Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#34
কিছু সম্পর্কঃ ৫ (ক) 



 
রাজীব ভার্সিটি চত্তরে বসে , ফ্লাক্সে চা বিক্রেতার কাছে চা খাচ্ছিলো । প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে , বেশ রোদ হয়েছে আজকে । রাজীব যেখানটায় বসেছে সেখানে একটা বড় গাছ থাকায় ভালো ছায়া হয়েছে । গরমে লেবু চায়ে চুমুক দিতে ভালই লাগছিলো। পাশ দিয়ে কয়েকজন পরিচিত ছেলে হেটে যাওয়ার সময় হাত তুলে অভিবাধন । রাজীব ও হাত তুলে উত্তর দিলো । না এই দুই বছরেও রাজিবেরে নতুন কোন বন্ধু তৈরি হয়নি । যাদের সাথে রাজীবের ওঠা বসা ওরা সবাই জয়ের বন্ধু । কিছু পুরোনো বন্ধু , কিছু ভার্সিটির নতুন বন্ধু । তাই রাজীব যখন একা থাকে ওদের সাথে তেমন একটা বসা হয় না । কিন্তু যখন জয়ের সাথে থাকে তখন এক ঝাক বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা হয় । তখন ওদের বন্ধু মনে হয় রাজীবের ।
 
মাঝে মাঝে রাজীব ভাবে , ও কি খুব বোরিং একটা ছেলে । তা না হলে ওর পরিচিত ছেলে গুলোও জয়ের অনুপুস্থিতে এমন অপরিচিতের মত হয়ে যায় , কেন ওদের সাথে আড্ডা জমে না । হয়তো ও বন্ধু বানাতে ভুলে গেছে । যখন ওরা অন্য শহরে ছিলো তখনো রাজীবের খুব ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধু ছিলো না । তার অবশ্য ভালো কারন ছিলো । রাজীব ওদের সাথে তেমন একটা সময় কাটাতে পারতো না । ক্লাস শেষে সোজা বাড়ি চলে আসতে হতো ওর । আর সময় না দিলে বন্ধুত্ব হবে কি করে । অবশ্য এই নিয়ে রাজীবের তেমন আক্ষেপ ও নেই । চলেই তো যাচ্ছে দিন ।
 
রাজীব যখন চা প্রায় শেষ করে এনেছে , তখন ওর সামনে হঠাত এক জোড়া জিন্স পরা মেয়েলি পা এসে থমকে দাঁড়ালো। পায়ে লোফার পরা । রাজীব উপরের দিকে চাইলো , একটা সবুজ রঙের কুর্তি পরে আছে , চোখে কালো ফ্রেমের চশমা , চুল গুলো পোনি টেল করে বাধা , রোদ থেকে বাঁচার জন্য ওড়না মাথায় দিয়ে রেখেছে । কাধে ডাউস সাইজের একটা ব্যাগ , গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো । ভার্সিটিতে এরম দেখতে বহু মেয়ে দেখা যায় । কিন্তু রাজীবের সামনে এসে যে দাঁড়িয়েছে তাকে দেখে রাজীবের চোখ দুটো একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । এই তীব্র গরমে ক্লান্ত শরীর ও চনমনে হয়ে উঠলো । সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির নাম জান্নাত ।
 
“ এই রাজীব , জয় কে দেখছিস? কল করছি ধরছে না” জান্নাতের কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বিরক্ত ।
 
“ এই ভার্সিটিতে আমাকে তুই করে না বললে হয় না , আমি এখানে তোর সিনিয়র , বাড়িতে কি বলিস না বলিস সেটা অন্য ব্যাপার” কথা গুলো রাজীব শান্ত ভাবেই বলে । আসলে বয়সের বেবধান কম হওয়ায় , ওরা চারজন একে অপর কে তুই করেই  বলতো । কিন্তু আজকাল রানী জয়কে তুমি করে বলছে ।  
 
“ তাহলে কি বলে ডাকবো তোকে , রাজীব ভাইয়া”
 
ভাইয়া ডাকটা যদিও রাজীবের পছন্দ হলো না , তবুও কিছু বলল না , জিজ্ঞাস করলো  “ তুই চা খাবি?” কিন্তু জান্নাত কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে চা খাওয়ার মুডে নেই
 
