18-08-2025, 07:44 PM
(This post was last modified: 19-08-2025, 03:02 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কিছু সম্পরকঃ ৫
জয় আর রাজীব কিছু বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির মাঠে ফুটবল খেলছিলো । জয় এক দলে আর রাজীব অন্য দলে । ভীষণ টক্কর হচ্ছে দুই দলে । জয় সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে । আর রাজীব ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেব । তাউ দুই বন্ধুর মাঝেও ভীষণ টক্কর হচ্ছে । জয়ের কাজ হচ্ছে আক্রমণ করা , আর রাজীবের কাজ আক্রমণ ঠেকানো । তাই প্রায় ই দুজনের মাঝে ঠোকা ঠুকি হচ্ছে ।
এরি মাঝে একবার জয়ের পায়ে বল চলে এলো । এমন হাট্টা কাট্টা বডি নিয়েও জয় বেশ দ্রুত গতির । বেশ গতির সাথে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো , তখনি জয়ের সামনে চলে আসে রাজীব । হার্ড ট্যাকল করে , জয় প্রায় দু ফুট উপরে উঠে আছড়ে পরে । কিন্তু ক্লিন ট্যাকল ছিলো । বল সীমানার বাইরে চলে যায় ।
“ ওই ব্যাটা , আমি যে তোর এক মাত্র বন্ধু সেইটা কি ভুলে গেলি রে বোকাচোদা” জয় মাটিতে পরে থেকেই চেঁচিয়ে ওঠে ।
রাজীব হাসিমুখে এগিয়ে যায় জয়ের দিকে , হাত ধরে টেনে তোলে , তারপর বলে “ শিশু বাচ্চার মত কাঁদিস না , খেলার মাঠ আর জুদ্ধের ময়দানে বন্ধুত্বরে কোন দাম নাই”
“ তোর একমাত্র বন্ধু আমি ভুলে যাসনে , আমি মরে গেলে কে তোকে মেয়ে পটায়ে দিবে কে , তোর তো সেই মুরুদ নাই , সারাজীবন ব্যাচেলর থাকবি আর নিজের হাতের উপর টর্চার করবি ” জয় নিজের শরীর থেকে ধুলো ঝারতে ঝারতে আর চুল ঠিক করতে করতে বলল , সব সময় ফিট থাকা চাই ওর । কারনে মাঠের অপর পাশেই মেয়দের হোস্টেল সেখান থেকে কিছু মেয়ে দেখছে ওকে ।
“ একটা ট্যাকলে আর কি মরে যাবি” রাজীব জয় কে একটি ধাক্কা দিয়ে বলে
“ পা তো যাবে , আর পা গেলে এই ল্যাংড়া রোমিও কে কন মেয়ে পাত্তা দিবে , আর মেয়েরা যদি পাত্তা না দেয় তাহলে তো শুকিয়ে মরে যাবো” জয় করুন চেহারা করে বলল
“ হইসে আর নাটক করতে হবে না, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে চল” রাজীব এই বলে হাটা দেয় ।
জয় ও ওর পিছনে পিছনে আসে , তখন ওদের সাথে থাকা এক ছেলে বলে , “ তোরা জানিস , টুরিস্ট সোসাইটি নাকি পাঁচ দিনের ট্র্যাকিং ট্যুরের আয়জন করতেসে, ছেলে মেয়ে একসাথে”
সহপাঠীর কথা শুনে জয়ের কান খারা হয়ে যায় , বিশেষ করে ছেলে মেয়ে একসাথে এই কথা গুলো বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে জয় কে । জয় থমকে দাড়ায় জিজ্ঞাস করে কবে হবে ট্যুর । ছেলেটি বলে শীতে নভেম্বর মাসের দিকে । জয়ের মন খারাপ হয়ে যায় , বলে “ এখন চলছে জুন ,এর মানে আরো চার মাআআআস” জয় হতাশ হয়ে বলে ।
“ কিন্তু রেজিস্ট্রেশন এখন থেকেই চলছে, মাত্র ২০০ জন নেবে” ছেলেটি আবারো
“ এতো আগে রেজিস্ট্রেশন কেনো” রাজীব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
“ আক্রন হিল ট্র্যাক হবে , তাই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে” ছেলেটি উত্তর দিলো
“ ধুর কিসের বালের প্রস্তুতি ,সাথে মেয়ে থাকলে আমি এক দৌরে পাহাড়ে উঠতে রাজি আছি” জয় বিরক্ত হয়ে বলে
“ তোর হয়তো লাগবে না , কিন্তু যে মেয়রা যাবে ওরা তো আর সবাই এক্সপার্ট না” ছেলেটি বলল
“ মেয়েরা যাওয়ার জন্য বসে আছে তো? কয়টা মেয়ে যাবে , কয়জন মেয়ে বাসা থেকে পারমিশন পাবে ” রাজীব হেসে বলল
“ কেন পারমিশন পাবে না , প্রয়োজনে আমি সবার বাসায় গিয়ে গিয়ে পারমিশন আদায় করে দেবো” জয় তাৎক্ষনিক ভাবে বলে উঠলো , সবাই ওর কথায় হেসে উঠলো , তারপর জয় আবারো বলতে লাগলো “ আরে বাড়ির মানুষ বোঝে না কেনো , ছেলে মেয়ে যদি একসাথে না মেলামেশা করে , তাহলে দুনিয়া আগে বাড়বে কি করে , দুনিয়া আগে বাড়ানোর স্বার্থে সব মেয়েদের অভিবাবকদের উচিৎ তাদের মেয়েদের এমন ট্যুরে পাঠানো “
মাঠের সবাই জয়ের এমন বক্তৃতায় হাত তালি দিয়ে উঠলো । এসব কথা বলতে বলতে ওরা মাঠের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে । এখন জয় আর রাজীব একা । জয় একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়েছে , আর তখনি ওদের পরিচিত একটা ছেলে নাম বাপ্পি এগিয়ে এলো । বাপ্পি ওদের সামনে এসে কাচুমাচু করতে থাকে , ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলবে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।
“ কিরে কিছু বলবি?” রাজীব জিজ্ঞাস করে
“ হুম , একটা হেল্প দরকার , কিন্তু কি করে বলি” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু করে বলে
“ ভাই টাকার দরকার হলে জয়ের কাছে যা , এখানে সুবিধা হবে না” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ না টাকা না , আসলে গার্ল ফ্রেন্ড প্রব্লেম” বাপ্পি মিন্মিন করে বলে
“ তাহলে আরো আগে অইদিকে দেখো ,”বলে রাজীব জয় কে দেখিয়ে দেয়
জয় সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলে “ আমি কি তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কিছু করেছি , তোর গার্ল ফ্রেন্ড কি এখন আমাকে ছাড়া বাচবে না , এমন কিছু “ জয় গম্ভির ভাবে বলার চেষ্টা করে , কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের হাসি ধরে রাখতে পারে না । সাথে সাথে রাজীব ও হেসে দেয় ।
এদিকে বাপ্পি হালকা রেগে যায় , “ বলে ভেবেছিলাম তোরা দুজন হেল্প করবি”
“ আরে ভাই সমসসার কথা তো বলতে হবে , তাহলে না বুঝবো তোর কি হেল্প দরকার” রাজীব হেসে বাপ্পির কাধে একটা হাত রাখে ।
“ আমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগে , আগামিকাল ওর জন্মদিন তাই ভেবেছিলাম রাত ১২ টার পর উইশ করবো” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলে
“ তো কর না আমাদের কাছে ভ্যাদাচ্ছিস কেনো?” জয় একটু রেগে গিয়েই বলে ।
“ কিন্তু করবো কি করে , আমার গার্ল ফ্রেন্ড তো হোস্টেলে থাকে” বাপ্পি অসহায় ভাবে বলল
“ বাপ মা লেখা পড়া করতে পাঠায় , হোস্টেলে রেখে পড়ায় আর ছেলে মেয়ে গুলো সুধু প্রেম করে বেড়ায়” বাপ্পির কথা শুনে রাজীব একটু রেগে গিয়ে বলল।
“ তো কি করবে তোর মত সাধু বাবা সেজে থাকবে নাকি” জয় সাথে সাথে প্রতিবাদ করে , তারপর বাপ্পির দিকে তাকিয়ে বলে “ আমরা কি করতে পারি , রাতের বেলা তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে তুলে নিয়ে আসবো নাকি?”
