26-08-2025, 06:41 PM
(This post was last modified: 26-08-2025, 07:06 PM by gungchill. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৬
আজকাল জয় খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে । অনেক দেরিতে দলে যোগ দিয়েছে ও । আরিফ ভাই ওকে আগে কলেজ লাইফ থেকেই চিনতো । তাই ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর পর ই অফার করেছিলো । কিন্তু জয় বার বার এড়িয়ে গেছে , বলতে গেলে রাজীব ওকে বিরত রেখছে । কিন্তু মাস দুয়েক আগে নিজে থেকেই রাতের বেলা কল করে আরিফের কাছে সাহায্য চায় জয় । সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি আরিফ । বিনিময়ে দলে জয়েন করার প্রস্তাব দেয় জয় কে । জয়ের ও মাথায় ভুত চেপেছিলো , যে কোন মূল্যে ওর সাহায্য দরকার ছিলো । কিছুতেই নিজেকে কারো কথার নিচে রাখতে চায়নি জয় ।
তবে দলে জয়েন করার পর বুঝতে পেরেছে কতটা ভুল করেছিলো ও । যদি ভার্সিটি লাইফের প্রথমেই জয়েন করে ফেলতো তাহলে এতদিনে ভালো পজিশনে থাকতো । জয়ের কাছে মনে হচ্ছে এটাই ওর আসাল যায়গা , এখানেই ওর পটেনশিয়ালের সম্পূর্ণ ব্যাবহার হবে । জয় এখানে এসে দেখছে কত কিছু করার আছে এখানে । জয় প্রথিবিতে নিভৃতে জন্ম নিয়ে নিভৃতে চলে যাওয়ার জন্য জন্ম নেয়নি । বড় কিছু করার জন্য জন্ম নিয়েছে । আর এই দলের সিঁড়ি বেয়েই ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব ।
দল ও ওকে পেয়ে খুশি , ডাইন্যামিক ছেলে জয় , ভালো পপুলারেটি আছে নিজ ডিপার্টমেন্টে । এছাড়া ভার্সিটি স্পোর্টস এ বেশ পরিচিত মুখ জয় অনেকেই চেনে । তাছাড়া রোমিও নাম ছাড়া অন্য কোন ব্যাড নেম নেই । আরিফ চিন্তা করেছে একে এভাবে ব্যয় করবে না , কয়েক জন কে ডিঙিয়ে হলেও নেক্সট কমিটিতে ওকে একটা মোটামুটি পদ দেবে , তাতে আরিফের ই লাভ হবে। ছেলেটা ওর হয়েই কাজ করবে । তা ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জয় পয়সা ওয়ালা বাপের ছেলে । ভালো ফান্ডিং করতে পারবে।
আগামিকাল দলের মিটিং আছে জয়ের উপর দায়িত্ব পড়েছে নিজ ডিপারট্মেন্ত থেকে ছেলে জোগাড় করার । মিনিমাম ২০০ ছেলে দরকার হবে । ইদানিং আরিফের বিপক্ষ পার্টি দলের ভেতর ই মাথা চারা দিয়েছে । তাই আরিফ দেখিয়ে দিতে চায় এখনো ওই সেরা । জয় ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে । যদিও জয়ের ভালো পোস্ট নেই , তারপর ও আরিফের সরাসরি পাওয়ারে জয় এসব করছে ।
যাকে কথা দিয়ে পারছে তাকে কথা দিয়ে কনভিন্স করছে , যাকে টাকা দেয়ার দরকার হচ্ছে টাকা দিচ্ছে । কেউকে রাজি করাতে হালকা ভয় দেখাচ্ছে ।
প্রথম বর্ষের একটা ছাত্র কে যখন জয় সামান্য ভয় দেখাচ্ছিলো , তখনি রাজীব সেদিক দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো । কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হয় । রাজীবের বুঝতে অসুবিধা হয় না জয় কি করছে । রাজীবের চোখে মুখে একটা অনুভুতি ফুটে ওঠে । যাতে লেখা থাকে ‘এতো নিচে নামতে পারে কেউ এতো দ্রুত’।
জয় ও কম যায় না , রাজীব কে দেখে যেন আরো বেশি বেয়াড়া হয়ে ওঠে , প্রথম বর্ষের ছেলেটির কলার চেপে ধরে । এতে করে ছেলেটি বেশ ভড়কে যায় , জয়ের সাথের ছেলে পেলেও বেশ অবাক হয়ে যায় , কারন ওই প্রথম বর্ষের ছেলে এমনিতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলো । যতক্ষণ জয় ওই ছেলের কলার চেপে ধরে ছিলো ততক্ষণ জয়ের দৃষ্টি রাজীবের দিকে ছিলো । ভাব এমন কলার ধরেছে অন্যজনের কিন্তু ফিল নিচ্ছে ও রাজীবের কলার ধরেছে ।
রাজীব একটা ডিজগাস্ট লুক দিয়ে সেই যায়গা ছেড়ে যায় । রাজীব চলে যেতেই জয় ওই ছেলের কলার ছেড়ে দেয় । নিজে হাতেই কলার ঠিক করে দেয় , তাপর বেশ শান্ত ভাবে বলে “ চলে এসো কিন্তু ভাইয়া, বড় ভাইয়ার কথা শুনবে না?”
