02-07-2019, 12:57 PM
পার্টঃঃ১১
আবার হাসি।
দাদাকে সব বলেছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
হ্যাঁ।
দাদা শুনে কি বললেন।
তুই জিজ্ঞাসা কর।
আমি তো দাদাকে প্রশ্ন করিনি, তোকে করেছি।
আমি কিছু জানিনা যা।
বাঃ তুমি মালকিন, সম্পাদক বলে কথা।
না আমি মালকিন নই।
তাহলে কে।
জানিনা।
মিঃ ব্যানার্জী হাসলেন। তুমি কি দাদাদের সব বলেছো।
হ্যাঁ।
দাদা আপনাদের মতামত বলুন।
আমরা কি মতামত দেবো বলুন। আমরা আজ আছি কাল নেই। কাগজটা চালাবে ওরা।
ফোনটা বেজে উঠলো। সন্দীপের ফোন। সরি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দয় এলাম।
কি হয়েছে বল।
অফিসে এলিনা কেনো।
আমি এখন কয়েকদিন যাবো না। তোকে যে দায়িত্ব দিয়ছিলাম করেছিস।
হ্যাঁ।
ওরা কিছু বলছিল।
না। ওরা তোকে বেশ ধসে।
তুই কি করে বুঝলি।
সে কি খাতির যত্ন।
থাক। আমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিস।
সে আর বলতে।
অফিসের হালচাল।
সুনিতদা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই কয়েকদিন আসতে পারছেন না। এলে আরো কিছু ছাঁটাই হবে।
ম্যাডাম অসুস্থ তোকে কে বললে।
আরে আমাদের ঐ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আছে না, কি সাম ঘরুই।
হ্যাঁ।
উনিই বললেন।
তাই।
এখনতো উনিই মালিক।
তাই নাকি।
হ্যাঁরে।
আজ আমার মর্নিং ছিলো। এই ফিরছি। আর শোন শোন অফিসে রিমডুলেশন চলছে।
বাঃ বাঃ।
হ্যাঁরে।
কাগজ ঠিক ঠিক বেরোচ্ছে তো।
বেরোচ্ছে তবে ওই রকম। তুই আমার চাকরিটা একটু দেখিস।
ঠিক আছে।
যে দায়িত্বগুলো তোকে দিয়েছি করে যা।
ঠিক আছে।
ঘরে এলাম।
মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদা কথা বলছেন। অফিস কি ভাবে সাজানো হবে। পরবর্তী কি কি কাজ করলে ভাল হয়। সেই নিয়ে। আমি আমার জায়গায় বসলাম। ছোটমা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির। পেছনে বড়মা। দেখলাম মেনুটা খারাপ নয়, চিংড়িমাছের চপ আর চা। আমি জুল জুল করে চেয়ে রইলাম। ছোটমা হেসে বললো, তোর জন্য নয় ওনাদের জন্য।
চা খেতে খেতে আবার আলোচনা শুরু হলো।
মিত্রা বললো, হিমাংশুর সাথে কথা হয়েছে। ও এই সপ্তাহের মধ্যে রেডি করে দেবে।
ভালোতো।
একটা সমস্যা হয়েছে।
সেটা আবার কি রকম।
ওরা আমার নামে ট্রান্সফার করবে না।
তোর নামে করবে না, দাদার নামে করুক।
আমাদের দুজনের নামে হবে না।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা বলবো অনি।
বলুন।
শেয়ারটা তোমার নামে ট্রান্সফার করিয়ে নাও।
আমার নামে! খেপেছেন নাকি।
তোর নামে করলে আপত্তি কোথায়। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। আমার চাহুনি মিত্রা চেনে।
ঠিক আছে ঠিক আছে। তুই ওর সাথে কথা বল। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। ইচ্ছে করে স্পীকারে রাখলাম।
হ্যাঁ বল। তোর কাজ করে দিয়েছি। হিমাংশু বললো।
মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে শুনলাম।
হ্যাঁ হয়েছে। সেতো আমি মিত্রাকে বলেছি।
ঝামেলাটা কে সামলাবে তুই না মিত্রা।
এটুকু সাহায্য তুই যদি না করিস তাহলে কি করে হয়।
ঠিক আছে দুটো ডিড কর, একটা আমার নামে ট্রান্সফার হচ্ছে, আর একটা কর আমি মিত্রার নামে ট্রান্সফার করছি।
আমিতো বলেছিলাম সেই কথা, মিত্রা রাজি হয় নি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিত্রা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে। মুখ লাল হয়েগেছে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।
ঠিক আছে আমি তোকে আধঘন্টা বাদে ফোন করছি।
