02-09-2025, 05:45 PM
ডলির সাথে আজ ওস্তাদজির কথা হয়েছে , নাইম কে নিয়ে উনি বেশ চিন্তিত । ছেলেটার কোন অগ্রগতি হচ্ছে না বলেই ওনার ধারনা । কলেজে ভর্তি করা সম্ভব নয় । ওস্তাদজি একবার চেন্তা করেছিলো উন্মুক্ত থেকে মাধ্যমিক দেয়ার কথা , কিন্তু নাইমের মাঝে লাখা পড়ার কোন আগ্রহ নেই । এই কারনে ডলিকে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছে উনি । বলেছেন , ওই ছেলের যদি নিজের ইচ্ছা না থাকে , সিরিয়াসনেস না থাকে তাহলে উনি আর কি করতে পারবেন ।
ওস্তাদজির কাছে এমন কথা শুনে ডলির কলিজা কেঁপে উঠেছে । আজকাল নাইমের ভবিষ্যৎ নিজের ভবিষ্যৎ বলে মনে হয় । তাই যখন নাইমের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে তখন ডলির সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায় । ডলি সিদ্ধান্ত নেয় , আজকে থেকে ও শক্ত হবে , প্রয়োজনে শাসন করবে । সিধান্ত তো নিয়ে নিয়েছে , কিন্তু সেই সাথে একটা ভয় ও যোগ হয়েছে , যদি শাসন মেনে না নেয় ? যদি ছেড়ে চলে যায় ?
মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেহায়া মনে হয় ডলির । একটা অচেনা অজানা ছেলের জন্য কত আকুলতা , সারাক্ষণ ভয়ে থাকে , সারাক্ষণ ভাবে এমন করলে যদি রাগ করে , অমন করলে যদি চলে যায় । অথচ ওর নিজের ই ছিলো , কিন্তু কদর করেনি । একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে । তখন ওর চোখে ছিলো রঙ্গিন স্বপ্ন , ছোট ছোট হাত পায়ের লালচে চামড়ার , তোয়ালে প্যাঁচানো চোখ দুটো পিট পিট করে যখন তাকিয়েছিলো , তখন ওর মনে হয়েছিলো এ হচ্ছে ওর ক্যারিয়ারের বাধা , স্বপ্ন ভাঙার হাতুড়ি , দুধ খাইয়েছিলো সেদিন দুবার মাত্র , না কোন টান অনুভব করেনি , বরং মনে হয়েছে বোঝা । নষ্ট করে দিচ্ছে ওর শরীরের সৌন্দর্য । বুক থেকে দুধ নয় , টেনে নিচ্ছে ওর জীবনী শক্তি ।
গোলাম মহসিন ছিলো ওর সাথে , দেখা করতে এলে ডলি কপাল কুঁচকে বলেছিলো , মহসিন চাচা একে কোথাও দিয়ে দেয়ার বেবস্থা করেন । একটি নাম দেয়ার ও প্রয়োজন মনে করেনি । আজ বুক ফেটে যায় , কিন্তু ডলি কাঁদে না , কাঁদার অধিকার ওর নেই । সুধু লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে , পাশে বসা টেকো মাথার লোকটি আড় চোখে তাকায় ।
কোথায় আছে কেমন আছে বড় দেখতে ইচ্ছে করে আজকাল । কিন্তু দেখতে যাওয়ার সামর্থ্য ডলির নেই। সাত সমুদ্র পারি দিতে যে টাকা লাগে সেটা ডলি আজীবনে সংগ্রহ করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে । ডলি জানে খুজে পেটে সমস্যা হবে না । মহসিন চাচা একটা কাগজ এনে ওর কাছে দিয়েছিলো । কি মনে করে যেন ডলি সেই কাগজ ফেলেনি । যেদিন বুঝতে পারলো আর নাইকা হওয়ার চান্স নেই , যেদিন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছেড়ে এই টিনশেডে উঠে এসেছিলো , সেদিন এক ভুলে যাওয়া সুটকেসে সেই কাগজ পায় ডলি । যা আজো ওর আলমারির কোনে যত্ন করে রাখা আছে । কেন রেখছে ডলি জানে না । হয়তো ওর অবচেতন মন এখনো আশায় আছে একদিন ঠিক সেই সাত সমুদ্র পার হতে পারবে ।
