28-09-2025, 11:06 PM
(This post was last modified: 29-09-2025, 01:39 AM by ধূমকেতু. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জীবনের এমন কিছু জটিল মুহূর্ত আছে যখন মানুষ কোনো কুল কিনারা খুঁজে পায় না, অথৈ সাগর দেখতে পায় চারিদিকে, এমন সময়ে গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় সে, খুব ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়, জীবনকে এখানে পর্যালোচনা করতে হয় গণিতের সমীকরণের মতো, প্রতিটি পদক্ষেপ একশো বার ভেবে তারপর ফেলতে হয়। একটা ভুল হিসাব ধ্বংসাত্মক রুপ নিতে পারে, তছনছ করে দিতে পারে সাজানো খেলাঘর।
আমার প্রশ্ন, আমরা কেন এমন সংকটজনক পরিস্থিতি আমাদের জীবনে তৈরি করবো যার পরিবর্তে আমরাই যন্ত্রণা ভোগ করবো? হয়তো এক মূহুর্তের অল্প একটু সুখের লোভে কখনো কখনো আমরা বিরাট ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করি, যা ভবিষ্যতে এমন সব দুর্যোগ হয়ে আমাদের জীবনে ফিরে আসে যা মোকাবেলা করা দুরূহ। কিন্তু শুরুতেই যদি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, মোহে আবদ্ধ না হতাম তাহলে সেই জটিল পরিস্থিতি আমাদের জীবনে আঁছড়ে পরতো কি?
মধুমিতার এখন সেই অবস্থা। এক রাতের যৌন সুখের জন্য স্বভাবভ্রষ্ট হয়ে মধুমিতা আজ যেন দুর্বিপাকে পড়েছে। কি করবে বুঝতে পারছিলো না। কিভাবে নিজেকে সামলাবে, নিবারণ করবে এই সর্বগ্রাসী কামের অতৃপ্ত ক্ষুদাকে? কিছুই মাথায় আসছিলো না ওর। উল্টো আজকে দিহানের সাথে করা অনৈতিক অবৈধ কাজ গুলো বারবার রোমাঞ্চিত করছিলো ওকে।
মধুমিতা ভেতরে ভেতরে কাঁদছিল, এ কেমন অনুভূতি? কেন আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, কেন আবার দিহানের কাছে যেতে মন চাইছে? ভগবান, আমি এতো কামুক কবে হয়ে গেলাম?
মধুমিতা একটাও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না, উল্টো কামনা দাও দাও করে জ্বলছিলো ওর ভেতরে। কাম তারিত হয়ে ভাবছিলো সব কিছু, নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন করছিলো।
মানসিক অশান্তি কাউকে যখন গ্রাস করে, বিষাদেরা ঘীরে ধরে চারদিক থেকে তখন মন্দ জিনিসও ভালো বলে প্রতীয়মান হয়, বিপরীতে সুন্দর জিনিসগুলোকে খারাপ লাগে, স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায় হয়তো।
কে জানে? হতেও পারে, নাহলে মৃত্যু যেনোও পতঙ্গ কেন আগুনে লাফ দেয়?
আমাদের হতভাগ্য মধুমিতাও উন্মাদ পতঙ্গের মতো আগুনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিলো। যখন ওর হুঁশ হলো তখন খুব দেরি হয়ে গেছে।
মানসিক একটা দোটানায় দুলতে দুলতে মধুমিতা বাড়ি পৌঁছে গেলো। সারা রাস্তা ভেবেও কুল পায় নি ও কি করবে।
তখন রাত এগারোটা হবে হয়তো, মধুমিতা বাড়ি এসে দেখে শশুর শাশুড়ি খেয়ে এরমধ্যে ঘুমিয়ে গেছে। ওনাদের আর বিরক্ত করলো না। শাশুড়ি মা এসেছিলো দরজা খুলে দিতে, জিজ্ঞেস করছিলো ও খেয়েছে কিনা, মধুমিতা ওনাকে আস্বস্ত করে আবার ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো মধুমিতা। এতো রাতে এই শীতের মধ্যেও স্নান করলো।পরনে থাকা ট্রেঞ্জ কোট আর লঞ্জারিটা খুলে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালো শাওয়ারের নিচে। পাশে থাকা আর্সিতে ভেসে উঠেছে ওর সম্পূর্ণ অনাবৃত দেহাবয়ব।
নিজের শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো মধুমিতা। বুক, গলা সহ শরীরের বেশ কিছু জায়গায় নীলচে হয়ে আসা আঁচড়ের- কামড়ের দাগ। এরা ওর করা অনাচারের জলন্ত সাক্ষী। মধুমিতা চায় না এই দাগগুলো ওর শরীরে থাক।
তাই ঘসে ঘসে নিজেকে পরিস্কার করলো, থুপে থুপে জল দিলো সারা শরীরে, ততক্ষণ পর্যন্ত শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলো যতক্ষণ পর্যন্ত না শান্ত হয়ে আসে শরীর। অনেক সময় নিয়ে স্নান করে মধুমিতা যখন বাথরুম থেকে বের হলো তখন নির্মল হয়ে গেছে ওর দেহ, অনাবিল এক প্রফুল্লতা মন জুড়ে।
বিছানায় শুয়ে ও খুব আড়াম অনুভব করলো, চোখ জুড়িয়ে ঘুম এসে হাজির হচ্ছিলো, তখনই মনে পড়লো রিতমকে আজ ফোন দেওয়া হয় নি।
বালিশের পাশে রাখা ফোন হাতড়িয়ে রিতমকে ভিডিও কল করলো।
ফোন ধরতেই মধুমিতা স্মিত হাস্য সৌম্য দর্শন রিতমকে দেখতে পেল। সুপার শপে ওর শিফ্ট শুরু হয়ে গেছে তখন। গায়ে দেওয়া কোম্পানির সবুজ রঙের ওভারকোট, পেছনে বিভিন্ন ধরনের গ্রোসারি, রিতম ক্যাশ কাউন্টারে বসে ছিলো। এই সময়ে ওর দম নেওয়া মুসকিল হয়, উপচে পড়া ভিড় থাকে, তবে আজ দোকানে লোকজন নেই।
হেই দেয়ার! বরাবরের মতো হেসে রিতম উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, আই ওয়াজ জাস্ট থিংকিং অ্যাবাউট ইয়ু। এন্ড দ্যান ইয়ু কল্ড, হুয়াট এ বিউটিফুল কানেকশন। হাউ আর ইয়ু?
