশ অবাক হয়েছে ও। জান্নাতের আচরণ দেখে মনেই হচ্ছে না যে এই মেয়েকে অল্প কিছুদিন আগে রিজেক্ট করেছে ও।
“ এই বাড়িতে আমাকে কি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে নাকি?” জান্নাত একটু সারকাস্টিক টোনে বলে ।
“ আরে না না , আয় না ভেতরে আয়” রাজীব দ্রুত দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে যায়গা করে দেয় । লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে যায় । আসলে ওই ঘটনার পর থেকে জান্নাত আর আসে না তো , তাই ওকে দেখে রাজীব একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো ।
“ রানী নিজের ঘরে আছে” জান্নাত ভেতরে ঢুকতেই রাজীব নিজ থেকেই বলে । তবে বলেই মনে হয় এমন ভাবে বলা হয়তো উচিৎ হয়নি । মনে মনে নিজেকে গালি দেয় রাজীব । এবং জান্নাতের চাহনি দেখে নিশ্চিত হয় , আসলেই এভাবে বলা উচিৎ হয়নি ।
কয়েক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের দৃষ্টিতে একটা চাপা কষ্ট ফুটে ওঠে , কিন্তু জান্নাত দ্রুত সেটা লুকিয়ে ফেলে । আবার সারকাস্টিক টোনে বলে ‘ তাই নাকি? তুই তো দেখছি আজকাল টিভি নিউজ এর মত হয়ে যাচ্ছিস , রেন্ডম নিউজ লোকজনের মুখের উপর ছুড়ে দিচ্ছিস না চাইতেই”
রাজীব লজ্জিত হয়ে হাসে , জান্নাতকে এমন খলামেলা ভাবে কথা বলতে দেখে , নিজের আড়ষ্টতা কিছুটা কমে আসে , রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে “ তুই তো দেখি একদম নিউজ রুমে বন্দি হয়ে গেছিস? এক্সাম্পল ও দিচ্ছিস নিউজ দিয়ে”
“ বাহ তোর তো ভালো উন্নতি হয়েছে , কি ব্যাপার , কিভাবে হলো?” জান্নাত একটু এগিয়ে এসে কোন গোপন কিছু জানতে চাইছে এমন ভাবে জিজ্ঞাস করে ।
উত্তরে রাজীব কিছু বলে না , সুধু হাসে ।
জান্নাত রাজীবের মুখ হাসি দেখে খুশি হয় , মনে মনে বলে ‘ এমন হাসি খুশিই থাকবি সব সময় , এটাই আমার চাওয়া , যদি আমি সেই হাসির সাক্ষি নাও হতে পারি আমার আফসোস থাকবে না’
“ আমি তোর কাছেই এসেছি , ভালো হয়েছে তুই ছুটি নিয়েছিস , চল তোর রুমে চল, কথা আছে”
যদিও জান্নাতের মাঝে ওদের সেই শেষ সাক্ষতের কোন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না । তবুও রাজীব একটু ইতস্তত করে জান্নাত কে নিজের রুমে নিয়ে যেতে । লিভিং রুমে বসার কথা একবার বলতে গিয়েও থেমে যায় । জান্নাত আবার কি মনে করে বসে, এই ভেবে ।
“ আরে চল , একা রুমে পেয়ে আমি তোর কোন এডভান্টেজ নিবো না” জান্নাত উচ্চস্বরে হেসে হেসে বলে ।
“ ধুর কি যা তা বলিস , আমি কি সেরকম কিছু বলেছি নাকি?” রাজীব ভীষণ লজ্জা পায় ,