“ আরে না না , সুধু আমাকে একটু দেয়াল টপকাতে সাহায্য করতে হবে” বাপ্পি জয়ের কথায় ভড়কে গিয়ে বলল
“ না না এসব এখানে হবে না , তুই অন্য জায়গায় দেখ” রাজীব সাথে সাথে বাপ্পিকে বলে দিলো
বাপ্পি রাজীবের ব্যাবহারে একটু হার্ট হলো , ঝাঁঝের সাথে বলল “ আরে এমন করে বলছিস কেনো , আমি ভিক্ষা চাইতে এসেছি যে অন্য জায়গায় দেখবো”
“ ভিক্ষা চাইলে দিয়ে দিতাম , কিন্তু যা চাইছিস সেটা আমরা করতে পারবো না , এখানে পড়াশুনা করতে এসেছি , প্রেম প্রেম খেলা খেলতে না” রাজীব ও রেগে গিয়ে বলল
এতক্ষণ জয় চুপ ছিলো , কি যেন ভাবছিলো মনে মনে তারপর হঠাত বলে উঠলো , “যা হয়ে যাবে তোর কাজ, রাত সারে এগারোটায় আমরা চলে আসবো”
সাথে সাথে রাজীব চেঁচিয়ে বলল “ ওই এইখানে আমরা পেলি কোথায় , এই কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয় , আর তোকেও করতে দিচ্ছি না , তুই বুঝতে পারছিস এর পরিনতি কি , সুধু মাত্র এই রোমান্টিক প্রেমের সিনেমা করতে গিয়ে আমাদের ভার্সিটি থেকে বহিস্কার করতে পারে”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পির ও হুঁশ হয় । এই বহিষ্কারের ব্যাপারটা হয়তো ওর মাথায় ছিলো না । তাই প্লান কেন্সেল করার কথা বিবেচনা করতে থাকে ও , কিন্তু বাধা দেয় জয় , “ কিচ্ছু হবে না , আমি থাকতে তোদের চিন্তা কি ? ফুল প্রুফ প্ল্যান বানাবো , কোন শালা কিচ্ছু করতে পারবে না”
“ তুই নায়ক সাজতে চাস তুই কর , আমি এসবে নাই , আর এসব সুধু সিনেমাতে নায়করা করতে পারে, বাস্তবে এসব সম্ভব না” রাজীব উঠে চলে যেতে শুরু করে , কিন্তু জয় ওকে থামিয়ে দেয় ,
“ এই দুনিয়ায় যত প্রেমিক পুরুষ আছে সবাই আমার জাত ভাই , আর ভাইয়ের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত , আর সবচেয়ে বড় কথা আমার কাছে ফুল প্রুফ প্ল্যান আছে , কোন কিচ্ছু হবে না”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পি আশাহত হলেও জয়ের কথায় ওর আশার পুনজাগরন হয় । জয় কে বার বার ধন্যবাদ দিতে থাকে , এদিকে রাজীব এখনো সম্পূর্ণ ভাবে রাজি নয় । কারন ও ভালো করেই জানে জয়ের কোন প্ল্যান নেই । ও এই ঘটনা মাত্র শুনেছে , এতো দ্রুত প্ল্যান এলো কোথা হতে?তাছাড়া জয় জানে ই না বাপ্পির গার্ল ফ্রেন্ড কোন হস্টেলে থাকে ।
তাই জয়ের মিথ্যা ধরার জন্য জিজ্ঞাস করলো “ আচ্ছা আমার মাস্টার প্ল্যানার বলতো , ওর গার্ল ফ্রেন্ড কোন হোস্টেলে থাকে ?”
