22-08-2025, 08:00 PM
(This post was last modified: 23-08-2025, 10:58 AM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ওস্তাদজির অফিসে বেশ ভিড় ছিলো , যা সাধারনত সব সময় থাকে । কিন্তু ডলি আর নাইম কে আলাদা ভাবে ট্রিট করা হলো , অপেক্ষা করতে হলো না ওদের । লাইন উপেক্ষা করে সবার আগে ওদের সাথে দেখা করলো ওস্তাদজি ।
ওস্তাদজির পি এস যেন ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । ডলি নিজের নাম বলতেই ওদের কে ওস্তাদজির রুমে নিয়ে যাওয়া হলো । নাইম ওস্তাদজির বিশাল অফিস দেখে ভিমরি খেয়ে গেলো । অফিস নয় যেন একটা বিশাল ফুটবল মাঠ । গালিচায় পা রাখতেই পা যেন ডেবে যাচ্ছে নরম তুলোয় । প্রথমবার পা রেখে নাইম তো ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলো ।
বিশাল অফিস ঘরের পূর্ব পাশে ওস্তাদজির বিশাল টেবিল । নাইম জীবনেও এতো বড় টেবিল দেখনি । ডলির ঘরে যে বিছানা আছে সেটার চেয়ও বড় ওস্তাদজির টেবিল । টেবিলের উপর খুব বেশি কিছু নেই । একটা ছোট পিতলের তৈরি মূর্তি , যা অধভুত ভাবে ডান্স করছে (নটরাজ) । টেবিলের পেছনেও এমন একটা মূর্তি আছে , তবে ওটা সাইজে অনেক বড় । একটা ল্যান্ড টেলিফন সেট , একটা ডাইরি । এছার একটা কলম দানিতে অনেকগুলো কলম। বাকি টেবিল সম্পূর্ণ খালি ।
টবিলের পেছনে একটা বড়ো শো কেস । যার মাঝা মাঝি একটা বড় খুপরি তে প্রায় দুই ফুট লম্বা নটরাজ রাখা। বাকি খুপরি গুলোতে নানা ধরনের ট্রফি , আর ছবিতে ভরা । নাইম গুনে শেষ করতে পারে না ট্রফির সংখ্যা , মাত্র ১২ টি গুনার পর ডলি ওকে খোঁচা দেয় , আর ওস্তাদজির পায়ের দিকে ইঙ্গিত করে । ততক্ষণে ডলি নিজের সালাম সেরে ফেলেছে , কুশল বিনিময় ও প্রায় হয়ে গেছে ।
নাইম ডলির খোঁচা খেয়ে সম্বিৎ ফিরে পায় । দ্রুত নিচু হয়ে ওস্তাদজির পা ধরে সালাম করে । আরে আরে হয়েছে , এই বলে ওস্তাদজি নাইম কে ওর দু বাহুতে ধরে তুলে ফেলে । নিজের বাহুতে ওস্তাদজির হাতের গ্রিপ দেখে নাইম বেশ চমকে যায় । মনে মনে ভাবে বাবারে বুড়ার শইল্লে কি শক্তি !!
ওস্তাদজি নাইম আর ডলি কে বসতে বলে । নাইম আবারো ট্রফি গুন্তে শুরু করে । প্রায় ৩৬ টা গুনা শেষ হতেই ওস্তাদজি ওকে জিজ্ঞাস করে , তোমার বাড়ি কোথায় নাইম?
জি , আমার বাড়ি মধুপুর গ্রামে , নাইম ডলির শিখিয়ে দেখা ভাষায় উত্তর দেয় ।
বাবা মা কি করে ? ওস্তাদজি আবার জিজ্ঞাস করে । উত্তরে নাইম নির্লিপ্ত ভাবে বলে , নাই।
নাই মানে? ওস্তাদজি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে । মইরা গেসে , নাইম আবারো নির্লিপ্ত ভাবে বলে, তবে এবার আর ডলির শেখানো ভাষায় থাকতে পারে না ।
নাইমের উত্তর শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওস্তাদজি একটু চুপ হয়ে জান । ওনার চোখে মুখে হালকা বেদনার ছায়া দেখা দেয় । তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে, জিজ্ঞাস করে , নাইম তুমি নায়ক হতে চাও?