“ বলতে হবে কেনো , তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , আমি রুমের কথা বলতেই , একদন চুপসে গেলো, চেহারাতে একটা অবলা পুরুষ ভাব চলে এলো” হি হি হি
“ বাজে , কথা রাখ , চল ভেতরে চল” রাজীব দ্রুত সিঁড়ির দিকে চলে । মনে মনে ভাবে , জান্নাত আগের চেয়ে অনেক ফ্রি আচরণ করছে আজকে , এর আগে কোনদিন এভাবে কথা বলতো না। হয়তো মনের ভাব লুকানোর জন্য এমন ঠোঁট কাটা কথাবার্তা বলছে ।
রানীর রুম পেরিয়ে যাওয়ার সময় একবার তাকায় রাজীব , দরজা ভেজানো । মনে মনে ভাবে , রানীকে ডেকে নিলে কেমন হয় । নইলে রানী যদি আবার অন্য কিছু ভেবে বসে । কিন্তু আবার নিজেই এই চিন্তা বাদ দিয়ে দেয় । ভাবে , জান্নাতের আসা যাওয়া এ বাড়িতে তো আর নতুন নয় । যদিও আগে রানীর কাছেই আসতো , রাজীবের কাছে এসেছে এবার ই প্রথম ।
ভাবতে ভাবতে রাজীব ই ঘরে প্রথম প্রবেশ করে , প্রথমেই ওর চোখ যায় বিছনায় , সেখানে ডায়রি টা এখনো পরে আছে । দ্রুত রাজীব সেটা তোষকের নিচে চালান করে দেয় । আর জান্নাত তখনি ঘরে ঢোকে । রাজীব যে কিছু একটা তোষকের নিচে দিয়েছে সেটা ওর চোখে পরে , তাই বলে “ আমাকে দেখে ঘর পরিপাটি করতে হবে না, আমার ঘরের মত অগোছালো ঘর সুধু জয়ের ঘর আছে , সেই তুলনায় তোর ঘর তো অনবেক গোছালো , দেখলে মনে হয় এই ঘরে ব্যাটা ছেলে নয় , মেয়েছেলে থাকে” বলেই জান্নাত আবারো হাসতে লাগলো । তারপর দরজাটা একটু চাপিয়ে দিলো ।
দরজা চাপাতে দেখে রাজীব ঝট করে ওই দিকে একবার চাইলো , ওর চোখ দুটো তে অবাক দৃষ্টি । এই মেয়ে চাইছেটা কি ? মনে মনে ভাবে ও
“ আরে জরুরি কথা আছে , বিজনেস মিটিং ধরে নে, তাই দরজা একটু চাপিয়ে দিলাম, অমন করে তাকানোর দরকার নেই, আর আমি দরজা পুরোপুরি লাগাইও নি , দ্যাখ এখনো ফাঁকা আছে ” এবার জান্নাত একটু বিরক্ত হয়ে বলল
রাজীব বিছানায় বসেছে আর জান্নাত রাজীবের পড়ার চেয়ারে ।
“ শোন , আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে , আমি একটা চ্যানেল খুলতে চাই সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেখানে এমি ভিডিও আপলোড করবো , আমার ইচ্ছা প্রথমে আমি সুধু ভার্সিটি আর এর আশেপাশের ব্যাপার গুলো আমার চ্যানেলে তুলে ধরবো । তারপর ধিরে ধিরে আরো বড় পরিসরে সামাজিক রাজনৈতিক বেপারগুলো নিয়ে বিস্লেসনা মুলক ভিডিও দেবো” কথাটা বলে জান্নাত রাজীবের দিকে তাকায় , রাজীবের কাছ থেকে যেন ওর প্ল্যান সম্পর্কে জানতে চায় ।
“ এসব তো অনেকেই করছে আজকাল , মন্দ না , তাছাড়া তোর ফিল্ডের সাথে মানান সই আছে” রাজীব ও নিজের অনেস্ট অপিনিওন দেয় ।
“ কিন্তু তোর হেল্প লাগবে এতে , আমি ভিডিও এডিটিং শেখার চেষ্টা করেছি , কিন্তু পারিনি , তুই তো কিছু এডিটিং এর কাজ জানিস?”
