Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#75
কিছু সম্পর্কঃ ৬ ()  



জান্নাতের দিকে তাকিয়েই জয় বুঝতে পারে জান্নাত আজকে মুডে আছে । তাই লাগতে  চায় না জান্নাতের সাথে  , এমনিতেও ও নিজে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই । হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘোটনার পর থেকেই ওর মস্তিস্ক কাজ করছে না । তার উপর কিছু মদ্যপান করেছে । ও জানে জান্নাতের সাথে ঠিক পেরে উঠবে না ।
 
রানীর ঘুম ভেঙ্গে যেতেই জয় দ্রুত নিজের মুখ সরিয়ে নিয়েছিলো । কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে , রানী ভীষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে । জয় ও অনেক চেষ্টা করেও নিজের চেহারা থেকে ভয়ের ছাপ মুছে ফেলতে পারেনি । জয় মনে মনে নিজেকে গালি দিয়েছে , ও জানে যে ও কোন খারাপ কিছু করতে যায়নি , তবুও কেন ওর চোখে মুখে এমন ভয়ের ছাপ থাকবে ।
 
জয় অসহায় চোখে দেখছে , রানীর অবাক দৃষ্টি ধিরে ধিরে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রুপান্তরিত হতে । অবিশ্বাস আর ভয় নিয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে ধিরে ধিরে নিজের হাত বুকের দিকে তুলে বুক ঢাকার চেষ্টা করেছে রানী । আর জয় তখনি বুঝতে পেরেছে রানীর মন থেকে ওর প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে । জয়ের মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে এসেছিলো ওহ শীট , ওহ শীট । রানীর চোখে ওর প্রতি ভয় আর অবিশ্বাস দেখে জয়ের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো । কি করবে বুঝতে পারছিলো না ।
 
এদিকে সময়ের সাথে সাথে রানী নিজেকে আরো গুঁটিয়ে নিচ্ছিলো , ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো পারলে সেই মুহূর্তে নিজেকে ভ্যানিশ করে ফেলতো । জয় রানীকে বোঝাতে গিয়ে রানীর দিকে হাত বারিয়েছিলো  , বলতে চেষ্টা করেছিলো রানী বিশ্বাস কর…” কিন্তু শেষ করতে পারেনি নিজের বাক্য । তার আগেই রানী ভয়ে আঁতকে উঠে পেছনে চলে গিয়েছিলো আরো , রানীর ছলছল করতে থাকা চোখ গুলো যেন ওকে বার বার জিজ্ঞাস করছিলো , ‘ কেনো ? কেনো করলে আমার সাথে এমন,’   
 
জয় ভেবে পাচ্ছিলো না কিভাবে রানীকে বোঝাবে , ওর প্রতি অবিশ্বাস কিভাবে দূর করবে । প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো নিজের উপর । জয় উঠে দাড়িয়ে নিজের চুল নিজে খামচে ধরে , মেঝেতে পা ঠুকেছিলো । জয় জানে তখন ওর এমন আচরন করা ঠিক হয়নি। ওর ওমন আচরণ রানীর মনে আরো ভয় ধরিয়ে দেবে ।
 
এবং হয়েছিলোও তাই । রানীকে দেখে মনে হচ্ছিলো ও চিৎকার করবে । তাই জয় আরো ক্ষেপে গিয়েছিলো , ও ভেবেছিলো রানী কি ওকে এটুকুও কি চেনে না , রানী কি জানে না ওর দ্বারা এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা সম্ভব নয় । ধিরে ধিরে জয়ের রাগ রানীর উপর সিফট হতে শুরু করেছিলো । রানীর অমন ভয়ার্ত দৃষ্টি , মুখ ফুটে না বলা অবিশ্বাস আর সহ্য হচ্ছিলো না জয়ের ।
শেষ পর্যন্ত জয়ের রাগ বিস্ফোরিতো হয়েছিলো ।  বেড়িয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বলে এসেছিলো হ্যা আমি খারাপ ছেলে , ভবিষ্যতে আমার কাছ থেকে বেঁচে থাকিস , নইলে আজ যা করতে পারনি , সেটা করে দেবো”  
 
