16-09-2025, 06:57 PM
নতুন দিকে মোড় :
লেখা যখন বাড়ি ছাড়ে তখন পূবের আকাশ সবে রঙ ধরছে, আশ্বিনের বাতাসে হালকা ঠান্ডা আর মিস্টি সুবাস। গা মাথা পাতলা চাদরে জড়ানো ওর.... ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য যতটা না তার চেয়ে বেশী নিজেকে লোকানোর জন্য। আটপৌড়ে করে পরা একটা ছাপা সুতির শাড়ী আর পায়ে চপ্পল....বেলা বাড়ার সাথে সাথেই গ্রামের আনাচে কানাচে ওর ব্যাভিচারের ভিডিও নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে..... একটা শুদ্ধ সমাজকে ও কিভাবে কলুষিত করছে সেই তর্ক বিতর্ক চলবে রাত গড়ানো পর্যন্ত..... ততক্ষণে লেখা ওদের নাগালের বাইরে চলে যাবে.... যেখানে সমালোচনা ওর পিছু ধাওয়া করবে না.... তারপর নিজের প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে বের করাই ওর একমাত্র কাজ,
গ্রামের আলপথে এই ভোরে দুই একজন চাষী হাতে কোদাল, খুরপি নিয়ে আসতে শুরু করে দিয়েছে.... দুপাশে ধান আর পাটক্ষেতের মধ্যে দিয়ে মাটির রাস্তা, কিছুদিন বৃষ্টির বিরামে রাস্তা এখন প্রায় শুকিয়ে এসেছে তবে ধুলোবালি নেই একেবারে.... কাদামাটিতে টান ধরে গেছে।
পথের দুপাশে শুকনো পাটের কাঠি গাদা করা। পাটখেত এখন ফাঁকা জমি, সেখানে কাটা পাটের গোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই.... কেউ কেউ শুকনো পাটকাঠিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, কয়েক বছর আগেও এইসব পাট লোকে জ্বালানীর জন্য নিয়ে যেত.... এখন ঘরে ঘরে গ্যাসের উনুন হওয়াতে অনেকেই আর বাড়িতে টেনে নেয় না, অবহেলায় পড়ে থাকে জমির পাশে..... মেয়েমানুষের জীবনও ঠিক পাটের কাঠির মত, যত্ন আত্তি করে বড় করে তারপর তার ছাল ছাড়িয়ে ছিবড়া করে ফেলে দাও...... যতদিন ওর গায়ে যৌবনের আবরন থাকবে ততদিন সবাই ওকে চাইবে, তারপর কাজ মিটে গেলেই শুকনো রস কষহীন নারীকে ছুঁড়ে ফেলে দাও... এটাই সমাজ।
পথের ধারে অনেকে পাটের আঁশ রোদে শোকাতে দিয়ছে.... লেখার এই গন্ধটা বেশ লাগে, আজ ওর এসব দিকে মন নেই.... নাহলে এই উজ্জ্বল সকালে মেঠো পথের ধারে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তবে যেতো ও।
" কেডা যায় রে..... নরেনের ব্যাটার বৌ নাকি রে? " পাশের জমি থেকে আওয়াজ আসতেই চমকে যায় লেখা। এতো ঢেকে ঢুকেও গ্রামের এই লোকগুলোকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। লোকের হাঁটা দেখেই এরা লোক চিনে যায়, লেখা আড় চোখে দেখে ওদের গ্রামের বিপুল কাকা.... এই ভোরেই জমিতে তদারকির কাজ করতে চলে এসেছে, মনে হয় ও এখনো লেখার ব্যাপারটা জানে না.... লেখা প্রত্যুত্তর না দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যায়, বিপুল একটু তাকিয়ে উত্তর না পেয়ে নিজের কাজে মন দেয়।
পূবদিকে আকশে লাল সূর্য্য উঠছে, ঘন নীল আকাশের গায়ে লাল আভা..... মেঠপথটা সাপের মত এঁকে বেঁকে চলে গেছে দূরে গাছপালার ভিতরে..... ওটাই কুসুমপুর, সুধাপিসির বাড়ি....শ্রান্ত পায়ে সকালের শিশিরভেজা মাটি মেখে যখন লেখা সুধার বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢোকে তখন সূর্য্য আলো ছড়াচ্ছে, সুধার বাড়ি উঁচু রাস্তা থেকে ঢালুপথে নেমে যেতে হয়, নানা গাছ গাছালি দিয়ে ঘেরা বাড়িটাকে একেবারে তপবনের আশ্রম বলে মনে হয়, একেবারে সুধাদের বাড়ির মত নিরিবিলি আর সুন্দর.... গাছে গাছে পাখির ডাক সকাল হওয়ার আভাস দিচ্ছে, ভারাক্রান্ত মন নিয়েও লেখা একটু হালকা বোধ করে।
একটু এগোতেই পা মাটির সাথে আটকে যায় ওর। কানে একটা নারীর গলার শব্দ.... সাধারণ শব্দ না, এই শব্দ লেখার চেনা..... কামবিহ্বল নারীর কণ্ঠনিসৃত শব্দ এটা, এই সকালে কারা নিজেদের কামে বিহ্বল হয়ে গেছে? কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে লেখা গাছপালার আড়াল থেকে সুধার বাড়ির দিকে দেখার চেষ্টা করে..... হৃৎপিন্ড থমকে আসে ওর.... দুটি সম্পূর্ণ নগ্ন নারী পুরুষ একেবারে আদিম খেলায় মত্ত, চারিদিকের কোন কিছুতে তাদের মনযোগ নেই..... সুধাকে ও চিনতে পারে, চল্লিশোর্ধ সুধার নগ্ন যৌবন ওকে বিস্মিত করে, বৈষ্ণবীর বেশেই সুধাকে আজীবন দেখে আসছে লেখা..... কিন্তু এযে খাজুরাহের নগ্ন কামনার প্রতীক..... কে বলবে এটাই সেই সুধা বৈষ্ণবী? সারা শরীর জুড়ে যৌবন উথলে পড়ছে, স্তন থেকে নিতম্ব.... কোথাও একটুও অসামঞ্জস্যের ছোঁয়া নেই..... এক তরুণ সুদর্শন পুরুষের সাথে মৈথুনের চরম তৃপ্ততা ওর চোখে মুখে ধরা পড়ছে.... স্থানুর মত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে লেখা.... কিছুই করার নেই, এই অবস্থায় ওদের সামনে যাওয়া যায় না.... অপেক্ষা করাই শ্রেয়...... অন্য সময় হলে হয়তো এই দৃশ্য লেখাকে উদ্দীপিত করতো কিন্তু গত কিছুদিনে কাম জিনিসটার প্রতি একটা তীব্র বিতৃষ্ণার জন্ম হয়েছে.... নিজের শরীরকেও নিজেরই মাঝে মাঝে ঘৃণা ক্ক্রতে ইচ্ছা করে, আজও নিজের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসলো না ওর।
সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর লেখা বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে। সুধা তখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে, লেখাকে এই সকালে ওর বাড়িতে দেখে একপ্রকার বিস্মিত হয় সুধা... সুধাময় কোন কাজে ভিতরে আছে।
" কিরে মেয়ে..... এই সকালে এতদূরে কি মনে করে? এদিকে কোথাও গেছিলি? "
" না গো পিসি..... তোমার এখানেই আসা..... " লেখা চোখ নামিয়ে বলে।
" সুধা তাড়াতাড়ি একটা আসন দাওয়ায় পেতে দেয়, " কিছু হয়েছে রে মা? তোর চোখমুখ এমন শুকনো কেনো? মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাস নি? "
দু চোখ বেয়ে অঝোরে জল নেমে আসে লেখার। নিজের কথাগুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসছে..... কিছুতেই বেরোচ্ছে না.....