অভিমান করার অভিনয় করলো মধুমিতা, বলল, সে খবর জেনে তোমার কি? আমি বাঁচি কি মরি তাতে তোমার কিছুই যায় আসবে না। ওখানে সবাই আমার থেকে অনেক সুন্দরী, আমি না থাকলে খুশি মনে একটা বিদেশিনীকে বিয়ে করতে পারবে। তাই না?
মোটেও না। কোমল কন্ঠে বলল রিতম, এরা কেউই তোমার থেকে রুপবতী নয়। তুমি হলে কোহিনুর, এরা শুধু মাত্র কাঁচের খন্ড। তুমি অন্ধকারেও চকমক করো, এরা ফ্যাকাশে।
হয়েছে মিস্টার পোয়েট স্যার, থামো। সব সময় ফ্ল্যাটারি। মধুমিতা হেসে ফেললো, ভালো আছো কি না সেটা বলো।
এতোক্ষণ তোমার কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছিলো, মিতা। আজ খুব শীত পরেছে এখানে, একটু আগে স্নো ফলও হচ্ছিলো। তখন এতো করে তোমার কথা মনে পরছিলো যে কি বলবো। বেলকনিতে বসে স্নো ফল দেখছিলাম আর তোমার কথা ভাবছিলাম, তবে এখন তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে।
রিতমের চোখের দিকে দেখছিলো মধুমিতা, দেখছিলো কথা গুলো বলার সময় কিভাবে ওর চোখে খুশি জ্বলজ্বল করছিলো। ওর হৃদয়ের কথা চোখে প্রতিফলিত হচ্ছিলো, একটা কথাও ও বাড়িয়ে বলছিলো না। রিতমকে পর্যবেক্ষণ করে বিষন্ন হয়ে এলো মধুমিতার হৃদয়। ও নাকি সারা সন্ধ্যা একা বসে তুষারপাত দেখেছে আর সাত সমুদ্র তের নদী পারে থাকা প্রিয়তমার কথা ভেবে মন খারাপ করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মধুমিতা কি করছিলো? ভাবতেও এখন নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছিলো।
যে স্বামী, না রিতম শুধু ওর স্বামীই না ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু, ওর প্রেম, এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র কাছের মানুষ, যে ওকে এতো ভালোবাসে, আর মধুমিতা, অকৃতজ্ঞ-সার্থপর মধুমিতা রিতমকে সব দিক থেকে ঠকিয়ে তার প্রতিদান দিচ্ছে।
মধুমিতা আর রিতমের চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছিলো না। আত্ম ধিক্কার কুঁড়ে কুঁড়ে দগ্ধ করছিলো ওকে। শুকনো একটা ঢোক গিললো মধুমিতা, ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছিলো এখন, নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, তুমি সত্যিই এতো মিস করছিলে আমায়?
ইয়ু হ্যাভ নো আইডিয়া, সোনা। দিন শেষে কখনো কখনো আমি ভাবি, যখন একা থাকি যে এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, এর কারণও বুঝি তুমি, কেননা আমি জানি আমার জন্য তুমি আছো, অপেক্ষা করছো....
সত্যি? মধুমিতার কন্ঠ প্রায় রোধ হয়ে আসছিলো, কান্না দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো গলায়, রিতম সামনে তাই কাঁদতে পারছিলো না।
রিতম এতোক্ষণ একমনে নিজের মনের কথা জানিয়ে যাচ্ছিলো, তবে এবার মধুমিতার ভগ্ন কন্ঠ কানে যেতে ও অবাক হয়ে গেলো। উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হলো মিতা? গলার স্বর এমন শোনাচ্ছে কেন তোমার? মুখ চোখে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? অসুস্থ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে?