ছেলেটা আরো ভড়কে যায় , কারন যে একটু আগে কলার চেপে ধরে রেখেছিলো সেই এখন এতো নরম ভাবে কথা বলছে । ছেলেটি মাথা ঝাঁকিয়ে শ্বায় জানিয়ে দ্রুত বিদায় হয় ।
“ভাই এইটা কি হলো , এতো এগ্রেসিভ হয়ে গেলা কেনো?” পাশে থাকা একটি ছেলে জিজ্ঞাস করে । জয় মুচকি হেসে বলে , “কিছু মানুষ আছে , যাদের দেখলেই হাত নিশপিশ করে ।“
“ওই কথা , আমাদের দেখাইয়া দিও , সাইজ করে দিবো” অন্য একটি ছেলে পাশ থেকে বলে ।
“ আরে বাদ দাও তো ভাই , চলো দুই একটা মেয়ে জোগাড় করি , মেয়ে না হলে আমার আবার ভালো লাগে না কেমন জানি খালি খালি লাগে , মেয়ারা হলো সব জায়গার সৌন্দর্য , যেখানে মেয়ে নাই সেখানে সৌন্দর্য নাই” জয় নিজের সাদা সার্টের হাটা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত আনতে আনতে বলে । তারপর চুল গুলো ঠিক করে নেয় । নিজের লুক ঠিক আছে নিশ্চিত হয়ে জয় সামনের দিকে বাড়ে ,
পাশ থেকে একটি ছেলে বলে “ ঠিক বলসো ভাই , মেয়ে থাকলে ব্যাপারটা আরো গুরুত্ব পায় , আরিফ ভাই খুব খুশি হবে”
কিছুদুর যেতেই চার পাঁচ জন মেয়ের একটা গ্রুপ দেখতে পায় , জয় নিজের সাথে থাকা ছেলেদের আর সামনে আসতে না করে। বলে “ তোমরা এখানেই থাকো , এরা মেয়ে এদের মাসল পাওয়ার বা টাকার পাওয়ার দিয়ে বশে আনা যায় না , এদের বশে আনতে লাগে সুইট টক আর ইনোসেন্ট লুকস , তোদের মতন গুন্ডা নিয়ে গেলে অন্য কিছু ভাববে” এই বলে জয় আর দাড়ায় না।
নিজে একাই মেয়েদের সামনে গিয়ে বলে “ Hi ladies, ফার্স্ট ইয়ার?”
মেয়ে গুলো হঠাত করে আকাশ থেকে পড়ার মত করে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে নিজের মেয়ে পটানো হাসি নিয়ে হাজির দেখে একটু হতচকিয়ে যায় , সবাই মাথা নারিয়ে জানায় হ্যা ।
“ তা কেমন চলছে ভার্সিটি লাইফ ? এঞ্জয় করছো?” জয় নিজের স্মারটনেস পুরোটা ব্যাবহার করে বলে
মেয়েদের মধ্যে দুই একজন খুব ধিরে বলে হ্যা । জয় এবার মেয়ে গুলর পাশেই বসে পরে , জিজ্ঞাস করে “ লেখাপড়া কেমন চলছে?”
সবাই বলে ভালো , দুই একজনের মুখে মুচকি হাসি দেখা যায় । এই মেয়েদের মাঝে বেশ কয়েকজন জয় কে দূর থেকে আগে দেখছে । হ্যান্ডসাম , ফানি , পপুলার , এরা দূর থেকে দেখছে আর এডমায়ার করেছে । আজকে সামনে দেখে বেশ ভড়কে গেছে।
“ শোন , কোন সমস্যা হলে ভাইয়া কে বলবা” জয় একদম ক্যাজুয়াল হয়ে বলে । তারপর জিজ্ঞাস কজরে “ সুধু পড়াশুনা করার জন্য ভার্সিটি তে আসছো ? নিজেকে তৈরি করতে হবে না দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য? আর তোমারা হলে নারী শক্তি , তোমাদের ত সবার আগে থাকা দরকার , আমি বিশ্বাস করি একমাত্র নারীরা যদি সমান অংশ গ্রহন করে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে”
জয়ের হঠাত এমন কথায় মেয়ে গুলো একটু গুলিয়ে যায় , কিন্তু জয় নিজের বিখ্যাত হাসি হেসে ওদের মনোযোগ ধরে রাখে , তারপর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে নারী শক্তির উপর সবক দেয়ে , এবং নিজেকে নারী শক্তির পক্ষের একজন হিশেবে প্রমান করে। এবং মেয়েগুলো মিটিং এ আসার জন্য রাজি হয়ে যায় । জয় বিজয়ীর হাসি নিয়ে নিজের দলের ছেলেদের কাছে ফিরে যায় ।
ছেলেগুলো জিজ্ঞাস করে “ ভাই ওরা আসবে?”