" আহা কাঁদিস না মা..... আমায় বল কি হয়েছে? আমি তো তোর মায়েরই মত.... তাই না আমার কাছে ছুটে এসেছিস? " সুধা লেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আলু থালু বেশ লেখার, ব্লাউজটাও ঠিক ভাবে আটকানো নেই, খোলা হুকের মধ্যে দিয়ে ওর ভরাট স্তন দেখা যাচ্ছে..... কিন্তু সেদিকে মন নেই লেখার। ও আগে কেঁদে নিয়ে নিজেকে হালকা করতে চাইছে। সুধাও জোর করে না ওকে.... কাঁদতে দেয়, কান্না বুকের ভার কমিয়ে দেয়.... ও শুধু লেখার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়..... একটা সময় কান্নার বেগ কমে আসে.... এবার শুধুই ফোঁপাতে থাকে ও।
যতটা বিস্তারে শোনা যায় ততটা সবিস্তারে লেখার সব কথা শোনে সুধা.... মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে ওর, বিয়ের সাথে সাথে যদি ওর মেয়ে হত সে হয়তো প্রায় লেখারই বয়সি হত, তাই লেখাকে ওর নিজের মেয়েই মনে হয়....একেবারে অজাত স্বামী আর অসুররূপী শ্বশুর এই মেয়ের জীবন নরক বানিয়ে দিয়েছে.... আজ নিজের মেয়ে হলে সুধা যা করতো সেটাই লেখার ক্ষেত্রেও করবে ও। লেখাকে ওর প্রায় অধিকার আর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতেই হবে.... সে যেভাবেই হোক, সুধা এই সমাজের লোকেদের ভয় পায় না, জানে কেউই খাঁটি না.... পাপের ঘড়া সবারি গলা অবধি পূরণ সেখানে এই মেয়েটা তো শিশু.... নিজের যৌবনের কোন স্বাদই পূরোন হয় নি ওর..... ও যদি কাউকে ভালোবেসে নিজেকে সঁপে দেয় তাহলে দোষের কি আছে? ওর স্বামী যে বিয়ে করা বৌকে একবারের জন্যেও খোঁজ করে না সেই বেলায় তো সমাজ এগিয়ে আসে না.... স্বামীকে কিছু বলে না? ...... এই সমস্যা শুধু লেখার না, আর পাঁচটা শারীরিক চাহিদার মত যৌনতাও মানুষের অধিকার, সেটাকে বিয়ে নামক খাঁচাড় আড়ালে রেখে তুমি সমাজের দোহাই দিয়ে পালিয়ে যেতে পারো না....
তুই কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে নে.... আমি খাবার দিচ্ছি, আগে খা তারপর দেখা যাবে..... " সুধা লেখাকে বলে।
সদ্য কান্নারা চোখ তুলে তাকায় লেখা, " আমায় তুমি আশ্রয় দেবে গো পিসি? তাড়িয়ে দেবে না তো? "
" পাগল মেয়ে.... আমি আশ্রয় দেবার কে? যিনি তোকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন তিনিই তো আশ্রয়ের আসল মালিক.... তুই নির্ভয়ে এখানে থাক "
অবাক চোখে লেখা তাকায় সুধার মুখের দিকে, একটু আগে দেখা কামবিহ্বল যৌনতার প্রতীক ছিলো সুধা আর এখন একেবারে মাতৃরুপী দেবীমা মনে হচ্ছে....।
একটু দূরে দরজার আড়াল থেকে লেখার সব কথা শুনছিলো সুধাময়..... ওরও চোখ জলে ভিজে উঠেছে,
বিকাশের দেওয়া পানটা আয়েশ করে চেবাতে চেবাতে মুখে পানের পিক নিয়েই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওসি গদাধর বল.....
