Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#63
পড়শি বাড়িঃ ৬ ()

 
[b] [/b]
 
খাওয়া দাওয়া শেষে রাজীব জান্নাত কে বলে তুই ঘুমিয়ে পর , আমি আছি ,প্রয়োজন হলে ডাকবো
 
দরকার নাই , আমার ঘুম নাইজান্নাত নিজের মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বলে । কেবিনের ভেতর নেটওয়ার্ক নাই ই , আর ইন্টারনেট নিয়েছে হসপিটালের ওয়াইফাই থেকে , ভীষণ বাজে , কোন মতে ফেসবুক স্ক্রল করা যায় । নিজেদের সপ্তাহিক পত্রিকার আজকের এডিশনের একটা নিউজ পড়ছে জান্নাত , সরকারি দলের ছাত্র উইং এর একটা অনুষ্ঠান ছিলো দুই দিন আগে। জান্নাত নিজেও সেই অনুষ্ঠান কাভার করতে গিয়েছিলো এক সিনিওরের সাথে । তবুও প্রতিবেদন টা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে । সিনিওররা কিভাবে লিখছে সেটা ফলো করলেও অনেক কিছু শেখা যায় ।
পড়তে পড়তে একটা অংশে এসে জান্নাত থেমে যায় , দলের সভাপতি আবির আলমগির বেশ খলাখুলি জয়ের প্রশংসা করেছে । জয়ের মাঝে স্বাভাবিক নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা আছে বলেও নিজের মতামত প্রকাশ করেছে । এছাড়া জয়কে ভবিষ্যতে ভালো পজিশনে দেখতে চায় বলেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ।
 
জয়কে বেশ ভালোভাবেই প্রমোট করছে এই আবির , নিশ্চয়ই জয় কে নিয়ে ব্যাটার কোন মতলব আছে ,  মনে মনে ভাবে জান্নাত। না হলে একজন সাধারন সদস্য কে এভাবে লাইম লাইটে আনার কোন মানে হয় না ।  জান্নাত জানে জয় কেনো এই রাজনীতি জয়েন করেছে । কিন্তু জান্নাত কিছুতেই জয়ের এই পলিটিক্স জয়েন করা ভালো ভাবে নিতে পারেনি । ওর গাট ফিলিং হচ্চে জয় কে ব্যাবহার করা হবে । এটা সত্যি পলিটিক্স করার জন্য যা যা গুনাবলি দরকার তার বেশিরভাগ জয়ের মাঝে আছে , জয় ক্যারিশমেটিক , ওর সাহস আছে , রিক্স নিতে জানে,  উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে , এমনকি ভালো কাজ করার মন মানসিকতা আছে  । কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ গুন জয়ের মাঝে নেই । সেটা হচ্ছে চিন্তা ভাবনা করে পা ফেলার গুন । আর এর জন্যই জয় ধরা খাবে বলে মনে করে জান্নাত ।  
 
জয়কে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো জান্নাত , কিন্তু জয় ওকে পাত্তা দেয়নি । জান্নাত ও রাগ করে এই ব্যাপারে নাক গলায়নি । ছোট বোন ছাড়া জয় ওকে অন্য কিছু ভাবতেই পারে না । আর এই কারনেই জান্নাতের রাগ হয় ।
 
জান্নাত আড় চোখে খেয়াল করে রাজীব বাইরে বেড়িয়ে গেছে । জান্নাত খেয়াল করেছে সবাই চলে যাওয়ার পর ই রাজীব বেশিক্ষণ ঘরে থাকতে চাইছে না । একবার খাবার আনতে গেলো , এখন খাওয়া শেষে বাইরে বেড়িয়ে গেলো । যতক্ষণ এই কেবিনে থাকছে ততক্ষণ কেমন ইতস্তত করছে । চোখাচোখি হলে চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে । জান্নাত রাজীবের এমন আচরনের কারন বুঝতে পারছে না।
 
