03-10-2025, 12:58 AM
রতিকা চোখ নামাল। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা। হাওয়ায় কাশফুল নড়ছে, লেকের জল ছলছল করছে। “আপনি বুঝতে পারছেন না, ম্যাম… সবকিছু এত সহজ নয়।” ওর গলা নরম, কিন্তু এখনো পুরোটা খুলছে না। তার চোখে জল চিকচিক করছে, হাত দিয়ে সালোয়ারের কোণা ধরে টানছে। আমি ধীরে বললাম, “রতিকা, আমি মহিলা হিসেবে তোমার কষ্ট বুঝি। হয়তো কোনো সময় তুমি একা ছিলে, আর আমার স্বামী সেই ফাঁকটায় এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে কি সব শুরু হয়নি? বলো, কীভাবে শুরু হলো এটা সব?”
ওর শ্বাস ভারী হলো, বুক ওঠানামা করছে। “প্রথমে শুধু সাহায্য করতেন… কাজের ফাইল, অফিসের স্ট্রেস। কিন্তু পরে…” ও থেমে গেল, চোখে লজ্জা। আমি ওর চোখে তাকালাম, দৃঢ় স্বরে বললাম, “পরে কী হলো, বলো। সব ডিটেলে বলো। আমি শুনতে চাই, যেন আমি সেখানে ছিলাম।” রতিকা কেঁপে উঠল, তার শরীর সামান্য নড়ে উঠল। “আপনি এভাবে জিজ্ঞেস করলে… আমি মিথ্যে বলতে পারব না। ঠিক আছে, বলছি। কিন্তু প্রমিস করুন, এটা আমাদের মধ্যে থাকবে।”
তারপর রতিকা খুলে বলল, তার কণ্ঠে স্বীকারোক্তির ভার। “আমার মন সরল নয়, ম্যাম। আমি সহজে কাউকে বিশ্বাস করি না, কোনো সম্পর্ক ভাঙতে রাজি হই না। আমার স্বামী রাজীব—শান্ত, দায়িত্বশীল। আমরা ভালোবাসায় বিয়ে করেছিলাম, সম্মানের জন্য। আমি সংযত, রিজার্ভড স্ত্রী ছিলাম। কখনো ভাবিনি আমি এমন পথে হাঁটব, যা আমার বিবাহের প্রতি অবজ্ঞা করে। রাজীবের সাথে আমাদের জীবন ছিল সাধারণ—সকালে উঠে চা বানানো, রাতে একসাথে খাওয়া, কখনো কখনো রোমান্টিক মুভি দেখা। কিন্তু যখন সে ওমানে চলে গেল, সব বদলে গেল।”
![[Image: colorifyai-4108001102a1c7533af6d3392a6470cf.png]](https://i.ibb.co/WqfsZYb/colorifyai-4108001102a1c7533af6d3392a6470cf.png)
“রাজীব ওমানে চলে যাওয়ার পর আমাদের সম্পর্কে দূরত্ব এল—শারীরিক, মানসিক। আমি একা ছিলাম, অন্ধকারে ডুবে থাকা এক প্রহরী। সেই শূন্যতা আমার ভেতর ফাটল ধরাল। আমি নিজেকে বলতাম, ‘রতিকা, তুমি ভুল করছো।’ কিন্তু একাকীত্ব আমাকে ভেঙে দিচ্ছিল। রাতে বিছানায় শুয়ে থাকি, রাজীবের ফোন অপেক্ষা করি, কিন্তু টাইম জোনের কারণে কথা হয় না। আমার শরীরে একটা অস্থিরতা, যেন কিছু অনুভব করতে চাই কিন্তু পাই না। অফিসে যাই, কাজ করি, কিন্তু মন অন্যদিকে। তখন অরুণাভ স্যার এলেন আমার লাইফে।”
“অমৃতা… আমি জানি না কিভাবে শুরু করব। হয়তো তুমি ভাবছ, আমি ইচ্ছে করে তোমার সংসারে ফাটল ধরিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, প্রথম দিন আমি তা চাইনি। সেদিন অফিসে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছিল। আমি কাগজপত্র গুছাচ্ছিলাম, ঘরটা প্রায় খালি, শুধু দেয়ালের ঘড়ির টিকটিক শব্দ কানে আসছিল। বাইরের রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো জানলা দিয়ে এসে ডেস্কের উপর ছায়া ফেলছিল। আমি ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ফাইলগুলো সাজাচ্ছি, আমার হাতে কলম, চোখে ক্লান্তি। হঠাৎ পিছন থেকে পায়ের শব্দ শুনি, ঘুরে দেখি অরুণাভ স্যার দাঁড়িয়ে। তার শার্টের কলার খোলা, চোখে একটা গভীর দৃষ্টি।”
![[Image: colorifyai-b8f0a4e979b4c8cffb67a6686baa455a.png]](https://i.ibb.co/rGKGcRkm/colorifyai-b8f0a4e979b4c8cffb67a6686baa455a.png)