" তাহলে আপনি বলছেন বৌটা শ্বশুরকে মেরে পগার পাড় হয়েছে তাই তো? "
বিকাশ ভ্রু কোঁচকায়, " কেনো?.... আপনার সন্দেহ আছে নাকি? ..... শ্বশুরের গলাকাটা বডি বিছানায় পড়ে, এদিকে ব্যাটার বৌ লাপাতা..... দুয়ে দুয়ে চার.... " বিকাশ নিজেই কেস সলভ করে দেয়।
গদাধর বিকাশের মুখের দিকে একটু তাকায়, " অতো সোজা না দাদা.... মোটিভটা কি সেটা তো লাগবে? আমি মানছি যে বৌটাই সন্দেহের তালিকায় প্রথম, তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার লজ্জাতেও তো সে পালিয়ে যেতে পারে..... আর কে ভাইরাল করলো সেটাও তো রহস্যময় "
" আরে ধুর মশাই..... শ্বশুরই করেছে বৌটার ভিডিও ভাইরাল......ওর ফোনেই তোলা ভিডিওটা... সেই রাগে শ্বশুরকে মেরেছে.... " বিকাশ অধৈর্য্য হয়।
" কিন্তু শ্বসবুরের তো স্মার্ট ফোন নেই..... সবাইকে পাঠালো কোথা থেকে? আদৌ ওটা নরেন করেছে না অন্য কেউ সেটা তো তদন্ত করেই জানা যাবে মশাই... আর ওটা যে ওর শ্বশুরের ফোনেই তোলা সেটা আপনি জানলেন কি করে? "
" আপনি শুধু শুধু সহজ কেসটাকে জটিল বানাচ্ছেন....আবার আমায় সন্দেহ করছেন? " বিকাশ সামন্ত বলে।
" না না দাদা..... যাকিছু লিখে দিলেই তো হয় না দিনকাল খারাপ..... পরে উপর মহলের চাপ তো আর আপনি সামলাবেন না..... দেখি তদন্ত করে " গদাধর পিচ ক্ল্রে পানের পিক ফেলে।
ক্ষেপে যায় এবার বিকাশ সামন্ত, দাঁত চেপে বলে, " আমার এলাকায় আমি যেটা বলব সেটাই চার্জশীটে বসবে..... ওসব তদন্ত অন্য কোথাও চোদাবেন..... পার্টির উপরমহলে বলে একেবারে সুন্দরবনে বাঘের ডেরায় পাঠিয়ে দেবো "
গদাধরের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা যায় না.... ও উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে পা বাড়ায়, " শুনুন এই গদাধর বল নিজের বাক্স প্যাটরা প্যাকিং করেই রাখে..... এখন তো এটাই তদন্তের মুখ্য বিষয় যে আপনার কেসটা নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেনো? "
আর দাঁড়ায় না, কন্সটেবলের বাইকের পিছনে উঠে বলে, " চল এবার বডিটা পোষ্ট মর্টমের ব্যাবস্থা ক্ল্রতে হবে....। "
আজ সারাদিন পাড়ার মোড়ে মোড়ে ঘরে ঘরে লেখার ভিডিও নিয়ে চর্চা চলে..... কিন্তু কেউ লেখার বাড়ি যেতে সাহস করে নি, লেখা বা নরেনকেও কেউ বেরোতে দেখে নি বাড়ি থেকে.... দুপুরের পর বিপুল জমি থেকে বাড়ি ফিরে লেখার ঘটনা জানতে পারে, তার কাছ থেকেই জানা যায় ভোর বেলা লেখার মত কেউ মাঠের পথ দিয়ে চলে যেতে। একথা শোনার পরেই গ্রামের উৎসাহী ছেলে ছোকরা নরেনের বাড়িতে হাজির হয়..... খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই হাড় হিম দৃশ্য চোখে পড়ে তাদের, বিছানার নরেনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে.... দুই চোখ বিস্ফারিত... মুখ হাঁ করা.... গলায় কোপ দিয়েছে, মরার আগে নিস্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিলো নরেন কিন্তু শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় মৃত্যু হয় সাথে সাথেই....
সারা বাড়িতে কোথাও লেখার চিহ্ন নেই। সবাই বুঝে যায় যে লেখা শ্বশুরকে মেরে নিজে পালিয়েছে।
নীরব তরঙ্গহীন গ্রামীন জীবনে একি দিনে দুবার ঢেউ ওঠে.... ভাইরাল ভিডিওর কথা ভুলে গিয়ে হট টপিকের জায়গা নেয় নরেনের হত্যা....কিন্তু যত সহজে যৌনতা নিয়ে আলোচনা মতামত রাখা যায় এক্ষেত্রে সেটা করা যায় না..... সবার মনে হাজার কথা থাকলেও সেটা বের করার সাহস কারো নেই।
সারাদিন যেসব বয়োজ্যোষ্ঠ মাতব্বরেরা লেখার চরিত্র নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষনে উঠেপড়ে লেগেছিলো তারাই হত্যার খবরে একেবারে কপাট বন্ধ করে বসে আছে। মোড়ের মাথায় ভিড়ের বদলে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। প্রত্যেকের মোবাইলেই লেখার ভিডীও..... সবাই সেটা মুছে ফেলে এই ঘটনার সাথে নিজের সম্পর্ককে অস্বীকার করতে ব্যাস্ত.... কে জানে পুলিশের কথা তো আর বলা যায় না.... কোথা থেকে জড়িয়ে দেয়।
রক্তমাখা ডেডবডি ভ্যানে তুলে দিয়ে একটা সিগারেট ধরায় গদাধর। পাশে কন্সটেবল আশারুল লাইটার এগিয়ে দেয়, কিছু শোনার অপেক্ষায় ও গদাধরের দিকে তাকায়.... গদাধর সিগারেটে লম্বা টান মেরে ধোঁয়া ছেড়ে আশারুলের দিকে ফেরে...
" বুঝলে আশারুল..... লেখা প্রথম সাস্পেক্ট বটে...... কিন্তু খুন ও করে নি.... "
আশারুল অবাক চোখে তাকায়। সাহেব লেখাকে কেনো ছেড়ে দিতে চাইছে? ওর আচরনই তো বলে দিচ্ছে যে লেখা খুনী.....
