Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#38
কিছু সম্পর্ক ঃ ৫ (গ)

 
সেই একি রাতে জান্নাত রাতের খাওয়ার পর নিজের ঘরে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে । বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে । আজকে জারনালিজম ক্লাবে এই ঘটনা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো । ওদের যে “বিশ্ববিদ্যালয়”  নামের সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে । ওটার সম্পাদক রাতুল ভাই বলছে । বাকি দুজন ও নাকি ধরা পরে যাবে । এসব ব্যাপার ভার্সিটি বেশ কঠোর । জান্নাত ভেবে পাচ্ছে না কি করবে । একবার ভাবছে আব্বু আম্মুর সাথে এই নিয়ে কথা বলবে । আবার সেই চিন্তা নাকচ করে দেয় । জয় জানতে পারলে তুল্কালাম করবে ।
 
জান্নাত নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে খুব হতাশ , একটুও অনুতপ্ত নয় জয় । অপরদিকে রাজীব কে বেশ অনুতপ্ত মনে হচ্ছে । দুজনে কত ভালো বন্ধু , অথচ দুজনে কত তফাৎ । জয় রাজীবের মত ছেলের সাথে থেকেও আজো পর্যন্ত ম্যাচিওর হয়ে উঠতে পারেনি ।
 
আরো একটা ভয় জান্নাতের হচ্ছে । আজ জয় আর রাজীবের আচরণে ওর কাছে মনে হচ্ছে দুজনের সম্পর্কের ফাটল ধরতে পারে । জান্নাত আজ দুপুরে রাগান্বিত ভাবে রাজীব কে  বলেছিলো জয়ের সাথে আর না চলতে । আসলে সেটা রাগের মাথায় বলেছিলো ও । দুই পরিবারের মাঝে যে বন্ধুত্তরের সম্পর্ক সেটা নষ্ট হোক জান্নাত তা কোনদিন চায় না ।
 
দুই পরিবারের মাঝে কোন ঝামেলা দেখা দিলে , ওর আব্বু আর ছোট আব্বু দুজনেই ভীষণ কষ্ট পাবে । এই দুইজন মানুষ সেই ছোট বেলা থেকে আজো পর্যন্ত বুহু ঝর তুফান পার করে নিজেদের বন্ধুত্ব অটুট রেখছেন । এখনো দুজন এক সাথে হলে তাদের বন্ধুত্ব যে কতটা গভির সেটা টের পাওয়া যায় । এ দুজনের ছেলে , যারাও সেই ছোট বেলা থেকে বন্ধু , তাদের মাঝে সম্পর্কের টানপোড়ান দুই পরিবারের দুই পরজন্মের সম্পর্কের অবনতি করতে পারে ।
 
জান্নাত চেয়েছিলো রাজীবের সাথে একবার কথা বলতে , সন্ধার দিকে একবার গিয়েছিলো । কিন্তু রানী বলল সেই বিকেল থেকে ঘরের মধ্যে দরজা দিয়ে বসে আছে । রাজীব ছেলেটার আজকে দুপুরে বলা কিছু কথা সত্যি সত্যি জান্নতের মন  ছুয়ে গেছে । ছেলেটার বয়সের তুলনায় চিন্তা ভাবনায় বেশ পরিপক্ব । যে বয়সে বেশিরভাগ ছেলে জয়ের মত লাফঙ্গা গিরি করে বেড়ায় সেই বয়সে রাজীব বেশ ধির স্থির । কথা কম বলে , আচার আচরণেও বেশ নম্র । জান্নাতের ভার্সিটির ভর্তি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার দিনের কথা মনে পরে যায় । নিজেকে কি দারুন ভাবেই না সংযত রেখছিলো রাজীব । ওর আচরণে আর কোনদিন সেই দিনের  ইংগিত ছিলো না ।
 