ফোন নামিয়ে রাখলাম। মিত্রার দিকে তাকালাম। সম্পত্তি নিয়ে পাগলামো করিস না। আজ আমি ভাল আছি। কাল শত্রু হয়ে যাব না কে বলতে পারে। হিমাংশু আমার ইনস্ট্রাকসন ছাড়া একটুও দুলবে না। ওকে যে ভাবে কাজ করতে বলেছি সে ভাবে করতে দে। তোর ভালর জন্য বলছি। আমাকে তোর যদি কিছু দিতে হয়....সেতো অনেক সময় রয়েছে। এতো তাড়াহুড় করার কি আছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে। চোখ দুটো ছল ছলে। আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করব না।
চোখ মোছ। মুখ তোল। মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি তোকে অপমান করতে চাই নি। তোকে বোঝাতে চাইলাম। সেদিনও তোকে বুঝিয়েছি। এই টাইমটা খুব ভাইট্যাল। তোকে আটঘাট বেঁধে পা ফেলতে হবে। এখানে ইমোশনের কোন দাম নেই। এ্যাডমিনিস্ট্রেসন আর ইমোশন এক নয়। এটা তোকে আগে বুঝতে হবে।
মাথায় রাখবি আমি কিন্তু ভীষ্মর সঙ্গে যুদ্ধ করছি। যে ইচ্ছামৃত্যুর বর নিয়ে বসে আছে। তুই আমার শিখন্ডি। তোর সাহায্য ছাড়া কাউকে কিছু করতে পারব না। তবে আমিও ভগবান নই আমারও ভুল হতে পারে। তখন তুই কৃষ্ণের মতো আমাকে তোর বিশ্বরূপ দেখাস।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
মিত্রা আপাতঃ গম্ভীর কন্ঠে বললো তুই থামবি। বহুত লেকচার মেরেছিস।
সবাই হাসলাম। আসর ভেঙে গেলো। খাবার টেবিলে মজা করে সবাই খেলাম। মিঃ ব্যানার্জী সবচেয়ে আনন্দ পেলেন আজকের মেনুতে । একথাও বললেন, এরকম খাবার কতদিন পরে খেলাম তা বলতে পারবনা।
মল্লিকদা টিপ্পনি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রাইট চয়েস বেবি।
খাবার শেষ হতে মিঃ ব্যানার্জী বললেন, অনি তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। চলো তোমার ঘরে যাই। আমর বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠলো। তাহলে কি সেদিন রাতের ব্যাপারে....। কিন্তু মিত্রার হাব ভাবে সেরকম কিছু বুঝতে পারলাম না। তাহলে।
আমি বললাম চলুন, মিত্রা আমার দিকে একবার তাকাল। ওর চোরা চোখের চাহুনি কিছু বলতে চায়। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। পায়ে পায়ে ওপরের ঘরে উঠে এলাম। মিঃ ব্যানার্জী আমার পেছন পেছন এলেন।
অনি তোমার এখানে এ্যাসট্রে আছে।
না।
তুমি সিগারেট খাও না।
খাই। তবে ইচ্ছে হলে।
খুব ভাল হেবিট।
আজ কি আমার সঙ্গে একটা খাবে।
দিন।
আমি আমার টেবিলের তলা থেকে একটা ভাঁড় বার করলাম। মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ারে বসলেন। আমি আমার চেয়ারে। উনি একাট সিগারেট আমাকে দিলেন। আর একটা নিজে ধরালেন। দু’চারবার সুখ টান দেবার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, অনি আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
আপনাকে! আমি।
হ্যাঁ।
আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করবো।
আমি তোমাকে অসাধ্য সাধন করতে বলবো না। তবে আমি বিশ্বাস করি তুমি পারবে।
বলুন।
মিত্রা তোমার খুব ভাল বন্ধু।
হ্যাঁ।
মিত্রাকে তুমি একটু সঙ্গ দাও।
সেতো দিচ্ছি। ওর যখনই অসুবিধা হবে আমি ওর পাশে থাকব কথা দিয়েছি।
না অফিসায়ালি নয়। আন অফিসায়ালি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম। মনে মনে বললাম ডাক্তার তুমি বড় খেলোয়াড় হতে পার। আমি ছোট খেলোয়াড় এটা ভাবছ কেনো। আমি এঁদো গলি থেকে রাজপথ দেখেছি। তুমি এঁদো গলি দেখ নি।
আমি আপনার কথাটা ঠিক ধরতে পারছি না।
তুমি সেদিন আমাদের বাড়িতে গেছিলে। মিত্রা আমায় বলেছে। তাছাড়া সেদিন থেকে মিত্রা একটা জিনিষ ছেড়ে দিয়েছে। যা আমি বিগত দেড় বছরে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।
কি ?
