21-08-2025, 03:46 PM
৯
বাড়িতে ফেরার সময় ডলির মন বেশ উৎফুল্ল হয়ে রইলো । নাইম ছেলেটা ওস্তাদজির নজরে পরছে মানে ওর কিছু একটা হবেই । ওস্তাদজি কাউকে সাহায্য করেছে আর তার উন্নতি হয়নি এরকম ঘটনা এই দেশের সিনেমার ইতিহাসে নেই । এক মাত্র ডলি নিজে ছাড়া ।
নিজের কথা মনে হতেই ডলির বুক থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো । কি দিন গুলি না ছিলো । সিনেমা পাড়ায় আনাচে কানাচে সুধু ওকে নিয়ে মানুষের আলাপ , কানাঘুষা , ফিসফিসানি। যেখানেই যেতো সবাই ওকে নিয়ে মেতে থাকতো ।
নিজের প্রথম সিনেমার কাজ শুরু করার মাত্র দের মাস পর ডলি নিজের দ্বিতীয় সিনেমা সাইন করে । ওখানেও সেকেন্ড ফিমেল লিড । কিন্তু তাতে কি , ডলির ডিমান্ড দিন দিন বাড়তে থাকে । সবাই ডলিকে দ্বিতীয় নাইকা হিশেবে চায় । একে একে প্রায় আট দশটা এরকম ছবি করে ফেলে মাত্র দু বছরের মধ্যে ।
কিন্তু ডলির ভালো লাগছিলো না আর দ্বিতীয় নাইকার অভিনয় করতে । ফিমেল লিড হওয়ার বাসনা জাগে , মাত্র উনিস বছর বয়স ওর তখন । ওস্তাদজি ওকে অনেক বুঝিয়েছে , বলেছিলো আর একটা বছর অপেক্ষা করো ডলি । কিন্তু ডলির তখন পাখা গজিয়েছে ।
আর তখনি একটা অনুস্থানে দেখা হয় , জহির আহমেদের সঙ্গে । বিশাল প্রযোজক , বেশিরভাগ সিনেমায় ওনার টাকা ইনভেস্ট হয় । ষাট ঊর্ধ্ব জহিরের বেশ কুখ্যাতি আছে সিনেমা জগতে । কিন্তু কেউ মুখের উপর কিছু বলে না । ডলি ও কিছুটা জানতো । আর জেনে শুনেই ডলি পা বাড়িয়ে ছিলো আগুনের দিকে , উঁই পোকার মত । ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিলো , প্রথমে পাখা হারিয়েছিলো ডলি । তারপর সেই আগুনে পুরে খাক হয়েছিলো সম্পূর্ণ শরীর ।
চার বছর গ্যাপ দিয়ে যখন ডলি ফিরলো , তখন আর কেউ নিতে চায় না কাজে । এমন কি দ্বিতীয় নাইকা হিশেবেও ডলি তখন ফিট না । কিন্তু ডলির যাওয়ার আর কোন যায়গা ছিলো না । তাই কোন রকমে সিনেমা পাড়াতেই পরে রয়েছে মাটি কামড়ে ।
ডলি নিজের অতিতের দুঃস্বপ্ন থেকে ফিরে আসে বাস্তবে । পাশে বসা নাইমের দিকে তাকায় । মন খারাপ করে বাইরের দিকে চেয়ে আছে ছেলেটা । বাতাসে চুল গুলো উরছে । কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা , দেখলেই ডলির বুকটা সিক্ত হয়ে ওঠে মমতায় । আদর করতে ইচ্ছে হয় , এক দম ছেলে মানুষ । এই যে একন মুখ ভার করে আছে , ডলি জানে কেনো মুখ ভার করে আছে । আপনা আপনি ডলির মুখে একটা হাসি চলে আসে । জেরিনের শুটিং দেখতে পারেনি বলে যে বাবু মন খারাপ করে আছে সেটা ডলি জানে ।
আকারে ইঙ্গিতে ওকে বহুবার বলেছে জেরিনের সাথে দেখা করিয়ে দিতে , কিন্তু ডলির কি আজ সেই সাধ্য আছে। হ্যা চাইলে অবশ্য পারে , কিন্তু এর জন্য ডলিকে সেদিনের পুচকে নাইকার সামনে নত মস্তক হতে হবে। আজকাল জেরিন কে দেখে খুব হিংসা হয় ডলির । বছর তিনেক হবে এসেছে । যখন প্রথম এসেছিলো, না ছিলো চেহারার ছিরি না ছিলো শরীর । অথচ এখন দেখলে চেনা যায় না । অথচ ডলি যখন প্রথম এসেছিলো ওই ১৭ বছর বয়সেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো ।