কথা শেষ করে জয় আর দাড়ায়নি , হসপিটাল হলেও দরজা একটু জোরেই লাগিয়ে ছিলো । সোজা গিয়েছিলো ভার্সিটির একটা হলে , যেখানে পার্টির ছেলে পেলে থাকে । সময় মতই গিয়েছিলো জয় , ছোট খাটো পাণের উৎসব চলছিলো  । জয় ও যোগ দিয়েছিলো , তবে উৎসব করার জন্য নয় , প্রচণ্ড রাগ থেকে । আর রাগের সাথে পান করলে যা হয় তাই হয়েছিলো উল্টা পাল্টা মাতলামি করছিলো ।
 
সন্ধার পর দলের এক ছোট ভাই ওর বাইকে করেই ওকে নামিয়ে দিয়েছিলো । এবং মাতাল জয় ওই ছেলেকে নিজের বাইক নিয়ে যেতে পারমিশন ও দিয়ে দিয়েছিলো । যা এপর্যন্ত আগে কোনদিন ঘটেনি । আসলে জয়ের তখন আর কোন দিকেই খেয়াল ছিলো না । বার বার চোখের সামনে রানীর ওই অবিশ্বাস আর ভয়ের দৃষ্টি ভাসছিলো ।  
 
হলের ভেতর খেয়েও খান্ত হয়নি । বগল দাবা করে কিছুটা নিয়ে এসেছিলো । এতক্ষণ রানীদের ছাদে বসে সেটা শেষ করেছে । তারপর টলতে টলতে সেই কাঠের তক্তা পেরিয়ে নিজেদের ছাদ হয়ে বাসার ভেতর এসেছে ।
 
কি করেছি মানে ? বুঝতে পারছিস না , হালকা পার্টি করেছিজয় জানে জান্নাত কি বলতে চাইছে , তারপরো না বোঝার ভান করে ।
 
জান্নাত অবশ্য জয়ের কথায় আশ্বস্ত হয় না , জান্নাত জানে জয় ওর প্রশ্ন ঠিক ই বুঝতে পারছে , জয় এতক্ষণ বাড়িতেই ছিলো , এবং ছাদে বসে মদ পান করেছে । জয় মাঝে মাঝেই ড্রিঙ্ক করে , এটা জান্নাত ভালোভাবেই জানে । কিন্তু জয় প্রতিদিনের মাতাল নয় । মাঝে মাঝে পার্টিতে খায় , এটাও জানে । তাই এটা নিয়ে জান্নাতের বা ওদের বাবার কোন সমস্যা নেই । সুধু মাঝে মাঝে মা ঝালেমা করে । তবে আজকে জয়ের ড্রিঙ্ক করার উদ্দেশ্য যে পার্টি করা নয় সেটাও জান্নাত বুঝতে পারছে । জান্নাতের ভয় হয় , জয় এমন কি করেছে, যে রাতের বেলা ছাদে বসে ড্রিঙ্ক করতে হচ্ছে । জয় যে রানীদের ছাদে ছিলো সেটা জান্নাত জানে না ।
 
তুই বুঝতে পেরেছিস আমি কি করার কথা জিজ্ঞাস করেছি, রানী কে কি বলেছিস রানী , আর পিজ্জা না খেয়ে চলে এলি কেনো?  আর সবচেয়ে বড় কথা রানীর সাথে তোর কাহিনি কি?”
 
আমি আবার রানী কে কি বলতে যাবো? আর হঠাত একটা কাজ পরে গেলো তাই চলে এসেছিলাম , বুঝিস ই তো রাজনীতি করিজয় খুব ঠাণ্ডা ভাবে উত্তর দেয় । আর এই ব্যাপারটা জান্নাত কে আরো বেশি কৌতূহলী করে তোলে । জয়কে জেরা করা হচ্ছে , তারপরো জয়ের এমন কুল থাকার কথা না । 

রানীর সাথে তোর সম্পর্কটা কি ?” জান্নাত বেশ ঝাঁজের সাথে জিজ্ঞাস  করে , মাতালের সাথে কথার প্যাচ খেলার ইচ্ছা ওর নেই ।
 
সম্পর্ক আবার কি ? আমার প্রতিবেশী , ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছিজয় অবাক হওয়ার ভান করে ।
 