মিত্রা সেদিন থেকে আর ড্রিংক করে না।
এটা খুব ভাল খবর।
শুধু ভালখবর নয়, ও তোমার সান্নিধ্যে এসে অনেক বদলে গেছে। ওর চাল চলন কথাবার্তা।
এটা আপনি বারিয়ে বলছেন। মিত্রা বরাবরি খুব ভাল মেয়ে।
আমি অস্বীকার করতে পারি না। তবে কি জানো অনি তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। আজ তোমার কাছে আমি অকপটে স্বীকার করছি। আমি ওকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারি নি। সে অনেক কথা। সময় সুযোগ হলে তোমায় বলবো। আজ মনে হচ্ছে তোমাদের এখানে এসে আমি একটা দিশা খুঁজে পাচ্ছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। একটা সিগারেট শেষে দ্বিতীয়টা ধরেছেন।
অর্থ বাদ দিলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু কর্তব্য থাকে। আমি তার কোনটাই পালন করতে পারি নি। তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে কেনো ? ওইযে বললাম সে অনেক কথা। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে তোমার কথা ওর মুখ থেকে বহুবার শুনেছি। কাকতালীয় ভাবে তুমি যে আমাদের হাউসেই কাজ কর তা জানতাম না। ক্লাবে তোমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। সেদিনই তোমায় আমি মার্ক করেছি। তবে তুমি এর মধ্যে কোন যোগাযোগ রাখ নি মিত্রার সঙ্গে। তুমি ভাইজ্যাক গেছো সেও আমি জানতাম। তুমি এ বাড়িতে থাকো না। তাও আমি জানি। তবে মিত্রা কিছু আমাকে বলে নি। আমি নিজের ইন্টারেস্টে তোমার খোঁজ খবর নিয়েছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে আছি। উনি ভাবলেশহীন ভাবে ওনার কথা বলে চলেছেন।
তুমিতো আমার বয়েসটা দেখছো, মিত্রার পাশে আমায় মানায় না।
আমার কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে।
কোন একটা কারনে মিত্রাকে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। সেটাও তোমাকে আমি একদিন বলবো।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর কথায় অবাক হলাম। উনি কি নিজের কথা বলছেন! না বানিয়ে বানিয়ে আমার সঙ্গে গল্প করছেন!
আমি তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করবো। মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার হাত দুটো ধরলেন। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে তুমি যে ভাবে মিশতে ঠিক তেমনি ভাবে মেশো। আমার কোন আপত্তি নেই।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম। চোখ দুটো কেমন ভাবলেশ হীন। কিন্তু ভেতরে অন্য কথা বলছে বলে মনেহয়। এতো বড় একজন ডাক্তার আমার সামনে কেমন যেন হয়ে পরেছেন।
সত্যি বলছি অনি তুমি যদি ওর বেড পার্টনারও হও, তাতেও আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আমি ওকে ভীষণ হাসি খুশি দেখতে চাই। ওর মধ্যে যে প্রাণটা হারিয়ে গেছিল, তুমি কয়েকদিনের মধ্যে তা ফিরিয়ে দিয়েছ।
সবচেয়ে অবাক কথা কি জানো অনি। আমার কথায় অভিমানে ওর চোখে কোন দিন জল দেখিনি। আজ প্রথম ওর চোখে জল দেখলাম। আমি জানি ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে। আমি সেই মুহূর্তে ডিসিসন নিয়েছিলাম। তোমাকে আমি সব বলব। আশা রাখি তুমি আমার এই অনুরোধটুকু রাখবে।
মনে মনে ভাবছি ব্যাপারটা কি ? এতটা আত্মসমর্পন কেউ করে নাকি ? মুখে বললাম, এ আপনি কি বলছেন!
