Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#89
কিছু সম্পর্কঃ ৭ ()

 
চৌধুরী বাড়ির মত শিকদার বাড়িতে গ্যারাজ নেই । বলতে গেলেই রাজীব ই প্রথম ব্যাক্তি যার বাহন আছে । তাই রাজীব বাইক রাখার জন্য বাড়ির মেইন গেটের পাশে একটা টিন দিয়ে শেড তৈরি করেছে । সেখানে বসেই নিজের বাইকের কিছু পরিচর্যা করছিলো । এমন সময় রানী ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে রাজীবের বাইকের শেডের সামনে এসে দাড়ায় । বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে  চুপচাপ , কোন কথা বলে না ।
 
গতকালের ঘটনার পর রানীর সাথে রাজীবের আর দেখাই হয়নি । রাতের খাবার রানী নিজের ঘরে খেয়েছে । সকালেও নাস্তার সময় ছিলো না । রাজীব আর রহিমের নাস্তা হয়ে গেলে তবেই খেয়েছে । যদিও রান্না রানী ই করেছে । আজকাল সন্ধ্যায় রাজীব বাসায় থাকে না বলে রান্না পুরোটাই রানী কে করতে হচ্চে ।
 
আমার ক্লাস আছে আধ ঘণ্টার মাঝেকোন ধরনের সম্বোধন না করেই রানী বলে , তবে কণ্ঠে রাগের কোন চিহ্ন নেই ।
 
রানী যে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা রাজীব আগেই টের পেয়েছিলো , কিন্তু ও নিজেও কিছু বলেনি । রানী কথা বলার পর ঘুরে দাড়ায় , মুখে একটা মলিন হাসি , রাজীব লক্ষ্য করেছে , রানী ওকে ভাইয়া না বলেই কথা বলেছে । বাইকে কিছু সমস্যা আছে , আমি এখন যেতে পারবো না , তুই চলে যারাজীব সত্য কথাই বলে ।
উত্তরে  রানী সুধু হুবলে হাটা শুরু করে , কথা বাড়ায় না । রানী প্রায় মুল ফটকের সামনে চলে গেছে , এমন সময় পেছন থেকে রাজীব ডাক দেয় , “ রানী, শুনে যা”  । ডাক শুনে রানী দাড়িয়ে যায় , আবার হেটে রাজীবের সামনে এসে দাড়ায় , রাজীবের দিকে সরাসরি তাকায় না , মাথা নিচু করে নিজের পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে আছে ।
 
সুধু আজকে না , এখন থেকে তুই একাই যাবি , যখন খুশি তখন যাবি , যখন খুশি তখন ফিরবি , যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে যাবি , যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে যাবি , এখন থেকে কোথাও যেতে হলে আমাকে জিজ্ঞাস করার দরকার নেই।
 
রাজীবের কথা গুলো শুনে রানীর খুশি হওয়ার কথা , কিন্তু ও আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করে ওর যতটা খুশি হওয়ার কথা ততটা খুশি লাগছে না । চট করে একবার রাজীবের দিকে তাকায় , তবে সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় । রানীর তাকানোর উদ্দেশ্য ছিলো দেখা যে রাজীব রাগ করে এসব বলছে কিনা । কিন্তু রাজীবের অভিব্যাক্তি বোঝা যাচ্ছে না , সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত রাজীব ।    
 
আসলে আমার ই দোষ , একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি , তুই এখন বড় হয়েছিস , এখন যদি তোকে আমি ধরে বেধে রাখি ,এটা তোর উপর অন্যায়ই করা হবে । এটা স্বাভাবিক যে তুই রাগ করবি , তাই গতকালের কথায় আমি কিছু মনে করেনি । সত্যি বলতে আমিও যে খুব অভিজ্ঞ মানুষ অথবা জ্ঞানী মানুষ এমন তো নয় । নিজের বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছিলো তাই করেছি , তুই আমার উপর রাগ করে থাকিস না, আমি মনে করেছিলাম ঐসব করলেই তোর জন্য ভালো হবে
 