কয়েক মূহুর্ত কথা বললো না মধুমিতা, আবেগ সামলে নিলো আগে, তারপর ধীরে ধীরে বললো, তোমার এই বিশুদ্ধ ভালোবাসা দেখে আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে রিতম, আমি খুব নিচু মনের মানুষ। আমি কি এমন ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
মিতা? কি হলো বলোতো? এতো ইমোশনাল হয়ে পরলে যে হঠাৎ?
আমারো তোমার কথা খুব মনে পড়ছে রিতম। মধুমিতার চোখে জল ছলছল করছিলো। রিতম এক মুহূর্ত স্থির হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরে শান্ত কন্ঠে বলল, আমার জন্য তোমাকে এতো কষ্ট করতে হচ্ছে মিতা। বিশ্বাস করো আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম আমার থেকে দূরে থেকে তুমি এতো কষ্ট পাবে তাহলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না। আমি কখনোই তোমাকে যন্ত্রণা দিতে চাই নি, হয়তো ভাগ্য এটাই চেয়েছে যে আমরা কষ্ট পাই। জানো মিতা? মাঝে মাঝে আমারো খুব কষ্ট হয়, ক্লান্তি আসে মনে, শরীরে। এই দূরত্ব আর ভালো লাগে না, সামটাইমস ইট সিমস ক্রুয়েল, ক্ষতবিক্ষত করে দেয় আমার হৃদয়কে। কিন্তু তারপর ভাবি, আমার তুমি আছো, অপেক্ষা করছো আমার জন্য, তুমি যদি হাসি মুখে সব কিছু সয্য করতে পারো তাহলে আমি ছেলে হয়ে তা পরবো না কেন?
আর আশার কথা কি জানো মিতা? সব কিছুরই শেষ আছে, আমারাও খুব শিঘ্রই আবার একসাথে হবো তখন আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।
রিতম কথাগুলো বলেছিলো মধুমিতার কষ্ট প্রশমিত করার জন্য, তবে ফল হলো উল্টো। আজ মধুমিতা স্বামীকে যত শুনছিলো বুকে তত শেল বিদ্ধ হচ্ছিলো।
তথাপি মনে মনে রিতমকে আহ্বান করছিলো, "তারাতাড়ি চলে এসো রিতম, আমি যে আর পারি না। আমি পাকে পরে গেছি, এসে আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো। আমাকে নষ্ট হতে দিয়ো না।” তবে মুখে প্রকাশ করলো ভিন্ন কিছু।
মধুমিতা কাষ্ঠের হাসি হেসে বলল, আমি সেই দিনের জন্যই অপেক্ষা করছি রিতম।
রিতম জিজ্ঞেস করলো, আজকের পার্টি সম্পর্কে তো কিছুই বললে না মিতা। কেমন এনজয় করলে, বলো?
খুব এনজয় করেছি, ভালো একটা সন্ধ্যা কাটলো। মিথ্যা কথা বলতে হলো মধুমিতাকে। মিথ্যা বলতে বলতে এখন ওর ক্লান্তি এসে গেছিলো। এ যেন এক পাহাড় সম বোঝা, মধুমিতা আর টেনে নিতে পারছিলো না।
রিতম বলল, সত্যি করে বলতো মিতা, তোমার আজ অসুখ করেছে?
তোমার কেন এমন মনে হচ্ছে রিতম?
তোমাকে আজ স্বাভাবিক লাগছে না। একটু আগে খুব ইমোশনাল হয়ে গেলে, এখন আবার কথা বলছো কাঠ কাঠ গলায়, কথা গুলো ইমোশনলেছ মনে হচ্ছে।
তুমি আমার জন্য একটু বেশিই চিন্তা করছো মিস্টার হাসবেন্ড। এটা তোমার বেশি ভালোবাসোর ফল। জোর করে হাসলো মধুমিতা, রিতমকে দেখাতে চাইলো যে ও যা ভাবছে তা নয়। মধুমিতা স্বাভাবিকই আছে। ও আবার বলল, তেমন কিছু নয়, শুধু একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কলেজ জীবনের অনেকের সাথে দেখা হয়েছিলো আজ। সারাদিন হইহই করেই কাটলো।
সরল ছেলে রিতম প্রিয় বউয়ের কথা বিশ্বাস করলো। বললো, একটা পিকচারও দিলে না। খুব সেজেছিলে নিশ্চয়ই?
আসলে, ওদের সাথে আড্ডা দিতে এতো ব্যস্ত ছিলাম...... বোঝোইতো অনেক দিন ওদের সাথে দেখা হয়নি।
ধ্যাত, তুমি মিথ্যে বলছো। রিতমের কথায় মধুমিতার বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে ছ্যাঁকা লাগলো যেন। ওকি ধরে ফেললো?
