Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#65
কিছু সম্পর্কঃ ৬ (


 
প্রথমে জয় ট্রিমার নিয়ে নিজের দাড়ি গোঁফ ট্রিম করে নেয় । তারপর  গোসল করে হালকা গরম পানিতে । তোয়ালে দিয়ে শরীর মুখে , তোয়ালে পরে বেড়িয়ে আসে । আয়নার সামনে দাড়ায় , চোখ দুটো হালকা ফুলে আছে আর লাল হয়ে আছে । এ ছাড়া বিনিদ্রার কোন চিহ্ন মেলে না কোথাও। বেশ শার্প দেখাচ্ছে ।
জয়  চুল গুলো সুন্দর করে সেট করে নেয় । আলমারি থেকে ইস্ত্রি করা সাদা সার্ট আর নীল জিন্স বের করে । সার্টের দুটো বোতাম খোলাই রেখে দেয় । লোমহীন সুগঠিত চেস্ট মাসলের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে খোলা বোতামের ফাক দিয়ে ।  স্লিভ  কনুই পর্যন্ত গুঁটিয়ে নেয় , চিকন মোটা অসংখ্য শিরা উপশিরা সজ্জিত হাত উন্মুক্ত করে নেয়  । বেছে বেছে হালকা একটা পারফিউম থেকে কয়েকটা পাফ নিজের সার্টের উপর মেখে নেয় । নিজের ঘড়ির কালেকশন থেকে একটা ঘড়ি নিয়ে পড়ে বাম হাতের কব্জিতে ।
বেড়িয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বেশ ভালো মত করে নিজেকে আরেকবার আয়নাতে দেখে নেয় । চুল গুলো আর একবার ঠিক করে নেয় । তারপর আয়নায় নিজেকে নিজে একবার উইঙ্ক করে ।
 
কোথায় যাচ্ছিস রে , আমাকে হসপিটাল নিয়ে যাবিনিচ তলায় মায়ের সাথে দেখা হতেই চেঁচিয়ে ওঠে আয়শা । কিন্তু জয় থামে না  , বলে তুমি বাইকে উঠতে পারবে না , তুমি গাড়িতে আসো
বাইরে এসে চোখে সানগ্লাস পরে নিয়ে বাইকে ওঠে । স্টার্ট করে একবারে । মনে মনে ভাবে আজকে দিনটা বেশ ভালো। গলির মাথায় এসে দোকানের সামনে বাইক থামায় , একটা সিগারেট নেয় । ধরাতে যাবে এমন সময় এক বন্ধু এসে বলে আরে ভাই সকাল বেলা গেটাপ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস , পাত্রী দেখতে নাকি?”
 
বন্ধুর কথা শুনে জয় কিছুক্ষন চুপ করে থাকে , তারপর হাসি দিয়ে বলে কথাটা মন্দ বলিসনাই তো , ধরে নে তেমন কিছুই একটা, তবে দেখা দেখি শেষ , আজকে পাকা কথা
 
জয়ের কথা শুনে সেই ছেলেটি একটু অবাক হয়ে যায় । আসলে ও এমনি এমনি জিজ্ঞাস করছিলো , সকাল সকাল জয় কে এভাবে একদম পড়পাটি করে সেজে বের হতে দেখে পাত্রী দেখার কথা বলে । কিন্তু সেটা যে সত্যি হয় যাবে বুঝতে পারেনি, ছেলেটি আধা বিশ্বাস করে ফেলে জয়ের কথা , বলে তাই নাকি , সত্যি বলছিস?”
 
ধুর ব্যাটা তোর কাছে মিথ্যা বলবো কেনো ? তুই কি আমার শালা , যে তোর বোনের সাথে দেখা করতে জাচ্ছি তাই মিথ্যা বলবোজয়ের এমন হাজির জবাবে থতমত খেয়ে যায় ছেলেটি , বলে আরে এমনি বললাম , আমরা কিছু জানলাম না তো তাই , আর তুই যে দেখে শুনে বিয়ে করবি এটা কে ভেবেছে
 
না দেখেই বিয়ে করে ফেলবো!!!” জয় অবাক হওয়ার ভান করে ।
আরে  নারে সেটা বলি নাই ,  মানে এরেঞ্জ মেরেজ করবি সেটা ভাবিনাই , আচ্ছা পাত্রী কোথাকার?” ছেলেটি প্রশ্ন করে ।
 