সবাই বলে রাজীব খুব বোরিং ছেলে । জান্নাত এ কথায় এক মত নয় । যতই দিন যাচ্ছে জান্নাত রাজীব কে দেখে আরো বেশি মুগ্ধ হচ্ছে । জান্নাত খেয়াল করেছে , ওদের দুজনে দেখা হলে রাজীবের চোখেও এক অধভুত চমক দেখা যায় । খুব অল্প সময়ের জন্য, কিন্তু জান্নাতের চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়েছে । মনে মনে খুশি হয়েছে জান্নাত , আবার কখনো রাগ আর অভিমান ও হয়েছে । নিজের মাঝে এতো লুকিয়ে রাখার কি আছে? একবার সাহস করে বলে তো দেখ ।
 
কিন্তু আজকে দুপুরে যে লেকচার দিয়েছে , মনে হয় না সহসাই রাজীব মনের কথা মুখে আনবে । আবার নাও আনতে পারে । জান্নাত মনে মনে ভাবে ।
*****
 
রাতের খাবার শেষে রানী ওর আব্বুকে এক কাপ  দুধ দিতে যায় । প্রতিদিন শোয়ার সময় আজকাল রহিম এটা করছে। দিন দিন শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । এমনিতে হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকায় দুধ খাওয়া রহিমের জন্য সুবিধা জনক নয় । তারপর ও শরীরের দুর্বলতার কথা চিন্তা করে , সকালে দুটো কুসুম ছাড়া ডিম আর রাতে শোয়ার সময়  এক কাপ দুধ খেতে বলেছে ডাক্তার । তবে সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে যে কাজতি করতে বলেছে সেটা হচ্ছে বেড রেস্ট । এই কাজটাই রহিম করছে না ।
 
রানী এই নিয়ে ওর বড় আব্বু জয়নালের কাছে নালিশ করেছিলো , জয়নাল আর রহিমের মাঝে এই নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে । কিন্তু রহিম কে রাজি করাতে পারেন নি । রহিমের এক কথা রাজীব যতদিন না কিছু করছে ততদিন ওর রেস্ট নেই। আর কাজ  করেলই নাকি রহিম ভালো থাকবে । নইলে এমনিতেই বিছানায় পরে যাবে । মাত্র ৫২ বছর বয়সে রহিম কে দেখে মনে হয় ৬০-৬৫ সব দাড়ি পেকে গেছে ।
 
“আব্বু আজকে শরীর কেমন লাগছে” রানী দুধ টেবিলে রেখে রহিমের পাশে বসে । রহিম হাসে , মেয়ের মাথায় হাত রেখে আদর করে , বলে “ তোর মত একটা মা থাকলে আমার কি শরীর খারাপ থাকতে পারে?”
 
রানী নিজের আব্বুর চোখের দিকে তাকায় , সেখানে কোন স্পার্ক দেখতে পায়না , তার জায়গায় একজন ক্লান্ত একাকি মানুষের চোখ দেখতে পায় , যারা রেস্ট নেয়ার জন্য আকুতি করছে । রানীর বুক ভারি হয়ে আসে , “ মিথ্যা বলো কেনো আব্বু, আমি যদি তোমার মা ই হতাম তাহলে তুমি আমার কথা শুনতে , রেস্ট নিতে, সেটা তো নিচ্ছো না”
 
“আমি তোর অবাধ্য ছেলে রে মা” রহিম আবার হাসে , কিন্তু হাসিতে জেল্লা নেই ,
 
“অন্তত কয়েকটা ক্লাস কমিয়ে দাও” রানী কাতর শ্বরে বলে । কিন্তু রহিম কোন উত্তর দেয় না ।
 
রানী আবার বলে “ এতো টাকা দিয়ে কি হবে আব্বু , আমরা কি তোমার কাছ থেকে বিলাসিতা চেয়েছি কখনো? তুমি ই যদি না থাকো আমাদের এই টাকা দিয়ে কি হবে” রানীর চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে । যা পুরোটাই বাবার অসুস্থতার জন্য নয়, বাবার ত্যাগের প্রতি নিজের উদাসিনতাও এই জলের একটা প্রধান কারন ।
 