" কিন্তু স্যার, এমন মনে করার কারন? "
আরো একবার ধোঁয়া ছাড়েন গদাধর, " আসলে যে খুন করেছে সে আর যাই হোক আনাড়ী না.... ঠান্ডা মাথায় একেবারে গলাসোজা এক কোপে শ্বাসনালী কেটে দিয়েছে..... লেখার মত মেয়ে এটা করলে এতো পরিষ্কার ভাবে হতো না, হয়তো ঠিক জায়গায় কোপটাও পড়তো না.... কারন ও পেশাদার অপরাধী না.... ওর হাত কাঁপতো, অথবা দু তিনবার মারতো..... "
আশারুল কিছু না বলে চেয়ে থাকে, ওর ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এতো কিছু জট খুলবে না।
" বিকাশ খুনের দায় লেখার উপর চাপাতে চাইছে মানে লেখার উপর ওর কোন রাগ আছে..... হয়তোবা ওর লোকেই খুনটা করেছে.... লেখা সেটা দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছে। " গদাধর যুক্তি সাজায়।
আশারুল জানে এই এলাকায় বিকাশের উপর কথা বলার লোক কেউ নেই। ও খুন করলেও পার্টি ঠিক বাঁচিয়ে নেবে, আর তারপর ওর রাগ পড়বে পুলিশের উপর। তাই ফালতু স্যার এসব না করে বিকাশের কথামত বৌটাকে জেলে পুরে দিয়ে শেষ করে দিলেই পারে।
পোড়া সিগারেট ছুঁড়ে মেরে গদাধর আশারুলকে বলে, " আচ্ছা চলো..... মেয়েটাকে আগে খুঁজে পাই তারপর দেখা যাবে। "
আশারুলের বাইক থানার দিকে ছুটে যায়।
সুধার শরীর কাঁপছে। একি সর্বনেশে কাণ্ড ঘটে গেলো? লেখা কি ওকে মিথ্যা বললো? এতোবড় কথা চেপে যাওয়ার মেয়ে তো লেখা না.... আর ওর আচরনেও কোথাও মনে হয় নি যে ও খুন করে এসেছে? তবে? সুধার মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যায়। অনেকদিন পর আজ ও ভিক্ষায় বেরিয়েছিলো দুপুরবেলা। উদ্দেশ্য লেখার গ্রামে কি চলছে সেই খবর নেওয়া। কিন্তু সেখানে পৌছে খবর পেলো যে নরেনকে কেউ মেরে রেখে গেছে.... আর সেটা যে লেখা সে বিষয়ে গ্রামের কারো মনে সন্দেহ নেই।
সুধা বাড়ি ঢুকে দেখে লেখা আর সুধাময় বাইরে বসে গল্প করছে। এখানে আসার পর ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়েছে লেখা। সুধাময়ও ওকে নিজের বোনের মত করে বোঝাচ্ছে.... ওর সাথে নানা বিষয়ে গল্প করছে। এখন যেমন সুধাময় আর লেখা মাটির দাওয়ায় বসে বেশ জোরে জোরেই হাসাহাসি করছে। সুধাকে দেখে ওরা কথা বলা বন্ধ করে.... আশা সুধাও যোগ দেবে ওদের এই আড্ডায়।
সুধা লেখার কাঁধে টান দিয়ে বলে, " ঘরে আয় মেয়ে, তোর সাথে কথা আছে " বলে নিজেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
সুধাময় আর লেখা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে পরস্পরের দিকে তাকায়। লেখা উঠে ঘরে আসে। সুধা চৌকির উপরে বসে ছিলো, ওর গা ঘেমে একাকার, নিশ্বাস দ্রুত পড়ছে....
লেখা ঘরে আসতেই ওকে চেপে ধরে, " আমায় সত্যি কথা বল মেয়ে, আমি কাউকে বলবো না..... নরেনকে তুই কি করেছিস? "
আচমকা এই প্রশ্নে লেখা হতবাক। সে তো নরেনকে কিছুই করে নি। একথা আসছে কেনো?
" আমি তো তাকে কিছুই করি নি পিসি..... বিশ্বাস কর "লেখা বিস্ময়এর সাথেই জবাব দেয়। এই কথা কেনো আসছে ও জানে না।
লেখার সারল্য ভরা জবাবে সুধা নিশ্চিৎ হয় যে এটা লেখার কাজ না। কিন্তু সারা গ্রাম আর বিকাশ সামন্ত তো ওকে খুনী বানিয়ে বসে আছে..... এখন না চাইতেও ওকে জেলের ঘানি টানতে হবে.... কেউ বিশ্বাস করবে না ওর কথা। সুধার বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
লেখা সুধার এই আচরনের হতবাক হয়ে যায়। ও সুধাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, " বল না পিসি.... কি হয়েছে? "
চেপে রাখার মানে হয় না। লেখাকে সব জানিয়ে এখান থেকে গোপন কোথাও পাঠাতে হবে। ও বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে লেখার হাত চেপে ধরে, " শোন আমার কথাতে ভেঙে পড়বি না.... শক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখন "
" আহহ.... তুমি বলই না কি হয়েছে? " লেখা অধৈর্য্য হয়ে ওঠে।
নরেনকে কেউ গলা কেটে খুন করেছে আর সবাই মনে করছে খুনী তুই " সুধা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ ক্ক্রে দেয়। লেখার মুখের অভিব্যাক্তি ও দেখতে চায় না।
লেখার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও ও এতো বিস্মিত হতো না। হতবাক.... বাজ পড়া ব্যাক্তির মত স্থির ভাবে বসে থাকে ও। একি করে সম্ভব? ও ভেবেছিলো হাঁসুয়ার এককোপে নরেনের গলা নামিয়ে দিতে কিন্তু সেটা শুধু ভাবনাই ছিলো। সেটাকে বাস্তব রূপ কে দিলো?