হু বলে মাথা নাড়ায় নাইম । ওস্তাদজি মুচকি হাসে । তারপর জিজ্ঞাস করে কেনো নায়ক হতে চাও? এবার নাইম নড়েচড়ে বসে , নায়ক গো সবাই পছন্দ করে , আর কত শক্তিশালী ওরা , একলাই সব গুন্ডা মাইরা ফেলে । নাইম আরো কিছু বলতে চাইছিলো , কিন্তু বলে না । পাশে ডলি আছে আর ওস্তাদজি ও গুরুজন ব্যাক্তি । ওদের সামনে এসব বলা যাবে না । তবে নাইম মনে মনে ভাবে , নায়ক হলে কত সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করা যায় , বৃষ্টিতে ভিজে ডান্স করা যায় , বাশর ঘরের সিন করা যায় , কিস করা যায় । আরো কত কি ।
নাইমের উত্তর শুনে ওস্তাদজি আরো একবার মুচকি হাসি দেয় । ডলিও হাসে পাশে বসে । তারপর ওস্তাদজি আবারো জিজ্ঞাস করে , কোন নায়ক তোমার পছন্দ ?
নাইম বলে , আগে তো দিলবার খান পরছন্দ ছিলো , কিন্তু উনি তো বুড়া মানুষ , তাই অহন আর কেউ পছন্দের নাই । নাইম ঠোঁট দুটো তাচ্ছিলের সাথে বাঁকা করে উত্তর দেয় ।
ওর উত্তরের ধরন দেখে ওস্তাদজি নিজের অবস্থান আর বয়সের মর্যাদার খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন । উচ্চস্বরে অট্টহাসি হেসে ওঠেন । বেশ কিছুক্ষন হেসে উনি ডলির দিকে তাকায় । বলে , ডলি এই ছেলে তো খুব সহজ সরল , যাক ভালই হলো , এমন সহজ সরল মানুষের দরকার আছে এই জগতে । এই দেখো না এইভাবে মন খুলে কবে হেসেছি আমার মনে পরে না, হা হা হা ।
নাইমের এমন গ্রাম্য ভাষায় , কোন রাখ ঢাক না রেখে উত্তর দেয়া দেখে ডলি মনে মনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো । সেই সাথে রাগ ও হচ্ছিলো , মনে মনে বলছিলো , ফাজিলটারে শিখাইয়া নিয়া আসলাম কি , আর এখন বলতেসে কি , দাড়া , বাসায় নিয়া নেই তোর পিঠের ছাল তুইলা ফেলবো আমি , তখন তো বলছিলি , সব বুঝছো । কিন্তু ওস্তাদজির এমন মন খোলা হাসি দেখে ডলির দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে ।
তা নাইম তুমি লেখাপড়া কতদুর করেছো? ওস্তাদজির এই প্রস্নে নাইম একটু মিইয়ে যায় । এতক্ষণ যে চটাং চটাং উত্তর দিচ্ছিলো , সে এখন আমতা আমতা করতে লাগলো । তারপর খুব ধিরে ধিরে বলল , মেট্রিক পাশ , যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । পরিক্ষা দিয়েছিলো নাইম , কিন্তু পাশ করেনি ।
উহু , তাহলে তো হবে না , পড়ালেখা জানা থাকতে হবে । না হয় ওই দিলবার খানের মত হবে , হাসতে হাসতে বলল ওস্তাদজি । আরো দুই একটি প্রশ্ন করলো নাইমকে , তারপর বাইরে গিয়ে বসতে বলল , আর পিওন ডেকে নাইমের জন্য কোক আর প্যাটিস এনে দেয়ার কথা বলল ।
নাইম বাইরে যেতেই , ওস্তাদজি ডলিকে বলল , দেখো ডলি আমার বয়স হয়েছে । আর কবছর ই বাঁচবো , আমি চাই বিদায়ের আগে এই ইন্ড্রাস্ট্রি কে এমন একটা মুখ দিয়ে যাই যে আমি মারা যাওয়ার ৫০ বছর পরো যেন আমার নাম জীবিত থাকে ।
ডলি নড়েচড়ে বসে ,
কিন্তু আজকাল আর এমন কাউকে দেখি না । বাংলা সিনেমার যা অবস্থা অশ্লীলতা দিয়ে ভরে গেছে । ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী যেমন নেই , তেমন ভালো গল্প ও নেই । তাই কেউ আর আসতে চায়না এই লাইনে । থিয়েটার , ফিয়েটার যারা করে , তাঁরা ওই টিভি নাটকে কাজ করে । এখানে টাকা বেশি তবুও আসতে চায় না পরিবেশের কারনে । দুই একজন যাও আসে , টাকার লোভে আসে । তাও টিভিতে ওদের যা পারফর্মেন্স , এখানে তার সিকি ভাগ ও দেখা যায় না । ওদের দোষ নেই , দোষ আমাদের ই । আমরা পরিবেশ ধরে রাখতে পারিনি ।