জয় বলে “ সবাই হয়তো আসবে না তবে দুই একজন আসবে”
“ কিভাবে রাজি করালে ভাই” একজন কাতর স্বরে জিজ্ঞাস করে
“ আরে মেয়ে মানুষ , ওদের একটু লিফট করলেই গলে যায়, শোন একটা টিপস দেই , যদি কোন মেয়ে পটাতে চাও , নিজের জন্য অথবা অন্য কোন কারনে , সব সময় ভাব নিবা তুমি ফেমিনিস্ট , মেয়ে মানুষ সুযোগ পেলেই মাথায় উঠবে , আর একবার যদি মাথায় ওঠে আর তুমি মাথা থেকে না নামাও জীবনে নামবে না, তুমি যতদিন চাইবে তোমার সাথে থাকবে, যদি সারা জীবন রাখতে চাও , মাথায় তুলেই রাখতে হবে , মেয়ে মানুষের সবচেয়ে পছন্দের বসার স্থান হচ্ছে মাথা , মাথায় বসে এরা তোমার কান ধরে রাখবে ” জয় বিজ্ঞ লোকের ভাব নিয়ে বলল
“ কিন্তু ভাই মাথায় উঠলে ত জিন্দেগি বরবাদ” একটি ছেলে প্রশ্ন করলো
“ আরে তুমি কি সত্যি সত্যি মাথায় উঠাবা নাকি , ভাব নিবা , কিন্তু যদি দেখো আর সহ্য করতে পারতেসো না , সময় মতন নামিয়ে দিবা, নামায়া দিতেও বেশি কষ্ট করা লাগে না , একটা দুইটা কথা বলেই নামিয়ে দেয়া যায় । এখন চলো আরো কিছু পাখি শিকার করি, একদিনের জন্য একটা টিপস ই যথেষ্ট” এই বলে জয় আগে বাড়ে ।
জয়ের এমন স্বতঃস্ফূর্ত আর বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণ ওর সাথের ছেলে পেলের মন ও অল্প দিনে জয় করে ফেলছে । দলের ভেতর জয়ের জনপ্রিয়তা অল্প হলেও আছে ।
*****
বিকাল দিকে জয় যখন বাইকে করে যাচ্ছিলো তখন চত্তরে রানী কে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় , বাড়ি ফেরার জন্য কিছু খুজছে । জয় নিজের বাইক নিয়ে রানীর সামনে দাড়ায় । হ্যাল্মেট খুলে বলে “ কিরে তো সখি কই আজকে”
আচমকা সামনে বাইক ব্রেক করায় রানী চমকে ওঠে , দু পা পেছনে চলে যায় । তারপর ধাতস্ত হয়ে বলে , “তুমি কি চমকে না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আসতে পারো না?” বেশ বিরক্ত শোনায় রানীর গলা । আজকাল জয় আর রানীর ছাদের দেখা সাক্ষাত হয় না , জয় বিজি থাকে রাত ৯-১০ টার আগে বাসায় ফিরে না । তবে ক্যাম্পাসে দেখা হলে রানী একটু এড়িয়েই চলে জয় কে ।
“ কিছু কিছু মানুষ ঘোরের মাঝে থাকে তাদের চমকে দিয়ে ঘোর থেকে বের করতে হয়” জয় নির্লিপ্ত ভাবে বলে
“ সব দায়িত্ব কি তোমার নাকি” ঝাঁজের সাথে বলে রানী ,
“ যেহেতু জনসেবায় নেমেছি , দায়িত্ব দেয়ার আগেই কাঁধে তুলে নেয়ার অভ্যাস করতে হবে” জয় হেসে বলে
“ আর অভ্যাস করার জন্য তুমি আমাকেই পাও সুধু”
“ কি করবো বল তুই সামনে পরে যাস, আমার কি দোষ”
“নাহ তোমার আবার দোষ থাকে নাকি , তা রাজনীতি কেমন চলছে তোমার”
“ আমি হচ্ছি রাজা , রাজনীতি আমার রক্তে বুঝলি” বেশ ভঙ্গি করে বলে জয় ,
“ তাই ? তুমি নিজেকে রাজা ভাবো”
“ তুই যদি রানী হোস , আমি ত রাজাই হবো” কথাটা জয় একেবারে হঠাত করেই বলে ফেলে ।
মুহূর্তে রানীর শরীর রিজিড হয়ে যায় । রাজীবের বলা অনেকদিন আগে একটা কথা মনে পরে যায় , রাজীব বলেছিলো ,’যেদিন তোর রাজা আসবে সেদিন তুই এমনিতেই বুঝে যাবি”
কিন্তু রানী তো বুঝতে চায় না , একমাত্র লেখাপড়া আর ক্যারিয়ার ছাড়া আর কিছুই ভাবতে চায় না রানী । কিন্তু জয় সামনে এলেই গড়বড় হয়ে যায় ওর প্রতিজ্ঞার । আর এই কারনেই জয় কে এড়িয়ে চলে রানী ।
রানী মনে মনে বলে ‘আমি বুঝতে চাই না ,বুঝতে চাই না’
রানীকে একভাবে বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুনে , জয় হাসতে হাসতে বলে , “কি জাদুটোনা করিস বিড়বিড় করে , আমার জন্য জাদুটোনার দরকার নাই”
“ আপদ বালাই বিদায়ের দোয়া এটা , কোন জাদুটোনা না , এখন যেখানে জাচ্ছিলে যাও , আমার বাসায় যেতে হবে , সামনে বাইক দাড়িয়ে থাকলে , সি এন জি পাবো না”
“ আমি থাকতে সি এন জি লাগবে কেনো, চল তোকে নামিয়ে দেই” জয় বাইকের পেছনের সিট দেখিয়ে বলে ।
“ তুমি রাজা তুমি কেনো কষ্ট করতে যাবে , যাও গিয়ে দুনিয়া উদ্ধার করো” রানী হালকা বেঙ্গ করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে ,