আবার তাকায় ডলি নাইমের দিকে , তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিদ্ধান্ত নেয় , নিয়ে যাবে একদিন জেরিনের সামনে ওকে । এর জন্য জেরিন কে কিছুদিন তেল মাখতে হবে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে । কিন্তু ডলি এতে রাজি আছে , নাইমের তখন কার হাসি মুখ দেখতে কেমন হবে ভেবে মুচকি হাসে ।
*****
ডলি ম্যাডাম , এই ওস্তাদজির আসল নাম কি ? বাসায় ফিরে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে জিজ্ঞাস করে নাইম । রাতের খাবার রান্না করছে ডলি আর ও । রাতে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি হবে ।
এই ছেলে তুই আমারে ম্যাডাম ম্যাডাম করস ক্যান? ডলি একটু রাগ করেই বলে
তাইলে কি ডাক্মু? নাইম একটু অবাক হয়ে তাকায় । আসলে এই মমতাময়ই মহিলার সাথে নাইমের যে কি সম্পর্ক হতে পারে নাইম তা ভেবে পায় না । বয়সে নাইমের খালা দের মত হবে । কিন্তু খালা ডাকটা ঠিক যায় না ওনার সাথে । আবার খালা ডাকলে যদি রাগ করে , এই ভেবে নাইম ম্যাডাম বলেই ডাকে ।
ডলি কিছুক্ষন ভাবে , তারপর বলে তুই আমারে আপা ডাকবি বুঝছস , সিনেমা লাইনে সবাই সবার আপা আর ভাই । একদম বুড়া বুড়া নায়ক নাইকা গো ও আমরা আপা আর ভাই বইলা ডাকি ।
আচ্ছা আপা , বলে নাইম হাসে । ডলি সে হাসি দেখে নিজেও হাসে । তবে নাইমের মুখে আপা ডাক টা সুধু প্রফেসনাল সম্পর্কের লাগলো না । বেশ আপন মনে হলো ডলির কাছে এই আপা ডাক ।
ওস্তাদজির আসল নাম হচ্ছে হাসান চৌধুরী , তবে এই নামে ডাকার মতন লোক আর সিনেমা পাড়ায় নাই । সবাই ওনার জুনিওর ।
বলেন কি আপা , ওনার বয়স কত ? নাইম বেশ অবাক হয়
বয়স আর কত হইবো , ৬৫-৭০ , কিন্তু ওনার চেয়ে বয়সে বড় মানুষ ও ওনারে ওস্তাদজি ডাকে ।
ওরে বাবা এতো বয়স , দেখলে বুঝা যায় না কিন্তু ।
উহ অনেক নিয়ম কানুন মাইনা চলেন , তোর আর আমার মতন খিচুড়ি আর দিম ভাজি খায় না বুঝলি। ডলি হাসতে হাসতে বলে । সাথে নাইম ও হাসে । ওদের হাসি বাড়তে থাকে , অকারনেই শব্দ উচ্চ থেকে উচ্চতর হতে থাকে । ওরা দুজনেই জানে না কেন এই কথায় ওরা দুজনেই এমন পাগলের মত হাসছে ।
হাসির এক পর্যায়ে ডলি থেমে যায় , ওর চোখ ফেটে পানি পড়তে চায় । কিন্তু রঙ্গিন পর্দার অভিনয়ে ব্যারথ শিল্পী , জীবনের অভিনয়ে উতরে যায় , চোখের পানি রুখে দিয়ে আবার হাসতে শুরু করে । কবে থেকে ডলি আত্মীয় পরিজন ছাড়া একা একা থাকছে তার হিশেবের খাতা ডলি বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে । যতদিন মা বেঁচে ছিলো ওর সাথেই ছিলো । মা মারা যাওয়ার পর ভাই বোন রা ওকে নিজেদের আপন জন বলে স্বীকার করে না । আজ প্রায় আট নয় বছর হবে । ডলি নিজের দুই ভাই আর ছোট বোন কে দেখে না । কোন উৎসবে পার্বণে ওরা ওকে ডাকে না । ডলিও কোনদিন যায় না ।