আমি ঠিক বলছি। আমি স্ব-জ্ঞানে তোমাকে বলছি। এটা আমার কোন অভিনয় নয়। এটা আমার পরাজয়। তবু এই পরাজয়ের মধ্যে আনন্দ আছে। সে তুমি বুঝবে না। তোমাকে আমি বলব, সব বলব।
বলো তুমি এই উপকারটুকু করবে।
আমি কথা দিতে পারব না। তবে চেষ্টা করব।
কিহলো এবার যেতে হবে। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছ ? কটা বাজে।
দেখলাম ছোটমা বড়মা মিত্রা আমার ঘরের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার দিকে বিস্ময় চোখে তাকাল। মিঃ ব্যানার্জী চশমাটা চোখ থেকে খুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন।
অনি। এই অনি।
সুরমাসির গলা না। সম্বিত ফিরে পেলাম।
আমি বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
জামাইবাবু বললো বিজয়কে বাজারে পাঠাচ্ছে। তোমাকে যেতে হবে না।
কেনো ? আমিতো যাবো বললাম, কাকার আর তর সইছে না।
সুরমাসি নীচ থেকেই চলে গেলো।
বেলা পরে এসেছে। গ্রামের ঘরে বেলা পরতে আরম্ভ করলেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর জোনাকীর দেখা মেলে। কতদিন জোনাকী দেখি নি। ছোট বেলায় এই রাতের বেলা কত জোনাকী ধরেছি। একটা পাতলা কাপড়ের মধ্যে ওদের রেখে অন্ধকারে ওদের আলো দেখেছি। কি ভালো লাগতো। আমার খাটটা পরিপাটী করে গোছানো। আবার একটু শুয়ে পরলাম। নীপা আমার ব্যাগ গুলো ঘরের একটা কোনে রেখেছে। ল্যাপটপটা আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সময় সুযোগ পেলে একটু লেখালিখি করবো। তানিয়া যাবার সময় একটা পেন ড্রাইভ দিয়ে গেছে। বলেছিলো আমি না থাকলে এখানে কয়েকটা নীল ছবি দিয়ে গেলাম দেখো। একটু পুরুষ হওয়ার চেষ্টা করো। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি হেসেছিলাম। শুয়ে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙছিলাম। চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছে। ঘরটা আধা অন্ধকার।
অনিদা ও অনিদা। বাবাঃ ভুতের মতো কি করছো।
আলো জলে উঠলো।
সামনে নীপা দাঁড়িয়ে। ওর পরনে শর্ট শালোয়াড়। বুকগুলো অসম্ভব উদ্ধত লাগছে। ঠোঁটে হালকা প্রলেপ। কপালে ছোট্ট বিন্দীর টিপ। আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।
কি দেখছো কি বলোতো তখন থেকে। আমাকে কি নতুন দেখছো।
মাথা দোলালাম।
মনিমা ঠিক বলেছে, যা দেখ ও আবার যায় কিনা।
কেনো।
তুমি ভীষণ গেঁতো।
তাই বুঝি। আমার বায়োডাটা এরি মধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।
নীপা মুচকি হাসলো।
আমার প্রতি ওর দুর্বলতা ওর চোখে মুখে ধরা পড়ে যাচ্ছে।
চলো চলো আর দেরি করলে হাটে লোকজন থাকবে না।
সেতো আরো ভালো।
তাই হয় নাকি। চলো চলো আমি আবার একটা জিনিষ কিনবো।
কি কিনবে।
সে তোমায় বলা যাবে না।
আমি উঠে পরলাম।
এই অবস্থায় যাবে নাকি।
হ্যাঁ।
এই একটা আধ ময়লা পাজামা পাঞ্জাবী পরে।
আধ ময়লা কোথায় এর রংটাই এরকম।
না। ওই জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জিটা পরো। দারুন স্মার্ট লাগে তোমাকে।
হাসলাম। নীপা জানে না কাকার হাত ধরে একসময় একটা ইজের পেন্ট আর সেন্ডো গেঞ্জি পরে আমি হাটে গেছি। একটু বড় হয়ে পাজামা আর হাফ শার্ট। ড্রয়ার কেনা হয় নি কোনো দিন। কাকা বলতেন লেংট পর। পরেওছি। কলকাতা যাওয়ার সময় দু’সেট ফুল জামাকাপড় পেয়েছিলাম। আজ নীপা আমায় জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি পরতে বলছে। একটু ইতস্ততঃ করলাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমি নীচে অপেক্ষা করছি, তুমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চলে এসো।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে পেন্ট গেঞ্জি চরালাম। নীচে এসে দেখি বাইরের বারান্দায় বেশ কয়েকজন বসে আছে। কাকা মধ্যমনি হয়ে মাঝখানে। তাকে ঘিরে বাকি সকলে। আমাকে দেখেই ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কাছে গিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটু নীপার সঙ্গে হাটে যাচ্ছি।
