Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 2.24 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery নিয়োগ বিয়োগ (সপ্তম পর্ব আপডেটেড)
#16
পর্ব ৩

বিমলেশের সাথে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন টেস্ট করানোর পর ডাক্তারের জবাব দিয়ে দেওয়ার খবরে গোটা মিত্র বাড়িকে যেন গ্রাস করেছিল এক নিকষ কালো ছায়া। গোটা বাড়িতে যেন নেমে এসেছিল এক শ্মশানের নিস্তব্ধতা। গোটা পরিবারের সবার জীবনের সমস্ত রঙ যেন নিমেশের মধ্যে উধাও হয়ে গিয়েছিল। বাড়ির একমাত্র বংশধরের সাথে ঘটে যাওয়া এই বিয়োগান্তক ট্র্যাজেডিতে পরিবারের সবার মুখ থেকে হাসি ও মন থেকে আনন্দ পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা তো বটেই এমনকি বাড়ির ভৃত্য ও অন্যান্য কর্মচারীরাও এই খবরে খুবই দুঃখ পেয়েছিল কারণ বিমলেশ নিজের ভদ্রতা ও ব্যবহারে তাদের প্রত্যেকের মন জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু পরিবার ও পরিবারের সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি মানুষ বিমলেশের এই পরিণতিতে কষ্ট পেলেও একজনের ওপরে তার কোন প্রভাবই লক্ষ্য করা যায়নি। উপরন্তু এই ক’দিনে মিসেস মাধুরিলতা মিত্রের হাসি ঠাট্টা, ফোনে গল্পগুজব ও সাজগোজ যেন একটু দৃষ্টিকটু ভাবেই বেড়ে গেছিল। তবুও অত্যন্ত রুচিশীল ও উদার মানসিকতার হওয়ায় মিত্র পরিবারের কেউই তাদের বৌমাকে এই নিয়ে কোনোদিনই কোন প্রশ্ন করেনি বা কোন কটু কথা শোনায়নি। নিজেদের বাড়ির বধুকে এই পরিবারের বয়োঃজ্যেষ্ঠরা প্রশ্নাতীত স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু মাধুরিলতা কি সেই স্বাধীনতার সদুপোযোগ করেছিল ?

মিত্র বাড়ির এই চরম দুঃসময়ের মধ্যে তাদের ব্যবসায়িক দিক থেকে শেষমেশ একটি সুসংবাদ এসে উপস্থিত হল কিছুদিন পর। মিত্র ইন্ডাস্ট্রিজের বিভিন্ন ব্যবসার মধ্যে একটি ছিল চায়ের ব্যবসা। উত্তরবঙ্গ, আসাম ও সিকিম রাজ্যে তারা বেশ কয়েকটি চা বাগানের মালিক ছিল। উত্তরবঙ্গ ও আসামের চা বাগানে কোন সমস্যা না থাকলেও সিকিমের কয়েকটি বাগানে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু অসন্তোষ দানা বেধেছিল। সেই অচলাবস্থা মেটানোর সমস্ত দায়িত্ব বিমলেশ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। বিমলেশ নিজের ব্রিলিয়ান্স ও মেধার জোরে শ্রমিকপক্ষের নেতাদের সামনে কিছু প্রস্তাব রাখে ও সেই প্রস্তাবগুলি তাদের বিবেচনা করে দেখে তাদের উত্তর জানাতে বলে। বিমলেশের দেওয়া প্রস্তাবগুলি এতটাই ব্রিলিয়ান্ট ছিল যে তার প্রতিটি প্রস্তাব শ্রমিকরা উৎফুল্লচিত্তে গ্রহণ করেছে ও তাই তাতে তাদের সম্মতি জানাতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের নেতা শ্রী দীপক গুরুং স্বয়ং কলকাতায় মিত্র ইন্ডাস্ট্রিজের হেড অফিসে এসেছেন বিমলেশকে তার ও শ্রমিকদের তরফ থেকে ধন্যবাদ জানাতে।

“বিমলেশ স্যার আপনি আমাদের বাগানের সমস্যা দূর করার এত বড়িয়া একটা সমাধানসুত্র বের করেছেন যে আপনাকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারলাম না।”

“না না গুরুং বাবু আপনি একটু বাড়িয়ে চাড়িয়েই আমার প্রশংসা করছেন, আমি সেরকম কিছু করিনি। সমস্যার কথা শুনে ভাবনাচিন্তা করে আমার মাথায় যা এসেছে সেটাই বলেছি। বরং আমি আমাদের বাগানের কর্মচারীদের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা আমার দেওয়া সমাধানসুত্রটি গ্রহণ করেছে।“

“এটা আপনার বড়প্পন আছে, আমরা আশে পাশের বাগানগুলোর হাল তো দেখছি। সব বন্‌ধ হয়ে গেছে। আপনার মত মালিক সত্যিই অনেক নসিব করে জন্মালে তবে পাওয়া যায়।“

