
বিপাশার সর্বনাশ
রবিন ২৩ বছরের টগবগে যুবক। পড়াশোনায় বরাবর ভালো হলেও ভীষণরকম বাউন্ডুলে আর একরোখা। ঢাকা কলেজে ইংলীশে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, থাকে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের নিজেদের বাড়িতে। রবিনের বাবার এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসা, মূলতঃ চীন, ভারত থেকে বেশ কিছু আইটেম আমদানী করে পাইকারী বিক্রী করে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু অপ্রচলিত আইটেম মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানী করে। অফিস পুরান ঢাকার চকবাজারে, কেরানীগঞ্জে আছে বিরাট গো-ডাউন। রবিনের মা পুরোদস্তুর গৃহিনী।
রবিন ২৩ বছরের টগবগে যুবক। পড়াশোনায় বরাবর ভালো হলেও ভীষণরকম বাউন্ডুলে আর একরোখা। ঢাকা কলেজে ইংলীশে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, থাকে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের নিজেদের বাড়িতে। রবিনের বাবার এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যবসা, মূলতঃ চীন, ভারত থেকে বেশ কিছু আইটেম আমদানী করে পাইকারী বিক্রী করে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু অপ্রচলিত আইটেম মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানী করে। অফিস পুরান ঢাকার চকবাজারে, কেরানীগঞ্জে আছে বিরাট গো-ডাউন। রবিনের মা পুরোদস্তুর গৃহিনী।
পড়াশুনার পাশাপাশি রবিন সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত, নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি ছাত্র সংগঠনের সম্পাদক পদে আছে। রবিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট হলো, প্রচন্ড সাহসী সে, ফলে দলে একটা অবস্থান করে নিতে সময় লাগেনি, আছে একটা মোটামুটি অনুচর বাহিনী। বর্তমান ছাত্র-রাজনীত অনেকটাই পেশীশক্তির জোরে চলে, রবিন এদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। মাস ছয়েক হলো নিজেই একটা বিদেশী রিভলবার জোগাড় করেছে, যদিও লাইসেন্স নেই।
এলাকাতেও রবিনের বেশ ভালো প্রভাব। খেলার মাঠ থেকে পাড়ার ক্লাব, সবখানেই তার ব্যাপক প্রভাব। মহল্লার যেকোনো সামাজিক/ধর্মীয় ফাংশানে ফান্ড কালেকশন থেকে শুরু করে আয়োজন সব হয় তার তত্ত্বাবধানে।
একান্ত অনুসারী বাদে ৫ জনের একটা টীম আছে রবিনের, সবাই কলেজ লাইফ থেকে একসাথে। নিজেদের ফ্যান্টাস্টিক ফাইভ বলে ওরা। রবিন, ইমন, ইকরাম, মামুন আর অপু। এই ৫ জন ছোটোবেলা থেকে সব শেয়ার করে একএ-অপরের সাথে, প্রথম চটি বই পড়া, প্রথম ব্লু-ফিল্ম দেখা, প্রথম হস্ত-মৈথুন, প্রথম নারীর স্পর্শ কিছু বাদ যায়নি তাদের। নারী স্পর্শ বলতে হোটেলে গিয়ে মাগী লাগানো। এদের বাবা-মা রা এদের কখনো আলাদা করে দেখে না, যেন সবকটা নিজের সন্তান। রবিনদের একটা কালো নোয়া গাড়ী আছে, সেটা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ৫ বন্ধু।
রবিন বাদে বাকী সবগুলো প্রেম করে, রবিনও ভালোবাসে ইকবাল রোডের বিপাশাকে, সেই কলেজ লাইফ থেকে তার পিছু পিছু ঘুরে। কিন্তু এখনো মনের কথা বলতে সাহস পায়নি, এই একজন মানুষের বেলায় রবিন সাহস কর্পুরের মতো উবে যায়। এবার বিপাশার বর্ণনা দেই। বয়স ২৩ বছর, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং এ অনার্সে ৩য় সেমিস্টার চলছে। বিপাশার বাবা একটী বহুজাতিক কোম্পানীতে চাকুরী করে, মা গৃহিনী। বিপাশা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। গায়ের রঙ গোলাপি সাদা, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় ইরানী নারীদের মতো, খাড়া নাক, পান পাতার মতো মুখ, টানা টানা চোখ, ডার্ক ব্রাউন কালারের চুল। আর দেহের বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হয় এ যেন শিল্পির তুলিতে আঁকা। দেহের যেখানে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই আছে, একটুও কম-বেশী না। আরো খুটিয়ে বললে, একেবারে ৩৬-৩৪-৩৬ বডি, কিছুটা উনিশ-বিশ হতে পারে। উচ্চ-মাধ্যমিকে পড়ার সময় একদিন রবিন এই সুন্দরীর দেখা পায়। বিপাশা তখন ক্লাস টেনে পড়ে। বিকালে ইকবাল রোড খেলার মাঠে একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল রবিন। বন্ধুদের সাথে মাঠের পাশে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো, তখন প্রিপারেটরী