তুই এখনো যাস নি।
আবার হাসি।
দাদাকে সব বলেছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
হ্যাঁ।
দাদা শুনে কি বললেন।
তুই জিজ্ঞাসা কর।
আমি তো দাদাকে প্রশ্ন করিনি, তোকে করেছি।
আমি কিছু জানিনা যা।
বাঃ তুমি মালকিন, সম্পাদক বলে কথা।
না আমি মালকিন নই।
তাহলে কে।
জানিনা।
মিঃ ব্যানার্জী হাসলেন। তুমি কি দাদাদের সব বলেছো।
হ্যাঁ।
দাদা আপনাদের মতামত বলুন।
আমরা কি মতামত দেবো বলুন। আমরা আজ আছি কাল নেই। কাগজটা চালাবে ওরা।
ফোনটা বেজে উঠলো। সন্দীপের ফোন। সরি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দয় এলাম।
কি হয়েছে বল।
অফিসে এলিনা কেনো।
আমি এখন কয়েকদিন যাবো না। তোকে যে দায়িত্ব দিয়ছিলাম করেছিস।
হ্যাঁ।
ওরা কিছু বলছিল।
না। ওরা তোকে বেশ ধসে।
তুই কি করে বুঝলি।
সে কি খাতির যত্ন।
থাক। আমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিস।
সে আর বলতে।
অফিসের হালচাল।
সুনিতদা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই কয়েকদিন আসতে পারছেন না। এলে আরো কিছু ছাঁটাই হবে।
ম্যাডাম অসুস্থ তোকে কে বললে।
আরে আমাদের ঐ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আছে না, কি সাম ঘরুই।
হ্যাঁ।
উনিই বললেন।
তাই।
এখনতো উনিই মালিক।
তাই নাকি।
হ্যাঁরে।
আজ আমার মর্নিং ছিলো। এই ফিরছি। আর শোন শোন অফিসে রিমডুলেশন চলছে।
বাঃ বাঃ।
হ্যাঁরে।
কাগজ ঠিক ঠিক বেরোচ্ছে তো।
বেরোচ্ছে তবে ওই রকম। তুই আমার চাকরিটা একটু দেখিস।
ঠিক আছে।
যে দায়িত্বগুলো তোকে দিয়েছি করে যা।
ঠিক আছে।
ঘরে এলাম।
মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদা কথা বলছেন। অফিস কি ভাবে সাজানো হবে। পরবর্তী কি কি কাজ করলে ভাল হয়। সেই নিয়ে। আমি আমার জায়গায় বসলাম। ছোটমা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির। পেছনে বড়মা। দেখলাম মেনুটা খারাপ নয়, চিংড়িমাছের চপ আর চা। আমি জুল জুল করে চেয়ে রইলাম। ছোটমা হেসে বললো, তোর জন্য নয় ওনাদের জন্য।
চা খেতে খেতে আবার আলোচনা শুরু হলো।
মিত্রা বললো, হিমাংশুর সাথে কথা হয়েছে। ও এই সপ্তাহের মধ্যে রেডি করে দেবে।
ভালোতো।
একটা সমস্যা হয়েছে।
সেটা আবার কি রকম।
ওরা আমার নামে ট্রান্সফার করবে না।
তোর নামে করবে না, দাদার নামে করুক।
আমাদের দুজনের নামে হবে না।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা বলবো অনি।
বলুন।
শেয়ারটা তোমার নামে ট্রান্সফার করিয়ে নাও।
আমার নামে! খেপেছেন নাকি।
তোর নামে করলে আপত্তি কোথায়। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। আমার চাহুনি মিত্রা চেনে।
ঠিক আছে ঠিক আছে। তুই ওর সাথে কথা বল। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। ইচ্ছে করে স্পীকারে রাখলাম।
হ্যাঁ বল। তোর কাজ করে দিয়েছি। হিমাংশু বললো।
মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে শুনলাম।
হ্যাঁ হয়েছে। সেতো আমি মিত্রাকে বলেছি।
ঝামেলাটা কে সামলাবে তুই না মিত্রা।
এটুকু সাহায্য তুই যদি না করিস তাহলে কি করে হয়।
ঠিক আছে দুটো ডিড কর, একটা আমার নামে ট্রান্সফার হচ্ছে, আর একটা কর আমি মিত্রার নামে ট্রান্সফার করছি।
আমিতো বলেছিলাম সেই কথা, মিত্রা রাজি হয় নি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিত্রা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে। মুখ লাল হয়েগেছে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।
