23-08-2025, 10:28 PM
পার্ট : ১৬
ডাঃ - উনি কি আপনার ওয়াইফ?
রুদ্র- ইয়েস ডাঃ,
ডাঃ - দেখুন আপনাদের মাঝে ঝগড়া ঝাটি হতেই পারে কিন্তু এই সময় বেবির ভালোর জন্য মাকে অনেক সাবধানে থাকতে অনেক হাসিখুশি থাকতে হবে,
রুদ্র- হুম আপনি ঠিক বলেছেন ডাঃ, এর পর থেকে আমি ভালো করে কেয়ার করবো।
ডাঃ - হুম, মনে রাখবে এ সময়ে সবচেয়ে বড় মেডিসিন হলো হাসিখুশি থাকা, অনেক ভালোবাসা আর কেয়ার লাগবে ওনার। মনে হয় উনি অনেক চিন্তা করেন, বয়স কম তাই ভয়টা একটু বেশি,
রুদ্র- ওকে ডাঃ আমি এরপর থেকে অনেক কেয়ার করবো,
ডাঃ - হুম শুনে ভালো লাগলো,
স্নেহা কেবিনে শুয়ে আছে, নার্স ইনজেকশন পুস করে দিয়েছে,
শুয়ে, শুয়ে আজকের কথা ভাবছে স্নেহা, এতোদিন পর রুদ্র আবার কোন নতুন অশান্তি নিয়ে এসেছে সেসব নিয়েই ভাবছে স্নেহা।
- কি ভাবছো?,( জুস হাতে কেবিনে ঢুকতে,ঢুকতে বললো রুদ্র)
- ভাবছি আমাকে আরো খারাপ প্রমান করা হয়তো বাকি আছে আপনার আরো কষ্ট দেয়া বাকি আছে আপনার তাই আবার নতুন ঝামেকা করতে ফিরে এসেছেন,( রাগে গজ গজ করতে করতে কথাগুলো বললো স্নেহা।)
- দেখো নিজের বউকে ছাড়া এতোদিন থাকা আমার ঠিক হয়নি হাসবেন্ড ওয়াইফের মাঝে রাগারাগি, ঝগড়া তো হবেই তাই বলে বউয়ের থেকে আলাদা থাকা তার খোজ খবর না নেয়া ভুল, যা আমি এ মাস করেছি কিন্তু আর বা,একেই তোমাকে পাগলের কতো ভালোবাসি তার ওপরে তোমার এই ছোট্ট পেটে আমার আদরের বাবুটা আছে,তার মানে ভালোবাসা ডাবল হয়ে গিয়েছে,
- ভালোবাসা, কিসের ভালোবাসা? আপনার ভালোবাসা হলো আজ আছে কাল নেই, এমন ধরনের ভালোবাসার কোনো দরকার নেই আমার, আপনি যখন কষ্ট করে উপার্জন করতেন সারাদিন টিউশনি করে বাসায় ফিরতেন তখনি আপনি ভালো ছিলেন, তখন আপনাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করতো, আপনাকে আকরে ধরার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আজ আপনি সেই আগের আপনি নেই, আপনি হিংস্র হয়ে গেছেন, আপনার হিংস্রতার আগুনে আমি পুড়েছি আমার সন্তানকে পুড়তে দেবো না।
- আমার সন্তানের থেকে তুমি আমাকে আলাদাও করতে পারবেনা তুমি! কারন বাবা আর সন্তানকে আলাদা করা সহজ না,
তোমার শরীর ভালোনা, তাই আর কোনো ঝগড়াঝাটি চাইনা, চলো বাড়ি ফিরবে,
- হ্যা আমাকে তানিয়ার বাসায় দিয়ে আসুন।
- নিজের বাসা থাকতে তানিয়ার বাসায় যাবা কেনো হুম?
- মানে??
- মানে তুমি আমি আর আমাদের বেবিটা এখন আমাদের বাসায় যাবো, তারপর তোমার রুমে আবার তুমি থাকবা, আমাদের বিছানায়,
স্নেহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুদ্র স্নেহাকে কোলে তুলে নিলো, স্নেহা অনেকবার রুদ্রকে ছাড়ার জন্য বলেছে কিন্তু রুদ্র শোনেনি,
স্নেহাকে গাড়িতে বসিয়ে সোজা নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলো, স্নেহাকে বিছানায় বসাতেই,
- প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, আমি বাসায় যাবো,
- আর একবার ও এই কথা বললে পায়ে গরম পানি ঢেলে দিবো,
রুদ্রের কথা শুনে স্নেহা ভয় পেয়ে গেলো, কারন রুদ্রকে বিশ্বাস নেই সত্যি সত্যি পানি ঢেলে দিতে পারে, স্নেহা আর কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় বসে রইলো,
- তিতির এই তিতির এদিকে আয়( তিতিরকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো রুদ্র)
- তিতির দৌড়ে রুমে এলো, হ্যা ভাইয়া বলো!!
