Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#87
কিছু সম্পর্কঃ ৭ ()

 
জান্নাতের আচরন আজকাল রানীর কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে । কম কথা বলে , ওর মাঝে যে প্রাণবন্ত ভাবটা ছিলো , সেটা তেমন একটা চোখ পরে না । আর সবচেয়ে আজব ব্যাপার হচ্চে , জান্নাত ওকে তেমন একটা সময় দেয় না । আগে নানা কারনে দিনে দুবার একবার বাড়িতে আসতো এখন তাও আসে না । এমন কি ক্যাম্পাসেও তেমন একটা দেখা মেলে না । আগে ক্যাম্পাসে এক সাথে আসতো এখন তাও আসা হয় না । যদিও এক সাথে না আসাটা রানীর করানের হয়েছে । রাজীব কড়া ভাবে বলে দিয়েছে , এখন থেকে রাজীব ওকে নিয়ে আসবে আবার নিজেই বাসায় ফিরিয়ে আনবে । যদি রাজীবের কোন কারনে দেরি হয় , সেই সময়টা রানীকে লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করতে হয় ।
 
স্কু*ল জীবনের রানীর এতো কড়া শাসন ছিলো না । রাজীব ওকে আজকাল আর বিশ্বাস করে না । রাজীবের ধারনা হয়েছে রানী নেশা টেশা করে অথবা কোন খারাপ ছেলের পাল্লায় পরেছে। মাঝে মাঝে রানীর ইচ্ছে হয় প্রতিবাদ করতে । কিন্তু সাহস হয় না, রাজীবের মুখের দিকে তাকালেই ভয় হয় । এই রাজীব কে ও ঠিক চেনে না । আগে রাজীব বাইরে চুপচাপ থাকলেও ওর সাথে ফ্রি ছিলো , দুজন দুজনের কথা একে অপর কে বলতো । কিন্তু আজকাল রাজীব তেমন কথাও বলে না । কিছু জিজ্ঞাস করলে হু হা করে উত্তর দেয় ।
 
রানী মনে মনে খুব ক্ষেপে আছে জান্নাত আর রাজীবের উপর । এ দুজন ই তো ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ আর এখন এরাই ওর সাথে এমন আচরণ করছে , যেন ও ওদের কেউই না । রাজীব কে দেখে তো মনেই হয় জাস্ট দায়িত্ব পালন করছে । নইলে হয়তো ওর মুখ দেখার ও প্রয়োজন মনে করতো না । প্রথম প্রথম ভীষণ অভিমান হতো রানীর , এখন অভিমান হয় না । এখন রাগ হয় ।
 
হ্যা রানী ওদের দুজনকেই খুব পেরেশান করেছে , এটা রানী মানে । কিন্তু তাই বলে এমন করবে । বিশেষ করে রাজীব , রানী মনে মনে ভাবে, খুব তো বলতো তোর উপর আমি কখনো রাগ করবো না , তুই সুধু আমার ছোট বোন না , তুই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় । তাহলে এমন করছে কেনো? একটু না হয় কষ্ট ই দিয়েছি । ভুল তো মানুষের ই হয় । তাই বলে এমন করবে ?
 
