20-09-2025, 04:22 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৬ (জ)
জয় আর থাকে না সেখানে । এমন অসহায়ের মত দাড়িয়ে রানীর কান্না দেখা ওর জন্য সম্ভব নয়। রানীর চোখে দিয়ে যতটুকু না পানি পরছে তারচেয়ে বহুগুন বেশি রক্তক্ষরণ হচ্চে ওর হৃদয়ে । বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট করে , যখন এসেছিলো তখন যেমন কনফিডেন্ট ছিলো এখন আর সেরকম নেই । কনফিডেন্স এর যায়গা দখল করে নিয়েছে কনফিউশন । ভেবে পাচ্ছে না , ও কি এমন করলো যে রানী ওর উপর রাগ করলো ।
জয় সোজা ভার্সিটি চলে এলো , নিজের আড্ডার স্পটে এসে বন্ধু দের মাঝে বসেও ঠিক সবার সাথে মিশতে পারলো না । মনে একটা কাঁটা বিধে আছে । ওর প্রতি রানীর এই অভিমানের কারন কি সেটা নিয়েই ভাবছে । হ্যা গতকাল ও আসতে পারেনি , কিন্তু জয় মায়ের কাছে যতটুকু জেনেছে রানী বেহুস ছিলো । তাই বেহুস রানী কিছুতেই ওই কারনে অভিমান করতে পারে না । জয় ভাবে মনে মনে ।
নাহ , প্রথম থেকে ভাবতে হবে , জয় মনে মনে ঠিক করে । জয় ফিরে যায় প্রথম যেদিন নিজের আগ্রহের কথা রানীকে জানিয়ে ছিলো । সেই রেগিঙ্গের দিন , রানীদের ছাদ । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে , একটু একটু করে দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো । তখনি ছোট আব্বু নিচ থেকে ডেকে ওঠে । এর পর বেশ কয়েকবার রানীর সাথে জয়ের কথা হয়েছে , রানীর লাজুক দৃষ্টি , মুচকি হাসি এসব ই জয় কে ইংগিত দিয়েছে , রানী ইন্টারেস্টেড ।
এর পর জয় আরো একটু এগিয়ে গিয়েছিলো , ইঙ্গিতে নিজের ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছিলো , সেদিন ও রানী লজ্জা পেয়েছিলো । তবে জয়ও রানীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইংগিত পেয়েছিলো রানীও রাজি । এর পর ঘটলো সেই বাপ্পির ঘটনা , জয় নিজেও বিমর্ষ হয়ে পরেছিলো রাজীবের আচরণে । আর রানীও এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলো , এতে জয় আরো বেশি কষ্ট পেয়েছিলো । যেদিন ওরা চারজন ক্যাম্পাসে বসে বাপ্পির সাথে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো , রাজীব বিশাল লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়েছিলো , প্রেম ভালোবাসার বিপক্ষে “ লুজার একটা” জয়ের মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে আসে রাজীবের সেদিনের ভাষণের কথা মনে করে ।
হঠাত জয়ের মাথায় আসে , আরে সেদিনের পর ই তো রানী আলগা আলগা আচরণ করতে শুরু করে । এড়িয়ে চলতে শুরু করে। জয় ব্যাপারটা তখন লক্ষ্য করেনি , ও নিজেও বিজি ছিলো , নতুন নতুন পলিটিক্স জয়েন করেছে । এর পর ই সেই বৃষ্টি ভেজা দুপুর , জয় রানীর চোখে সেদিন দ্বিধা দ্বন্দ্ব স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে , দেখেছে কেমন উদাস চোখে রানী ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো । কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো রানীকে , মনে হচ্ছিলো নিজের সাথেই লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে গেছে । তবে শেষ পর্যন্ত রানীর চোখে আবার সেই স্পার্ক দেখেছিলো জয় , যখন রানী ওর দিকে নিজের ওড়না এগিয়ে দিয়েছিলো ।