আরে ভাবি তুমি এসেছো, আমি এখনি মাকে বলছি।
- এই দাড়া, মাকে যেয়ে বল। তার বউ মাকে নিয়ে এসেছি আর তোর ভাবির জন্য কিছু খাবার নিয়ে আয়,
- আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে( তিতির চলে গেলো)
রুদ্র স্নেহার পাশে বসে বলতে শুরু করলো,
- দেখো আমি মা কে ভুল বুঝিয়েছিলাম তাই মা তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে, তোমাকে ভুল বুঝেছে এতে তার কোনো দোষ নেই, মা আমার সাথে কথা বলেনা। সে অনেক অনুতপ্ত প্লিজ তার সাথে খারাপ কোনো আচরন করোনা,
রুদ্রের কথা না শেষ হতেই রুমে এলো রুদ্রের মা আনোয়ারা বেগম।
- মা তুই এসেছিস? এতোদিন পর রাগ ভাঙলো তোর?
স্নেহা তাকিয়ে আছে,
- কিরে এখনো রেগে আছিস?আমাকে মাফ করে দে মা, তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।
- আপনার কোনো দোষ নেই মা, আমার সাথে হয়তো এটাই হওয়ার ছিলো,
আপনি আমার বড় মাফ চাইবেন না, আমি আপনার ওপরে রাগ করে নেই।
- এইযে ভাবির খাবার নিয়ে এসে গেছি, ভাবি এই নাও খেয়ে নাও।
- আমি এখন কিছু খাবোনা,
- আরে ভাবি কি বলো এখন তোমাকে বেশি বেশি খেতে হবে,
তারপর তিতির জোর করে স্নেহার মুখে খাবার তুলে দিলো,
রুদ্র বেড়িয়ে গেলো রুম থেক্ব কারন সে জানে, সে রুমে থাকলে স্নেহা ফ্রি হতে পারবেনা,
রুম থেকে বেড়িয়েই রুদ্র আশিসকে ফোন দিলো,
- হ্যা আশিস তোকে আজ যা বলেছি মনে আছে তো? কাল সকালে আমার তাদের এখানে চাই।
- হ্যা স্যার মনে আছে কালই পেয়ে যাবেন,,,
আজ অনেকদিন পর দেশে ফিরছে শ্রাবন, অনেক কথাই আজ মনে পরে যাচ্ছে, খুব ভালোবাসা কাওকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে আবার সেই স্বপ্নকেই নিজের চোখের সামনে ভেঙে যেতে দেখেছে শ্রাবন। স্বপ্ন ভাঙার ব্যাথা নিয়ে দেশ ছেড়েছিলো,
কিন্তু আজ আবার দেশে ফিরছে প্রিয় মানুষগুলোকে দেখার জন্য। নিজের অজান্তেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে,
১১ ঘন্টা জার্নির পর দেশের মাটিতে পা রাখলো শ্রাবন, চেনা শহর বড় অচেনা লাগছে তার কাছে, মা তাকে ফোন করে আগেই জানিয়েছে যে তারা ঢাকা ছেড়ে রাজশাহী চলে গেছে,তাই নিজের কাছের বন্ধুর বাসায় রওনা দিলো শ্রাবন।
আরিফ আর শ্রাবন গল্প করতে করতে যাচ্ছে অনেক দিন পর প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে কিছুক্ষনের জন্য যেন সব কষ্ট ভুলে গেছে শ্রাবন।
হঠাৎ গাড়ি খুব জোরে ব্রেক করলো,
সামনে থেকে একটা মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
- কানা নাকি চোখে দেখতে পাননা,
গাড়ি থেকে শ্রাবন আর আরিফ দুজনেই নামলো,
-আরে আপু তুমি ঠিক আছো?( আরিফ)
- ভাইয়া বোনের এতো বড় সর্বনাশ কিভাবে করতে যাচ্ছিলেন হুম? আমার আজ এক্সিডেন্ট হলে আমি যদি এনি চান্স মরে যেতাম তবে আমার স্বামী আমার ১ হালি বাচ্চাকাচ্চার কি হতো বলুন?
- আরে মেয়ে তোমার বয়স কতো আর এক হালি বাচ্চাকাচ্চা মানে? এতোটুকু মেয়ের ১ হালি বাচ্চাকাচ্চা? ( বেশ অবাক হয়েই বললো আরিফ)
আচ্ছা সরি আমরা আসলে খেয়াল করিনি আপু, তুমি তো পায়ে ব্যাথা পেয়েছো হাটতে কষ্ট হবে, গাড়িতে ওঠো।
- না আমি অচেনা কারো সাথে যাইনা,
- আচ্ছা তাহলে তোমার হাসবেন্ড যে ফোন করে আসতে বলো, তুমিতো একা যেতে পারবে না।
- আরে ধুর মিয়া, কি বলেন? হাসবেন্ড আসনে কোথেকে?