সুধা চোখ খুলে লেখাকে বুকে টেনে নেয়, শোন আজ রাতেই তোকে এমন কোথাও চলে যেতে হবে যাতে পুলিশ নাগাল না পায়। আসল খুনী ধরা না পড়া অবধি তুই এখানে আসবি না।
লেখা স্থির ভোখে তাকিয়ে থাকে। কোথায় যাবে? কি করবে? কিছুই জানে না ও।
" না পিসি.... এভাবে আর দরকার নেই.....বাকি জীবন জেলের ভিতরেই কাটুক আমার। " লেখা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলে।
" পাগলের মত কথা বলিস না...... তোর জন্য আমি নুটুর খোঁজ নিয়ে ফিরেছি, তোদের দুজনকে বাকি জীবন কাটাতে হবে একসাথে..... "
দুচোখ ভেঙে জল নেমে আসে লেখার, " আমার আর সেই সুখ কপালে নেই পিসি....... আমি জানি না ও কোথায় আছে, কিন্তু ওকে আমার কাছে আসতে বারণ করো, না হলে আমার সাথে সাথে ওকেও বাকি জীবন অন্ধকারে কাটাতে হবে। "
সুধাময় এগিয়ে এসে লেখার মাথায় হাত দেয়, " শোন, আমাকে তুমি দাদা বলে ডেকেছ তাই আমার উপরে বিশ্বাস রাখো....... তোমাকে নিরাপদে রাখাটা আমার দায়িত্ব..... কেউ তোমার কিচ্ছু ক্ল্রতে পারবে না, "
সুধাময়ের আত্মবিশ্বাসী গলায় লেখা একটু হলেও সান্তনা পায়। ও কিছু না বলে সুধার গায়ের উপর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
লেখা যখন বাড়ি ছাড়ে তখন পূবের আকাশ সবে রঙ ধরছে, আশ্বিনের বাতাসে হালকা ঠান্ডা আর মিস্টি সুবাস। গা মাথা পাতলা চাদরে জড়ানো ওর.... ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য যতটা না তার চেয়ে বেশী নিজেকে লোকানোর জন্য। আটপৌড়ে করে পরা একটা ছাপা সুতির শাড়ী আর পায়ে চপ্পল....বেলা বাড়ার সাথে সাথেই গ্রামের আনাচে কানাচে ওর ব্যাভিচারের ভিডিও নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে..... একটা শুদ্ধ সমাজকে ও কিভাবে কলুষিত করছে সেই তর্ক বিতর্ক চলবে রাত গড়ানো পর্যন্ত..... ততক্ষণে লেখা ওদের নাগালের বাইরে চলে যাবে.... যেখানে সমালোচনা ওর পিছু ধাওয়া করবে না.... তারপর নিজের প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে বের করাই ওর একমাত্র কাজ,
গ্রামের আলপথে এই ভোরে দুই একজন চাষী হাতে কোদাল, খুরপি নিয়ে আসতে শুরু করে দিয়েছে.... দুপাশে ধান আর পাটক্ষেতের মধ্যে দিয়ে মাটির রাস্তা, কিছুদিন বৃষ্টির বিরামে রাস্তা এখন প্রায় শুকিয়ে এসেছে তবে ধুলোবালি নেই একেবারে.... কাদামাটিতে টান ধরে গেছে।
পথের দুপাশে শুকনো পাটের কাঠি গাদা করা। পাটখেত এখন ফাঁকা জমি, সেখানে কাটা পাটের গোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই.... কেউ কেউ শুকনো পাটকাঠিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, কয়েক বছর আগেও এইসব পাট লোকে জ্বালানীর জন্য নিয়ে যেত.... এখন ঘরে ঘরে গ্যাসের উনুন হওয়াতে অনেকেই আর বাড়িতে টেনে নেয় না, অবহেলায় পড়ে থাকে জমির পাশে..... মেয়েমানুষের জীবনও ঠিক পাটের কাঠির মত, যত্ন আত্তি করে বড় করে তারপর তার ছাল ছাড়িয়ে ছিবড়া করে ফেলে দাও...... যতদিন ওর গায়ে যৌবনের আবরন থাকবে ততদিন সবাই ওকে চাইবে, তারপর কাজ মিটে গেলেই শুকনো রস কষহীন নারীকে ছুঁড়ে ফেলে দাও... এটাই সমাজ।
পথের ধারে অনেকে পাটের আঁশ রোদে শোকাতে দিয়ছে.... লেখার এই গন্ধটা বেশ লাগে, আজ ওর এসব দিকে মন নেই.... নাহলে এই উজ্জ্বল সকালে মেঠো পথের ধারে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তবে যেতো ও।
" কেডা যায় রে..... নরেনের ব্যাটার বৌ নাকি রে? " পাশের জমি থেকে আওয়াজ আসতেই চমকে যায় লেখা। এতো ঢেকে ঢুকেও গ্রামের এই লোকগুলোকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। লোকের হাঁটা দেখেই এরা লোক চিনে যায়, লেখা আড় চোখে দেখে ওদের গ্রামের বিপুল কাকা.... এই ভোরেই জমিতে তদারকির কাজ করতে চলে এসেছে, মনে হয় ও এখনো লেখার ব্যাপারটা জানে না.... লেখা প্রত্যুত্তর না দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যায়, বিপুল একটু তাকিয়ে উত্তর না পেয়ে নিজের কাজে মন দেয়।
পূবদিকে আকশে লাল সূর্য্য উঠছে, ঘন নীল আকাশের গায়ে লাল আভা..... মেঠপথটা সাপের মত এঁকে বেঁকে চলে গেছে দূরে গাছপালার ভিতরে..... ওটাই কুসুমপুর, সুধাপিসির বাড়ি....শ্রান্ত পায়ে সকালের শিশিরভেজা মাটি মেখে যখন লেখা সুধার বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢোকে তখন সূর্য্য আলো ছড়াচ্ছে, সুধার বাড়ি উঁচু রাস্তা থেকে ঢালুপথে নেমে যেতে হয়, নানা গাছ গাছালি দিয়ে ঘেরা বাড়িটাকে একেবারে তপবনের আশ্রম বলে মনে হয়, একেবারে সুধাদের বাড়ির মত নিরিবিলি আর সুন্দর.... গাছে গাছে পাখির ডাক সকাল হওয়ার আভাস দিচ্ছে, ভারাক্রান্ত মন নিয়েও লেখা একটু হালকা বোধ করে।
একটু এগোতেই পা মাটির সাথে আটকে যায় ওর। কানে একটা নারীর গলার শব্দ.... সাধারণ শব্দ না, এই শব্দ লেখার চেনা..... কামবিহ্বল নারীর কণ্ঠনিসৃত শব্দ এটা, এই সকালে কারা নিজেদের কামে বিহ্বল হয়ে গেছে? কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে লেখা গাছপালার আড়াল থেকে সুধার বাড়ির দিকে দেখার চেষ্টা করে..... হৃৎপিন্ড থমকে আসে ওর.... দুটি সম্পূর্ণ নগ্ন নারী পুরুষ একেবারে আদিম খেলায় মত্ত, চারিদিকের কোন কিছুতে তাদের মনযোগ নেই..... সুধাকে ও চিনতে পারে, চল্লিশোর্ধ সুধার নগ্ন যৌবন ওকে বিস্মিত করে, বৈষ্ণবীর বেশেই সুধাকে আজীবন দেখে আসছে লেখা..... কিন্তু এযে খাজুরাহের নগ্ন কামনার প্রতীক..... কে বলবে এটাই সেই সুধা বৈষ্ণবী? সারা শরীর জুড়ে যৌবন উথলে পড়ছে, স্তন থেকে নিতম্ব.... কোথাও একটুও অসামঞ্জস্যের ছোঁয়া নেই..... এক তরুণ সুদর্শন পুরুষের সাথে মৈথুনের চরম তৃপ্ততা ওর চোখে মুখে ধরা পড়ছে.... স্থানুর মত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে লেখা.... কিছুই করার নেই, এই অবস্থায় ওদের সামনে যাওয়া যায় না.... অপেক্ষা করাই শ্রেয়...... অন্য সময় হলে হয়তো এই দৃশ্য লেখাকে উদ্দীপিত করতো কিন্তু গত কিছুদিনে কাম জিনিসটার প্রতি একটা তীব্র বিতৃষ্ণার জন্ম হয়েছে.... নিজের শরীরকেও নিজেরই মাঝে মাঝে ঘৃণা ক্ক্রতে ইচ্ছা করে, আজও নিজের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসলো না ওর।
সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর লেখা বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে। সুধা তখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে, লেখাকে এই সকালে ওর বাড়িতে দেখে একপ্রকার বিস্মিত হয় সুধা... সুধাময় কোন কাজে ভিতরে আছে।
" কিরে মেয়ে..... এই সকালে এতদূরে কি মনে করে? এদিকে কোথাও গেছিলি? "
" না গো পিসি..... তোমার এখানেই আসা..... " লেখা চোখ নামিয়ে বলে।
" সুধা তাড়াতাড়ি একটা আসন দাওয়ায় পেতে দেয়, " কিছু হয়েছে রে মা? তোর চোখমুখ এমন শুকনো কেনো? মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাস নি? "
দু চোখ বেয়ে অঝোরে জল নেমে আসে লেখার। নিজের কথাগুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসছে..... কিছুতেই বেরোচ্ছে না.....