রানীর বলার ধরন দেখে হাসে জয় , ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বলার ধরন টি বেশ ভালো লাগে ওর কাছে । যখন রানী ঐভাবে কথা বলে তখন ওকে দারুন কিউট লাগে জয়ের কাছে । এমনিতে রানীর ঠোঁট খুব সুন্দর । বেশি পাতলা ও না আবার ভারি ও না , হালকা গোলাপি আভা আছে , ফর্সা মুখে হলকা গলাপি ঠোঁট দারুনলাগে দেখতে । এমনিতে রানী সাধারন বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু বেশি ই ফর্সা , তবে আজকাল দৈনিক রোদে ঘুরাঘুরির কারনে হালকা তামাটে হয়েছে । কিন্তু তাতে ওর সৌন্দর্য তেমন একটা কমেনি । এই মুহূর্তে রানী একটা ওফ হোয়াইট সালাওয়ার স্যুট পরে আছে , সব সময়ের মত চোখে কাজল আর কলাপে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়েছে । চুল গুলো পেছনে নিয়ে রাবার ব্যন্ড দিয়ে পনি টেল করে রাখা , কানে দুটো বড় বরর ঝুমকা ঝুলছে । মাথা নাড়িয়ে কথা বলার সময় ঝুমকা দুটো বার বার দুলছে ।
“ আরে রাজার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে রানীর দেখাশুনা করা , চল তুই ,আমার আর কাজ নেই এখানে” জয়ের আরো আড্ডা দেয়ার ইচ্ছা ছিলো বন্ধুদের সাথে কিন্তু সেই ইচ্ছা কেন্সেল করে দিয়েছে ।
“ তোমার বাইকের পেছনের সিট খুব উঁচু সাইড হয়ে বসা যায় না” রানী আবারো জয় কে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে ,
কিন্তু জয় কিছুতেই ছেড়ে দিতে নারাজ , চিন্তা ভাবনা না করেই বলে , “দু পা দুই দিকে দিয়ে বস”
রানী একটু রেগেই যায় , বলে “ গাধার মত কথা বলো কেনো? সালোয়ার কামিজে কি ওই ভাবে বসা যায় , বেকুব”
অন্য কেউ জয় কে বেকুব বললে , হয়তো এতক্ষনে তুলকালাম কান্ডো হয়ে যেতো । কিন্তু রানী আবারো ঠোঁট বাঁকিয়ে যখন বেকুব বলল তখন জয়ের মন্দ লাগার চেয়ে ভালোই লাগলো । মনে মনে বলল , তুই আমাকে এরকম কিউট ভাবে সারাদিন বেকুব ডাকতে পারিস , আমি কিছু মনে করবো না ।
“ দেখ বৃষ্টি হতে পারে , তারাতারি চল” জয় তাড়া দেয়
ভ্রু কুঁচকে তাকায় রানী জয়ের দিকে , সেটা দেখে জয় বলে “ সত্যি বলছি মোবাইলে দেখলাম ৭৫% চান্স”
“ যতই চান্স থাক , অন্তত দু চার ঘন্টার মাঝে বৃষ্টি হবেনা” রানী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ,
“ এই রানী” পেছন থেকে কে যেন ডেকে ওঠে , মেয়েলি কণ্ঠ । রানী আর জয় দুজনেই ডাক লক্ষ্য করে তাকায় , দেখে তিন চারজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু দূরে , ওরা হাসছে । জয় ওদের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বভাব সিদ্ধ মেয়ে ভুলানো হাসি দেয়। সেটা দেখে রানীর চেহারা কালো হয়ে যায় । মেয়ে গুলো ওর ক্লাসের , ঠিক বান্ধবি বলা যাবে না তবে কথা বার্তা হয় । মেয়ে গুলো জয়ের হাসির উত্তরে হাত নেড়ে হাই বলে , জয় ও তাই করে ।
রানীর শরীর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে । না চাইতেও হিংসা হয় । মন চায় জয়ের হাত ধরে মুচড়ে দেয় । আর ওই মেয়েগুলোর দাঁতে কালি মাখিয়ে দেয় । কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে জয় কে দেখছে । এই মেয়েদের যে কি হবে , হ্যাডসাম ছেলে দেখলেই এদের লালা ঝরে । আর সেই ছেলের যদি বাইক থাকে তাহলে তো কথাই নেই ।
“কে রে?” মেয়েগুলোর মাঝ থেকে একজন জিজ্ঞাস করে , কিন্তু রানী কোন উত্তর দেয় না সেই প্রশ্নের , বরং বলে “ এখন যাই পরে কথা হবে” এই বলে রানী বাইকে ওঠার চেষ্টা করে , কিন্তু বেশ উঁচু হওয়ায় দুই তিন বারের চেষ্টায় উঠতে সক্ষম হয় । তবে একটু দূরত্ব রেখে বসে ।
জয়ের মুখে মুচকি হাসি , মনে মনে ওই মেয়েগুলো কে ধন্যবাদ জানায় , শেষ বারের মত মেয়ে গুলোর দিকে একটা হিরো টাইপ হাসি ছুরে মারে , তারপর রানী কে বলে ধরে বসতে । কিন্তু রাগান্বিত রানী জানিয়ে দেয় লাগবে না । রানীর উত্তর শুনে জয়ের ঠোঁটে একটা দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় ।