রানী মাথা তুলে তাকায় না , দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়াতে থাকে । ওর ইচ্ছা হয় কিছু বলতে , কিন্তু লজ্জায় পারেনা । গতকাল যা করেছে তার পর রাজীবের মুখোমুখি হওয়া ওর জন্য বেশ লজ্জাকর।
 
এদিকে রাজীব বলেই চলছে আসলে কি , আমাদের অভ্যাস হয়ে যায় । আমরা মনে করি আমাদের চেয়ে যারা ছোট আছে , তারা সব সময় আমাদের চেয়ে কম বোঝে । কিন্তু কালকে তুই আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিস, সত্যি বলছি , গতকাল আমি অনেক কিছু শিখেছি । তুই আমাকে শিখিয়েছিস , সব সময় ধরে রাখা ভালো নয় , বুঝতে হবে you have to let them go। আমার উপর রাগ রাখিস না , তোর উপর ও আমার কোন রাগ নেই , যা করেছি ভুলে করে ফেলছি।
 
রানীর ইচ্ছে হয় রাজীব কে চুপ করতে বলতে । হ্যা রাজীব পুরোপুরি মিথ্যা বলছে না , ইদানিং ওর আচরণ একটু বাড়াবাড়ির দিকেই যাচ্ছিলো । কিন্তু এতে বার বার মাফ চাওয়ার কি আছে । ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই রানীর কাছে অনেক কিছু।
 
তুই এখন বড় হয়েছিস , বুঝ হয়েছে , নিজের ভালো তোর চেয়ে বেশি আর কেউ বুঝতে পারবে না । তবে আমি সুধু একটা কথাই বলবো , কখনো এমন কিছু করবি না , যাতে করে তোর ক্ষতি হয় , নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করার আগে একবার নয় দশবার ভেবে নিবি । মনে রাখবি এই দুনিয়ায় একজন মানুষের নিজের চেয়ে আপন কেউ নয় , তাই সব সময় নিজেকে প্রাধান্য দিবি, অন্য কিছুই নয় , অন্য কাউকে নয় । আর তুই কালকে বললি যে  তুই আমাদের বোঝা । না তুই কারো বোঝা নস , আর আজকে থেকে এমন ভাবে নিজেকে তৈরি করবি , যেন ভবিষ্যতেও কারো বোঝা না হতে হয় ।  আমি সুধু এটুকুই বলবো  , বাকিটা তুই সিদ্ধান্ত নিবি , কিভাবে চললে তুই নিজের আত্মমর্যাদা  নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবি কারো বোঝা হয়ে নয়”   
 
নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমার দিকে তাকা”  রানীকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাজীব ওকে নিজের দিকে তাকাতে বলে । রানী ধিরে ধিরে চোখ তুলে তাকায় । রানী তাকাতেই রাজীব হাসে , বেশ উজ্জ্বল হাসি , কোন ফেক হাসি নয়। হাসতে হাসতে বলে
 
 আর তোর প্রতি আমার এই বিশ্বাস আছে যে তুই সঠিক সিদ্ধান্ত নিবি”  
 
রাজীবের শেষ লাইনটা শুনে রানীর শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে । এতো বড় একটা কথা এমন একজনের মুখ থেকে এসেছে , যে কিনা গতকাল পর্যন্ত ভাবতো , রানী একটা বাচ্চা মেয়ে। আত্মবিশ্বাসে রানীর শরীর মন ভরপুর হয়ে ওঠে । রানীর ঠোঁটেও একটা আত্মবিশ্বাসী হাসি ফুটে ওঠে । যেন বলতে চাইছে , ‘হ্যা তুই আমাকে বিশ্বাস করে ভুল করিস নি, এটা আমি প্রমান করে দেবো’  
 
রানী আবার পা বাড়ায় বাইরের উদ্দেশ্যে । রানীর মনে এক অন্য ধরনের অনুভুতি হয় । এর আগে অনেকবার এই বাড়ির প্রধান ফটক খুলে  বের হয়েছে । কিন্তু আজকের মত অনুভূতি কোনদিন হয়নি । রানীর কাছে মনে হচ্ছে আজকেই প্রথম ও সত্যিকারের বাড়ির বাইরে যাচ্ছে ।  
 
