03-10-2025, 08:20 PM
(This post was last modified: 03-10-2025, 08:28 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (খ)
জয় ইদানিং খুব ব্যাস্ত দিন পার করছে । সামনে ছাত্র উইং এর কমিটি ঘোষণা হবে । তাই আবির জয় কে খুব বিজি রাখছে । যে করেই হোক আবির চায় ওর প্যানেল যেন কমিটিতে সবচেয়ে বেশি পদ পায় । তাছাড়া জয় কেও ভালো একটা পদ দেয়ার ইচ্ছা আছে । সমস্যা হচ্ছে জয় হলে থাকে না , যদি হলে থাকতো তাহলে সহজে একটা হলের পদ দিয়ে দেয়া যেতো ।
আজকে জয়ে কে নিয়ে আবির এক বড় নেতার বাড়িতে এসেছে । বিশাল ক্ষমতাধর নেতা , আসার সময় আবির প্রচুর বাজার সদাই করেছে । মাছ , খাসী , মুরগী কিনে নিয়ে এসেছে । এ কাজে জয় কে পাঠাতে চেয়েছিলো , কিন্তু জয় বাজার করতে জানে না । কোনদিন বাজারে যায়নি । তাই আবির নিজেই গিয়েছে । তবে নেতার বাড়ি জয় কে নিয়ে এসেছে । ইচ্ছা নেতার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া ।
প্রায় পনেরো মিনিট হলো আবির আর জয় ওয়েট করছে । আর এই পনেরো মিনিট ধরেই আবির বকবক করে যাচ্ছে । কিন্তু জয় সেসব কিছু শুনতে পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না । হাসপাতালে স্যার ঘটনার পর থেকে , জয় নিজের মাঝে সেই মোটিভেশন আর পায় না । আবির যা করতে বলে সেটাই করে সুধু । নিজ থেকে যে বেশি কিছু করবে সেটা আর করা হয় না ।
কি করবে ? কেন করবে ? কার জন্য করবে? নিজেকে সুধু এই প্রস্নই করে । যার জন্য কিছু করার বাসনা মনে ছিলো , সে তো ওকে দেখলেই পালিয়ে বেড়ায় , এমন একটা ভাব করে যেন জয় একটা লুচ্চা বদমাশ , ওকে দেখলেই রে*প করে দেবে । না ক্যাম্পাসে দেখা করে , না বাড়িতে আসে আগের মত ।
জয়ের কাছে মনে হয় ওর ভেতরে যে স্পার্ক ছিলো , সেটা রানী নিজে হাতে নিভিয়ে দিয়েছে । মাঝে মাঝে এটা ভেবে আশ্চর্য লাগে জয়ের যে , একটা মেয়ে এভাবে ওকে নাকে দড়ি লাগিয়ে কিভাবে ঘোরাচ্ছে !!!! আগে যে কাজ জয় নিজে করতো সেটা এখন ওর সাথে হতে দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারে না । সিনয়র জুনিয়র কত মেয়ে ওর জন্য পাগল । এমনকি বিবাহিত এক্স নিলু ও বেশ কয়েকদিন খুচিয়েছে ওকে । জয় ও একবার ভেবেছিলো রানীকে ভুলে থাকার জন্য নিলুর সাথে কিছুদিন ফুর্তি করা যাক । কিন্তু জয় অবাক হয়ে দেখছে , নাহ সেই ফিলটা আর আসে না ।
রানী মেয়েটা সত্যি সত্যি ওর সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে । নিজে তো গেছেই , সাথে করে ওর লাইফটা মাটি করে দিয়ে গেছে, জয় মনে মনে ভাবে । মনে মনে ভাবে শিকদার পরিবার হচ্ছে কুফা পরিবার , এরা নিজেরাও মরা মানুষের মত থাকে , আর এদের সংস্পর্শে যারা আসে তাদের ও মরা মানুষ বানিয়ে দেয় ।
“ ওই মিয়া কি ভাবো এতো ? কোন সমস্যা? সমস্যা হইলে ভাই রে বলো , এমন কোন সমস্যা নাই যে তোমার ভাই ম্যানেজ করতে পারে না” আবির জয় কে অমনোযোগী দেখে জিজ্ঞাস করে ।
জয় দ্রুত নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে , লজ্জিত ভাবে বলে , “ আরে না ভাই কোন সমস্যা না , সমসসায় পরলে তো আপনার কাছেই আসবো প্রথম”
“ হুম মনে রাখবা তোমারে আমি আপন ছোট ভাইয়ের মতন দেখি” আবির চিন্তিত ভাবে বলে । আসলে আবির নিজেও দেখছে জয়ের মন বেশিরভাগ সময় ই খারাপ থাকে , পোলাপান ও এই খবর দিয়েছে যে জয় এখন আর আগের মত কাজে ঝাপিয়ে পরে না , বেশিরভাগ সময় হলে আড্ডা দেয় , আর মদ খায় । তবুও জয় কে সাথে রেখছে , কারন জয় অর্ধেক কাজ করেও অন্য সবার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে । এই ধরনের ছেলেই ওর দরকার । খুব বেশি হলে আর দুই বছর ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে আবির । কম তো হলো না প্রায় নয় বছর হতে চলল এই ক্যাম্পাসে ঢুকেছে । ফেইল করে আর নানা ছোট খাটো কোর্সে ভর্তি হয়ে এখনো ছাত্র নাম ধরে রেখেছে ।
চলে যাওয়ার আগে ক্যাম্পাসে নিজের একটা লোক রেখে যেতে চায় আবির । আবির চিন্তিত ভাবে জয়ের দিকে তাকায় । আবিরের চিন্তার ভাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যখন দেখতে পায় জয় আবার ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেছে । মনে মনে আবির ভাবে , নাহ এরে দিয়ে না হলে , আর পেলে পুষে লাভ নেই , অন্য ব্যাবস্থা করতে হবে ।
এদিকে জয় আবার রানীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে । ভাবছে রানী কি করে পারলো ওকে এমন একটা অপবাদ দিতে । ওর জন্য কি সুন্দরী মেয়ের অভাব হয়েছে । যে একজন অসুস্থ মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় টাচ করতে যাবে । মেয়েটার মাথায় কি ঘিলু বলতে কিছুই নেই । রানী কি ওর কাছে সুধুই একটা মেয়ে ? আর কারো জন্য না হোক ছোট আব্বুর কথা চিন্তা করে হলেও তো জয় এই কাজ ভুলেও করবে না ।
আচ্ছা ঠিক আছে , না হয় অসুস্থ অবস্থায় করে ফেলেছে , সুস্থ হওয়ার পর ও কি মাথায় এই চিন্তা আসেনি যে আমার মত একটা ছেলে এই কাজ করতে পারে না? জয় মনে মনে ভাবে । যতই ভাবে রাইর উপর রাগ বাড়তে থাকে । বার বার সিদ্ধান্ত নেয় আর ওই ফালতু গাধা মেয়ের কথা ভাববে না । যেমন ভাই তেমন বোন , ভাই যেমন অন্য কারো ঘারে দোষ দিয়ে নিজে সাধু সাজে । তেমনি বোনও একি কাজ করে ।
এদের সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই আমার , এরা জাহান্নামে যাক , ভাবতে ভাবতে জয়ের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে । কিন্তু মনের একটি গপন কুঠুরি থেকে কেউ একজন বলে ‘ তুই নিজেও তো একবার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারিস’
হ্যা পারতাম , কিন্তু ভয় হয় , জয় মনে মনে উত্তর দেয় । জয়ের ভয় হয় এই ভেবে যে , রানী যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয় । জয় হয়তো রানীর মুখ থেকে আরো কোন অপবাদ সইতে পারবে না । অন্য কেউ ওকে নিয়ে কি ভাবছে সেটা জয়ের কাছে মোটেও ইম্পরট্যান্ট নয় । জয়ের কাছে সুধু রানী কি ভাবছে , সেটাই ইম্পরট্যান্ট ।
জয়ের মনে আবারো অভিমান চাগাড় দিয়ে ওঠে , ভাবে এই পর্যন্ত রানী ওকে এই চিনলো ? একজন রে*পি*স্ট !!!!