“ কি আর হবে , কিচ্ছু হবে না , আমি থেকেও কি তোদের জন্য কিছু করতে পেরেছি , সুধু কিছু টাকা দেয়া ছাড়া । তোরা কবে বড় হয়ে গেলি সেটাই তো বুঝতে পারিনি , এখনো বিশ্বাস হয় না আমার,  তোদের দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় , তরাই আমার রানী আর রাজীব, কি করবো বল আমি একজন অক্ষম মানুষ , টাকা আয় করতে গিয়ে তোদের বাবার স্নেহ দিতে পারিনি”   
 
রানী আর আব্বু কে জড়িয়ে ধরে , বাবার বুকে মাথা রাখে , বড় করে নিঃশ্বাস নেয় , বাবার শরীরের নোনতা বাবা বাবা গন্ধটা ওকে যেন মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিচ্ছে , সাহস দিচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার । একটা সময় ছিলো রানী ওর আব্বুকে ছাড়া ঘুমাতো না , রানীর ভাসা ভাসা মনে আছে , তখন  ওদের আম্মু বেঁচে  ছিলো । তবে ওনার শেষ সময় ছিলো । রানী খুব বায়না করতো , কখন আব্বু আসবে , রহিম এলেই তবে রানী রহিমের বুকে ঘুমাতো , রহিমের বুকের পশম নিয়ে খেলতে খেলতে ।
 
মা মারা যাওয়ার পর ও রানী আর রাজীব কয়েক বছর ওদের আব্বুর সাথে ঘুমিয়েছে । তারপর ওদের আলাদা ঘর হয়েছে । দুজন এক ঘরে দুটো সিঙ্গেল বিছানায় ঘুমাতো ।  আজ আবার রানী সেই ছোট বেলার স্বাদ কিছুটা পাচ্ছে । বেশ কিছুক্ষন আব্বুর বুকে চুপচাপ মাথা রেখে বসে থাকার পর রানী বলে “ তুমি যে ছিলে , সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো আব্বু , তুমি যদি না থাকতে তাহলে আমরা আশ্রয় খুজতাম কোথায় , তুমি বিজি থাকলেও আমরা জানতাম আমাদের বাবা আছে , আর এটাই আমাদের শক্তি দিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার”
 
অনেকদিন পর মেয়েকে এভাবে বুকে নিতে পেরে রহিমের খুব ভালো লাগছে । একটা প্রশান্তি অনুভব  করছে রহিম । রহিম হাসি মুখে মেয়ের মাথায় হাত বুলায় । বেশ কিছুক্ষন এভাবেই থাকে রহিম আর রানী । তারপর রহিম বলে “ রাজীবের কি হয়েছে রে , আজকে দেখলাম কেমন জানি হয়ে আছে মুখটা । ছেলেটার জন্য আমার আফসোস হয় খুব , আমি ওকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারিনি , যখন কলেজের ছেলেদের দেখি রাস্তায় দুষ্টুমি করছে , তখন রাজীবের কথা মনে হয়, খুব দুঃখ হয় , আমার জন্যই ছেলেটা এই উচ্ছল কৈশোরের আনন্দ পায়নি । ওর উপর ঘরের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি , ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেগুলো রাজীব ওই বয়সেই নিপুন ভাবে সামাল দিয়েছে , তোকে তো ওই বড় করলো , ভাবতে গেলে আমি অবাক হই , প্রায় সমবয়সী একটা মানুষ আরেকজন কে কি সুন্দর করে সামলেছে , আমি তো ভয়েই কাছে আসতাম না রে মা। ছেলেটার প্রতি আমি অন্যায় করেছি রে” এই বলে রহিম একটু বিরতি নেয়
 
তারপর আবার বলে “ আজকাল তো আরো চুপচাপ গম্ভির হয়ে গেছে , কেমন জানি পর পর লাগে  ওকে , সামনে গিয়ে দুটো কথা জিজ্ঞাস করবো সেই সাহস হয় না, তুই দেখিস তো কি হয়েছে ওর , মনে হয় ভালো কোন বিপদে আছে, তোরা ত একজন আরেকজন কে সব বলিস”  
 