প্রধান ফটক খুলে রাস্তায় পা রাখতেই মনে হলো , ও মুক্ত , স্বাধীন একজন মানুষ । এই পথ ধরে বহুদুর হারিয়ে যেতে কেউ ওকে মানা করবে না । সব সময় একটা পিছুটান থাকবে না। মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে । মনে হয় ওর দুটো ডানা গজিয়েছে । চাইলে এখনি ফুড়ুৎ করে উড়াল দিতে পারে ।
 
রানী গলির মুখে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করে , আজকে আর নিচের দিকে তাকিয়ে হাটে না , এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে হাটে , মুখ হাসি লেগেই  আছে। পরিচিত জনের সাথে দেখা হলে হেসে অভিবাদন করছে । পরিচিত জনেরাও ভাবছে , এই মেয়েকে তো আজকে অন্যরকম লাগছে । রাজীবের কথা গুলো ওর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠিয়ে দিয়েছে ।  
 
এদিকে রাজীব আবারো বাইক পরিচর্যার কাজে মন দিয়েছে । কিছুক্ষন মন দিয়ে কাজ করার পর হঠাত রাজীবের হাত থেমে যায় । একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় , তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলে , “ আম্মু তুমি আমাকে যে পুতুল দিয়ে গিয়েছিলো , আমি এতদিন সেই পুতুলের ব্যাটারি গুলো যথা সাধ্য চার্জ করে দেয়ার চেষ্টা করেছি । কত টুকু পেরেছি জানি না, তবে আমার বিশ্বাস আমার চেষ্টায় কোন কমতি ছিল নাআজকে আমি তোমাকে সাক্ষি রেখে সেই পুতুল কে বাইরের দুনিয়ায় ছেড়ে দিলাম , নিজের জীবন নিজের ইচ্ছা মত সাজানোর জন্য তুমি সাক্ষি থাকো আম্মু , আমি আজকে যা করলাম ভালোর জন্যই করলাম এই সাথে দোয়া করো যেন সব কিছু ভালো ভালো হয় অন্তত তোমার কাছে আমি যেন লুজার না হই”     
 
****
 
চৌধুরী বাড়িতে দ্বিতীয়বার নাস্তার আয়োজন চলছে । প্রথমবার জয়নালের জন্য হয়ে গেছে । দ্বিতীয়বার চলছে জান্নাত আর জয়ের জন্য । সাধারনত তিনবার নাস্তার আয়োজন করা লাগে , কিন্তু আজকে কাকতালীয় ভাবে জান্নাত আর জয় আক সাথেই নাস্তা করতে এসেছে ।
 
কিরে ? তোকে আজকে একটু সাদা সাদা লাগতেসে?” জান্নাতকে দেখেই বলে ওঠে জয় ।  
 
ফালতু কথা অন্য জায়গায় গিয়ে বল জান্নাত জয়ের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয়
 
আরে না ফালতু কথা না , সত্যি সত্যি বলছি”  
 
তোর কি আমার দিকে বা অন্য কারো দিকে দেখার টাইম আছে ? তুই তো নিজেরে দেইখাই কুল পাস না, আমি আগেও যেমন ছিলাম তেমন ই আছি
 
আরে না না আমি দেখি তো , কিন্তু বলার মত ত কিছু নাই , তুই হলি অডিনারি পারসন , আর আমি হইলাম এক্সট্রা অডিনারি। তাই তোরে নিয়া বলার মত কিছু পাই না
 
যদি সাদা হয়েই থাকি তাহলে ত ভালই হয়েছে , তুই ই তো বলতি আমি কালো বলে আমার বিয়ে হবে না , এখন তো সাদা হয়ে গেছি , এখন তোর চিন্তা কমে গেছেজান্নাত নির্লিপ্ত ভাবে বলে ।
 
