26-08-2025, 06:16 PM
(This post was last modified: 26-08-2025, 06:19 PM by ধূমকেতু. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি পরছিলো। আকাশ মেঘে ঢাকা, গর্জনের শব্দও শোনা যাচ্ছিলো মাঝে মাঝে।
একটানা বিচিত্র রবে বর্ষন হচ্ছিলো, সাথে ঝোড়ো হাওয়া।
ডিসেম্বরে এমন বৃষ্টি এর আগে কখনো দেখেনি মধুমিতা। সমূদ্রে নাকি নিম্নচাপ হয়েছে, আরো কয়েকদিন এমন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আজকে শনিবার, কালকে দিহানের সাথে দেখা করার কথা। এমন বৃষ্টি থাকলে বের হবে কিভাবে। শ্বশুর-শ্বাশুড়িকেও তো একটা বাহানা দিতে হবে। ওনারা নির্ঘাত বেড়োতে দেবে না।
তাই বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হচ্ছিলো মধুমিতার।
ও তখন রান্না ঘরে ছিলো। বৃষ্টি দেখে শ্বশুরের নাকি খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করেছে।
মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও তাই খিচুড়ি রান্না করছিলো মধুমিতা, যতই হোক গুরুজন মানুষ, ওকে বড্ডো স্নেহ করে লোকটা। তাই মুখের উপর না করে দিতে পারে নি ও।
এমন সময় রিতম ফোন করলো মধুমিতাকে। এখন কাজ শেষ করে রিতমের বাড়ি ফেরার টাইম।
মধুমিতা ফোন ধরতেই ওর স্মিত হাস্য সরল মুখটা দেখতে পেলো। অন্ধকারাচ্ছন্ন ইংল্যান্ডের রাস্তায় হাটছিলো রিতম। একটু দূরে দূরে নিয়নের আলো। ভোর হতে অল্প সময় বাকি।
রিতম খুশি মনে বলল, গুড মর্নিং ম্যাম। কেমন আছো?
মধুমিতা হাসলো না। গম্ভীর মুখে গুড মর্নিং বলল।
রিতম ওর মুখের ভাব লক্ষ্য করে বলল, ব্যপার কি, ম্যাডামের আজ মুড অফ।
কিছু না।
ওকে। আই হ্যাভ সামথিং টু ইনফর্ম ইয়ু হুয়িচ মাইট চিয়ার ইয়ু আপ।
কি? কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো মধুমিতা।
অথোরিটির কাছে তো অ্যাপ্লিকেশন করে রেখেছিলাম ছুটির জন্য, এবারের পুজো নাগাদ ছুটে দিতে পারে আমায়।
কিন্তু মধুমিতাকে খুশি করতে পারলো না কথাটা। আগের মতোই গম্ভীর দেখালো ওকে। বলল, কি দরকার আসার? এখানে কেউ আছে নাকি তোমার? কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে না। আরো দুই তিন বছর স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাও।
এখানে আমার বউ আছে যে, সখি।
ফ্লাটারিতে কাজ হবে না রিতম। তুমি বলেছিলে শীত শেষ হলেই চলে আসবে। এখন আবার বলছো পুজোয় আসবে। ঐ বার পুজোর সময়ও ঐ একি কথা বলেছিলে।
এই বার পাক্কা আসবো, প্রমিজ।
তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না রিতম। তুমি এমন অনেক প্রমিজ করেছো। তোমাকে আমি বিশ্বাস করে ঠকেছি। আই মেবি সাউন্ড হার্স রিতম বাট ইট ইজ ট্রু।
মধুমিতার কথায় কষ্ট পেলো রিতম। তবে নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলল, সেখানে তো আমার কোনো দোষ নেই মিতা। আমার কি তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে? তুমি তো জানো ঐবার পুজোয় সব কিছু ঠিক ছিলো, কিন্তু ইমিগ্রেশন আমার ভিসা এক্সটেন্ড করতে ঝামেলা করেছিলো। আর এবার কোম্পানি বলল ছাড়তে পারবে না। সামারে ওদের অনেক চাপ থাকে। এমপ্লোয়িদের ছুটি নিষেধ।
বিয়ের পর কটা পুজো আমরা এক সাথে কাটিয়েছি বলো তো রিতম? দুটোও না। কটা মাস তুমি আমার পাশে থেকেছো বলতো? কত খারাপ লাগে আমার মাঝে মাঝে তুমি জানো?