“ চা পরে , আগে বল গতকাল রাতে তোরা কোথায় গিয়েছিলি, তোদের ব্যাচ মেট বাপ্পি নামে একটা ছেলেকে বহিস্কার করা হয়ছে , আর আরো দুজন কে খোঁজার চেষ্টা চলছে এই খবর জানিস? ” এই কথা বলে জান্নাত তীক্ষ্ণ চোখে রাজীব কে কিছুক্ষন দেখলো তাপর বলল “ আমার মনে হচ্ছে বাকি দুইজন তুই আর জয়, তোদের কি আক্কেল জ্ঞান কিছু হবে না , বাসায় কি বলবি ঠিক করে রাখ”
রাজীব বাপ্পির বহিষ্কারের ঘটনা জানে না , ভয় পেয়ে গেলো ও , বাপ্পি যে ধরা পরেছিলো সেটা জানে , কিন্তু এর জন্য যে সরাসরি বহিস্কার করে দেবে এতটা ভাবেনি ও , চিন্তিত ভাবে বলল “ তুই খবর পেলি কি করে , এখনো তো আমরা কিছু জানলাম না”
 
“ শোন আমি আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিরিয়াস , তোদের মত না , আর একজন সাংবাদিকের জন্য ভেতরের খবর জানা কোন ব্যাপার না” একটু অহংকার ফুটে উঠলো জান্নাতের চেহারায় , সেটা দেখে এই বিপদের সময় ও একটা হাঁফ স্মাইল দেখা দিলো রাজীবের ঠোঁটে ।
 
“ লেকচার আমাকে না দিয়ে তোর ভাই কে দে , সব জায়গায় হিরো হতে যায়” রাজীব ও জয়ের উপর রাগ করে বলল
 
“ জয় না হয় উল্লুক একটা , তুই সাথে গেলি কিভাবে ?” জান্নাত জিজ্ঞাস করে
 
“ আমি না গেলেও যেতো জয় , আমার যাওয়া না যাওয়া কোন ফেক্টর না” রাজীব নিজের হয়ে সাফাই গাইলো । গতকাল রাতে দশটার পর জয় রাজীবের বাড়ির সামনে বাইকে বসে কল দেয় । বলে আমি জাচ্ছি , তুই গেলে দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আয় । রাজীবের একবার ইচ্ছা হয়েছিলো বলে দেয় ও যাবে না । কিন্তু প্রচণ্ড রাগে পড়ার টেবিলে একটা ঘুষি মেরে বেড়িয়ে এসেছিলো। দুজনে মিলে জয়ের বাইকে করে ভার্সিটি এরিয়ায় পৌঁছে দেখে বাপ্পি আগেই দাড়িয়ে আছে । হাতে ট্যডি বিয়ার ।
 
“ একজন হিরো অন্যজন বিশ্বস্ত কমেডিয়ান, এখন বুঝবে ঠ্যালা , ছোট আব্বুকে কি বলবি এখনি ঠিক করে নে”
 
রাজীব সত্যি সত্যি বেশ চিন্তিত হয়ে পরে । সমস্ত রাগ গিয়ে পরে জয়ের উপর । নিজের ঘড়ি দেখে রাজীব , বলে “ এখন জয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার কথা , চল আমার সাথে”
 
রাজীব আর জান্নাত জয়ের যেখানে ক্লাস হওয়ার কথা সেদিকে পা বাড়ায় । কিন্তু কিছুদুর যেতেই ওরা জয় কে দেখতে পায় লাইব্রেরীর সামনে , রানীর সাথে কথা বলছে । দূর থেকেই জান্নাত ওদের ডাক দেয় । ডাক শুনে ওদের দিকে তাকাতেই রানী আর জয় একটু ভড়কে যায় । দ্রুত হেটে ওরা রাজীব আর জান্নাতের কাছে চলে আসে । রানীর চোখে মুখে একটা চোর চোর ভাব ফুটে উঠেছে , অবশ্য জয় কে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না ।
 
রানী সরাসরি নিজের ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে না । ওর মনে হচ্ছে ভাই কিছু একটা বুঝে যাবে । ধরে ফেলবে এতক্ষণ জয় আর ও কি নিয়ে আলোচনা করছিলো । কিন্তু রাজীব আর জান্নাত দুজনেই চিন্তিত থাকায় এসব ব্যাপার ওদের চোখে পরলো না ।
 