“তবে বিমলেশ স্যার আমি বাগানের কর্মচারীদের তরফ থেকে আপনার কাছে আরেকটা বেয়াড়া আবদার নিয়ে এসেছি।“

“কি আবদার শুনি”

“স্যার বাগানের কর্মচারীরা চায় আপনাকে শুক্রিয়া জানাতে, আর তাই ওরা আপনাকে felicitate করতে চায়। তাই আপনি যদি আপনার কিম্তি ওয়ক্ত থেকে দুটো দিন বের করে একটু আমাদের বাগানে ঘুরে যান তো খুব ভালো হয়।“

“ঠিক আছে মিস্টার গুরুং আমাদের কর্মচারীরাও আমার এক্টেন্ডেড পরিবার তাই পরিবারের মানুষদের ভালবাসার দাক কে উপেক্ষা করার ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কোনটাই আমার নেই তাই আমি পরের সপ্তাহেই আমাদের বাগানে যাব।”

“বহুত বড়িয়া, বহুত বড়িয়া। আপনি ফির সে একবার প্রমাণ করলেন যে কেন আমরা আপনার মত মালিক পেয়ে ধন্য।“

“তো স্যার আব মুঝে ইজাজাত দিজিয়ে, I will take your leave now. আমি বাগানে ফিরে গিয়ে সবাই কে এই খুশখবরি  টা জানাই ও আপনার স্বাগত জানানোর সব তেইয়্যারি করি।”

এই কথা বলে দীপক গুরুং বিমলেশের সাথে করমর্দন করে সেখান থেকে বিদায় নিল ও বিমলেশ এটা ভেবে খুব খুশি হল যে তার সমাধানসূত্রটি তার শ্রমিক কর্মচারীদের এতটা পছন্দ হয়েছে। পরমুহূর্তেই বিমলেশ ভাবল যে এতদিন পরে তার জীবনে একটি সুখবর এসেছে সেটা সে সবার আগে তার পরমাত্মীয়া তার সহধর্মিণীর সাথে শেয়ার করবে।

বিমলেশ মনে মনে চিন্তা করল “না জানি বিগত কয়েকদিনে মেয়েটার ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে কিন্তু ও হাসিমুখে বিনা অভিযোগে সব সহ্য করেছে।”

যেমন ভাবা তেমনই কাজ, টেবিল থেকে নিজের মোবাইল ফোনটি তুলে বিমলেশ মাধুরিলতার নম্বর ডায়াল করল কিন্তু ওপর প্রান্ত থেকে কোন উত্তর এলো না। বিমলেশ ভাবলো যে মাধুরিলতা হয়তো কোন কাজে ব্যাস্ত আছে কিন্তু সে তবুও আবার মাধুরিলতার ফোনে কল কানেক্ট করলো কিন্তু আবার কোন উত্তর এল না। এরকম ভাবে ৫-৬ বার কল করার পর তার কল রিসিভ করলেন শ্রীমতী মাধুরিলতা মিত্র।

বিমলেশ হ্যালো বলে ওঠার আগেই ওপর প্রান্ত থেকে কিছুটা রাগান্বিত স্বরেই মাধুরিলতা বলে উঠল “কি হলো ? উফফ …… এতবার ফোন করছো কেন ? হাফফফ।“

 “একি মাধুরি এত হাঁপাচ্ছ কেন তুমি ?”

“আমি আমার বান্ধবী অমৃতার সাথে ……… ওফফফ ……… একটু বাইরে ঘুরতে বেড়িয়েছি ………… ওহহহহ ………… এখানে অনেক হাঁটাহাঁটি আর ওঠানামা করতে হচ্ছে তাই একটু হাঁপিয়ে উঠেছি, আসলে আমার তো এত হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস নেই ……… আআআআহ।“

“কি হল চিৎকার করলে কেন মাধু ?”

“তুমি ফোনটা রাখো তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে রাস্তায় চোখ না রেখে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলাম, যা বলার সন্ধ্যে বেলা বাড়ি এসে বোলো, আমি রাখছি এখন।” বলে মাধুরিলতা কলটা ডিসকানেক্ট করে দিল আর বিমলেশেরও আর সুসংবাদটি তার সহধর্মিণীর সাথে শেয়ার করা হলো না।

অপরপ্রান্তে মাধুরিলতা বেশ রাগের সাথেই তার মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল “লোকটা আমাকে পাঁচটা মিনিট সুখ ভোগ করতে দেবে না।” বলেই মাথা ঘুরিয়ে তার সঙ্গীকে বলে উঠল “তুমি থামলে কেন ? শুরু কর, আর কতক্ষন এভাবে ঝুঁকে দাড়িয়ে থাকব।“
 

(ক্রমশ)    
     
              
 
 
[+] 10 users Like prshma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিয়োগ বিয়োগ - একটি অল্টারনেটিভ স্টোরিলাইন (দ্বিতীয় পর্ব আপডেটেড) - by prshma - 18-09-2025, 01:38 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)