" আহা কাঁদিস না মা..... আমায় বল কি হয়েছে? আমি তো তোর মায়েরই মত.... তাই না আমার কাছে ছুটে এসেছিস? " সুধা লেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আলু থালু বেশ লেখার, ব্লাউজটাও ঠিক ভাবে আটকানো নেই, খোলা হুকের মধ্যে দিয়ে ওর ভরাট স্তন দেখা যাচ্ছে..... কিন্তু সেদিকে মন নেই লেখার। ও আগে কেঁদে নিয়ে নিজেকে হালকা করতে চাইছে। সুধাও জোর করে না ওকে.... কাঁদতে দেয়, কান্না বুকের ভার কমিয়ে দেয়.... ও শুধু লেখার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়..... একটা সময় কান্নার বেগ কমে আসে.... এবার শুধুই ফোঁপাতে থাকে ও।
যতটা বিস্তারে শোনা যায় ততটা সবিস্তারে লেখার সব কথা শোনে সুধা.... মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে ওর, বিয়ের সাথে সাথে যদি ওর মেয়ে হত সে হয়তো প্রায় লেখারই বয়সি হত, তাই লেখাকে ওর নিজের মেয়েই মনে হয়....একেবারে অজাত স্বামী আর অসুররূপী শ্বশুর এই মেয়ের জীবন নরক বানিয়ে দিয়েছে.... আজ নিজের মেয়ে হলে সুধা যা করতো সেটাই লেখার ক্ষেত্রেও করবে ও। লেখাকে ওর প্রায় অধিকার আর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতেই হবে.... সে যেভাবেই হোক, সুধা এই সমাজের লোকেদের ভয় পায় না, জানে কেউই খাঁটি না.... পাপের ঘড়া সবারি গলা অবধি পূরণ সেখানে এই মেয়েটা তো শিশু.... নিজের যৌবনের কোন স্বাদই পূরোন হয় নি ওর..... ও যদি কাউকে ভালোবেসে নিজেকে সঁপে দেয় তাহলে দোষের কি আছে? ওর স্বামী যে বিয়ে করা বৌকে একবারের জন্যেও খোঁজ করে না সেই বেলায় তো সমাজ এগিয়ে আসে না.... স্বামীকে কিছু বলে না? ...... এই সমস্যা শুধু লেখার না, আর পাঁচটা শারীরিক চাহিদার মত যৌনতাও মানুষের অধিকার, সেটাকে বিয়ে নামক খাঁচাড় আড়ালে রেখে তুমি সমাজের দোহাই দিয়ে পালিয়ে যেতে পারো না....
তুই কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে নে.... আমি খাবার দিচ্ছি, আগে খা তারপর দেখা যাবে..... " সুধা লেখাকে বলে।
সদ্য কান্নারা চোখ তুলে তাকায় লেখা, " আমায় তুমি আশ্রয় দেবে গো পিসি? তাড়িয়ে দেবে না তো? "
" পাগল মেয়ে.... আমি আশ্রয় দেবার কে? যিনি তোকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন তিনিই তো আশ্রয়ের আসল মালিক.... তুই নির্ভয়ে এখানে থাক "
অবাক চোখে লেখা তাকায় সুধার মুখের দিকে, একটু আগে দেখা কামবিহ্বল যৌনতার প্রতীক ছিলো সুধা আর এখন একেবারে মাতৃরুপী দেবীমা মনে হচ্ছে....।
একটু দূরে দরজার আড়াল থেকে লেখার সব কথা শুনছিলো সুধাময়..... ওরও চোখ জলে ভিজে উঠেছে,
বিকাশের দেওয়া পানটা আয়েশ করে চেবাতে চেবাতে মুখে পানের পিক নিয়েই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ওসি গদাধর বল.....
