Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি) (সমাপ্ত গল্প)
#17
পর্ব:- ১৭ 



অনিচ্ছা সত্ত্বে বাসায় ফিরে এলেও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারেনি রামিশা। সে নিজের বোনের বাসায় না গিয়ে গতকাল রাতে সাজুর যে বন্ধুর বাসায় ছিল সেখানে গেল। তাকে সবকিছু বলতে পারলে সে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। নিজের বোনের বাসায় গেলে সেখানে বসে কিছু করতে পারবে না সে। 

লিয়াকত আলী বাসায় নেই। তার স্ত্রী সবকিছু শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসবেন্ডকে মোবাইল করলেন। তিনি এমনিতেই একটু পরে বাসায় আসবেন লাঞ্চ করার জন্য। তবুও তাকে কল দিয়ে জরুরি ভাবে ডাকা হয়েছে কারণ কোনো কাজে যদি আটকে যায় তাহলে নাও আসতে পারে। 

|
|

মাহিন এখন বসে আছে রেললাইনের পাশের এক বস্তিতে বন্ধ ঘরের মধ্যে। ছটকু নামের যে ছেলেটা তাকে আটকে রেখেছিল তাকে কৌশলে জখম করে এখানে বন্দী করেছে মাহিন। তার মোবাইল নিজের কাছে রেখেছিল আর সেখানেই একটা মেসেজ পেয়েছিল মাহিন। 
ছটকুর কাছে আসার কারণ হচ্ছে সাজুকে মারার ব্যবস্থা করে করেছে সেটা জিজ্ঞেস করা। মাহিন আরও একটা কথা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা হচ্ছে মাহিশার খুনি কে? 

মাহিশার বাবা নিজের মেয়েকে এভাবে কোনদিন খুন করাবেন না। যদি মেয়েকে মারার ইচ্ছে হতো তাহলে সেটা বাগেরহাটের মধ্যে করতে পারতো। শুধু শুধু ঢাকা শহরে নিয়ে আসার নিশ্চয়ই কারণ ছিল, কিন্তু সেই কারণটা কি? 
কে করেছে এই কাজ? 
মাহিন প্রতিজ্ঞা করেছে মাহিশার খুনের প্রতিশোধ না নিয়ে সে ছাড়বে না। দরকার হলে সম্পুর্ণ দলটা সে চূর্ণ বিচুর্ণ করে দেবে, এই দলের অনেক গোপন খবর সে জানে। 

স্বার্থ ছাড়া মানুষ কিছু করে না। নিজের দলের কাউকে দিয়ে তথ্য না পেয়ে মাহিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাজুকে ধরতে হবে। তাকে অনুসরণ করলেই সে জানতে পারবে আসল রহস্যের কথা। সাজু ভাই নিশ্চয়ই বের করবে, আর তারপর নাহয় নিজের কাজটা করবে মাহিন। 
তাই সাজুকে এই মুহূর্তে সাহায্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। চমৎকার একটা মানুষ, পছন্দের। 

ছটকু ছেলেটা পানি পানি বলে ফিসফিস করছে। 

- মাহিন বললো, আমাকে মারার জন্য তোকে কে বলেছিল, দাদাজান? 

- চুপচাপ। 

- একটা সময় আমাদের কতো ঘনিষ্ঠতা ছিল তাই না ছটকু? আর এখন পরিস্থিতি আলাদা, গতকাল তুই আমাকে খুন করতে চাইলি। আর আজকে আমি তোকে মারতে এসেছি, অদ্ভুত। 

- ওরা তোকে বাঁচতে দেবে না মাহিন। যদি বাঁচতে চাও তাহলে বর্ডার পেরিয়ে চলে যা, নাহলে অনেক বড় ভুল হবে। 

- লিডারের মেয়েকে খুন করেছে কে? আমি জানি তুই সবকিছু জানিস ছটকু, নাহলে আমাকে মারার দায়িত্ব তোকে দেওয়া হতো না। 
[ মাহিশার বাবাকে সবাই লিডার নামে চেনে আর মূল যিনি আছেন তাকে চেনে সবাই দাদাজান। ] 

- লিডারের মেয়ে আমি চিনি না মাহিন, তবে আমি শুনেছি তার মেয়ে খুন হয়েছে। আর কাজটা করেছে আমাদের দলের বাইরের কেউ, ভিতরের কেউ এমন কাজ করে নাই। 

- বাহিরের কারো এতসব কলিজা আছে? কীভাবে বাহির থেকে এসে লিডারের মেয়েকে খুন করার সাহস পাবে? 

- দেখ মাহিন, তোর সাথে লিডারের মেয়ে নিয়ে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে? নাহলে তুই লিডারের মেয়ে হত্যার বিষয় নিয়ে এতটা আগ্রহী কেন? 