জয়ের কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায় । আসলে রানী ওর উপর অভিমান করে নেই । রানী প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে। একদিকে ওর প্রতি রানীর টান , অন্যদিকে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা । হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে জয়ের । জয় জানে রানীর এই মানসিক চাপের জন্য কে দায়ি । “ দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি লুজার রাজীব”
ওই ব্যাটা রাজীব নিজেও নিজের লাইফ এঞ্জয় করছে না , রানীকেও স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে । নিশ্চয়ই রানীকে নিজের ঐসব মিথ্যা নীতি বাক্য গুলো গুলিয়ে খাইয়েছে । আর বেচারি রানী সেই কারনে প্রচণ্ড দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে । জয় ডিসিশান নেয় , যে করেই হোক রানীকে ওই লুজারের প্রভাব থেকে মুক্ত করে আনবে । আর এই কাজটি ও নিজের জন্য করবে না , রানীর ভালোর জন্যই করবে ।
***
দুপুর দিকে জয় যখন লাঞ্চ করার জন্য কেন্টিনের দিকে যাচ্ছিলো তখন দূর থেকে হঠাত রাজীবের বাইক ওর চোখে পরে যায় , এডমিন বিল্ডিঙের বাইরে । বুঝতে পারে রাজীব নিশ্চয়ই কোন কাজ করতে এসেছে । দ্রুত নিজের মায়ের মোবাইলে কল লাগায় । আয়শা কল রিসিভ করতেই জয় জিজ্ঞাস করে এখনো হস্পটালে কিনা। উত্তরে আয়শা জানায় , অখানে আর থাকতে দিলো না । ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে তাই ।
জয় ভাবল এই সুযোগ , নিশ্চয়ই জান্নাত ওখানে একা , এই সুযোগ রানীর সাথে একা সময় কাটানোর চান্স। একটু পর জয়ের একটা ক্লাস আছে , কিন্তু সেটা জয়ের জন্য ইম্পরট্যান্ট নয় । লাঞ্চ করা ভুলে যায় জয় , দ্রুত বাইকে ওঠে , গন্তব্য হসপিটাল। যেখানে আছে ওর রানী , একজন মেনিপুলেটিভ ভিলেনের খাঁচায় বন্দি। আর জয় যাচ্ছে ওর রানী কে সেই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে ।
হস্পিটলের সামনে বাইক রেখে জয় দ্রুত পদে ভেতর দিকে এগিয়ে যায় । কিন্তু কেবিন যে অংশে সেদিকে যেতেই ওর পথ রোধ করে দাড়ায় উর্দি পরা রিনাউন কম্পানির দারোয়ান । ভিজিটিং আওয়ার শেষ , তাই যেতে দেয়া যাবে না । জয় খুব করে বোঝায়, কিন্তু কিছুতেই গার্ড ওকে যেতে দেবে না । এই সব গার্ড গুলো খুব এক রোখা হয় । কোন কিছুই এদের মন গলাতে পারে না ।
গার্ড জয় কে অবশ্য একটা উপায় বলে দেয় । জয়ের আকুতি শুনে কঠোর গার্ড মন ও গলে যায় । তাই বলে “ স্যার আমরা তো চাকরি করি , তাই আমার পক্ষে যেতে দেয়া সম্ভব নয় , আপনি এডমিনের সাথে যোগাযোগ করেন”
জয় এডমিন অফিসে যায় , সেখানে বসে আছেন একজন ৩০-৩২ এর মহিলা । জয়ের ঠোঁটে একটা হাসি খেলে যায়। মনে মনে ভাবে , এবার খেলা হবে , প্রতিপক্ষ ওর চিরচেনা ।
“ আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?” মহিলা বেশ মিষ্টি করে হেসে বলে । এই ধরনের উন্নত মানের হাসপাতালে কর্মচারীরা খুব ভালো ব্যাবহার করে মানুষের সাথে । এটা ওদের প্রফেশনাল ট্রেনিং , তবে এই প্রফেশনালিজম কে গুরো করে সরবতের মত গুলে খেয়ে ফেলতে জয়ের সময় লাগবে না । এটা জয় ভালো করেই জানে ।