ডলি ও ভাবে থাকুক না একটু আশা , আশা না থাকলে মানুষ ঠিক মানুষ থাকে না । এই অসম্ভব আশা গুলোই মানুষকে চালিত করে । তবে ডলির মনে নতুন এক আশা জেগেছে , নাইম কে ওর স্বপ্ন পুরনে সাহায্য করার। যে করেই হোক ডলি তা করবে ।
****
সারাদিন আজকা কি কি করলি ? নাইম বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় আছে , আজকাল ডলির সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গেছে নাইম , আগের মতন লজ্জা পায় না , আর ডলির উপস্থিতিও আগের মতন ওকে বিব্রত করে না । যদিও এখনো নাইম রাতের বেলা নিচে বিছানা করে , যত কিছুই হোক একজন অনাত্মীয় জুবা পুরুষের সাথে এক বিছানায় ঘুমানো ডলি শ্রেয় মনে করে না । এক ঘরে থাকে তাই নিয়ে কত কথা হয় । কিছুদিন আগে বাড়ী ওয়ালা বলে গেলো , আফা আপনে অন্য জায়গায় ঘর দেহেন , বুঝেন ই তো , সমাজ নিয়া চলি আমরা । বারি ওয়ালা লোকটি ভালো , হুমকি ধামকির বদলে ভালো ভাবে বলেছে । ডলি যদিও এখনো বারি খোঁজা শুরু করেনি তবে কথা দিয়েছে , বাড়ী পেলে ছেড়ে দেবে ।
একটা সিনেমা দেখলাম আপা , সেই সিনেমা , হেব্বি ফাইট , নাইম সব গুলো দাঁত বের করে বলে । উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে বলে ফেললো , নাইম চেয়েছিলো যে বলবে সুধু সিনেমা দেখছে । আর যদি ডলি নাম জিজ্ঞাস করে আগের কালের সামাজিক একটা সিনেমার নাম বলে দেবে । এখন যদি ডলি নাম জিজ্ঞাস করে তাহলে কি নাম বলবে ভাবতে শুরু করেছে । যে সিনেমা ও দেখছে সেটার নাম বলা যাবে না । কারন ওটায় ডলি ও আছে , একটা গানের সিনে । তবে আজকে নাইম একটা প্রতিজ্ঞা করেছে , এর পর থেকে সিনেমা হলে ডলি আছে এমন কোন সিনেমা আর ও দেখবে না । ডলির গানের সময় আশেপাশের লোকজন যখন খারাপ মন্তব্য করেছিলো , তখন নাইমের খুব খারাপ লেগেছে । ইচ্ছে হয়েছিলো লোকটার দাঁত ফেলে দেয় ঘুষি মেরে । অন্য লোকজন ডলিকে কু দৃষ্টিতে দেখলে নাইমের খুব খারাপ লাগে । অনুভূতটা ঠিক নাইম নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি ।
ডলি অবশ্য নাইমের এই অবস্থা খেয়াল করলো না । ওরে বাবা বলস কি !! মজা করে মিথ্যা অবাক হওয়ার ভান করে ডলি , তারপর জিজ্ঞাস করে , নাম কি? কথা বলতে বলতেই ডলি নিজের * খুলছে ।
“কোপা মজনু” হাতরে হাতরে কোন নাম খুজে না পেয়ে নাইম সত্যি নামটাই বলে ফেলে ।