রানী একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় , কিভাবে বলবে বাবাকে ভেবে পায় না , এমনিতে অসুস্থ এমন খবর পেলে যদি কিছু হয়ে যায়। রানী বলে “ নাহ কিছু তো হয় নি , ও এমনিতেই এমন গম্ভির হয়ে গেছে আজকাল” কথা গুলো বলে একটু হাসতে চেষ্টা করে রানী।
 
“ দেখিস মা কোনদিন ভাইয়ের মনে কষ্ট দিবি না , সব সময় ভাইয়ের সাথে থাকবি , আমি যখন না থাকবো তোর একমাত্র আপন বলতে ওই ভাই ই থাকবে । মনে রাখবি , তোর মা তো ছিলোই না , আর আমি থেকেও ছিলাম না , রাজীব ই সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোর মা আর বাবা দুইজনের দায়িত্ব পালন করেছে , সেই ছোট বয়স থেকে  ও কিভাবে করেছে ওই জানে , বুঝে করেছে না নাবুঝে করেছে  আমি জানি না , কিন্তু করেছে যে ভাবেই হোক , আর দশটা ভাইয়ের মত কিন্তু ও না। জীবনে আরো সামনে গিয়ে তোরা দুজন যেখানে জেভাবেই থাকিস না কেনো একজন অন্যজন কে ছাড়বি না” বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে রহিম ।    
******
বাবার ঘর থেকে বেড়িয়ে রানী রাজীবের খোঁজে যায় । রাজীব নিজের উপর খুব বেশি চাপ নিয়ে ফেলছে আজকে । কিন্তু রাজীবের ঘরে গিয়ে রাজীব কে পায় না রানী । বাথ্রুমেও নেই , তাই রানী ছাদে যায় ।
 
ছাদের উপর একটা মাদুর বিছিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে রাজীব , ওর দৃষ্টি আকাশের থিকে । আজকে আকাশে মেঘ মেই , লক্ষ লক্ষ  তারকায় খচিত হয়ে আছে রাতের আকাশ । আর রাজীব এক মনে সেই তারার দিকে তাকিয়ে আছে । রানী যে এসেছে সেটা লক্ষ করেনি রাজীব । রানী যখন রাজীবের মাদুরের পাশে এসে দাঁড়ালো , তখন রাজীবের হুঁশ হলো ।
 
“ তাঁরা গুনছিস?” রানী হেসে জিজ্ঞাস করলো , আশ্চর্য ব্যাপার গত কিছুদিন রাজীবের সাথে খুলে কথা বলতে কেমন একটা ভয় ভয়  লাগছিলো মনে হচ্ছিলো ভাই কিছু বুঝে ফেলবে , আজকে সন্ধ্যায় নিজের সিদ্ধান্তের পর সেই ভয় কেটে গেছে ।
 
“হুম্মম বলতে পারিস , ভালো টাইম পাস হয়” রাজীব একটা হাফ স্মাইল দিয়ে বলল । রানী লক্ষ্য করলো সেই হাসি কেমন মলিন।
“ঘুমের চেয়ে ভালো টাইম পাস কি আর কিছু আছে বলে তো আমার জানা নেই , রাতে চোখ বন্ধ করবি , চোখ খুলে দেখবি সকাল হয়ে গেছে” রানী হাসতে হাসতে বলল , উদ্দেশ্য রাজীব কে উজ্জেবিত করা ।
 
রাজীব কিছু বলল না , হেসে নিজের পাশের যায়গা দেখিয়ে দিলো ইশারায় । রানী ভাইয়ের পাশে শুয়ে পরলো , আকাশের দিকে তাকালো ।
 
“ এই তাঁরা গুলো সুধু তাঁরা নয় , ওই যে ওই তারাটা দেখছিস?” রাজীব একটা জ্বলজ্বলে বড় তাঁরার দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো
 