“ এই যে প্রেমিকদের লিডার , তোমার দলের যে একজন বহিস্কার হয়েছে সেই খবর রাখো?” রাজীব দাঁতে দাঁত পিষে বলল
 
“ কে কি হয়েছে , কার কথা বলছিস” একদম না বোঝার ভান করলো জয় । পাক্কা অভিনেতার মতন নিজের এক্সপ্রেশন লুকিয়ে রেখছে ।  
 
আর এদিকে বহিস্কার শব্দ শুনেই রানীর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো । হাত দিয়ে ব্যাগ খামচে ধরলো ।
 
“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ কি , কালকে যে কান্ডো করেছো , তোমাদের সেই  বন্ধু আজকে বহিসাকার হয়েছে , সুধু এনাউন্স হওয়া বাকি , সাথে ওই মেয়েকেও হল থেকে বের করে দেয়া হবে , আর পলাতক দুই আসামিকে খোজা হচ্ছে” লাস্টের লাইন বলে জান্নাত জয় আর রাজীবের দিকে চাইলো ।
 
জয় রাজীবের দিকে কট্মট করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন , তাপর বলল “ তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না বোকাচ…” সাথে জান্নাত আর রানী থাকায় শব্দটা শেষ করলো না ।
 
“ এখানে অন্য কেউ নেই , সবাই আপনার মানুষ , লুকিয়ে লাভ কি” রাজীব হালকা ঝাঁজের সাথে বলল
 
“ আরে ধুর আমাদের খবর পাবে না , বাপ্পি কিছু বলবে না , ও হচ্ছে প্রেমিক পুরুষ , কলিজা আছে , সব দোষ নিজের উপইর নিয়ে নেবে” জয় হাসতে হাসতে বলল
 
“ ভার্সিটি যে ক্যামেরা দিয়ে ভরা সেটা জানিস “ জান্নাত জিজ্ঞাস করলো
 
“ সে জন্যই তো হুডি ব্যাবহার করেছি আর নাম্বার প্লেট ও ঢেকে রেখছিলাম  কাদা দিয়ে” জয় হাসতে হাসতে বলল ।
 
“ লজ্জা করে না তোর ছোট বোনের সামনে এসব বলতে , কই তোকে দেখে আমারা শিখবো , না তুই এসব উল্টো পাল্টা কাজ করে বেড়াচ্ছিস” জান্নাত বিরক্ত হয়ে বলল , তাপর রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল “ এখনো হয়তো সময় আছে , নিজের ভালো বুঝতে শিখ , ওর সাথে থাকলে তোর অবস্থাও এমন হবে”
 
“ এই তুই আমাদের মাঝে আসিস না , আমরা কি করবো সেটা আমরা বুঝবো, যেদিন থেকে চশমা নিয়েছিস নিজেকে খুব সিনিয়র ভাবতে শুরু করেছিস তুই ” জয় ক্ষেপে ওঠে
 
“ ঠিক আছে , আজকে আব্বু বুঝবে তুই ভবিষ্যতে কি করবি , আমি বাসায় গিয়ে বলছি” জান্নাত হুমকি দেয় । 
 
দুই ভাই বোনের মাঝে কিছুক্ষন এই ইয়ে তর্ক হয় । কথা বলতে বলতে ওরা চারজন একটু নিরিবিলি যায়গা দেখে বসে পরে । সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ । জয় দুই হাত পেছনে ভর দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে , জান্নাত রাগে ফুঁসছে এখনো , রানী মাথা নিচু করে ঘাস ছিঁড়ছে । রাজীব মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।
 
সবাই টুকটাক কিছু বলছে , জান্নাত আর জয় মাঝে মাঝে লেগে যাচ্ছে , রানী ওদের থামাচ্ছে । সুধু কথা বলছে না রাজীব । বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে কোন শব্দ নেই ওর মুখে । তারপর হঠাত মাথা তুলল রাজীব । জয় তখন জান্নাতের সাথে তর্ক করছে এই বলে যে , ভার্সিটি লাইফে এমন দুই একটা ঘটনা না থাকলে সেটকে কি ভার্সিটি লাইফ বলে নাকি ?
“আচ্ছা বুঝলাম , কিন্তু এমন ঘটনা ঘটাতে গিয়ে যে একজনের স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হয়ে গেলো তার কি হবে?” জয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো , না রাগ নেই ওর গলায় , তবে বেশ দৃঢ় আর ইন্টেস শোনালো । জয় রাজীবের গলার টোন শুনে ভালো করে একবার তাকালো । বাকি দুজন ও তাকালো , রাজীবের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে গত রাতের ঘটনার জন্য বেশ অনুতপ্ত এবং নিজের উপর রাগান্বিত ।
 