এই যেমন আজকে রানী বিপদে পরেছে , ওর কিছু কেনাকাটা করা বিশেষ জরুরি । কিছু বই কিনতে হবে , সাথে কিছু ইনার ও কিনতে হবে । ব্রার দোকানে তো আর রাজীব কে নিয়ে যাওয়া যায় না । তাই রানী ক্লাস শেষে জান্নাত কে কল করেছিলো । রিকোয়েস্ট করেছিলো ওর সাথে মার্কেটে যেতে । কারন রাজীব সুধু জান্নাতের সাথেই ওকে কোথাও ছাড়তে রাজি আছে ।  কিন্তু জান্নাত ওকে পাত্তাই দিলো না , ওর নাকি সময় হবে না । রানীও রাগ করে কল কেটে দিয়েছে । এখন দাড়িয়ে আছে রাজীবের জন্য , সাথে তিন ান্ধবী , পায়েল , ঋতু আর নিসা । রাজীব কে রিকোয়েস্ট করবে ওদের সাথে যেন যেতে দেয় । ওরাও বই কিনতে যাবে , রানী ওদের কে দেরি করাচ্ছে । কারন আন্ডারয়ার রানী একা একা কিনতে যেতে পারে না , ওর অস্বস্তি হয় । অবশ্য রানী এটা বলেনি যে ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে । এটা বলতে ওর আত্মসম্মানে লেগেছে । তাছাড়া ওর বন্ধুরা জানলে এই নিয়ে ট্রল করতে ছাড়বে না । পুরো ক্লাস জানিয়ে দেবে ।
 
একটু পর ই রাজীবের বাইক এসে থামে , রানী প্রায় দৌরে যায় রাজীবের কাছে । কারন ওর বন্ধুরা বেশ বিরক্ত হচ্ছে , অনেকক্ষণ যাবত ওরা রানীর জন্য অপেক্ষা করছে ।
“ ভাইয়া আমি ওদের সাথে একটু মার্কেটে যাই , কিছু বই কিনতে হবে , সাথে মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা আছে” রানী একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা তিন জন কে দেখায় ।
 
রাজীব রানীর দেখানো তিন মেয়ের দিকে তাকায় , মেয়ে গুলোকে ভদ্র ই মনে হয় ওর কাছে । একটু ভাবে রাজীব , তারপর বলে “ ওদের চলে যেতে বল , আমি নিয়ে জাচ্ছি”
রানী এমন ভাবে রাজীবের দিকে তাকায় যেন ও রাজীব এর বলা কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না , অবাক এবং কিছুটা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাজীবের দিকে । কিন্তু রাজীব রানীর সেই দৃষ্টিকে পাত্তা দেয় না । নির্লিপ্ত ভাবে বলে “ কই যা, বলে আয় ওদের , আমার  দেরি হয়ে যাচ্ছে , তোকে নামিয়ে দিয়ে আমার একটা কাজে যেতে হবে” রাজীব আরো একটা পার্ট টাইম জব পেয়েছে । রানীকে নামিয়ে দিয়ে সেখানেই যাবে । বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ।
 
“ ভাইয়া প্লিজ , আমি যাবো আর আসবো” রানী মিনতি করে , আসলে এতক্ষণ দেরি করিয়ে ওদেরকে কিভাবে বলবে চলে যেতে , এই ভেবেই রানী খুব লজ্জিত হচ্চে । কি ভাববে ওরা , এর পর হয়তো ওরা ওর জন্য আর কোনদিন ওয়েট করবে না ।
 
“ আহা আমি বললাম তো নিয়ে জাচ্ছি , বাইকে গেলে তারাতারি হবে , রিকশায় গেলে জ্যামে পরবি” রাজীব কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে । রানীর দিকে তাকানোর প্রয়োজন ও মনে করে না ।
 
এদিকে প্রচণ্ড রাগে রানীর চোখ টলমল করতে থাকে , মুখ লাল হয়ে যায় , হাতের আঙুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে । কিন্তু রানী আর অনুরধ করে না । রাজীব ওর সাথে যেমন আচরণ করছে তাতে ওর অনুরধ করতে বাধে । রানী ভাবে , রাজীবের কাছে ছোট হওয়ার চেয়ে , ওর ক্লাসমেটদের কাছে ছোট হওয়া ভালো ।
 
মাথা নিচু করে রানী বন্ধুদের কাছে ফিরে যায় । এদিকে ওর তিন বন্ধু নিজেদের মাঝে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে । রানী ওদের কাছে যেতেই , পায়েল বলে ওঠে “ রানিইইইই , তুই তো দেখি সব সেক্সি ছেলে গুলো দখল করে নিচ্ছিস? কতদিন আগে দেখলাম একটা হাট্টা খাট্টা হাঙ্ক এর সাথে বাইকে করে বেড়িয়ে গেলি , আবার আজকে এই সুইট এর ডিব্বা টা এসেছে তোর জন্য , আমাদের জন্য কিছু রাখ ভাই”   
 