নামটা শুনেই ডলির শরীরে যেন আগুন ধরে যায় , এই পর্যন্ত বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভায়োলেন্স যুক্ত সিনেমা হচ্ছে এই কোপা মজনু , সেই সাথে আছে অস্লিলতার সীমা লঙ্ঘন । যা আজকালের অন্য অশ্লীল সিনেমাকেও বহুদুর পেছনে ফেলে দিয়েছে । ডলি নাইম কে বার বার নিষেধ করেছে এমন সিনেমা দেখতে । বার বার বলেছে এমন সিনেমা দেখবি যেখান থেকে কিছু সেখার আছে । কিন্তু নাইম কিছুতেই কথা শোনে না । ডলির রাগের প্রথম কারন হচ্ছে , নাইমের আচরণ ওকে স্পষ্ট ইংগিত দিচ্ছে , যে আশায় ও যেমন তেমন করে টাকা জোগাড় করছে , এর ওর পেছনে ঘুরাঘুরি করছে , সেই আশায় নাইম পানি ঢেলে দেবে । নিজের জীবনের তো সব আশা শেষ । এখন নাইম কে নিয়ে দেখা স্বপ্ন ভঙ্গের এমন ইংগিত পেয়ে ভীষণ দুঃখ রাগে পরিনত হচ্ছে ।
আর সবচেয়ে বড় যে কারন ডলির রাগের সেটা হচ্ছে একটা গানে ডলি নিজেও আছে। ঠিক রাগ না লজ্জা বোঝা যাচ্ছে না , তবে লজ্জা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি , আর সেই লজ্জা ঢাকা দেয়ার জন্য রাগ কে আবরণ হিশেবে ব্যবহার করছে ডলির মন । আর রাগ যখন লজ্জার আবরণ হিশেবে কাজ করে , তখন সেই রাগ হয় ভয়ংকর ।
সিনেমাটা তৈরি হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে , কিন্তু মুক্তি পেতে চার বছর সময় লেগে যায় । বহু কাটছাট করে যা মুক্তি পায় তাও কম কিছু না ।
হাতের * ছুরে মারে ডলি শায়িত নাইমের দিকে , চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আছে , সেখানে জমা হয়েছে অল্প টলটলে পানি , যা এখনো বাধ ভাঙার জন্য যথেষ্ট নয় । বুক ওঠা নামা করছে দ্রুত , নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে ।
ডলির এই ভয়ংকর মূর্তি দেখে কুঁকড়ে যায় নাইম , আজ পর্যন্ত ডলির স্নহের রুপ দেখছে ও , সামান্য রাগ যে দেখেনি তাও নয় । কিন্তু আজকের ডলি অন্যরকম , জীবনে কাউ কে দেখে এমন ভয় পায়নি নাইম।
হারামি নেমকহারাম , তোর লইগা খাইট্টা মরতাসি , আর তুই ফুর্তি কইরা বেড়াস । ওঠ হারামজাদা ওঠ , এই বলে নাইম কে টেনে তোলে ডলি । হতভম্ভ নাইম কি করবে বুঝে পায় না । অন্যায় ও করেছে , তাই বলে ডলি ওকে এমন ভাবে বলবে , তা নাইম ভাবেনি ।
এদিকে নাইম কে টেনে নামাতে নামাতে ডলির রাগ আরো বাড়ছে । এ যেন রাগ নয় রক্ত পিচাশ , একটু রক্ত পেলে যেমন পিচাশ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে , আরো রক্ত টেনে নিতে চায় । ঠিক তেমনি ডলির রাগ , নাইম কে গালাগালি করে আর ফুলে ফেপে উঠছে । আরো জঘন্য ভাবে আঘাত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
মাইনসের ট্যাকায় , খাবি দাবি আর খোদার খাসী হবি না ? নিজের কিছু করনের মুরদ তো নাই ই , চেষ্টাও নাই। নিমকহারাম , তোর লইগা যে এতো কষ্ট করতাসি , সেই কষ্টের কি দাম দিলি তুই ,