জয় আমার সামনে ডাম্ব প্লে করবি না একদম , সত্যি করে বল , একজন প্রতিবেশীকে দেখতে তুই এক দিনে দুবার হসপিটালে গিয়েছিস?”   যেন খুব অবাক হয়েছে জান্নাত এমন একটা ভাব নিজের কণ্ঠে নিয়ে আসে । তারপর আবার , রাগত স্বরে জিজ্ঞাস করে সত্যি বল জয় আমার কাছে , তুই ভেবেছিস একবার , তুই যাদের প্রতিবেশী বলে উড়িয়ে দিচ্ছিস ওরা আমাদের কত আপনজন , ছোট আব্বুর কথা ভাব তোকে আমাকে কত স্নেহ করে , নিজের ছেলে মেয়ের মত , রাজীব তোর কত ভালো বন্ধু?” এটুকু বলে জান্নাত একটু থামে । জান্নাত দেখতে পায় রাজীবের কথা বলায় জয়ের ঠোঁটে একটা তাচ্ছিল্য ভরা হাসি ফুটে ওঠে
 
সত্যি করে বল ভাই , তুই রানীকে কি বলেছিস , রানী অমন করলো কেনো?”  জান্নাত এবার একটু নরম স্বরে বলে ।
 
রানী অমন করলো কেনএই কথা গুলো জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো , কিছুক্ষন মুখ বুজে থেকে তারপর জিজ্ঞাস করলো , “ কেমন করেছে
 
খুব কান্নাকাটি করেছে , বার বার বাড়ি চলে আসতে চেয়েছে, আমি ওকে এভাবে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি , সত্যি করে বল ভাই , তুই কি ওকে এমন কিছু বলেছিস ……… তুই কি উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস , আমার কাছে লুকিয়ে লাভ কি ? আমার বুঝতে বাকি নেই তোদের মাঝে কিছু চলছে , এতটা ডাম্ব ভাবিস না আমাকে
 
জয় কোন উত্তর দেয় না , নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় , কিন্তু নাছোড় বান্দা জান্নাত পেছন পেছন যায় । জয় দরজা বন্ধ করার আগেই ঢুকে পরে ।
 
কিরে উত্তর দিলি না , তোর কাছে সম্পর্কের মূল্য না থাকতে পারে , আমার কাছে আছে , আমি কিছুতেই ওদের সাথে এমন করতে দেবো না , আর রানীর সাথে তোর যাই চলছে , সেটাও আমি দেখবো , আমি তোকে রানীর কাছেও ভিরতে দেবো না
 
জান্নাত চাপা স্বরে বললেও ওর কণ্ঠ থেকে প্রচণ্ড রাগ আর জেদ টের পাওয়া যাচ্ছে । এবং জয় ও সমান ইন্টেন্সিটিতে উত্তর দিলো তবে উত্তর দেয়ার আগে এক চোট হেসে নিলো , হাসি শেষে বলল যা তোর যা ইচ্ছা কর , হ্যা আমি রানীকে ভালোবাসি , পারলে ঠেকা আমাকে , তুই কেন এই দুনিয়ার কেউই আমাকে ঠেকাতে পারবে না , কেউ না , তুই , আব্বু , ছোট আব্বু , রাজীব , রানী , এমন কি আমি নিজেও নিজেকে ঠেকাতে পারবো না
 
যদিও জয় এখন মাতাল , কিন্তু জয়ের বলার ধরন দেখে জান্নাত বুঝতে পারে , জয় এই ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস । যদি সিরিয়াস না হতো তাহলে এভাবে বলতো না , এড়িয়ে যেতো । যতই চেপে ধরা হোক না কেন জয়ের মুখ থেকে বের করা যেতো না ।
 
জান্নাত অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , ওর মনে ভয় শেকড় গারতে থাকে । ও জানে জয় আর রানী দুজন দুই দুনিয়ার বাসিন্দা । ওদের এই সম্পর্ক সুধুই সমস্যা বাড়াবে । কিন্তু জয় যে রানীর পরতি অবসেসড সেটা জয়ের বলার ধরন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । আর জয়ের এই অবসেশন এই দুই পরিবারের জন্য সুধুই দুঃখ বয়ে আনবে ।
 
হ্যা তোকে ঠেকাবো আমি , আমি কিছুতেই রানীর মত একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে দেবো না , রাজীব আমাকে বলেছে , রানী বেহুস অবস্থায় বার বার একটি ছেলের সাথে কথা বলেছে , রাজীব জানে না সেই ছেলে কে , কিন্তু এটা জানে রানীর এই অসুস্থতার জন্য ওই ছেলে দায়ি , তুই ভেবে দেখছিস রাজীব জানতে পারলে কি হবে?”
 