মহিলার হাসির জবাবে জয় নিজের ট্রেডমার্ক মেয়ে ভুলানো হাসি ঠোঁটে টেনে আনে । সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পরে ।
“ খুব বিপদে ছিলাম ম্যাডাম , কিন্তু এখন রিল্যাক্সড ফিল করছি” জয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেলার ভান করে । জয়ের এমন উত্তর শুনে সামনে বসা এডমিন অফিসার , একটু অবাক হয়ে যায় । জয় এই কনফিউসড চেহারা দেখে তৃপ্তি পায় । মেয়েদের কাছ থেকে কোন কিছু আদায় করতে হলে প্রথমে তাদের কনফিউসড করতে হবে , এটাই প্রথম সুত্র ।
“ আপনাকে দেখেই মনে হচ্ছে , একমাত্র আপনিই আমাকে হেল্প করতে পারবেন” কনফিউসড এডমিন অফিসার কে আরো একটু কনফিউশনে ফেলে দেয়ার জন্য জয় আবার বলে ।
“ মানে? কিছুই বুঝতে পারছি না” সামনে বসা সুদর্শন ছেলেটির এমন কথাবার্তা শুনে একটু আশ্চর্য হয়ে এডমিন অফিসার বলে।
“ নিলা ম্যাম , আমি একটা ঝামেলায় পরেছি , আমাদের প্রফেসর আমাকে একটা কাজ দিয়েছে , সেই কাজ নিয়ে ঝামেলা , বুঝতেই পারছেন প্রফেসরের কাজ করতে না পারলে , উনি বিরক্ত হবেন , আর বিরক্ত হলে পরিক্ষায় মার্কস কম আসবে”
জয় চেহারায় একটা করুন ভাব নিয়ে আসে কথা গুলো বলার সময় , এক ফাঁকে টেবিলে রাখা নেইম প্লেট থেকে মহিলার নাম জেনে নিয়েছে ।
হঠাত অপরিচিত একজনের মুখ নিজের নাম শুনে আরো একটু অবাক হয়ে যায় , নিলা । “ কিন্তু আমি আপনাকে কি হেল্প করতে পারি” কনফিউজড টোনে বলে নিলা ।
“ আপনাদের হাসপাতালে আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ভর্তি আছে , এই মেয়ে আবার প্রেফেসরের বেশ প্রিয় , আপনার মত একজন মেয়ে নিশ্চয়ই জানেন এই বুড়ো প্রফেসর গুলো মেয়েদের প্রতি কেমন অবসেসড থাকে “
এডমিন অফিসার নিলা এখনো কনফিউসড , কিন্তু আপনার মত মেয়ে , এই কথা গুলো শুনে কিছুটা রাগ করেছে , কারন আপনার মত মেয়ে এই কথাগুলো একটু নেগেটিভ ভাবেই ব্যাবহার করা হয় , বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপার। হাতাকাটা ডিপ নেক ব্লাউজ পরা নিলা এই ধরনের কথা বেশ নিয়মিত শুনতে পায় । তবে সেই সাথে একটু খুশি ও হয়েছে , আজকাল আর কেউ মেয়ে বলে না , সবাই বলে মহিলা ।
এদিকে জয় বলেই চলছে , “ সুন্দরী মেয়ে দেখেলে তো এই বুড়ো গুলর অবস্থা টাইট , আপনি তো নিশ্চয়ই বোঝেন”
এবার নিলা একটু হেসে ওঠে , সামনে বসা ছেলেটি যে ওকে ইঙ্গিতে সুন্দরীও বলে ফেলেছে সেটাও বুঝতে পারলেন। এই সাথে এও বুঝতে পারলেন , ছেলেটি নিজের কাজ হাসিলের জন্য এসব মাসকা মারছে । এমনি এমনি তো এতো বড় হাসপাতালের এডমিন অফিসার হয়নি । তবে এমন সুদর্শন একটা ছেলে সামনে এসে এমন মাসকা মারলে কার না ভালো লাগে। একে তো সুদর্শন তার উপর বলার ভঙ্গিও বেশ নজরকারা । নিলার ও ভালো লাগলো ।
নিজের প্রফেশনালিজম ভুলে নিলা একটু শব্দ করেই হাসল , অফিসের কাজের চাপ , বাড়িতে সন্তান স্বামীর দায়িত্বের চাপ সামলে চলতে চলতে মন নীরস হয়ে যায় । মাঝে মাঝে এমন কিছু ছোট ছোট ঘটনা মন চাঙ্গা করে তোলে । “ হ্যা তা তো বুঝিই , এখন বলুন আমি কি করতে পারি”