আরে আরে দাড়া , এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই, আমি ওই সাদা বলি নাই , মরা মানুষ যেমন একটু ফ্যাকাসে হয়ে যায় ওই সাদার কথা বলছিজয় হাসতে হাসতে বলে । জয়ের এমন নির্লজ্জ হাসি দেখে জান্নাতের শরীর রাগে জ্বলে যায় । চোখ গরম করে জয়ের দিকে তাকায় ।  
 
এদিকে জয় হাসি থামাতে চেষ্টা করছে খুব । অনেক চেষ্টার পর হাসি থামায় , তারপর বলে আমি  ভাবলাম হয়তো পাশের মরা বাড়ির মরা মানুষ গুলর সাথে বেশি বেশি মেশার কারনে তোর ও মরা রোগ ধরেছে, আমার কথা শোন ওদের সাথে বেশি মিশিস না, ওদের ওই রোগ কিন্তু ছোঁয়াচে”   শেষের কথা গুলো বলার সময় জয়ের হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায় । আর এই ব্যাপারটা জান্নাতের চোখ এড়ায় না ।
 
জান্নাতের দৃষ্টি একটু নরম হয়ে আসে , শেষের দিকে জয়ের কণ্ঠে যে কষ্ট মেশানো ছিলো । ওই কষ্ট ও ফিল করতে পারে । এছাড়া জান্নাত এটাও ভাবে , হয়তো ওর মনের কষ্টের কিছু ছাপ চেহারাতেও পরেছে , আর জয় সেটা লক্ষ্য করেছে । তারপর নিজের স্বভাব মত সেটা ওকে জানিয়েও দিয়েছে । জয় এমনি , স্বাভাবিক ভাবে নিজের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে পারে না । জয় ভাবে কারো জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা দুর্বলতার লক্ষন । জান্নাত ভেবে পায়না জয় এই ধরনের ব্যাপার গুলো শিখল কোথায় , কবে থেকে যে ও এমন হয়ে উঠলো সেটা কেউ জানে না। আর এই কারনেই সবাই জয় কে ভুল বোঝে।
 
জান্নাত আড় চোখে জয়ের দিকে তাকায় , খাচ্ছে , তবে একটু আগের হাসি খুশি ভাবটা নেই । জয়ের জন্য মায়া হয় ওর ,কারন জয় নিজে যে কষ্টের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে , সেই একি কষ্ট জান্নাত নিজেও মনে চেপে রেখছে। জান্নাত  ভাবে,  নিজের কথা ভাবতে ভাবতে রানী আর জয়ের ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ও । রানীকে জান্নাত কথা দিয়ে এসেছিলো । এই ব্যাপারে  ও রানী কে হেল্প করবে । এর পর আর কথা হয়ে ওঠেনি । সত্যি বলতে রানীর উপর একটু রেগেই আছে জান্নাত । জান্নাতের ধারনা হয়েছে রানীর জন্যই রাজীব ওর কাছ থেকে দূরে চলে গেছে । তাই রানী আর জয়ের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হয়নি ।  
 
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি । নিজে না হয় কষ্টে আছে , তাই বলে অন্য কেও কষ্টে রাখবে । আর এই অন্য কেউ তো ওর পর কেউ না । একজন ওর আপন ভাই , অন্যজন ওর ছোট বেলার বন্ধু । জান্নাত দ্রুত নাস্তা সেরে নেয় । তারপর ব্যাগ গুছিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয় ।
 
ঘরের বাইরে বেড়িয়ে যখন প্রধান ফটকের দিকে যাচ্ছিলো । তখন জয় পেছন থেকে ডাকে , ওকে অবাক করে দিয়ে বলে চল তোকে বাইকে রাইড দেই
 
জান্নাত অবাল হয়ে জিজ্ঞাস করে তোর বাইক আমাকে নিতে রাজি হবে?”
 