“ হ্যা জানি , কিন্তু তোকে শেখাতে পারবো কিনা কথা দিতে পারছি না”
“ আরে কে শিখতে চেয়েছে আপনার কাছে স্যার”
“ তাহলে?” রাজীব বুঝতে পারছে না জান্নাত এ ব্যাপারে ওর কাছ থেকে কি সাহায্য চায় ।
“ এর জন্যই আমি এসেছি, আমার প্রস্তাব হচ্ছে তুই এডিটিং ভালো করে শিখে আমাকে ভিডিও এডিট করে দে, তুই আর আমি এই চ্যানেলে পার্টনার” জান্নাতের চোখ চক চক করতে থাকে , যেন এতো ভালো একটা প্রস্তাব দিয়েছে রাজীব সেটা না করতে পারবে না এমন একটা ভাব ।
রাজীবের একবার মনে হয় হ্যা করে দেয় । আসলে ও এখন একটা চ্যানেলের হয়ে এডিটিং এর কাজ ই করে । ওর নিজের হাই এন্ড কম্পিউটার নেই বলে ওদের অফিসে গিয়ে কাজ করে দেয় । নইলে বাসায় বসেই করতে পারতো । কিন্তু রাজীব নিজেকে সংযত করে । ভাবে জান্নাতের সাথে নিজেকে এভাবে জড়ানো হয়তো ঠিক হবে না ।
এর আগে যখন জান্নাত কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো , তখন ও সত্যি ই নিজের সমস্যা গুলোর জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিলো । কিন্তু এর পর ওই ব্যাপার নিয়ে অনেক ভেবেছে রাজীব । ভেবেছে হয়তো ও কাজটা ঠিক করেনি , জান্নাত ওর সাথে থাকলে ওর সমস্যা বাড়বে না বরং কমবে । প্রায় যখন নিজেকে আশ্বস্ত করে ফেলেছে , ঠিক তখনি অন্য একটা চিন্তা এসে মাথায় ঢুকেছে । বড় আব্বুর যা আর্থিক অবস্থা , আর জান্নাতের ফুপুদের যেসব জায়গায় বিয়ে হয়েছে । তাতে করে বোঝাযায় বড় আব্বু জান্নাত কেও তেমন কারো সাথেই বিয়ে দেবে । হ্যা এটা সত্য বড় আব্বু বড় আম্মু ওকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে । কিন্তু এর মানে এই নয় যে ওকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নেবে । তাই ওদের ওই ভালোবাসা কে সম্মান জানিয়ে রাজীব জান্নাতের কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত পাকাপাকি ভাবেই নিয়েছে । কোথায় জান্নাত আর কোথায় ও । এই বাড়িটা ছাড়া ওর আব্বুর আর আছেই বা কি। আর ওর নিজের যোগ্যতাও বা কি । অথচ , জান্নাতের বড় ফুপুর বিয়ে হয়েছে যে পরিবারে তারা ছিলো আগের দিনের জমিদার, এখনো বিশাল ধনী , ছোট ফুপুর বিয়ে হয়েছে এমন ছেলের সাথে যে বিদেশে মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির সি ই ও । ওই লোকের এক বছরের স্যালারি দিয়ে রাজীব দের বাড়ির মত পাঁচটা বাড়ি কেনা যাবে । জান্নাত কে নিশ্চয়ই এমন ঘর দেখেই বিয়ে দেয়া হবে ।
“ রাজীব নিজের ডিসিশন দেয়ার আগে একটা কথা শুনে রাখ , আমাদের মাঝে আগে যা হয়েছে , ওই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তুই আমার এই প্রস্তাব বিবেচনা কর । আর তোর সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটা কথা বলে রাখি, আমি ওই রকম মেয়ে না যে তুই আমাকে রিজেক্ট করেছিস বলে আমি তোকে হন্ট করে বেড়াবো, যদি তাই ভেবে থাকিস তুই আমাকে এখনো চিনিস নি, আমার যথেষ্ট আত্মসম্মান আছে” রাজীবের ভাব গতি দেখে জান্নাত বুঝে ফেলেছে , রাজীব কি বলতে চায় । তাই একটু ঝাঁঝের সাথে বলে কথাগুলো । সেই প্রথম থেকেই নিজের মনের আসল ভাব লুকিয়ে সহজ আচরণ করে যাচ্ছে যেন রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত আগের কথা মনে রাখেনি । কিন্তু এই ছেলে এখনো দোমনায় ভুগছে দেখে , আর রাগ চেপে রাখতে পারছে না জান্নাত ।
রাজীব আর কিছু বলার সাহস পায় না , জান্নাতের মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে না করলে তুলকালাম হয়ে যাবে । তাই রাজীব অন্য পন্থা নেয় । বলে “ কিন্তু আমি তো অন্য একটা জায়গায় আছি এখন”
“ প্রথমে একটু স্ট্রাগল হবে , কিন্তু একবার যদি সফল হই তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না” জান্নাত রাজীব কে কনভিন্স করার চেষ্টা করে ।
রাজীব একটু চুপ করে থাকে , তারপর নিজের কথা গুলো গুছিয়ে আনে , উল্টা পাল্টা বলে জান্নাতের মনে কষ্ট দিতে চায় না । ভেবে চিন্তে বলে “ দ্যাখ জান্নাত তুই হয়তো বুঝবি না আমার ব্যাপারটা , শরীর খারাপ নিয়ে আব্বু যেভাবে কাজ করে টাকা আয় করছে , ওই টাকা থেকে পকেট মানি নিতে আমার ইচ্ছা হয় না , তাই বর্তমান চাকরিটা আমার খুব দরকার”
“ তোর পকেট মানি আমি দেবো” উত্তেজনায় কথা টা বলে ফেলেই জান্নাত বুঝতে পারে ভুল বলে ফেলেছে , রাজীবের মুখের হাসি দেখেই ও বুঝতে পারে কথাটা রাজীব কে হার্ট করেছে । ঠিক ই তো রাজীব কেনো তাকা নেবে ওর কাছ থেকে । জান্নাত নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভাবে বলে “ সরি , এটা বলা আমার উচিৎ হয়নি”
রাজীব ও বুঝতে পারে জান্নাত কথাটা মিন করেনি । তাই বলে “ আরে না আমি কিছু মনে করিনি “ তারপর হঠাত ওর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে , বলে “ আচ্ছা প্রথম দিকে তোর সপ্তাহে কয়টা ভিডিও দেয়ার ইচ্ছে আছে ?”