জয়ের চোখ দুটো ধপ করে জ্বলে ওঠে , হিস হিস করে বলে ওই শালা লুজার আমাকে কি করবে , আমি কি ওকে ভয় পাই  নাকি? আর রানীর এমন অবস্থার কথা বলছিস , এর জন্য আমি নই ওই লুজার দায়ি , নিজের বানোয়াট নীতি বাক্য রানীকে গুলিয়ে খাইয়েছে , রানী কে একটা রোবটে পরিনত করেছে , ওই রাজীবের জন্যই রানী দোটানায় পরে এমন হয়েছে , রানীও চায় জীবন উপভোগ করতে , কিন্তু রাজীব শালা প্রতিবার পেছন থেকে টেনে রাখে , নিজে একটা লুজার হয়েছে রানীকেও লুজারে পরিনত করতে চায়”  কথা গুলো শেষ করে জয় দেয়ালে একটা ঘুষি মারে ।
 
কাকে তুই লুজার বলছিস?” জান্নাত ও পার্য চেঁচিয়ে ওঠে । রাজীব কে লুজার বলায় প্রচণ্ড রাগ হয় ওর । দায়িত্ব পালন করা তোর কাছে লুজার হওয়া হতে পারে , আর কারো কাছে নয় , আর  তুই জীবন উপভোগ করা বলতে কি বোঝাস ? আশেপাশের কারো কথা চিন্তা না করে সুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করাকে তুই জীবন উপভোগ করা বুঝিস ? যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তুই তো জীবনের মানেই বুঝিস না”  রাগের কারনে জন্নাত  বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে । হাসপাতালে এক রাত থেকে রাজীব আর রানীর জীবনের স্ট্রাগল ও নিজের চোখে দেখেছে , তাই বাপ মায়ের আদরে বখে যাওয়া জয়ের মুখে রাজীব সম্পর্কে এই ধরনের কথা শুনে ওর মাথায় আগুন উঠে গেছে ।
 
আর রানীর প্রতি এতো দরদ তোর , তাহলে তোর কারনে এমন কষ্ট কেনো পাচ্ছে ও?”
 
জয় আবার ক্ষেপে ওঠে,  বলে কারন ওই শিকদার বাড়ির প্রতিটা মানুষ একেকটা চিড়িয়া । এদের সবার চিড়িয়াখানায় থাকা উচিৎ , এরা সব সময় অজুহাত খোঁজে নিজেদের খামতি লুকানোর জন্য , কোন ছুতা পেলেই এরা এমন একটা অবস্থার তৈরি করে যেন সবাই ওদের ভিক্টিম ভাবে, ভিক্টিম সাজতে এরা খুব পছন্দ করে , দেখিস না রাজীব কে , ছোট আব্বুও কম যায় না , কি সুন্দর আমার আব্বুর টাকা এতদিন আটকে রেখে আবার চোখের পানিতে বাড়ি ফেরত নিয়ে নিলো, স্বার্থপর একেকটা”  
 
জয়!!!” জান্নাত অবিশ্বাস নিয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন । ছোট আব্বু সম্পর্কে জয় এই ধরনের কথা বলতে পারে সেটা জান্নাত কোনদিন চিন্তাও করেনি । “ তুই যে এতো বড় ছোটলোক সেটা আমি আগে জানতাম না , আমি ভাবতাম তুই আর যাই হোস ছোটলোক না , কিন্তু তুই আমার সেই ধারনা ভুল প্রমানিত করে দিলি । যাই হোক , একটা কথা শুনে রাখ , ওই টাকা আব্বুর ছিলো , তাই আব্বু কি করবে সেটা আব্বুর ব্যাপার । নিজে টাকা কামিয়ে তারপর আব্বুর টাকার হিসাব নিতে আসিস , তখন দেখা যাবে তোর মুরুদ কত, আর আজকে তোকে একটা কথা বলে রাখি , আর যাই করিস , আমার সামনে যদি ছোট আব্বুর সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলসি , আর কেউ কিছু বলুক আর না বলুক আমি তোকে ছারবো না” এই বলে জান্নাত বেড়িয়ে যেতে নেয় , ভাবে মাতাল জয়ের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই । এখন যত কথা বলবে ততই ঝামেলা হবে ।
 
যেতে যেতে জান্নাত দরজার সামনে দাড়ায় , ভাবে আর একটা কথা বলা দরকার , জান্নাত জয়ের দিকে তাকায় , দেখে জয় নিজের বিছানায় বসে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে , “ এই শোন , আর একটা কথা শুনে রাখ , এর পর তোকে যদি রানীর আশেপাশে দেখি , তবে আমি আব্বুর কাছে বিচার দেব”
 