জান্নাত রানীর দিকে একবার তাকায় । রানী ঘুমাচ্ছে , মাথায় হাত রাখে , নাহ জ্বর আগের মত আর নেই । তাই জান্নাত উঠে পরে , বেড়িয়ে আসে কেবিন থেকে । রাজীব কে দেখে কোরিডোরে হাটছে  । জান্নাত দরজার সামনেই দাড়িয়ে থাকে । রাজীব করিডোরের একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে আবার ফিরতে শুরু করে , দৃষ্টি নিচের দিকে , জান্নাত ওর চেহারা না দেখেই বলে দিতে পারে বেশ চিন্তিত রাজীব । রাজীব কিছুদুর হেটে আসতেই দুজনের চোখাচোখি হয় । হন্তদন্ত হয়ে  হেটে আসে রাজীব , জিজ্ঞাস করে “ কি ব্যাপার কোন সমস্যা?”
 
জান্নাত রাজীবের চিন্তিত মুখ দেখে মুচকি হাসে , বলে “ আরে তুই তো দেখি চিন্তায় চিন্তায় রানীর আগেই মরে যাবি, ডাক্তার কি বলেছে শুনিস নাই? রানীর তেমন কিছুই হয়নি , রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে”
 
রাজীব ও একটু হাসে , মাথা চুল্কে বলে “ আসলে গত দুই তিন বছরে ও তেমন একটা অসুস্থ হয়নাই তো তাই হঠাত করে এই অবস্থা দেখে একটু ঘাবড়ে গেছি”
 
“ গত দুই তিন বছরের পাওয়া সুদে আসলে উসুল করতেসে বুঝলি , আমার মতই ভালো বছরে দুইবার জ্বর , তিনবার সর্দি , ছোট খাটোর উপরে দিয়ে যায়” বলে জান্নাত একটু শব্দ করেই হাসে । রাজীব জান্নাতের হাসি শুনে একবার ভালো করে তাকায় , জান্নাতের দাঁত গুলো খুব সুন্দর , হাসলে খুব সুন্দর দেখায় ।
 
রাজীব একটু  বেশি সময় ধরেই তাকিয়ে থাকে , গত কয়েক দিনের মাঝে , এই হাসি ছাড়া অন্য ভালো কিছুই ওর সামনে ঘটেনি । কিন্তু জান্নাত হাসি শেষে ওর দিকে তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় । এর পর দুজনেই কিছুক্ষন চাপচাপ হাটে , দুজনেই ঠোঁটেই একটা মুচকি হাসির রেশ লেগে থাকে ।  জান্নাত মনে মনে ভাবে , ‘বোকা ছেলে , আমি দেখলেই চোখ সরিয়ে নিতে হবে’ । আর এদিকে রাজীব মনে মনে ভাবছে , ‘ মাঝে মাঝেই এমন করে হাসতে পারিস না , নিজের জন্য না হলেও অন্য কারো জন্যও তো হাসতে পারিস’
 বেশ কয়েক মিনিট দুজনেই চুপচাপ হাটে , তারপর রাজীব প্রথম কথা বলে
 
“ আচ্ছা জান্নাত তোকে একটা কথা জিজ্ঞাস করি?’
 
জান্নাতের মন হালকা একটু লাফিয়ে ওঠে , রাজীবের বলার ভঙ্গিতে এমন একটা কিছু ছিলো , জান্নাতের মনে হলো রাজীব এমন কিছু বলবে যা শুনতে ওর ভালো লাগবে , জান্নাত মুখ নিচের দিকে রেখেই ছোট্ট করে বলল “হুম”
 
রাজীব কিছুক্ষন বিরতি নিলো , তারপর বলল “ তুই কিন্তু রানী কে বলবি না”
 
জান্নাত মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো , মনে মনে বলল ‘ আরে শালা বল , এইসব কথা কি মানুষ বলে বেড়ায়’ । কিন্তু মুখে বলল “ না বলবো না” ঠোঁটে এখনো সেই মুচকি হাসি ।
 
“আচ্ছা রানীর কি কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে?”
 