জয় কিছুটা বিপদে পরে গেলো , কিন্তু দ্রুত সামলে নিলো , বাপ্পির দিকে ইশারা করতেই , বাপ্পি দ্রুতো হোস্টেলের নাম বলে দিলো।
“ আমি কি তোকে জিজ্ঞাস করেছি?” ক্ষেপে গেলো রাজীব ।
“ তুই না এলে না আয় , আমারা দুই প্রেমিক ভাই যাবো” জয় ইচ্ছে করেই এ কথা বলে । কারন জয় যদি আসে তাহলে রাজীব অবশ্যই আসবে ।
****
ঘরে ফিরে নিজের খেলার জুতো জোড়া একটু দূরে ছুরে ফেলে রাজীব , তারপর ধপ করে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে গালাগাল দিতে থাকে । এমন সময় রানীও বাহির থেকে এসে রাজীবের অবস্থা দেখে হা হা করে ওঠে । ধুলো ময়লা মাখা খেলার পোশাক পরে রাজীব কেনো সোফায় বসেছে সেই নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয় ।
হঠাত রাজীবের খেয়াল হয় ও এখনো খেলার পোশাক পরে আছে , দ্রুত উঠে পরে রাজীব , তাপর সোফার কুশন হাত দিয়ে ঝাড়তে থাকে । “ আরে বে খেয়ালে বসে পরেছি , নে ছিলো না , এবারের জন্য মাফ করে দে” রাজীব রানী কে শান্ত করার জন্য বলে । কিন্তু রানীকে শান্ত করা সম্ভব হয় না , বরং আরো উঁচু হয় ওর গলা “ কোন খেয়ালে থাকিস ভাইয়া , গত সপ্তায় এই কভার গুলো লাগিয়েছি মাত্র”
“ আচ্ছা যা এবার আমি ধুয়ে দেবো” রাজীব ক্ষমা চাওয়ার স্বরে বলে । এবার কাজ হয় , তবে এখনো রানীর রাগ পুরোপুরি কমেনি, একটা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল “ যা তুই ফ্রেশ হ, আমি চা করে নিয়ে আসি” এই বলে চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেলো “ ফ্রেশ না , একেবারে গোসল করবি , গা থেকে ঘামের গন্ধে সারা ঘর গন্ধ হয়ে গেছে” এই বলে নাক চেপে ধরলো ।
রাজীব হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো , ও জানে ঘামের গন্ধ আছে , কিন্তু এতোটা নেই যে সারা ঘর ঘন্ধে ভরে যাবে , আর সেই গন্ধের জন্য নাক ধরতে হবে।
ফ্রেস হয়ে , রাজীব নিজের ঘরেই বসে রইলো , একটু পর রানী চায়ের কাপ নিয়ে ওর ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে কাপ রাখলো । দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ এখনো কমেনি । তাই রাজীব আর কোন কথা বলল না , যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিলো, নইলে এই ব্যাপারে আবার লেকচার শুনতে হবে ।
বেশ কিছুক্ষন পর রানী কথা বলল “ বিড়বিড় করে কাকে গালাগাল দিচ্ছিলি?”
রাজীব মনে মনে জিভে কামর দেয় , রানী যে শুনে ফেলবে সেটা ভাবেনি ও , বেশ বিশ্রী রকমের গালি দিচ্ছিলো ও , “ তুই শুনে ফেলেছিস?” রাজীব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করে
“ কান যেহেতু আছে শুনতে তো হবেই , কি আর করা”
“ আর বলিস না আজকে মেজেজ খারাপ ছিলো” রাজীব নিজের দোষ ঢাকার জন্য বলে
“ যতই মেজেজ খারাপ থাক , ঘরের ভেতর এই বিশ্রী গালাগাল চলবে না” রানী হুকুমের স্বরে বলল
“ জো হুকুম মালিক” রাজীব বসে বসে কুর্নিশ করার ভান করলো
“ কেন কি হয়েছে মেজাজ খারাপ কেনো? আজকাল মারামারি ও শুরু করেছিস নাকি , খেলতে গিয়ে কারো সাথে মারামারি করেছিস” রানী গম্ভির স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ আরে না আমি কি বাচ্চা নাকি যে খেলতে গিয়ে মারামারি করবো” হেসে হেসে বলল রজিব , তারপর হঠাত খেয়াল হলো রানীর রাগ অন্য কারো উপরে উঠিয়ে দিলে কেমন হয় , না হলে আজকে জতবার সামনে পরবে শাসন করবে টিচার দের মত।
“ সব দোষ ওই জয়ের , ভার্সিটি লেখা পড়া করতে নয় সিনেমা করতে ভর্তি হয়েছে যেন” রাজীব বানোয়াট রাগ মিশিয়ে কথা গুলো বলল
“ কেনো কি করলো তোর বন্ধু” রানীর কণ্ঠ একটু কোমল হয়ে এলো, যদিও রাগ ধরে রাখার ব্যারথ চেষ্টা করছে ও । ওর চেহারার রাগের দাগ গুলো একটু একটু করে মিইয়ে যেতে শুরু করেছে , জয়ের নাম সামনে উচ্চারিত হতেই । একটু আগেও দেখা হয়েছে জয়ের সাথে । রানী যখন বেরুচ্ছিলো জয় তখন বাসায় ঢুকছিল । কথা হয়নি সুধু হাসি বিনিময় হয়েছে সবারত অগোচরে । আর রানীর নিঃশ্বাস ভারি হয়েছে ঘর্মাক্ত জয়ের টি সার্ট লেপ্টে থাকা মাসল গুলো দেখে । দুজনে যখন একে অপর কে ক্রস করছিলো তখন রানীর নাকে যে পুরুষালী ঘাম আর ধুলো বালির মিশ্রণে এক অপূর্ব সুবাস এসে লেগেছিলো তখন রানী না চাইতেও বুক ভরে একবার শ্বাস নিয়েছিলো । আর তাতেই মনে যেন পাখা গজিয়েছিলো , হাওয়ায় ভাসছিলো ওর মন । কিন্তু ঘরে ঢুকে রাজীবের কান্ড দেখে সেই ভালো লাগার অনুভূতি ওকে ছেড়ে জানালা গলে পালিয়েছে । আর তাতেই ওর রাগ ১০০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে ।
“ সমস্ত পৃথিবীর প্রেমিক পুরুষ নাকি ওর জাত ভাই , আর এই ভাইদের জন্য ও যে কোন ঝুকি নিতে প্রস্তুত, আরে ভাই হিরো গিরি কর , কিন্তু তার তো একটা লিমিট থাকবে , নিজের ক্যারিয়ার বাজি রেখে এসব করার কি দরকার” এবার রাজীবের রাগের পারদ সত্যি সত্যি উঠে গেছে ।
“ আর একা ওর দোষ দিয়ে কি হবে , সবাই এসব করছে আজকাল , কারো ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন চিন্তা নেই , একেক জন সিনেমার নায়ক নাইকা , কেউ বাপ মায়ের টাকা খরচ করে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনার বদলে প্রেম করছে , আবার কেউ ঘরের খেয়ে প্রেমিকার মান ভাঙ্গানোর জন্য নিজের ক্যারিয়ার ধংস করতে চলেছে , আবার জয়ের মত কিছু গাধা , প্রতিবেশীর বিয়েতে নাচতে গিয়ে কোমর ভাঙ্গে ফেলার মত কাজ করছে”
রাজীবের কথা গুলো শুনে রানীর কান গরম হয়ে এলো । ও নিজেও যে এদের সঙ্গি সেটা ওর ভাই যদি জানতো তাহলে কি করত কে জানে । না এখনো প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারেনি , কিন্তু হওয়ার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছে।
“ আচ্ছা ভাইয়া তুই চা খা আমি , ছাদের কাপড় তুলে আনি” বলে রানী কোন মতে রাজীবের সামনে থেকে চলে গেলো । ওর কাছে মনে হচ্ছিলো ও ধরা খেয়ে যাবে ।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদের উপরে উঠলো রানী । তারপর নিজের এমন বোকা চিন্তার জন্য নিজের উপর ই হাসি পেলো ওর । কিন্তু তখন ঠিক ই মনে হচ্ছিলো যে ওর কপালে একটু পর জাদু মন্ত্রের মত লেখা ফুটে উঠবে । ‘এ একজন প্রেমিকা , যে লেখাপড়া আর ক্যারিয়ারের চিন্তা চিবিয়ে খেয়ে প্রেম করতে চায়’
****
জয় যেন এই অপেক্ষায় ই ছিলো । রানী ছাদে উঠে আসতেই দ্রুত কাঠের তক্তা পেরিয়ে এই ছাদে চলে এলো ।
“তোর ভাই কোথায় রে?”