একবার গিয়েছিলো ছোট বোনের কাছে, খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো । বোন প্রথমে ডেকে বসালেও । পরে বোনের স্বামী বোন কে ডেকে নিয়ে কি যেন বলল । তখন বোন এসে কান্নাকাটি করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল , তুই চলে যা , আর আসিস না । ভাই দের কাছে এমনিতেও যায় না । বিয়ের আগে তাও ছোট ভাই মাঝে মাঝে খোঁজ নিতো , বিয়ের পর তাও নেয়ে না । ডলি মাঝে মাঝে ভাবে একি রক্ত মাংস থেকে তৈরি । একি সাথে হেসে খেলে বড় হওয়া আপনার মানুষ গুলোও কি করে একদিন দূরে ঠেলে দেয় । ছোট বেলায় কোনদিন মনে হয়নি এদের ছেড়ে থাকতে পারবে । অথচ আজ , কে কি করছে , কার জীবন কেমন চলছে কেউ খোঁজ ও রাখে না ।
কিন্তু আজকে এই রাস্তায় পাওয়া ছেলেটাকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে । অনেক দিন পর মনে হচ্ছে ডলির কেউ আছে । বিধাতা হয়তো ওর সতেরো বছর আগের করা পাপ আজকে মাফ করে দিয়েছে । এমন মনে হচ্ছে ডলির ।
******
আজকে ডলি নাইম কে ওস্তাদজির অফিসে নিয়ে যাচ্ছে । ডলি বেশি দেরি করতে চায়নি । ব্যাস্ত মানুষ যদি ভুলে টুলে যায় । নাইম কে বার বার শিখিয়ে দিয়েছে কি ভাবে আচরন করতে হবে । কিন্তু তাতেও ডলির মন শান্ত হচ্ছে না । তাই বাসে বসে আবার বলল , এই বাইরে মাথা বাইর করোস ক্যান ,শোন আমার কথা মন দিয়া , প্রথমেই ওস্তাদজির পাও ধইরা সালাম করবি , কথা বলবি মাথা নিচু কইরা , বুঝছস? আর প্রশ্ন না করলে কথা বলবি না ।
আহ আপা বিরক্ত কইরো না তো , একশো বার এই কথা বলসো , আর কত বলবা , নাইম বিরক্ত হয়
একটা থাপ্পড় লাগামু তোরে , আর সুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি , “হো” বলবি না , বলবি “জি” , “ করমু” বলবি না , বলবি “ জি করবো” , “ পারমু” বলবি না , বলবি “জি পারবো” ।
জি আপা আমি এভাবেই বলবো , ডলি কে নকল করে বলে নাইম , তারপর মুখ ভেংচি কেটে বলে , এইবার তো চুম করবা।
ডলি নাইমের চুল মুঠো করে ধরে একটা ঝাকি দেয় , আমার সাথে ফাইজলামি করবি না , ফাজিল । এইটা কত বড় সুযোগ তুই জানোস? এমন সুযোগ সবার আসে না
সেদিন খুচুরি রান্না করতে গিয়ে ডলি নিজের মমতার দুয়ার নাইমের জন্য কিছুটা খুলে দিয়েছিলো , তা আজ পর্যন্ত আসতে আসতে পুরোটা খুলে দিয়েছে । আর নাইম ও বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে , এখন আর ও কাছে ডলি কে নিজের আশ্রয় দাত্রী নয় , বরং অনেক আপন মনে হয় । দুই স্বজন হারা মানুষ একে অপরের মাঝে নিজেদের আপনজন দের খুজে পেয়েছে যেন?