“ হুম” রানী ছোট্ট করে বলল
 
“ যখন থেকে আমার মন থেকে ভুতের ভয় চলে গেছে , তখন থেকে এই তাঁরাটার সাথে আমার বন্ধুত্ব , এই তাঁরাটা আমাকে ওর মত জ্বলজ্বলে ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা যুগিয়েছে , কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে আমি ওকে প্রতারণা করেছি , ওর এতো চেষ্টা সত্ত্বেও আমি এমন একটা কাজ করেছি যা আমার ভবিষ্যৎ কে অন্ধকারের দিকে  ঠেলে দিয়েছে” রাজীব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
 
রানী অনুভব ওরে রাজীবের অনুতাপের উত্তাপ । “ তুই তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস , এখন থেকে সামলে চলবি” সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে রানী
 
“জীবন সব সময় দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না “ রাজীব ফ্রস্টেসনে মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে ছাদে আঘাত করে । ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে রানীর খুব কষ্ট হয় , কিন্তু কি বলে সান্তনা দেবে বুঝতে পারেনা , আজকে পজিসন রিভার্স হয়ে গেছে । সব সময় সান্তনা দেয়ার পজিশনে রাজীব থাকে , আর ও পারেও ।
 
“ সব জায়গায় ব্যারথ হলাম আমি , কোন সম্পর্কের পরিক্ষায় উতরে যেতে পারলাম না , না ছেলে হিশেবে,  না বন্ধু হিশেবে , না নিজের ক্যারিয়ার গঠনে , অসুস্থ আব্বু যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবেছিস? আর জয়ের কেমন বন্ধু আমি , ওকে থামানোর পরিবর্তে ওর সাথে গিয়েছি”
 
“ এখনো ক্ষেপে আছিস জয়ের উপর” রানী জিজ্ঞাস করে
 
“ না , জয়ের উপর আমার রাগ নেই , রাগ আমার উপর । আমি ভালো বন্ধু হতে পারলাম না । আমি চাইলে ওকে ঠেকাতে পারতাম । কিন্তু আমি যথেষ্ট চেষ্টা করিনি।“ রাজীব বড় শ্বাস ছেড়ে বলে
 
“ নিজের উপর এতো অত্যাচার করিস না , তুই যা করার করেছিস , তখন ওই পরিস্থিতিতে যা তোর ভালো মনে হয়েছে তুই তা করেছিস , মুখ তো ফিরিয়ে নিসনি” রানী বেশ দৃঢ় ভাবে বলে , চেষ্টা করে রাজীব কে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনার ।
 
“ নাহ আমার আরো ভালো করা উচিৎ ছিলো , আমাদের সম্পর্কের ধরন টাই এরকম রে , তুই বুঝবি না। আমাদের সম্পর্কে জয় ঘুড়ি আর আমি নাটাই সুতো । জয় উড়বে আর আমি ওকে সুতোর মাধ্যমে মাটির সাথে যুক্ত রাখবো , যখন দরকার হবে টেনে নামাবো , আর তাতেই আমি ফেইল করেছি, নিজেকে বন্ধু বলতে লজ্জা হচ্ছে , যদি কিছু হয়ে যায় , আব্বুকে কি বলবো , বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে কি বলবো” হতাশ স্বরে বলে রাজীব
 
“তোর মত আমি বলতে পারি না ভাইয়া , তবে আমার মন যা বলে তা হয় , আর আমার মন  বলছে তুই ওই বড় তাঁরাটার মতই জ্বলজ্বল করবি , হয়তো দুনিয়ার সবার জন্য নয় , তবে আমার জন্য , আব্বুর জন্য , আমাদের আশেপাশে যারা আছে তাদের জন্য । অন্তত আমার জন্য তো হবি ই , ওই বড় তাঁরার মত তুই আমাকে দিক নির্দেশনা দিবি, এটা কি তোর জন্য যথেষ্ট নয়? তোর ছোট বোন তোর দিকে গর্বের সাথে তাকায়?”
 