জয় প্রশ্ন শুনে হাসে , বলে ব্যাটার পাছার চামড়া তুলে ফেলবো যদি তোকে নিতে রাজি না হয়
 
কি রে , এটা না তোর গার্ল ফ্রেন্ড!!!! ব্যাটা হলো করে থেকে!!!” জান্নাত বিদ্রূপাত্মক স্বরে জয় কে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে ।
 
জয় ও একটু লজ্জা পায় , বলে আরে ধুর কোনদিন দুষ্টুমি করে বলসি আর তোর এখনো মনে আছে, আয় ওঠ
 
বাইকে করে যেতে যেতে জান্নাতের বেচারা বাইকের জন্য মায়াই হয় , গার্ল ফেন্ড থেকে কেবারে ব্যাটা !!
 
****
 
ক্লাস শেষে জান্নাত ভার্সিটি চত্তরে একটা ছোট খাটো প্রটেস্টে কিছু ছাত্র ছাত্রীর ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য এসেছিলো জান্নাত । ইন্টারভিউ শেষে পাশে পার্কের গেটে একটা চায়ের দোকানে এসে দাড়ায় । তখনি কিছু দূরে দেখতে পায় রানী তিন চারজন মেয়ের সাথে পাঁচমিশালী ভর্তা খাচ্ছে । কি নিয়ে যেন ওদের মাঝে প্রচুর হাসাহাসি হচ্ছে । রানী নিজেও হাসছে , আবার রাগ করে কি যেন বলছে । জান্নাত চায়ের অর্ডার না দিয়ে ওই দিকেই যায় ।
 
বাহ বাহ মহারানী দেখি আজকে দারুন মুডে আছেএকটু খোঁচা দিয়েই বলে জান্নাত । কিন্তু রানীকে দেখে বুঝতে পারে রানী ওর খোঁচা বুঝতে পারেনি । তবে জান্নাত আর খোঁচা খুচির দিকে যায় না ।
 
আরে জান্নত দেখো না , রানী আমাদের কিছুতেই ওর ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে নাপায়েল জান্নাতের কাছে বিচার দেয়ার মত করে বলে । জান্নাত এই মেয়েগুলো কে আগে থেকেই কিছুটা চেনে । রানীর মাধ্যমেই পরিচয় হয়েছে ।
 
কিন্তু রানী জান্নাত কে কোন উত্তর না দিতে দিয়ে বলে আমার ভাই কে আমি দেখে শুনে বিয়ে দিবো বুঝলী , তোদের মত মেয়ের পাল্লায় পরলে আমার ভাই শেষ , আমি দেখে শুনে সভ্য শান্ত মেয়ে খুজে আনবো
 
রানীর কথা শুনে জান্নাত মৃদু হাসে । কিন্তু সেটা কারো চোখ পরে না । এই মেয়দের আলোচনার বিষয় যে রাজীব সেটা বুঝতে পাড়ার পর থেকেই জান্নাতের মুড অফ হয়ে গেছে , এই ধরনের আলচনায় অংশ গ্রহনের ইচ্ছা ওর নেই ।
 
এদিকে নিসা ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে বলে এই দেখ আমার মত সতি সাদ্ধি মেয়ে তুই কই পাবি , সারাদিন তোর ভাইয়ের সেবা করবোনিসার কথা শুনে বাকি মেয়েরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । এর মাঝে ঋতু বলে ওঠে কি কি সেবা করবি আমাদের একটু বল না
 
জান্নাতের আর সহ্য হয় না , রানীকে বলে , “ তোর সাথে কথা ছিলো , একটু এদিকে আয় তো
 
রানী ও হাফ ছেড়ে বাঁচে , আজেকে পুরোটা সময় ওকে জ্বালিয়েছে ওর তিন ান্ধবী । এমন নির্লজ্জ মেয়েও যে আছে সেটা রানীর জানা ছিলো না । সুন্দর ছেলে দেখলেই এদের লালা ঝরে ।
 
একটু দূরে এসে রানী জিজ্ঞাস করে , “ কি বলবি?”
 