জয়ের চিন্তা ভাবনায় ছেঁদ পরল যখন ওদের নেতার সাথে দেখা করার ডাক পরলো । আবির পই পই করে জয় কে বুঝিয়ে বলল , গিয়েই যেন পা ধরে সালাম করে । কিন্তু জয় করলো তার উল্টো , পা ধরে সালাম করা জয়ের স্বভাব নয় , জীবনে কোনদিন নিজের বাবা মা কেই পা ধরে সালাম করেনি আর এ তো সামান্য নেতা ।
****
বিকেল বেলা জান্নাতের ঘর । জান্নাত ওর পছন্দের জায়গায় বসে আছে । শেষ বিকেলের আলো এসে পরছে ওর গালে । কানে এয়ার বাড গুজে জ্ঞান শুনছে। মনটা ভালো নেই জান্নাতের , মন ভালো না থাকেলেই জান্নাত গান শোনে । গানের করুন সুর একেবারে ওর হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করছে ।
জান্নাতের মন খারাপের ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে । ক্যাম্পাসে আগের মত আর রাজীবের সাথে দেখা হয়না বলে জান্নাত নিজেই রাজীবের ফ্যাকাল্টিতে গিয়েছিলো । এবং ভাগ্যক্রমে দেখাও হয়ে গিয়েছিলো রাজীবের সাথে । কিন্তু হতাশ হয়েছিলো জান্নাত । এই কয়েদিনে ঠেলে ঠুলে যতটুকু এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের সম্পর্ক , সেই সন্ধার পর সেটা আবার ততটুকুই পিছিয়ে গিয়েছে । রাজীব আবার আগের মত নির্লিপ্ত হয়ে গেছে । আগে যেমন ওদের দেখা হলে কয়েক মুহূর্তের জন্য রাজীবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত , এখন সেটাও নেই ।
দুজন এক সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটালেও কথা হয়েছে খুব কম । বেশিরভাগ সময় চুপ হয়েই থেকেছে । জান্নাত অবশ্য নিজের মনভাব প্রকাশ করেনি প্রথমে । স্বভাব মত ঠাট্টার ছলে বলেছিলো “ কি ব্যাপার , আমার পেছনে লাগা ছেড়ে দিলি যে , ভয় পেয়েছিস?”
উত্তরে রাজীব সুধুই মলিন ভাবে হেসেছিলো । রাজীবের ওই মলিন হাসিই জান্নাতকে বলে দিচ্ছিলো রাজীবের মনের কথা । কিন্তু জান্নাত হাল ছারেনি , আবারো কিছুক্ষন পর বলেছিলো “ তোর ব্যাটারির চার্জ কি শেষ হয়ে গেছে ? আবার সাইলেন্ট মুডে চলে গেলি যে , রানী কে কি আবার অসুস্থ হতে বলবো , তারপর আবার আমরা দুজন হসপিটালে গেলে তবে কথা ফুটবে তোর মুখে”
রাজীব আবারো মুচকি হেসেছিলো , তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপ ছিলো । জান্নাতের একটু রাগ হয়েছিলো , তাই ও আর কথা বলেনি, মনে মনে ভেবছিলো এতো কেনো? কিছু তো অন্তত বলতে পারে । নিজেকে বড় বেহায়া মনে হচ্ছিলো জান্নাতের । বেশ কিছুক্ষন পর অবশ্য মুখ খুলেছিলো রাজীব , হঠাত করেই বলেছিলো “ তুই খুব ভালো মেয়ে রে জান্নাত……”
জান্নাতের মনে হয়েছিলো রাজীব আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো , কিন্তু বলতে পারেনি । রাজীবের কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো যে জান্নাত না তাকিয়ে পারেনি । মুখ তুলে রাজীবের মুখের দিকে তাকাতেই জান্নাতের মনে হচ্ছিলো ও রাজীবের ভেতরটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো । রাজীবের মনের ভেতর ঝড় বইছিলো , কি পরিমানে মানসিক চাপের মাঝ দিয়ে যেতে হচ্ছে তার অল্প কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলো জান্নাত । মমতায় ভরে উঠেছিলো জান্নাতের মন । ইচ্ছে হচ্ছিলো রাজীবকে টেনে এনে ওর বুকে এমন ভাবে লুকিয়ে ফেলে যেন আর কেউ খুজে না পায় ।
এই স্বল্পভাষী লাজুক ছেলেটার প্রতি ওর মনে এতো দরদ কবে থেকে জন্ম নিলো জান্নাত ভেবে পায় না। ভেবে আর কাজ ও নেই। কারন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এখন চাইলেও ফেরত যাওয়া সম্ভব নয় , অন্তত জান্নতের পক্ষে ত সম্ভব নয় ই । জান্নাত এই ছেলের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারবে ।
রাজীবের প্রতি দরদ যত বাড়তে থাকে , সেই সাথে পাল্লা দিয়ে রানী আর ছোট আব্বুর উপরে রাগ হয় জান্নাতের । এই দুজনে মিলে ছেলেটাকে পেয়েছে কি ? বাড়িতে কি রান্না হবে ? রাজীব জানে । কে রান্না করবে ? রাজীব করবে ? কাপড় ধুবে কে ? রাজীব। বাবার অসুখ কে দেখবে ? রাজীব । ছোট বোনের সমস্যা , কে দেখে রাখবে ? রাজীব। একটি পরিবারের একজন মা যে কাজ গুলো করে তা এসে পরেছে এই ছেলেটির মাথার উপর । মায়েরা তো আরো বেশি বয়সে গিয়ে এসব সামলায় । কিন্তু রাজীব সামলাচ্ছে আরো অনেক আগে থেকে । তার উপর নিজের ভবিষ্যৎ , রানীর ভবিষ্যৎ এসব নিয়েও ভাবতে হয় । সুধু টাকা উপার্জন ছাড়া একজন বাবার কাজ ও করে যেতে হচ্ছে । হয়তো কিছুদিন পর থেকে টাকা উপার্জনের ভার ও বইতে হবে । আর সেটা ভেবেই বোটানিক্যাল ফটোগ্রাফির সখ বাদ দিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়েছে ।
জান্নাত জানে অনেকেই হয়তো এই সমস্যা গুলোকে তেমন একটা সমস্যা মনে করবে না । হ্যা তাদের জন্য এই সমস্যা কোন সমস্যাই নয় , যারা এই সমসসাগুলো কে পাশকাটিয়ে যেতে পারবে । যেমন রাজীব ইচ্ছে করলেই বলতে পারে বোন উচ্ছনে যাচ্ছে তাতে আমার কি ? আমি তো ওর বাবা না , ওর বাবা আছে , সমস্যা বাবা দেখবে। । কিন্তু রাজীব সে ধরনের ছেলে নয় । রাজীব নিজের জীবন কে পাশকাটিয়ে অন্যের সমস্যা কে আপন করে নেয়ার মত ছেলে । জান্নাতের ইচ্ছে হয় রাজীবের হাত ধরে ওকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে , যেখানে রানী থাকবে না ছোট আব্বু থাকবে না , থাকবেনা রাজীবের ক্যারিয়ার চিন্তা। সেখানে পরম মমতায় ও রাজীবকে জড়িয়ে ধরে রাখবে , আড়াল রাখবে সবার কাছ থেকে , সব সমস্যা থেকে ।
“ আমার জীবন সমস্যা ময় ……” রাজীব যখন অনেকক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করেছিলো , তখন জান্নাত ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠেছিলো “ আমি তোর জন্য নতুন সমস্যা হয়ে আসবো না রাজীব কথা দিলাম , আমি তোর সমস্যা ভাগ করে নেবো” নিজের কণ্ঠে ডেস্পারেশনের পরিমান বুঝতে পেরে জান্নাত নিজেই লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু সেই লজ্জা বেশিক্ষণ স্থাই হতে দেয়নি । জান্নাত জানে লজ্জা পেলে ওর চলবে না । রাজীব কে আর একা ছাড়তে পারবে না ও, রাজীব না চাইলেও ও নিজেকে রাজীবের সাথে জুড়ে দেবে । তা লোকে ওকে বেহায়া ই বলুক আর যাই বলুক ।