“ সত্যি বলছি তাহলে আমার কিছু চাওয়ার থাকবে না , আমার সারা দুনিয়ার কাছে কোন কিছু প্রমান করার নেই , তুই আর আমার আপনজন যারা আছে তাদের মনে আমাকে নিয়ে যদি কোন ক্ষেদ না থাকে তাহলেই আমি মনে করবো আমি ওই বড় তাঁরার মত হতে পেরেছি”
 
“ তাহলে হতাশা নয় , নিজেকে নিয়ে গর্ব কর , আমি তো তোকে অনুসরণ করেই এই পর্যন্ত এসেছি , আমার বিশ্বাস তুই আমাকে আরো আগে নিয়ে যাবি , তুই ই আমার জন্য মাঝ সমুদ্রে শুকতারা , আমি বিপদে পরলে তুই আমাকে পথ দেখিয়ে তিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসবি”
 
রাজীবের গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে যায় , চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসে । লোকে বলে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই । কিন্তু রাজীব তাতে বিশ্বাস করে না । মাঝে মাঝে কাঁদলে তেমন ক্ষতি নেই । বরং উপকার হয় ।
 
রানী ভাবে , এর নাম ই কি ভালোবাসা নয় ? আপন মানুষ গুলো একে অপরকে সম্পর্কের দড়িতে বেধে রেখছে । জীবন নামক পর্বত আহরণের সময় একজন পিছলে গেলে অন্যরা তাকে টেনে তুলছে । কি সুন্দর এই সম্পর্ক গুলো । এক বন্ধু ,বন্ধুত্বের দাবি পুরন করতে  নিজেকে ব্যারথ মনে করে নিজেকে দোষারোপ করছে । এক পিতা নিজের সর্বস্ব শেষ করে দিচ্ছে সন্তানদের জন্য হাসি মুখে । এক ভাই ভয়ে কুঁকড়ে আছে নিজের অনুজদের সঠিক নির্দেশনা দিতে ব্যারথ হবে এই ভয়ে । এক কন্যা আর বোন নিজেকে শক্ত করে ফেলছে , আবেগের সমুদ্র শুকিয়ে ফেলেছে , পিতা আর ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য । একে অপরের জন্য এই ত্যাগ গুলোই আজকে  দুনিয়ায় ভালোবাসা কে বাঁচিয়ে রেখছে । বেঁচে থাকুক এই সুন্দর সম্পর্ক গুলো ।
 
****
রাত এগারোটা ,জয় নিজের মোবাইল হাতে নেয় । নাম গুলো স্ক্রল করতে করতে আরিফ ভাই নামে সেভ করা একটা নাম্বারে এসে থেমে যায় । কিছুক্ষন ভাবে , তারপর আঙুল দিয়ে স্ক্রিনে চাপ দেয় । তিন চার বার রিং হতেই কল রিসিভ হয় ।
 
“ আরিফ ভাই কেমন আছে?”
 
ওপাশ থেকে কি বলে কিছু শোনা যায় না , জয় কে বলতে শোনা যায় “ সরি ভাই , একটু বিজি ছিলাম” তারপর আবার চুপ ,
 
“ জি ভাই জানি , তাইতো আপনাকে কল করেছি”
 
“একটা কাজ ছিলো ভাই , আপনি তো মনে হয় জানেন মেয়েদের হোস্টেলে একটা ঘটনা হয়েছে , ঐখানে রায়হান শিকদার রাজীব নামে একটা ছেলে জড়িত । আপনি ওর নাম মুছে দিবেন”
 
 
“ জি ভাই আমি জানি এটা আপনার জন্য কোন ব্যাপার না , আমি আসবো আগামিকাল আপনার কাছে”
 
“জি ভাইয়া আপনি যা বলবেন তাই হবে”
 
“ জি ভাইয়া” বলে জয় কল কেটে দেয় । মোবাইলের আলোয় ওর চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে , সেখানে তীব্র বেদনা , যা জয়ের চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরিত । জয় বিড়বিড় করে বলে “ যাহ তোকে মুক্ত করে দিলাম আমার বন্ধুত্বরে শিকল থেকে”
 
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 23-08-2025, 03:58 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)