রানী চমকে ঘুরে তাকালো , এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার জয় এই কাজ করেছে । কিন্তু এখনো রানী অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। জয় এখন আগের মত ঘর্মাক্ত শরীরে নেই । সম্ভবত গোসল করে এসেছে , পারফিউম ব্যাবহার করেছে , চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা । দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে । রানী যতটা সম্ভব জয়ের নজর এড়িয়ে ভালো করে একবার দেখে নিলো , মনে মনে ভাবল ভাইয়া সত্যি ই বলেছে , সব সময় ফিট বাবু সেজে থাকে । রানীর ঠোঁটে আপনাতেই একটা হাসি চলে এলো ।
“নিচে চা খাচ্ছে , ডাকবো?” রানী জিজ্ঞাস করলো নিজের হাসি চেপে রেখে
“ নাহ , ওই খারুস কে ডেকে কোন লাভ নেই , ওর চেহারা দেখতে দেখতে আজকাল আমার মন ও পাথর হয়ে যাচ্ছে , এখন এমন একটা চেহারা দেখতে হবে যেন আমার মন মোমের মত নরম হয়ে গলে যায় একেবারে” জয় রানীর দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে হাসল ।
রানী এক মুহূর্তের জন্য নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো , তারপর নিজের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে নিয়ে আবার জয়ের দিকে ঘুরলো , কোন কিছু বোঝে না এমন ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল “ তা ওরকম একটা মুখ না খুজে এখানে কি করছো?”
“ দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া , কবির মত যেন আমাকেও আফসোস করতে না হয় তাই খোঁজা নিজের ঘর থেকে দু পা ফেলেই শুরু করলাম” জয় রানীর চোখে চোখ রেখে বলে । কিন্তু রানী সেই চোখের দিকে তাকায় না । নিজের নখের দিকে তাকিয়ে বলল “ তা পেলে কিছু , নাকি সাত সমুদ্র তেরো নদি পারি দিতে হবে”
“ সেটা নির্ভর করবে সেই মুখের উপর , যদি দয়া করে দর্শন দেয় , চোখে রাখে চোখ” জয় একটু কাছে এগিয়ে আসে
“ চোখে চোখ রাখলে কি হবে” রানীর নিঃশ্বাস ঘন হয় , গালে গরম আঁচ লাগে
“ কথা হবে চোখে চোখে , মনের দূরত্ব ঘুচবে”
রানী দ্রুত কাপড় তোলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে , যেন জয় ওর মুখ দেখতে না পারে । আর জয় রেলিঙে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ,
“ সখি তুমি মুখ তুলে চাইবে কবে ,
লজ্জা শরমের পর্দা খুলে ,
পিদিমের আলোয় তোমার কম্পিত ঠোঁট ,
কাজল টানা চোখ ,
সেখানে কার নাম লেখা ,
দেখবো আমি , যাবো হারিয়ে আপনাকে ভুলে”
রানী ওড়নার আড়ালে নিজের মুখ লুকায় , দাঁতে দাঁত চেপে হাসি থামায়। ও নিশ্চিত জয় এটা কারো কাছে শুনে মুখস্ত করেছে । তাপর জিজ্ঞাস করে “ আজকাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে কি এসব পড়াচ্ছে নাকি?”
“মনে যখন ঢেউ ওঠে , তখন কথা গুলো কবিতা হয়ে যায়” জয় আকাশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে বলে , মনে মনে নিজের ক্লাসের আঁতেল কবি কে ধন্যবাদ জানায় ।
“ ওহ তাই এটা কবিতা ছিলো?” অবাক হওয়ার ভান করে রানী
“ তোর কাছে কি মনে হয়?”
রানী জয়ের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে “ তা আমার প্রেমিক কবি এটা কোন ফরম্যাটে লেখা কবিতা?”
“ তোর উপর ত দেখছি এখনি টিচার এর আত্মা এসে ভর করেছে , শব্দ মালায় যখন আবেগ যুক্ত হয় , তখন সেটা কবিতা হয়ে যায় , কবিতার কোন ফরম্যাট দরকার পরে না , আবেগ কে কি ফরম্যাটে বাধা যায়” জয় হারার পাত্র নয় । বেশ সুন্দর করে হাজির জবাব দেয় ।
“ তাহলে কি সত্যি তুমি প্রেমিক দের লিডার হয়ে গেছো , আর প্রেমিক ব্রাদারহুড তৈরি করছো , সেখানে নাকি এক ভাই অন্য ভাইয়ের জন্য মরতেও প্রস্তুত” রানী ওড়নার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাস করলো
“ তোকে কে বলল”
“ভাইয়া”
“ তোর ভাইয়া কি বুঝবে , ওর মন তো পাথরের , প্রেমিকরা সব সময় মরেই থাকে , ওদের নতুন করে মরার কিছু নেই বুঝলি , আমার মনে হচ্ছে তোকে দ্রুত তোর ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে , নইলে এই পৃথিবী আরো একটা পাথর মনের মানুষ পাবে”
“ সেটা কিভাবে?” রানী অবাক হওয়ার ভান করে
“ সময় এলেই বুঝবি” জয় রহস্যময় হাসি হেসে বলে
এতক্ষনে রানীর কাপড় তোলা শেষ হয়ে গেছে । “ আমি গেলাম , তুমি থাকলে থাকো”
“ আরো কিছু কাপড় ছিলো না তোদের বাড়িতে?” জয় হতাশ হয়ে জিজ্ঞাস করে ,
“ সেগুলো কি তুমি ধুয়ে দিতে?” রানী চোখ রাঙ্গিয়ে বলে
“ তুই বললে দিতাম , জাস্ট একটা আওয়াজ দিবি , তুই আর আমি পানি সাবান আর সাবানের ফ্যানা , কেমন হবে বলতো”
রানীর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো জয়ের কথার অর্থ বুঝতে , যখন বুঝতে পারলো , লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেলো , দ্রুত নিচের দিকে নেমে যেতে লাগলো ।
জয় ও হাসতে হাসতে নিজেদের ছাদের দিকে হাটা দিলো , বিড়বিড় করে মুখস্ত করা কবিতা আওড়াতে লাগলো । ওর ঠোঁটে একটা দু কান ব্রিস্তিত হাসি ।
*****
জয় আর রাজীব কিছু বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির মাঠে ফুটবল খেলছিলো । জয় এক দলে আর রাজীব অন্য দলে । ভীষণ টক্কর হচ্ছে দুই দলে । জয় সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে । আর রাজীব ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেব । তাউ দুই বন্ধুর মাঝেও ভীষণ টক্কর হচ্ছে । জয়ের কাজ হচ্ছে আক্রমণ করা , আর রাজীবের কাজ আক্রমণ ঠেকানো । তাই প্রায় ই দুজনের মাঝে ঠোকা ঠুকি হচ্ছে ।