*****
বাড়িতে ফেরার সময় ডলির মন বেশ উৎফুল্ল হয়ে রইলো । নাইম ছেলেটা ওস্তাদজির নজরে পরছে মানে ওর কিছু একটা হবেই । ওস্তাদজি কাউকে সাহায্য করেছে আর তার উন্নতি হয়নি এরকম ঘটনা এই দেশের সিনেমার ইতিহাসে নেই । এক মাত্র ডলি নিজে ছাড়া ।
নিজের কথা মনে হতেই ডলির বুক থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো । কি দিন গুলি না ছিলো । সিনেমা পাড়ায় আনাচে কানাচে সুধু ওকে নিয়ে মানুষের আলাপ , কানাঘুষা , ফিসফিসানি। যেখানেই যেতো সবাই ওকে নিয়ে মেতে থাকতো ।
নিজের প্রথম সিনেমার কাজ শুরু করার মাত্র দের মাস পর ডলি নিজের দ্বিতীয় সিনেমা সাইন করে । ওখানেও সেকেন্ড ফিমেল লিড । কিন্তু তাতে কি , ডলির ডিমান্ড দিন দিন বাড়তে থাকে । সবাই ডলিকে দ্বিতীয় নাইকা হিশেবে চায় । একে একে প্রায় আট দশটা এরকম ছবি করে ফেলে মাত্র দু বছরের মধ্যে ।
কিন্তু ডলির ভালো লাগছিলো না আর দ্বিতীয় নাইকার অভিনয় করতে । ফিমেল লিড হওয়ার বাসনা জাগে , মাত্র উনিস বছর বয়স ওর তখন । ওস্তাদজি ওকে অনেক বুঝিয়েছে , বলেছিলো আর একটা বছর অপেক্ষা করো ডলি । কিন্তু ডলির তখন পাখা গজিয়েছে ।
আর তখনি একটা অনুস্থানে দেখা হয় , জহির আহমেদের সঙ্গে । বিশাল প্রযোজক , বেশিরভাগ সিনেমায় ওনার টাকা ইনভেস্ট হয় । ষাট ঊর্ধ্ব জহিরের বেশ কুখ্যাতি আছে সিনেমা জগতে । কিন্তু কেউ মুখের উপর কিছু বলে না । ডলি ও কিছুটা জানতো । আর জেনে শুনেই ডলি পা বাড়িয়ে ছিলো আগুনের দিকে , উঁই পোকার মত । ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিলো , প্রথমে পাখা হারিয়েছিলো ডলি । তারপর সেই আগুনে পুরে খাক হয়েছিলো সম্পূর্ণ শরীর ।
চার বছর গ্যাপ দিয়ে যখন ডলি ফিরলো , তখন আর কেউ নিতে চায় না কাজে । এমন কি দ্বিতীয় নাইকা হিশেবেও ডলি তখন ফিট না । কিন্তু ডলির যাওয়ার আর কোন যায়গা ছিলো না । তাই কোন রকমে সিনেমা পাড়াতেই পরে রয়েছে মাটি কামড়ে ।
ডলি নিজের অতিতের দুঃস্বপ্ন থেকে ফিরে আসে বাস্তবে । পাশে বসা নাইমের দিকে তাকায় । মন খারাপ করে বাইরের দিকে চেয়ে আছে ছেলেটা । বাতাসে চুল গুলো উরছে । কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা , দেখলেই ডলির বুকটা সিক্ত হয়ে ওঠে মমতায় । আদর করতে ইচ্ছে হয় , এক দম ছেলে মানুষ । এই যে একন মুখ ভার করে আছে , ডলি জানে কেনো মুখ ভার করে আছে । আপনা আপনি ডলির মুখে একটা হাসি চলে আসে । জেরিনের শুটিং দেখতে পারেনি বলে যে বাবু মন খারাপ করে আছে সেটা ডলি জানে ।
আকারে ইঙ্গিতে ওকে বহুবার বলেছে জেরিনের সাথে দেখা করিয়ে দিতে , কিন্তু ডলির কি আজ সেই সাধ্য আছে। হ্যা চাইলে অবশ্য পারে , কিন্তু এর জন্য ডলিকে সেদিনের পুচকে নাইকার সামনে নত মস্তক হতে হবে। আজকাল জেরিন কে দেখে খুব হিংসা হয় ডলির । বছর তিনেক হবে এসেছে । যখন প্রথম এসেছিলো, না ছিলো চেহারার ছিরি না ছিলো শরীর । অথচ এখন দেখলে চেনা যায় না । অথচ ডলি যখন প্রথম এসেছিলো ওই ১৭ বছর বয়সেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো ।
