Today, 02:06 AM
নিয়োগ পর্ব ১৬
"টিং টং!.."
কলিং বেলের আওয়াজে সকালের ঘুম ভাঙলো সমরেশের। আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসলো। প্যান্টিটা বিছানার এক পাশে পড়েছিল। সবে ঘুম থেকে ওঠায় একটু ঝিমোচ্ছিল। আরেকবার বেল পড়তেই চৈতন্য হল। বিছানা থেকে নেমে রওনা দিল।
হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল। এসে দরজাটা খুললো। দেখে বিমল ও মাধবী দাঁড়িয়ে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না সমরেশের। ভাবলো, স্বপ্ন দেখছে না তো? একবার তাদের সামনেই হাতে চিমটি কাটলো। তা দেখে মাধবী মুচকি হাসলো। সে তো জানে সমরেশ কতটা ব্যাকুলতার সাথে অপেক্ষা করে রয়েছিল তার জন্য, যার আভাস সে গতকালই পেয়েছিল। তাই সমরেশের নিজেকে চিমটি কেটে পরিস্থিতির বাস্তবতা যাচাই করতে চাওয়ার পিছনে কারণ সম্পর্কে সে যথেষ্ট অবগত ছিল।
বিমল অত না ভেবে বললো, "এভাবে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকবি? আমাদের ঢুকতে দিবি না?"
"ওহ্, হ্যাঁ হ্যাঁ, আয়। তোরা এত সকালে আসবি, বুঝতে পারিনি।"
"এত সকাল! ঘড়ি দেখেছিস?"
সমরেশ তাকালো। দেখলো ঘন্টার কাঁটা দশে, আর মিনিটের কাঁটা বারোর দাগের দিকে ধাবমান। অর্থাৎ দশটা বাজতে মাত্র কিছু সময়ই বাকি।"
"এত দেরি হয়েগেছে ঘুম থেকে উঠতে?", বড় হাই তুলে নিজেই বলে উঠলো।
"তা নয়তো কি?.. কি করছিলিস সারারাত? আমার বউয়ের কথা ভাবছিলিস?"
বিমল বলতেই সমরেশ ও মাধবী দুজনেই বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকালো। বিমল তাতে পাত্তা না দিয়ে পিছন ঘুরে নিজে গিয়ে আগে সদর দরজাটা বন্ধ করলো। সমরেশ ও মাধবী একে অপরের দিকে তাকিয়ে। হাজারটা প্রশ্ন একে অপরকে নিয়ে ঘোরাফেরা করছে তাদের মনের মধ্যে। কিন্তু বিমলও তো সেখানে উপস্থিত, তার তির্যক মন্তব্য ও ভাবনা নিয়ে। প্রথমে তার মোকাবিলা তো করতে হবে।
বিমল ঘুরে আবার এল, "কি, বললিনা তো, কি করছিলিস?"
গতরাতে দুটোর সময় বিমল উঠেছিল। মাধবীর দেরিতে ঘুম এলেও তখন সে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। বিমল বাথরুমে প্রস্রাব করতে গিয়ে দেখে এক কোনায় মাধবীর ছেড়ে রাখা শাড়ি, সায়া সব পড়ে রয়েছে। সেগুলো জলকাচাও হয়নি। হয়তো মাধবী শত কাজের চাপে ভুলে গ্যাছে।.. তারপর একটা অদ্ভুত কৌতূহল জাগলো বিমলের। সে সেগুলো হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। দেখে শাড়ির আঁচল সমেত জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বীর্যের দাগ, সায়াতেও। ব্রেসিয়ারটা চেক করে, সেটা পরিষ্কার। আর প্যান্টি? সেটা কোথায়? খুঁজে পায়না সে।
তবে কি সমরেশ মাধবীকে প্যান্টিটা দেয়নি? মাধবী সেটা খুঁজে না পেয়ে তা না পড়েই চলে এসছে? তাহলে কি করতে গেছিল সমরেশ ওপরে, তাকে বসিয়ে রেখে? কেনই বা এত দেরি করলো? সে লক্ষ্য করেছিল নিচে নেমে আসার পর সমরেশের মুখটা কিরকম ভার হয়েছিল। পরে মাধবীও হাসি মুখে নামেনি। উল্টে কিছু না বলেই সটান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তাহলে তাদের মধ্যে কি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল তখন? সমরেশ কি মাধবীর উপর জোর খাটানোর চেষ্টা করেছিল?..
