Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#23
কিছু সম্পর্কঃ  ৩ (ক) 



পরদিন সকালে ;
 
জান্নাত আর জয় গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে , জয় নিচু হয়ে নিজের বাইক পর্যবেক্ষণ করছে । আর জান্নাত বার বার জয় কে কাল রাতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে খোঁটা দিচ্ছে ।
 
“  ভাইয়া তুই কালকে রাতে বললি যে তোর বাইক তোকে হতাস করে না , এখন কি হলো , আমার পরিক্ষা শেষে কি তোর বাইক ঠিক হবে?”
 
“ আরে আমার বাইক ও মানুষ চেনে , ও বুঝে গেছে আজ ওর উপর কে উঠবে , তাই ভান ধরেছে নষ্ট হওয়ার, দশ মিনিট একটু চুপ করে থাক , আমি কথা বলে দেখি তোকে নেয়ার জন্য রাজি করাতে পারি কিনা” জয় বাইকের কিছু তার পরিক্ষা করতে করতে বলল ।
 
“ আমার এতো সখ নাই তোর এই ফালতু বাইকে ওঠার রাস্তায় জ্যাম থাকে তাই পরিক্ষায় লেট না হওয়ার জন্য আজকে যাবো ভেবছিলাম , কিন্তু মনে হচ্চে ভরসা করা ঠিক হয় নাই” জান্নাত ভেংচি কেটে বলল
 
“ আহা চুপ তো করবি”
 
এমন সময় রাজীব নিজের বাইক নিয়ে বেড়িয়ে এলো , পেছনে রানী বসে , সেটা দেখে জান্নাত আরো  ক্ষেপে গেলো ,
 
“ ওই দেখ রাজীব কেমন রানী কে নিয়ে রওনা হয়ে গেছে , একে বলে ভাই , যে ছোট বোনের সব খেয়াল রাখে , আর তুই যেমন তোর বাইক ও তেমন”
 
জয় অবশ্য জান্নাতের কথায় তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না , ও তাকিয়ে আছে রানীর দিকে , একটা সাদা সালোয়ার স্যুট পড়েছে রানী , চুল গুলো খোলা , চোখে হলকা কাজল আর ঠোঁটে হ্লাকা কিছু একটা মেখেছে । এতেই চোখ ফেরানো দ্বায় হয়ে দাঁড়িয়েছে জয়ের জন্য । সেই রাতে রানীর নাচ এখনো মনের মাঝে তাজা হয়ে আছে । না কোনদিন বলে নি কিছু , নিজের মাঝেই চেপে রেখছে । কিন্তু যখনি রানী সামনে আসে , সব কিছু কেমন জানি হয়ে যায় জয়ের । এদিকে রানী বাইক থেকে ওদের দিকেই হেটে আসছে , রানী হেটে আসার দৃশ্যটা জয়ের কাছে স্লো মোশানের মনে হচ্ছে , ।
 
“এই ভাইয়া তোর হলো” ভাই কে রানীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়া দেয় জান্নাত 
 
জয় দ্রুত নিজের নজর সরিয়ে নেয় , বলে “ আর পাঁচ মিনিট”
 
“ তার আর দরকার হবে না” রানী মুচকি হেসে বলে ,  রানীর কথা শুনে জয় আবার উপরে চোখ তুলে তাকায় । দুজনের চোখ একত্র হয় । জয় ও হালকা হাসি টেনে আনে নিজের ঠোঁটে ।
 
“ জান্নাত তুই আমাদের সাথে চল” রানী নিজের দৃষ্টি জান্নাতের দিকে ঘুরিয়ে নেয় । তারপর বড় আব্বু আর বড় আম্মুর কাছে দোয়া নেয়ার জন্য বাড়ির ভেতর ঢুকে যায় রানী  ।
 
 
রানী বাড়ির ভেতরে ঢুকে প্রথমে জয়নাল কে সালাম করে , তারপর আয়শা কে । আয়শা রানীকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দেয় । বলে “ যাও মা ভালো করে পরিক্ষা দাও”
 