****
 
রানী বেডে শুয়ে আছে ঘুম আসছে না , কিন্তু এতক্ষণ ঘুমের ভান করেছে , সোফায় আয়শা শুয়ে আছে  , রজিব বাইরে হাটছে । নিজের আচরনের কারনে রানী বেশ লজ্জিত বোধ করে। কি একটা সিন তৈরি হলো আজকে … ভাবে রানী । কিন্তু ওই সময় ওর মন এতো খারাপ ছিলো যে বলার মত না , এখনো আছে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছে না । কিভাবে প্রকাশ করবে , অন্য কেউ হলে বলে দিতো , কিন্তু কার নামে নালিশ করবে , যাকে নিয়ে অসংখ্যবার স্বপ্ন দেখেছে তার নামে !!! এর আগে কোনদিন কিছু নিয়ে এতো দুঃখ পেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে ।
 
দুঃখ পাবেই বা না কেনো? যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখছে সেই  যদি ওর ঘুমের মাঝে একা পেয়ে এমন করে !!! প্রথমে রানীর বিশ্বাস হতে চায়নি , নিজের কানের কাছে গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া পেয়ে , আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় । চোখ খুলতেই দেখে ওর গলার কাছে একজন মানুষ এর মাথা , প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় রানী । সভাবিক ভাবেই রানীর শরীর রিএক্ট করে , ঝট করে উঠে বসতে চায়। আর তখনি দেখতে পায় মানুষটা কে । এতো আশ্চর্য হয়েছিলো রানী বলার মত না ।
 
কিছুতেই রানীর বিশ্বাস হচ্ছিলো না জয় এমন করতে পারে । ওর নিজের হাত আপনাতেই ডিফেন্সিভ পজিশনে চলে আসছিলো। ভয়ে রানীর গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো , ভয় এই ভেবে হচ্ছিলো যে জয় যদি এখন আরো এগুতে চায় , তাহলে ও কি করবে , যাকে ও মনে প্রানে চায় , সেই যদি ওকে অপমান করার চেষ্টা করে তাহলে ওর কি হবে ?
 
সেই ভয় থেকেই জয় যখন দ্বিতীয় বার ওর দিকে হাত বাড়ায় তখন আঁতকে ওঠে রানী । মনে মনে বার বার বলছিলো ‘ জয় তুমি এমন কেনো করলে , নিজের নারী সত্ত্বা জাগ্রত হওয়ার পর থেকে মনে মনে সুধু তোমাকেই কামনা করেছি , আর তুমি আমাকে এভাবে অপমান করলে’
 
মুখেও বলতে চেয়েছিলো , কিন্তু বলতে পারেনি । বোবা হয়ে গিয়েছিলো তখন । আর তখনি জয় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলো । জয়ের রাগ দেখে রানী আরো ভেঙ্গে পরেছিলো , নিজের শরীরের প্রতি ওর ঘৃণা জেগে উঠেছিলো , ভেবেছিলো ওর শরীরের ই সব দোষ , জয় ওকে না চেয়ে ওর শরীর চায় । নিজের শরীরের কাছে নিজের স্বত্বার এমন পরাজয় রানীর কাছে সহ্য হচ্ছিলো না ।
 
আর তখনি জয় ওকে থ্রেট করে বেড়িয়ে যায় । ধরাম করে যখন দরজা আটকে যায় , তখন ওর কাছে মনে হতে থাকে এই পুরো পৃথিবীতে ও একা , এবং ওর শরীরে এক টুকরো কাপড় ও নেই । বিবস্ত্র লজ্জিত ওর দিকে তাকিয়ে , ঘরের দরজা জানালা , দেয়াল , আসবাবপত্র সব হাসছে , লালসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে । ওরা যেন বলছে , তোর শরীরটাই তোর সব , এই শরীর ছাড়া তুই আমাদের মতই ক্লিব । তোর মন নেই প্রান নেই আছে সুধু  কিছু রক্ত আর মাংস । তোকে সবাই তোর এই ফর্সা চামড়া , আর নরম মাংসের জন্যই পছন্দ করে । গরু ছাগল কে যেমন জবাই করার আগে খুব খাতির যত্ন করা হয় তোকেও জয় এই জন্যই ভুলাচ্ছিলো । আজকে তোকে একা ঘরে পেয়ে জয় মাংসের লোভ সামলাতে পারেনি । তোর নরম বুকে দাঁত বসাতে চেয়েছিলো , তোর নোনা চামড়া জিভে চেটে নোনতা স্বাদ নিতে চেয়েছিলো ।
 