অবশ্য এরপরেই বুঝলো যে না, রিতম কিছুই বোঝে নি। রিতম বললো, তুমি হালকা সাজলে বা কোথাও বেড়োলে একশো বার সেলফি তুলো, সেই তুমি কিনা ছবিই তুলো নি, অবিশ্বাস্য। তার মানে নিশ্চিত বন্ধুদের সাথে মশগুল ছিলে।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মধুমিতা, হেসে বলল, হ্যাঁ.... সেটাই।
খুব সেজেছিলে তাই না?
খুব বললে ভুল হবে, খানিকটা সেজেছিলাম। দাঁড়াও, একটা সেলফি আছে হয়তো...... তোমায় দিচ্ছি। মধুমিতা কয়েকদিন আগের তোলা ওর একটা ছবি রিতমকে দিলো। বাসন্তী রঙের কাঞ্জিভরম শাড়ি পরা, গলায় ছোট্ট একটা হাড়, চুল গুলো স্টাইল করে বাঁধা, মুখে হালকা মেকআপ। ছবিটায় মিষ্টি দেখাচ্ছিলো মধুমিতাকে।
রিতম দেখে খুব প্রশংসা করলো বউকে। সেগুলো সংস্কৃতে তর্জমা করলে দেবীপুরানের স্তুতি গুলোর থেকে কোনো অংশে কম যাবে না। তারপর রিতম গর্ব করে বললো, নিশ্চয়ই আমার বউকে সবচেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছিলো।
তোমার বউয়ের থেকেও আরো সুন্দরী মেয়ে সেখানে ছিল মশাই।
মোটেও না। আমার কাছে তুমিই সবচেয়ে সুন্দর। শুধু আমার কাছে কেন আমার মনে হয়, সেখানে উপস্থিত সব ছেলে শুধু তোমাকেই দেখছিলো। আই কেন ইমাইজিন, ইয়ু ওয়ার দ্যা সেন্টার অব দ্যা অ্যাটেনশন।
নো, ইয়ু আর এক্সজেজারেটিং। আই এম নট দ্যাট বিউটিফুল।
ইয়ু আর, লেডি। ইন মাই আইস....ইয়ু আর দ্যা মোস্ট বিউটিফুল উমেন ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
কথা ঘুরালো মধুমিতা। রিতমের কথা গুলো সুখকর হচ্ছিলো না ওর জন্য। রিতমের কথা গুলো ছিলো ওর হৃদয়ের বক্ত সত্য অনূভুতির প্রকাশ, সে গুলো শুনে মধুমিতার লজ্জা লাগছিল নিজের উপর, বুকের ভেতর কষ্টও হচ্ছিলো।
মধুমিতা বললো, আজকে লোক জন নেই যে? এই টাইমে সচরাচর খুব ভীড় থাকে না?
হুম। বাট আজ এখানে স্নো ফল হচ্ছে, ট্যাম্পেরেচার মাইনাসের নিচে। রাস্তায় লোকজন নেই।
স্নো ফল দেখতে খুব সুন্দর তাই না?
রিতম হাসলো, খুব সুন্দর। স্বেত-শুভ্র বরফ তুষের মতো ঝরে পড়ে, নিঃশব্দে। দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়। জানো, সাদা রঙের মধ্যে একটা পবিত্রতা আছে। তুষার পাত দেখতে দেখতে মনের ভেতর সেই পবিত্রতা সঞ্চারিত হয়। তোমাকে একদিন এখানে নিয়ে আসবো তারপর আমরা একসাথে স্নো ফল দেখবো।
কবে নিয়ে আসবে?
খুব শিঘ্রই, এই বছরই আমার পিএইচডি শেষ হয়ে যাবে। ভালো একটা চাকরি পাবো। তখন তোমাকে এখানে নিয়ে আস্তে পারবো।
কথা চলতে থাকলো, মাঝে মধ্যে মধুমিতাকে বাঁচার জন্য মিথ্যের আশ্রয় নিতে হলো, কখনো শব্দের ইন্দ্রোজাল সৃষ্টি করে ভুলালো রিতমকে। তবে পুরো কথোপকথনের সময় মধুমিতা বুকের ভেতর পাথরের চাপ অনুভব করলো।
সারা রাত লেপের নিচে শুয়ে ছটফট করলো মধুমিতা, ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না।
বুঝতে পারছিলো ও রিতমকে ঠকাচ্ছে, তার জন্য মধুমিতার মনে কম অনুতাপ হচ্ছিলো না, কিন্তু দিহানের স্থাপন করা এই অবৈধ সম্পর্ককেও জাস্টিফাই করছিলো মনে মনে। মনের একটা অংশ বার বার ওকে ভুলিয়ে রাখছিলো যে মধুমিতা কিছু ভুল করে নি, নিজের শরীরের কথা ভেবেছে, নিজের কথা ভেবেছে। এর মধ্যে এক মূহুর্তের জন্যও ও রিতমকে ভুলে যায় নি। তা না হলে মধুমিতার এতো করে রিতমের কথা মনে পড়ছে কেন?
