14-08-2025, 07:54 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৪ (ক)
সন্ধার ঠিক আগে রানী আর রাজীব নিজেদের ছাদের উপর শুকাতে দেয়া কাপড় নিতে এসেছে । রাজীব একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে জয়ের সাথে ।
“ ভাইয়া তুই আজকে ভার্সিটিতে ছিলি না?” রানী রাগত স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ ছিলাম তো, কেনো কি হয়েছে ?” রাজীব বেশ অবাক হয় রানীর এই রাগত স্বরের কারনে
“ তুই জানিস না যে ভার্সিটিতে র্যাগিং হয় , তুই আমার জন্য অপেক্ষা করলি না কেনো?”
“ ওহ এই কথা “ রাজীব রানীর রাগের কারন জানতে পেরে একটু নির্ভার হলো । তারপর আবার বলল “আরে এই ভার্সিটিতে র্যাগ অত ভয়ঙ্কর কিছু না , সুধু হাক্লা মজা করা হয়, আর এসব ছোট ছোট ব্যাপার গুলই তো সারাজীবন মনে রাখার মতন হয় , যখন বুড়ি হবি তখন এসব ছোট ছোট ঘটনা গুলই তোর এই দিনগুলিকে বাঁচিয়ে রাখবে” রাজীব কথা গুলো বলে রানীর কাছে আসে , তারপর হেসে বলে , “ খুব রাগ করেছিস? তোর সাথে খুব বেশি কিছু করেছিলো নাকি?” রাজীব উৎকণ্ঠার সাথে জিজ্ঞাস করে
এবার রানী চুপ হয়ে যায় , মনে ভাবে রাজীব ঠিক ই বলছে , আজকের এই ঘটনা ও সারা জীবন মনে রাখবে , রানীর অজান্তেই ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে । গাল আর কানে গরম ভাপ এসে লাগে , চোখের সামনে জয়ের তখনকার মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে , তখ জয়ের কথা বলার স্টাইল , কেমন করে ওই ছেলে গুলো কে থ্রেট করলো , আবার সবাই কে সিঙ্গারা দেয়ার কথা বলে মানিয়ে ফেললো ,উফ……। এই সব কথা ভাবতে গিয়েও রানীর সমস্ত শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে । আর সেই ‘ I love u both’ রানী জানে জয় both না বলে too বলতে চেয়েছিলো ।
“ কিরে , কি হলো , তোর সাথে কি বেশি বেশি করেছে নাকি ? চুপ হয়ে গেলি যে?” রাজীব , রানীর এমন উদ্ভট আচরন দেখে , একটু অবাক ই হলো ,
“ না না তেমন কিছু না , ঠিক আছে যা তোকে এবারের জন্য মাফ করলাম” হাসতে হাসতে বলল রানী ,
“ ভার্সিটি লাইফ মানুষের জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ আর সুন্দর সময় , এই সময়টা উপভোগ কর , এই সময়ের সুন্দর সৃতি গুলোই ভবিষ্যতে চলার জন্য ফুয়েল হিশেবে কাজ করবে । এখন বড় হয়েছিস , নিজে নিজে সব কিছু ট্যাকল করা শিখবি , আর যখন না পারবি , তখন আমাকে ডাকবি , দেখবি আমি সারাক্ষণ তোর পাশেই ছিলাম।“
এমন সময় নিচ থেকে ডাক এলো , “ রাজীব , রাজীব , আমার ঔষধ আনার কথা ছিলো , এনেছিস বাবা”
“ ওহ হো , ভুলেই গেছি , এখন আবার সেই দূরে যেতে হবে , এখানে এই ঔষধ পাওয়া যায় না” রাজীব বিড়বিড় করতে করতে নেমে গেলো ।