পায়েল হলো সেই মেয়ে যে রানীকে জয়ের সাথে দাড়িয়ে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞাস করেছিলো , কে এটা। পায়েলের কথা শেষ হতেই বাকি দুজন ও হাসতে শুরু করলো । এমনিতেই রাগান্বিত রানী বন্ধুদের এমন আচরণে আরো রেগে গেলো , একটু রেগেই বলল “ কি যা তা বলিস , না বুঝেই যা মুখে আসে তাই বলিস । এটা আমার ভাই”
 
“ কেমন ভাই ? চাচাতো , মামাতো , খালাতো , ফুফাতো , পাড়াতো , কেমন ভাই?” নিসা নামের মেয়েটি কণ্ঠে আদি রস মিশিয়ে জিজ্ঞাস করে ।
“ তোদের মত ফালতু মেয়ে আর দেখি নাই , ভাই তো ভাই ই এতো তো তো কি , আর এটা আমার আপন ভাই , মুখ সামলে কথা বল প্লিজ” রানী এবার সত্যি সত্যি বন্ধুদের উপর রেগে গেছে , নিসার বলার ভঙ্গিটা খুবি খারাপ ছিলো ।   
তিন ান্ধবী অবশ্য রানীর রাগ কে তেমন একটা পাত্তা দেয় না , ওরা এই জানতে পেরে খুব খুশি যে রাজীব রানীর ভাই । তিনজন ই রানী কে ধরে , ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য । এছাড়া রাজীব কে নিয়ে আপত্তিকর ইংগিত ও করতে থাকে । রানী জানে ওর বন্ধুরা মজা করে এমন করছে । কিন্তু ওর কাছে ভালো লাগে না । রানী বেশ রাগান্বিত ভাবে বলে “ তোদের মত অসভ্য মেয়েদের সাথে আমি কোনদিন আমার ভাইয়ের পরিচয় করাবো না”
 
রানীর এমন রাগ দেখে ওর ান্ধবীরা আরো মজা পায় , ঋতু বলে “ ইস আমাদের না হয় পরিচয় করালিনা , কিন্তু অন্য কেউ কি তোর ভাইয়ের সাথে অসভ্যতা কোনদিন করবে না ? এর চেয়ে  ভালো আমরাই না হয় করলাম , আমরা তোর আপান জন , তোর ান্ধবী হি হি হি”
 
“ যা তোরা যা , আমি তোদের সাথে যাবো না” বলে রানী গট গট করে হেটে রাজীবের বাইকের কাছে চলে আসে । পেছন থেকে তিনজন হাসতে হাসতে ওকে ডাকতে থাকে । কিন্তু রানী শোনে না ।
 
বাইকের পেছনে উঠে রানী রাগান্বিত ভাবে বলে “ বাসায় চল”
 
রানীর কণ্ঠে রাগের তেজ টের পায় রাজীব , ভাবে বন্ধুদের সাথে যেতে দেয়নি বলে রাগ করেছে , তাই একটু নরম স্বরে বলে “ আমি নিয়ে জাচ্ছি তো , চল”
 
“ না যাবো না , বাসায় চল” রানী আগের মতই রাগান্বিত ভাবে বলে ।
 
“ আরে চল একটু দেরি হলে……” রাজীব কথা শেষ করতে পারে না , তার আগেই রানী প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে “ বললাম না আমি যাবো না , কথা কানে ঢুকে না , বাসায় চল , না হয় আমি বাইক থেকে নেমে যাবো”
 
রাজীব আর কথা বাড়ায় না , রানীর দিকে হেলমেট বাড়িয়ে দেয় , নিজেও হেলমেট পরে নেয় । তারপর বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরে ।  
 