জয় মহিলার হাসি দেখে বুঝতে পারে , কাজ হয়ে গেছে , মনে মনে নিজেকে বাহবা দেয় , ভাবে এমন কোন মেয়ে নেই যে ওর চার্ম কে অস্বীকার করতে পারে । ছুড়ি থেকে বুড়ি । কিন্তু সরাসরি নিজের কাজের কথা বলে না জয় , মহিলাকে আরো একটু তুষ্ট করতে হবে , এখন সরাসরি কাজের কথা বললে মহিলা বুঝে যাবে যে সুধু কাজ হাসিলের জন্য ও এতক্ষণ তেল মেরেছে। জয় বলল “ আমাকে বুড়া খাটাসের খড়গ থেকে রক্ষা করেন প্লিজ, আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে হেল্প করবেন” কথা গুলো বলে একটা নিষ্পাপ হাসি উপহার দিলো , নিলাকে
নীলাও মজা পায় , কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় , সারাদিন তো সুধু এই সমস্যা সেই সমস্যা , রোগীদের রাগান্বিত আত্মীয়স্বজন দের সামলে কেটে যায় । এর ফাঁকে একটু মজা করলে দোষ কি । “ আপনার এই বিশ্বাস কি করে হলো?” নিলা অবাক হওয়ার ভান করে ।
জয় নিলার কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে , এই মহিলা প্রস্তুত এখন মোক্ষম কোপ দিতে হবে “ কিভাবে আবার , আপনাকে দেখে , এমন সুন্দরী একজন মানুষ কিছুতেই খারুস মনের অধিকারি হতে পারে না” খুব সস্তা মানের ডায়লগ , তবে নিলার ভালই লাগলো
“ হি হি হি । তেল দিচ্ছেন ভাই । তেল দিতে হবে না , বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি” ,
“ আপনি ই পারেন আমাকে ওই লম্পট প্রেফেসরের খড়গ থেকে রক্ষা করতে” জয় বেশ নাটকিয় ভঙ্গি করে বলে , আর সেটা দেখে নিলা অফিস এর নিয়ম কানুন ভুলে বেশ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে , তারপর বলে
“ সেটা কিভাবে ?”
“ আমাকে ওই সুন্দরী রোগির সাথে দেখা করতে দিয়ে , খুব সামান্য ব্যাপার, আপনার জন্য কোন ঘটনাই না”
“ সত্যি করে বলেন তো ওই সুন্দরী রোগি আপনার কি হয়” একটু সামনে এগিয়ে এসে , ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করে নিলা।
“ আপনার কসম করে বলছি ম্যাডাম , আমার সুধুই ক্লাসমেট হয় ” জয় ও হেসে বলে , এখন যদি নিলা বুঝতেও পারে তাতেও ক্ষতি নেই ।
“ আমার কসম খেয়ে মিথ্যা বললেন , এখন যদি আমার কিছু হয়ে যায়” নীলাও হালকা মজা করতে ছারে না ।
“ না না আপনার কিছুই হবে না , এখনো সত্যিই কিছু নেই , তবে আপনি যদি এখন যেতে দেন , তাহলে কিছু হলেও হতে পারে” জয় করুন চোখে তাকায় নিলার দিকে ।
নিলা কিছুক্ষন জয়ের দিকে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে , তারপর একটা পাশ এগিয়ে দেয় , দেয়ার সময় বলে , “কাজ হলে কিন্তু কফি পাওনা থাকবে আপনার কাছে” জদিও নিলা সত্যি সত্যি কফি খাওয়ার আশা রাখে না , এমনিতেই কথার কথা বলল।
জয় ও হেসে হেসে পাশ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো , যাওয়ার সময় আর একবার ঘুরে দাড়িয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি উপহার দিলো নিলাকে। তারপর বেড়িয়ে গেলো ।
জয় বেড়িয়ে যাওয়ার পরও নিলার সেই ভালোলাগা অনুভূতি অনেকক্ষণ রয়ে গেলো । মনে মনে ভাবল , বেশ অধভুত ছেলে তো , তবে মন ভালো করার ক্ষমতা আছে ছেলেটার মাঝে ।