- মাহিশা আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল ছটকু। 

- কিহহ? তারমানে এজন্যই তোকে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে? কিন্তু লিডার তার মেয়েকে বিয়ে দেবার আগে এটা করলো না কেন? 

- চুপ কর! আমাকে বল সাজুকে মারার জন্য ওই মেসেজ তোকে কে দিয়েছে? 

- চুপচাপ। 

মাহিন এবার ছটকুর মুখটা কসটেপ দিয়ে আটকে দিয়ে ছটকুর বাম হাতের একটা আঙ্গুলের মাথা কেটে দিল। গোঙানির মতো শব্দ করতে লাগলো ছটকু, মাহিন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। 
আরেকটু কাটার চেষ্টা করার আগেই ছটকু ইশারা দিয়ে বললো যে " সে সবকিছু বলবে। " 

★★

দাদাজান নামে পরিচিত ওই ব্যক্তির কাছে যাবার কোনো ইচ্ছে নেই রবিউলের। লোকটা তাকে দিয়ে কিছু অন্যায় কাজ করিয়ে নিয়েছে, এতে খুবই হতাশ হয়েছে সে। যদিও তার সবগুলো কাজই অন্যায়, কিন্তু তবুও সে যে নিয়ম মেনে চলে সেটা ভেঙ্গে গেল। 
আজিমপুর থেকে ফেরার পথে মংলা থেকে একটা কল এসেছে রবিউলের কাছে। তার নিজের নিযুক্ত করা সেই ইনফর্মার বলেছে, 

" দারোগা সাহেবের একটা মেয়ে আছে, সে ক্লাস সিক্সে পড়ে। দাদা-দাদির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে দারোগা সাহেবের মেয়ে। " 

রবিউল আপাতত নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে। যেভাবেই হোক আব্দুল কাদেরকে বাঁচাতে হবে, তাকে পুলিশের হাত থেকে বের করে আনতে হবে। 
আর সেজন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ওই দারোগা সাহেবের মেয়ে। 
আপাতত নিজের পারসোনাল নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে রবিউল। 

★★

দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে মাহিনের বাইক। একটু আগে সে বস্তিতে ছটকুকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু তার আগে সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য বের করতে পেরেছে। 
সাজু এখন সাদেকের হাতে বন্দী, ছটকু যখন জানালো যে সাদেক ও তাকে হুকুম করা হয়েছে সাজুকে মারার জন্য। তখন সঙ্গে সঙ্গে ছটকুর মোবাইল দিয়ে সাদেকের কাছে কল করে মাহিন। মাহিনের শেখানো সব প্রশ্ন করে ছটকু। আর তখন জানতে পারে সাদেক সাজুকে আটকে রেখেছে আর একটু পরে খুন করা হবে। 
কিন্তু কোথায় আটকে রেখেছে সেটা তারা বলে নাই। জোর করে জিজ্ঞেস করেও জানা যায়নি। 

মাহিন বারবার সাজুর নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু নাম্বার বন্ধ। টেনশনে বাইক ড্রাইভ করতে গিয়ে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলে। কোনরকমে পার হয়ে এসে সে এখন বসে আছে মিরপুরের দুই নাম্বারে, স্টেডিয়ামের পাশে। মাথা ঠান্ডা রেখে কিছু একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। 

পকেটে নিজের মোবাইল বেজে উঠলো মাহিনের। বের করে নতুন নাম্বার দেখে রিসিভ করে চুপ করে রইল। ওপাশ থেকে শুধু বললো, 

- স্যরি মাহিন। 

- মানে? কে আপনি? 

- আমি সচারাচর কাউকে স্যরি বলি না, তোমাকে বলতে ইচ্ছে করছিল তাই বললাম। আমি আসলে ভুল তথ্য জেনে মাহিশাকে কিডন্যাপ করে খুন করেছি। আমার উচিৎ ছিল একটু যাচাই করে তারপর কাজটা করা। স্যরি আবারও। 

- কি বললি তুই? কু*ত্তা*র বাচ্চা তুই আমার মাহিশাকে খুন করে আবার আমাকে কল দিয়ে স্যরি বলিস? 

- আমি ঠান্ডা মাথায় বলছি ভুল হয়েছে, প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা আমি জানি। বলতে পারো সেই শূন্যতা থেকেই কাজটা বেশি আগ্রহ নিয়ে করেছি। কিন্তু পরে জানলাম সবটাই উল্টো, যে আমাকে কাজটা দিয়েছে সে গাদ্দারি করেছে। 

- তোকে আর তোর সেই লোককে আমি নিজের হাতে মারবো। 

- আমাকে তুমি কোনদিনই পাবে না, তবে যিনি আমাকে কাজটা দিয়েছে তাকে আমি ঠিকই শাস্তি দেবো। তবে তার আগে আমাকে একটা কাজ করতে হবে তাই সেটা শেষ করতে যাচ্ছি। 

- শু*য়ো*রে*র বাচ্চা। 

- গালাগালি আমার একদম অপছন্দ, আচরণ তোমাকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। কাজটা আমি করতে পারতাম কিন্তু সামান্য রিস্ক আছে তাই তোমাকে দিচ্ছি। 

- তোর কাজ করবো আমি? 