এগুলোর উত্তরে রিতম কি বলবে ভেবে পেলো না। এতো জটিল বিষয় ওর মাথায়ও ঢুকে না। ওতো শান্ত নির্ভেজাল জীবন ভালোবাসে। জটিলতা ওকে কষ্ট দেয়।
রিতম মৃদু স্বরে বলল, আই এম স্যরি, মিতা।
মধুমিতা কয়েক সেকেন্ড উত্তর না দিয়ে কাজ করে গেলো। পরে নিজের ক্রোধ সংবরণ করে নিয়ে বলল, আমি জানি তুমি দুঃখিত। কষ্ট পাচ্ছো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তবে আমার দিকটা ভেবে দেখো। দীর্ঘ সময় ধরে তোমার থেকে দূরে থাকছি। আমি ফ্রাসট্রেটেড হয়ে গেছি একা থাকতে থাকতে।
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, আর প্রমিজ ভাঙ্গবে না। এগুলো আমাকে হার্ট করে, কত আশা করেছিলাম এবার আসবে –
যাক, পুজোয় তাহলে আসবে, ফাইনাল?
হুম।
এখন রাখি রিতম। কথা বললেই ঝগড়া করবো না হলে।
ফোন রেখে দিচ্ছিলো রিতম, মধুমিতা বললো, বাড়িতে গিয়ে আগে খেয়ে নেবে, তারপর ঘুমাবে।
ঠিক আছে
বরফ পরছে। তারাতাড়ি চলে যাও।
আরো মন খারাপ হয়ে গেলো মধুমিতার। শুধু শুধু রিতমকে এতো গুলো কড়া কথা শুনিয়ে দিলো। বিদেশ বিভূঁইয়ে এতো পরিশ্রম করছে ছেলেটা, দিন শেষে ওকে ফোন দেয় একটু ভালো কথা শোনার জন্য, ওর হাসি মুখটা দেখার জন্য। মধুমিতা আজকাল তাও করতে পারছে না।
গ্যাস নিভিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসে ছিল ও। বুক ফুলে ফুলে কান্না আসছিলো। এমন সময় ফোনের নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠলো মধুমিতার। ফোন তুলে দেখলো, রিতমের ম্যাসেজ। দ্রুত ওয়াটসঅ্যাপ এ ঢুকে পরলো ও। একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে রিতম।
অপেক্ষা করো, সখি
ধৈর্য ধরো,
জানি বিষাদ ছুঁয়েছে তোমায়,
তুমি ঘনঘোর কুয়াশায় পরিবৃত।
কিন্তু, আমার কি অবস্থা সেটা কি জানো?
শোনো সখি,
তোমার বিরহে আমি মৃত।
বলছিলে,
অনেকদিন হলো আমাদের হয়নি দেখা,
তুমি বিষন্ন।
আসন্ন পুজোয় নিমন্ত্রণ দিও
আসবো আমি দিলাম কথা।
ততক্ষণ,
অপেক্ষা কর সখি,
ধৈর্য ধরো।
বসন্ত কাতর তোমার প্রতীক্ষায়
কেন কষ্ট দাও তারে
প্রতিক্ষনে, বারে বারে
সম্রাজ্ঞি তুমি
বিষন্নতা কি তোমাকে মানায়?