জান্নাতের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেলো , ঠোঁট একটি সাথে আর একটি চেপে ধরে , বিরক্তি নিয়ে তাকালো রাজীবের দিকে । মনে মনে ভাবছিলো হয়তো রাজীব ওর সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করবে । আর রাজীব জিজ্ঞাস করলো কি ? এতক্ষনের সব ভালোলাগা অনুভূতি ফুস করে উড়ে গেলো ।
 
জান্নাতের এই পরিবর্তন রাজীব ও খেয়াল করলো , তাই দ্রুত নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য বলল “ আরে না না  , তুই যা ভাবছিস তা না , আমি রানীর বেক্তিগত ব্যাপারে স্পাইং করতে চাচ্ছি না , কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্চে রানী কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে , এবং ওদের মাঝে কোন সমস্যা যাচ্ছে”
 
জান্নাত ভ্রু কুঁচকে বলল “ রানীর ব্যাপারে আমার কাছে কেনো জিজ্ঞাস করছো , রানী সুস্থ হলে ওকেই জিজ্ঞাস কইরো” জান্নাতের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি , সেই সাথে হতাশা । মনে মনে ভাবে , এই ছেলের দ্বারা কিচ্ছু হবে না । কি সুন্দর একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো , আর সেটা কি সুন্দর ভাবেই না নষ্ট করে দিলো ।
 
“ আমি ভেতরে গেলাম” এই বলে জান্নাত আর দাঁড়ালো না । গট গট করে হেটে কেবিনে চলে গেলো ।
 
এদিকে রাজীব বোকার মত দাড়িয়ে রইলো , রানীর কথা জিজ্ঞাস করায় এমন রেগে গেলো কেন জান্নাত সেটাই ওর মাথায় আসছে না ।
 
জান্নাত কেবিনে ঢুকে , রানীকে একবার চেক করে নিলো । তারপর নিজের মোবাইল হাতে নিলো , মেসেঞ্জারে জয়ের ম্যাসেজ এসেছে , “রানীর শরীর কেমন”
 
মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো জান্নাতের  , এ জিজ্ঞাস করছে  রানীর বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা , ও জিজ্ঞাস করছে , রানীর শরীর কেমন । ওর কথা তো কেউ জিজ্ঞাস করছে না । রাজীবের ঝাল জয়ের উপর তুল্লো জান্নাত লিখে পাঠিয়ে দিলো “ তুই এসে দেখে যা , আমি কি তোর চাকরি করি নাকি”
 ****

 
জয় জান্নাতের ফিরতি টেক্সট দেখে , প্রচণ্ড রেগে গেলো । এই সময়েও কেউ ফাইজলামি করতে পারে কিভাবে সেটা ওর বোধগম্য হয় না ।
“ দ্যাখ ফাইজলামি না করে , যা জিজ্ঞাস করেছি সেটা বল” জয় আবার টেক্সট করলো
 
“ ক্যান তুই এসে দেখে যেতে পারলি না , এতো দরদ , দরকারের সময় তো তোকে পাওয়া যায় না , এখন বাসায় বসে জানতে চাস কি অবস্থা , যাহ ফোট”
 
“তোর মতন এমন বেয়াদপ , ফাজিল মেয়ে আমি আর দেখি নাই” জয় রাগের মাথায় লিখে পাঠালো
 
“ ভালো করে দেখে নে , আর দেখবিও না আমি  হইলাম বেয়াদপ আর ফাজিলের প্রটোটাইপ , আমার  পর আর উৎপাদন  হয় নাই”
 
শেষ টেক্সট লিখে জান্নাত মোবাইল রেখে দিলো , আর ঝগড়া করার ইচ্ছা নেই ।
 
কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো , তারপর ধিরে ধিরে রাগ কমে এলো । তবে একটা মন খারাপ ভাব রয়েই গেলো । রানীকে কিছুটা হিংসা হচ্চে । সবাই রানীর প্রতি কি যত্ন নেয় । বিশেষ করে রাজীব । এমন কি ওর বাবা মা পর্যন্ত তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না ওকে । সব ব্যাপারে ওরা জয়কেই প্রাধান্য দেয় । মাঝে মাঝে জান্নাতের মনে হয় , ওর আশেপাশের লোকজনের কাছে ওর তেমন একটা গুরুত্ব নেই , ও না থাকলেও তাদের কিছু আসবে যাবে না। 
****