এরেঞ্জ ম্যারেজ তোকে কে বলল , আর পাত্রী কে সেটা সময় হলে জানবি , এই নে সিগারেট নে , আমি গেলামজয় নিজের আধা খাওয়া সিগারেট ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে বিকট শব্দ তুলে বেড়িয়ে গেলো । গত বিনিদ্র রাতটি ছিলো ওর জন্য একটা eye openar , গত একটি রাত না ঘুমিয়ে জয় বুঝতে পেরেছে , রানী ওর জন্য কোন সাধারন মেয়ে নয় । আর কোন মেয়ে তো দুরের কথা জয় কোনদিন নিজের বাপ মায়ের জন্য এতটা ব্যাকুলতা অনুভব করেনি । যতটা ব্যাকুলতা রানীর জন্য অনুভব করেছে । জয় জেনে গেছে , she is “THE ONE” । এতদিন যা হওয়ার হয়েছে , আজকে জয় প্রতিজ্ঞা করেছে , রানীকে ওর চাই , জেভাবেই হোক রানীকে ও রাজি করাবে । জয় জানে যদি মায়ের কাছে রানীকে বিয়ে করার কথা বলে , মা এক্ষুনি গিয়ে ছোট আব্বুকে বলবে , আর ছোট আব্বু না করবে না , এটাও জয় জানে ।
 
কিন্তু জয় এভাবে রানীকে পেতে চায় না , জয় রানীকে জয়করে নিয়ে আসতে চায় । ঠিক যেমন একজন রাজা তার রানীকে স্বয়ংবর অনুষ্ঠানে জয় করে ।  রানী নিজে ওর গলায় বিজয় মালা পরিয়ে দিবে । জয় এতোদিনে এটুকু বুঝতে পেরেছে যে রানী নিজেও এটাই চায় । কিন্তু কিছু একটা ওকে পেছন থেকে টেনে ধরে বারবার । জয় সেই টেনে  ধরা দড়ি কেটে ফেলতে চায়। ধিরে ধিরে রানীর মন শরীর এমনকি পুরো পৃথিবীতে সুধু নিজের ছাপ দেখতে চায় । রানীকে সুধু  নিজের করে পেতে চায় , আর কারো ছায়া রানীর উপর থাকবে না । এর জন্য যতদিন অপেক্ষা করতে হবে ও করবে । যত বন্ধুর পথ পারি দিতে হয় , ও দিবে। ভালোবাসার মানুষ কে পেতে গিয়ে যদি একটা রোমাঞ্চকর গল্পই তৈরি না হয় । তাহলে  বুড়ো বয়সে নাতি নাতনির কাছে কি গল্প করবে ।  
 
জয়ের ঠোঁটে একটা কনফিডেন্সের হাসি ফুটে ওঠে, চেহারা থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে কনফিডেন্স  । চোখের সামনে ,  নিকট অতীতে রানীর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ছেড়া ছেড়া অংশ ছবির মত ভেসে ওঠে ।
 
প্রায় আড়াই বছর আগে যেদিন রানীকে জয় প্রথম একজন মেয়ে হিসেবে নোটিস করে , সেদিন জয়ের এইচ এস সি পরিক্ষার পর প্রায় দের বছরের বিরতি দিয়ে রানী প্রথমবার এসেছিলো জয়দের বাড়ি । রানীকে চিনতে পারেনি জয় , তবে সেই মায়াবী সুন্দর মুখটা দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য হাং করে গিয়েছিলো জয়ের সিস্টেম ।  তারপর রানীর সেই মন্মুগ্ধকর নাচ । আজো ভুলতে পারেনি জয় ।
 
এর পর রেগিঙ্গের সেই মুহূর্ত , রানী গোলাপ হাতে চোখ বুজে দাড়িয়ে আছে । ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে । গোলাপের পাপড়ির মতই নিষ্পাপ লাগছিলো সেদিন রানীকে । সেদিনি মুলত জয়ের প্রতিরোধ ভেঙ্গে গিয়েছিলো । আর সেদিন সন্ধ্যায় রানীদের ছাদে , দুই জোড়া চোখের মিলন , জয় জানতে পেরেছিলো রানীর মনেও ওর জন্য বিশেষ স্থান রয়েছে ।
 
এর পর নানা কারনে বেশ কয়েকদিন আর তেমন কিছু না ঘটলেও , আবারো ছাদে রানীর লজ্জা পেয়ে নিচে চলে যাওয়ার আগে ঠোঁটে যে হাসি দেখতে পেয়েছিলো সেটা জয়কে বলেছিলো তোর চান্স আছে
 