রাজীব নেমে যাওয়ার পর , রানী আবার কল্পনায় আজকের সকালে চলে গেলো , চোখ ধরে রাখা মেয়েটি যখন চোখ ছেড়ে দিয়েছিলো তখনো রানী চোখ বন্ধ করেই রেখছিলো । চারপাশ থেকে সবাই চাপ দিচ্ছিলো বলার জন্য , কিন্তু রানীর মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছিলো না । মনে মনে সুধু ভাবছিলো , আশেপাশে যদি রাজীব থাকে, তাহলে ওকে বাঁচিয়ে দিতো ।
তার কয়েক মুহূর্ত পর ই রানী টের পেলো , কেউ একজন আলগোছে ওর হাত থেকে ফুলটি নিয়ে নিলো । আর বলল “I Love you both” রানীর সমস্ত শরীর কেপে উঠেছিলো , চোখ দুটো অল্প ফাক করে সামনে থাকা সুদর্শন ছেলেটি যে জয় সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর , রানীর সমস্ত শরীরে মনে ভালোলাগার নাতিশীতোষ্ণ বাতাস বয়ে গিয়েছিলো যেন । রানী সরাসরি জয়ের চোখের দিকে তাকায় নি , সেই শক্তি ওর ছিলো না । গেলো দুই বছরে এতোবার দুজনের দেখা হয়েছে , জয়ের চাহনিতে যে বাড়তি কিছু একটা আছে সেটা রানীর নারী সত্ত্বা ঠিক টের পেয়েছে । তখনো রানীর কাছে ব্যাপারটা এতো সিরিয়াস লাগেনি , হ্যা ভালো লাগতো , চোখাচোখি হলে যখন জয় রহস্যময় ভাবে হাসতো তখন রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত । কিন্তু আজ জয়ের মুখে ওই কথা গুলো শোনার পর রানী জয়ের দিকে তাকানোর সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলো । ভয় হচ্ছিলো যদি জয় ওর চোখের ভাষা বুঝে ফেলে । তাই রানী সরাসরি আজ তাকাতে পারেনি জয়ের দিকে ।
ছাদে দরিতে মেলে রাখা একটা ওড়না নিজের গালের সাথে চেপে ধরে রানী , মুখে লজ্জা মিশ্রিত হাসি , বলে “ ওখানে তো খুব হিরো সাজা হলো মিঃ জয় চৌধুরী , কিন্তু কোনদিন সামনে এসে কিছু তো বলার সাহস করলে না” । কথাটা বলেও রানী শান্তি পেলো না , মনে হতে লাগলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি জয় এসে এ ধরনের কিছু একটা বলে তাহলে রানী কি করবে ? তখন কি সামনে দাড়িয়ে থাকার শক্তি পাবে , নাকি আজকের মত সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকবে ।
রানী ভেবে পায় না কেনো এই ছেলেটিকে ওর এতো ভালো লাগে । ভালো লাগার কোন কোয়ালিটি নেই , আছে সুধু গুড লুক , আর হিরো গিরি । তা ছাড়া প্রায় রানী দেখছে জয় বহু মেয়েদের সাথে ফ্লারট করে । দেখছে আর মনে মনে জ্বলেছে । কিন্তু কখনোই জয়ের প্রতি ভালালাগা কমেনি রানীর । বরং একটা অধভুত ড্রাইভ ফিল করেছে । জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের ইচ্ছে হয়েছে বারবার । কিন্তু কোনদিন করে উঠতে পারেনি , নিজের লাজুক স্বভাবের জন্য ।
“ কিরে ওড়নার সাথে প্রেম করছিস নাকি আজকাল?”