এক সময় কত শক্তিমান অভিনেতা অভিনেত্রী এই সিনেমা পাড়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে । আজ তাঁরাও এখানে আসতে চায় না , মান সম্মানের ভয়ে । আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির এমন অবস্থা হয়েছে , যেই এর সাথে সম্পৃক্ত হবে তার দিকেই মানুষ ট্যাড়া চোখে তাকাবে ।
ভালো কাজ করার লোক যে নাই এমন নয় । আছে , কিন্তু আম ছালা দুই হারানোর ভয়ে তাঁরা দূরে থাকে । পুরো ইন্ডাস্ট্রি ভরে গেছে কম পয়সায় ছবি বানিয়ে কিছু কামিয়ে নেয়ার ধান্দায় থাকা লোকে । আমাদের এখন দরকার এমন একজনের যে আমাদের দর্শকদের আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে । সুশীল দর্শক যেমন টেনে আনবে তেমনি বর্তমান যারা দর্শক তাদের ধরে রাখবে । আর এটা করতে পারবে সত্যিকার একজন হিরো ।
সাউথ সিনেমার কথাই ধরো না , গোলাপকান্ত , এই একটা লোক ই যথেষ্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি টেনে নেয়ার জন্য । কলেজ কলেজের ছাত্ররা যেমন এর ভক্ত , দিনমজুরা ও এর ভক্ত । এই নাইম ছেলেটার মাঝে আমি তেমন কিছু দেখতে পারছি । ওকে আমি প্রথম দেখি , নাসির নামে একটা ছেলে আছে না ভিলেনের পার্ট করে । ওর সাথে একটা কলহে জড়িয়ে পরেছিলো । তখন আমি ওর মাঝে সেই স্পার্ক দেখতে পেয়েছি ।
আমাদের ইন্ড্রাস্টির এখন এমনি একজন হিরো দরকার । যে বর্তমান জেনারেশন কে হলে টানতে পারবে । কিন্তু এখনি ওকে নামানো যাবে না । তোমার ব্যাপারে আমি যে ভুল করেছিলাম এর ক্ষেত্রে একি ভুল করতে চাই না। তুমি একে একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দাও । না পারলে আমাকে বলো আমি ব্যাবস্থা করে দেবো ।
খুশিতে ডলির দু চোখে পানি চলে আসে । অচেনা অজানা একটি ছেলের জন্য ডলি নিজের চোখে পানি দেখে একটু অবাক ই হয় । তারপর ওস্তাদজি কে আবার পা ধরে সালাম করে , বেড়িয়ে যায় ।
*****
ওস্তাদজির পি এস যেন ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । ডলি নিজের নাম বলতেই ওদের কে ওস্তাদজির রুমে নিয়ে যাওয়া হলো । নাইম ওস্তাদজির বিশাল অফিস দেখে ভিমরি খেয়ে গেলো । অফিস নয় যেন একটা বিশাল ফুটবল মাঠ । গালিচায় পা রাখতেই পা যেন ডেবে যাচ্ছে নরম তুলোয় । প্রথমবার পা রেখে নাইম তো ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলো ।
বিশাল অফিস ঘরের পূর্ব পাশে ওস্তাদজির বিশাল টেবিল । নাইম জীবনেও এতো বড় টেবিল দেখনি । ডলির ঘরে যে বিছানা আছে সেটার চেয়ও বড় ওস্তাদজির টেবিল । টেবিলের উপর খুব বেশি কিছু নেই । একটা ছোট পিতলের তৈরি মূর্তি , যা অধভুত ভাবে ডান্স করছে (নটরাজ) । টেবিলের পেছনেও এমন একটা মূর্তি আছে , তবে ওটা সাইজে অনেক বড় । একটা ল্যান্ড টেলিফন সেট , একটা ডাইরি । এছার একটা কলম দানিতে অনেকগুলো কলম। বাকি টেবিল সম্পূর্ণ খালি ।
টবিলের পেছনে একটা বড়ো শো কেস । যার মাঝা মাঝি একটা বড় খুপরি তে প্রায় দুই ফুট লম্বা নটরাজ রাখা। বাকি খুপরি গুলোতে নানা ধরনের ট্রফি , আর ছবিতে ভরা । নাইম গুনে শেষ করতে পারে না ট্রফির সংখ্যা , মাত্র ১২ টি গুনার পর ডলি ওকে খোঁচা দেয় , আর ওস্তাদজির পায়ের দিকে ইঙ্গিত করে । ততক্ষণে ডলি নিজের সালাম সেরে ফেলেছে , কুশল বিনিময় ও প্রায় হয়ে গেছে ।
নাইম ডলির খোঁচা খেয়ে সম্বিৎ ফিরে পায় । দ্রুত নিচু হয়ে ওস্তাদজির পা ধরে সালাম করে । আরে আরে হয়েছে , এই বলে ওস্তাদজি নাইম কে ওর দু বাহুতে ধরে তুলে ফেলে । নিজের বাহুতে ওস্তাদজির হাতের গ্রিপ দেখে নাইম বেশ চমকে যায় । মনে মনে ভাবে বাবারে বুড়ার শইল্লে কি শক্তি !!