বড় আব্বু আর বড় আম্মুর দোয়া নেয়া শেষে রানী বেড়িয়ে আসে । জয় তখনো নিজের বাইক নিয়ে বিজি ।
 
জান্নাত কে আর দ্বিতীয়বার বলতে হয় না , যেহেতু জান্নাত জিন্স পরে ছিলো তাই রাজীবের পেছনে জান্নাত বসে , তারপর রানী দু পা এক পাশে রেখে বসে । সালোয়ার স্যুটে পা দুপাশে রেখে বসা বেশ কষ্ট সাদ্ধ । জান্নাত রাজীবের পেছনে বসে নিজের একটা হাত রাজীবের কাধে রাখে । ওর মুখে একটা অন্যরকম হাসি খেলে যায় রাজীবের কাধে হাত রাখার সময় । এদিকে রাজীব নিজের চেহারা নিরলিপ্ত রাখলেও , জান্নাতের হাতের ছোঁয়া অন্য ধরনের একটা অনুভূতি দেয় ওকে।
 
“ সবাই ঠিক মত বসেছিস” রাজীব নিজের দৃষ্টি রাস্তার দিকে রেখেই জিজ্ঞাস করে ।
 
“ আমি ঠিক আছি” জান্নাত নিজের হতের গ্রিপ একটু শক্ত করে বলে ,
 
রানী উত্তর আসে বেশ দেরি করে , তাও সুধু ছোট্ট করে বলে “হু” বলার সময়ও ওর দৃষ্টি জয়ের দিকে নিবদ্ধ ।
 
“ ওকে জয় গেলাম আমরা তুই তোর গার্ল ফ্রেন্ডকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক কর ” রাজীব বাইক স্টার্ট করে , হলকা একটু ঝাকুনিতে জান্নাত আরো একটু এগিয়ে যায় রাজীবের দিকে, এর ফলে জান্নাতের গালে হালকা লালিমা দেখা দেয় । তবে দেখার কেউ থাকে না , কারন রানী তখনো জয়ের দিকে তাকিয়ে। শেষ বারের মত একটা মিষ্টি হাসি তে বিদায় জানাচ্ছে জয় কে ।
 
জয় ও যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের দেখা যায় ততক্ষন পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে ।
 
****
 
খূব সখ করে রাজীবের পেছনে বাইকে উঠেছিলো জান্নাত , কিন্তু এখন খুব লজ্জা হচ্ছে । প্রতিটা গর্ত প্রতিটা স্পিড  ব্রেকার যেন ওর সাথে চরম বেইমানি করছে । যদিও রাজীব বেশ দেখে শুনে বাইক চালাচ্ছে , তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা । বিশেষ করে হতচ্ছাড়া  রানী পেছনে থকায় আরো বেশি করে রাজীবের পিঠের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে জান্নাতের বুক । জান্নাতের ইচ্ছে হচ্ছে এখনি বাইক থেকে নেমে যায় । কিন্তু সেটা করলে একটা অহেতুক সিন করা হবে , আর রাজীব কেও একটা অপমান করা হবে যা ওর প্রাপ্য নয় । তাও বাচা যে ব্রা আছে , নইলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকতো না । যদিও একটা গিল্টি মেশানো ভালো লাগাও মনের কোনে চুপটি করে বসে হাসছে । আর মন কে বোঝাচ্ছে , পরিস্থিতি যদি ভিন্ন হতো তাহলে হয়তো জান্নাত মন খুলে এই ছোঁয়ার আনন্দ নিতে পারতো ।
 