জান্নাতের কথা শুনে রাজীব স্থির হয়ে কিছুক্ষন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো , চোখে মুখে কিছুক্ষনের জন্য একটা তৃপ্তি ফুটে উঠেছিলো । এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের কাছে মনে হয়েছিলো , রাজীব হয়তো সব ভুলে ওর বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরবে । কিছু সেই ধারনা ভুল প্রমান হতে সময় নেয়নি বেশি । রাজীবের চেহারা থেকে সেই তৃপ্তির আর আশার আলো দূরে সরে গিয়ে , সেখানে জমা হয়েছিলো প্রচণ্ড কষ্টের মেঘ । সেই কষ্ট সামনে কিছু পেয়েও অনিচ্ছা সত্ত্বেও দূরে ঠেলে দেয়ার কষ্ট ।
“ বিনিময়ে আমি তোর জন্য কি করবো? আমার যে তোর জন্য করার ক্ষমতা নেই , আমি বড় ক্লান্ত রে , বড় ক্লান্ত , এতদিন বুঝতে পারিনি যে আমি ক্লান্ত , তোর সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি আমি আসলেই ক্লান্ত , আমার মাঝে জীবনী শক্তি বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, কোন রকমে নিজেকে টেনে নিয়ে জাচ্ছি , এমন একটা জীবনী শক্তি হীন মানুষের সাথে তোকে মানায় না , আর আমিও পারবো আমার সাথে তোকে জুড়ে নিয়ে তোর জীবনী শক্তিও শুষে নিতে”
জন্নাত রাজীবের বলা প্রতিটা শব্দের সাথে ওর ভেতরে চলতে থাকা ঝড়ের কিছুটা আভাষ পাচ্ছিলো । আর এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলো যে রাজীবের এই কষ্টের জন্য কিছুটা হলেও ও নিজেও দায়ি । রাজীবের জীবন তো চলেই যাচ্ছিলো কোন না কোন ভাবেই । আর সেই শান্ত জীবনে কিছুটা ঢেউ ও নিজেই তুলেছিলো । আর রাজীব তখন বুঝতে পেরেছিলো , ওর যাপিত জীবন ,আর স্বাভাবিক জীবনের মাঝে কতটা তফাৎ । এই লোভ তো জান্নাত নিজেই ওকে দেখিয়েছে ।
এর পর রাজীব বুঝিয়েছে , কতটা লম্বা পথ পারি দিতে হবে ওকে । জান্নাত রাজীবের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলো ডাক্তারের কথা মত ছোট আব্বু কে রেস্ট দেয়ার জন্য রাজীব নিজে একটা পার্ট টাইম চাকরি খুঁজছে । একটা পেয়েছিলো , সেটাও চলে গেছে । একটা ছোট খাটো চাকরি পেলে ছোট আব্বুকে জোড় করে কিছু ক্লাস কমাতে বাধ্য করতে পারবে । তা ছাড়া রানীর বিয়ের জন্য ও টাকা জমাতে হবে ।বাড়ির টাকা ফেরত দিয়ে ছোট আব্বুর কাছে কিছু আছে , কিন্তু তাতে তেমন কিছুই হবে না । তাছাড়া লেখাপড়ার চাপ , ভালো রেজাল্টের চাপ । ভাল রেজাল্ট না হলে ভালো চাকরি হবে না ।
রাজীবের মত এসব করতে করতে অনেক সময় গড়িয়ে যাবে । এতদিন পর্যন্ত জান্নাত কে ও ওয়েট করিয়ে রাখতে নারাজ । কিন্তু জান্নাত মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় , ও থাকবে রাজীবের পাশে , বন্ধু হয়েই থাকবে । যতদিন না রাজীব নিজেকে প্রস্তুত ভাবে । কিন্তু মুখে বলে না , জানে মুখে বললে সেটা রাজীবের জন্য সুধু চাপ ই বাড়াবে ।
জান্নাত যখন চলে আসছিলো তখন রাজীব পেছন থেকে ডেকেছিল । তারপর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট এর প্যাকেট বের করে হেসে বলেছিলো , “ আমার কাছে এই আছে , বাকি সুদ আসল মাফ করে দিস , কত দিন যাবত ব্যাগে নিয়ে ঘুরছি তোকে দেয়া হয়নি”
রাজীবের ওই মলিন হাসি দেখে , জান্নাত কোন রকমে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না থামিয়েছিলো । দ্রুত পদে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছিলো । বুকের ভেতরটা জ্বালা করছিলো খুব , কিন্তু এই ভেবে নিজের জ্বালা ভুলে গিয়েছিলো যে রাজীবের মনে এরচেয়ে বহুগুন বেশি জ্বালা পোড়া তখন চলছে ।
আজো জান্নাতের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গালে এসে বিন্দুতে রুপান্তরিত হয় । পরন্ত বিকেলের সূর্যের আলো সেই বিন্দুতে পরে একটা হীরক খণ্ডের মত জ্বলজ্বল করতে থাকে । এই ভেবে জান্নাতের চোখে পানি এসেছে , যে রাজীবের জন্য ও কিছুই করতে পারছে না । এমন অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখতে হচ্ছে ।
“ তোকে কতবার বলি , সন্ধার সময় লাইট অফ রাখবি না” সূর্য অস্তমিত যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আয়শা ঢোকে মেয়ের ঘরে ।
মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে , জান্নাত নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয় , গালের পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে । তবুও একবার গাল মুখে নেয় । “ কিছু বলবে আম্মু” শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে জান্নাত ।
মেয়ের কণ্ঠ শুনেই আয়শা আন্দাজ করে কিছু একটা হয়েছে , না হলে প্রথমে হুট করে ঘরে ঢোকার জন্য লেকচার দিতো , তারপর লাইট জালানর কারনে বিরক্ত হতো। কিন্তু এসবের কিছুই করেনি জান্নাত । মায়ের মন তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না।
“ নারে , কিছু না , তা মা বিকেল টা একা একা না থেকে রানীর সাথে গিয়ে গল্প করলেই তো পারিস , এই সন্ধার আগের সময়টা হলো খারাপ সময় এই সময় একা থাকা ভালো না”
রানীর নাম উচ্চারিত হতেই জান্নাতের মনের সব রাগ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসে , “ সারাক্ষণ সুধু রানী আর রানী , তোমারা কি কেউ অন্য কাউকে চোখে দেখো না , সব সময় যাকেই দেখি , সেই বলে রানী এই , রানী সেই , রানী অমুক , রানী তমুক, আর কাউকে কি তোমাদের চোখে পরে না , আর ওর দরকার পরলে ও নিজেই আসতে পারে , ওর কাছে যেতে হবে কেন , ও কি ছোট খুকি নাকি?”
আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , বুঝতে পারে না কেন হঠাত এমন ক্ষেপে গেলো জান্নাত । পরমুহুরতে মনে হয় , রানীর প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখছে বলে হয়তো হিংসা হচ্ছে । আবার ভাবে , কিন্তু জান্নাত তো ছোট থেকেই রানীর সাথে হিংসা করে না । সেই ছোট বেলা থেকেই রানীকে আদর করলে ও খুশিই হয় ।
আয়শা বহু কষ্টে খাটের উপর উঠে মেয়ের পাশে বসে , মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে যায় , কিন্তু জান্নাত ওর হাত সরিয়ে দেয় ।
“ আরে মা আমার রাগ করিস না , তুই তো সব সময় আমার কাছেই থাকিস , তাছাড়া তুই আমার বুদ্ধিমান লক্ষি মেয়ে , আর রানী আমার বোকা নরম সরম মেয়ে , তাই একটু বলি আরকি” আয়শা মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে রানীর প্রতি কেন একটু বেশি খেয়াল রাখে ।
জান্নাত বুঝতে পারে যে ওর মা মনে করেছে ও নিজের কথা বলেছে , তাই মা কে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য বলে “ আমি আমার কথা বলছি না , আরো অনেকেই তো আছে , তাদের কথা তো বলো না”
“ আর কার কথা বলছিস ? জয় কি আবার কিছু করলো নাকি ?” আয়শা একটু ভয়ের সাথে বলে , ভাবে জয় হয়তো আবার কিছু করেছে , আর জান্নাত তাই বলছে ।
এদিকে জান্নাতের আবার কান্না পায় , কারো মনে রাজীবের নাম ই আসে না । রাজীব নামে কেউ যে আছে সেটা যেন সবাই ভুলেই গেছে । সুধু মাত্র দরকার পরলে রাজীবের কথা সবার মনে আসে । জান্নাত মায়ের সামনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না । ওর চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পরতে থাকে । আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , সেই ছোট বেলার পর মেয়েকে আর কাঁদতে দেখেনি । মেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় আয়শা । পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ আরে কাঁদিস কেন , আমাকে বল মা , কি হয়েছে” আয়শা কোন কুল কিনারা পায় না । শেষে হঠাত মনে পরে জান্নাত কিছুদিন আগে একটা ছেলের কথা বলেছিলো , “ ওই ছেলের সাথে কিছু হয়েছে ? ও কিছু বলেছে তোকে? আমাকে বল , না হলে আমি বুঝবো কি করে”
“ না ওই ছেলে এমন ছেলেই না যার আচরনে কারো কান্না আসবে, ওর সেই ক্ষমতা নেই । আর ওই ছেলের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না , তোমাদের কাউকে ভাবতে হবে না “ জান্নাত প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বলে ।
“ আরে বাবা একদিন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দে তাহলে না ওর কথা ভাববো “ আয়শা বুঝতে পারে যে ওই ছেলে কিছু করেনি । তবে মেয়ের কান্না ওই ছেলের জন্যই ।
“ তার আর দরকার হবে না” এই বলে জান্নাত ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে । আয়শা আর কথা বাড়ায় না , সুধু মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে থাকে । ও জানে এখন আর জান্নাত কে খুঁচিয়ে লাভ নেই , আর কোন কথা বের হবে না । হোক হালকা হোক , কাঁদলে মন হালকা হবে । আয়শার মনে সুধু একটাই প্রশ্ন ঘোরে , কে এই ছেলে যার জন্য মেয়ে এমন হাপুস হয়ে কাঁদছে । আয়শা ভাবে , যেই হোক বড় ভাগ্যবান ছেলে , জান্নাতের মত মেয়ের মনে এতো মমতা জন্ম দিতে পেরেছে ।
আয়শা খুশি হয় , ভাবে মেয়ে জীবনে সেই একজন কে পেয়ে গেছে , যার জন্য নিজের মনের প্রায় সমস্ত ভালোবাসা মায়া মমতা। আয়শা খুশি ও হয় , আবার মনের একটা ছোট্ট কোনে দুঃখ ও দানা বাধে । মেয়ে পর হয়ে গেছে । এখন এ সুধু ওর মেয়ে নেই , অন্য কারো চলার সাথী জীবনসঙ্গী । ছেলেটাকে দেখার খুব ইচ্ছে হয় আয়শার , কে সে , দেখতে কেমন , আচার ব্যাবহার কেমন । মেয়ের এমন ভালোবাসার মূল্য কি সে দিতে পারবে । নিশ্চয়ই পারে , নয়তো মেয়ে এমন করে কেঁদে ভাসাচ্ছে কেন । নিজে একজন নারী হয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না , যে জান্নাত নিজের জন্য কাঁদছে না , কাঁদছে নিজের মনের মানুষের দুঃখে । অচেনা সেই ছেলের জন্য আয়শার মন মমতায় ভরে ওঠে । মনে মনে না দেখা মানুষটির জন্য দোয়া করে 'তুমি যেই হও , যেখানেই থাকো , ভালো থেকো , আর সব সময় আমার মেয়কে সুখী রেখো , মেয়ের মনে এতো এতো ভালোবাসার জম্ন দিয়ো যেন পুরো জীবন ই মেয়ে এভাবেই তোমার দুঃখে দুঃখী হয় তোমার সুখে সুখী হয়'
*****
জয় ইদানিং খুব ব্যাস্ত দিন পার করছে । সামনে ছাত্র উইং এর কমিটি ঘোষণা হবে । তাই আবির জয় কে খুব বিজি রাখছে । যে করেই হোক আবির চায় ওর প্যানেল যেন কমিটিতে সবচেয়ে বেশি পদ পায় । তাছাড়া জয় কেও ভালো একটা পদ দেয়ার ইচ্ছা আছে । সমস্যা হচ্ছে জয় হলে থাকে না , যদি হলে থাকতো তাহলে সহজে একটা হলের পদ দিয়ে দেয়া যেতো ।
আজকে জয়ে কে নিয়ে আবির এক বড় নেতার বাড়িতে এসেছে । বিশাল ক্ষমতাধর নেতা , আসার সময় আবির প্রচুর বাজার সদাই করেছে । মাছ , খাসী , মুরগী কিনে নিয়ে এসেছে । এ কাজে জয় কে পাঠাতে চেয়েছিলো , কিন্তু জয় বাজার করতে জানে না । কোনদিন বাজারে যায়নি । তাই আবির নিজেই গিয়েছে । তবে নেতার বাড়ি জয় কে নিয়ে এসেছে । ইচ্ছা নেতার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া ।