ওস্তাদজি নাইম আর ডলি কে বসতে বলে । নাইম আবারো ট্রফি গুন্তে শুরু করে । প্রায় ৩৬ টা গুনা শেষ হতেই ওস্তাদজি ওকে জিজ্ঞাস করে , তোমার বাড়ি কোথায় নাইম?
জি , আমার বাড়ি মধুপুর গ্রামে , নাইম ডলির শিখিয়ে দেখা ভাষায় উত্তর দেয় ।
বাবা মা কি করে ? ওস্তাদজি আবার জিজ্ঞাস করে । উত্তরে নাইম নির্লিপ্ত ভাবে বলে , নাই।
নাই মানে? ওস্তাদজি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে । মইরা গেসে , নাইম আবারো নির্লিপ্ত ভাবে বলে, তবে এবার আর ডলির শেখানো ভাষায় থাকতে পারে না ।
নাইমের উত্তর শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওস্তাদজি একটু চুপ হয়ে জান । ওনার চোখে মুখে হালকা বেদনার ছায়া দেখা দেয় । তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে, জিজ্ঞাস করে , নাইম তুমি নায়ক হতে চাও?
হু বলে মাথা নাড়ায় নাইম । ওস্তাদজি মুচকি হাসে । তারপর জিজ্ঞাস করে কেনো নায়ক হতে চাও? এবার নাইম নড়েচড়ে বসে , নায়ক গো সবাই পছন্দ করে , আর কত শক্তিশালী ওরা , একলাই সব গুন্ডা মাইরা ফেলে । নাইম আরো কিছু বলতে চাইছিলো , কিন্তু বলে না । পাশে ডলি আছে আর ওস্তাদজি ও গুরুজন ব্যাক্তি । ওদের সামনে এসব বলা যাবে না । তবে নাইম মনে মনে ভাবে , নায়ক হলে কত সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করা যায় , বৃষ্টিতে ভিজে ডান্স করা যায় , বাশর ঘরের সিন করা যায় , কিস করা যায় । আরো কত কি ।
নাইমের উত্তর শুনে ওস্তাদজি আরো একবার মুচকি হাসি দেয় । ডলিও হাসে পাশে বসে । তারপর ওস্তাদজি আবারো জিজ্ঞাস করে , কোন নায়ক তোমার পছন্দ ?
নাইম বলে , আগে তো দিলবার খান পরছন্দ ছিলো , কিন্তু উনি তো বুড়া মানুষ , তাই অহন আর কেউ পছন্দের নাই । নাইম ঠোঁট দুটো তাচ্ছিলের সাথে বাঁকা করে উত্তর দেয় ।
ওর উত্তরের ধরন দেখে ওস্তাদজি নিজের অবস্থান আর বয়সের মর্যাদার খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন । উচ্চস্বরে অট্টহাসি হেসে ওঠেন । বেশ কিছুক্ষন হেসে উনি ডলির দিকে তাকায় । বলে , ডলি এই ছেলে তো খুব সহজ সরল , যাক ভালই হলো , এমন সহজ সরল মানুষের দরকার আছে এই জগতে । এই দেখো না এইভাবে মন খুলে কবে হেসেছি আমার মনে পরে না, হা হা হা ।
নাইমের এমন গ্রাম্য ভাষায় , কোন রাখ ঢাক না রেখে উত্তর দেয়া দেখে ডলি মনে মনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো । সেই সাথে রাগ ও হচ্ছিলো , মনে মনে বলছিলো , ফাজিলটারে শিখাইয়া নিয়া আসলাম কি , আর এখন বলতেসে কি , দাড়া , বাসায় নিয়া নেই তোর পিঠের ছাল তুইলা ফেলবো আমি , তখন তো বলছিলি , সব বুঝছো । কিন্তু ওস্তাদজির এমন মন খোলা হাসি দেখে ডলির দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে ।
তা নাইম তুমি লেখাপড়া কতদুর করেছো? ওস্তাদজির এই প্রস্নে নাইম একটু মিইয়ে যায় । এতক্ষণ যে চটাং চটাং উত্তর দিচ্ছিলো , সে এখন আমতা আমতা করতে লাগলো । তারপর খুব ধিরে ধিরে বলল , মেট্রিক পাশ , যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । পরিক্ষা দিয়েছিলো নাইম , কিন্তু পাশ করেনি ।