“‘রতিকা, একটু বসো তো, কিছু কথা ছিল।’ তার কণ্ঠে এমন এক ধরণের নরম চাপা টান ছিল, যা আগে কখনও শুনিনি। আমি চেয়ারে বসি, হাত জোড় করে রাখি ল্যাপে, ভাবি কাজের কথা হবে। কিন্তু উনি সামনে বসেননি—পাশ দিয়ে এসে আমার পিছনে দাঁড়ালেন। তার শরীরের গন্ধ—একটা হালকা পারফিউম—আমার নাকে আসে। আমি অস্বস্তি বোধ করি, কিন্তু কিছু বলি না। হঠাৎ আমি তার উষ্ণ নিশ্বাস গলায় টের পেলাম। শিরদাঁড়ায় কেমন যেন শিরশিরে স্রোত বয়ে গেল, যেন বিদ্যুৎ চমকাল। আমার চুল তার নিশ্বাসে সামান্য নড়ে উঠল।”
![[Image: colorifyai-c473d550d7498aa80d8bbbdb2767d2e7.png]](https://i.ibb.co/XcdyVG9/colorifyai-c473d550d7498aa80d8bbbdb2767d2e7.png)
তার আঙুল আমার কাঁধ ছুঁয়ে ধীরে ধীরে পিছলে নামতে লাগল পিঠের দিকে। প্রথমে হালকা, এতটাই হালকা যে মনে হলো হয়তো কেবলই দুর্ঘটনা। কিন্তু সেই স্পর্শ থামল না—বরং আঙুলের গতি ক্রমে ধীর, ভারি হয়ে এলো, যেন পিঠের প্রতিটি রেখা মেপে দেখছে। শিরদাঁড়া বেয়ে সেই উষ্ণতা নেমে এলো কোমরের কাছে, তারপর বাঁক নিয়ে পাশে গিয়ে আমার পাঁজরের ঠিক ওপাশে থামল। আমি অনুভব করলাম, তার আঙুলের ডগা পেটের পাশের নরম চামড়ায় ঘুরছে, যেন অনিচ্ছাকৃতভাবে, অথচ খুবই সচেতনভাবে।
![[Image: colorifyai-628a805c2f6c92a4f9eeca9950043d18.png]](https://i.ibb.co/Kpzh4W4T/colorifyai-628a805c2f6c92a4f9eeca9950043d18.png)
“তোমার চুলগুলো ঘাড়ে যেভাবে পড়ে… খুব সুন্দর লাগে,”—তার গলা যেন গরম নিশ্বাসে গলে আসা মোমের মতো নরম, ফিসফিসে। আমি চমকে শরীর সোজা করে ফেললাম, গলায় শুকনো কাঁপুনি—“স্যার, এটা ঠিক না… দয়া করে এসব বলবেন না।”
![[Image: colorifyai-4ac26d85784abfa73090bbd497f0a953.png]](https://i.ibb.co/spYLq7d9/colorifyai-4ac26d85784abfa73090bbd497f0a953.png)
কিন্তু কথা বলার সময়ও আমি বুঝতে পারছিলাম, তার হাত এক মুহূর্তের জন্যও সরে যায়নি। বরং আঙুলগুলো নরম চাপে আমার পেটের উপরের অংশে হালকা বৃত্ত আঁকতে লাগল। ত্বকের নিচে অদ্ভুত শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল, বুকের ভেতর ঢেউয়ের মতো ধাক্কা দিচ্ছিল। হাতে ঘাম জমে আঙুল ঠান্ডা লাগছিল, অথচ শরীরের ভেতর তাপ বাবাড়ছিল
![[Image: colorifyai-04e1d277292961958c3d109ef1cdcf57.png]](https://i.ibb.co/Y7wSSGC4/colorifyai-04e1d277292961958c3d109ef1cdcf57.png)
“সব কিছুতে ঠিক-ভুলের হিসেব চলে না, রতিকা… কিছু অনুভূতি শুধু অনুভবের জন্যই জন্মায়,”—তার কথায় এক ধরনের গভীর টান, যেন শব্দগুলোও আমার ত্বকের মতো স্পর্শ করছে। মুহূর্তটা ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে এক অদ্ভুত জাদুতে আটকে গেলাম আমি—ভয়, কাঁপুনি, আর অস্বীকারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অনুচ্চারিত আকর্ষণ।
![[Image: colorifyai-b1ec635a484b00f77bc806c7a6219ddd.png]](https://i.ibb.co/Hpz2tx37/colorifyai-b1ec635a484b00f77bc806c7a6219ddd.png)
![[Image: colorifyai-04e1d277292961958c3d109ef1cdcf57.png]](https://i.ibb.co/Y7wSSGC4/colorifyai-04e1d277292961958c3d109ef1cdcf57.png)
আমৃতা, তখনই আমার ভেতরে যেন অদৃশ্য একটা সূক্ষ্ম ফাটল ধরা শুরু করল—যেন কারও নখের মাথা কাঁচের গায়ে ছোঁয়া মাত্র এক লাইন সরে যায়, কিন্তু সেটাই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি হঠাৎই সোজা হয়ে বসে উঠলাম, নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঠিক তখনই, তার হাত আমার কাঁধে শক্ত করে চাপ দিয়ে থামিয়ে দিল আমাকে। সেই চাপ খুব বেশি ছিল না, কিন্তু যেন অদ্ভুত এক ক্ষমতার ইঙ্গিত, যা আমার মেরুদণ্ড বেয়ে শিরশির করে নেমে গেল।
![[Image: colorifyai-ea24f5e548c94486d049627855c73875.png]](https://i.ibb.co/rRGmxHsX/colorifyai-ea24f5e548c94486d049627855c73875.png)