প্রায় পনেরো মিনিট হলো আবির আর জয় ওয়েট করছে । আর এই পনেরো মিনিট ধরেই আবির বকবক করে যাচ্ছে । কিন্তু জয় সেসব কিছু শুনতে পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না । হাসপাতালে স্যার ঘটনার পর থেকে , জয় নিজের মাঝে সেই মোটিভেশন আর পায় না । আবির যা করতে বলে সেটাই করে সুধু । নিজ থেকে যে বেশি কিছু করবে সেটা আর করা হয় না ।
কি করবে ? কেন করবে ? কার জন্য করবে? নিজেকে সুধু এই প্রস্নই করে । যার জন্য কিছু করার বাসনা মনে ছিলো , সে তো ওকে দেখলেই পালিয়ে বেড়ায় , এমন একটা ভাব করে যেন জয় একটা লুচ্চা বদমাশ , ওকে দেখলেই রে*প করে দেবে । না ক্যাম্পাসে দেখা করে , না বাড়িতে আসে আগের মত ।
জয়ের কাছে মনে হয় ওর ভেতরে যে স্পার্ক ছিলো , সেটা রানী নিজে হাতে নিভিয়ে দিয়েছে । মাঝে মাঝে এটা ভেবে আশ্চর্য লাগে জয়ের যে , একটা মেয়ে এভাবে ওকে নাকে দড়ি লাগিয়ে কিভাবে ঘোরাচ্ছে !!!! আগে যে কাজ জয় নিজে করতো সেটা এখন ওর সাথে হতে দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারে না । সিনয়র জুনিয়র কত মেয়ে ওর জন্য পাগল । এমনকি বিবাহিত এক্স নিলু ও বেশ কয়েকদিন খুচিয়েছে ওকে । জয় ও একবার ভেবেছিলো রানীকে ভুলে থাকার জন্য নিলুর সাথে কিছুদিন ফুর্তি করা যাক । কিন্তু জয় অবাক হয়ে দেখছে , নাহ সেই ফিলটা আর আসে না ।
রানী মেয়েটা সত্যি সত্যি ওর সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে । নিজে তো গেছেই , সাথে করে ওর লাইফটা মাটি করে দিয়ে গেছে, জয় মনে মনে ভাবে । মনে মনে ভাবে শিকদার পরিবার হচ্ছে কুফা পরিবার , এরা নিজেরাও মরা মানুষের মত থাকে , আর এদের সংস্পর্শে যারা আসে তাদের ও মরা মানুষ বানিয়ে দেয় ।
“ ওই মিয়া কি ভাবো এতো ? কোন সমস্যা? সমস্যা হইলে ভাই রে বলো , এমন কোন সমস্যা নাই যে তোমার ভাই ম্যানেজ করতে পারে না” আবির জয় কে অমনোযোগী দেখে জিজ্ঞাস করে ।
জয় দ্রুত নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে , লজ্জিত ভাবে বলে , “ আরে না ভাই কোন সমস্যা না , সমসসায় পরলে তো আপনার কাছেই আসবো প্রথম”
“ হুম মনে রাখবা তোমারে আমি আপন ছোট ভাইয়ের মতন দেখি” আবির চিন্তিত ভাবে বলে । আসলে আবির নিজেও দেখছে জয়ের মন বেশিরভাগ সময় ই খারাপ থাকে , পোলাপান ও এই খবর দিয়েছে যে জয় এখন আর আগের মত কাজে ঝাপিয়ে পরে না , বেশিরভাগ সময় হলে আড্ডা দেয় , আর মদ খায় । তবুও জয় কে সাথে রেখছে , কারন জয় অর্ধেক কাজ করেও অন্য সবার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে । এই ধরনের ছেলেই ওর দরকার । খুব বেশি হলে আর দুই বছর ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে আবির । কম তো হলো না প্রায় নয় বছর হতে চলল এই ক্যাম্পাসে ঢুকেছে । ফেইল করে আর নানা ছোট খাটো কোর্সে ভর্তি হয়ে এখনো ছাত্র নাম ধরে রেখেছে ।
চলে যাওয়ার আগে ক্যাম্পাসে নিজের একটা লোক রেখে যেতে চায় আবির । আবির চিন্তিত ভাবে জয়ের দিকে তাকায় । আবিরের চিন্তার ভাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যখন দেখতে পায় জয় আবার ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেছে । মনে মনে আবির ভাবে , নাহ এরে দিয়ে না হলে , আর পেলে পুষে লাভ নেই , অন্য ব্যাবস্থা করতে হবে ।
এদিকে জয় আবার রানীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে । ভাবছে রানী কি করে পারলো ওকে এমন একটা অপবাদ দিতে । ওর জন্য কি সুন্দরী মেয়ের অভাব হয়েছে । যে একজন অসুস্থ মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় টাচ করতে যাবে । মেয়েটার মাথায় কি ঘিলু বলতে কিছুই নেই । রানী কি ওর কাছে সুধুই একটা মেয়ে ? আর কারো জন্য না হোক ছোট আব্বুর কথা চিন্তা করে হলেও তো জয় এই কাজ ভুলেও করবে না ।
আচ্ছা ঠিক আছে , না হয় অসুস্থ অবস্থায় করে ফেলেছে , সুস্থ হওয়ার পর ও কি মাথায় এই চিন্তা আসেনি যে আমার মত একটা ছেলে এই কাজ করতে পারে না? জয় মনে মনে ভাবে । যতই ভাবে রাইর উপর রাগ বাড়তে থাকে । বার বার সিদ্ধান্ত নেয় আর ওই ফালতু গাধা মেয়ের কথা ভাববে না । যেমন ভাই তেমন বোন , ভাই যেমন অন্য কারো ঘারে দোষ দিয়ে নিজে সাধু সাজে । তেমনি বোনও একি কাজ করে ।
এদের সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই আমার , এরা জাহান্নামে যাক , ভাবতে ভাবতে জয়ের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে । কিন্তু মনের একটি গপন কুঠুরি থেকে কেউ একজন বলে ‘ তুই নিজেও তো একবার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারিস’
হ্যা পারতাম , কিন্তু ভয় হয় , জয় মনে মনে উত্তর দেয় । জয়ের ভয় হয় এই ভেবে যে , রানী যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয় । জয় হয়তো রানীর মুখ থেকে আরো কোন অপবাদ সইতে পারবে না । অন্য কেউ ওকে নিয়ে কি ভাবছে সেটা জয়ের কাছে মোটেও ইম্পরট্যান্ট নয় । জয়ের কাছে সুধু রানী কি ভাবছে , সেটাই ইম্পরট্যান্ট ।
জয়ের মনে আবারো অভিমান চাগাড় দিয়ে ওঠে , ভাবে এই পর্যন্ত রানী ওকে এই চিনলো ? একজন রে*পি*স্ট !!!!
