Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#60
কিছু সম্পর্কঃ ৬(ঘ)  

 
আজকেও রাজীবের খুব ব্যস্ততা গিয়েছে , প্রতিটা ভার্সিটিতে চিঠি পাঠাতে হয়েছে । সেই সাথে অডিটরিয়াম বুকিং নিয়েও কিছু ঝামেলা ছিলো সেটা মেটাতে হয়েছে । তাই ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেছে । প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে , কিন্তু ঘরের ভেতর কোন লাইট জলতে না দেখে বেশ অবাক হয় রাজীব । রানী এসব ব্যাপারে খুব পাংচুয়াল । ওদের বড় ফুপু ( বাবার মামাতো বোন , রহিমের কোন ভাই বোন নেই) একবার বলেছিলো যে সন্ধ্যায় ঘরে বাতি না দিলে ঘরে অলক্ষ্মী হয় । রানী তখন ১৪-১৫ বছরের , সেই সুপারস্টিয়াস কথা মনে প্রানে বিশ্বাস করেছিলো । এবং আজো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ।  
 
রাজীব লিভিং রুমের লাইট জ্বালায় । কিচেনে লাইট জ্বালায় , কিচেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আজকে চা হয়নি । বিকেলে চা খাওয়া রানীর অনেক দিনের অভ্যাস । রাজীব ভাবে হয়তো বাইরে থেকে চা খেয়ে এসেছে । কিন্তু মনে একটা খটকা থেকেই যায় । ভাবে , আজকাল রানীর প্রতি তেমন একটা নজর দিচ্ছে না ও । তারপর আবার ভাবে , নজর দিয়েও কি হবে , আজকাল রানীকে আর ঠিক আগের মত বুঝতে পারে না । চেপে যাওয়া স্বভাবের রানী আগেও ছিলো , কিন্তু আজকাল ও কাছে লুকাচ্ছে ।
 
একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব , মনে মনে ভাবে রানী বড় হয়ে গেছে । এখন আর ওর পক্ষে হয়তো রানীর সব সমস্যা বোঝা সম্ভব নয় , আর রানী হয়তো সব ওকে বলতেও পারবে না । ক্লান্ত শরীরেই রাজীব রানীর ঘরের দিকে পা বাড়ায় । হয়তো ওর সব সমস্যা বুঝতে পারবে না , তাই বলে একদম একাও ছেড়ে দেয়া যাবে না , যতটুকু সম্ভব সাপোর্ট করতে হবে । এই সময় সাপোর্ট খুব দরকার , বাড়িতে একজন নারী অবিভাবক এর অভাব রাজীব আজকাল যেন আরো বেশি করে বুঝতে পারে । বড় আম্মু আছে , কিন্তু ওনার নিজের সংসার আছে , নিজের সমস্যা আছে ।
 
দরজা লাগানো , রাজীব দরজায় টোকা দেয় , একবার , দু বার , তিনবার । কিন্তু ভেতর থেকে কোন শব্দ আসে না । এবার রাজীবের চিন্তা হয় , শরীর খারাপ হলো কিনা ? রাজীব একটু ইতস্তত করে দরজা খুলে ফেলে , প্রথমে অল্প , ডাকে “রানী ঘুমাচ্ছিস নাকি?” কিন্তু উত্তর দেয় না রানী , বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে ।
 
রাজীব দ্রুত ঘরের ভেতর ঢুকে যায় , ঘর ময় একটা অসুখ অসুখ গন্ধ , ফ্যান বন্ধ , গুমট গরম , জালানা গুলোও বন্ধ । রানী যেন অচেতনের মত ঘুমাচ্ছে , ওর মুখ লাল হয়ে আছে । রাজীব রানীর গালে হাত দেয় , হাত দিয়েই চমকে ওঠে । প্রচণ্ড জ্বর রানীর শরীরে , রাজীব রানীর কাঁধে হাত রেখে কয়েকবার ডাকে , “ এই রানী , এই রানী ওঠ” কিন্তু রানী ওঠে না , বিড়বিড় করে কি যেন সুধু বলছে , রাজীব নিজের কান সামনে নিয়ে শোনার চেষ্টা করে , সুধু শুনতে পায় “ তুমি আমার কাছে কি চাও ,কেনো আমার কাছে আসো , আবার নিজেই দূরে ঠেলে দাও”
 