*****
জয় আর থাকে না সেখানে । এমন অসহায়ের মত দাড়িয়ে রানীর কান্না দেখা ওর জন্য সম্ভব নয়। রানীর চোখে দিয়ে যতটুকু না পানি পরছে তারচেয়ে বহুগুন বেশি রক্তক্ষরণ হচ্চে ওর হৃদয়ে । বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট করে , যখন এসেছিলো তখন যেমন কনফিডেন্ট ছিলো এখন আর সেরকম নেই । কনফিডেন্স এর যায়গা দখল করে নিয়েছে কনফিউশন । ভেবে পাচ্ছে না , ও কি এমন করলো যে রানী ওর উপর রাগ করলো ।
জয় সোজা ভার্সিটি চলে এলো , নিজের আড্ডার স্পটে এসে বন্ধু দের মাঝে বসেও ঠিক সবার সাথে মিশতে পারলো না । মনে একটা কাঁটা বিধে আছে । ওর প্রতি রানীর এই অভিমানের কারন কি সেটা নিয়েই ভাবছে । হ্যা গতকাল ও আসতে পারেনি , কিন্তু জয় মায়ের কাছে যতটুকু জেনেছে রানী বেহুস ছিলো । তাই বেহুস রানী কিছুতেই ওই কারনে অভিমান করতে পারে না । জয় ভাবে মনে মনে ।
নাহ , প্রথম থেকে ভাবতে হবে , জয় মনে মনে ঠিক করে । জয় ফিরে যায় প্রথম যেদিন নিজের আগ্রহের কথা রানীকে জানিয়ে ছিলো । সেই রেগিঙ্গের দিন , রানীদের ছাদ । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে , একটু একটু করে দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো । তখনি ছোট আব্বু নিচ থেকে ডেকে ওঠে । এর পর বেশ কয়েকবার রানীর সাথে জয়ের কথা হয়েছে , রানীর লাজুক দৃষ্টি , মুচকি হাসি এসব ই জয় কে ইংগিত দিয়েছে , রানী ইন্টারেস্টেড ।
এর পর জয় আরো একটু এগিয়ে গিয়েছিলো , ইঙ্গিতে নিজের ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছিলো , সেদিন ও রানী লজ্জা পেয়েছিলো । তবে জয়ও রানীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইংগিত পেয়েছিলো রানীও রাজি । এর পর ঘটলো সেই বাপ্পির ঘটনা , জয় নিজেও বিমর্ষ হয়ে পরেছিলো রাজীবের আচরণে । আর রানীও এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলো , এতে জয় আরো বেশি কষ্ট পেয়েছিলো । যেদিন ওরা চারজন ক্যাম্পাসে বসে বাপ্পির সাথে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো , রাজীব বিশাল লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়েছিলো , প্রেম ভালোবাসার বিপক্ষে “ লুজার একটা” জয়ের মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে আসে রাজীবের সেদিনের ভাষণের কথা মনে করে ।
হঠাত জয়ের মাথায় আসে , আরে সেদিনের পর ই তো রানী আলগা আলগা আচরণ করতে শুরু করে । এড়িয়ে চলতে শুরু করে। জয় ব্যাপারটা তখন লক্ষ্য করেনি , ও নিজেও বিজি ছিলো , নতুন নতুন পলিটিক্স জয়েন করেছে । এর পর ই সেই বৃষ্টি ভেজা দুপুর , জয় রানীর চোখে সেদিন দ্বিধা দ্বন্দ্ব স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে , দেখেছে কেমন উদাস চোখে রানী ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো । কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো রানীকে , মনে হচ্ছিলো নিজের সাথেই লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে গেছে । তবে শেষ পর্যন্ত রানীর চোখে আবার সেই স্পার্ক দেখেছিলো জয় , যখন রানী ওর দিকে নিজের ওড়না এগিয়ে দিয়েছিলো ।