আর সবচেয়ে তাজা সৃতি , বৃষ্টি ভেজা রানীর সাথে চায়ের দোকানে কাটানো সেই মুহূর্ত গুলো । রানী যখন ওর শরীর ঢাকার জন্য নিজের ওড়না এগিয়ে দিয়েছিলো , সেই দৃশ্য মনে করে মৃদু হাসি খেলে যায় জয়ের ঠোঁটে । ওই ব্যাপারটা তখন খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি জয় , মজার ছলে ছিয়েছিলো । কিন্তু আজ বুঝতে পারছে , রানীর ওই ওড়না এগিয়ে দেয়ার মাঝে একটা গোপন ম্যাসেজ ছিলো । আর ও গাধা সেই ম্যাসেজ বুঝতে পারেনি ।
 
জয় হসপিটালের গেটে এসে যখন বাইক থামায় , তখন বাজে নয়টা । ভিজিটিং আওয়ার শুরু হবে এখন । জয় রিসেপশনে এসে দাড়ায় , একটা গোমড়া  মুখো লোক বসে আছে । রাজীব রানীর নাম বলে , লোকটি বেশ ধীরেসুস্থে কম্পিউটারে রোগিদের লিস্ট দেখে , তারপর কেবিন নাম্বার জানায় , ৫০৪।
 
মাত্র ভিজিটিং আওয়ার শুরু হওয়ায় লিফটে বিশাল লাইন । তাই জয় সিঁড়ি করে উপরে উঠতে শুরু করে । জিম করা ফিট শরির  জয়ের , ছয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে তেমন কোন প্রবলেম হয় না । জয় যখন ৫০৪ লেখা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে তখন ভেতরে বেশ জটলা । কিন্তু এতে জয় থেমে যায় না । দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পরে । তেবে বেসিদুর আগায় না , দরজার পাশেই দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ায় ।  হাত দুটো ভাজ করে বুকের কাছে রাখে । জান্নাতের সাথে চোখাচোখি হয় , জয় রাগত দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে ।   সাইলেন্টলি বলে , ‘ তোকে পরে দেখে নিচ্ছি। জান্নাত ও কম যায় না , ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে  সাইলেন্টলি বলে গোল্লায় যা তুই
 
এদিকে ডাক্তার রানীকে বলেছে কি ব্যাপার ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো না ? শরীর দুর্বল থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় , আর তখনি এই ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ আক্রমণ করে , এখন থেকে ঠিক মত খাবার দাবার খাবে , বুঝলে
 
তারপর রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে ওর নিউমোনিয়া আছে , তবে বেশি গুরুতর কিছু না , তবে শরীর বেশ দুর্বল , ইমিউন সিস্টেম ও দুর্বল , ভালো মত খাওয়া দাওয়া করতে হবে , পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে । নইলে এসব রোগ বালাই লেগেই থাকবে, ঠিক মত খেয়াল রাখবেন , আপনি রোগির কি হন?”
 
রাজীব ছোট করে উত্তর দেয় ভাই
 
বাড়িতে আর কে কে আছে ?” ডাক্তার আবার জিজ্ঞাস করে
 
আব্বু আছেরাজীব এবার ও ছোট করে উত্তর দেয়
 
বুদ্ধিমান ডাক্তার বুঝে নেয়ে বাকিটা , তারপর বলে দেখুন ওর যা সমস্যা তা হচ্ছে ওর শরীরে রক্ত কম , আন্ডার ওয়েট , ইমিউন সিস্টেম দুর্বল , এসব সমস্যা ঔষধ দিয়ে ঠিক করার নয় , ওকে টেক কেয়ার করতে হবে । ঠিক মত খাবার যেন খায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে , সুধু খাবার খেলেই হবে না , খেয়াল রাখতে হবে যেন পুষ্টিকর খাবার খায় , আমি বলবো আপনারা একজন ডাইয়েটিশিয়ানের সাথে কন্সাল্ট করুন
 
ঠিক আছে গেলাম , ভালো থেকো , আশা করি দুদিন পর বাড়ি চলে যেতে পারবেএবার  রানী কে উদ্দেশ্য করে শেষ কথা বলে বেড়িয়ে যায় ডাক্তার ।
 