রাজীবের বুঝতে বাকি থাকে না , বয় প্রবলেম , এই ব্যাপারটা থেকে রানী কে দূরে রাখতে খুব চেষ্টা করেছে , কারন রানী কে ও হাড়ে হাড়ে চেনে , এই ধরনের মেয়ে গুলোই বেশি দুঃখ পায় । কিন্তু এসব ভাবার সময় এখন নেই । রাজীব দ্রুত জানালা গুলো খুলে দেয় । ফ্যান অন করে ফুল স্পিডে । কুঁকড়ে ওঠে রানী , বিরক্তি নিয়ে বলে ‘ আম্মু ফ্যান বন্ধ করো’ কিন্তু রাজীব সেই কথায় পাত্তা দেয় না ।
 
একটা এ্যাম্বুলেন্স কল করে , কিন্তু রাস্তায় যে জ্যাম দেখে এসেছে , তাতে করে মিনিমাম আধ ঘণ্টা সময় লাগবে । এর পর রাজীব আয়শা কে কল করে । আর আয়শা আসার আগেই , তোয়ালে ভিজিয়ে রানীর মুখ হাত ,  হাটু পর্যন্ত পা, পেট পিঠ  ভালো করে মুছে দেয় । এতে করে কিছুটা তাপ কমে আসে ।
 
আয়শা যখন অনেক কষ্টে দোতলায় উঠে আসে , তখন রাজীব রানীর জ্বর মেপে ফেলেছে । জ্বর একশো তিন ।
 
“ কিরে জ্বর কত?” আয়শা ঘরে ঢুকেই হাঁপাতে হাঁপাতে  জিজ্ঞাস করে ।
 
“ একশো তিন বড় আম্মু” রাজীব তখন রানীর মাথা কোলে নিয়ে বসে বসে মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে ।
 
থাইরয়েডের প্রবলেম  থাকায় , আয়শা খুব মুটিয়ে গেছে , তাই প্রায় ৯৬ কেজি ওজন নিয়ে  নিজের বাড়ির সিঁড়ি , আর রানীদের বাড়ির দোতলায় উঠতে উঠতে খুব হাপিয়ে গেছে । তা ছাড়া হাটুতে হাড়ের ও কিছুটা খয় হয়ে গেছে । রানীর পাশে বসে কিছুক্ষন হাঁপাতে থাকে আয়শা । হাঁপাতে হাঁপাতে আয়শা রানীর পায়ে হাত দেয় ।
 
“ওরে বাবা জ্বর তো অনেক বেশি , ডাক্তার দেখিয়ে লাভ নেই হস্পিটাল নিয়ে চল” আয়শা কলাপে ভাজ ফেলে বলে ।
রাজীব জানায় ও এ্যাম্বুলেন্স কল করে ফেলেছে । আর এর পর ই জান্নাত এসে ঢোকে । এক মুহূর্তের জন্য রাজীবের সাথে চোখাচোখি হয় , জান্নাতের চোখে চিন্তার ছাপ ।
 
“আজকে ভার্সিটি ও যায়নি , গত দুই দিন ধরে অল্প অল্প জ্বর ছিলো বেশ ঠাণ্ডা ও ছিলো , জিজ্ঞাস করলে সুধু বলে ঔষধ খাচ্ছি” জান্নাত রাজীবের উদ্দেশ্য করে বলে ।  
 
“ আর তুই আমার কাছে বলিস নি?” আয়শা খুব রাগান্বিত হয়ে জান্নাতের দিকে তাকায় , গত কয়েক দিন যাবত রানী ওই বাড়িতেও তেমন যায় না । আয়শা কয়েকবার জিজ্ঞাস করবে করবে করেও ভুলে গিয়েছিলো । বেশ গিল্টি ফিল হয় আয়শার, বান্ধবির মেয়ের ঠিক মত খবর না রাখতে পেরে , প্রায় অজ্ঞান লালচে মুখতি দিকে তাকিয়ে চোখে জল আসে ।
 