কলেজের ড্রসে পড়া বিপাশাকে দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে ছিল রবিন, পাশে দাঁড়ানো অপু ব্যাপারটা খেয়াল করে। তারপর অপুই নিজ উদ্যোগে মেয়েটার পরিচয়, বাসার ঠিকানা ও অন্যান্য বৃত্তান্ত বের করে তার প্রেমিকাকে দিয়ে। পরদিন থেকে কলেজ যতদিন খোলা ছিল প্রতিদিন রবিন শত কাজ থাকলেও বিপাশার বাসার কাছে একটা চায়ের দোকানে নিয়ম করে উপস্থিত থাকতো একনজর বিপাশাকে দেখার জন্য, কিন্তু কখনো সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। তবে খোজ নিয়ে জেনেছে বিপাশার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই, বাবা-মায়ের নিতান্ত বাধ্য মেয়ে বিপাশা। অপু একদিন রবিনের হয়ে কথা বলতে গিয়েছিল, আমাকে যেতে দিন বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে বিপাশা।
রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর সাহস, দূরন্তপনা কয়েকগুণ বাড়লেও কখনো বিপাশাকে প্রস্তাব দেয়ার সাহস কুলাতে পারেনি রবিন। এদিকে না বলার যন্ত্রনায় রবিন দিন দিন কেমন যেন রূঢ় হয়ে যাচ্ছিল, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে সবসময়, অল্পতেই রেগে যায়। হতাশা কাটাতে ইদানীং প্রায় নেশা-ভাং করে রবিন। উপায়ান্তর না পেয়ে বাকী ৪ বন্ধু মিলে রবিনকে রাজী করালো, বিপাশাকে প্রপোজ করতে। সেই অভিপ্রায়ে জানুয়ারীর এক শীতের বিকেলে ৪ বন্ধুকে নিয়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির রবিন। হুগো বসের পোলোর উপর টমির সাদা জ্যাকেট আর ডেনিম পড়েছে রবিন। দেখতে লাগছে রাজপুত্রের মতো। নর্থ-সাউথে পরিচিত অনেকেই পড়ে, তাই ক্যাম্পাসে ঢুকতে সমস্যা হয়নি একদমই। আগেই খোজ নিয়ে রেখেছে বিপ্সহার ক্লাস কখন। ক্লাস শেষে বিপাশা তার বান্ধবীদের সাথে ক্যান্টিনে ঢুকতেই রবিন ও তার বন্ধুরাও ক্যান্টিনে ঢুকলো। তারপর গত একসপ্তাহ ধরে আয়নার সামনে রিহার্সেল করে নিজেকে তৈরী করা রবিন বিপাশার সামনে হাটু গেঁড়ে বসে নার্ভাস ভঙ্গিতে প্রপোজ করলো। আজকেই এর শেষ দেখে ছাড়বে, তাই প্রত্যাখাত হতে পারে এমনটার জন্য সে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বিপাশার প্রতিক্রিয়া ছিল আরো খারাপ। সে ক্যান্টিন ভর্তি ছেলেমেয়ের সামনে সে রবিনের গালে সপাট চড় মেরে বসলো। রবিন কখনো কল্পনাও করেনি বিপাশা এমনভাবে তাকে অপদস্থ করবে। গত প্রায় ৩ বছরেরও বেশি সময় বিপাশা তাকে দেখেছে বিভিন্ন সময়, বোঝার কথা ছেলেটা তাকে পছন্দ করে। তার পছন্দ নাই হতে পারে, তাই বলে এভাবে পুরো ক্যাম্পাসের সবার সামনে এরকম অপদস্থ করা মোটেও ঠিক হয়নি। তার উপর বিপাশার এমন ব্যবহারের পর ক্যান্টিনে থাকা কিছু ছেলে রবিনকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ক্যান্টিন থেকে বের করে দেয়। রবিনের বন্ধুরা এগিয়ে প্রতিহত করতে চাইলে রবিনের ইশারায় থেমে যায়। নর্থ-সাউথ থেকে বের হয়ে গাড়ী চালিয়ে সোজা চলে যায় ৩০০ ফিট ধরে বালু নদীর ধারে। রাগে, ক্রোধে, অপমানে রবিনের চোখ লাল হয়ে আছে। বাকী বন্ধুরা অনেকতা অপ্রস্তুত, তাদের পীড়াপিড়িতেই রবিন আজ প্রপোজ করতে রাজী হয়েছিল। সবাই নীরব। অবশেষে অপু মুখ খুললো।
অপুঃ রবিন, আমাদেরই দোষ, আমরা তোকে জোরাজুরি না করলে আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
রবিনঃ না দোস্ত, তোরা তো জানতি না এমন হবে। আমি নিজেও কখনো কল্পনায় ভাবিনি এমন হবে।
অপুঃ এই অপমানের হিসাব বরাবর করতে হবে।
ইকরামঃ অবশ্যই।
ইমনঃ মেয়েটাকে দেখলে বুঝা যেত না এতো দেমাগী।
মামুনঃ আরে তোর পছন্দ না হলে না করে দিবি, তাই বলে এভাবে অপমান করবি!!
ইমনঃ আবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিছে, আজকে একজনকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি, সেটাতে আবার তার বান্ধবীরাও তাকে বাহবা দিয়ে কমেন্ট করেছে।
রবিন এবার ইমনের মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক খুলে বিপাশার আইডিতে গিয়ে তার স্ট্যাটাস আর সেখানে অন্যদের কমেন্টগুলো দেখলো। একটা কমেন্টে একজন জিজ্ঞেস করেছে, কে রে? বিপাশা উত্তর দিয়েছে, গলির টং দোকানের ছাপড়ী, নিজেকে হিরো ভাবে। আজকে হিরোগিরি ছুটায়ে দিছি। এটা দেখার পর রবিনের আরো রাগ হয়। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, এই অপমানের প্রতিশোধ সে পাই পাই করে ফেরত দিবে।