এরি মাঝে একবার জয়ের পায়ে বল চলে এলো । এমন হাট্টা কাট্টা বডি নিয়েও জয় বেশ দ্রুত গতির । বেশ গতির সাথে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো , তখনি জয়ের সামনে চলে আসে রাজীব । হার্ড ট্যাকল করে , জয় প্রায় দু ফুট উপরে উঠে আছড়ে পরে । কিন্তু ক্লিন ট্যাকল ছিলো । বল সীমানার বাইরে চলে যায় ।
“ ওই ব্যাটা , আমি যে তোর এক মাত্র বন্ধু সেইটা কি ভুলে গেলি রে বোকাচোদা” জয় মাটিতে পরে থেকেই চেঁচিয়ে ওঠে ।
রাজীব হাসিমুখে এগিয়ে যায় জয়ের দিকে , হাত ধরে টেনে তোলে , তারপর বলে “ শিশু বাচ্চার মত কাঁদিস না , খেলার মাঠ আর জুদ্ধের ময়দানে বন্ধুত্বরে কোন দাম নাই”
“ তোর একমাত্র বন্ধু আমি ভুলে যাসনে , আমি মরে গেলে কে তোকে মেয়ে পটায়ে দিবে কে , তোর তো সেই মুরুদ নাই , সারাজীবন ব্যাচেলর থাকবি আর নিজের হাতের উপর টর্চার করবি ” জয় নিজের শরীর থেকে ধুলো ঝারতে ঝারতে আর চুল ঠিক করতে করতে বলল , সব সময় ফিট থাকা চাই ওর । কারনে মাঠের অপর পাশেই মেয়দের হোস্টেল সেখান থেকে কিছু মেয়ে দেখছে ওকে ।
“ একটা ট্যাকলে আর কি মরে যাবি” রাজীব জয় কে একটি ধাক্কা দিয়ে বলে
“ পা তো যাবে , আর পা গেলে এই ল্যাংড়া রোমিও কে কন মেয়ে পাত্তা দিবে , আর মেয়েরা যদি পাত্তা না দেয় তাহলে তো শুকিয়ে মরে যাবো” জয় করুন চেহারা করে বলল
“ হইসে আর নাটক করতে হবে না, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে চল” রাজীব এই বলে হাটা দেয় ।
জয় ও ওর পিছনে পিছনে আসে , তখন ওদের সাথে থাকা এক ছেলে বলে , “ তোরা জানিস , টুরিস্ট সোসাইটি নাকি পাঁচ দিনের ট্র্যাকিং ট্যুরের আয়জন করতেসে, ছেলে মেয়ে একসাথে”
সহপাঠীর কথা শুনে জয়ের কান খারা হয়ে যায় , বিশেষ করে ছেলে মেয়ে একসাথে এই কথা গুলো বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে জয় কে । জয় থমকে দাড়ায় জিজ্ঞাস করে কবে হবে ট্যুর । ছেলেটি বলে শীতে নভেম্বর মাসের দিকে । জয়ের মন খারাপ হয়ে যায় , বলে “ এখন চলছে জুন ,এর মানে আরো চার মাআআআস” জয় হতাশ হয়ে বলে ।
“ কিন্তু রেজিস্ট্রেশন এখন থেকেই চলছে, মাত্র ২০০ জন নেবে” ছেলেটি আবারো
“ এতো আগে রেজিস্ট্রেশন কেনো” রাজীব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
“ আক্রন হিল ট্র্যাক হবে , তাই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে” ছেলেটি উত্তর দিলো
“ ধুর কিসের বালের প্রস্তুতি ,সাথে মেয়ে থাকলে আমি এক দৌরে পাহাড়ে উঠতে রাজি আছি” জয় বিরক্ত হয়ে বলে
“ তোর হয়তো লাগবে না , কিন্তু যে মেয়রা যাবে ওরা তো আর সবাই এক্সপার্ট না” ছেলেটি বলল
“ মেয়েরা যাওয়ার জন্য বসে আছে তো? কয়টা মেয়ে যাবে , কয়জন মেয়ে বাসা থেকে পারমিশন পাবে ” রাজীব হেসে বলল
“ কেন পারমিশন পাবে না , প্রয়োজনে আমি সবার বাসায় গিয়ে গিয়ে পারমিশন আদায় করে দেবো” জয় তাৎক্ষনিক ভাবে বলে উঠলো , সবাই ওর কথায় হেসে উঠলো , তারপর জয় আবারো বলতে লাগলো “ আরে বাড়ির মানুষ বোঝে না কেনো , ছেলে মেয়ে যদি একসাথে না মেলামেশা করে , তাহলে দুনিয়া আগে বাড়বে কি করে , দুনিয়া আগে বাড়ানোর স্বার্থে সব মেয়েদের অভিবাবকদের উচিৎ তাদের মেয়েদের এমন ট্যুরে পাঠানো “
মাঠের সবাই জয়ের এমন বক্তৃতায় হাত তালি দিয়ে উঠলো । এসব কথা বলতে বলতে ওরা মাঠের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে । এখন জয় আর রাজীব একা । জয় একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়েছে , আর তখনি ওদের পরিচিত একটা ছেলে নাম বাপ্পি এগিয়ে এলো । বাপ্পি ওদের সামনে এসে কাচুমাচু করতে থাকে , ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলবে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।
“ কিরে কিছু বলবি?” রাজীব জিজ্ঞাস করে
“ হুম , একটা হেল্প দরকার , কিন্তু কি করে বলি” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু করে বলে
“ ভাই টাকার দরকার হলে জয়ের কাছে যা , এখানে সুবিধা হবে না” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ না টাকা না , আসলে গার্ল ফ্রেন্ড প্রব্লেম” বাপ্পি মিন্মিন করে বলে
“ তাহলে আরো আগে অইদিকে দেখো ,”বলে রাজীব জয় কে দেখিয়ে দেয়
জয় সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলে “ আমি কি তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কিছু করেছি , তোর গার্ল ফ্রেন্ড কি এখন আমাকে ছাড়া বাচবে না , এমন কিছু “ জয় গম্ভির ভাবে বলার চেষ্টা করে , কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের হাসি ধরে রাখতে পারে না । সাথে সাথে রাজীব ও হেসে দেয় ।
এদিকে বাপ্পি হালকা রেগে যায় , “ বলে ভেবেছিলাম তোরা দুজন হেল্প করবি”
“ আরে ভাই সমসসার কথা তো বলতে হবে , তাহলে না বুঝবো তোর কি হেল্প দরকার” রাজীব হেসে বাপ্পির কাধে একটা হাত রাখে ।
“ আমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগে , আগামিকাল ওর জন্মদিন তাই ভেবেছিলাম রাত ১২ টার পর উইশ করবো” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলে
“ তো কর না আমাদের কাছে ভ্যাদাচ্ছিস কেনো?” জয় একটু রেগে গিয়েই বলে ।
“ কিন্তু করবো কি করে , আমার গার্ল ফ্রেন্ড তো হোস্টেলে থাকে” বাপ্পি অসহায় ভাবে বলল
“ বাপ মা লেখা পড়া করতে পাঠায় , হোস্টেলে রেখে পড়ায় আর ছেলে মেয়ে গুলো সুধু প্রেম করে বেড়ায়” বাপ্পির কথা শুনে রাজীব একটু রেগে গিয়ে বলল।
“ তো কি করবে তোর মত সাধু বাবা সেজে থাকবে নাকি” জয় সাথে সাথে প্রতিবাদ করে , তারপর বাপ্পির দিকে তাকিয়ে বলে “ আমরা কি করতে পারি , রাতের বেলা তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে তুলে নিয়ে আসবো নাকি?”