আগের মত ভালো মুড জান্নাতের নেই , তাই বলল এমনি বলেছি , ওদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলাম , কেমন বেহায়া মেয়ে গুলো, মুখ কিছু আটকায় না
 
আর বলিস না , আমি এতো করে বললাম , কিন্তু যত বলি তত বেশি করে করে , তাই বলা ছেড়ে দিয়েছি
 
তুই ঘুরিস কেনো ওদের সাথে?” জান্নাত একটু রেগে গিয়েই জিজ্ঞাস করে ।
 
কি করবো , একা একা তো থাকা যায় না , আর তুই তো আজকাল আসমানের চাঁদ হয়ে গেছিস
 
রানী যে ওকে হালকা খোঁচা দিয়েছে , সেটা জান্নাত বুঝতে পারে । তাই কথা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । যে কারনে এসেছিলো সেই আসল কারনে ফিরে যায় । বলে তোকে তো আজকে বেশ খুশি খুশি লাগছে , ওই ছেলের সাথে মিট্মাট হয়ে গেলো নাকি , তোর মাঝে তো আলাদা ধরনের ঝলক দেখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে অন্ধকারে রেখে দিলে  তুই লাইটের কাজ করবিবলে জান্নাত একটু হাসার চেষ্টা করে ।
 
জান্নাতের কথা শুনে রানী কিছুটা লজ্জা পায় , মনে মনে ভাবে জান্নাত যদি জানতো ও না জেনে কার কথা বলছে ।“ আরে না রে , ওই সাহস আমার নাই , দেখেলেই ভয় লাগে , এমন ভাবে তাকায় যেন মারবে। তবে কারন একটা কাছে, অবশেষে ভাইয়া বুঝতে পেরেছে যে আমি বড় হয় গেছি , এখন আমাকে কন্ট্রল করার দরকার নেইরানী একেবারে বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি হয়ে বলে ।
 
রানীর এমন খুশি হওয়া দেখে জান্নাত একটু হাসে , মনে মনে ভাবে , কেউ কোন কিছু না চাইতেই পেলে তার মূল্য বোঝেনা ,রাজীবের কেয়ার আজকে রানীর কাছে কন্ট্রোল করা মনে হচ্ছে । অথচ জান্নাত দেখছে কিভাবে এক টানা সাত দিন বাসায় না ফিরে রানীর জন্য হসপিটালে কাটিয়েছে রাজীব ।
 
“ তা হঠাত তোর ভাইয়ের এমন শুভবুদ্ধি হলো কেন রে?”  জান্নাত যদিও হেসে হেসে বলল , কিন্তু মনে রাজীবের জন্য এক ধরনের মমতা বোধ করতে লাগলো, শেষ পর্যন্ত রানীও ওকে ভুল বুঝলো ।
 
জান্নাতের প্রস্নে রানী একটু আমতা আমতা করে , একবার ভাবে বলবে না , তারপর আবার ভাবে জান্নত ই তো , ওকে বলা যায় । মিন মিন করে রানী বলল “ গতকাল আমি একটু রাগ করেছিলাম ভাইয়ার সাথে” তারপর আবার নিজের সাইফাই দেয়ার জন্য বলল “ কেনো করবো না বল , এখনো ভাবে আমি ছোট আছি , আমাকে ভার্সিটি নিয়ে আসে , নিয়ে যায় । একা কোথাও যেতে দেয় না। গতকাল তো সব সীমা ছাড়িয়ে গেলো। গতকাল আমি বললাম  যে ওদের সাথে একটু শপিঙয়ে যাই , সোজা না করে দিলো !!!! বল ওদের সামনে আমার মান সম্মান কোথায় থাকলো” রানী তিন ান্ধবিকে দেখিয়ে বলে ।  
 
“ তুই বুঝি খুব সীমার মাঝে ছিলি ? রানী তুই নিজের হাত নিজে কেটেছিস ,তুই কি সেটা ভুলে গেছিস।  আমি যদি তোর গার্ডিয়ান হতাম তাহলে আমি ভাবতাম তুই নেশা করিস , তা ছাড়া তুই অজ্ঞান অবস্থায় তোর ওই প্রেমিকের কথা বার বার বলেছিস , ওগো তুমি এমন কেমন করলে , ওগো তুমি আমাকে কষ্ট দিলে কেনো?” জান্নাত একটু ভেংচিয়ে বলে ।
 