" তাহলে আপনি বলছেন বৌটা শ্বশুরকে মেরে পগার পাড় হয়েছে তাই তো? "
বিকাশ ভ্রু কোঁচকায়, " কেনো?.... আপনার সন্দেহ আছে নাকি? ..... শ্বশুরের গলাকাটা বডি বিছানায় পড়ে, এদিকে ব্যাটার বৌ লাপাতা..... দুয়ে দুয়ে চার.... " বিকাশ নিজেই কেস সলভ করে দেয়।
গদাধর বিকাশের মুখের দিকে একটু তাকায়, " অতো সোজা না দাদা.... মোটিভটা কি সেটা তো লাগবে? আমি মানছি যে বৌটাই সন্দেহের তালিকায় প্রথম, তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার লজ্জাতেও তো সে পালিয়ে যেতে পারে..... আর কে ভাইরাল করলো সেটাও তো রহস্যময় "
" আরে ধুর মশাই..... শ্বশুরই করেছে বৌটার ভিডিও ভাইরাল......ওর ফোনেই তোলা ভিডিওটা... সেই রাগে শ্বশুরকে মেরেছে.... " বিকাশ অধৈর্য্য হয়।
" কিন্তু শ্বসবুরের তো স্মার্ট ফোন নেই..... সবাইকে পাঠালো কোথা থেকে? আদৌ ওটা নরেন করেছে না অন্য কেউ সেটা তো তদন্ত করেই জানা যাবে মশাই... আর ওটা যে ওর শ্বশুরের ফোনেই তোলা সেটা আপনি জানলেন কি করে? "
" আপনি শুধু শুধু সহজ কেসটাকে জটিল বানাচ্ছেন....আবার আমায় সন্দেহ করছেন? " বিকাশ সামন্ত বলে।
" না না দাদা..... যাকিছু লিখে দিলেই তো হয় না দিনকাল খারাপ..... পরে উপর মহলের চাপ তো আর আপনি সামলাবেন না..... দেখি তদন্ত করে " গদাধর পিচ ক্ল্রে পানের পিক ফেলে।
ক্ষেপে যায় এবার বিকাশ সামন্ত, দাঁত চেপে বলে, " আমার এলাকায় আমি যেটা বলব সেটাই চার্জশীটে বসবে..... ওসব তদন্ত অন্য কোথাও চোদাবেন..... পার্টির উপরমহলে বলে একেবারে সুন্দরবনে বাঘের ডেরায় পাঠিয়ে দেবো "
গদাধরের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা যায় না.... ও উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে পা বাড়ায়, " শুনুন এই গদাধর বল নিজের বাক্স প্যাটরা প্যাকিং করেই রাখে..... এখন তো এটাই তদন্তের মুখ্য বিষয় যে আপনার কেসটা নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেনো? "
আর দাঁড়ায় না, কন্সটেবলের বাইকের পিছনে উঠে বলে, " চল এবার বডিটা পোষ্ট মর্টমের ব্যাবস্থা ক্ল্রতে হবে....। "
আজ সারাদিন পাড়ার মোড়ে মোড়ে ঘরে ঘরে লেখার ভিডিও নিয়ে চর্চা চলে..... কিন্তু কেউ লেখার বাড়ি যেতে সাহস করে নি, লেখা বা নরেনকেও কেউ বেরোতে দেখে নি বাড়ি থেকে.... দুপুরের পর বিপুল জমি থেকে বাড়ি ফিরে লেখার ঘটনা জানতে পারে, তার কাছ থেকেই জানা যায় ভোর বেলা লেখার মত কেউ মাঠের পথ দিয়ে চলে যেতে। একথা শোনার পরেই গ্রামের উৎসাহী ছেলে ছোকরা নরেনের বাড়িতে হাজির হয়..... খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই হাড় হিম দৃশ্য চোখে পড়ে তাদের, বিছানার নরেনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে.... দুই চোখ বিস্ফারিত... মুখ হাঁ করা.... গলায় কোপ দিয়েছে, মরার আগে নিস্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিলো নরেন কিন্তু শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় মৃত্যু হয় সাথে সাথেই....
সারা বাড়িতে কোথাও লেখার চিহ্ন নেই। সবাই বুঝে যায় যে লেখা শ্বশুরকে মেরে নিজে পালিয়েছে।
নীরব তরঙ্গহীন গ্রামীন জীবনে একি দিনে দুবার ঢেউ ওঠে.... ভাইরাল ভিডিওর কথা ভুলে গিয়ে হট টপিকের জায়গা নেয় নরেনের হত্যা....কিন্তু যত সহজে যৌনতা নিয়ে আলোচনা মতামত রাখা যায় এক্ষেত্রে সেটা করা যায় না..... সবার মনে হাজার কথা থাকলেও সেটা বের করার সাহস কারো নেই।
সারাদিন যেসব বয়োজ্যোষ্ঠ মাতব্বরেরা লেখার চরিত্র নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষনে উঠেপড়ে লেগেছিলো তারাই হত্যার খবরে একেবারে কপাট বন্ধ করে বসে আছে। মোড়ের মাথায় ভিড়ের বদলে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। প্রত্যেকের মোবাইলেই লেখার ভিডীও..... সবাই সেটা মুছে ফেলে এই ঘটনার সাথে নিজের সম্পর্ককে অস্বীকার করতে ব্যাস্ত.... কে জানে পুলিশের কথা তো আর বলা যায় না.... কোথা থেকে জড়িয়ে দেয়।
রক্তমাখা ডেডবডি ভ্যানে তুলে দিয়ে একটা সিগারেট ধরায় গদাধর। পাশে কন্সটেবল আশারুল লাইটার এগিয়ে দেয়, কিছু শোনার অপেক্ষায় ও গদাধরের দিকে তাকায়.... গদাধর সিগারেটে লম্বা টান মেরে ধোঁয়া ছেড়ে আশারুলের দিকে ফেরে...
" বুঝলে আশারুল..... লেখা প্রথম সাস্পেক্ট বটে...... কিন্তু খুন ও করে নি.... "
আশারুল অবাক চোখে তাকায়। সাহেব লেখাকে কেনো ছেড়ে দিতে চাইছে? ওর আচরনই তো বলে দিচ্ছে যে লেখা খুনী.....