জয়ের কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায় । আসলে রানী ওর উপর অভিমান করে নেই । রানী প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে। একদিকে ওর প্রতি রানীর টান , অন্যদিকে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা । হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে জয়ের । জয় জানে রানীর এই মানসিক চাপের জন্য কে দায়ি । “ দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি লুজার রাজীব”
ওই ব্যাটা রাজীব নিজেও নিজের লাইফ এঞ্জয় করছে না , রানীকেও স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে । নিশ্চয়ই রানীকে নিজের ঐসব মিথ্যা নীতি বাক্য গুলো গুলিয়ে খাইয়েছে । আর বেচারি রানী সেই কারনে প্রচণ্ড দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে । জয় ডিসিশান নেয় , যে করেই হোক রানীকে ওই লুজারের প্রভাব থেকে মুক্ত করে আনবে । আর এই কাজটি ও নিজের জন্য করবে না , রানীর ভালোর জন্যই করবে ।
***
দুপুর দিকে জয় যখন লাঞ্চ করার জন্য কেন্টিনের দিকে যাচ্ছিলো তখন দূর থেকে হঠাত রাজীবের বাইক ওর চোখে পরে যায় , এডমিন বিল্ডিঙের বাইরে । বুঝতে পারে রাজীব নিশ্চয়ই কোন কাজ করতে এসেছে । দ্রুত নিজের মায়ের মোবাইলে কল লাগায় । আয়শা কল রিসিভ করতেই জয় জিজ্ঞাস করে এখনো হস্পটালে কিনা। উত্তরে আয়শা জানায় , অখানে আর থাকতে দিলো না । ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে তাই ।
জয় ভাবল এই সুযোগ , নিশ্চয়ই জান্নাত ওখানে একা , এই সুযোগ রানীর সাথে একা সময় কাটানোর চান্স। একটু পর জয়ের একটা ক্লাস আছে , কিন্তু সেটা জয়ের জন্য ইম্পরট্যান্ট নয় । লাঞ্চ করা ভুলে যায় জয় , দ্রুত বাইকে ওঠে , গন্তব্য হসপিটাল। যেখানে আছে ওর রানী , একজন মেনিপুলেটিভ ভিলেনের খাঁচায় বন্দি। আর জয় যাচ্ছে ওর রানী কে সেই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে ।
হস্পিটলের সামনে বাইক রেখে জয় দ্রুত পদে ভেতর দিকে এগিয়ে যায় । কিন্তু কেবিন যে অংশে সেদিকে যেতেই ওর পথ রোধ করে দাড়ায় উর্দি পরা রিনাউন কম্পানির দারোয়ান । ভিজিটিং আওয়ার শেষ , তাই যেতে দেয়া যাবে না । জয় খুব করে বোঝায়, কিন্তু কিছুতেই গার্ড ওকে যেতে দেবে না । এই সব গার্ড গুলো খুব এক রোখা হয় । কোন কিছুই এদের মন গলাতে পারে না ।
গার্ড জয় কে অবশ্য একটা উপায় বলে দেয় । জয়ের আকুতি শুনে কঠোর গার্ড মন ও গলে যায় । তাই বলে “ স্যার আমরা তো চাকরি করি , তাই আমার পক্ষে যেতে দেয়া সম্ভব নয় , আপনি এডমিনের সাথে যোগাযোগ করেন”
জয় এডমিন অফিসে যায় , সেখানে বসে আছেন একজন ৩০-৩২ এর মহিলা । জয়ের ঠোঁটে একটা হাসি খেলে যায়। মনে মনে ভাবে , এবার খেলা হবে , প্রতিপক্ষ ওর চিরচেনা ।
“ আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?” মহিলা বেশ মিষ্টি করে হেসে বলে । এই ধরনের উন্নত মানের হাসপাতালে কর্মচারীরা খুব ভালো ব্যাবহার করে মানুষের সাথে । এটা ওদের প্রফেশনাল ট্রেনিং , তবে এই প্রফেশনালিজম কে গুরো করে সরবতের মত গুলে খেয়ে ফেলতে জয়ের সময় লাগবে না । এটা জয় ভালো করেই জানে ।