এদিকে রাজীব ও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে এমন নয় । সমস্ত মনোযোগ একত্রিত করে বাইক মনে হয় এই ছোট জীবনে কোনদিন চালায়নি ও । যদিও মন বলছে হোক না একটু , কিন্তু মস্তিস্ক বলছে না , এই ধরনের ব্যাবহার জান্নাত প্রাপ্য নয় । একে তো বন্ধু জয়ের ছোট বোন , তার চেয়েও বড় কথা জান্নাত খুব মিষ্টি মেয়ে আর ভালো মনের একজন মানুষ । সব সময় রানী আর ওর পাশে থাকে , যে কোন প্রয়োজনে । তাই জান্নাতের মত একজন মানুষ এমন  অপমানকর ট্রিট্মেন্টের যোগ্য নয় । রাজীব দাতে দাঁত পিষে নিজেকে তাই সম্পূর্ণ রুপে নিরলিপ্ত করে রেখছে । নিজের সমস্ত মনোযোগ রাস্তার উপর নিবদ্ধ করে রেখেছে ,  সত্যি যদি বলতে হয় , বলতে হবে করার চেষ্টা করছে । আসলে প্রতিটি ছোঁয়া রাজীব  হৃদয় দিয়ে অনুভব করছে , যদিও রাজীব নিজের কাছেই তা অস্বীকার করছে , ডাহা মিথ্যুকের মত ।
 
বাকি দুজনের অবস্থা একেবারে পেছনে বসা রানীর অজানাই রয়ে গেলো । ওর সামনেই যে দুটো মানুষ নিজেকেই নিজেরা প্রতারিত করার চেষ্টা করছে সেটা রানী দেখতেই পেলো না । পাবে কি করে , এখনো ওর চোখে ভাসছে ফেলে আসার সময় জয়ের চোখের চাহনি আর ঠোঁটের মৃদু হাসি । বার বার সেই দৃশ্য রানীকে শিহরিত করছে । রানী নিজের মনে ভাবছে , কেনো এই ছেলেটার চাহনি ওকে এমন এপার ওপার বিদ্ধ করে , কেন এই ছেলেটার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি , যা প্রাই মনে হয় তাচ্ছিল্যের , ওর শরীরে শিহরন তোলে । কোনদিন যদি জয় এসব জানতে পারে  নিশ্চয়ই হেসে হেসে লুটপুটি খাবে , আর বলবে , ‘রানী তুই ও পারিস , তোর মতন মেয়ে কে আমি হা হা হা’ সেদিন রানী লজ্জায় ই মারা যাবে । কারো সাথে যে শেয়ার করবে এমন কাউকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । যে দুজন মানুষকে রানী নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে , তাদের একজন ওই জয়ের বোন , আর অন্যজন ওর নিজের আপন বড় ভাই । ভাইয়ের কাছে নিশ্চয়ই এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না । ‘এমন করে চলতে থাকলে আমি একদিন দম আটকে মারাই যাবো’ মনে মনে ভাবে রানী ।
 
ত্রিশ মিনিটের রাস্তা যেন ত্রিশ ঘণ্টা মনে হলো রাজীবের কাছে । অবশেষে ভার্সিটির নির্ধারিত গেটের কাছে বাইক থামাতে পারলো রাজীব । যেন আবার নিজেকে ফিরে পেলো , এতক্ষণ নিজের মাঝেই ছিলো না ও ।
 
“ কিরে নাম” রানীকে তাড়া দিলো জান্নাত ,  
 
রানী দ্রুত নিজের সপ্নের জগত থেকে ফিরে এলো , তবে এখনো একটা রেশ রয়েই গেছে । এবং সেটা ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । রানী নামার সাথে সাথেই জান্নাত দ্রুত নেমে গেলো , রাজীব ও হাঁফ ছেড়ে বাচলো । কোন কিছু কে অপছন্দ করে না করা , আর ভালো লেগেও কোন কিছু না করার মাঝে যে বিস্তর তফাৎ সেটা রাজীব আজ বুঝতে পারলো । চেহারায় একটা ক্লান্তি ভাব ফুটে উঠছে । আর সেই ক্লান্তি ভাব জান্নাতের চোখ এড়ালো না । রাজীবের এই মুখচ্ছবি জুয়ান্নাতের মনে গেঁথে গেলো । জান্নাত জানে যে রাজীব ওর প্রতিটা স্পর্শ টের পেয়েছে , কিন্তু একে বারে নির্লিপ্ত থকেছে ছেলেটা , আর এই নির্লিপ্ত থাকার জন্য বেশ কষ্ট করতে হয়েছে , যা ছেলেটার চেহারা ছবিতে ফুটে উঠছে । একটা ভালো লাগা আর লজ্জার অনুভূতি ঘিরে এলো চারপাশ থেকে , হাম্লে পরল জান্নাতের উপর ।
 