চৌধুরী বাড়ি আর শিকদার বাড়ির মাঝে পাঁচ ফুটের দূরত্ব , কিন্তু একটা কোনে দূরত্ব কমে দু ফুটের মত হয়ে গেছে । জয় সেখানে একটা কাঠের তক্তা ফেলে দু ছাদের মাঝে আসা যাওয়া করতো , যখন শিকদাররা এই বাড়িতে না থাকতো । এই ছাদেই সকল গোপন কাজ করতো জয় , যেমন সিগারেট খাওয়া ধরার পর এখানে রাতের বেলা সিগারেট খেতো । কিন্তু গত দু বছরে ওই পথ আর ব্যাবহার করা হয়নি । দু বছর পর আজকে প্রথম ওই পথ ব্যাবহার করলো জয় । দুই ছাদের মাঝে ফেলা তক্তাটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে , তাও রিস্কটা নিলো জয় ।
আসলে দূর থেকেই রাজীব আর রানী কে লক্ষ করছিলো । হঠাত রাজীব বেড়িয়ে গেলো তারপর নিচ থেকে রাজীবের বাইক স্টার্ট নেয়ার শব্দ কানে এলে । জয়ের ইচ্ছে হলো রানীর সাথে কথা বলার , আজকে সকালের সেই দৃশ্য নিজের চোখের সামনে থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না জয় । বার বার ঘুরে ফিরে রানীর তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে । এরকম আর একবার হয়েছিলো । যেদিন রানীকে প্রথম বার নাচতে দেখচিলো ,প্রায় দুই বছর আগে । সেদিন জয় মন্ত্র মুগ্ধের মত দেখছিলো । রানীর প্রত্যেকটা নড়াচড়া সেদিন ওকে এমন বিমহিত করেছিলো যে , বেশ অনেকক্ষণ মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছিলো না ।
আজ আবার সে রকম কিছু একটা হলো । এমন নয় যে রানীর সাথে ওর দেখা হয় না । রোজ কম করে হলেও একবার দেখা হয় । জয়দের বাড়িতে যেমন রানীর অবাধ যাতায়াত তেমনি রানীদের বারিতেও জয়ের আনাগোনা লেগেই থাকে । তা ছাড়া ঈদে উৎসবে সব সময় এক সাথেই থাকে দু পরিবার । হারদম দেখা হচ্ছে দুজনের , তবে একটা ব্যাপার সত্যি যখনি দেখা হয় , জয়ের কাছে ভালই লাগে । কিন্তু এ পর্যন্ত জয় কোনদিন রানীকে গার্ল ফ্রেন্ড হিশেবে কল্পনা করেনি । আজো যে করছে এমন নয় । কিন্তু আজকে সকালে র্যাগিংএর সময় দেখা মুখটা জয় কে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে । ভয় মিশ্রিত লজ্জাবনত চোখ বন্ধ মুখখানা জয় কে সত্যি একটা ধাক্কার মত দিয়েছিলো । রানীর কম্পমান অধর জোড়া জয়ের হৃদপিণ্ডের গতি কিছু সময়ের জন্য হলেও বাড়িয়ে দিয়েছিলো । আজ পর্যন্ত এতে মেয়ের চোখে চোখ রেখেছে , চুম্বন করেছে অনেকের ঠোঁটে , তাদের মাঝে এমন অনেক ছিলো , একবার দেখা হওয়ার পর কোনদিন আর দেখা হয়নি । কিন্তু একটা খুব পরিচিত মেয়ের কম্পন রত ঠোঁট দেখে যে মনে এমন তৃষ্ণা জাগবে সেটা জয়ের জানা ছিলো না । জয়ের ইচ্ছে হচ্ছিলো আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সেই ঠোঁট জোড়ার দিকে।
যখন চোখ তুলে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে নামিয়ে ফেললো , তখন জয়ের মনে হয়েছিলো । ওই চোখ জোড়ায় লেখা আছে ওর সর্বনাশ । জয় জানে আজকের পর থেকে আর ও রানীর দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতে পারবে না । ও চাইলে পারবে না , কারন যখনি তাকাবে আজকের সকালের ছবি ভেসে উঠবে ওর চোখের সামনে । সেই সাথে প্রচণ্ড একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে , অনেক দিনের পরিচিত এই মেয়েটিকে নতুন করে চেনার । আজ মনে হয়েছে এতো দিনের পরিচয় অথচ এই মেয়েটিকে ও ভালো করে চেনেই না । রানীর এই অপরিচিত দিকটা এতদিন ওর কাছে ওদেখা রয়ে গিয়েছিলো ।
“ তু তু তু তুমি , এখানে এলে কখন” হড়বরিয়ে গালো রানী , যাকে নিয়ে এতক্ষণ কল্পনা করছিলো সে ভোজবাজীর মত হাজির হবে , রানী এটা কল্পনায় ও ভাবেনি ।
“ যখন তুই ওড়নার সাথে রোমান্স করছিলো , তখন” জয় পূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে নিজের স্বভাবজাত মিচকে হাসি টেনে বলে ।