এর কিছুক্ষন পর জান্নাত ঘরে ঢোকে , জান্নাত জয় কে না পেয়ে বেশ অবাক হয় । ওকে জয়ের কথা জিজ্ঞাস করে । তখন রানী খুব কষ্ট করে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সুধু বলতে পারে “ চলে গেছে”
 
জান্নাত অবশ্য কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলো । কিন্তু রানী যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার । কিন্তু সন্ধার পর যখন রাজীব ঢোকে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না । কারন জীবনে যত সমস্যা এসেছে রানী রাজীবের সাথে শেয়ার করেছে । রাজীব যেমন করেই হোক ওর সমস্যা ভুলিয়ে দিয়েছে । কিন্তু আজকে আর বলতে পারবে না , কিভাবে বলবে? কার নামে বলবে ? জয়ের নামে ? ওর একান্ত কাম্য পুরুষের নামে ? কি বলবে ? আমার কামনার পুরুষ আমাকে একা পেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় …… আর চিন্তা করতে পারছিলো না , নিজের অসহায়ত্ব ওকে পাগল করে তুলছিলো । তাই তখন  নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ছিলো রানী । জান্নাতের উপস্থিতি তখন ওর মাথায় ছিলো না ।
 
রানী মাথা তুলে বড় আম্মুর দিকে একবার তাকায় । ঘুমাচ্ছে আয়শা । রানী মনে মনে ভাবে এর পর জয়ের সাথে দেখা হলে ও কিভাবে মুখ দেখাবে ।
 
****
 

 
রাজীব করিডোর ধরে হাঁটছে আর ভাবছে সাথে জান্নাত থাকলে ভালো হতো , জান্নাত পাশে থাকলে বিপদের সময় ও মনে শক্তি থাকে । রাজীবের কাছে মনে হচ্ছে সামনে ওর বড় বিপদ আছে । রাজীব মনে মনে বলে ‘ আমার যত বড় বিপ্পদ ই হোক তুই আমার পাশে থাকিস জান্নাত , তুই সাথে থাকলে কোন বিপদ ই আমাকে দুর্বল করতে পারবে না’
 
****
 
জান্নাত নিজের বিছানায় শুয়ে আছে , জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ওর মুখের উপর এসে পরছে । বার বার রাজীবের অসহায় মুখটা ওর চোখে ভেসে ওঠে । রানী যখন রাজীবকে ধরে কাদছিলো , রাজীব বার বার অসহায় চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছিলো। রাজীব যতবার তাকাচ্ছিলো ততবার ই জান্নাতের মন মমতায় ভরে উঠছিল কানায় কানায় । ইচ্ছে হচ্ছিলো রাজীবের হাত ধরে সাহস যোগায় , বলে ‘তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তোর পাশে’
 
****
 
জয় এখনো মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে , ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে , কিন্তু মাথা তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না । কেউ ওর ভেতরটা দেখতে পায় না , সবাই ওর উপরটা দেখেই বিচারের ফলাফল দিয়ে দেয় । আর সবারটা জয় মাফ করতে পারে , কিন্তু রানী আচরন কিছুতেই মাফ করতে পারে না । জয় চায় রানী ওর ভেতর টা দেখুক , ওকে বুঝুক । আর কেউ না বুঝলেও চলবে ।
 
****
 
আরো একজনের নির্ঘুম রাত কাটছে । জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে ভাবছে , সব কিছু কি ভুল ছিলো । পুরো অংক কষে ফলাফল কি শূন্য হবে । ছেলে মেয়েরা সভ্য শান্ত , ভালো স্টুডেন্ট , কিন্তু ওরা কি সুখী । স্বাভাবিক জীবন কি ওদের আছে । আর দশটা এই বয়সি ছেলে মেয়ের মত ওরাও কি স্বাধীন নাকি দায়িত্ব , কর্তব্যের বেড়াজালে আটকে হাঁসফাঁস করছে । নিজের বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে রহিম । মনে মনে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে ‘ হে খোদা তুমি আমার ছেলে মেয়ে কে স্বাভাবিক জীবন দাও” 

***** 

সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-09-2025, 06:50 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)