রানী এখনো রাগান্বিত তবে রাজীবের উপর থেকে রাগ সম্পূর্ণটা নিজের বন্ধুদের উপরে এসে পরেছে । এখন বরং রাজীবের জন্য একটু দুশ্চিন্তাই হচ্চে । ওর ান্ধবীরা ওর চোখ খুলে দিয়েছে আজকে  ।রানী জানে রাজীব খুব হ্যান্ডসাম ছেলে , সুধু হ্যান্ডসাম বললে ভুল হবে । এমন ছেলে হাজারে একটা দেখা যায় কিনা সন্দেহ । এমন হাইট, এমন চেহারা ,  আচার আচরন কোন দিক থেকে ফেলনা নয়।  আগে কোনদিন রানী রাজীবের গুড লুক কে গুরুত্ব দেয়নি  , নিজের ভাই বলে , কিন্তু অন্য মেয়েরা তো আর সবাই রাজীবের বোন না ।  নিশ্চয়ই মেয়েরা রাজীব কে পারসিউ করে ।  
 
রানী রাজীব কে হাড়ে হাড়ে চেনে , খুব নরম স্বভাবের ছেলে , তা ছাড়া একটু ব্যাকডেটেড ও আছে । আজকালের এই আল্ট্রামরডান মেয়েদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না ও । রানী এই ভেবে চিন্তায় পরে যায় , না জানি ওর সহজ সরল ভাই এমন কোন মেয়ের পাল্লায় পরে যায় । এসব মেয়ে তো ও অনেক দেখছে , একেকজন দশ বারোটা করে রিলেশন করে , একাধিক ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক এদের কাছে কোন ব্যাপার । পায়েল নামের মেয়েটি তো গর্ব করে বলে এখন বর্তমানে ওর তিনটে বয় ফ্রেন্ড সবার সাথেই ফিজিক্যাল রিলেশন আছে । আর ঋতু তো প্রায় ই দামি দামি গিফট এনে দেখায় । এই গিফটের জন্য ভারসিটির এক বুড়ো প্রফেসরের সাথে ফিজিক্যাল রিলেসন রাখে , ওই বুড়া নাকি ওর সুগার ড্যাডি।
 
রানী ভাবে , ওর ভাইকে একটা বিয়ে করিয়ে দিলে ভালো হয় , একটা খুব নম্র সভ্য মেয়ে খুজে আনবে ও ওর ভাইয়ের জন্য। যে মেয়ে রাজীব কে বুঝবে , রাজীব কে ভালোবাসবে । না হলে রাজীব এই স্লাটদের পাল্লায় পরবে । আর একবার যদি মনে দুঃখ পায় তাহলে আর সেই দুঃখ ভুলতে পারবে না রাজীব , কারন ওর ভাই ওর মতই ইমোশনাল , যদিও প্রকাশ করে না কিন্তু রানী জানে।  
নাকি অলরেডি পরে গেছে ? হঠাত রানীর ম্থায় প্রশ্ন আসে । তারপর মনে মনে ভাবে নিশ্চয়ই রাজীব কোন স্লাটের পাল্লায় পরেছে , নইলে ওর আচরণ এমন হচ্ছে কেনো দিন দিন । যে রাজীব ঘরের সবার খেয়াল রখাতো সেই রাজীব আজকাল ঘরের কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না ভালো করে । ও নিজে না হয় দোষী , কিন্তু আব্বু , আব্বু কি দোষ করেছে । রাজীব আজকাল আব্বুর সাথেও ভালো করে কথা বলে না । মাঝে মাঝে তো খোঁচা দিয়ে কথা বলে । রানী এসব দেখে কিন্তু কিছু বলে না , কারন ওর বলার মুখ নেই । নিজেই রাজীবের সামনে চোরের মত থাকে ।
 