রানী দ্রুত ওড়না থেকে হাত সরিয়ে নেয় , দ্রুত বুক ওঠানামা করছে ওর , ভাবছে জয় কিছু শুনে ফেললো নাকি , কিন্তু অতি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো , বলল “ আমি দেখছিলাম ওড়না শুকিয়েছে নাকি, তোমার তো সব কিছুতেই রোমান্টিকতা চোখে পরে সারাক্ষণ এই তালেই থাকো কিনা ” কথা গুলো বলার সময় রানী নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখালো , যেন জয় ওর এক্সপ্রেশন না দেখে ফেলে ।
“ আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেনো রে , তোর কাপড় শুকিয়েছে কিনা সেটা দেখার ভঙ্গিও যদি এমন রোমান্টিক হয় , তাতে আমার এই বেচারা মনের কি দোষ বল” কথা গুলো বলতে বলতে জয় আরো কিছুটা কাছে চলে আসে । ইচ্ছে রানীর মুখটা আরো একটু ভালো করে দেখা । আজ সকালে ভার্সিটি গেটে সেই লজ্জা রাঙ্গা অবনমিত মুখ খানা আর কম্পতি অধর জোড়া দেখার পর , জয় স্থির হয়ে থাকতে পারছে না । বার বার সুধু ওই মুখ দেখার বাহানা খুজছে ওর মন ।
এদিকে জয়ের “বেচারা মন” বলার ভঙ্গি রানীকে ফিক করে একটু হেসে ফেলতে বাধ্য করে । কোন রকমে সেই হাসি লুকিয়ে , জয়ের দিকে তাকায় , তাকিয়েই বোঝে ভুল করে ফেলেছে । কারন জয়ের চোখ জোড়া প্রস্তুত ছিলো , রানী তাকাতেই জয়ের চোখ রানীর চোখ দুটো কে কয়েদ করে ফেলে নিজেদের দৃষ্টিতে । কয়েক মুহূর্ত এভাবেই চলে যায় ।
পুব আকাশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে , অস্তমিত সূর্যের কিছু লালিমা এখনো মেঘেদের শরীরে নিজেদের মাখিয়ে রেখেছে । সন্ধার নিলচে আধারের সাথে সেই লালি মিলে মিশে অপার্থিব এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে , যার মাঝে দাড়িয়ে আছে রানী আর জয়। এতটা কাছে নয় যে একজন আরেকজনের নিশ্বাসের উষ্ণতা ছুঁতে পারবে , আবার এতটা দুরেও নয় যে একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে পারবে না । কিন্তু ধিরে ধিরে খুব অল্প করে সেই দূরত্ব ঘুচে আসছিলো । দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো যেন দুজন কে কোন অদৃশ্য শক্তি একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো ।
সুধু নড়াচড়া করছিলো না ওদের দু জোড়া চোখ , দুজনের চোখের ভাষা একি , সেখানে রয়েছে কিছু চাওয়া । এক জোড়ায় রিয়েছে কিছু বলতে চাওয়ার ছটফটানি , অন্য জোড়ায় কিছু শুনতে চাওয়ার আকুলতা ।
“ রানী ……… মা তোর কাপড় তোলা হলো , এক কাপ চা ভালো হয়”
দ্রুত দুজন দুজনের চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় , রানী উঁচু স্বরে বলে ‘ এই তো আসছি বাবা” রানীর বুক ধরফর করছে তখনো । রানীর কাছে হঠাত মনে হয় কি করতে যাচ্ছিলো ও একটু আগে ।
তারপর জয়ের দিকে তাকায় , জয় তখনো দাড়িয়ে আছে , মুখে হাসি , যার অর্থ দাড়ায় , আমি আবার আসবো ,
ধিরে ধিরে জয় যেদিক থেকে এসেছিলো ওদিক দিয়েই চলে যায় ।
রানী তখনো ঘোরের মাঝেই রয়ে গেছে , দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস চলছে ওর । কি হতো যদি বাবা আর একটু পর ডাক দিতো । সত্যি সত্যি কি হতো …… ভাবতেই রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে । আজ প্রথম জয়ের চোখে ও এমন কিছু দেখছে যা দেখার জন্য ও অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করছে ।
কিন্তু সেই সাথে একটা ভয় ও আঁকড়ে ধরে ওকে । জয় খুব কেয়ার ফ্রি ছেলে , কোন কিছুই সিরিয়াসলি নেয় না । একটু আগে জয়ের দৃষ্টিতে যে আবেগ ও দেখছে , তার স্থায়িত্ব কতদিন হবে তা নিয়ে রানীর সন্দেহ রয়েছে ।
******
সন্ধার ঠিক আগে রানী আর রাজীব নিজেদের ছাদের উপর শুকাতে দেয়া কাপড় নিতে এসেছে । রাজীব একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে জয়ের সাথে ।
“ ভাইয়া তুই আজকে ভার্সিটিতে ছিলি না?” রানী রাগত স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ ছিলাম তো, কেনো কি হয়েছে ?” রাজীব বেশ অবাক হয় রানীর এই রাগত স্বরের কারনে
“ তুই জানিস না যে ভার্সিটিতে র্যাগিং হয় , তুই আমার জন্য অপেক্ষা করলি না কেনো?”