বাইক স্টার্ট করে জয় , ইঞ্জিন গরম করার পর , জয় ইচ্ছে করেই বাইক কে লাফিয়ে উঠতে দেয় হালকা ভাবে । ভয়ে আউউ করে ওঠে রানী, জয়ের কাঁধ ধরে নিজেকে রক্ষা করে । তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে , “ঠিক মত চালাবে না আমি নেমে যাবো”
জয় হেসে বলে “শক্ত করে ধরে রাখ” তারপর স্মুথ ভাবে বাইক নিয়ে এগিয়ে যায় ।
*****
আজকাল জয় খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে । অনেক দেরিতে দলে যোগ দিয়েছে ও । আরিফ ভাই ওকে আগে কলেজ লাইফ থেকেই চিনতো । তাই ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর পর ই অফার করেছিলো । কিন্তু জয় বার বার এড়িয়ে গেছে , বলতে গেলে রাজীব ওকে বিরত রেখছে । কিন্তু মাস দুয়েক আগে নিজে থেকেই রাতের বেলা কল করে আরিফের কাছে সাহায্য চায় জয় । সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি আরিফ । বিনিময়ে দলে জয়েন করার প্রস্তাব দেয় জয় কে । জয়ের ও মাথায় ভুত চেপেছিলো , যে কোন মূল্যে ওর সাহায্য দরকার ছিলো । কিছুতেই নিজেকে কারো কথার নিচে রাখতে চায়নি জয় ।
তবে দলে জয়েন করার পর বুঝতে পেরেছে কতটা ভুল করেছিলো ও । যদি ভার্সিটি লাইফের প্রথমেই জয়েন করে ফেলতো তাহলে এতদিনে ভালো পজিশনে থাকতো । জয়ের কাছে মনে হচ্ছে এটাই ওর আসাল যায়গা , এখানেই ওর পটেনশিয়ালের সম্পূর্ণ ব্যাবহার হবে । জয় এখানে এসে দেখছে কত কিছু করার আছে এখানে । জয় প্রথিবিতে নিভৃতে জন্ম নিয়ে নিভৃতে চলে যাওয়ার জন্য জন্ম নেয়নি । বড় কিছু করার জন্য জন্ম নিয়েছে । আর এই দলের সিঁড়ি বেয়েই ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব ।
দল ও ওকে পেয়ে খুশি , ডাইন্যামিক ছেলে জয় , ভালো পপুলারেটি আছে নিজ ডিপার্টমেন্টে । এছাড়া ভার্সিটি স্পোর্টস এ বেশ পরিচিত মুখ জয় অনেকেই চেনে । তাছাড়া রোমিও নাম ছাড়া অন্য কোন ব্যাড নেম নেই । আরিফ চিন্তা করেছে একে এভাবে ব্যয় করবে না , কয়েক জন কে ডিঙিয়ে হলেও নেক্সট কমিটিতে ওকে একটা মোটামুটি পদ দেবে , তাতে আরিফের ই লাভ হবে। ছেলেটা ওর হয়েই কাজ করবে । তা ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জয় পয়সা ওয়ালা বাপের ছেলে । ভালো ফান্ডিং করতে পারবে।
আগামিকাল দলের মিটিং আছে জয়ের উপর দায়িত্ব পড়েছে নিজ ডিপারট্মেন্ত থেকে ছেলে জোগাড় করার । মিনিমাম ২০০ ছেলে দরকার হবে । ইদানিং আরিফের বিপক্ষ পার্টি দলের ভেতর ই মাথা চারা দিয়েছে । তাই আরিফ দেখিয়ে দিতে চায় এখনো ওই সেরা । জয় ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে । যদিও জয়ের ভালো পোস্ট নেই , তারপর ও আরিফের সরাসরি পাওয়ারে জয় এসব করছে ।
যাকে কথা দিয়ে পারছে তাকে কথা দিয়ে কনভিন্স করছে , যাকে টাকা দেয়ার দরকার হচ্ছে টাকা দিচ্ছে । কেউকে রাজি করাতে হালকা ভয় দেখাচ্ছে ।
প্রথম বর্ষের একটা ছাত্র কে যখন জয় সামান্য ভয় দেখাচ্ছিলো , তখনি রাজীব সেদিক দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো । কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হয় । রাজীবের বুঝতে অসুবিধা হয় না জয় কি করছে । রাজীবের চোখে মুখে একটা অনুভুতি ফুটে ওঠে । যাতে লেখা থাকে ‘এতো নিচে নামতে পারে কেউ এতো দ্রুত’।
জয় ও কম যায় না , রাজীব কে দেখে যেন আরো বেশি বেয়াড়া হয়ে ওঠে , প্রথম বর্ষের ছেলেটির কলার চেপে ধরে । এতে করে ছেলেটি বেশ ভড়কে যায় , জয়ের সাথের ছেলে পেলেও বেশ অবাক হয়ে যায় , কারন ওই প্রথম বর্ষের ছেলে এমনিতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলো । যতক্ষণ জয় ওই ছেলের কলার চেপে ধরে ছিলো ততক্ষণ জয়ের দৃষ্টি রাজীবের দিকে ছিলো । ভাব এমন কলার ধরেছে অন্যজনের কিন্তু ফিল নিচ্ছে ও রাজীবের কলার ধরেছে ।
রাজীব একটা ডিজগাস্ট লুক দিয়ে সেই যায়গা ছেড়ে যায় । রাজীব চলে যেতেই জয় ওই ছেলের কলার ছেড়ে দেয় । নিজে হাতেই কলার ঠিক করে দেয় , তাপর বেশ শান্ত ভাবে বলে “ চলে এসো কিন্তু ভাইয়া, বড় ভাইয়ার কথা শুনবে না?”