কিন্তু এখন কিছুটা বুঝতে পারছে রানী । এবং রানীর বিশ্বাস রাজীব কোন মেয়ের পাল্লায় পরেছে । আর এই কারনেই রাজীব এমন সেলফিস আচরণ করছে । নিজের পরিবারের মানুষদের প্রতি ওর আর আগের মত টান নেই । পরিবার কে বোঝা মনে হচ্ছে । ধিরে ধিরে রানীর রাগ আবার  আবর্তিত হয়ে রাজীবের দিকে ধাবিত হয় ।
 
একটু পর আবার রানীর চিন্তা অন্য দিকে ধাবিত হয় , রানীর হঠাত জয়ের কথা মনে পরে । জয়ও এই মেয়েদের মতই , ম্যান স্লাট, ফাকবয়  । আর ও এই ম্যান স্লাটের পাল্লায় পরে , নিজের জীবন হেল করে দিয়েছে । আবার এতে জয়ের দোষ ও দেয়া যায় না , ও জেনে শুনেই এই জয়ের পাল্লায় নিজেকে জড়িয়েছে । আসলে এদের আকর্ষণ ই এমন যে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । নিজেকে কত বার যে বুঝিয়েছে , যা হয়েছে ভালো হয়েছে , তুই আর জয় একে অন্য জন নস । কিন্তু মন কিছুতেই মানে না , যেদিন থেকে জান্নাত বলল , এটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে । সেদিন থেকেই ওর মন বদ্ধ ভাবে বিশ্বাস করে নিয়েছে , যে ও জয়কে ভুল বুঝেছে । জয় কিছুতেই ওই কাজ করতে পারে না ।
 
রানী বারবার নিজেকে বোঝাতে চেয়েছে , যে ছেলে শত শত ( রানীর বাড়িয়ে বলা) মেয়ের সাথে মিথ্যা সম্পর্কে জড়াতে পারে , শারীরিক সুখের জন্য , সেই ছেলেকে কিভাবে বিশ্বাস করা যায় । কিন্তু রানীর মন এসব যুক্তি শুনতে নারাজ । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ওর মন ওকেই দোষী সাব্যস্ত করে । জয় হলো তুলসি পাতা আর ও হচ্ছে ওভার থিঙ্কার ।
 
এরকম নানা মুখি চিন্তা ভাবনায় রানীর মাথার ভেতর জট পাকাতে থাকে । মাথা  এলো মেলো হতে শুরু করে । এক পর্যায়ে রানী ভেবেই পায় না কার উপর রাগ করবে । কিন্তু প্রচণ্ড রাগ দানা বাধতে থাকে মনের ভেতর । একটু আগে যে রাজীব কে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো , সেই রাজীব কেও অসহ্য লাগতে লাগলো , জয় কে অসহ্য লাগতে শুরু করলো , আব্বু কে একজন মেরুদণ্ডহীন কীট বলে মনে হতে লাগলো , দুনিয়ার সবার উপরেই রাগ হতে লাগলো ।
 
আর সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাসায় ঢুকেই । রানী বাসায় ঢুকেই নিজের হ্যান্ডব্যাগ ছুড়ে ফেলে সোফার উপরে । তারপর ধপ করে বসে পরে , ব্যাগের পাশেই । কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ থাকে , আড় চোখে রাজীব কে দেখে একবার । ওর দিকেই তাকিয়ে আছে , কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । আর তখনি আর কাউকে সামনে না পেয়ে , দুনিয়ার সবার রাগ এসে পরলো রাজীবের উপর । এক পা এগিয়ে এসে রাজীব কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রানী বসা থেকে দাড়িয়ে যায়, চিৎকার করে ওঠে , প্রচণ্ড জেদে দিক্বিদিক শূন্য হয়ে আক্রমণ করে রাজীব কে ।
 