উহু , তাহলে তো হবে না , পড়ালেখা জানা থাকতে হবে । না হয় ওই দিলবার খানের মত হবে , হাসতে হাসতে বলল ওস্তাদজি । আরো দুই একটি প্রশ্ন করলো নাইমকে , তারপর বাইরে গিয়ে বসতে বলল , আর পিওন ডেকে নাইমের জন্য কোক আর প্যাটিস এনে দেয়ার কথা বলল ।
নাইম বাইরে যেতেই , ওস্তাদজি ডলিকে বলল , দেখো ডলি আমার বয়স হয়েছে । আর কবছর ই বাঁচবো , আমি চাই বিদায়ের আগে এই ইন্ড্রাস্ট্রি কে এমন একটা মুখ দিয়ে যাই যে আমি মারা যাওয়ার ৫০ বছর পরো যেন আমার নাম জীবিত থাকে ।
ডলি নড়েচড়ে বসে ,
কিন্তু আজকাল আর এমন কাউকে দেখি না । বাংলা সিনেমার যা অবস্থা অশ্লীলতা দিয়ে ভরে গেছে । ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী যেমন নেই , তেমন ভালো গল্প ও নেই । তাই কেউ আর আসতে চায়না এই লাইনে । থিয়েটার , ফিয়েটার যারা করে , তাঁরা ওই টিভি নাটকে কাজ করে । এখানে টাকা বেশি তবুও আসতে চায় না পরিবেশের কারনে । দুই একজন যাও আসে , টাকার লোভে আসে । তাও টিভিতে ওদের যা পারফর্মেন্স , এখানে তার সিকি ভাগ ও দেখা যায় না । ওদের দোষ নেই , দোষ আমাদের ই । আমরা পরিবেশ ধরে রাখতে পারিনি ।
এক সময় কত শক্তিমান অভিনেতা অভিনেত্রী এই সিনেমা পাড়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে । আজ তাঁরাও এখানে আসতে চায় না , মান সম্মানের ভয়ে । আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির এমন অবস্থা হয়েছে , যেই এর সাথে সম্পৃক্ত হবে তার দিকেই মানুষ ট্যাড়া চোখে তাকাবে ।
ভালো কাজ করার লোক যে নাই এমন নয় । আছে , কিন্তু আম ছালা দুই হারানোর ভয়ে তাঁরা দূরে থাকে । পুরো ইন্ডাস্ট্রি ভরে গেছে কম পয়সায় ছবি বানিয়ে কিছু কামিয়ে নেয়ার ধান্দায় থাকা লোকে । আমাদের এখন দরকার এমন একজনের যে আমাদের দর্শকদের আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে । সুশীল দর্শক যেমন টেনে আনবে তেমনি বর্তমান যারা দর্শক তাদের ধরে রাখবে । আর এটা করতে পারবে সত্যিকার একজন হিরো ।
সাউথ সিনেমার কথাই ধরো না , গোলাপকান্ত , এই একটা লোক ই যথেষ্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি টেনে নেয়ার জন্য । কলেজ কলেজের ছাত্ররা যেমন এর ভক্ত , দিনমজুরা ও এর ভক্ত । এই নাইম ছেলেটার মাঝে আমি তেমন কিছু দেখতে পারছি । ওকে আমি প্রথম দেখি , নাসির নামে একটা ছেলে আছে না ভিলেনের পার্ট করে । ওর সাথে একটা কলহে জড়িয়ে পরেছিলো । তখন আমি ওর মাঝে সেই স্পার্ক দেখতে পেয়েছি ।
আমাদের ইন্ড্রাস্টির এখন এমনি একজন হিরো দরকার । যে বর্তমান জেনারেশন কে হলে টানতে পারবে । কিন্তু এখনি ওকে নামানো যাবে না । তোমার ব্যাপারে আমি যে ভুল করেছিলাম এর ক্ষেত্রে একি ভুল করতে চাই না। তুমি একে একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দাও । না পারলে আমাকে বলো আমি ব্যাবস্থা করে দেবো ।
খুশিতে ডলির দু চোখে পানি চলে আসে । অচেনা অজানা একটি ছেলের জন্য ডলি নিজের চোখে পানি দেখে একটু অবাক ই হয় । তারপর ওস্তাদজি কে আবার পা ধরে সালাম করে , বেড়িয়ে যায় ।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।