“ আরে না না , সুধু আমাকে একটু দেয়াল টপকাতে সাহায্য করতে হবে” বাপ্পি জয়ের কথায় ভড়কে গিয়ে বলল
“ না না এসব এখানে হবে না , তুই অন্য জায়গায় দেখ” রাজীব সাথে সাথে বাপ্পিকে বলে দিলো
বাপ্পি রাজীবের ব্যাবহারে একটু হার্ট হলো , ঝাঁঝের সাথে বলল “ আরে এমন করে বলছিস কেনো , আমি ভিক্ষা চাইতে এসেছি যে অন্য জায়গায় দেখবো”
“ ভিক্ষা চাইলে দিয়ে দিতাম , কিন্তু যা চাইছিস সেটা আমরা করতে পারবো না , এখানে পড়াশুনা করতে এসেছি , প্রেম প্রেম খেলা খেলতে না” রাজীব ও রেগে গিয়ে বলল
এতক্ষণ জয় চুপ ছিলো , কি যেন ভাবছিলো মনে মনে তারপর হঠাত বলে উঠলো , “যা হয়ে যাবে তোর কাজ, রাত সারে এগারোটায় আমরা চলে আসবো”
সাথে সাথে রাজীব চেঁচিয়ে বলল “ ওই এইখানে আমরা পেলি কোথায় , এই কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয় , আর তোকেও করতে দিচ্ছি না , তুই বুঝতে পারছিস এর পরিনতি কি , সুধু মাত্র এই রোমান্টিক প্রেমের সিনেমা করতে গিয়ে আমাদের ভার্সিটি থেকে বহিস্কার করতে পারে”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পির ও হুঁশ হয় । এই বহিষ্কারের ব্যাপারটা হয়তো ওর মাথায় ছিলো না । তাই প্লান কেন্সেল করার কথা বিবেচনা করতে থাকে ও , কিন্তু বাধা দেয় জয় , “ কিচ্ছু হবে না , আমি থাকতে তোদের চিন্তা কি ? ফুল প্রুফ প্ল্যান বানাবো , কোন শালা কিচ্ছু করতে পারবে না”
“ তুই নায়ক সাজতে চাস তুই কর , আমি এসবে নাই , আর এসব সুধু সিনেমাতে নায়করা করতে পারে, বাস্তবে এসব সম্ভব না” রাজীব উঠে চলে যেতে শুরু করে , কিন্তু জয় ওকে থামিয়ে দেয় ,
“ এই দুনিয়ায় যত প্রেমিক পুরুষ আছে সবাই আমার জাত ভাই , আর ভাইয়ের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত , আর সবচেয়ে বড় কথা আমার কাছে ফুল প্রুফ প্ল্যান আছে , কোন কিচ্ছু হবে না”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পি আশাহত হলেও জয়ের কথায় ওর আশার পুনজাগরন হয় । জয় কে বার বার ধন্যবাদ দিতে থাকে , এদিকে রাজীব এখনো সম্পূর্ণ ভাবে রাজি নয় । কারন ও ভালো করেই জানে জয়ের কোন প্ল্যান নেই । ও এই ঘটনা মাত্র শুনেছে , এতো দ্রুত প্ল্যান এলো কোথা হতে?তাছাড়া জয় জানে ই না বাপ্পির গার্ল ফ্রেন্ড কোন হস্টেলে থাকে ।
তাই জয়ের মিথ্যা ধরার জন্য জিজ্ঞাস করলো “ আচ্ছা আমার মাস্টার প্ল্যানার বলতো , ওর গার্ল ফ্রেন্ড কোন হোস্টেলে থাকে ?”