আহ্বান জানাও বসন্তরে,
তোমার অন্দরে,
আসবো আমি বসন্ত বেশে
বরণ কোরো সখি।
স্মৃত হেসে, বসন্তের অভিসারিকা সেজে।
অনেকদিন হলো আমাদের হয়নি দেখা।
এবার পূজায় নিমন্ত্রণ দিয়ো
আমি আসবো দিলাম কথা
ততক্ষণ,
অপেক্ষা করো, সখি
ধৈর্য ধরো।
কুয়াশার বিষাদ কাটিয়ে বসন্তরে বরো।
নিশ্চয়ই রাস্তায় যেতে যেতে লিখেছে। মনে মনে ওকে "পাগল ছেলে ” বলল মধুমিতা। এতো মনোকষ্টের মধ্যেও খানিকটা ভালো লাগলো।
একটানা বিচিত্র রবে বর্ষন হচ্ছিলো, সাথে ঝোড়ো হাওয়া।
ডিসেম্বরে এমন বৃষ্টি এর আগে কখনো দেখেনি মধুমিতা। সমূদ্রে নাকি নিম্নচাপ হয়েছে, আরো কয়েকদিন এমন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আজকে শনিবার, কালকে দিহানের সাথে দেখা করার কথা। এমন বৃষ্টি থাকলে বের হবে কিভাবে। শ্বশুর-শ্বাশুড়িকেও তো একটা বাহানা দিতে হবে। ওনারা নির্ঘাত বেড়োতে দেবে না।
তাই বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হচ্ছিলো মধুমিতার।
ও তখন রান্না ঘরে ছিলো। বৃষ্টি দেখে শ্বশুরের নাকি খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করেছে।
মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও তাই খিচুড়ি রান্না করছিলো মধুমিতা, যতই হোক গুরুজন মানুষ, ওকে বড্ডো স্নেহ করে লোকটা। তাই মুখের উপর না করে দিতে পারে নি ও।
এমন সময় রিতম ফোন করলো মধুমিতাকে। এখন কাজ শেষ করে রিতমের বাড়ি ফেরার টাইম।
মধুমিতা ফোন ধরতেই ওর স্মিত হাস্য সরল মুখটা দেখতে পেলো। অন্ধকারাচ্ছন্ন ইংল্যান্ডের রাস্তায় হাটছিলো রিতম। একটু দূরে দূরে নিয়নের আলো। ভোর হতে অল্প সময় বাকি।
রিতম খুশি মনে বলল, গুড মর্নিং ম্যাম। কেমন আছো?
মধুমিতা হাসলো না। গম্ভীর মুখে গুড মর্নিং বলল।
রিতম ওর মুখের ভাব লক্ষ্য করে বলল, ব্যপার কি, ম্যাডামের আজ মুড অফ।
কিছু না।
ওকে। আই হ্যাভ সামথিং টু ইনফর্ম ইয়ু হুয়িচ মাইট চিয়ার ইয়ু আপ।
কি? কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো মধুমিতা।
অথোরিটির কাছে তো অ্যাপ্লিকেশন করে রেখেছিলাম ছুটির জন্য, এবারের পুজো নাগাদ ছুটে দিতে পারে আমায়।
কিন্তু মধুমিতাকে খুশি করতে পারলো না কথাটা। আগের মতোই গম্ভীর দেখালো ওকে। বলল, কি দরকার আসার? এখানে কেউ আছে নাকি তোমার? কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে না। আরো দুই তিন বছর স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাও।
এখানে আমার বউ আছে যে, সখি।
ফ্লাটারিতে কাজ হবে না রিতম। তুমি বলেছিলে শীত শেষ হলেই চলে আসবে। এখন আবার বলছো পুজোয় আসবে। ঐ বার পুজোর সময়ও ঐ একি কথা বলেছিলে।
এই বার পাক্কা আসবো, প্রমিজ।
তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না রিতম। তুমি এমন অনেক প্রমিজ করেছো। তোমাকে আমি বিশ্বাস করে ঠকেছি। আই মেবি সাউন্ড হার্স রিতম বাট ইট ইজ ট্রু।
মধুমিতার কথায় কষ্ট পেলো রিতম। তবে নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলল, সেখানে তো আমার কোনো দোষ নেই মিতা। আমার কি তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে? তুমি তো জানো ঐবার পুজোয় সব কিছু ঠিক ছিলো, কিন্তু ইমিগ্রেশন আমার ভিসা এক্সটেন্ড করতে ঝামেলা করেছিলো। আর এবার কোম্পানি বলল ছাড়তে পারবে না। সামারে ওদের অনেক চাপ থাকে। এমপ্লোয়িদের ছুটি নিষেধ।
বিয়ের পর কটা পুজো আমরা এক সাথে কাটিয়েছি বলো তো রিতম? দুটোও না। কটা মাস তুমি আমার পাশে থেকেছো বলতো? কত খারাপ লাগে আমার মাঝে মাঝে তুমি জানো?