“ ওহ এই কথা “ রাজীব রানীর রাগের কারন জানতে পেরে একটু নির্ভার হলো । তারপর আবার বলল “আরে এই ভার্সিটিতে র্যাগ অত ভয়ঙ্কর কিছু না , সুধু হাক্লা মজা করা হয়, আর এসব ছোট ছোট ব্যাপার গুলই তো সারাজীবন মনে রাখার মতন হয় , যখন বুড়ি হবি তখন এসব ছোট ছোট ঘটনা গুলই তোর এই দিনগুলিকে বাঁচিয়ে রাখবে” রাজীব কথা গুলো বলে রানীর কাছে আসে , তারপর হেসে বলে , “ খুব রাগ করেছিস? তোর সাথে খুব বেশি কিছু করেছিলো নাকি?” রাজীব উৎকণ্ঠার সাথে জিজ্ঞাস করে
এবার রানী চুপ হয়ে যায় , মনে ভাবে রাজীব ঠিক ই বলছে , আজকের এই ঘটনা ও সারা জীবন মনে রাখবে , রানীর অজান্তেই ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে । গাল আর কানে গরম ভাপ এসে লাগে , চোখের সামনে জয়ের তখনকার মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে , তখ জয়ের কথা বলার স্টাইল , কেমন করে ওই ছেলে গুলো কে থ্রেট করলো , আবার সবাই কে সিঙ্গারা দেয়ার কথা বলে মানিয়ে ফেললো ,উফ……। এই সব কথা ভাবতে গিয়েও রানীর সমস্ত শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে । আর সেই ‘ I love u both’ রানী জানে জয় both না বলে too বলতে চেয়েছিলো ।
“ কিরে , কি হলো , তোর সাথে কি বেশি বেশি করেছে নাকি ? চুপ হয়ে গেলি যে?” রাজীব , রানীর এমন উদ্ভট আচরন দেখে , একটু অবাক ই হলো ,
“ না না তেমন কিছু না , ঠিক আছে যা তোকে এবারের জন্য মাফ করলাম” হাসতে হাসতে বলল রানী ,
“ ভার্সিটি লাইফ মানুষের জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ আর সুন্দর সময় , এই সময়টা উপভোগ কর , এই সময়ের সুন্দর সৃতি গুলোই ভবিষ্যতে চলার জন্য ফুয়েল হিশেবে কাজ করবে । এখন বড় হয়েছিস , নিজে নিজে সব কিছু ট্যাকল করা শিখবি , আর যখন না পারবি , তখন আমাকে ডাকবি , দেখবি আমি সারাক্ষণ তোর পাশেই ছিলাম।“
এমন সময় নিচ থেকে ডাক এলো , “ রাজীব , রাজীব , আমার ঔষধ আনার কথা ছিলো , এনেছিস বাবা”
“ ওহ হো , ভুলেই গেছি , এখন আবার সেই দূরে যেতে হবে , এখানে এই ঔষধ পাওয়া যায় না” রাজীব বিড়বিড় করতে করতে নেমে গেলো ।
রাজীব নেমে যাওয়ার পর , রানী আবার কল্পনায় আজকের সকালে চলে গেলো , চোখ ধরে রাখা মেয়েটি যখন চোখ ছেড়ে দিয়েছিলো তখনো রানী চোখ বন্ধ করেই রেখছিলো । চারপাশ থেকে সবাই চাপ দিচ্ছিলো বলার জন্য , কিন্তু রানীর মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছিলো না । মনে মনে সুধু ভাবছিলো , আশেপাশে যদি রাজীব থাকে, তাহলে ওকে বাঁচিয়ে দিতো ।