ধরা গলায় আয়শা রাজীব কে বলে “ যা তো বাবা একটু বাইরে যা , আমি আর জান্নাত মিলে ওর জামাকাপর চেঞ্জ করে দেই , ঘামে ভিজে চ্যাটচেটে হয়ে আছে”
 
রাজীব খেয়াল করে সত্যি ই আর ওর বিছানা আর শরীরের কাপড় থেকেই মুলত গন্ধটা আসছে , যেটাকে অসুখ অসুখ গন্ধ মনে হয়েছিলো । রাজি নিজের কোল থেকে রানী মাথা খুব যত্ন সহকারে নামিয়ে , বাইরে চলে যায় ।
 
নিজের উপর বেশ বিরক্ত , ছোট বোনের জীবনে কি চলছে না চলছে এসব কিছুই আজকাল খেয়াল রাখছে না ও। নিজেকে নিয়ে এতোই বিজি হয়ে আছে যে , যাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মানুষ ভাবে তাকেও একা ছেড়ে দিয়েছে । এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় সমস্ত রাগ গিয়ে পরে জয়ের উপর , নিজের ঘরের মানুষ নিয়ে না ভেবে ওই অকৃতজ্ঞ সেলফিশ মানুষ নিয়ে সময় নষ্ট করেছে ও । ওই সেলফিস ছেলের জন্য আর এক মুহূর্ত ও নষ্ট করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে রাজীব । এমন আরো অনেক মানুষ আছে যারা ওর সময়ের দাবীদার ।
 
এ্যাম্বুলেন্স চলে এলে রাজীব আর এম্বুলেন্সের সহকারি স্ট্রেচারে করে রানীকে এম্বুলেন্সে এনে তোলে । আয়শা ব্যেগে করে রানীর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিয়েছে । এ্যাম্বুলেন্স স্টার্ট হয় , সাইরেন বাজিয়ে ওদের বাড়ির গলি থেকে বেড়িয়ে যায় । গলি থেকে বের হওয়ার সময় ই জয়ের বাইক ক্রস করে এ্যাম্বুলেন্স । জয় প্রথমে খুব একটা মাথা ঘামায় না । ওর মন আজকে বেশ ফুরফুরে , আজকের পার্টি অফিসে মিটিঙয়ে সবাই বেশ বাহবা দিয়েছে , সেদিন জয়ের একক প্রচেষ্টায় প্রচুর ছেলে হয়েছিলো , আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছচ্ছে পার্টি সদস্য নয় এমন অনেক মেয়ে যোগ দিয়েছে । যা ওদের পার্টির ভাবমূর্তি কিছুটা বাড়িয়েছে।
*****
ডাক্তারদের প্রাথমিক ধাররনা হচ্ছে রানীর ইনিসিয়াল স্টেজের নিউমোনিয়া হয়েছে । ভর্তি রাখা হয়েছে , স্যাম্পল কালেকশন করা হয়েছে , আগামিকাল টেস্টের রেজাল্ট আসেব । জয়নাল আর রহিম দুজনেই খবর পেয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা হস্পিটালে চলে এসেছে । দুই পরিবারের একজন বাদে সব সদস্য হসপিটালে উপস্থিত । সবার চোখে মুখে উদ্বেগ । রহিম কে দেখা যাচ্ছে নিজের উদ্বেগ চেপে রেখে আয়শাকে সান্তনা দিচ্ছে । আয়শা বেশ ভেঙ্গে পড়েছে , রানীর এই অবস্থার জন্য নিজেকে দোষারোপ করছে প্রতিনিয়ত । নার্সরা ভেবেই নিয়েছে আয়শা রানীর মা । অবশ্য কেউই নার্সের এই ভুল ধারনা ভেঙ্গে দেয়নি ।
 