কিছুক্ষন ভাবে জান্নাত , তারপর বলে , “ এই ধর একটা”
“ হুম্ম…… কম হয়ে যায় , আর একটু বেশি দিতে হবে , দ্রুত সাবক্রাইবার বাড়ানোর জন্য, সপ্তায় দুটো ভিডিও দেয়া দরকার”
এর পর রাজীব জান্নাতের কাছে জানতে চায় কি ধরনের ভিডিও দিতে চায় জান্নাত । জান্নাত ও নিজের প্ল্যান খুলে বলে অনেক সময় নিয়ে ।
“ এই ধরনের ভিডিও এডিট করতে আমার কোন সমস্যা হবে না, আমি ওই চাকরি করা অবস্থায় ই করে দিতে পারবো” রাজিব একটু ভেবে নিয়ে বলে ।
জান্নাতের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । সুধু যে রাজীবের কথা চিন্তা করে খুশি হয় জান্নাত, এমনটি নয় , ওর চ্যানেল দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে এই ভেবেও খুশি হয় ।
“ তারপর যখন আরো বড় পরিসরে কাজ হবে , আয় হবে , তখন না হয় আমি ওই কাজ ছেড়ে দেবো” এই বুদ্ধিটা বের করতে পেরে রাজীব নিজেও কিছুটা সস্তি বোধ করে ।
জান্নাত ও ভীষণ খুশি , “ তাহলে চল আমরা পার্টনারশিপ করে ফেলি , তুই থার্টি আমি সেভেনটি “
রাজীব হাসে , সেই হাসি দেখে জান্নাত বলে , “ উহু হাসলে হবে না, প্রফেশনাল হতে হবে , তুই করবি ভিডিও এডিটিং আমি বাকি সব কাজ করবো , ডাটা সংগ্রহ , স্ক্রিপ্ট , গবেষণা তাই আমার বেশি শেয়ার , বুঝতে পেরেছিস”
রাজীব খুব মজা পায় জান্নাতের কথা বলার ধরন দেখে , হেসে বলে “ তাহলে আমিও প্রফেশনাল হওয়ার চেষ্টা করি কি বলিস, আমাকে হাই এন্ড কম্পিউটার দিতে হবে , আর আমি কোন ইনভেস্ট করতে পারবো না”
“ এতক্ষনে এসেছিস লাইনে , তাহলে আমরা পার্টনার” এই বলে জান্নাত হাত বাড়িয়ে দেয় ,
এক মুহুরত ইতস্তত করে রাজীব ও হাত বাড়িয়ে দেয় , হেন্ড শেক করে দুজনে , দুজনেই নিজেদের মনের আসল অভিবাক্তি লুকিয়ে প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করে । তবে পুরোপুরি সফল কেউ হয় না । ওরা দুজনেই একটু বেশি সময়ের জন্য একে অন্যের হাত ধরে রাখে । রাজীব ই প্রথম নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় ।
আর জান্নাত দ্রুত উঠে চলে যায় , যাওয়ার সময় বলে যায় “ আমাকে কম্পিউটারের জন্য কেমন খরচ হবে সেটা পাঠিয়ে দিস”
রাজীব ঘরেই বসে থাকে , মনে মনে ভাবে , কাজটা হয়তো ঠিক হলো না , তবে জান্নাতের খুশি দেখে সেই ভাবনাকে তেমন পাত্তা দেয়না । ভাবে নিজে সংযত থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে । বিড়বিড় করে বলে ‘ আমাকে সংযত হতেই হবে , এই মেয়েটির মুখের হাসির জন্য হলেও আমাকে সংযত হতে হবে , কারন ওর হাসি আমার কাছে অনেক দামি’
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)