ছেলেটা আরো ভড়কে যায় , কারন যে একটু আগে কলার চেপে ধরে রেখেছিলো সেই এখন এতো নরম ভাবে কথা বলছে । ছেলেটি মাথা ঝাঁকিয়ে শ্বায় জানিয়ে দ্রুত বিদায় হয় ।
“ভাই এইটা কি হলো , এতো এগ্রেসিভ হয়ে গেলা কেনো?” পাশে থাকা একটি ছেলে জিজ্ঞাস করে । জয় মুচকি হেসে বলে , “কিছু মানুষ আছে , যাদের দেখলেই হাত নিশপিশ করে ।“
“ওই কথা , আমাদের দেখাইয়া দিও , সাইজ করে দিবো” অন্য একটি ছেলে পাশ থেকে বলে ।
“ আরে বাদ দাও তো ভাই , চলো দুই একটা মেয়ে জোগাড় করি , মেয়ে না হলে আমার আবার ভালো লাগে না কেমন জানি খালি খালি লাগে , মেয়ারা হলো সব জায়গার সৌন্দর্য , যেখানে মেয়ে নাই সেখানে সৌন্দর্য নাই” জয় নিজের সাদা সার্টের হাটা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত আনতে আনতে বলে । তারপর চুল গুলো ঠিক করে নেয় । নিজের লুক ঠিক আছে নিশ্চিত হয়ে জয় সামনের দিকে বাড়ে ,
পাশ থেকে একটি ছেলে বলে “ ঠিক বলসো ভাই , মেয়ে থাকলে ব্যাপারটা আরো গুরুত্ব পায় , আরিফ ভাই খুব খুশি হবে”
কিছুদুর যেতেই চার পাঁচ জন মেয়ের একটা গ্রুপ দেখতে পায় , জয় নিজের সাথে থাকা ছেলেদের আর সামনে আসতে না করে। বলে “ তোমরা এখানেই থাকো , এরা মেয়ে এদের মাসল পাওয়ার বা টাকার পাওয়ার দিয়ে বশে আনা যায় না , এদের বশে আনতে লাগে সুইট টক আর ইনোসেন্ট লুকস , তোদের মতন গুন্ডা নিয়ে গেলে অন্য কিছু ভাববে” এই বলে জয় আর দাড়ায় না।
নিজে একাই মেয়েদের সামনে গিয়ে বলে “ Hi ladies, ফার্স্ট ইয়ার?”
মেয়ে গুলো হঠাত করে আকাশ থেকে পড়ার মত করে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে নিজের মেয়ে পটানো হাসি নিয়ে হাজির দেখে একটু হতচকিয়ে যায় , সবাই মাথা নারিয়ে জানায় হ্যা ।
“ তা কেমন চলছে ভার্সিটি লাইফ ? এঞ্জয় করছো?” জয় নিজের স্মারটনেস পুরোটা ব্যাবহার করে বলে
মেয়েদের মধ্যে দুই একজন খুব ধিরে বলে হ্যা । জয় এবার মেয়ে গুলর পাশেই বসে পরে , জিজ্ঞাস করে “ লেখাপড়া কেমন চলছে?”
সবাই বলে ভালো , দুই একজনের মুখে মুচকি হাসি দেখা যায় । এই মেয়েদের মাঝে বেশ কয়েকজন জয় কে দূর থেকে আগে দেখছে । হ্যান্ডসাম , ফানি , পপুলার , এরা দূর থেকে দেখছে আর এডমায়ার করেছে । আজকে সামনে দেখে বেশ ভড়কে গেছে।
“ শোন , কোন সমস্যা হলে ভাইয়া কে বলবা” জয় একদম ক্যাজুয়াল হয়ে বলে । তারপর জিজ্ঞাস কজরে “ সুধু পড়াশুনা করার জন্য ভার্সিটি তে আসছো ? নিজেকে তৈরি করতে হবে না দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য? আর তোমারা হলে নারী শক্তি , তোমাদের ত সবার আগে থাকা দরকার , আমি বিশ্বাস করি একমাত্র নারীরা যদি সমান অংশ গ্রহন করে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে”
জয়ের হঠাত এমন কথায় মেয়ে গুলো একটু গুলিয়ে যায় , কিন্তু জয় নিজের বিখ্যাত হাসি হেসে ওদের মনোযোগ ধরে রাখে , তারপর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে নারী শক্তির উপর সবক দেয়ে , এবং নিজেকে নারী শক্তির পক্ষের একজন হিশেবে প্রমান করে। এবং মেয়েগুলো মিটিং এ আসার জন্য রাজি হয়ে যায় । জয় বিজয়ীর হাসি নিয়ে নিজের দলের ছেলেদের কাছে ফিরে যায় ।
ছেলেগুলো জিজ্ঞাস করে “ ভাই ওরা আসবে?”