"স্কাউন্ড্রেল!..", ভেবেই চিৎকার করে উঠেছিল বিমল। কিন্তু গভীর নিদ্রায় থাকায় তা কারোর শ্রুতিগোচর হয়নি।
সকালে উঠে স্থির করে সে এই বিষয়ে এখুনি মাধবীকে কিছু শুধোবে না। যা হবে সান্যাল বাড়িতে গিয়েই হবে। বসু মল্লিক বাড়িতে এসব নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়। দেওয়ালেরও কান আছে। বিশেষ করে রুক্মিণীর বদন্যতায় সকালে সেই কান আরোই সজাগ হয়ে ওঠে। পাশের ঘরটাই তাদের, রুক্মিণী ঘরের সামনে সকালে যোগব্যায়াম করে আর ফাঁকতালে সুযোগ বুঝে আড়িপাতে।.. তাই বিমল এবং মাধবীর যাবতীয় কথা ও আগামীকালের পরিকল্পনা, সব তারা রাতে সেরে নিয়েই শুতে যায়। সকালের জন্য কোনো কথা ফেলে রাখেনা।
বিমল সেই মতো সান্যাল বাড়িতে ঢুকতেই সদর দরজা বন্ধ করে সমরেশকে পরোক্ষভাবে একপ্রকার পুলিশি জেরা করতে উদ্যত হয়েছিল। সমরেশ খানিক থতমত খেয়ে গেল তাতে।
"এসব কি বলছিস তুই?", আমতা আমতা করে সমরেশ বললো।
"মাধবীর প্যান্টিটা কোথায়?", এবার কোনো রাখঢাক না রেখে বিমল বলে উঠলো।
মাধবী তা শুনে আঁতকে উঠলো! ভয়ে একবার সমরেশের দিকে তাকালো। সমরেশও সমান ভীত তখন। প্যান্টিটা রেখে যাওয়ার বিষয়ে বিমল জানলো কি করে? দুজনেরই মনে জাগলো সেই প্রশ্ন!..
বিমল আর কথা না বাড়িয়ে সোজা সিঁড়ি ধরলো। সমরেশের পা যেন শুকনো মাটিতেও জমে গেছিল। নড়তে চড়তে পারছিলনা একদমই। সে চাইলেও বিমলকে আটকাতে পারলো না। শুধু নীরব দর্শক হয়ে বিমলকে দোতলায় উঠে যেতে দেখলো। কিন্তু মাধবী কাঁপা কাঁপা পায়ে হলেও বিমলের পিছু নিল।
দোতলার সেই ঘরে গিয়ে বিমল দেখলো বিছানার এক কোনায় ন্যাতার মতো প্যান্টিটা পড়ে রয়েছে। দেখে বেশ বোঝাই যাচ্ছিল সেই কাপড়ের টুকরোটার উপর কি অমানবিক অত্যাচারই না চালিয়েছে সমরেশ! বিমল রাগে দাঁতে দাঁত কষলো। সে ভাবলো বোধহয় এই অত্যাচারের আঁচ কাল মাধবীর গায়েও এসে পড়েছিল যখন সে নিচে বসেছিল এবং সমরেশ তার তোয়াক্কা না করে প্যান্টিটা দিতে উপরে উঠে এসেছিল।
এই ভেবেই বিমল আবার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসতে লাগলো। মাধবী ছিল মাঝরাস্তায়, তার সিঁড়ি ভাঙা শেষ হতে না হতেই বিমল উপরে গিয়ে যা দেখার দেখে নিয়ে ফেরত আসছিল। মাধবী কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না যখন দেখলো বিমল আবার সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে এবং তাকে পাশ কাটিয়ে কোনো কথা না বলে নিচে নেমে যাচ্ছে। মাধবী না পারতে আবার তখন মুখ ঘুরিয়ে নিচে নামতে লাগলো।
বিমল তরতরিয়ে নেমে সমরেশের কাছে গিয়ে সজোরে এক ঘুষি মারলো তাকে। সমরেশ উল্টোদিকে ঘুরে মুখ থুবড়ে পড়লো। মাধবীর কানে প্রকান্ড এক আওয়াজ এল, যেন মস্ত কিছু পড়ে যাওয়ার। সেও তখন তড়িঘড়ি পা চালিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল। দেখলো সমরেশ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে, আর বিমল তার উপর চড়ে তাকে আরো মারতে উদ্যত হয়েছে!