মহিলার হাসির জবাবে জয় নিজের ট্রেডমার্ক মেয়ে ভুলানো হাসি ঠোঁটে টেনে আনে । সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পরে ।
“ খুব বিপদে ছিলাম ম্যাডাম , কিন্তু এখন রিল্যাক্সড ফিল করছি” জয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেলার ভান করে । জয়ের এমন উত্তর শুনে সামনে বসা এডমিন অফিসার , একটু অবাক হয়ে যায় । জয় এই কনফিউসড চেহারা দেখে তৃপ্তি পায় । মেয়েদের কাছ থেকে কোন কিছু আদায় করতে হলে প্রথমে তাদের কনফিউসড করতে হবে , এটাই প্রথম সুত্র ।
“ আপনাকে দেখেই মনে হচ্ছে , একমাত্র আপনিই আমাকে হেল্প করতে পারবেন” কনফিউসড এডমিন অফিসার কে আরো একটু কনফিউশনে ফেলে দেয়ার জন্য জয় আবার বলে ।
“ মানে? কিছুই বুঝতে পারছি না” সামনে বসা সুদর্শন ছেলেটির এমন কথাবার্তা শুনে একটু আশ্চর্য হয়ে এডমিন অফিসার বলে।
“ নিলা ম্যাম , আমি একটা ঝামেলায় পরেছি , আমাদের প্রফেসর আমাকে একটা কাজ দিয়েছে , সেই কাজ নিয়ে ঝামেলা , বুঝতেই পারছেন প্রফেসরের কাজ করতে না পারলে , উনি বিরক্ত হবেন , আর বিরক্ত হলে পরিক্ষায় মার্কস কম আসবে”
জয় চেহারায় একটা করুন ভাব নিয়ে আসে কথা গুলো বলার সময় , এক ফাঁকে টেবিলে রাখা নেইম প্লেট থেকে মহিলার নাম জেনে নিয়েছে ।
হঠাত অপরিচিত একজনের মুখ নিজের নাম শুনে আরো একটু অবাক হয়ে যায় , নিলা । “ কিন্তু আমি আপনাকে কি হেল্প করতে পারি” কনফিউজড টোনে বলে নিলা ।
“ আপনাদের হাসপাতালে আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ভর্তি আছে , এই মেয়ে আবার প্রেফেসরের বেশ প্রিয় , আপনার মত একজন মেয়ে নিশ্চয়ই জানেন এই বুড়ো প্রফেসর গুলো মেয়েদের প্রতি কেমন অবসেসড থাকে “
এডমিন অফিসার নিলা এখনো কনফিউসড , কিন্তু আপনার মত মেয়ে , এই কথা গুলো শুনে কিছুটা রাগ করেছে , কারন আপনার মত মেয়ে এই কথাগুলো একটু নেগেটিভ ভাবেই ব্যাবহার করা হয় , বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপার। হাতাকাটা ডিপ নেক ব্লাউজ পরা নিলা এই ধরনের কথা বেশ নিয়মিত শুনতে পায় । তবে সেই সাথে একটু খুশি ও হয়েছে , আজকাল আর কেউ মেয়ে বলে না , সবাই বলে মহিলা ।
এদিকে জয় বলেই চলছে , “ সুন্দরী মেয়ে দেখেলে তো এই বুড়ো গুলর অবস্থা টাইট , আপনি তো নিশ্চয়ই বোঝেন”
এবার নিলা একটু হেসে ওঠে , সামনে বসা ছেলেটি যে ওকে ইঙ্গিতে সুন্দরীও বলে ফেলেছে সেটাও বুঝতে পারলেন। এই সাথে এও বুঝতে পারলেন , ছেলেটি নিজের কাজ হাসিলের জন্য এসব মাসকা মারছে । এমনি এমনি তো এতো বড় হাসপাতালের এডমিন অফিসার হয়নি । তবে এমন সুদর্শন একটা ছেলে সামনে এসে এমন মাসকা মারলে কার না ভালো লাগে। একে তো সুদর্শন তার উপর বলার ভঙ্গিও বেশ নজরকারা । নিলার ও ভালো লাগলো ।
নিজের প্রফেশনালিজম ভুলে নিলা একটু শব্দ করেই হাসল , অফিসের কাজের চাপ , বাড়িতে সন্তান স্বামীর দায়িত্বের চাপ সামলে চলতে চলতে মন নীরস হয়ে যায় । মাঝে মাঝে এমন কিছু ছোট ছোট ঘটনা মন চাঙ্গা করে তোলে । “ হ্যা তা তো বুঝিই , এখন বলুন আমি কি করতে পারি”