জয়ের চিন্তা ভাবনায় ছেঁদ পরল যখন ওদের নেতার সাথে দেখা করার ডাক পরলো । আবির পই পই করে জয় কে বুঝিয়ে বলল , গিয়েই যেন পা ধরে সালাম করে । কিন্তু জয় করলো তার উল্টো , পা ধরে সালাম করা জয়ের স্বভাব নয় , জীবনে কোনদিন নিজের বাবা মা কেই পা ধরে সালাম করেনি আর এ তো সামান্য নেতা ।
****
বিকেল বেলা জান্নাতের ঘর । জান্নাত ওর পছন্দের জায়গায় বসে আছে । শেষ বিকেলের আলো এসে পরছে ওর গালে । কানে এয়ার বাড গুজে জ্ঞান শুনছে। মনটা ভালো নেই জান্নাতের , মন ভালো না থাকেলেই জান্নাত গান শোনে । গানের করুন সুর একেবারে ওর হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করছে ।
জান্নাতের মন খারাপের ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে । ক্যাম্পাসে আগের মত আর রাজীবের সাথে দেখা হয়না বলে জান্নাত নিজেই রাজীবের ফ্যাকাল্টিতে গিয়েছিলো । এবং ভাগ্যক্রমে দেখাও হয়ে গিয়েছিলো রাজীবের সাথে । কিন্তু হতাশ হয়েছিলো জান্নাত । এই কয়েদিনে ঠেলে ঠুলে যতটুকু এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের সম্পর্ক , সেই সন্ধার পর সেটা আবার ততটুকুই পিছিয়ে গিয়েছে । রাজীব আবার আগের মত নির্লিপ্ত হয়ে গেছে । আগে যেমন ওদের দেখা হলে কয়েক মুহূর্তের জন্য রাজীবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত , এখন সেটাও নেই ।
দুজন এক সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটালেও কথা হয়েছে খুব কম । বেশিরভাগ সময় চুপ হয়েই থেকেছে । জান্নাত অবশ্য নিজের মনভাব প্রকাশ করেনি প্রথমে । স্বভাব মত ঠাট্টার ছলে বলেছিলো “ কি ব্যাপার , আমার পেছনে লাগা ছেড়ে দিলি যে , ভয় পেয়েছিস?”
উত্তরে রাজীব সুধুই মলিন ভাবে হেসেছিলো । রাজীবের ওই মলিন হাসিই জান্নাতকে বলে দিচ্ছিলো রাজীবের মনের কথা । কিন্তু জান্নাত হাল ছারেনি , আবারো কিছুক্ষন পর বলেছিলো “ তোর ব্যাটারির চার্জ কি শেষ হয়ে গেছে ? আবার সাইলেন্ট মুডে চলে গেলি যে , রানী কে কি আবার অসুস্থ হতে বলবো , তারপর আবার আমরা দুজন হসপিটালে গেলে তবে কথা ফুটবে তোর মুখে”
রাজীব আবারো মুচকি হেসেছিলো , তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপ ছিলো । জান্নাতের একটু রাগ হয়েছিলো , তাই ও আর কথা বলেনি, মনে মনে ভেবছিলো এতো কেনো? কিছু তো অন্তত বলতে পারে । নিজেকে বড় বেহায়া মনে হচ্ছিলো জান্নাতের । বেশ কিছুক্ষন পর অবশ্য মুখ খুলেছিলো রাজীব , হঠাত করেই বলেছিলো “ তুই খুব ভালো মেয়ে রে জান্নাত……”
জান্নাতের মনে হয়েছিলো রাজীব আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো , কিন্তু বলতে পারেনি । রাজীবের কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো যে জান্নাত না তাকিয়ে পারেনি । মুখ তুলে রাজীবের মুখের দিকে তাকাতেই জান্নাতের মনে হচ্ছিলো ও রাজীবের ভেতরটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো । রাজীবের মনের ভেতর ঝড় বইছিলো , কি পরিমানে মানসিক চাপের মাঝ দিয়ে যেতে হচ্ছে তার অল্প কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলো জান্নাত । মমতায় ভরে উঠেছিলো জান্নাতের মন । ইচ্ছে হচ্ছিলো রাজীবকে টেনে এনে ওর বুকে এমন ভাবে লুকিয়ে ফেলে যেন আর কেউ খুজে না পায় ।
এই স্বল্পভাষী লাজুক ছেলেটার প্রতি ওর মনে এতো দরদ কবে থেকে জন্ম নিলো জান্নাত ভেবে পায় না। ভেবে আর কাজ ও নেই। কারন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এখন চাইলেও ফেরত যাওয়া সম্ভব নয় , অন্তত জান্নতের পক্ষে ত সম্ভব নয় ই । জান্নাত এই ছেলের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারবে ।
রাজীবের প্রতি দরদ যত বাড়তে থাকে , সেই সাথে পাল্লা দিয়ে রানী আর ছোট আব্বুর উপরে রাগ হয় জান্নাতের । এই দুজনে মিলে ছেলেটাকে পেয়েছে কি ? বাড়িতে কি রান্না হবে ? রাজীব জানে । কে রান্না করবে ? রাজীব করবে ? কাপড় ধুবে কে ? রাজীব। বাবার অসুখ কে দেখবে ? রাজীব । ছোট বোনের সমস্যা , কে দেখে রাখবে ? রাজীব। একটি পরিবারের একজন মা যে কাজ গুলো করে তা এসে পরেছে এই ছেলেটির মাথার উপর । মায়েরা তো আরো বেশি বয়সে গিয়ে এসব সামলায় । কিন্তু রাজীব সামলাচ্ছে আরো অনেক আগে থেকে । তার উপর নিজের ভবিষ্যৎ , রানীর ভবিষ্যৎ এসব নিয়েও ভাবতে হয় । সুধু টাকা উপার্জন ছাড়া একজন বাবার কাজ ও করে যেতে হচ্ছে । হয়তো কিছুদিন পর থেকে টাকা উপার্জনের ভার ও বইতে হবে । আর সেটা ভেবেই বোটানিক্যাল ফটোগ্রাফির সখ বাদ দিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়েছে ।
জান্নাত জানে অনেকেই হয়তো এই সমস্যা গুলোকে তেমন একটা সমস্যা মনে করবে না । হ্যা তাদের জন্য এই সমস্যা কোন সমস্যাই নয় , যারা এই সমসসাগুলো কে পাশকাটিয়ে যেতে পারবে । যেমন রাজীব ইচ্ছে করলেই বলতে পারে বোন উচ্ছনে যাচ্ছে তাতে আমার কি ? আমি তো ওর বাবা না , ওর বাবা আছে , সমস্যা বাবা দেখবে। । কিন্তু রাজীব সে ধরনের ছেলে নয় । রাজীব নিজের জীবন কে পাশকাটিয়ে অন্যের সমস্যা কে আপন করে নেয়ার মত ছেলে । জান্নাতের ইচ্ছে হয় রাজীবের হাত ধরে ওকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে , যেখানে রানী থাকবে না ছোট আব্বু থাকবে না , থাকবেনা রাজীবের ক্যারিয়ার চিন্তা। সেখানে পরম মমতায় ও রাজীবকে জড়িয়ে ধরে রাখবে , আড়াল রাখবে সবার কাছ থেকে , সব সমস্যা থেকে ।
“ আমার জীবন সমস্যা ময় ……” রাজীব যখন অনেকক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করেছিলো , তখন জান্নাত ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠেছিলো “ আমি তোর জন্য নতুন সমস্যা হয়ে আসবো না রাজীব কথা দিলাম , আমি তোর সমস্যা ভাগ করে নেবো” নিজের কণ্ঠে ডেস্পারেশনের পরিমান বুঝতে পেরে জান্নাত নিজেই লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু সেই লজ্জা বেশিক্ষণ স্থাই হতে দেয়নি । জান্নাত জানে লজ্জা পেলে ওর চলবে না । রাজীব কে আর একা ছাড়তে পারবে না ও, রাজীব না চাইলেও ও নিজেকে রাজীবের সাথে জুড়ে দেবে । তা লোকে ওকে বেহায়া ই বলুক আর যাই বলুক ।
