06-10-2025, 01:26 PM
পর্ব ৮
শ্রীমতী মাধুরিলতা মিত্র সেইদিন তার প্রেমিকের দাবি মতো তার জীবনে প্রথমবারের জন্য উলঙ্গ মডেলিং করেন। মাধুরিলতার অবৈধ প্রেমিক অমুর তাকে করা শুধুমাত্র গলায় নেকলেস পড়ে নগ্ন হয়ে তাকে তার ফোনে একটি ছবি পাঠানোর অন্যায় আবদার কে আস্কারা দিয়ে মাধুরিলতা তাকে শুধু একটির পরিবর্তে ৮-১০ টি ছবি ও একটি আধ মিনিটের ভিডিও করে পাঠায় যেখানে দেখা যায় সে নেকলেসটিও খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে তার অবৈধ প্রেমিককে টিজ করেছেন।
মাধুরিলতা এইসব কর্মকাণ্ডে এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল যে তার খেয়ালই ছিলনা যে কখন সাড়ে দশটা বেজে গেছে ও রিকের মন্টেসরি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তার হুশ ফেরে রিক ও তার দেখাশোনা করার মহিলা ভৃত্যের তাকে ডাকাডাকি ও তার ঘরের কড়া নাড়ার শব্দে।
দরজায় কড়া নাড়ার ‘খট খট’ শব্দে হুশ ফেরে মাধুরিলতার। সেই সঙ্গেই ঘরের বাইরে থেকে ভেসে আসে রিকের গলার আওয়াজ, “মা ও মা ……………, মা কি করছো মা, বাইরে এসো না মা, আমাকে একটু কোলে নাও না।“
রিকের এই কাতর ডাকে মাধুরিলতার মন একেবারে চরম লজ্জায় ডুবে যায়। তার অন্তরাত্মা তাকে প্রশ্ন করে “তোর সন্তান বাইরে মাতৃস্নেহ পাওয়ার জন্য কাতরাচ্ছে আর তুই ঘরের ভিতর একটা পরপুরুষের জন্য উলঙ্গ হয়ে নিজেকে প্রদর্শিত করছিস ? কেমন মা তুই ?”
আর কিছু ভাবতে পারলো না মাধুরিলতা। কোনক্রমে তাড়াহুড়ো করে নিজের জামাকাপড় পড়ে ঘরের দরজা খুলেই রিকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রিককে জড়িয়ে ধরে বলল “এই তো বাবা এই তো আমি।“ বলেই সে রিককে নিজের কোলে তুলে নেয় আর রিকও মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে মাধুরিলতার গলা জড়িয়ে ধরে।
মনে মনে ভাবতে থাকে মাধুরিলতা “ছিঃ ছিঃ ছিঃ একি করে চলেছি আমি, নিজের সুখের জন্য এতটাই উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম যে নিজের সন্তানের কথাই ভুলতে বসেছিলাম। ধিক্কার আমাকে।“ মাধুরিলতার চোখ থেকে দু ফোটা জলও গড়িয়ে পড়লো যা একমাত্র রিকের দৃষ্টিগোচর হল।
“তুমি কাঁদছ কেন মা ? তুমি তো বড় আর বড়রা তো কাঁদে না।“
“ও কিছু নয় সোনা। তোর মন্টেসরিতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, চল আমি আজ তোকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।”
“ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া, আজ আমি আমার মায়ের কোলে করে যাবো ইয়েয়েয়েয়েয়েয়ে ……।“ মাধুরিলতা এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই রিক ও তাদের বিয়ের বেনারসি শাড়ীটি নিয়ে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে বেড়িয়ে পড়ে।“
মাধুরিলতার এহেন আচরণের কারণ ছিল বর্তমানে তার কামুকি নারীসত্ত্বার ওপর তার মাতৃস্বত্ত্বার জয় হওয়ায়। তবে মাধুরিলতার কামের তাড়নায় নত্ত্ব ষত্ব জ্ঞানহীন হয়ে পড়ার নিদর্শন আমরা আগেও দেখতে পেয়েছি তার শারীরিক সুখ গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নিজের স্বামী বিমলেশের ফোন এলে তার ওপর ক্রোধিত হয়ে তাকে কড়া কড়া কথা শোনানোর মধ্যে দিয়ে। তাই আশঙ্কা জাগে যে কোন সময় এমন আসবে না তো যখন মাধুরিলতার এই কামুক নারীস্বত্ত্বা তার মাতৃস্বত্ত্বার ওপর ভারী হয়ে উঠবে ?