জয় কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলো , বন্ধুর গলার টোন সুবিধার মনে হচ্ছে না , তারপরও বলল “ আরে ওর কিচ্ছু হবে না , ওর বাবা বিশাল টাকা ওয়ালা কোন প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে যাবে”
 
“ ব্যাপারটা কি এতো সহজ? এই দুই আড়াই বছরের কি কোন দাম নেই?” রাজীব থমথমে গলায় বলল
 
কেউ কোন উত্তর দিলো না , রানী চোরা চোখে একবার ভাইয়ের দিকে তাকালো ।
 
“ আর ওই মেয়েটা , ওর বাবাও কি বিশাল ধনী?” রাজীব আবার জিজ্ঞাস করলো
 
“ গ্রামের মেয়ে , ঢাকায় কেউ নেই  হোস্টেলে বহু কষ্টে সিট জোগাড় করেছে” এবার উত্তর দিলো জান্নাত
 
“ এই মেয়ের কি হবে?’
 
“ কি আর হবে বাপ্পিকে বিয়ে করে নেবে” জয় ক্যাজুয়াল ভাবে বলল
 
“ বাহ কি সহজ তাই না , যদি বাপ্পি কে বিয়েই করতে চাইতো , তাহলে ব্রেকাপ করলো কেনো? নিশ্চয়ই মেয়েটি চায় না বাপ্পির সাথে সম্পর্ক রাখতে” রাজীব জয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , ওর দৃষ্টি বলে দিচ্ছে উত্তর চায় ও ।
 
জয় মনে মনে ভাবে খেপেছে আজকে শালা , যেদিন ক্ষেপে সেদিন আর রক্ষা নাই “ আরে ভাই এইসব ঠুকাঠুকি প্রেম ভালোসাবার মাঝে হয় , এসব কিছু না , এরকম কত ব্রেকাপ হয়ে আবার ঠিক হয়ে যায় , অসব কিছু না , আর তুই বাপ্পির দিকটা দেখ কত বড় রিক্স নিয়েছে ভালোবাসার জন্য” জয় রাজীব কে শান্ত করার জন্য বলে ।
 
“ ভালোবাসা , ভালোবাসা , এতো ভরসা কেনো তোদের , নিজের এই ভালোবাসার উপর, হয়তো বাপ্পির এই ভালোবাসার বিন্দু মাত্র দাম নেই ওই মেয়েটির কাছে আজকে , হয়তো বাপ্পি এমন কিছু করেছে যে ওই মেয়েটি চায় না বাপ্পির সাথে সম্পর্ক রাখতে । কিন্তু তোদের কে বোঝাবে এসব , তোদের এতো গর্ব এই ভালোবাসার উপর যে অন্য কিছু দেখতে দেয় না , গেলি নিজের ভালোবাসা জাহির করতে উল্টো মেয়েটি হল ছাড়া হলো , কি ঠিক করলো বাপ্পির ভালোবাসা?” রাজীব প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল ,  
 
“ তুই  বুঝবি না এসব , কত কিছু হয় প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে , রাস্তায় মারামারি হয় , আরো কি কি হয় এখানে বলা যাবে না , কিন্তু ওদের ভালোবাসা আবার ওদের কাছে আনে” জয় ও এবার বেশ ইন্টেন্সিটির সাথে বলল , যেন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জিততে চায় ।
 
এদিকে জান্নাত দুই বন্ধুর দিকে বার বার তাকাচ্ছে , মনে হচ্ছে এখুনি ঝগড়া লেগে যাবে ওরা ।
 