“ তুই কিছু বলবি না , একটা কথাও যেন ওর মুখ থেকে না বের হয় , তুই ভবেছিস কি নিজেকে ? রাজীব দ্যা গ্রেট , কে তোকে অধিকার দিলো আমাকে আমার বন্ধুদের সামনে অপমান করতে , তুই কে , তুই কি আমার বাবা? আমার মা? না তুই কিছুই না, আমার ব্যাপারে তুই আর নাক গলাবি না , আমি যা ইচ্ছা তাই করবো , যখন ইচ্ছা তখন বের হবো , যখন ইচ্ছা তখন বাসায় আসবো , যার সাথে খুশি তার সাথে যেখানে খুশি সেখানে যাবো”
 
রাজীব যেন একটা স্ট্যাচু হয়ে , রানীর বলা একেকটা কথা ওর কানে তীরের মত আঘাত করতে থাকে । সুধু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না রাজীব ।
 
এদিকে রানীর মনের ঝাল এখনো মেটেনি , জাস্ট দম নেয়ার জন্য থেমেছিলো , দম নেয়া হতেই আবার শুরু করে ,এবার আর উঁচু স্বরে , প্রায় গলা ফাটিয়ে  “ আমাকে ভয় দেখাস , আব্বুকে বলে দিবি , দে না , যা বলে দে । আমি কি ভয় পাই? এমন আব্বুর আমার দরকার নেই , নিজের ছেলে মেয়ের খেয়াল রাখতে পারে না , নিজের স্ত্রী কে বাঁচিয়ে রাখতে অন্য কারো কাছে হাত পাততে হয়……”
 
এই পর্যায়ে  রাজীব আর চুপ থাকতে পারে না , ওকে যা তা বলুক কোন সমস্যা নেই , কিন্তু আব্বুর সম্পর্কে বলা কথা গুল আর হজম হয় না , দাঁতে দাঁত পিষে বলে “ আর একটা কথা আব্বুর সম্পর্কে বললে ……”
 
“ কি করবি , মারবি , মার, মারনা আমাকে” এই বলে রানী এগিয়ে যায় রাজীবের দিকে , আর একটু হলেই ধরে ফেলতো রাজীব কে, ভয়ে রাজীব দু পা পিছিয়ে যায় । আর রানী রাজীব কে ধরতে না পেরে , ফাস্টেসনে প্রায় কেঁদে ফেলে বলে  “আমি মরে গেলেই তো তুই আর তোর আব্বু বেঁচে যাস , তোদের বোঝা হালকা হয়ে যায়, তোরা ত এমন ভাব করিস যে তোরা না থাকলে আমি একা বেঁচে থাকতে পারবো না , আসলে তোরা আমাকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করিস , নিজদের নেই মুরুদ , একেকটা লুজার , আর সেটা লুকাতে আমাকে ব্যাবহার করিস তুই , আর তোর আব্বু আমার মরা মা কে ব্যাবহার করে , ভাব দেখাস তোরা একেকজন মহান ব্যাক্তি , একজন স্ত্রী শোকে পাথর হয়ে গেছে , আর একজন সংসারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে , বাইরের মানুষ তো বোঝে না এসব তোদের ভং , সবাই তোদের হাততালি দেয় , বাহবা দেয় । আসল ব্যাপার তো আমি জানি ,  তোরা হলি একেকজন ধাপ্পাবাজ “
 
****
 
লুজার শব্দটা রাজীবের কানে খুব বাজে , আজকাল এই শব্দটা খুব শুনতে হচ্ছে ওকে । ওর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে । অন্তত রানীর মুখ থেকে এই শব্দটা আশা করেনি ও । রাজীবের কাছে মনে হচ্ছে ওর জীবনটাই ভুলে ভরা । ভালো করতে গিয়ে আজ পর্যন্ত সব কিছু গোলমাল ই পাকিয়ে ফেলেছে । ওর কাছে মনে হচ্ছে , এতদিন যে পরিক্ষার খাতায় লিখেছে , এই কয়দিনে সেই পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে । আর খুব বাজে ভাবে ফেইল করেছে ও । প্রথমে রানীর সেই কাটা হাতের দৃশ্য। তারপর নিজে থেকে বাড়িয়ে দেয়া জান্নাতের মত মেয়ের হাত ফিরিয়ে দেয়া । তারপর আজকে রানীর মুখে থেকে এই অপবাদ গুলো। একেকটা ঘটনা  যেন বড় বড় একেকটা জিরো।  
 