ডলি নিজেও বুঝতে পারছে না কি বলছে ও । বুঝলে হয়তো খাওয়ার খোটা দিতো না । এদিকে নাইম যেন অবস হয়ে গেছে , এই প্রথম ওকে কেউ খাওয়ার খোটা দিচ্ছে । দিচ্ছে তো দিচ্ছে , কিন্তু এর উত্তরে নাইমের কাছে বলার মত কিছুই নেই । কারন যা বলছে তা সত্যি ই বলছে । নাইমের মনে হচ্ছে ডলি যদি ওকে কুকুরের মত মারতো তাতেও ও এতো কষ্ট পেতো না । কিন্তু খাওয়ার খোটা সহ্য করার মত নয় ।
না করবি লেখা পড়া , না শিখবি কিছু , এহ নায়ক হবি , নায়ক হওয়া কি এত্ত সহজ , তোর মতন এমন হাজার নাইম প্রতিদিন আসে আর যায় , কেউ খবর ও রাহে না । আইসে আমার নায়ক হইতে । এহন থাইকা যা বল্মু তা যদি করতে পারস তাইলে আমার লগে তোর যায়গা আছে , নাইলে তোর মতন খোদার খাসী খাওইয়া পরাইয়া পালনের সখ আমার নাই । যা বাইরে যা দেখ দুই ট্যাকা কামাই করতে পারস কিনা , ট্যাকা কামাই করা সহজ না । নাইমের বাহু ধরে বেশ কয়েকটি ঝাকি মেরে , চোখের সামনে আঙুল তুলে , রক্ত চক্ষু দেখিয়ে বলে ডলি ।
আমার ও তোমার খাওন খাওনের সখ নাই , আমি কামাই কইরা খামু । আর থাকতে না পেরে , মিন মিন করে সুধু এটুকু বলে নাইম , বলার সময় ফুঁপিয়ে ওঠে , চোখ দিয়ে টপ টপ কয়েক ফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসে । এই দুনিয়ায় যে ওর আপন বলে আর কেউ নেই সেটা ভুলে গিয়েছিলো নাইম , আজ আবার নতুন করে বুঝতে পারলো । আজ মায়ের কথা আবার মনে পরলো নাইমের ।
আর সেই পানি দেখে ডলির রাগ কমার বদলে আরো বেড়ে যায় , উল্লাস করে ওঠে রাগ নামক সেই রাক্ষাস , পূর্ণ উদ্দমে ঝাপিয়ে পরে আহত নাইম কে শেষ আঘাত করার জন্য ।
মুরুদ নাই দুই ট্যাকার , ত্যাড়েক দেহায় একশো ট্যাকার , যা বাইর হ আমার ঘর থেইকা , দেখ তোর লইগা কে খাওন লয়া বইয়া রইসে । প্রথমে মুখে বলে ডলি , কিন্তু তাতে তৃপ্তি হয় না , আরো চাই আরো চাই করে হাহাকার করে ওঠে রাগ রাক্ষস । আর সেই দাবি পুরুন করার জন্যই হয়তো , ডলি নাইম কে হাত ধরে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় । রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানার উপর গিয়ে বসে । দূর থেকে ডলির এই ফুঁসতে থাকা শরীর আর রক্ত রাঙ্গা চোখ দেখলে মনে হবে সত্যি সত্যি কোন কিছু এসে ভর করেছে ওর উপর ।
*****
ওস্তাদজির কাছে এমন কথা শুনে ডলির কলিজা কেঁপে উঠেছে । আজকাল নাইমের ভবিষ্যৎ নিজের ভবিষ্যৎ বলে মনে হয় । তাই যখন নাইমের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে তখন ডলির সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায় । ডলি সিদ্ধান্ত নেয় , আজকে থেকে ও শক্ত হবে , প্রয়োজনে শাসন করবে । সিধান্ত তো নিয়ে নিয়েছে , কিন্তু সেই সাথে একটা ভয় ও যোগ হয়েছে , যদি শাসন মেনে না নেয় ? যদি ছেড়ে চলে যায় ?
মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেহায়া মনে হয় ডলির । একটা অচেনা অজানা ছেলের জন্য কত আকুলতা , সারাক্ষণ ভয়ে থাকে , সারাক্ষণ ভাবে এমন করলে যদি রাগ করে , অমন করলে যদি চলে যায় । অথচ ওর নিজের ই ছিলো , কিন্তু কদর করেনি । একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে । তখন ওর চোখে ছিলো রঙ্গিন স্বপ্ন , ছোট ছোট হাত পায়ের লালচে চামড়ার , তোয়ালে প্যাঁচানো চোখ দুটো পিট পিট করে যখন তাকিয়েছিলো , তখন ওর মনে হয়েছিলো এ হচ্ছে ওর ক্যারিয়ারের বাধা , স্বপ্ন ভাঙার হাতুড়ি , দুধ খাইয়েছিলো সেদিন দুবার মাত্র , না কোন টান অনুভব করেনি , বরং মনে হয়েছে বোঝা । নষ্ট করে দিচ্ছে ওর শরীরের সৌন্দর্য । বুক থেকে দুধ নয় , টেনে নিচ্ছে ওর জীবনী শক্তি ।
গোলাম মহসিন ছিলো ওর সাথে , দেখা করতে এলে ডলি কপাল কুঁচকে বলেছিলো , মহসিন চাচা একে কোথাও দিয়ে দেয়ার বেবস্থা করেন । একটি নাম দেয়ার ও প্রয়োজন মনে করেনি । আজ বুক ফেটে যায় , কিন্তু ডলি কাঁদে না , কাঁদার অধিকার ওর নেই । সুধু লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে , পাশে বসা টেকো মাথার লোকটি আড় চোখে তাকায় ।
কোথায় আছে কেমন আছে বড় দেখতে ইচ্ছে করে আজকাল । কিন্তু দেখতে যাওয়ার সামর্থ্য ডলির নেই। সাত সমুদ্র পারি দিতে যে টাকা লাগে সেটা ডলি আজীবনে সংগ্রহ করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে । ডলি জানে খুজে পেটে সমস্যা হবে না । মহসিন চাচা একটা কাগজ এনে ওর কাছে দিয়েছিলো । কি মনে করে যেন ডলি সেই কাগজ ফেলেনি । যেদিন বুঝতে পারলো আর নাইকা হওয়ার চান্স নেই , যেদিন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছেড়ে এই টিনশেডে উঠে এসেছিলো , সেদিন এক ভুলে যাওয়া সুটকেসে সেই কাগজ পায় ডলি । যা আজো ওর আলমারির কোনে যত্ন করে রাখা আছে । কেন রেখছে ডলি জানে না । হয়তো ওর অবচেতন মন এখনো আশায় আছে একদিন ঠিক সেই সাত সমুদ্র পার হতে পারবে ।
ডলি ও ভাবে থাকুক না একটু আশা , আশা না থাকলে মানুষ ঠিক মানুষ থাকে না । এই অসম্ভব আশা গুলোই মানুষকে চালিত করে । তবে ডলির মনে নতুন এক আশা জেগেছে , নাইম কে ওর স্বপ্ন পুরনে সাহায্য করার। যে করেই হোক ডলি তা করবে ।
****
সারাদিন আজকা কি কি করলি ? নাইম বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় আছে , আজকাল ডলির সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গেছে নাইম , আগের মতন লজ্জা পায় না , আর ডলির উপস্থিতিও আগের মতন ওকে বিব্রত করে না । যদিও এখনো নাইম রাতের বেলা নিচে বিছানা করে , যত কিছুই হোক একজন অনাত্মীয় জুবা পুরুষের সাথে এক বিছানায় ঘুমানো ডলি শ্রেয় মনে করে না । এক ঘরে থাকে তাই নিয়ে কত কথা হয় । কিছুদিন আগে বাড়ী ওয়ালা বলে গেলো , আফা আপনে অন্য জায়গায় ঘর দেহেন , বুঝেন ই তো , সমাজ নিয়া চলি আমরা । বারি ওয়ালা লোকটি ভালো , হুমকি ধামকির বদলে ভালো ভাবে বলেছে । ডলি যদিও এখনো বারি খোঁজা শুরু করেনি তবে কথা দিয়েছে , বাড়ী পেলে ছেড়ে দেবে ।