“ তোদের এই ভালোবাসা তোদের এতো অন্ধ করে দেয় যে আশেপাশে যে আরো কেউ আছে যারা তোদের মত প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য মনে ভালোবাসা রাখে ।  সেটা তোরা দেখতে পাস না , ধরে নিলাম মেয়েটি বাপ্পির এই হিরোয়িক কাজ দেখে ওকে মাফ করে দিলো , আবার ভালোবাসার সাগরে  হাবুডুবু খেতে লাগলো , কিন্তু ওই মেয়েটি কি নিজের পিতার ভালোবাসার দাম দিলো , যে পিতা গ্রাম থেকে বিশ্বাস করে মেয়েকে শহরে পাঠিয়েছে , তুই জানিস গ্রামে এখনো কত মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় । সেখানে এই মেয়ের প্রতি ওর বাবা মায়ের ভালোবাসা আর বিশ্বাস মেয়েকে উচ্চসিক্ষিত করতে সমাজের বিরুদ্ধাচরন করে এখানে পাঠিয়েছে । কিন্তু মেয়ে এখানে ভালোবাসা বাসি খেলায় মত্ত , কি দাম রইলো ওই বাবা মায়ের ভালোবাসার? ওই ভালোবাসা কি মহান নয় , নাকি সুধু তোদের মত রোমিও দের ভালোবাসার দাম আছে?” 
 
জয় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো ,কিন্তু জান্নাত ওকে থামিয়ে দিলো ।
 
রাজীব একটু বিরতি নিয়ে আবার বলতে শুরু করে “ তোরা কি মনে করিস এমনি এমনি এতো বড় হয়েছিস যে এখন একজন নারী অথবা পুরুষের ভালোবাসার জন্য সব কিছু নষ্ট করতে পারিস? না তোদের এই বড় হওয়ার পেছনে আছে কোন বাবা মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ত্যাগ তিতক্ষা , যারা নিজের জন্য চিন্তা না করে তোদের জন্য চিন্তা করে । নিজে না খেয়ে তোদের খাওয়ায়, তাদের ওই সব ভালোবাসা নয় সুধু কর্তব্য , তাই না । এমন অনেক ভাই বোন আছে যারা নিজের ভাগেরটা সেক্রিফাইস করে যার মাঝে টেলেন্ট আছে তাকে আগে বারতে সাহায্য করে , তাদের ভালোবাসা কি মূল্যহীন ? জীবনের ২০-২২ বছর পর যার সাথে দেখা হলো , তার জন্য ওই সব ভালোবাসা পায়ে ঠেলে যা খুশি তাই করে বেরাবো , নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবব না”
 
নিজের কথা শেষ করে রাজীব উঠে চলে যায় । নিজের উপর আর প্রথাগত প্রেম ভালোবাসার উপর ভীষণ বিরক্ত । রাজীব একটু আগে বলা কথা গুলো সুধু জয় কে ই বলেনি , নিজেকেও বলছে । বার বার চোখের সামনে ওর আব্বুর মুখটা ভেসে উঠেছে , রানীর মুখ ভেসে উঠেছে । মনে হয়েছে এদের সামনে মুখ দেখাবে কি করে । ওর আব্বু যে ওদের সচ্ছল জীবনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে , তার প্রতিদান রাজীব কিভাবে দিচ্ছে , আর রানীর জন্য বড় ভাই হিশেবে কি উদাহরন রেখে যাচ্ছে ?
 
রাজীব প্রতিজ্ঞা করে আজ থেকে আর কোনদিন এমন কাজ ও করবে না , জয় কেও করতে দেবে না । হয়তো আরো একটু কঠোর হলে ও গতরাতে জয় কে আটকাতে পারতো । কিন্তু সেটা ও করেনি । কেমন বন্ধু ও , বন্ধুর জন্য সব করতে পারে এই ওজুহাতে কি বন্ধুর ক্ষতি করছে না ও? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে রাজীব ।  ওর আব্বুর মত বড় আব্বু আর বড় আম্মুও ওকে আদর স্নেহ করে , সব সময় পাশে থাকে , জয়ের কিছু হলে ওদের সামনেও কি রাজীব  দাড়াতে পারবে ? কিছুটা জবাদিহি কি ওকেও করতে হবে না?
 
বাকি তিনজন এখনো চুপচাপ বসে আছে । জান্নাত মনে মনে কি যেন ভাবছে , রানী মাথা নিচু করে রেখেছে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে রাজীব কথা গুলো ওকেই বলেছে । আর জয় বেশ বিরক্ত , একটা ঘাস তুলে তার ডগা চিবুচ্ছে ।
 
কিছুক্ষন পর জয় বলে উঠলো “ ওকে বাংলা সিরিয়ালের বাবার চরিত্র দেয়া উচিৎ”
 
“ শাট আপ জয়” পাশ থেকে জান্নাত বলে উঠলো ।
 
****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 3 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 20-08-2025, 07:30 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)