জয় কিছুটা বিপদে পরে গেলো , কিন্তু দ্রুত সামলে নিলো , বাপ্পির দিকে ইশারা করতেই , বাপ্পি দ্রুতো হোস্টেলের নাম বলে দিলো।
“ আমি কি তোকে জিজ্ঞাস করেছি?” ক্ষেপে গেলো রাজীব ।
“ তুই না এলে না আয় , আমারা দুই প্রেমিক ভাই যাবো” জয় ইচ্ছে করেই এ কথা বলে । কারন জয় যদি আসে তাহলে রাজীব অবশ্যই আসবে ।
****
ঘরে ফিরে নিজের খেলার জুতো জোড়া একটু দূরে ছুরে ফেলে রাজীব , তারপর ধপ করে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে গালাগাল দিতে থাকে । এমন সময় রানীও বাহির থেকে এসে রাজীবের অবস্থা দেখে হা হা করে ওঠে । ধুলো ময়লা মাখা খেলার পোশাক পরে রাজীব কেনো সোফায় বসেছে সেই নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয় ।
হঠাত রাজীবের খেয়াল হয় ও এখনো খেলার পোশাক পরে আছে , দ্রুত উঠে পরে রাজীব , তাপর সোফার কুশন হাত দিয়ে ঝাড়তে থাকে । “ আরে বে খেয়ালে বসে পরেছি , নে ছিলো না , এবারের জন্য মাফ করে দে” রাজীব রানী কে শান্ত করার জন্য বলে । কিন্তু রানীকে শান্ত করা সম্ভব হয় না , বরং আরো উঁচু হয় ওর গলা “ কোন খেয়ালে থাকিস ভাইয়া , গত সপ্তায় এই কভার গুলো লাগিয়েছি মাত্র”
“ আচ্ছা যা এবার আমি ধুয়ে দেবো” রাজীব ক্ষমা চাওয়ার স্বরে বলে । এবার কাজ হয় , তবে এখনো রানীর রাগ পুরোপুরি কমেনি, একটা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল “ যা তুই ফ্রেশ হ, আমি চা করে নিয়ে আসি” এই বলে চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেলো “ ফ্রেশ না , একেবারে গোসল করবি , গা থেকে ঘামের গন্ধে সারা ঘর গন্ধ হয়ে গেছে” এই বলে নাক চেপে ধরলো ।
রাজীব হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো , ও জানে ঘামের গন্ধ আছে , কিন্তু এতোটা নেই যে সারা ঘর ঘন্ধে ভরে যাবে , আর সেই গন্ধের জন্য নাক ধরতে হবে।
ফ্রেস হয়ে , রাজীব নিজের ঘরেই বসে রইলো , একটু পর রানী চায়ের কাপ নিয়ে ওর ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে কাপ রাখলো । দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ এখনো কমেনি । তাই রাজীব আর কোন কথা বলল না , যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিলো, নইলে এই ব্যাপারে আবার লেকচার শুনতে হবে ।
বেশ কিছুক্ষন পর রানী কথা বলল “ বিড়বিড় করে কাকে গালাগাল দিচ্ছিলি?”
রাজীব মনে মনে জিভে কামর দেয় , রানী যে শুনে ফেলবে সেটা ভাবেনি ও , বেশ বিশ্রী রকমের গালি দিচ্ছিলো ও , “ তুই শুনে ফেলেছিস?” রাজীব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করে
“ কান যেহেতু আছে শুনতে তো হবেই , কি আর করা”
“ আর বলিস না আজকে মেজেজ খারাপ ছিলো” রাজীব নিজের দোষ ঢাকার জন্য বলে
“ যতই মেজেজ খারাপ থাক , ঘরের ভেতর এই বিশ্রী গালাগাল চলবে না” রানী হুকুমের স্বরে বলল
“ জো হুকুম মালিক” রাজীব বসে বসে কুর্নিশ করার ভান করলো
“ কেন কি হয়েছে মেজাজ খারাপ কেনো? আজকাল মারামারি ও শুরু করেছিস নাকি , খেলতে গিয়ে কারো সাথে মারামারি করেছিস” রানী গম্ভির স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ আরে না আমি কি বাচ্চা নাকি যে খেলতে গিয়ে মারামারি করবো” হেসে হেসে বলল রজিব , তারপর হঠাত খেয়াল হলো রানীর রাগ অন্য কারো উপরে উঠিয়ে দিলে কেমন হয় , না হলে আজকে জতবার সামনে পরবে শাসন করবে টিচার দের মত।
“ সব দোষ ওই জয়ের , ভার্সিটি লেখা পড়া করতে নয় সিনেমা করতে ভর্তি হয়েছে যেন” রাজীব বানোয়াট রাগ মিশিয়ে কথা গুলো বলল
“ কেনো কি করলো তোর বন্ধু” রানীর কণ্ঠ একটু কোমল হয়ে এলো, যদিও রাগ ধরে রাখার ব্যারথ চেষ্টা করছে ও । ওর চেহারার রাগের দাগ গুলো একটু একটু করে মিইয়ে যেতে শুরু করেছে , জয়ের নাম সামনে উচ্চারিত হতেই । একটু আগেও দেখা হয়েছে জয়ের সাথে । রানী যখন বেরুচ্ছিলো জয় তখন বাসায় ঢুকছিল । কথা হয়নি সুধু হাসি বিনিময় হয়েছে সবারত অগোচরে । আর রানীর নিঃশ্বাস ভারি হয়েছে ঘর্মাক্ত জয়ের টি সার্ট লেপ্টে থাকা মাসল গুলো দেখে । দুজনে যখন একে অপর কে ক্রস করছিলো তখন রানীর নাকে যে পুরুষালী ঘাম আর ধুলো বালির মিশ্রণে এক অপূর্ব সুবাস এসে লেগেছিলো তখন রানী না চাইতেও বুক ভরে একবার শ্বাস নিয়েছিলো । আর তাতেই মনে যেন পাখা গজিয়েছিলো , হাওয়ায় ভাসছিলো ওর মন । কিন্তু ঘরে ঢুকে রাজীবের কান্ড দেখে সেই ভালো লাগার অনুভূতি ওকে ছেড়ে জানালা গলে পালিয়েছে । আর তাতেই ওর রাগ ১০০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে ।
“ সমস্ত পৃথিবীর প্রেমিক পুরুষ নাকি ওর জাত ভাই , আর এই ভাইদের জন্য ও যে কোন ঝুকি নিতে প্রস্তুত, আরে ভাই হিরো গিরি কর , কিন্তু তার তো একটা লিমিট থাকবে , নিজের ক্যারিয়ার বাজি রেখে এসব করার কি দরকার” এবার রাজীবের রাগের পারদ সত্যি সত্যি উঠে গেছে ।
“ আর একা ওর দোষ দিয়ে কি হবে , সবাই এসব করছে আজকাল , কারো ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন চিন্তা নেই , একেক জন সিনেমার নায়ক নাইকা , কেউ বাপ মায়ের টাকা খরচ করে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনার বদলে প্রেম করছে , আবার কেউ ঘরের খেয়ে প্রেমিকার মান ভাঙ্গানোর জন্য নিজের ক্যারিয়ার ধংস করতে চলেছে , আবার জয়ের মত কিছু গাধা , প্রতিবেশীর বিয়েতে নাচতে গিয়ে কোমর ভাঙ্গে ফেলার মত কাজ করছে”
রাজীবের কথা গুলো শুনে রানীর কান গরম হয়ে এলো । ও নিজেও যে এদের সঙ্গি সেটা ওর ভাই যদি জানতো তাহলে কি করত কে জানে । না এখনো প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারেনি , কিন্তু হওয়ার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছে।
“ আচ্ছা ভাইয়া তুই চা খা আমি , ছাদের কাপড় তুলে আনি” বলে রানী কোন মতে রাজীবের সামনে থেকে চলে গেলো । ওর কাছে মনে হচ্ছিলো ও ধরা খেয়ে যাবে ।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদের উপরে উঠলো রানী । তারপর নিজের এমন বোকা চিন্তার জন্য নিজের উপর ই হাসি পেলো ওর । কিন্তু তখন ঠিক ই মনে হচ্ছিলো যে ওর কপালে একটু পর জাদু মন্ত্রের মত লেখা ফুটে উঠবে । ‘এ একজন প্রেমিকা , যে লেখাপড়া আর ক্যারিয়ারের চিন্তা চিবিয়ে খেয়ে প্রেম করতে চায়’
****
জয় যেন এই অপেক্ষায় ই ছিলো । রানী ছাদে উঠে আসতেই দ্রুত কাঠের তক্তা পেরিয়ে এই ছাদে চলে এলো ।
“তোর ভাই কোথায় রে?”