অন্যদিকে বিমলেশ ও সুনীল সেন সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বেড়িয়ে যান। সেখানে তাদের রিসিভ করতে উপস্থিত ছিলেন যে বাগানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা যাত্রা করেছিলেন সেই বাগানের ম্যানেজার শ্রী রমেন রায় ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতা শ্রী দীপক গুরুং। বিমানবন্দরের বাইরেই তারা বিমলেশ ও তার সুনীল কাকুকে মালা পড়িয়ে ও ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগতম জানান ও বিমলেশ তাদের সাথে সৌহার্দ্য বিনিময় করে গাড়িতে উঠে। প্রথমে তারা ৪ জন শিলিগুড়ির একটি বড় রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে সেখান থেকে সিকিমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
বিমলেশকে উদ্দেশ্য করে দীপক গুরুং বলেন “আপনি ইখানে নিজে আসায় আমরা যে কত খুশি হলাম তা আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবনা।”
“আরে না না আমাদের কর্মচারীদের মাঝে আসতে পেরে আমিও খুবই আনন্দিত, তারা আমাকে যে ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।“
“এ আপনার বড়প্পন আছে।“
ম্যানেজার রমেন রায় বলেন “হ্যাঁ স্যার, কর্মচারীরা সত্যিই অত্যন্ত খুশি আপনাকে তাদের কাছে পেয়ে।“
“রমেন আমি ঠিক করেছি আমি আমাদের বাগান গুলো বছরে অন্তত একবার করে ঘুরে যাব এবার থেকে যাতে কর্মচারীরা তাদের মালিকপক্ষকে দূরত্বের কারণে ভিনগ্রহের জীব বলে না ভাবে।“
“বা এতো দারুণ ডিসিশন।” বললেন সুনীল সেন।
“আচ্ছা রমেন কাল আমাদের শিডিউল টা কিরকম ?”
“স্যার কাল দুপুর ১২ টার সময় শুরু হবে আপনার সম্বর্ধনা সভা যা প্রায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলবে। তারপরে স্যার আমরা আপনাদের অনারে একটা কর্পোরেট লাঞ্চের ব্যাবস্থা করেছি যেখানে a few distinguished people of the area will also be present.”
“এটা কেমন কথা হল রমেন ?”
“কেন স্যার এতে কি কিছু ভুল হয়েছে ?”
“না না রমেন তোমার তরফে ভুল কিছু হয়নি কারণ চা বাগানের এটাই দস্তুর। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ দুটো আলাদা আলাদা ক্লাস তৈরি করা হয়েছে এখানে।“
কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রমেন বিমলেশকে জিজ্ঞেস করল “তবে কি … কি করব স্যার ?”
“শোনো রমেন আমার ইচ্ছে কাল সম্বর্ধনা সভার পর কর্পোরেট লাঞ্চের বদলে তুমি একটা ভোজের বন্দোবস্ত করো যেখানে আমরা থাকব, তোমরা ম্যানেজমেন্টের লোকেরা থাকবে, ইউনিয়নের নেতা হিসেবে গুরুং বাবুরাও থাকবে। তবে যাদের জন্য এই ভোজসভার আয়োজন তারা হল আমাদের বাগানের সাধারণ কর্মচারীরা, যাদের রক্ত জল করা পরিশ্রমের কারণে আমি, তুমি পায়ের ওপর পা তুলে ফুটানি মেরে বেড়াতে পারছি। আর একটা কথা মনে রেখো রমেন সবার খাওয়ার বন্দোবস্ত একই জায়গায় কোরো, মালিকপক্ষ বা ম্যানেজমেন্ট বলে কোন আমাদের জন্য যেন কোন স্পেশাল আয়োজন না থাকে। এরকম বন্দোবস্ত কালকের মধ্যে কি করে উঠতে পারবে রমেন ?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার কেন পারব না ? আমি আজই ফিরে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
দীপক গুরুং বললেন “বিমলেশ স্যার আজ আমার পচ্পন্ সাল উমর হয়ে গেল, ট্রেড ইউনিয়ন করে করে আমার চুল সফেদ হয়ে গেল। আমার জীবনে আমি অনেক বাগানের অনেক মালিককে দেখেছি কিন্তু আজ পেহলি বার আমি একজন মানুষ কে দেখছি।“
“এসব কি বলছেন দীপক বাবু ? আপনারা আমাকে মিছি মিছিই মাথায় তুলছেন …………… ও হ্যাঁ রমেন আরেকটা কথা আমাদের কর্মচারীরা যেন একা না আসে তারা যেন তাদের পরিবার পরিজনদেরও কাল নিয়ে আসে, সবাইকেই সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ো আর কাল বাগানে ছুটি ঘোষণা করে দিয়।“
এতে আবার সবাই বিমলেশের প্রসংশায় মেতে ওঠে ও আরও নানারকম কথাবার্তায় মেতে ওঠে। গাড়ি ততক্ষণে প্রায় তাদের চা বাগানের মুখ্য প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত।
(ক্রমশ)