 
রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত জেগে রইলো জান্নাত , এর মাঝে রানী একবার ও জেগে ওঠেনি । তাই জান্নাত ঠিক করলো একটু ঘুমিয়ে নেবে । আর জেগে থাকতে পারছে না ও । রাজীব তখনো বাইরেই বসে আছে । জান্নাত উঠে প্রথমে বাথরুমে গেলো । বেড়িয়ে এসে রাজীব কে ডাকার  জন্য দরজা খুলল । দেখলো রাজীব চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে । মাথা নিচের দিকে ঝুকানো ।  যদিও রাজীবের উপর রেগে আছে , আসলে সত্যি বলতে জান্নাত সবার উপর ই রেগে আছে । কিন্তু রাজীব কে দেখে একটু মায়া হলো ।
 
জান্নাত পাশে দাড়িয়ে হালকা ভাবে রাজীবের কাঁধ ধরে ডাকল । চমকে উঠলো রাজীব , “ হ্যা হ্যা কি হয়েছে”
 
রাজীব চমকে ওঠায় জান্নাত একটু দূরে সরে গিয়েছিলো , আবার কাছে এলো , মমতা ভরে হাত রাখলো রাজীবের কাঁধে । ছেলেটা এখনো বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে আচমকা ঘুম ভাঙার কারনে । নরম স্বরে বলল , “ না না কিছু হয় নি” যেন ভয় পাওয়া কোন শিশুকে ভুলাচ্ছে , জান্নাতের আচরণ দেখে তাই মনে হলো ।
 
একটু পর রাজীব ধাতস্ত হয় এলো । হেসে বলল , “ হঠাত ঘুম ভাংলে আমার মাঝে মাঝে এমন হয়” লাজুক হাসল রাজীব , যেন ওর দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় একটু লজ্জা পেয়েছে ।
 
“এটা কোন ব্যাপার না , আমার ও এমন হয় “ জান্নাত মিথ্যা করেই বলল , এখনো ওর হাত রাজীবের কাঁধে । ওর ঘুম চলে গেছে । তাই রাজীব কে বলল “ তুই বাইরে না ঘুমিয়ে , ভেতরে এসে ঘুমা”
 
রাজীব ঘড়ি দেখে , প্রায় সোয়া তিনটা বাজে । ওর হুঁশ হলো জান্নাত এতক্ষণ ধরে জেগে আছে । তাই তারাতারি উঠে দাঁড়ালো , বলল “ আরে না , আমার ঘুম হয়ে গেছে , এবার যা তুই ঘুমা”
 
জান্নাত অনেক করে বলেও রাজীব কে রাজি করাতে পারলো না । শেষে নিজেই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলো । কিন্তু রাজীব কেবিনেও থাকতে চায় না । তাই জান্নাতের রাগ আবার ফিরে এলো , একটু রাগের সাথে বলল “ এতো ভদ্রলোক সাজার দরকার নেই , ঘরে একজন লোক বসে আছে , এই অবস্থায় আমারো ঘুমানোর ইচ্ছা নাই , কিন্তু বিশেষ বিশেষ অবস্থায় এসব ভাবলে চলবে না, রানী জেগে উঠলে কি করবি , আমি একবার ঘুমাইলে শেষ”
 
এর পর রাজীব আর না করতে পারে না  , রানীর বেডের পাশে চেয়ারে গিয়ে বসে , ঘরে সুধু একটা ডিম লাইট জ্বলছে । জান্নাত সোফায় গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে , শরীরের উপর একটা চাদর দেয়া । রাজীব না চাইতেও বার বার অইদিকে চোখ চলে যায়। সরাসরি জান্নাতের কথা ভাবতে ভয় হয় , কিন্তু এমন একজনের জন্য মনটা তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে , যে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ওর পাশে থাকবে , ভালো মন্দ দুই সময়েই ওর সাথে থেকে সাহস জোগাবে । যেমনটা জান্নাত এখন ওর পাশে আছে । 

****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 16-09-2025, 05:51 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)