তার কয়েক মুহূর্ত পর ই রানী টের পেলো , কেউ একজন আলগোছে ওর হাত থেকে ফুলটি নিয়ে নিলো । আর বলল “I Love you both” রানীর সমস্ত শরীর কেপে উঠেছিলো , চোখ দুটো অল্প ফাক করে সামনে থাকা সুদর্শন ছেলেটি যে জয় সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর , রানীর সমস্ত শরীরে মনে ভালোলাগার নাতিশীতোষ্ণ বাতাস বয়ে গিয়েছিলো যেন । রানী সরাসরি জয়ের চোখের দিকে তাকায় নি , সেই শক্তি ওর ছিলো না । গেলো দুই বছরে এতোবার দুজনের দেখা হয়েছে , জয়ের চাহনিতে যে বাড়তি কিছু একটা আছে সেটা রানীর নারী সত্ত্বা ঠিক টের পেয়েছে । তখনো রানীর কাছে ব্যাপারটা এতো সিরিয়াস লাগেনি , হ্যা ভালো লাগতো , চোখাচোখি হলে যখন জয় রহস্যময় ভাবে হাসতো তখন রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত । কিন্তু আজ জয়ের মুখে ওই কথা গুলো শোনার পর রানী জয়ের দিকে তাকানোর সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলো । ভয় হচ্ছিলো যদি জয় ওর চোখের ভাষা বুঝে ফেলে । তাই রানী সরাসরি আজ তাকাতে পারেনি জয়ের দিকে ।
ছাদে দরিতে মেলে রাখা একটা ওড়না নিজের গালের সাথে চেপে ধরে রানী , মুখে লজ্জা মিশ্রিত হাসি , বলে “ ওখানে তো খুব হিরো সাজা হলো মিঃ জয় চৌধুরী , কিন্তু কোনদিন সামনে এসে কিছু তো বলার সাহস করলে না” । কথাটা বলেও রানী শান্তি পেলো না , মনে হতে লাগলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি জয় এসে এ ধরনের কিছু একটা বলে তাহলে রানী কি করবে ? তখন কি সামনে দাড়িয়ে থাকার শক্তি পাবে , নাকি আজকের মত সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকবে ।
রানী ভেবে পায় না কেনো এই ছেলেটিকে ওর এতো ভালো লাগে । ভালো লাগার কোন কোয়ালিটি নেই , আছে সুধু গুড লুক , আর হিরো গিরি । তা ছাড়া প্রায় রানী দেখছে জয় বহু মেয়েদের সাথে ফ্লারট করে । দেখছে আর মনে মনে জ্বলেছে । কিন্তু কখনোই জয়ের প্রতি ভালালাগা কমেনি রানীর । বরং একটা অধভুত ড্রাইভ ফিল করেছে । জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের ইচ্ছে হয়েছে বারবার । কিন্তু কোনদিন করে উঠতে পারেনি , নিজের লাজুক স্বভাবের জন্য ।
“ কিরে ওড়নার সাথে প্রেম করছিস নাকি আজকাল?”