"বিমল!!!!.....", চিৎকার করে উঠলো মাধবী।
বিমল চোখ তুলে তাকালো। মাধবীর ভয়ে কেঁদে ফেলার উপক্রম। সে বিমলকে এত রেগে যেতে আগে কখনো দেখেনি। মাধবীকে দেখে বিমল চিৎকার করে উঠে বললো, "সমরেশ কাল তোমার সাথে জোরজবরদস্তি করেছিল? উত্তর দাও...."
নিজেকে সামলে নিয়ে ঢোঁক গিলে মাধবী বললো, "না.. এসব তুমি কি বলছো? কেনই বা বলছো? কি হয়েছে তোমার?"
"আমাকে তাহলে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, তোমার প্যান্টিটা এখানে কি করছে? কালকে কেন পড়ে যাওনি? কাল তোমায় নিতে আমি এখানে আসার পর দেখি তোমার প্যান্টি ওই টেবিলের তলায় পড়ে আছে। আমি বলায় সেটা সমরেশ তুলে নিয়ে উপরে গেল তোমায় দিয়ে আসতে।.. তারপর ও কি দেয়নি সেটা তোমায়?"
"দিয়েছিল.."
"তাহলে?"
"আমি রেখে গেছিলাম.."
"কিন্তু কেন?"
"সে তুমি বুঝবে না.."
বিমল সমরেশকে ছেড়ে দিয়ে এবার উঠে দাঁড়ালো। মাধবীর কাছে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে বললো, "কেন বুঝবো না, তুমি বোঝালেই বুঝবো।"
"বিমল, তোমার এখন মাথার ঠিক নেই। এখন সবটা খুলে বললে তুমি আবার থর হরি কম্প পরিস্থিতি করে তুলবে। তার চেয়ে বরং তুমি এখন যাও। তুমি তো আমাকে এখানে রেখে অফিসে যাবে বলেছিলে। সেটাই করো। সময় করে আমায় নিতে এসো।"
"মাধবী.....??"
"কিই?"
"তোমার এত তাড়া?"
"তাড়া ভাবলে, তাড়া। শুধু একটা কথা জেনে রেখো, আজ যেটা করলে তুমি সমরেশের সাথে সেটা কিন্তু ওর প্রাপ্য ছিলনা। সে এমন কিছুই করেনি যার জন্য তুমি তাকে ওভাবে মাটিতে ফেলে মারবে। সমরেশ যা করেছে, যতটুকুই করেছে, তোমার কথায় করেছে। নাহলে আমরা দুজনের কেউই তোমার এই প্রস্তাবে প্রথমে রাজি ছিলাম না, সেটা নিশ্চই তুমি ভুলে যাওনি? তাই ভবিষ্যতেও যা ঘটবে আমাদের মধ্যে, তা তোমার কারণেই, তোমার ইচ্ছে রাখতেই হবে। এটা মনে রাখবে সবসময়। সেহেতু অযথা ওর উপর চড়াও হয়ে নিজের বীরত্ব ফলাবে না কখনো।"
মাধবীর কথা গুলো তীরের মতো এসে বিঁধছিল বিমলের মনে। মাধবীর সমরেশের জন্য এতটা চিন্তা? এতটা ভাবনা? কবে জন্মালো বা কখন?? সে এটাও লক্ষ্য করেছে যে মাধবী এখন আর সমরেশ দা বলেনা, নাম ধরে ডাকে। যেন তারা..... কি? পরম মিত্র? নাকি খানিক স্বামী স্ত্রী স্বরূপ?....