“ তোর ভাই সেসব শুনেছে , অন্য কোন ভাই হলে কি করতো জানিস? থাপড়ে তোর গালের দাঁত ফেলে দিতো, ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিতো , তারপর বিয়ের বেবস্থা করে ঝামেলা বিদায় করতো” জান্নাত একটু শ্লেষের সাথে বলে । আসলে রাজীব কে রানী ধমকেছে এটা শুনে নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারছে না । যে ছেলে ওর জন্য এতো কিছু করলো তাকেই রানী ভুল বুঝে যা তা বলবে , জান্নাতের কাছে অন্তত এসব গ্রহণযোগ্য নয় । তা ছাড়া জান্নাত শিওর রাজীব নিজের পক্ষে কোন সাফাই দেয়নি । তাই রাজীবের হয় কিছু কথা বলার ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারলো ।   
 
“ আর শোন , কেউ সখ করে তোকে ভার্সিটি নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়ার ডিউটি করতে চাইবে না, এটা খুব সুখের কাজ নয় , তার উপর রাজীব নিজেও পারট্টাইম জব করছে আজকাল , তোকে বাসায় দিয়ে আসতে যে এক ঘন্টা সময় ব্যয় হয় , সেটা ও চাইলে রেস্ট করতে পারতো”  কথা গুলো বলে জান্নাত খুব আরাম পায় । রানীর মুখের দিকে তাকিয়ে রিগ্রেট খোঁজার চেষ্টা করে । কিন্তু তেমন কিছুই দেখতে পায় না । উল্টো হালকা রাগ দেখতে পায় । তাই জান্নাত আর কথা বাড়ায় না , এটা রাজীব আর রানীর ব্যাপার এখানে ওর হস্তক্ষেপ করাই ঠিক হয়নি । এটুকু বলল , কারন রানীর জানা উচিৎ ছিলো কেন রাজীব এসব করেছে । তা ছাড়া নিজের মনের ও কিছুটা তাগিদ ছিলো । রাজীব চুপচাপ সব সহ্য করবে এটা ও হতে দিতে পারে না ।
 
এক মুহূর্তের জন্য রানীর মনে কিছুটা খটকা লাগলেও , সেটা স্থাই হলো না , সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতার কাছে এসব কথা টিকতে পারে না ।
 
“ তুই ও ভাইয়ার পক্ষে কথা বলছিস?” রানী বিরক্তি নিয়ে বলে
 
“ না না আমি রাজীবের পক্ষে কথা বলছি না , আমি তোর পক্ষেই বলছি , অতীত যেন ভুলে না যাস সেটা চেষ্টা করছি , এতে তোর ই উপকার হবে, তোর  স্বাধীনতা দরকার সেটা তুই নিবি , এটা তোর অধিকার , কিন্তু তার জন্য নিরপরাধ কেউকে যা খুশি তাই বলবি এটা কেমন কথা”  জান্নাত কথাগুলো একেবারে শান্ত নির্লিপ্ত স্বরে বলে ।
 
এবার রানী ক্ষেপে যায় , বেশ ঝাঁজের সাথে বলে “ আমার ভাই , আমি যা খুশি তা বলবো তাতে তোর কি?  আজকাল দেখছি যে সুযোগ পায় সেই জ্ঞান দিতে চায়। আর কিছুদিন যাবত তোর আচরণ ও দেখছি , কাজের অজুহাত দিয়ে আমাকে এড়িয়ে যাস , এতই যদি আমি খারাপ , তাহলে সরাসরি বলে দিস” এই বলে রানী আর দাড়ায় না , গটগট করে হেটে চলে যায় ।  
 
জান্নাত দাড়িয়ে থেকে সুধু মলিন ভাবে হাসে । রাজীবের জন্য মনটা কেমন করে , সেই সাথে রানীর জন্য ও।
 
*****  
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 3 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 06-10-2025, 07:52 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)