ঠিক আছে আমি তোকে আধঘন্টা বাদে ফোন করছি।
ফোন নামিয়ে রাখলাম। মিত্রার দিকে তাকালাম। সম্পত্তি নিয়ে পাগলামো করিস না। আজ আমি ভাল আছি। কাল শত্রু হয়ে যাব না কে বলতে পারে। হিমাংশু আমার ইনস্ট্রাকসন ছাড়া একটুও দুলবে না। ওকে যে ভাবে কাজ করতে বলেছি সে ভাবে করতে দে। তোর ভালর জন্য বলছি। আমাকে তোর যদি কিছু দিতে হয়....সেতো অনেক সময় রয়েছে। এতো তাড়াহুড় করার কি আছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে। চোখ দুটো ছল ছলে। আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করব না।
চোখ মোছ। মুখ তোল। মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি তোকে অপমান করতে চাই নি। তোকে বোঝাতে চাইলাম। সেদিনও তোকে বুঝিয়েছি। এই টাইমটা খুব ভাইট্যাল। তোকে আটঘাট বেঁধে পা ফেলতে হবে। এখানে ইমোশনের কোন দাম নেই। এ্যাডমিনিস্ট্রেসন আর ইমোশন এক নয়। এটা তোকে আগে বুঝতে হবে।
মাথায় রাখবি আমি কিন্তু ভীষ্মর সঙ্গে যুদ্ধ করছি। যে ইচ্ছামৃত্যুর বর নিয়ে বসে আছে। তুই আমার শিখন্ডি। তোর সাহায্য ছাড়া কাউকে কিছু করতে পারব না। তবে আমিও ভগবান নই আমারও ভুল হতে পারে। তখন তুই কৃষ্ণের মতো আমাকে তোর বিশ্বরূপ দেখাস।
সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
মিত্রা আপাতঃ গম্ভীর কন্ঠে বললো তুই থামবি। বহুত লেকচার মেরেছিস।
সবাই হাসলাম। আসর ভেঙে গেলো। খাবার টেবিলে মজা করে সবাই খেলাম। মিঃ ব্যানার্জী সবচেয়ে আনন্দ পেলেন আজকের মেনুতে । একথাও বললেন, এরকম খাবার কতদিন পরে খেলাম তা বলতে পারবনা।
মল্লিকদা টিপ্পনি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রাইট চয়েস বেবি।
খাবার শেষ হতে মিঃ ব্যানার্জী বললেন, অনি তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। চলো তোমার ঘরে যাই। আমর বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠলো। তাহলে কি সেদিন রাতের ব্যাপারে....। কিন্তু মিত্রার হাব ভাবে সেরকম কিছু বুঝতে পারলাম না। তাহলে।
আমি বললাম চলুন, মিত্রা আমার দিকে একবার তাকাল। ওর চোরা চোখের চাহুনি কিছু বলতে চায়। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। পায়ে পায়ে ওপরের ঘরে উঠে এলাম। মিঃ ব্যানার্জী আমার পেছন পেছন এলেন।
অনি তোমার এখানে এ্যাসট্রে আছে।
না।
তুমি সিগারেট খাও না।
খাই। তবে ইচ্ছে হলে।
খুব ভাল হেবিট।
আজ কি আমার সঙ্গে একটা খাবে।
দিন।
আমি আমার টেবিলের তলা থেকে একটা ভাঁড় বার করলাম। মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ারে বসলেন। আমি আমার চেয়ারে। উনি একাট সিগারেট আমাকে দিলেন। আর একটা নিজে ধরালেন। দু’চারবার সুখ টান দেবার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, অনি আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
আপনাকে! আমি।
হ্যাঁ।
আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করবো।
আমি তোমাকে অসাধ্য সাধন করতে বলবো না। তবে আমি বিশ্বাস করি তুমি পারবে।
বলুন।
মিত্রা তোমার খুব ভাল বন্ধু।
হ্যাঁ।
মিত্রাকে তুমি একটু সঙ্গ দাও।
সেতো দিচ্ছি। ওর যখনই অসুবিধা হবে আমি ওর পাশে থাকব কথা দিয়েছি।
না অফিসায়ালি নয়। আন অফিসায়ালি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম। মনে মনে বললাম ডাক্তার তুমি বড় খেলোয়াড় হতে পার। আমি ছোট খেলোয়াড় এটা ভাবছ কেনো। আমি এঁদো গলি থেকে রাজপথ দেখেছি। তুমি এঁদো গলি দেখ নি।
আমি আপনার কথাটা ঠিক ধরতে পারছি না।
তুমি সেদিন আমাদের বাড়িতে গেছিলে। মিত্রা আমায় বলেছে। তাছাড়া সেদিন থেকে মিত্রা একটা জিনিষ ছেড়ে দিয়েছে। যা আমি বিগত দেড় বছরে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।
কি ?