একটা সিনেমা দেখলাম আপা , সেই সিনেমা , হেব্বি ফাইট , নাইম সব গুলো দাঁত বের করে বলে । উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে বলে ফেললো , নাইম চেয়েছিলো যে বলবে সুধু সিনেমা দেখছে । আর যদি ডলি নাম জিজ্ঞাস করে আগের কালের সামাজিক একটা সিনেমার নাম বলে দেবে । এখন যদি ডলি নাম জিজ্ঞাস করে তাহলে কি নাম বলবে ভাবতে শুরু করেছে । যে সিনেমা ও দেখছে সেটার নাম বলা যাবে না । কারন ওটায় ডলি ও আছে , একটা গানের সিনে । তবে আজকে নাইম একটা প্রতিজ্ঞা করেছে , এর পর থেকে সিনেমা হলে ডলি আছে এমন কোন সিনেমা আর ও দেখবে না । ডলির গানের সময় আশেপাশের লোকজন যখন খারাপ মন্তব্য করেছিলো , তখন নাইমের খুব খারাপ লেগেছে । ইচ্ছে হয়েছিলো লোকটার দাঁত ফেলে দেয় ঘুষি মেরে । অন্য লোকজন ডলিকে কু দৃষ্টিতে দেখলে নাইমের খুব খারাপ লাগে । অনুভূতটা ঠিক নাইম নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি ।
ডলি অবশ্য নাইমের এই অবস্থা খেয়াল করলো না । ওরে বাবা বলস কি !! মজা করে মিথ্যা অবাক হওয়ার ভান করে ডলি , তারপর জিজ্ঞাস করে , নাম কি? কথা বলতে বলতেই ডলি নিজের * খুলছে ।
“কোপা মজনু” হাতরে হাতরে কোন নাম খুজে না পেয়ে নাইম সত্যি নামটাই বলে ফেলে ।
নামটা শুনেই ডলির শরীরে যেন আগুন ধরে যায় , এই পর্যন্ত বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভায়োলেন্স যুক্ত সিনেমা হচ্ছে এই কোপা মজনু , সেই সাথে আছে অস্লিলতার সীমা লঙ্ঘন । যা আজকালের অন্য অশ্লীল সিনেমাকেও বহুদুর পেছনে ফেলে দিয়েছে । ডলি নাইম কে বার বার নিষেধ করেছে এমন সিনেমা দেখতে । বার বার বলেছে এমন সিনেমা দেখবি যেখান থেকে কিছু সেখার আছে । কিন্তু নাইম কিছুতেই কথা শোনে না । ডলির রাগের প্রথম কারন হচ্ছে , নাইমের আচরণ ওকে স্পষ্ট ইংগিত দিচ্ছে , যে আশায় ও যেমন তেমন করে টাকা জোগাড় করছে , এর ওর পেছনে ঘুরাঘুরি করছে , সেই আশায় নাইম পানি ঢেলে দেবে । নিজের জীবনের তো সব আশা শেষ । এখন নাইম কে নিয়ে দেখা স্বপ্ন ভঙ্গের এমন ইংগিত পেয়ে ভীষণ দুঃখ রাগে পরিনত হচ্ছে ।
আর সবচেয়ে বড় যে কারন ডলির রাগের সেটা হচ্ছে একটা গানে ডলি নিজেও আছে। ঠিক রাগ না লজ্জা বোঝা যাচ্ছে না , তবে লজ্জা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি , আর সেই লজ্জা ঢাকা দেয়ার জন্য রাগ কে আবরণ হিশেবে ব্যবহার করছে ডলির মন । আর রাগ যখন লজ্জার আবরণ হিশেবে কাজ করে , তখন সেই রাগ হয় ভয়ংকর ।
সিনেমাটা তৈরি হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে , কিন্তু মুক্তি পেতে চার বছর সময় লেগে যায় । বহু কাটছাট করে যা মুক্তি পায় তাও কম কিছু না ।
হাতের * ছুরে মারে ডলি শায়িত নাইমের দিকে , চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আছে , সেখানে জমা হয়েছে অল্প টলটলে পানি , যা এখনো বাধ ভাঙার জন্য যথেষ্ট নয় । বুক ওঠা নামা করছে দ্রুত , নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে ।
ডলির এই ভয়ংকর মূর্তি দেখে কুঁকড়ে যায় নাইম , আজ পর্যন্ত ডলির স্নহের রুপ দেখছে ও , সামান্য রাগ যে দেখেনি তাও নয় । কিন্তু আজকের ডলি অন্যরকম , জীবনে কাউ কে দেখে এমন ভয় পায়নি নাইম।