চৌধুরী বাড়ি আর শিকদার বাড়ির মাঝে পাঁচ ফুটের দূরত্ব , কিন্তু একটা কোনে দূরত্ব কমে দু ফুটের মত হয়ে গেছে । জয় সেখানে একটা কাঠের তক্তা ফেলে দু ছাদের মাঝে আসা যাওয়া করতো , যখন শিকদাররা এই বাড়িতে না থাকতো । এই ছাদেই সকল গোপন কাজ করতো জয় , যেমন সিগারেট খাওয়া ধরার পর এখানে রাতের বেলা সিগারেট খেতো । কিন্তু গত দু বছরে ওই পথ আর ব্যাবহার করা হয়নি । দু বছর পর আজকে প্রথম ওই পথ ব্যাবহার করলো জয় । দুই ছাদের মাঝে ফেলা তক্তাটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে , তাও রিস্কটা নিলো জয় ।
আসলে দূর থেকেই রাজীব আর রানী কে লক্ষ করছিলো । হঠাত রাজীব বেড়িয়ে গেলো তারপর নিচ থেকে রাজীবের বাইক স্টার্ট নেয়ার শব্দ কানে এলে । জয়ের ইচ্ছে হলো রানীর সাথে কথা বলার , আজকে সকালের সেই দৃশ্য নিজের চোখের সামনে থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না জয় । বার বার ঘুরে ফিরে রানীর তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে । এরকম আর একবার হয়েছিলো । যেদিন রানীকে প্রথম বার নাচতে দেখচিলো ,প্রায় দুই বছর আগে । সেদিন জয় মন্ত্র মুগ্ধের মত দেখছিলো । রানীর প্রত্যেকটা নড়াচড়া সেদিন ওকে এমন বিমহিত করেছিলো যে , বেশ অনেকক্ষণ মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছিলো না ।
আজ আবার সে রকম কিছু একটা হলো । এমন নয় যে রানীর সাথে ওর দেখা হয় না । রোজ কম করে হলেও একবার দেখা হয় । জয়দের বাড়িতে যেমন রানীর অবাধ যাতায়াত তেমনি রানীদের বারিতেও জয়ের আনাগোনা লেগেই থাকে । তা ছাড়া ঈদে উৎসবে সব সময় এক সাথেই থাকে দু পরিবার । হারদম দেখা হচ্ছে দুজনের , তবে একটা ব্যাপার সত্যি যখনি দেখা হয় , জয়ের কাছে ভালই লাগে । কিন্তু এ পর্যন্ত জয় কোনদিন রানীকে গার্ল ফ্রেন্ড হিশেবে কল্পনা করেনি । আজো যে করছে এমন নয় । কিন্তু আজকে সকালে র্যাগিংএর সময় দেখা মুখটা জয় কে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে । ভয় মিশ্রিত লজ্জাবনত চোখ বন্ধ মুখখানা জয় কে সত্যি একটা ধাক্কার মত দিয়েছিলো । রানীর কম্পমান অধর জোড়া জয়ের হৃদপিণ্ডের গতি কিছু সময়ের জন্য হলেও বাড়িয়ে দিয়েছিলো । আজ পর্যন্ত এতে মেয়ের চোখে চোখ রেখেছে , চুম্বন করেছে অনেকের ঠোঁটে , তাদের মাঝে এমন অনেক ছিলো , একবার দেখা হওয়ার পর কোনদিন আর দেখা হয়নি । কিন্তু একটা খুব পরিচিত মেয়ের কম্পন রত ঠোঁট দেখে যে মনে এমন তৃষ্ণা জাগবে সেটা জয়ের জানা ছিলো না । জয়ের ইচ্ছে হচ্ছিলো আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সেই ঠোঁট জোড়ার দিকে।
যখন চোখ তুলে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে নামিয়ে ফেললো , তখন জয়ের মনে হয়েছিলো । ওই চোখ জোড়ায় লেখা আছে ওর সর্বনাশ । জয় জানে আজকের পর থেকে আর ও রানীর দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতে পারবে না । ও চাইলে পারবে না , কারন যখনি তাকাবে আজকের সকালের ছবি ভেসে উঠবে ওর চোখের সামনে । সেই সাথে প্রচণ্ড একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে , অনেক দিনের পরিচিত এই মেয়েটিকে নতুন করে চেনার । আজ মনে হয়েছে এতো দিনের পরিচয় অথচ এই মেয়েটিকে ও ভালো করে চেনেই না । রানীর এই অপরিচিত দিকটা এতদিন ওর কাছে ওদেখা রয়ে গিয়েছিলো ।
“ তু তু তু তুমি , এখানে এলে কখন” হড়বরিয়ে গালো রানী , যাকে নিয়ে এতক্ষণ কল্পনা করছিলো সে ভোজবাজীর মত হাজির হবে , রানী এটা কল্পনায় ও ভাবেনি ।
“ যখন তুই ওড়নার সাথে রোমান্স করছিলো , তখন” জয় পূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে নিজের স্বভাবজাত মিচকে হাসি টেনে বলে ।