জয় বলে “ সবাই হয়তো আসবে না তবে দুই একজন আসবে”
“ কিভাবে রাজি করালে ভাই” একজন কাতর স্বরে জিজ্ঞাস করে
“ আরে মেয়ে মানুষ , ওদের একটু লিফট করলেই গলে যায়, শোন একটা টিপস দেই , যদি কোন মেয়ে পটাতে চাও , নিজের জন্য অথবা অন্য কোন কারনে , সব সময় ভাব নিবা তুমি ফেমিনিস্ট , মেয়ে মানুষ সুযোগ পেলেই মাথায় উঠবে , আর একবার যদি মাথায় ওঠে আর তুমি মাথা থেকে না নামাও জীবনে নামবে না, তুমি যতদিন চাইবে তোমার সাথে থাকবে, যদি সারা জীবন রাখতে চাও , মাথায় তুলেই রাখতে হবে , মেয়ে মানুষের সবচেয়ে পছন্দের বসার স্থান হচ্ছে মাথা , মাথায় বসে এরা তোমার কান ধরে রাখবে ” জয় বিজ্ঞ লোকের ভাব নিয়ে বলল
“ কিন্তু ভাই মাথায় উঠলে ত জিন্দেগি বরবাদ” একটি ছেলে প্রশ্ন করলো
“ আরে তুমি কি সত্যি সত্যি মাথায় উঠাবা নাকি , ভাব নিবা , কিন্তু যদি দেখো আর সহ্য করতে পারতেসো না , সময় মতন নামিয়ে দিবা, নামায়া দিতেও বেশি কষ্ট করা লাগে না , একটা দুইটা কথা বলেই নামিয়ে দেয়া যায় । এখন চলো আরো কিছু পাখি শিকার করি, একদিনের জন্য একটা টিপস ই যথেষ্ট” এই বলে জয় আগে বাড়ে ।
জয়ের এমন স্বতঃস্ফূর্ত আর বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণ ওর সাথের ছেলে পেলের মন ও অল্প দিনে জয় করে ফেলছে । দলের ভেতর জয়ের জনপ্রিয়তা অল্প হলেও আছে ।
*****
বিকাল দিকে জয় যখন বাইকে করে যাচ্ছিলো তখন চত্তরে রানী কে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় , বাড়ি ফেরার জন্য কিছু খুজছে । জয় নিজের বাইক নিয়ে রানীর সামনে দাড়ায় । হ্যাল্মেট খুলে বলে “ কিরে তো সখি কই আজকে”
আচমকা সামনে বাইক ব্রেক করায় রানী চমকে ওঠে , দু পা পেছনে চলে যায় । তারপর ধাতস্ত হয়ে বলে , “তুমি কি চমকে না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আসতে পারো না?” বেশ বিরক্ত শোনায় রানীর গলা । আজকাল জয় আর রানীর ছাদের দেখা সাক্ষাত হয় না , জয় বিজি থাকে রাত ৯-১০ টার আগে বাসায় ফিরে না । তবে ক্যাম্পাসে দেখা হলে রানী একটু এড়িয়েই চলে জয় কে ।
“ কিছু কিছু মানুষ ঘোরের মাঝে থাকে তাদের চমকে দিয়ে ঘোর থেকে বের করতে হয়” জয় নির্লিপ্ত ভাবে বলে
“ সব দায়িত্ব কি তোমার নাকি” ঝাঁজের সাথে বলে রানী ,
“ যেহেতু জনসেবায় নেমেছি , দায়িত্ব দেয়ার আগেই কাঁধে তুলে নেয়ার অভ্যাস করতে হবে” জয় হেসে বলে
“ আর অভ্যাস করার জন্য তুমি আমাকেই পাও সুধু”
“ কি করবো বল তুই সামনে পরে যাস, আমার কি দোষ”
“নাহ তোমার আবার দোষ থাকে নাকি , তা রাজনীতি কেমন চলছে তোমার”
“ আমি হচ্ছি রাজা , রাজনীতি আমার রক্তে বুঝলি” বেশ ভঙ্গি করে বলে জয় ,
“ তাই ? তুমি নিজেকে রাজা ভাবো”
“ তুই যদি রানী হোস , আমি ত রাজাই হবো” কথাটা জয় একেবারে হঠাত করেই বলে ফেলে ।
মুহূর্তে রানীর শরীর রিজিড হয়ে যায় । রাজীবের বলা অনেকদিন আগে একটা কথা মনে পরে যায় , রাজীব বলেছিলো ,’যেদিন তোর রাজা আসবে সেদিন তুই এমনিতেই বুঝে যাবি”
কিন্তু রানী তো বুঝতে চায় না , একমাত্র লেখাপড়া আর ক্যারিয়ার ছাড়া আর কিছুই ভাবতে চায় না রানী । কিন্তু জয় সামনে এলেই গড়বড় হয়ে যায় ওর প্রতিজ্ঞার । আর এই কারনেই জয় কে এড়িয়ে চলে রানী ।
রানী মনে মনে বলে ‘আমি বুঝতে চাই না ,বুঝতে চাই না’
রানীকে একভাবে বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুনে , জয় হাসতে হাসতে বলে , “কি জাদুটোনা করিস বিড়বিড় করে , আমার জন্য জাদুটোনার দরকার নাই”
“ আপদ বালাই বিদায়ের দোয়া এটা , কোন জাদুটোনা না , এখন যেখানে জাচ্ছিলে যাও , আমার বাসায় যেতে হবে , সামনে বাইক দাড়িয়ে থাকলে , সি এন জি পাবো না”
“ আমি থাকতে সি এন জি লাগবে কেনো, চল তোকে নামিয়ে দেই” জয় বাইকের পেছনের সিট দেখিয়ে বলে ।
“ তুমি রাজা তুমি কেনো কষ্ট করতে যাবে , যাও গিয়ে দুনিয়া উদ্ধার করো” রানী হালকা বেঙ্গ করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে ,