******
হয়তো একটু অগোছালো হয়ে গেল, কোথাও কোথাও গল্প দ্রুত এগিয়ে গেছে, কোথাও বা ধীর ছিলো, সমন্বয় করে উঠতে পারি নি, বানানও ভুল থাকতে পারে, সময় স্বল্পতার কারণে, তার জন্য মার্জনা করবেন।
আজকে আপডেট দেওয়ার কথা ছিলো, আজকে না দিলে এই সপ্তাহে হয়তো আর দেওয়া হতো না, তাই দিয়ে দিলাম।
আর, পুজো শুরু হয়ে গেছে। সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। খুব আনন্দ করুন, ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
আমার প্রশ্ন, আমরা কেন এমন সংকটজনক পরিস্থিতি আমাদের জীবনে তৈরি করবো যার পরিবর্তে আমরাই যন্ত্রণা ভোগ করবো? হয়তো এক মূহুর্তের অল্প একটু সুখের লোভে কখনো কখনো আমরা বিরাট ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করি, যা ভবিষ্যতে এমন সব দুর্যোগ হয়ে আমাদের জীবনে ফিরে আসে যা মোকাবেলা করা দুরূহ। কিন্তু শুরুতেই যদি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, মোহে আবদ্ধ না হতাম তাহলে সেই জটিল পরিস্থিতি আমাদের জীবনে আঁছড়ে পরতো কি?
মধুমিতার এখন সেই অবস্থা। এক রাতের যৌন সুখের জন্য স্বভাবভ্রষ্ট হয়ে মধুমিতা আজ যেন দুর্বিপাকে পড়েছে। কি করবে বুঝতে পারছিলো না। কিভাবে নিজেকে সামলাবে, নিবারণ করবে এই সর্বগ্রাসী কামের অতৃপ্ত ক্ষুদাকে? কিছুই মাথায় আসছিলো না ওর। উল্টো আজকে দিহানের সাথে করা অনৈতিক অবৈধ কাজ গুলো বারবার রোমাঞ্চিত করছিলো ওকে।
মধুমিতা ভেতরে ভেতরে কাঁদছিল, এ কেমন অনুভূতি? কেন আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, কেন আবার দিহানের কাছে যেতে মন চাইছে? ভগবান, আমি এতো কামুক কবে হয়ে গেলাম?
মধুমিতা একটাও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না, উল্টো কামনা দাও দাও করে জ্বলছিলো ওর ভেতরে। কাম তারিত হয়ে ভাবছিলো সব কিছু, নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন করছিলো।
মানসিক অশান্তি কাউকে যখন গ্রাস করে, বিষাদেরা ঘীরে ধরে চারদিক থেকে তখন মন্দ জিনিসও ভালো বলে প্রতীয়মান হয়, বিপরীতে সুন্দর জিনিসগুলোকে খারাপ লাগে, স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায় হয়তো।
কে জানে? হতেও পারে, নাহলে মৃত্যু যেনোও পতঙ্গ কেন আগুনে লাফ দেয়?
আমাদের হতভাগ্য মধুমিতাও উন্মাদ পতঙ্গের মতো আগুনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিলো। যখন ওর হুঁশ হলো তখন খুব দেরি হয়ে গেছে।
মানসিক একটা দোটানায় দুলতে দুলতে মধুমিতা বাড়ি পৌঁছে গেলো। সারা রাস্তা ভেবেও কুল পায় নি ও কি করবে।
তখন রাত এগারোটা হবে হয়তো, মধুমিতা বাড়ি এসে দেখে শশুর শাশুড়ি খেয়ে এরমধ্যে ঘুমিয়ে গেছে। ওনাদের আর বিরক্ত করলো না। শাশুড়ি মা এসেছিলো দরজা খুলে দিতে, জিজ্ঞেস করছিলো ও খেয়েছে কিনা, মধুমিতা ওনাকে আস্বস্ত করে আবার ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো মধুমিতা। এতো রাতে এই শীতের মধ্যেও স্নান করলো।পরনে থাকা ট্রেঞ্জ কোট আর লঞ্জারিটা খুলে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালো শাওয়ারের নিচে। পাশে থাকা আর্সিতে ভেসে উঠেছে ওর সম্পূর্ণ অনাবৃত দেহাবয়ব।
নিজের শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো মধুমিতা। বুক, গলা সহ শরীরের বেশ কিছু জায়গায় নীলচে হয়ে আসা আঁচড়ের- কামড়ের দাগ। এরা ওর করা অনাচারের জলন্ত সাক্ষী। মধুমিতা চায় না এই দাগগুলো ওর শরীরে থাক।
তাই ঘসে ঘসে নিজেকে পরিস্কার করলো, থুপে থুপে জল দিলো সারা শরীরে, ততক্ষণ পর্যন্ত শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলো যতক্ষণ পর্যন্ত না শান্ত হয়ে আসে শরীর। অনেক সময় নিয়ে স্নান করে মধুমিতা যখন বাথরুম থেকে বের হলো তখন নির্মল হয়ে গেছে ওর দেহ, অনাবিল এক প্রফুল্লতা মন জুড়ে।
বিছানায় শুয়ে ও খুব আড়াম অনুভব করলো, চোখ জুড়িয়ে ঘুম এসে হাজির হচ্ছিলো, তখনই মনে পড়লো রিতমকে আজ ফোন দেওয়া হয় নি।
বালিশের পাশে রাখা ফোন হাতড়িয়ে রিতমকে ভিডিও কল করলো।
ফোন ধরতেই মধুমিতা স্মিত হাস্য সৌম্য দর্শন রিতমকে দেখতে পেল। সুপার শপে ওর শিফ্ট শুরু হয়ে গেছে তখন। গায়ে দেওয়া কোম্পানির সবুজ রঙের ওভারকোট, পেছনে বিভিন্ন ধরনের গ্রোসারি, রিতম ক্যাশ কাউন্টারে বসে ছিলো। এই সময়ে ওর দম নেওয়া মুসকিল হয়, উপচে পড়া ভিড় থাকে, তবে আজ দোকানে লোকজন নেই।
হেই দেয়ার! বরাবরের মতো হেসে রিতম উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, আই ওয়াজ জাস্ট থিংকিং অ্যাবাউট ইয়ু। এন্ড দ্যান ইয়ু কল্ড, হুয়াট এ বিউটিফুল কানেকশন। হাউ আর ইয়ু?