রানী দ্রুত ওড়না থেকে হাত সরিয়ে নেয় , দ্রুত বুক ওঠানামা করছে ওর , ভাবছে জয় কিছু শুনে ফেললো নাকি , কিন্তু অতি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো , বলল “ আমি দেখছিলাম ওড়না শুকিয়েছে নাকি, তোমার তো সব কিছুতেই রোমান্টিকতা চোখে পরে সারাক্ষণ এই তালেই থাকো কিনা ” কথা গুলো বলার সময় রানী নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখালো , যেন জয় ওর এক্সপ্রেশন না দেখে ফেলে ।
“ আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেনো রে , তোর কাপড় শুকিয়েছে কিনা সেটা দেখার ভঙ্গিও যদি এমন রোমান্টিক হয় , তাতে আমার এই বেচারা মনের কি দোষ বল” কথা গুলো বলতে বলতে জয় আরো কিছুটা কাছে চলে আসে । ইচ্ছে রানীর মুখটা আরো একটু ভালো করে দেখা । আজ সকালে ভার্সিটি গেটে সেই লজ্জা রাঙ্গা অবনমিত মুখ খানা আর কম্পতি অধর জোড়া দেখার পর , জয় স্থির হয়ে থাকতে পারছে না । বার বার সুধু ওই মুখ দেখার বাহানা খুজছে ওর মন ।
এদিকে জয়ের “বেচারা মন” বলার ভঙ্গি রানীকে ফিক করে একটু হেসে ফেলতে বাধ্য করে । কোন রকমে সেই হাসি লুকিয়ে , জয়ের দিকে তাকায় , তাকিয়েই বোঝে ভুল করে ফেলেছে । কারন জয়ের চোখ জোড়া প্রস্তুত ছিলো , রানী তাকাতেই জয়ের চোখ রানীর চোখ দুটো কে কয়েদ করে ফেলে নিজেদের দৃষ্টিতে । কয়েক মুহূর্ত এভাবেই চলে যায় ।
পুব আকাশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে , অস্তমিত সূর্যের কিছু লালিমা এখনো মেঘেদের শরীরে নিজেদের মাখিয়ে রেখেছে । সন্ধার নিলচে আধারের সাথে সেই লালি মিলে মিশে অপার্থিব এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে , যার মাঝে দাড়িয়ে আছে রানী আর জয়। এতটা কাছে নয় যে একজন আরেকজনের নিশ্বাসের উষ্ণতা ছুঁতে পারবে , আবার এতটা দুরেও নয় যে একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে পারবে না । কিন্তু ধিরে ধিরে খুব অল্প করে সেই দূরত্ব ঘুচে আসছিলো । দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো যেন দুজন কে কোন অদৃশ্য শক্তি একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো ।
সুধু নড়াচড়া করছিলো না ওদের দু জোড়া চোখ , দুজনের চোখের ভাষা একি , সেখানে রয়েছে কিছু চাওয়া । এক জোড়ায় রিয়েছে কিছু বলতে চাওয়ার ছটফটানি , অন্য জোড়ায় কিছু শুনতে চাওয়ার আকুলতা ।
“ রানী ……… মা তোর কাপড় তোলা হলো , এক কাপ চা ভালো হয়”
দ্রুত দুজন দুজনের চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় , রানী উঁচু স্বরে বলে ‘ এই তো আসছি বাবা” রানীর বুক ধরফর করছে তখনো । রানীর কাছে হঠাত মনে হয় কি করতে যাচ্ছিলো ও একটু আগে ।
তারপর জয়ের দিকে তাকায় , জয় তখনো দাড়িয়ে আছে , মুখে হাসি , যার অর্থ দাড়ায় , আমি আবার আসবো ,
ধিরে ধিরে জয় যেদিক থেকে এসেছিলো ওদিক দিয়েই চলে যায় ।
রানী তখনো ঘোরের মাঝেই রয়ে গেছে , দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস চলছে ওর । কি হতো যদি বাবা আর একটু পর ডাক দিতো । সত্যি সত্যি কি হতো …… ভাবতেই রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে । আজ প্রথম জয়ের চোখে ও এমন কিছু দেখছে যা দেখার জন্য ও অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করছে ।
কিন্তু সেই সাথে একটা ভয় ও আঁকড়ে ধরে ওকে । জয় খুব কেয়ার ফ্রি ছেলে , কোন কিছুই সিরিয়াসলি নেয় না । একটু আগে জয়ের দৃষ্টিতে যে আবেগ ও দেখছে , তার স্থায়িত্ব কতদিন হবে তা নিয়ে রানীর সন্দেহ রয়েছে ।
******
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)