অনেক রাত পর্যন্ত সবাই হসপিটালেই বসে থাকে , রাতের খাওয়া কারই হয়নি । এক পর্যায়ে রাজীব সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলে । কিন্তু কেউই নড়ার জন্য প্রস্তুত নয় । রাত প্রায় সারে এগারোটার দিকে রাজীব প্রায় জোর করেই সবাইকে বাড়িতে চলে যেতে বলে । এবার জয়নাল ও শ্বায় দেয় রাজীবের কথায় । রহিম কেও রাজি করানো হয় । রাজি হয়না সুধু আয়শা , সে কিছুতেই যাবে না । অনেক বলে কয়ে আয়শা কে বাড়ি যেতে বাধ্য করা হয় , জয়নাল আর রহিম আয়শা কে রাজি করায়।  রাতের রেস্ট  আয়শার জন্য খুব জরুরি ।
 
রাজীব থাকবে বলে ঠিক করে , কিন্তু আয়শা বলে “ তুই ছেলে মানুষ , রানীর জন্য একজন মেয়ে এটেন্ডেন্ট দরকার , নার্সরা কি সব ঠিক মত করবে , কত দরকার হতে পারে”
 
জান্নাত মায়ের ইচ্ছা বুঝতে পারে , আয়শা যে নিজে থেকে যাওয়ার জন্য বাহানা খুঁজছে এটা ওর কাছে স্পষ্ট । এখানকার নার্সরা সবাই হেল্পফুল আর প্রফেশনাল । কিন্তু আয়শা কে এ কথা বোঝানো যাবে না , তাই নিজে থেকে যাওয়ার সিধান্ত নেয় , প্রায় ধমকের সুরে বলে “ আম্মু তোমার এ নিয়ে ভাবতে হবে না , আমি থাকছি ,তুমি দয়া করে বাড়ি যাও , রানীর সিরিয়াস কিছু হয়নি , ঠিক হয়ে যাবে ও”
 
এবার আয়শা আর কোন বাহানা পায় না , যাওয়ার সময় রানীর কপালে একটা চুমু খায়, মাথার চুলে হাত বুলায় , সমস্ত মুখে হাত বুলায়  । তারপর চোখের পানি মুছে রহিম আর জয়নালের সাথে বেড়িয়ে যায় ।
 
রয়ে যায় সুধু জান্নাত আর রাজীব । রানী ঘুমাচ্ছে , আপাতত কোন কাজ নেই , জান্নাত রানীর মাথার কাছে চেয়ারে বসে আছে আর রাজীব একটু দূরে সোফায় । কিছুক্ষন চুপ থেকে রাজীব বলল “ আমি তোর  জন্য খাবার নিয়ে আসছি”
 
****
বাড়িতে এসে কাউকে না পেয়ে বেশ অবাক হয় জয় । বাড়ির সবাই এক সাথে কোথায় উধাও হয়ে গেলো ভেবে পায় না । তাই জান্নাত করে কল করে , কিন্তু জান্নাত ফোন রিসিভ করে না , এর পর জয় ওর আম্মুকে কল করে । কিন্তু সেটাও রিসিভ করে না। ওর আব্বু এই সময় বাড়ি থাকে না , এটাই স্বাভাবিক । তাই আর জয়নাল কে কল করে না জয় । ভাবে পর মা আর বোন হয়তো পাশে রানীদের বাড়ি গেছে । একা বাড়িতে থাকতে বেশিক্ষণ ভালো লাগে না , তাই আবার বেড়িয়ে পরে । গলির মাথায় চায়ের দোকানের আড্ডায় । আজকাল এলাকার লোকজন বেশ সমীহ করে জয় কে , এমনকি এই ওয়ার্ডের কমিশনার পর্যন্ত ওকে ডাক খোঁজ করে ।
 
চায়ের দোকানে কেউ না কেউ এলাকার থাকেই , তাই জয়ের আড্ডা জমাতে কষ্ট হয় না । আজ ও পেয়ে গেলো সম বয়সি দুজন কে । এরা আজকাল জয় কে ধরেছে এলাকায় একটা অফিস খোলার জন্য । এলাকার কমিশনারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে , একটা রাজনৈতিক অফিস খুলে বসলে ভালো হয় , এইসব বুঝিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু জয় এসব কথায় কান দেয়ার মানুষ না , রাজনৈতিক দোকান খুলে বসার জন্য ও পলিটিক্স জয়েন করেনি । ওর লক্ষ্য আরো বড় , এসব অফিস করে টুপাইস কামানোর ধান্দা ওর নেই । তবে জয় , এলাকার ছেলেদের এসব বলে না , ওদের আশাহত করে লাভ নেই । ওদের সাথে তাল মিলিয়ে যায়।
 