অভিমান করার অভিনয় করলো মধুমিতা, বলল, সে খবর জেনে তোমার কি? আমি বাঁচি কি মরি তাতে তোমার কিছুই যায় আসবে না। ওখানে সবাই আমার থেকে অনেক সুন্দরী, আমি না থাকলে খুশি মনে একটা বিদেশিনীকে বিয়ে করতে পারবে। তাই না?
মোটেও না। কোমল কন্ঠে বলল রিতম, এরা কেউই তোমার থেকে রুপবতী নয়। তুমি হলে কোহিনুর, এরা শুধু মাত্র কাঁচের খন্ড। তুমি অন্ধকারেও চকমক করো, এরা ফ্যাকাশে।
হয়েছে মিস্টার পোয়েট স্যার, থামো। সব সময় ফ্ল্যাটারি। মধুমিতা হেসে ফেললো, ভালো আছো কি না সেটা বলো।
এতোক্ষণ তোমার কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছিলো, মিতা। আজ খুব শীত পরেছে এখানে, একটু আগে স্নো ফলও হচ্ছিলো। তখন এতো করে তোমার কথা মনে পরছিলো যে কি বলবো। বেলকনিতে বসে স্নো ফল দেখছিলাম আর তোমার কথা ভাবছিলাম, তবে এখন তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে।
রিতমের চোখের দিকে দেখছিলো মধুমিতা, দেখছিলো কথা গুলো বলার সময় কিভাবে ওর চোখে খুশি জ্বলজ্বল করছিলো। ওর হৃদয়ের কথা চোখে প্রতিফলিত হচ্ছিলো, একটা কথাও ও বাড়িয়ে বলছিলো না। রিতমকে পর্যবেক্ষণ করে বিষন্ন হয়ে এলো মধুমিতার হৃদয়। ও নাকি সারা সন্ধ্যা একা বসে তুষারপাত দেখেছে আর সাত সমুদ্র তের নদী পারে থাকা প্রিয়তমার কথা ভেবে মন খারাপ করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মধুমিতা কি করছিলো? ভাবতেও এখন নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছিলো।
যে স্বামী, না রিতম শুধু ওর স্বামীই না ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু, ওর প্রেম, এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র কাছের মানুষ, যে ওকে এতো ভালোবাসে, আর মধুমিতা, অকৃতজ্ঞ-সার্থপর মধুমিতা রিতমকে সব দিক থেকে ঠকিয়ে তার প্রতিদান দিচ্ছে।
মধুমিতা আর রিতমের চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছিলো না। আত্ম ধিক্কার কুঁড়ে কুঁড়ে দগ্ধ করছিলো ওকে। শুকনো একটা ঢোক গিললো মধুমিতা, ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছিলো এখন, নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, তুমি সত্যিই এতো মিস করছিলে আমায়?
ইয়ু হ্যাভ নো আইডিয়া, সোনা। দিন শেষে কখনো কখনো আমি ভাবি, যখন একা থাকি যে এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, এর কারণও বুঝি তুমি, কেননা আমি জানি আমার জন্য তুমি আছো, অপেক্ষা করছো....
সত্যি? মধুমিতার কন্ঠ প্রায় রোধ হয়ে আসছিলো, কান্না দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো গলায়, রিতম সামনে তাই কাঁদতে পারছিলো না।
রিতম এতোক্ষণ একমনে নিজের মনের কথা জানিয়ে যাচ্ছিলো, তবে এবার মধুমিতার ভগ্ন কন্ঠ কানে যেতে ও অবাক হয়ে গেলো। উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হলো মিতা? গলার স্বর এমন শোনাচ্ছে কেন তোমার? মুখ চোখে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? অসুস্থ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে?
কয়েক মূহুর্ত কথা বললো না মধুমিতা, আবেগ সামলে নিলো আগে, তারপর ধীরে ধীরে বললো, তোমার এই বিশুদ্ধ ভালোবাসা দেখে আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে রিতম, আমি খুব নিচু মনের মানুষ। আমি কি এমন ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
মিতা? কি হলো বলোতো? এতো ইমোশনাল হয়ে পরলে যে হঠাৎ?