মিত্রা সেদিন থেকে আর ড্রিংক করে না।
এটা খুব ভাল খবর।
শুধু ভালখবর নয়, ও তোমার সান্নিধ্যে এসে অনেক বদলে গেছে। ওর চাল চলন কথাবার্তা।
এটা আপনি বারিয়ে বলছেন। মিত্রা বরাবরি খুব ভাল মেয়ে।
আমি অস্বীকার করতে পারি না। তবে কি জানো অনি তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। আজ তোমার কাছে আমি অকপটে স্বীকার করছি। আমি ওকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারি নি। সে অনেক কথা। সময় সুযোগ হলে তোমায় বলবো। আজ মনে হচ্ছে তোমাদের এখানে এসে আমি একটা দিশা খুঁজে পাচ্ছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। একটা সিগারেট শেষে দ্বিতীয়টা ধরেছেন।
অর্থ বাদ দিলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কিছু কর্তব্য থাকে। আমি তার কোনটাই পালন করতে পারি নি। তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে কেনো ? ওইযে বললাম সে অনেক কথা। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে তোমার কথা ওর মুখ থেকে বহুবার শুনেছি। কাকতালীয় ভাবে তুমি যে আমাদের হাউসেই কাজ কর তা জানতাম না। ক্লাবে তোমার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। সেদিনই তোমায় আমি মার্ক করেছি। তবে তুমি এর মধ্যে কোন যোগাযোগ রাখ নি মিত্রার সঙ্গে। তুমি ভাইজ্যাক গেছো সেও আমি জানতাম। তুমি এ বাড়িতে থাকো না। তাও আমি জানি। তবে মিত্রা কিছু আমাকে বলে নি। আমি নিজের ইন্টারেস্টে তোমার খোঁজ খবর নিয়েছি।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে আছি। উনি ভাবলেশহীন ভাবে ওনার কথা বলে চলেছেন।
তুমিতো আমার বয়েসটা দেখছো, মিত্রার পাশে আমায় মানায় না।
আমার কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে।
কোন একটা কারনে মিত্রাকে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। সেটাও তোমাকে আমি একদিন বলবো।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর কথায় অবাক হলাম। উনি কি নিজের কথা বলছেন! না বানিয়ে বানিয়ে আমার সঙ্গে গল্প করছেন!
আমি তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করবো। মিঃ ব্যানার্জী ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার হাত দুটো ধরলেন। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে তুমি যে ভাবে মিশতে ঠিক তেমনি ভাবে মেশো। আমার কোন আপত্তি নেই।
আমি মিঃ ব্যানার্জীর চোখে চোখ রাখলাম। চোখ দুটো কেমন ভাবলেশ হীন। কিন্তু ভেতরে অন্য কথা বলছে বলে মনেহয়। এতো বড় একজন ডাক্তার আমার সামনে কেমন যেন হয়ে পরেছেন।
সত্যি বলছি অনি তুমি যদি ওর বেড পার্টনারও হও, তাতেও আমার কোন আপত্তি থাকবে না। আমি ওকে ভীষণ হাসি খুশি দেখতে চাই। ওর মধ্যে যে প্রাণটা হারিয়ে গেছিল, তুমি কয়েকদিনের মধ্যে তা ফিরিয়ে দিয়েছ।
সবচেয়ে অবাক কথা কি জানো অনি। আমার কথায় অভিমানে ওর চোখে কোন দিন জল দেখিনি। আজ প্রথম ওর চোখে জল দেখলাম। আমি জানি ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে। আমি সেই মুহূর্তে ডিসিসন নিয়েছিলাম। তোমাকে আমি সব বলব। আশা রাখি তুমি আমার এই অনুরোধটুকু রাখবে।
মনে মনে ভাবছি ব্যাপারটা কি ? এতটা আত্মসমর্পন কেউ করে নাকি ? মুখে বললাম, এ আপনি কি বলছেন!