ডাক্তারের এসিস্টেন্ট কম বয়সি মেয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জয় ছোট করে একটা হাসি দেয় । এসিস্টেন্ট ডাক্তার কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায় , কি করবে বুঝতে পারে না , তারপর হড়বড় করে বেড়িয়ে যায় । ব্যাপারটা রাজীব , রানী আর জান্নাত তিনজনের ই নজরে পরে , একেক জনের একেক ধরনের অভিবেক্তি প্রকাশ পায় । রানী মুখ ঘুরিয়ে নেয় , রাজীব তেমন কোন পাত্তা দেয় না , আর জান্নাত বিরক্তি সহকারে মাথা উপরের দিকে তুলে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে , ভাব খানা এমন যে জয়ের এমন আচরণে ওর গার্ডিয়ান হিসেবে খুব বিরক্ত হয়েছে জান্নাত ।
 
ডাক্তাররা সব বেড়িয়ে গেলে , জয় আর রাজীব মুখোমুখি হয় , কয়েক মুহূর্তের জন্য  একটা টেনশন দেখা দেয়ে দুজনের মাঝে  । কয়েক মাস আগে সেই প্রায় হাতাহাতি হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনো তাজা । তবে কেউই কোন রকম রিয়েক্ট করে না , রাজীব কয়েক মুহূর্ত  এক্সপ্রেশনহীন দৃষ্টিতে  জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে  ,  তারপর জয়ের সামনে থেকে সরে যায় । জান্নাতের সাথে কোন একটা বিষয় নিয়ে নিচু স্বরে আলাপ করতে থাকে ।  
 
আর জয় ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় রানীর বেডের কাছে , সামনে রাখা চেয়ারে বসে , মুখে গাম্ভীর্য , কিন্তু চোখে একটা পরিত্রিপ্তির ছাপ । গতকাল রাত থেকে যেখানে আসার জন্য ছটফট করছিলো , অবশেষে সেখানে আসতে পাড়ার তৃপ্তি ।
 
কিন্তু রানী জয়ের দিকে তাকায় না , ওর মনে হয় জয়ের দিকে তাকালে ও আরো দুর্বল হয়ে পরবে । নিজেকে হয়তো কন্ট্রোল করতে পারবে না । যে কয়েক মুহূর্তের জন্য জয় কে দেখছে , যখন জয় সেই এসিস্টেন্ট ডাক্তারের সাথে হাসছিলো । তখনি রানীর বুকটা ধক করে উঠেছিলো , বেহুস অবস্থায় ওর তপ্ত মস্তিষ্ক ওকে  যেমন ভাবে জয়ে কে  দেখিয়েছিলো  , ঠিক সেরকম ই লাগছে জয় কে । সাদা সার্ট ব্লু জিন্স , সারটের উপরের দুটো বোতাম খোলা , সেই ফাক দিয়ে বুকের শক্ত মাংস পেশির কিছুটা আভাষ পাওয়া যাচ্ছে । চুল গুলো পরিপাটি করে সেট করা , এমন কি সেই একি পারফিউম । সুধু একটা জিনিস ভিন্ন , কল্পনায় রানী জয়কে ক্লিন সেভেড দেখছে , আর এখন ওর ছোট ছোট হাফ ইঞ্চির মত দাড়ি গোঁফ আছে । আর ঠোঁটে সব সময়ের মত সেই চুটল হাসি ।
 
রানীর মনে হয় জয় এতো সুন্দর আর হ্যান্ডসাম না হলে দুনিয়ার কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো । আর চোখ গুলো , কেন এমন নিষ্ঠুর সুন্দর , টানা ঘন ভ্রুর নিচে  লম্বা সরু তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া , মনে হয় যেন হীরের চাকু , ফালা ফালা করে ফেলছে ভেতর বাহির । এর চেয়ে যদি জয় হাবা কালা বেঁটে খাটো হতো তাহলেই ভালো হতো।
 
ডাক্তার কি বলে গেলো শুনেছিস । ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবিরাজীব আর জান্নতের উপস্থিতে জয়  নিজের সত্যিকারের ইমোশান লুকিয়ে রেখে , স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা গুলো বলল । কিন্তু রানী মুখ ঘুরিয়ে তাকালো না , এই ব্যাপারটা জয় কে খুব পীড়া দিচ্ছে , এই মুখটা দেখার জন্যই তো গত রাত থেকে ছটফট করছে ।
 
রানী অন্যদিকে তাকিয়েই , ভাবে ‘ ডাক্তারের কথা বলতে এসেছো, একবার ভেবেছো , এমন কেনো হলো , কেন আমি অসুস্থ হলাম’
 