আমারো তোমার কথা খুব মনে পড়ছে রিতম। মধুমিতার চোখে জল ছলছল করছিলো। রিতম এক মুহূর্ত স্থির হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরে শান্ত কন্ঠে বলল, আমার জন্য তোমাকে এতো কষ্ট করতে হচ্ছে মিতা। বিশ্বাস করো আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম আমার থেকে দূরে থেকে তুমি এতো কষ্ট পাবে তাহলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না। আমি কখনোই তোমাকে যন্ত্রণা দিতে চাই নি, হয়তো ভাগ্য এটাই চেয়েছে যে আমরা কষ্ট পাই। জানো মিতা? মাঝে মাঝে আমারো খুব কষ্ট হয়, ক্লান্তি আসে মনে, শরীরে। এই দূরত্ব আর ভালো লাগে না, সামটাইমস ইট সিমস ক্রুয়েল, ক্ষতবিক্ষত করে দেয় আমার হৃদয়কে। কিন্তু তারপর ভাবি, আমার তুমি আছো, অপেক্ষা করছো আমার জন্য, তুমি যদি হাসি মুখে সব কিছু সয্য করতে পারো তাহলে আমি ছেলে হয়ে তা পরবো না কেন?
আর আশার কথা কি জানো মিতা? সব কিছুরই শেষ আছে, আমারাও খুব শিঘ্রই আবার একসাথে হবো তখন আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।
রিতম কথাগুলো বলেছিলো মধুমিতার কষ্ট প্রশমিত করার জন্য, তবে ফল হলো উল্টো। আজ মধুমিতা স্বামীকে যত শুনছিলো বুকে তত শেল বিদ্ধ হচ্ছিলো।
তথাপি মনে মনে রিতমকে আহ্বান করছিলো, "তারাতাড়ি চলে এসো রিতম, আমি যে আর পারি না। আমি পাকে পরে গেছি, এসে আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো। আমাকে নষ্ট হতে দিয়ো না।” তবে মুখে প্রকাশ করলো ভিন্ন কিছু।
মধুমিতা কাষ্ঠের হাসি হেসে বলল, আমি সেই দিনের জন্যই অপেক্ষা করছি রিতম।
রিতম জিজ্ঞেস করলো, আজকের পার্টি সম্পর্কে তো কিছুই বললে না মিতা। কেমন এনজয় করলে, বলো?
খুব এনজয় করেছি, ভালো একটা সন্ধ্যা কাটলো। মিথ্যা কথা বলতে হলো মধুমিতাকে। মিথ্যা বলতে বলতে এখন ওর ক্লান্তি এসে গেছিলো। এ যেন এক পাহাড় সম বোঝা, মধুমিতা আর টেনে নিতে পারছিলো না।
রিতম বলল, সত্যি করে বলতো মিতা, তোমার আজ অসুখ করেছে?
তোমার কেন এমন মনে হচ্ছে রিতম?
তোমাকে আজ স্বাভাবিক লাগছে না। একটু আগে খুব ইমোশনাল হয়ে গেলে, এখন আবার কথা বলছো কাঠ কাঠ গলায়, কথা গুলো ইমোশনলেছ মনে হচ্ছে।
তুমি আমার জন্য একটু বেশিই চিন্তা করছো মিস্টার হাসবেন্ড। এটা তোমার বেশি ভালোবাসোর ফল। জোর করে হাসলো মধুমিতা, রিতমকে দেখাতে চাইলো যে ও যা ভাবছে তা নয়। মধুমিতা স্বাভাবিকই আছে। ও আবার বলল, তেমন কিছু নয়, শুধু একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কলেজ জীবনের অনেকের সাথে দেখা হয়েছিলো আজ। সারাদিন হইহই করেই কাটলো।
সরল ছেলে রিতম প্রিয় বউয়ের কথা বিশ্বাস করলো। বললো, একটা পিকচারও দিলে না। খুব সেজেছিলে নিশ্চয়ই?
আসলে, ওদের সাথে আড্ডা দিতে এতো ব্যস্ত ছিলাম...... বোঝোইতো অনেক দিন ওদের সাথে দেখা হয়নি।
ধ্যাত, তুমি মিথ্যে বলছো। রিতমের কথায় মধুমিতার বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে ছ্যাঁকা লাগলো যেন। ওকি ধরে ফেললো?
অবশ্য এরপরেই বুঝলো যে না, রিতম কিছুই বোঝে নি। রিতম বললো, তুমি হালকা সাজলে বা কোথাও বেড়োলে একশো বার সেলফি তুলো, সেই তুমি কিনা ছবিই তুলো নি, অবিশ্বাস্য। তার মানে নিশ্চিত বন্ধুদের সাথে মশগুল ছিলে।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মধুমিতা, হেসে বলল, হ্যাঁ.... সেটাই।
খুব সেজেছিলে তাই না?