আবার তাকায় ডলি নাইমের দিকে , তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিদ্ধান্ত নেয় , নিয়ে যাবে একদিন জেরিনের সামনে ওকে । এর জন্য জেরিন কে কিছুদিন তেল মাখতে হবে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে । কিন্তু ডলি এতে রাজি আছে , নাইমের তখন কার হাসি মুখ দেখতে কেমন হবে ভেবে মুচকি হাসে ।
*****
ডলি ম্যাডাম , এই ওস্তাদজির আসল নাম কি ? বাসায় ফিরে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে জিজ্ঞাস করে নাইম । রাতের খাবার রান্না করছে ডলি আর ও । রাতে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি হবে ।
এই ছেলে তুই আমারে ম্যাডাম ম্যাডাম করস ক্যান? ডলি একটু রাগ করেই বলে
তাইলে কি ডাক্মু? নাইম একটু অবাক হয়ে তাকায় । আসলে এই মমতাময়ই মহিলার সাথে নাইমের যে কি সম্পর্ক হতে পারে নাইম তা ভেবে পায় না । বয়সে নাইমের খালা দের মত হবে । কিন্তু খালা ডাকটা ঠিক যায় না ওনার সাথে । আবার খালা ডাকলে যদি রাগ করে , এই ভেবে নাইম ম্যাডাম বলেই ডাকে ।
ডলি কিছুক্ষন ভাবে , তারপর বলে তুই আমারে আপা ডাকবি বুঝছস , সিনেমা লাইনে সবাই সবার আপা আর ভাই । একদম বুড়া বুড়া নায়ক নাইকা গো ও আমরা আপা আর ভাই বইলা ডাকি ।
আচ্ছা আপা , বলে নাইম হাসে । ডলি সে হাসি দেখে নিজেও হাসে । তবে নাইমের মুখে আপা ডাক টা সুধু প্রফেসনাল সম্পর্কের লাগলো না । বেশ আপন মনে হলো ডলির কাছে এই আপা ডাক ।
ওস্তাদজির আসল নাম হচ্ছে হাসান চৌধুরী , তবে এই নামে ডাকার মতন লোক আর সিনেমা পাড়ায় নাই । সবাই ওনার জুনিওর ।
বলেন কি আপা , ওনার বয়স কত ? নাইম বেশ অবাক হয়
বয়স আর কত হইবো , ৬৫-৭০ , কিন্তু ওনার চেয়ে বয়সে বড় মানুষ ও ওনারে ওস্তাদজি ডাকে ।
ওরে বাবা এতো বয়স , দেখলে বুঝা যায় না কিন্তু ।
উহ অনেক নিয়ম কানুন মাইনা চলেন , তোর আর আমার মতন খিচুড়ি আর দিম ভাজি খায় না বুঝলি। ডলি হাসতে হাসতে বলে । সাথে নাইম ও হাসে । ওদের হাসি বাড়তে থাকে , অকারনেই শব্দ উচ্চ থেকে উচ্চতর হতে থাকে । ওরা দুজনেই জানে না কেন এই কথায় ওরা দুজনেই এমন পাগলের মত হাসছে ।
হাসির এক পর্যায়ে ডলি থেমে যায় , ওর চোখ ফেটে পানি পড়তে চায় । কিন্তু রঙ্গিন পর্দার অভিনয়ে ব্যারথ শিল্পী , জীবনের অভিনয়ে উতরে যায় , চোখের পানি রুখে দিয়ে আবার হাসতে শুরু করে । কবে থেকে ডলি আত্মীয় পরিজন ছাড়া একা একা থাকছে তার হিশেবের খাতা ডলি বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে । যতদিন মা বেঁচে ছিলো ওর সাথেই ছিলো । মা মারা যাওয়ার পর ভাই বোন রা ওকে নিজেদের আপন জন বলে স্বীকার করে না । আজ প্রায় আট নয় বছর হবে । ডলি নিজের দুই ভাই আর ছোট বোন কে দেখে না । কোন উৎসবে পার্বণে ওরা ওকে ডাকে না । ডলিও কোনদিন যায় না ।