রাজীব নিজের ভাবনায় কিছুটা ডুবে যাওয়ায় রানীর বলা শেষের কথা গুলো শুনতে পায়নি । কিন্তু হঠাত খেয়াল হলো , রানী আর চেঁচাচ্ছে না , তাই রাজীবের ধ্যান আবার রানীর দিকে গেলো , আর হতবাক হয়ে দেখলো রানী আর চেঁচাচ্ছে না , তার জায়গায় বিড়বিড় করছে , ওর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে , কিন্তু জোড় করে খুলে রাখার চেস্টা করছে , রানী ঠিক মত দাড়াতেও পারছে না , টলছে । দ্রুত রাজীব রানীর কাছে এসে রানী কে ধরে ফেলে । রানী শক্তিহীন হাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে , বিড়বিড় করে বলতে থাকে , আমাকে ধরবি না , আমাকে ধরবি না , তোদের ছাড়াও আমি চলতে পারবো , আমি তোদের বোঝা হতে চাই না।
 
কিন্তু রাজীব এসব কথায় কান দেয় না , রানী প্রায় ওর উপর এলিয়ে পরেছে । প্রায় জ্ঞান শূন্য হওয়ায় বেশ ভারি লাগছে । রাজীব ওকে টেনে এনে সোফায় শুইয়ে দেয় , আলতো করে বেশ কয়েকবার আগলে হাত দিয়ে আঘাত করে ডাকে । কিন্তু রানী কোন রেস্পস্ন করে না । রাজীব দ্রুত এক গ্লাস পানি এনে রানীর মুখে ধরে , খাওয়াতে চেষ্টা করে , কিন্তু সফল হয় না , শেষে গ্লাসে হাত ঢুকিয়ে কিছু পানি নিয়ে রানীর চোখে মুখে মাখিয়ে দেয় । হাতের তালু পায়ের তালু পালা করে মালিশ করতে থাকে । সেই সাথে বার বার ডাকতে থাকে নাম ধরে ।
 
রাজীব জানে রক্তশূন্যতা র কারনেই এমন হয়েছে । রাজীব ধিরে ধিরে রানী কে চিত করিয়ে শুইয়ে দেয় , শরীর থেকে ওড়না সরিয়ে দেয় যেন বাতাস ঠিক মত লাগে । তারপর রানীর পা একটা একটা করে প্রায় এক ফুট উপরে তুলে ধরে রাখে , প্রতিটা পায়ের নিচে সোফার কুশন দিয়ে দেয় । তারপর লক্ষ্য রাখে রানীর শ্বাস প্রশ্বাসের উপর ।
 
মিনিট খানেক পর ই রানী হালকা করে চোখ মেলে তাকায় । মুহূর্ত খানেক তাকিয়ে থেকে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে , চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে । রাজীব আরো কিছুক্ষন সময় নেয় , তারপর ধিরে ধিরে রানী কে পিঠে হাত দিয়ে উঠে বসতে সাহায্য করে । পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরে । রানী কয়েক চুমুক পানি মুখে নিয়ে , আড় চোখে একবার রাজীবের দিকে তাকায় , ঠোঁট দুটো কেঁপে ওঠে রানীর । এ হচ্ছে অসহায়ত্বের  কান্না যাকে এতক্ষণ যা ইচ্ছা তাই বলেছে , তার হাতেই এখন ভর দিয়ে বসে আছে । ওর চেয়ে অসহায় এই দুনিয়ায় আর কে আছে ।

*****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 04-10-2025, 09:25 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)