জান্নাতের কথা শুনে রাজীব স্থির হয়ে কিছুক্ষন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো , চোখে মুখে কিছুক্ষনের জন্য একটা তৃপ্তি ফুটে উঠেছিলো । এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের কাছে মনে হয়েছিলো , রাজীব হয়তো সব ভুলে ওর বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরবে । কিছু সেই ধারনা ভুল প্রমান হতে সময় নেয়নি বেশি । রাজীবের চেহারা থেকে সেই তৃপ্তির আর আশার আলো দূরে সরে গিয়ে , সেখানে জমা হয়েছিলো প্রচণ্ড কষ্টের মেঘ । সেই কষ্ট সামনে কিছু পেয়েও অনিচ্ছা সত্ত্বেও দূরে ঠেলে দেয়ার কষ্ট ।
“ বিনিময়ে আমি তোর জন্য কি করবো? আমার যে তোর জন্য করার ক্ষমতা নেই , আমি বড় ক্লান্ত রে , বড় ক্লান্ত , এতদিন বুঝতে পারিনি যে আমি ক্লান্ত , তোর সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি আমি আসলেই ক্লান্ত , আমার মাঝে জীবনী শক্তি বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, কোন রকমে নিজেকে টেনে নিয়ে জাচ্ছি , এমন একটা জীবনী শক্তি হীন মানুষের সাথে তোকে মানায় না , আর আমিও পারবো আমার সাথে তোকে জুড়ে নিয়ে তোর জীবনী শক্তিও শুষে নিতে”
জন্নাত রাজীবের বলা প্রতিটা শব্দের সাথে ওর ভেতরে চলতে থাকা ঝড়ের কিছুটা আভাষ পাচ্ছিলো । আর এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলো যে রাজীবের এই কষ্টের জন্য কিছুটা হলেও ও নিজেও দায়ি । রাজীবের জীবন তো চলেই যাচ্ছিলো কোন না কোন ভাবেই । আর সেই শান্ত জীবনে কিছুটা ঢেউ ও নিজেই তুলেছিলো । আর রাজীব তখন বুঝতে পেরেছিলো , ওর যাপিত জীবন ,আর স্বাভাবিক জীবনের মাঝে কতটা তফাৎ । এই লোভ তো জান্নাত নিজেই ওকে দেখিয়েছে ।
এর পর রাজীব বুঝিয়েছে , কতটা লম্বা পথ পারি দিতে হবে ওকে । জান্নাত রাজীবের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলো ডাক্তারের কথা মত ছোট আব্বু কে রেস্ট দেয়ার জন্য রাজীব নিজে একটা পার্ট টাইম চাকরি খুঁজছে । একটা পেয়েছিলো , সেটাও চলে গেছে । একটা ছোট খাটো চাকরি পেলে ছোট আব্বুকে জোড় করে কিছু ক্লাস কমাতে বাধ্য করতে পারবে । তা ছাড়া রানীর বিয়ের জন্য ও টাকা জমাতে হবে ।বাড়ির টাকা ফেরত দিয়ে ছোট আব্বুর কাছে কিছু আছে , কিন্তু তাতে তেমন কিছুই হবে না । তাছাড়া লেখাপড়ার চাপ , ভালো রেজাল্টের চাপ । ভাল রেজাল্ট না হলে ভালো চাকরি হবে না ।
রাজীবের মত এসব করতে করতে অনেক সময় গড়িয়ে যাবে । এতদিন পর্যন্ত জান্নাত কে ও ওয়েট করিয়ে রাখতে নারাজ । কিন্তু জান্নাত মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় , ও থাকবে রাজীবের পাশে , বন্ধু হয়েই থাকবে । যতদিন না রাজীব নিজেকে প্রস্তুত ভাবে । কিন্তু মুখে বলে না , জানে মুখে বললে সেটা রাজীবের জন্য সুধু চাপ ই বাড়াবে ।
জান্নাত যখন চলে আসছিলো তখন রাজীব পেছন থেকে ডেকেছিল । তারপর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট এর প্যাকেট বের করে হেসে বলেছিলো , “ আমার কাছে এই আছে , বাকি সুদ আসল মাফ করে দিস , কত দিন যাবত ব্যাগে নিয়ে ঘুরছি তোকে দেয়া হয়নি”
রাজীবের ওই মলিন হাসি দেখে , জান্নাত কোন রকমে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না থামিয়েছিলো । দ্রুত পদে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছিলো । বুকের ভেতরটা জ্বালা করছিলো খুব , কিন্তু এই ভেবে নিজের জ্বালা ভুলে গিয়েছিলো যে রাজীবের মনে এরচেয়ে বহুগুন বেশি জ্বালা পোড়া তখন চলছে ।
আজো জান্নাতের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গালে এসে বিন্দুতে রুপান্তরিত হয় । পরন্ত বিকেলের সূর্যের আলো সেই বিন্দুতে পরে একটা হীরক খণ্ডের মত জ্বলজ্বল করতে থাকে । এই ভেবে জান্নাতের চোখে পানি এসেছে , যে রাজীবের জন্য ও কিছুই করতে পারছে না । এমন অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখতে হচ্ছে ।
“ তোকে কতবার বলি , সন্ধার সময় লাইট অফ রাখবি না” সূর্য অস্তমিত যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আয়শা ঢোকে মেয়ের ঘরে ।
মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে , জান্নাত নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয় , গালের পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে । তবুও একবার গাল মুখে নেয় । “ কিছু বলবে আম্মু” শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে জান্নাত ।
মেয়ের কণ্ঠ শুনেই আয়শা আন্দাজ করে কিছু একটা হয়েছে , না হলে প্রথমে হুট করে ঘরে ঢোকার জন্য লেকচার দিতো , তারপর লাইট জালানর কারনে বিরক্ত হতো। কিন্তু এসবের কিছুই করেনি জান্নাত । মায়ের মন তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না।
“ নারে , কিছু না , তা মা বিকেল টা একা একা না থেকে রানীর সাথে গিয়ে গল্প করলেই তো পারিস , এই সন্ধার আগের সময়টা হলো খারাপ সময় এই সময় একা থাকা ভালো না”
রানীর নাম উচ্চারিত হতেই জান্নাতের মনের সব রাগ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসে , “ সারাক্ষণ সুধু রানী আর রানী , তোমারা কি কেউ অন্য কাউকে চোখে দেখো না , সব সময় যাকেই দেখি , সেই বলে রানী এই , রানী সেই , রানী অমুক , রানী তমুক, আর কাউকে কি তোমাদের চোখে পরে না , আর ওর দরকার পরলে ও নিজেই আসতে পারে , ওর কাছে যেতে হবে কেন , ও কি ছোট খুকি নাকি?”
আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , বুঝতে পারে না কেন হঠাত এমন ক্ষেপে গেলো জান্নাত । পরমুহুরতে মনে হয় , রানীর প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখছে বলে হয়তো হিংসা হচ্ছে । আবার ভাবে , কিন্তু জান্নাত তো ছোট থেকেই রানীর সাথে হিংসা করে না । সেই ছোট বেলা থেকেই রানীকে আদর করলে ও খুশিই হয় ।
আয়শা বহু কষ্টে খাটের উপর উঠে মেয়ের পাশে বসে , মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে যায় , কিন্তু জান্নাত ওর হাত সরিয়ে দেয় ।
“ আরে মা আমার রাগ করিস না , তুই তো সব সময় আমার কাছেই থাকিস , তাছাড়া তুই আমার বুদ্ধিমান লক্ষি মেয়ে , আর রানী আমার বোকা নরম সরম মেয়ে , তাই একটু বলি আরকি” আয়শা মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে রানীর প্রতি কেন একটু বেশি খেয়াল রাখে ।
জান্নাত বুঝতে পারে যে ওর মা মনে করেছে ও নিজের কথা বলেছে , তাই মা কে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য বলে “ আমি আমার কথা বলছি না , আরো অনেকেই তো আছে , তাদের কথা তো বলো না”
“ আর কার কথা বলছিস ? জয় কি আবার কিছু করলো নাকি ?” আয়শা একটু ভয়ের সাথে বলে , ভাবে জয় হয়তো আবার কিছু করেছে , আর জান্নাত তাই বলছে ।
এদিকে জান্নাতের আবার কান্না পায় , কারো মনে রাজীবের নাম ই আসে না । রাজীব নামে কেউ যে আছে সেটা যেন সবাই ভুলেই গেছে । সুধু মাত্র দরকার পরলে রাজীবের কথা সবার মনে আসে । জান্নাত মায়ের সামনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না । ওর চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পরতে থাকে । আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , সেই ছোট বেলার পর মেয়েকে আর কাঁদতে দেখেনি । মেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় আয়শা । পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ আরে কাঁদিস কেন , আমাকে বল মা , কি হয়েছে” আয়শা কোন কুল কিনারা পায় না । শেষে হঠাত মনে পরে জান্নাত কিছুদিন আগে একটা ছেলের কথা বলেছিলো , “ ওই ছেলের সাথে কিছু হয়েছে ? ও কিছু বলেছে তোকে? আমাকে বল , না হলে আমি বুঝবো কি করে”
“ না ওই ছেলে এমন ছেলেই না যার আচরনে কারো কান্না আসবে, ওর সেই ক্ষমতা নেই । আর ওই ছেলের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না , তোমাদের কাউকে ভাবতে হবে না “ জান্নাত প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বলে ।
“ আরে বাবা একদিন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দে তাহলে না ওর কথা ভাববো “ আয়শা বুঝতে পারে যে ওই ছেলে কিছু করেনি । তবে মেয়ের কান্না ওই ছেলের জন্যই ।
“ তার আর দরকার হবে না” এই বলে জান্নাত ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে । আয়শা আর কথা বাড়ায় না , সুধু মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে থাকে । ও জানে এখন আর জান্নাত কে খুঁচিয়ে লাভ নেই , আর কোন কথা বের হবে না । হোক হালকা হোক , কাঁদলে মন হালকা হবে । আয়শার মনে সুধু একটাই প্রশ্ন ঘোরে , কে এই ছেলে যার জন্য মেয়ে এমন হাপুস হয়ে কাঁদছে । আয়শা ভাবে , যেই হোক বড় ভাগ্যবান ছেলে , জান্নাতের মত মেয়ের মনে এতো মমতা জন্ম দিতে পেরেছে ।
আয়শা খুশি হয় , ভাবে মেয়ে জীবনে সেই একজন কে পেয়ে গেছে , যার জন্য নিজের মনের প্রায় সমস্ত ভালোবাসা মায়া মমতা। আয়শা খুশি ও হয় , আবার মনের একটা ছোট্ট কোনে দুঃখ ও দানা বাধে । মেয়ে পর হয়ে গেছে । এখন এ সুধু ওর মেয়ে নেই , অন্য কারো চলার সাথী জীবনসঙ্গী । ছেলেটাকে দেখার খুব ইচ্ছে হয় আয়শার , কে সে , দেখতে কেমন , আচার ব্যাবহার কেমন । মেয়ের এমন ভালোবাসার মূল্য কি সে দিতে পারবে । নিশ্চয়ই পারে , নয়তো মেয়ে এমন করে কেঁদে ভাসাচ্ছে কেন । নিজে একজন নারী হয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না , যে জান্নাত নিজের জন্য কাঁদছে না , কাঁদছে নিজের মনের মানুষের দুঃখে । অচেনা সেই ছেলের জন্য আয়শার মন মমতায় ভরে ওঠে । মনে মনে না দেখা মানুষটির জন্য দোয়া করে 'তুমি যেই হও , যেখানেই থাকো , ভালো থেকো , আর সব সময় আমার মেয়কে সুখী রেখো , মেয়ের মনে এতো এতো ভালোবাসার জম্ন দিয়ো যেন পুরো জীবন ই মেয়ে এভাবেই তোমার দুঃখে দুঃখী হয় তোমার সুখে সুখী হয়'
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)