এগুলোর উত্তরে রিতম কি বলবে ভেবে পেলো না। এতো জটিল বিষয় ওর মাথায়ও ঢুকে না। ওতো শান্ত নির্ভেজাল জীবন ভালোবাসে। জটিলতা ওকে কষ্ট দেয়।
রিতম মৃদু স্বরে বলল, আই এম স্যরি, মিতা।
মধুমিতা কয়েক সেকেন্ড উত্তর না দিয়ে কাজ করে গেলো। পরে নিজের ক্রোধ সংবরণ করে নিয়ে বলল, আমি জানি তুমি দুঃখিত। কষ্ট পাচ্ছো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তবে আমার দিকটা ভেবে দেখো। দীর্ঘ সময় ধরে তোমার থেকে দূরে থাকছি। আমি ফ্রাসট্রেটেড হয়ে গেছি একা থাকতে থাকতে।
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, আর প্রমিজ ভাঙ্গবে না। এগুলো আমাকে হার্ট করে, কত আশা করেছিলাম এবার আসবে –
যাক, পুজোয় তাহলে আসবে, ফাইনাল?
হুম।
এখন রাখি রিতম। কথা বললেই ঝগড়া করবো না হলে।
ফোন রেখে দিচ্ছিলো রিতম, মধুমিতা বললো, বাড়িতে গিয়ে আগে খেয়ে নেবে, তারপর ঘুমাবে।
ঠিক আছে
বরফ পরছে। তারাতাড়ি চলে যাও।
আরো মন খারাপ হয়ে গেলো মধুমিতার। শুধু শুধু রিতমকে এতো গুলো কড়া কথা শুনিয়ে দিলো। বিদেশ বিভূঁইয়ে এতো পরিশ্রম করছে ছেলেটা, দিন শেষে ওকে ফোন দেয় একটু ভালো কথা শোনার জন্য, ওর হাসি মুখটা দেখার জন্য। মধুমিতা আজকাল তাও করতে পারছে না।
গ্যাস নিভিয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসে ছিল ও। বুক ফুলে ফুলে কান্না আসছিলো। এমন সময় ফোনের নোটিফিকেশন টোন বেজে উঠলো মধুমিতার। ফোন তুলে দেখলো, রিতমের ম্যাসেজ। দ্রুত ওয়াটসঅ্যাপ এ ঢুকে পরলো ও। একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে রিতম।
অপেক্ষা করো, সখি
ধৈর্য ধরো,
জানি বিষাদ ছুঁয়েছে তোমায়,
তুমি ঘনঘোর কুয়াশায় পরিবৃত।
কিন্তু, আমার কি অবস্থা সেটা কি জানো?
শোনো সখি,
তোমার বিরহে আমি মৃত।
বলছিলে,
অনেকদিন হলো আমাদের হয়নি দেখা,
তুমি বিষন্ন।
আসন্ন পুজোয় নিমন্ত্রণ দিও
আসবো আমি দিলাম কথা।
ততক্ষণ,
অপেক্ষা কর সখি,
ধৈর্য ধরো।
বসন্ত কাতর তোমার প্রতীক্ষায়
কেন কষ্ট দাও তারে
প্রতিক্ষনে, বারে বারে
সম্রাজ্ঞি তুমি
বিষন্নতা কি তোমাকে মানায়?
আহ্বান জানাও বসন্তরে,
তোমার অন্দরে,
আসবো আমি বসন্ত বেশে
বরণ কোরো সখি।
স্মৃত হেসে, বসন্তের অভিসারিকা সেজে।
অনেকদিন হলো আমাদের হয়নি দেখা।
এবার পূজায় নিমন্ত্রণ দিয়ো
আমি আসবো দিলাম কথা
ততক্ষণ,
অপেক্ষা করো, সখি
ধৈর্য ধরো।
কুয়াশার বিষাদ কাটিয়ে বসন্তরে বরো।
নিশ্চয়ই রাস্তায় যেতে যেতে লিখেছে। মনে মনে ওকে "পাগল ছেলে ” বলল মধুমিতা। এতো মনোকষ্টের মধ্যেও খানিকটা ভালো লাগলো।