- মানে তুমিনা এইমাত্র বললা তোমার স্বামী ১ হালি বাচ্চাকাচ্চা!!
- আপনার কি মাথায় বুদ্ধি নেই ভাইয়া? আমিতো ফিউচারের কথা বলেছি। আমার তো বিয়েই হয়নি!!
- ও মাই গড এই মেয়ে তো জাস্ট,
- এই আরিফ এসব ফালতু পেচাল বাদ দে তো, মেয়েটা ঠিক আছে একটু নেকামি করছে আরকি। ইগনোর ইট, চল যাই ( শ্রাবন বললো মেয়েটাকে লক্ষ করে)
- এইযে আপনি নেকা কাকে বললেন? ফালতু লোক, ভাইয়া এটা আপনার কে হয়?
- বন্ধু( আরিফ)
- এর সাথে আর মিশবেন না,
- কেনো( আরিফ)
দেখেননা কেমন বদমেজাজি কথা বলতেও জানেনা, একটা অবলা নারীকে ছলনাময়ী সাজানোর চেষ্টা করছে, আপনাকে ইনোসেন্ট আর ভালো মনে হয় এর সাথে থাকলে আপনি ও এর মতো খাটাশ হয়ে যাবেন,
- হ্যা ইউ? আমাকে কি বললে?
- আহারে খাটাশ সাথে সাথে দেখি বয়রাও। খুবই খারাপ লাগলো, আল্লাহ ওনাকে সুস্থটা দান করো। আমিন,
গাড়ির হর্নে পেছনে তাকালো তিতির,
- ভাইয়া আমার গাড়ি এসে গেছে বলেই গাড়িতে উঠে চলে গেলো তিতির।
- বেয়াদব মেয়ে একটা, কথা বলার ধরন দেখেছিস, কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেনা।
- যাই বলিস কথা বলার ধরনে আলাদা একটা কিউটনেস আছে,অনেকটা বাচ্চামো আছে,( আশিস)
- চুপ থাক এতো বড় মেয়ের আবার বাচ্চামো, চল তো।( শ্রাবন) বলেই আরিফনে নিয়ে গাড়িতে উঠলো শ্রাবন।
রেগেমেগে বাড়িতে ঢুকলো তিতির,
- কিরে কি হয়েছে? আর যা যা আনতে বলেছিলাম এনেছিস?
- মা আর বলো না, একটা খাটাশ মার্কা লোক গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেড়েছে, তারপর পরে গেছি জানো মা নিজে দোষ করে বলে আমি নাকি নেকামি করি!!
- তুই কি বড় হবিনা? আমি নিশ্চিত তুই ও লোকটার সাথে ঝগড়া করেছিস!!
- তা তো একটু করেছি( নিচের দিকে মাথা দিয়ে আস্তে আস্তে বললো তিতির)
- তুই কি বড় হবিনা, যা তোর আর কিছু করার দরকার নেই তোকে পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে, তোর ভাবি কাছে যা। মেয়েটা রুমে একা বসে আছে,
- ভাইয়া কোথায়?
- বেড়িয়েছে,
- এতো সকালে?
- হ্যা, এখন কথা বলিসনা অনেক কাজ আছে স্নেহার কাছে যা,
অনেকক্ষন জেমে বসে আছে শ্রাবন ঢাকার এই জেম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে মানুষের বিরক্তিও,
রুদ্র হালকা ভলিউমে গান শুনছে, হঠাৎ রুদ্রের চোখ গেলো একটা গাড়িতে,
সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, আর ভালো করে খেয়াল করলো অপর গাড়িতে থাকা মানুষটাকে,
জেম ছেড়ে দিয়েছে সাথে সাথে রুদ্রের পাশে থাকা গাড়িটাও,
তাই রুদ্র পাশে থাকা গাড়িটাকে ফলো করা শুরু করলো,
অনেকক্ষন ধরে কলিংবেল বাজছে,
তিতির দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো, স্নেহা সোফায় বসে টিভি দেখছিলো, দরজা দিকে তাকিয়েই উঠে দাড়ালো স্নেহা,
চোখে হালকা পানি জমেছে স্নেহার।
চলবে,,
( চিন্তা করবেন না, রুদ্রের জন্য ভয়ংকর শাস্তি অপেক্ষা করছে, গল্পে নতুন মোড় আসবে খুব তাড়াতাড়ি, ভালো থাকবেন আপনারা। ধন্যবাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)