এখন কেমন আছিসজয় আবার স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে , কিন্তু ওর মন ব্যাকুল হতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তের সাথে সাথে , মনে মনে বলে একবার তাকা আমার দিকে , দেখতে দে একবার তোকে , কাল রাত থেকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে আমার চোখ
 
রানী মনে মনে আবার ভাবে ‘ একবার নিজের দিকে তাকাতেও তো বললে না , যদি বলতে তাহলে নিজেই বুঝতে পারতে কেমন আছি, এমন কেন তুমি ? একবার বলো , আমার দিকে তাকা, দেখো আমি তাকাই কিনা’  
জয় একবার ভালো করে রানীর সমস্ত শরীরে চোখ বুলায় , মন  ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে , এই দু তিনদিনে কি অবস্থা হয়েছে , শরীর আরো শুকিয়ে গেছে , গায়ের রং ফ্যাকাসে । গলার হাড় আরো বেশি করে বেড়িয়ে গেছে । জয়ের  ইচ্ছা হয় ছুয়ে দেখতে , কিন্তু পারে না । যদি কিছুক্ষন একা হতে পারতো , আফসোস হয় জয়ের ।
 
জয় আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো , তখন আয়শা ঢোকে , লিফট করে এসেছে তাই তেমন একটা অসুবিধা হয়নি । পাশে ড্রাইভারের হাতে খাবারের ব্যাগ । রহিম ও এসেছে সাথে । জয় ওদের দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায় । আয়শা রানীর পাশে চেয়ারে গিয়ে বসে , আর রহিম দাড়িয়ে থাকে মেয়ের পায়ের কাছে ।
 
আব্বু আর বড় আম্মুর উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ ফেরায় রানী । নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়েই ঠোঁট দুটো ফুলে ওঠে , চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে । জয় কাছে এসে বসার পর যে কান্না দমিয়ে রেখেছিলো , সেটা এখন বেড়িয়ে আসতে শুরু করে । বাবার মুখটা দেখার সাথে সাথে রানী আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না ।  
আয়শা দ্রুত রানীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ তোর কিচ্ছু হয়নি মা , এইজে দেখ আমরা সবাই আছি , তুই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবি , কাঁদে না মা , এইভাবে কাঁদলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবি”
 
রহিম নিজেও বেশ অবাক আর অসহায় বোধ করে , রানীকে এর আগে অসুস্থতার জন্য এভাবে কাঁদতে দেখেনি ও । কি করবে ভেবে পায় না । মেয়ের পায়ের কাছেই বেডে বসে পরে , পায়ের তালুতে হাত দিয়ে মালিস করতে করতে বলে , “ আরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেনো? এটুকু অসুখে কেউ কাঁদে , বোকা মেয়ে আমার” যদিও রহিম হাসতে হাসতে কথা গুলো বলে , কিন্তু ওর নিজের গলাও ধরে আসে ।
 
জয় , রাজীব আর জান্নাত একটু দূরে দাড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে , জান্নাত বেশ আশ্চর্য হচ্ছে , তবে সেই সাথে সহানুভুতিও অনুভব করছে । ওর এই  ান্ধবিটি যে সব সময়ই একটু নরম মনের সেটা ও জানে ।
 
রাজীবের মনে একি সাথে দুটো অনুভূতি কাজ করছে , একটি অনুভূতি মমতার , অন্যটি রাগের । রাজীব রানীর এই কান্নার কারন কিছুটা বুঝতে পারছে । তবে কার জন্য রানী এই মনকষ্টের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে তা রাজীব জানে না। আর সেই অজানা মানুষটির উপর ওর রাগ ধিরে ধিরে সময়ের সাথে সাথে বেড়েই যাচ্ছে ।  
 
জয় রানীর এই কান্নার কারন বুঝতে পারছে , মেয়েটা ওর উপর রেগে আছে , ঠিক রেগে নয় , কোন কারনে কষ্টে আছে , আর সেই কষ্টের কিছুটা কারন ও নিজে , সেটা বুঝতে পারছে । কিন্তু বুঝতে পারছে না রানী ওর কোন কাজের জন্য কষ্ট পেয়েছে। জয় মনে মনে ভাবে , ‘ তোকে আমি কোনদিন কষ্ট দেবো না রানী , আজ আমি নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করলাম’ 

*****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 19-09-2025, 06:48 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)