হারামি নেমকহারাম , তোর লইগা খাইট্টা মরতাসি , আর তুই ফুর্তি কইরা বেড়াস । ওঠ হারামজাদা ওঠ , এই বলে নাইম কে টেনে তোলে ডলি । হতভম্ভ নাইম কি করবে বুঝে পায় না । অন্যায় ও করেছে , তাই বলে ডলি ওকে এমন ভাবে বলবে , তা নাইম ভাবেনি ।
এদিকে নাইম কে টেনে নামাতে নামাতে ডলির রাগ আরো বাড়ছে । এ যেন রাগ নয় রক্ত পিচাশ , একটু রক্ত পেলে যেমন পিচাশ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে , আরো রক্ত টেনে নিতে চায় । ঠিক তেমনি ডলির রাগ , নাইম কে গালাগালি করে আর ফুলে ফেপে উঠছে । আরো জঘন্য ভাবে আঘাত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
মাইনসের ট্যাকায় , খাবি দাবি আর খোদার খাসী হবি না ? নিজের কিছু করনের মুরদ তো নাই ই , চেষ্টাও নাই। নিমকহারাম , তোর লইগা যে এতো কষ্ট করতাসি , সেই কষ্টের কি দাম দিলি তুই ,
ডলি নিজেও বুঝতে পারছে না কি বলছে ও । বুঝলে হয়তো খাওয়ার খোটা দিতো না । এদিকে নাইম যেন অবস হয়ে গেছে , এই প্রথম ওকে কেউ খাওয়ার খোটা দিচ্ছে । দিচ্ছে তো দিচ্ছে , কিন্তু এর উত্তরে নাইমের কাছে বলার মত কিছুই নেই । কারন যা বলছে তা সত্যি ই বলছে । নাইমের মনে হচ্ছে ডলি যদি ওকে কুকুরের মত মারতো তাতেও ও এতো কষ্ট পেতো না । কিন্তু খাওয়ার খোটা সহ্য করার মত নয় ।
না করবি লেখা পড়া , না শিখবি কিছু , এহ নায়ক হবি , নায়ক হওয়া কি এত্ত সহজ , তোর মতন এমন হাজার নাইম প্রতিদিন আসে আর যায় , কেউ খবর ও রাহে না । আইসে আমার নায়ক হইতে । এহন থাইকা যা বল্মু তা যদি করতে পারস তাইলে আমার লগে তোর যায়গা আছে , নাইলে তোর মতন খোদার খাসী খাওইয়া পরাইয়া পালনের সখ আমার নাই । যা বাইরে যা দেখ দুই ট্যাকা কামাই করতে পারস কিনা , ট্যাকা কামাই করা সহজ না । নাইমের বাহু ধরে বেশ কয়েকটি ঝাকি মেরে , চোখের সামনে আঙুল তুলে , রক্ত চক্ষু দেখিয়ে বলে ডলি ।
আমার ও তোমার খাওন খাওনের সখ নাই , আমি কামাই কইরা খামু । আর থাকতে না পেরে , মিন মিন করে সুধু এটুকু বলে নাইম , বলার সময় ফুঁপিয়ে ওঠে , চোখ দিয়ে টপ টপ কয়েক ফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসে । এই দুনিয়ায় যে ওর আপন বলে আর কেউ নেই সেটা ভুলে গিয়েছিলো নাইম , আজ আবার নতুন করে বুঝতে পারলো । আজ মায়ের কথা আবার মনে পরলো নাইমের ।
আর সেই পানি দেখে ডলির রাগ কমার বদলে আরো বেড়ে যায় , উল্লাস করে ওঠে রাগ নামক সেই রাক্ষাস , পূর্ণ উদ্দমে ঝাপিয়ে পরে আহত নাইম কে শেষ আঘাত করার জন্য ।
মুরুদ নাই দুই ট্যাকার , ত্যাড়েক দেহায় একশো ট্যাকার , যা বাইর হ আমার ঘর থেইকা , দেখ তোর লইগা কে খাওন লয়া বইয়া রইসে । প্রথমে মুখে বলে ডলি , কিন্তু তাতে তৃপ্তি হয় না , আরো চাই আরো চাই করে হাহাকার করে ওঠে রাগ রাক্ষস । আর সেই দাবি পুরুন করার জন্যই হয়তো , ডলি নাইম কে হাত ধরে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় । রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানার উপর গিয়ে বসে । দূর থেকে ডলির এই ফুঁসতে থাকা শরীর আর রক্ত রাঙ্গা চোখ দেখলে মনে হবে সত্যি সত্যি কোন কিছু এসে ভর করেছে ওর উপর ।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।