- সকালে যার সঙ্গে তুমি রেস্টুরেন্টে দেখে করেছিলে সেই সাজু লোকটা তোমাদের দলের সাদেকের হাতে বন্দী। আমি একটা নাম্বার দিচ্ছি, সাজুর সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল এটা তার নাম্বার। তুমি শুধু তাকে কল দিয়ে বলবে সাজু প্রচুর বিপদের মধ্যে আছে। 

- সাজু ভাই বিপদে আছে আমিও জানি কিন্তু কোন যায়গা আছে সেটা বল তুই। 

কল কেটে দিয়েছে রবিউল। তাই শেষের কথা কিছু শুনতে পায়নি সে। একটু পরে মাহিনের ফোনে মেসেজে একটা নাম্বার এলো। 

মাহিনকে মেসেজ দিয়ে নাম্বারটা বন্ধ করে দিল রবিউল। রামিশার সঙ্গে গতকাল তার অনেক কথা হয়েছে তাই কণ্ঠ চিনে ফেলতে পারে। সেজন্য সকাল বেলা যেহেতু মাহিন তাদের সঙ্গে দেখা করেছে তাই তাকে দিয়েই কাজটা করে নিল। 
যদিও সে একটা মেসেজ দিয়ে জানাতে পারতো রামিশাকে। কিন্তু আজকাল সিম। কোম্পানির বিভিন্ন আজেবাজে মেসেজের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মেসেজ মানুষ চেক করে না। 

★★

সাজুকে এখানে নিয়ে আসার পর তার মোবাইল চালু ছিল। হঠাৎ করে একবার কল আসতেই সাদেক মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। 
মোবাইল হাতে নিয়ে চোখ উজ্জ্বল হয়ে যায় তার। কারণ কলটা এসেছে লন্ডন থেকে, সেভ করা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা সাজুর বাবার নাম্বার। 

অচেতন সাজুর হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে লকটা খুলে ফেলে সহজেই। তারপর কলটা নিজেই রিসিভ করে কথা বলে। 

- হ্যালো কে বলছেন? 

- আমি সাজুর বাবা, আপনি কে? সাজু কোথায়? 

- আপনি তো ঠিক সময়ে কল করেছেন, আপনার ছেলেকে একটু আগে আমরা কিডন্যাপ করেছি। 

- কি..? কিডন্যাপ? 

- হ্যাঁ কিডন্যাপ, আপনার একমাত্র সন্তানকে পেতে হলে ৬ ঘন্টার মধ্যে এক কোটি টাকা যোগাড় করুন। 

- কি বলছেন এসব? আমার ছেলে কোথায়? সে ঠিক আছে তো? 

- আপনার ছেলে তো মেয়ে নয় যে এতক্ষণে রেপ করে ফেলবো। সে ঠিক আছে, আপনি টাকার যোগাড় করুন আমি তিন ঘন্টা পরে আবার কল দিয়ে আপনার কাছে খবর নেবো। 

- আমি তো দেশের বাইরে, এতো টাকা। 

- আমি কিছু জানি না, সন্তানকে পেতে হলে টাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। 

কলটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেয় সাদেক। সে এমন কাজ অনেক করেছে, সবকিছু কীভাবে করা লাগে ভালো করেই জানে। 
সাদেক মোবাইল বন্ধ করে দেবার কারণে সাজুর নাম্বারে কেউ কল দিয়ে পায়নি। 

অনেকক্ষণ ধরে পাশের আরেকটা রুমে চুপচাপ বসে ছিল সাদেক। হঠাৎ করে তার সঙ্গী রুমের মধ্যে এসে বললো, 

- ভাই লোকটার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আর মুখ দিয়ে সাদা ফেনার মতো বের হচ্ছে। মেডিসিন বেশি হয়ে গেল নাকি? 

সাদেক তাড়াতাড়ি রুমে এসে দেখে সত্যি সত্যি সাজুর অবস্থা খারাপ। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আস্তে করে বললো, 

- শালা মইরা গেল নাকি?  

- ভাই কি করবেন এখন? 

- কি আর করবো? ওর বাপের কাছে কল দিয়ে টাকার কথা বলে দিছি। এখন মরে না গেলেও তাকে মারতে হবে, দেরি করার দরকার নেই। 

চলবে...

মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি) - by Bangla Golpo - 16-08-2025, 08:56 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)