এইসব নিয়েই কথা চলছিলো, হঠাত এর মাঝে একটা ছোট ভাই বলে ওঠে “ ভাই আজকে তো রাজীব ভাইদের বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স আসছিলো”
 
জয়ের বুক ধক করে ওঠে , প্রথমেই ওর মনে পরে ছোট আব্বু রহিমের কথা । বেশ অনেকদিন ধরেই অসুস্থ । যদিও ব্যাস্ততার জন্য দেখতে যাওয়া হয়ে ওঠে না । তার উপর যোগ হয়েছে রাজীবের সাথে দ্বন্দ্ব , তাই আজকাল্ আরো বেশি যাওয়া হয় না। এবার বুঝতে পারে জয় কেনো ওদের বাড়িতে কেউ নেই ।
জয় বেশ ব্যাকুলতার সাথে জিজ্ঞাস করে “ কাকে নিয়ে গেছে জানিস কিছু”
 
কিন্তু কেউই কোন উত্তর দিতে পারলো না । জয় মোবাইল বের করে সবাই কে কল করতে থাকে । এবার কিন্তু কল ই ঢোকে না । কোন হসপিটালে নিয়ে গেছে সেটা জানতে পারলেও হতো । রেগে যায় জয় , ইচ্ছা হয় মোবাইল আছার মারে , কেউ ওকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না । ছোট আব্বু রহিমের মুখটা মনে পরলো ওর , সেই সাথে রানীর মুখটা , জয়ের বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো । এই বিপদের সময় রানীর পাশে থাকার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো ।
 
আর বেশিক্ষণ দোকানে বসলো না জয় । বাড়িতে ফিরে এলো , বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে । সবাই কে কল করলো সুধু রাজীব বাদে সুধু মাত্র রানীর আর ওর আম্মুর মোবাইলে কল ঢুকল কিন্তু রিসিভ করলো না কেউ। জয় এক পর্যায়ে আবিস্কার করলো ওর আম্মুর মোবাইল বাড়িতেই রেখে গেছে  । একবার চেয়েছিলো রাজীব কে কল করতে , কিন্তু শেষ পর্যন্ত করলো না । মনে মনে সুধু আস্ফালন ছাড়া আর কিছুই করার রইলো না জয়ের ।
 
রাত প্রায় সারে এগারোটার দিকে কল ঢুকল জয়নালের মোবাইলে । রিসিভ হতেই , জয় হরবরিয়ে বলতে শুরু করলো “আব্বু , ছোট আব্বু কোন হসপিটালে , তোমারা আমাকে খবর দিলে না কেনো ? এখন কি অবস্থা , আমাকে বলো আমি আসছি”
 
“ আরে থাম থাম , তোর ছোট আব্বুর কিছু হয়নি , রানীর জ্বর হয়েছে , নিউমোনিয়া ও মনে হয় আছে “ জয়নাল ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে বলল ।
 
এতক্ষণ ব্যাকুল হয়ে থাকা মন আরো ব্যাকুল হয়ে উঠলো , “ আব্বু হসপিটালের নাম বলো , আমি আসছি” জয় গম্ভির গলায় বলল ।
 
“ তার আর দরকার নেই , আমরা বাড়ি চলে আসতেসি , কালকে সকালে যাবি “ জয়নাল স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল
 
জয়ের ইচ্ছে হচ্ছিলো চেঁচিয়ে বলে যে ও এখনি যেতে চায় , কিন্তু বলতে পারে না , ফ্রাস্টেসনে হাত মুঠো করে টেবিলের উপর একটা ঘুষি দেয় । চোয়াল শক্ত করে রাখে । নিজের এই অপারপগতায় নিজের উপর প্রচণ্ড রেগে যায় । কেনো ও বলতে পারলো না  ওর যাওয়া কতটা জরুরি । কেনো ও বলতে পারলো না ,  রানীকে না দেখে ওর ঘুম আসবে না । কেনো বলতে পারলো না , রানী ওর জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট। 
 
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 15-09-2025, 07:45 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)