" কিন্তু স্যার, এমন মনে করার কারন? "
আরো একবার ধোঁয়া ছাড়েন গদাধর, " আসলে যে খুন করেছে সে আর যাই হোক আনাড়ী না.... ঠান্ডা মাথায় একেবারে গলাসোজা এক কোপে শ্বাসনালী কেটে দিয়েছে..... লেখার মত মেয়ে এটা করলে এতো পরিষ্কার ভাবে হতো না, হয়তো ঠিক জায়গায় কোপটাও পড়তো না.... কারন ও পেশাদার অপরাধী না.... ওর হাত কাঁপতো, অথবা দু তিনবার মারতো..... "
আশারুল কিছু না বলে চেয়ে থাকে, ওর ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এতো কিছু জট খুলবে না।
" বিকাশ খুনের দায় লেখার উপর চাপাতে চাইছে মানে লেখার উপর ওর কোন রাগ আছে..... হয়তোবা ওর লোকেই খুনটা করেছে.... লেখা সেটা দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছে। " গদাধর যুক্তি সাজায়।
আশারুল জানে এই এলাকায় বিকাশের উপর কথা বলার লোক কেউ নেই। ও খুন করলেও পার্টি ঠিক বাঁচিয়ে নেবে, আর তারপর ওর রাগ পড়বে পুলিশের উপর। তাই ফালতু স্যার এসব না করে বিকাশের কথামত বৌটাকে জেলে পুরে দিয়ে শেষ করে দিলেই পারে।
পোড়া সিগারেট ছুঁড়ে মেরে গদাধর আশারুলকে বলে, " আচ্ছা চলো..... মেয়েটাকে আগে খুঁজে পাই তারপর দেখা যাবে। "
আশারুলের বাইক থানার দিকে ছুটে যায়।
সুধার শরীর কাঁপছে। একি সর্বনেশে কাণ্ড ঘটে গেলো? লেখা কি ওকে মিথ্যা বললো? এতোবড় কথা চেপে যাওয়ার মেয়ে তো লেখা না.... আর ওর আচরনেও কোথাও মনে হয় নি যে ও খুন করে এসেছে? তবে? সুধার মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যায়। অনেকদিন পর আজ ও ভিক্ষায় বেরিয়েছিলো দুপুরবেলা। উদ্দেশ্য লেখার গ্রামে কি চলছে সেই খবর নেওয়া। কিন্তু সেখানে পৌছে খবর পেলো যে নরেনকে কেউ মেরে রেখে গেছে.... আর সেটা যে লেখা সে বিষয়ে গ্রামের কারো মনে সন্দেহ নেই।
সুধা বাড়ি ঢুকে দেখে লেখা আর সুধাময় বাইরে বসে গল্প করছে। এখানে আসার পর ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়েছে লেখা। সুধাময়ও ওকে নিজের বোনের মত করে বোঝাচ্ছে.... ওর সাথে নানা বিষয়ে গল্প করছে। এখন যেমন সুধাময় আর লেখা মাটির দাওয়ায় বসে বেশ জোরে জোরেই হাসাহাসি করছে। সুধাকে দেখে ওরা কথা বলা বন্ধ করে.... আশা সুধাও যোগ দেবে ওদের এই আড্ডায়।
সুধা লেখার কাঁধে টান দিয়ে বলে, " ঘরে আয় মেয়ে, তোর সাথে কথা আছে " বলে নিজেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
সুধাময় আর লেখা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে পরস্পরের দিকে তাকায়। লেখা উঠে ঘরে আসে। সুধা চৌকির উপরে বসে ছিলো, ওর গা ঘেমে একাকার, নিশ্বাস দ্রুত পড়ছে....
লেখা ঘরে আসতেই ওকে চেপে ধরে, " আমায় সত্যি কথা বল মেয়ে, আমি কাউকে বলবো না..... নরেনকে তুই কি করেছিস? "
আচমকা এই প্রশ্নে লেখা হতবাক। সে তো নরেনকে কিছুই করে নি। একথা আসছে কেনো?
" আমি তো তাকে কিছুই করি নি পিসি..... বিশ্বাস কর "লেখা বিস্ময়এর সাথেই জবাব দেয়। এই কথা কেনো আসছে ও জানে না।
লেখার সারল্য ভরা জবাবে সুধা নিশ্চিৎ হয় যে এটা লেখার কাজ না। কিন্তু সারা গ্রাম আর বিকাশ সামন্ত তো ওকে খুনী বানিয়ে বসে আছে..... এখন না চাইতেও ওকে জেলের ঘানি টানতে হবে.... কেউ বিশ্বাস করবে না ওর কথা। সুধার বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
লেখা সুধার এই আচরনের হতবাক হয়ে যায়। ও সুধাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, " বল না পিসি.... কি হয়েছে? "
চেপে রাখার মানে হয় না। লেখাকে সব জানিয়ে এখান থেকে গোপন কোথাও পাঠাতে হবে। ও বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে লেখার হাত চেপে ধরে, " শোন আমার কথাতে ভেঙে পড়বি না.... শক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখন "
" আহহ.... তুমি বলই না কি হয়েছে? " লেখা অধৈর্য্য হয়ে ওঠে।
নরেনকে কেউ গলা কেটে খুন করেছে আর সবাই মনে করছে খুনী তুই " সুধা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ ক্ক্রে দেয়। লেখার মুখের অভিব্যাক্তি ও দেখতে চায় না।
লেখার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও ও এতো বিস্মিত হতো না। হতবাক.... বাজ পড়া ব্যাক্তির মত স্থির ভাবে বসে থাকে ও। একি করে সম্ভব? ও ভেবেছিলো হাঁসুয়ার এককোপে নরেনের গলা নামিয়ে দিতে কিন্তু সেটা শুধু ভাবনাই ছিলো। সেটাকে বাস্তব রূপ কে দিলো?
সুধা চোখ খুলে লেখাকে বুকে টেনে নেয়, শোন আজ রাতেই তোকে এমন কোথাও চলে যেতে হবে যাতে পুলিশ নাগাল না পায়। আসল খুনী ধরা না পড়া অবধি তুই এখানে আসবি না।
লেখা স্থির ভোখে তাকিয়ে থাকে। কোথায় যাবে? কি করবে? কিছুই জানে না ও।
" না পিসি.... এভাবে আর দরকার নেই.....বাকি জীবন জেলের ভিতরেই কাটুক আমার। " লেখা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলে।
" পাগলের মত কথা বলিস না...... তোর জন্য আমি নুটুর খোঁজ নিয়ে ফিরেছি, তোদের দুজনকে বাকি জীবন কাটাতে হবে একসাথে..... "
দুচোখ ভেঙে জল নেমে আসে লেখার, " আমার আর সেই সুখ কপালে নেই পিসি....... আমি জানি না ও কোথায় আছে, কিন্তু ওকে আমার কাছে আসতে বারণ করো, না হলে আমার সাথে সাথে ওকেও বাকি জীবন অন্ধকারে কাটাতে হবে। "
সুধাময় এগিয়ে এসে লেখার মাথায় হাত দেয়, " শোন, আমাকে তুমি দাদা বলে ডেকেছ তাই আমার উপরে বিশ্বাস রাখো....... তোমাকে নিরাপদে রাখাটা আমার দায়িত্ব..... কেউ তোমার কিচ্ছু ক্ল্রতে পারবে না, "
সুধাময়ের আত্মবিশ্বাসী গলায় লেখা একটু হলেও সান্তনা পায়। ও কিছু না বলে সুধার গায়ের উপর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
Deep's story


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)