একবার গিয়েছিলো ছোট বোনের কাছে, খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো । বোন প্রথমে ডেকে বসালেও । পরে বোনের স্বামী বোন কে ডেকে নিয়ে কি যেন বলল । তখন বোন এসে কান্নাকাটি করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল , তুই চলে যা , আর আসিস না । ভাই দের কাছে এমনিতেও যায় না । বিয়ের আগে তাও ছোট ভাই মাঝে মাঝে খোঁজ নিতো , বিয়ের পর তাও নেয়ে না । ডলি মাঝে মাঝে ভাবে একি রক্ত মাংস থেকে তৈরি । একি সাথে হেসে খেলে বড় হওয়া আপনার মানুষ গুলোও কি করে একদিন দূরে ঠেলে দেয় । ছোট বেলায় কোনদিন মনে হয়নি এদের ছেড়ে থাকতে পারবে । অথচ আজ , কে কি করছে , কার জীবন কেমন চলছে কেউ খোঁজ ও রাখে না ।
কিন্তু আজকে এই রাস্তায় পাওয়া ছেলেটাকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে । অনেক দিন পর মনে হচ্ছে ডলির কেউ আছে । বিধাতা হয়তো ওর সতেরো বছর আগের করা পাপ আজকে মাফ করে দিয়েছে । এমন মনে হচ্ছে ডলির ।
******
আজকে ডলি নাইম কে ওস্তাদজির অফিসে নিয়ে যাচ্ছে । ডলি বেশি দেরি করতে চায়নি । ব্যাস্ত মানুষ যদি ভুলে টুলে যায় । নাইম কে বার বার শিখিয়ে দিয়েছে কি ভাবে আচরন করতে হবে । কিন্তু তাতেও ডলির মন শান্ত হচ্ছে না । তাই বাসে বসে আবার বলল , এই বাইরে মাথা বাইর করোস ক্যান ,শোন আমার কথা মন দিয়া , প্রথমেই ওস্তাদজির পাও ধইরা সালাম করবি , কথা বলবি মাথা নিচু কইরা , বুঝছস? আর প্রশ্ন না করলে কথা বলবি না ।
আহ আপা বিরক্ত কইরো না তো , একশো বার এই কথা বলসো , আর কত বলবা , নাইম বিরক্ত হয়
একটা থাপ্পড় লাগামু তোরে , আর সুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি , “হো” বলবি না , বলবি “জি” , “ করমু” বলবি না , বলবি “ জি করবো” , “ পারমু” বলবি না , বলবি “জি পারবো” ।
জি আপা আমি এভাবেই বলবো , ডলি কে নকল করে বলে নাইম , তারপর মুখ ভেংচি কেটে বলে , এইবার তো চুম করবা।
ডলি নাইমের চুল মুঠো করে ধরে একটা ঝাকি দেয় , আমার সাথে ফাইজলামি করবি না , ফাজিল । এইটা কত বড় সুযোগ তুই জানোস? এমন সুযোগ সবার আসে না
সেদিন খুচুরি রান্না করতে গিয়ে ডলি নিজের মমতার দুয়ার নাইমের জন্য কিছুটা খুলে দিয়েছিলো , তা আজ পর্যন্ত আসতে আসতে পুরোটা খুলে দিয়েছে । আর নাইম ও বেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে , এখন আর ও কাছে ডলি কে নিজের আশ্রয় দাত্রী নয় , বরং অনেক আপন মনে হয় । দুই স্বজন হারা মানুষ একে অপরের মাঝে নিজেদের আপনজন দের খুজে পেয়েছে যেন?
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।