জয় মহিলার হাসি দেখে বুঝতে পারে , কাজ হয়ে গেছে , মনে মনে নিজেকে বাহবা দেয় , ভাবে এমন কোন মেয়ে নেই যে ওর চার্ম কে অস্বীকার করতে পারে । ছুড়ি থেকে বুড়ি । কিন্তু সরাসরি নিজের কাজের কথা বলে না জয় , মহিলাকে আরো একটু তুষ্ট করতে হবে , এখন সরাসরি কাজের কথা বললে মহিলা বুঝে যাবে যে সুধু কাজ হাসিলের জন্য ও এতক্ষণ তেল মেরেছে। জয় বলল “ আমাকে বুড়া খাটাসের খড়গ থেকে রক্ষা করেন প্লিজ, আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে হেল্প করবেন” কথা গুলো বলে একটা নিষ্পাপ হাসি উপহার দিলো , নিলাকে
নীলাও মজা পায় , কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় , সারাদিন তো সুধু এই সমস্যা সেই সমস্যা , রোগীদের রাগান্বিত আত্মীয়স্বজন দের সামলে কেটে যায় । এর ফাঁকে একটু মজা করলে দোষ কি । “ আপনার এই বিশ্বাস কি করে হলো?” নিলা অবাক হওয়ার ভান করে ।
জয় নিলার কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে , এই মহিলা প্রস্তুত এখন মোক্ষম কোপ দিতে হবে “ কিভাবে আবার , আপনাকে দেখে , এমন সুন্দরী একজন মানুষ কিছুতেই খারুস মনের অধিকারি হতে পারে না” খুব সস্তা মানের ডায়লগ , তবে নিলার ভালই লাগলো
“ হি হি হি । তেল দিচ্ছেন ভাই । তেল দিতে হবে না , বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি” ,
“ আপনি ই পারেন আমাকে ওই লম্পট প্রেফেসরের খড়গ থেকে রক্ষা করতে” জয় বেশ নাটকিয় ভঙ্গি করে বলে , আর সেটা দেখে নিলা অফিস এর নিয়ম কানুন ভুলে বেশ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে , তারপর বলে
“ সেটা কিভাবে ?”
“ আমাকে ওই সুন্দরী রোগির সাথে দেখা করতে দিয়ে , খুব সামান্য ব্যাপার, আপনার জন্য কোন ঘটনাই না”
“ সত্যি করে বলেন তো ওই সুন্দরী রোগি আপনার কি হয়” একটু সামনে এগিয়ে এসে , ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করে নিলা।
“ আপনার কসম করে বলছি ম্যাডাম , আমার সুধুই ক্লাসমেট হয় ” জয় ও হেসে বলে , এখন যদি নিলা বুঝতেও পারে তাতেও ক্ষতি নেই ।
“ আমার কসম খেয়ে মিথ্যা বললেন , এখন যদি আমার কিছু হয়ে যায়” নীলাও হালকা মজা করতে ছারে না ।
“ না না আপনার কিছুই হবে না , এখনো সত্যিই কিছু নেই , তবে আপনি যদি এখন যেতে দেন , তাহলে কিছু হলেও হতে পারে” জয় করুন চোখে তাকায় নিলার দিকে ।
নিলা কিছুক্ষন জয়ের দিকে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে , তারপর একটা পাশ এগিয়ে দেয় , দেয়ার সময় বলে , “কাজ হলে কিন্তু কফি পাওনা থাকবে আপনার কাছে” জদিও নিলা সত্যি সত্যি কফি খাওয়ার আশা রাখে না , এমনিতেই কথার কথা বলল।
জয় ও হেসে হেসে পাশ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো , যাওয়ার সময় আর একবার ঘুরে দাড়িয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি উপহার দিলো নিলাকে। তারপর বেড়িয়ে গেলো ।
জয় বেড়িয়ে যাওয়ার পরও নিলার সেই ভালোলাগা অনুভূতি অনেকক্ষণ রয়ে গেলো । মনে মনে ভাবল , বেশ অধভুত ছেলে তো , তবে মন ভালো করার ক্ষমতা আছে ছেলেটার মাঝে ।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)