রানী চমকে ঘুরে তাকালো , এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার জয় এই কাজ করেছে । কিন্তু এখনো রানী অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। জয় এখন আগের মত ঘর্মাক্ত শরীরে নেই । সম্ভবত গোসল করে এসেছে , পারফিউম ব্যাবহার করেছে , চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা । দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে । রানী যতটা সম্ভব জয়ের নজর এড়িয়ে ভালো করে একবার দেখে নিলো , মনে মনে ভাবল ভাইয়া সত্যি ই বলেছে , সব সময় ফিট বাবু সেজে থাকে । রানীর ঠোঁটে আপনাতেই একটা হাসি চলে এলো ।
“নিচে চা খাচ্ছে , ডাকবো?” রানী জিজ্ঞাস করলো নিজের হাসি চেপে রেখে
“ নাহ , ওই খারুস কে ডেকে কোন লাভ নেই , ওর চেহারা দেখতে দেখতে আজকাল আমার মন ও পাথর হয়ে যাচ্ছে , এখন এমন একটা চেহারা দেখতে হবে যেন আমার মন মোমের মত নরম হয়ে গলে যায় একেবারে” জয় রানীর দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে হাসল ।
রানী এক মুহূর্তের জন্য নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো , তারপর নিজের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে নিয়ে আবার জয়ের দিকে ঘুরলো , কোন কিছু বোঝে না এমন ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল “ তা ওরকম একটা মুখ না খুজে এখানে কি করছো?”
“ দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া , কবির মত যেন আমাকেও আফসোস করতে না হয় তাই খোঁজা নিজের ঘর থেকে দু পা ফেলেই শুরু করলাম” জয় রানীর চোখে চোখ রেখে বলে । কিন্তু রানী সেই চোখের দিকে তাকায় না । নিজের নখের দিকে তাকিয়ে বলল “ তা পেলে কিছু , নাকি সাত সমুদ্র তেরো নদি পারি দিতে হবে”
“ সেটা নির্ভর করবে সেই মুখের উপর , যদি দয়া করে দর্শন দেয় , চোখে রাখে চোখ” জয় একটু কাছে এগিয়ে আসে
“ চোখে চোখ রাখলে কি হবে” রানীর নিঃশ্বাস ঘন হয় , গালে গরম আঁচ লাগে
“ কথা হবে চোখে চোখে , মনের দূরত্ব ঘুচবে”
রানী দ্রুত কাপড় তোলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে , যেন জয় ওর মুখ দেখতে না পারে । আর জয় রেলিঙে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ,
“ সখি তুমি মুখ তুলে চাইবে কবে ,
লজ্জা শরমের পর্দা খুলে ,
পিদিমের আলোয় তোমার কম্পিত ঠোঁট ,
কাজল টানা চোখ ,
সেখানে কার নাম লেখা ,
দেখবো আমি , যাবো হারিয়ে আপনাকে ভুলে”
রানী ওড়নার আড়ালে নিজের মুখ লুকায় , দাঁতে দাঁত চেপে হাসি থামায়। ও নিশ্চিত জয় এটা কারো কাছে শুনে মুখস্ত করেছে । তাপর জিজ্ঞাস করে “ আজকাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে কি এসব পড়াচ্ছে নাকি?”
“মনে যখন ঢেউ ওঠে , তখন কথা গুলো কবিতা হয়ে যায়” জয় আকাশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে বলে , মনে মনে নিজের ক্লাসের আঁতেল কবি কে ধন্যবাদ জানায় ।
“ ওহ তাই এটা কবিতা ছিলো?” অবাক হওয়ার ভান করে রানী
“ তোর কাছে কি মনে হয়?”
রানী জয়ের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে “ তা আমার প্রেমিক কবি এটা কোন ফরম্যাটে লেখা কবিতা?”
“ তোর উপর ত দেখছি এখনি টিচার এর আত্মা এসে ভর করেছে , শব্দ মালায় যখন আবেগ যুক্ত হয় , তখন সেটা কবিতা হয়ে যায় , কবিতার কোন ফরম্যাট দরকার পরে না , আবেগ কে কি ফরম্যাটে বাধা যায়” জয় হারার পাত্র নয় । বেশ সুন্দর করে হাজির জবাব দেয় ।
“ তাহলে কি সত্যি তুমি প্রেমিক দের লিডার হয়ে গেছো , আর প্রেমিক ব্রাদারহুড তৈরি করছো , সেখানে নাকি এক ভাই অন্য ভাইয়ের জন্য মরতেও প্রস্তুত” রানী ওড়নার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাস করলো
“ তোকে কে বলল”
“ভাইয়া”
“ তোর ভাইয়া কি বুঝবে , ওর মন তো পাথরের , প্রেমিকরা সব সময় মরেই থাকে , ওদের নতুন করে মরার কিছু নেই বুঝলি , আমার মনে হচ্ছে তোকে দ্রুত তোর ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে , নইলে এই পৃথিবী আরো একটা পাথর মনের মানুষ পাবে”
“ সেটা কিভাবে?” রানী অবাক হওয়ার ভান করে
“ সময় এলেই বুঝবি” জয় রহস্যময় হাসি হেসে বলে
এতক্ষনে রানীর কাপড় তোলা শেষ হয়ে গেছে । “ আমি গেলাম , তুমি থাকলে থাকো”
“ আরো কিছু কাপড় ছিলো না তোদের বাড়িতে?” জয় হতাশ হয়ে জিজ্ঞাস করে ,
“ সেগুলো কি তুমি ধুয়ে দিতে?” রানী চোখ রাঙ্গিয়ে বলে
“ তুই বললে দিতাম , জাস্ট একটা আওয়াজ দিবি , তুই আর আমি পানি সাবান আর সাবানের ফ্যানা , কেমন হবে বলতো”
রানীর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো জয়ের কথার অর্থ বুঝতে , যখন বুঝতে পারলো , লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেলো , দ্রুত নিচের দিকে নেমে যেতে লাগলো ।
জয় ও হাসতে হাসতে নিজেদের ছাদের দিকে হাটা দিলো , বিড়বিড় করে মুখস্ত করা কবিতা আওড়াতে লাগলো । ওর ঠোঁটে একটা দু কান ব্রিস্তিত হাসি ।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)