আমি ঠিক বলছি। আমি স্ব-জ্ঞানে তোমাকে বলছি। এটা আমার কোন অভিনয় নয়। এটা আমার পরাজয়। তবু এই পরাজয়ের মধ্যে আনন্দ আছে। সে তুমি বুঝবে না। তোমাকে আমি বলব, সব বলব।
বলো তুমি এই উপকারটুকু করবে।
আমি কথা দিতে পারব না। তবে চেষ্টা করব।
কিহলো এবার যেতে হবে। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছ ? কটা বাজে।
দেখলাম ছোটমা বড়মা মিত্রা আমার ঘরের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে। মিত্রা আমার দিকে বিস্ময় চোখে তাকাল। মিঃ ব্যানার্জী চশমাটা চোখ থেকে খুলে রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন।
অনি। এই অনি।
সুরমাসির গলা না। সম্বিত ফিরে পেলাম।
আমি বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
জামাইবাবু বললো বিজয়কে বাজারে পাঠাচ্ছে। তোমাকে যেতে হবে না।
কেনো ? আমিতো যাবো বললাম, কাকার আর তর সইছে না।
সুরমাসি নীচ থেকেই চলে গেলো।
বেলা পরে এসেছে। গ্রামের ঘরে বেলা পরতে আরম্ভ করলেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর জোনাকীর দেখা মেলে। কতদিন জোনাকী দেখি নি। ছোট বেলায় এই রাতের বেলা কত জোনাকী ধরেছি। একটা পাতলা কাপড়ের মধ্যে ওদের রেখে অন্ধকারে ওদের আলো দেখেছি। কি ভালো লাগতো। আমার খাটটা পরিপাটী করে গোছানো। আবার একটু শুয়ে পরলাম। নীপা আমার ব্যাগ গুলো ঘরের একটা কোনে রেখেছে। ল্যাপটপটা আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সময় সুযোগ পেলে একটু লেখালিখি করবো। তানিয়া যাবার সময় একটা পেন ড্রাইভ দিয়ে গেছে। বলেছিলো আমি না থাকলে এখানে কয়েকটা নীল ছবি দিয়ে গেলাম দেখো। একটু পুরুষ হওয়ার চেষ্টা করো। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি হেসেছিলাম। শুয়ে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙছিলাম। চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে আসছে। ঘরটা আধা অন্ধকার।
অনিদা ও অনিদা। বাবাঃ ভুতের মতো কি করছো।
আলো জলে উঠলো।
সামনে নীপা দাঁড়িয়ে। ওর পরনে শর্ট শালোয়াড়। বুকগুলো অসম্ভব উদ্ধত লাগছে। ঠোঁটে হালকা প্রলেপ। কপালে ছোট্ট বিন্দীর টিপ। আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।
কি দেখছো কি বলোতো তখন থেকে। আমাকে কি নতুন দেখছো।
মাথা দোলালাম।
মনিমা ঠিক বলেছে, যা দেখ ও আবার যায় কিনা।
কেনো।
তুমি ভীষণ গেঁতো।
তাই বুঝি। আমার বায়োডাটা এরি মধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।
নীপা মুচকি হাসলো।
আমার প্রতি ওর দুর্বলতা ওর চোখে মুখে ধরা পড়ে যাচ্ছে।
চলো চলো আর দেরি করলে হাটে লোকজন থাকবে না।
সেতো আরো ভালো।
তাই হয় নাকি। চলো চলো আমি আবার একটা জিনিষ কিনবো।
কি কিনবে।
সে তোমায় বলা যাবে না।
আমি উঠে পরলাম।
এই অবস্থায় যাবে নাকি।
হ্যাঁ।
এই একটা আধ ময়লা পাজামা পাঞ্জাবী পরে।
আধ ময়লা কোথায় এর রংটাই এরকম।
না। ওই জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জিটা পরো। দারুন স্মার্ট লাগে তোমাকে।
হাসলাম। নীপা জানে না কাকার হাত ধরে একসময় একটা ইজের পেন্ট আর সেন্ডো গেঞ্জি পরে আমি হাটে গেছি। একটু বড় হয়ে পাজামা আর হাফ শার্ট। ড্রয়ার কেনা হয় নি কোনো দিন। কাকা বলতেন লেংট পর। পরেওছি। কলকাতা যাওয়ার সময় দু’সেট ফুল জামাকাপড় পেয়েছিলাম। আজ নীপা আমায় জিনসের পেন্ট আর গেঞ্জি পরতে বলছে। একটু ইতস্ততঃ করলাম।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমি নীচে অপেক্ষা করছি, তুমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চলে এসো।
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে পেন্ট গেঞ্জি চরালাম। নীচে এসে দেখি বাইরের বারান্দায় বেশ কয়েকজন বসে আছে। কাকা মধ্যমনি হয়ে মাঝখানে। তাকে ঘিরে বাকি সকলে। আমাকে দেখেই ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কাছে গিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটু নীপার সঙ্গে হাটে যাচ্ছি।
তুই এখনো যাস নি।