খুব বললে ভুল হবে, খানিকটা সেজেছিলাম। দাঁড়াও, একটা সেলফি আছে হয়তো...... তোমায় দিচ্ছি। মধুমিতা কয়েকদিন আগের তোলা ওর একটা ছবি রিতমকে দিলো। বাসন্তী রঙের কাঞ্জিভরম শাড়ি পরা, গলায় ছোট্ট একটা হাড়, চুল গুলো স্টাইল করে বাঁধা, মুখে হালকা মেকআপ। ছবিটায় মিষ্টি দেখাচ্ছিলো মধুমিতাকে।
রিতম দেখে খুব প্রশংসা করলো বউকে। সেগুলো সংস্কৃতে তর্জমা করলে দেবীপুরানের স্তুতি গুলোর থেকে কোনো অংশে কম যাবে না। তারপর রিতম গর্ব করে বললো, নিশ্চয়ই আমার বউকে সবচেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছিলো।
তোমার বউয়ের থেকেও আরো সুন্দরী মেয়ে সেখানে ছিল মশাই।
মোটেও না। আমার কাছে তুমিই সবচেয়ে সুন্দর। শুধু আমার কাছে কেন আমার মনে হয়, সেখানে উপস্থিত সব ছেলে শুধু তোমাকেই দেখছিলো। আই কেন ইমাইজিন, ইয়ু ওয়ার দ্যা সেন্টার অব দ্যা অ্যাটেনশন।
নো, ইয়ু আর এক্সজেজারেটিং। আই এম নট দ্যাট বিউটিফুল।
ইয়ু আর, লেডি। ইন মাই আইস....ইয়ু আর দ্যা মোস্ট বিউটিফুল উমেন ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
কথা ঘুরালো মধুমিতা। রিতমের কথা গুলো সুখকর হচ্ছিলো না ওর জন্য। রিতমের কথা গুলো ছিলো ওর হৃদয়ের বক্ত সত্য অনূভুতির প্রকাশ, সে গুলো শুনে মধুমিতার লজ্জা লাগছিল নিজের উপর, বুকের ভেতর কষ্টও হচ্ছিলো।
মধুমিতা বললো, আজকে লোক জন নেই যে? এই টাইমে সচরাচর খুব ভীড় থাকে না?
হুম। বাট আজ এখানে স্নো ফল হচ্ছে, ট্যাম্পেরেচার মাইনাসের নিচে। রাস্তায় লোকজন নেই।
স্নো ফল দেখতে খুব সুন্দর তাই না?
রিতম হাসলো, খুব সুন্দর। স্বেত-শুভ্র বরফ তুষের মতো ঝরে পড়ে, নিঃশব্দে। দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়। জানো, সাদা রঙের মধ্যে একটা পবিত্রতা আছে। তুষার পাত দেখতে দেখতে মনের ভেতর সেই পবিত্রতা সঞ্চারিত হয়। তোমাকে একদিন এখানে নিয়ে আসবো তারপর আমরা একসাথে স্নো ফল দেখবো।
কবে নিয়ে আসবে?
খুব শিঘ্রই, এই বছরই আমার পিএইচডি শেষ হয়ে যাবে। ভালো একটা চাকরি পাবো। তখন তোমাকে এখানে নিয়ে আস্তে পারবো।
কথা চলতে থাকলো, মাঝে মধ্যে মধুমিতাকে বাঁচার জন্য মিথ্যের আশ্রয় নিতে হলো, কখনো শব্দের ইন্দ্রোজাল সৃষ্টি করে ভুলালো রিতমকে। তবে পুরো কথোপকথনের সময় মধুমিতা বুকের ভেতর পাথরের চাপ অনুভব করলো।
সারা রাত লেপের নিচে শুয়ে ছটফট করলো মধুমিতা, ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না।
বুঝতে পারছিলো ও রিতমকে ঠকাচ্ছে, তার জন্য মধুমিতার মনে কম অনুতাপ হচ্ছিলো না, কিন্তু দিহানের স্থাপন করা এই অবৈধ সম্পর্ককেও জাস্টিফাই করছিলো মনে মনে। মনের একটা অংশ বার বার ওকে ভুলিয়ে রাখছিলো যে মধুমিতা কিছু ভুল করে নি, নিজের শরীরের কথা ভেবেছে, নিজের কথা ভেবেছে। এর মধ্যে এক মূহুর্তের জন্যও ও রিতমকে ভুলে যায় নি। তা না হলে মধুমিতার এতো করে রিতমের কথা মনে পড়ছে কেন?
******
হয়তো একটু অগোছালো হয়ে গেল, কোথাও কোথাও গল্প দ্রুত এগিয়ে গেছে, কোথাও বা ধীর ছিলো, সমন্বয় করে উঠতে পারি নি, বানানও ভুল থাকতে পারে, সময় স্বল্পতার কারণে, তার জন্য মার্জনা করবেন।
আজকে আপডেট দেওয়ার কথা ছিলো, আজকে না দিলে এই সপ্তাহে হয়তো আর দেওয়া হতো না, তাই দিয়ে দিলাম।
আর, পুজো শুরু হয়ে গেছে। সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। খুব আনন্দ করুন, ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।