রানীর বলার ধরন দেখে হাসে জয় , ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বলার ধরন টি বেশ ভালো লাগে ওর কাছে । যখন রানী ঐভাবে কথা বলে তখন ওকে দারুন কিউট লাগে জয়ের কাছে । এমনিতে রানীর ঠোঁট খুব সুন্দর । বেশি পাতলা ও না আবার ভারি ও না , হালকা গোলাপি আভা আছে , ফর্সা মুখে হলকা গলাপি ঠোঁট দারুনলাগে দেখতে । এমনিতে রানী সাধারন বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু বেশি ই ফর্সা , তবে আজকাল দৈনিক রোদে ঘুরাঘুরির কারনে হালকা তামাটে হয়েছে । কিন্তু তাতে ওর সৌন্দর্য তেমন একটা কমেনি । এই মুহূর্তে রানী একটা ওফ হোয়াইট সালাওয়ার স্যুট পরে আছে , সব সময়ের মত চোখে কাজল আর কলাপে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়েছে । চুল গুলো পেছনে নিয়ে রাবার ব্যন্ড দিয়ে পনি টেল করে রাখা , কানে দুটো বড় বরর ঝুমকা ঝুলছে । মাথা নাড়িয়ে কথা বলার সময় ঝুমকা দুটো বার বার দুলছে ।
“ আরে রাজার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে রানীর দেখাশুনা করা , চল তুই ,আমার আর কাজ নেই এখানে” জয়ের আরো আড্ডা দেয়ার ইচ্ছা ছিলো বন্ধুদের সাথে কিন্তু সেই ইচ্ছা কেন্সেল করে দিয়েছে ।
“ তোমার বাইকের পেছনের সিট খুব উঁচু সাইড হয়ে বসা যায় না” রানী আবারো জয় কে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে ,
কিন্তু জয় কিছুতেই ছেড়ে দিতে নারাজ , চিন্তা ভাবনা না করেই বলে , “দু পা দুই দিকে দিয়ে বস”
রানী একটু রেগেই যায় , বলে “ গাধার মত কথা বলো কেনো? সালোয়ার কামিজে কি ওই ভাবে বসা যায় , বেকুব”
অন্য কেউ জয় কে বেকুব বললে , হয়তো এতক্ষনে তুলকালাম কান্ডো হয়ে যেতো । কিন্তু রানী আবারো ঠোঁট বাঁকিয়ে যখন বেকুব বলল তখন জয়ের মন্দ লাগার চেয়ে ভালোই লাগলো । মনে মনে বলল , তুই আমাকে এরকম কিউট ভাবে সারাদিন বেকুব ডাকতে পারিস , আমি কিছু মনে করবো না ।
“ দেখ বৃষ্টি হতে পারে , তারাতারি চল” জয় তাড়া দেয়
ভ্রু কুঁচকে তাকায় রানী জয়ের দিকে , সেটা দেখে জয় বলে “ সত্যি বলছি মোবাইলে দেখলাম ৭৫% চান্স”
“ যতই চান্স থাক , অন্তত দু চার ঘন্টার মাঝে বৃষ্টি হবেনা” রানী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ,
“ এই রানী” পেছন থেকে কে যেন ডেকে ওঠে , মেয়েলি কণ্ঠ । রানী আর জয় দুজনেই ডাক লক্ষ্য করে তাকায় , দেখে তিন চারজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু দূরে , ওরা হাসছে । জয় ওদের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বভাব সিদ্ধ মেয়ে ভুলানো হাসি দেয়। সেটা দেখে রানীর চেহারা কালো হয়ে যায় । মেয়ে গুলো ওর ক্লাসের , ঠিক বান্ধবি বলা যাবে না তবে কথা বার্তা হয় । মেয়ে গুলো জয়ের হাসির উত্তরে হাত নেড়ে হাই বলে , জয় ও তাই করে ।
রানীর শরীর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে । না চাইতেও হিংসা হয় । মন চায় জয়ের হাত ধরে মুচড়ে দেয় । আর ওই মেয়েগুলোর দাঁতে কালি মাখিয়ে দেয় । কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে জয় কে দেখছে । এই মেয়েদের যে কি হবে , হ্যাডসাম ছেলে দেখলেই এদের লালা ঝরে । আর সেই ছেলের যদি বাইক থাকে তাহলে তো কথাই নেই ।
“কে রে?” মেয়েগুলোর মাঝ থেকে একজন জিজ্ঞাস করে , কিন্তু রানী কোন উত্তর দেয় না সেই প্রশ্নের , বরং বলে “ এখন যাই পরে কথা হবে” এই বলে রানী বাইকে ওঠার চেষ্টা করে , কিন্তু বেশ উঁচু হওয়ায় দুই তিন বারের চেষ্টায় উঠতে সক্ষম হয় । তবে একটু দূরত্ব রেখে বসে ।
জয়ের মুখে মুচকি হাসি , মনে মনে ওই মেয়েগুলো কে ধন্যবাদ জানায় , শেষ বারের মত মেয়ে গুলোর দিকে একটা হিরো টাইপ হাসি ছুরে মারে , তারপর রানী কে বলে ধরে বসতে । কিন্তু রাগান্বিত রানী জানিয়ে দেয় লাগবে না । রানীর উত্তর শুনে জয়ের ঠোঁটে একটা দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় ।
বাইক স্টার্ট করে জয় , ইঞ্জিন গরম করার পর , জয় ইচ্ছে করেই বাইক কে লাফিয়ে উঠতে দেয় হালকা ভাবে । ভয়ে আউউ করে ওঠে রানী, জয়ের কাঁধ ধরে নিজেকে রক্ষা করে । তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে , “ঠিক মত চালাবে না আমি নেমে যাবো”
জয় হেসে বলে “শক্ত করে ধরে রাখ” তারপর স্মুথ ভাবে বাইক নিয়ে এগিয়ে যায় ।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)