জান্নাত হাত নেড়ে বাই বলল রাজীব কে , রাজীব ও মুচকি হেসে অল দ্যা বেস্ট বলল । কিন্তু রানী তখনো বেশ উদাস , শুকনো মুখে সুধু বলল “ আচ্ছা যাই”
 
রাজীব ও বাইক রাইডের নামে ইমোশনাল রোলারকোস্টারের রাইড করার ঘোর থেকে এখনো বের হতে পারেনি , তাই রানীর দিকে না তাকিয়েই বলল “ ঠিক আছে যা”
 
রানী আর জান্নাত বেশ কয়েক পা হেটে চলে গেছে , ঠিক সেই সময় রাজীবের মনে হলো , আরে কিছু একটার কমতি রয়ে গেলো তো। অমনি রাজীবের ঘোর কেটে গেলো , ততক্ষনে রানী কিছুটা দূরে চলে গেছে । রাজীব রানীর দিকে খেয়াল না করলেও , কোন এক ফাঁকে ওর চোখ রানীর উদাস , অমনোযোগী চেহারার ছবি তুলে রেখেছিলো , সেটাই রাজীব এখন দেখতে পাচ্ছে । রাজীব নিজের উপর বিরক্ত হলো , রানী গতকাল থেকেই বেশ ভয়ে আছে সেটা ও ভালো করেই জানে । বোনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের ইমোশান নিয়ে ব্যাস্ত থাকা একদম উচিৎ হয়নি ওর । রানীকে একটু ভালো মত সাহস দেয়া দরকার ছিলো ।
 
“ এই রানী শুনে যা” একটু গলা উচু করে ডাকতে হলো রাজীব কে । একবারে শুনল না রানী , দ্বিতীয় বার ডাকতে জান্নাত রানী কে কনুই এর গুতো দিয়ে রাজীবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো , তবেই রানী রাজীবের দিকে তাকালো । ওরা দুজন দাড়িয়ে গেলো , রাজীব দ্রুত পদে ওদের দিয়ে এগিয়ে গিয়ে রানীর মাথায় হাত রেখে বলল “ কিরে এখনো ভয় পাচ্ছিস”
 
রানী কি উত্তর দেবে খুজে পেলো না , আসলে পরিক্ষার ভয় তো দুরের কথা , এতক্ষণ ওর মনে জয়ের শেষ দৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন ব্যাপার ই ছিলো না । রাজীবের ডাকে এখন কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে ওর মন । কিন্তু ভাই কে তো আর সে কথা বলা যাবে না । তাই সুধু মাথা উপর নিচে ঝাকালো , ওর কাজ ও করলো এবার ভাই যা বুঝে নেয়।
 
 “ একদম চিন্তা করবি না , মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিক্ষা দিবি , ফলাফল কি হবে ভাবার দরকার নেই বুঝলি?”
 
রানী ছোট্ট করে সুধু “ হু” বলল
 
এর পর রাজীব যা করলো সেটা রানী আর জান্নাত কেউ আশা করেনি , রানীর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল “ যা , পাশ করিয়ে দিলাম” কাজটা করে রাজীব হা হা করে হাসতে লাগলো । ওর এই কাজের উদ্দেশ্য ছিলো রানীকে ডিস্ট্রাক করা , পরিক্ষার ভয়  থেকে ।
 
রানী ছিটকে দূরে চলে গেলো , বেশ লজ্জা পেয়ে আশে পাশে তাকালো , তারপর রাগত চোখে রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল “ ভাইয়া , এটা কি হলো ? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি , এখন তো আমি ইচ্ছা করেই এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবো না”
 
উত্তরে রাজীব হা হা করে সুধু হাসল , সাথে জান্নাত ও যোগ দিলো । রাজীব আর জান্নাতের চোখাচোখি হতেই ওদের হাসি অবশ্য থেমে গেলো , হাসির জায়গায় একটা বেক্ষাপ্পা অনুভূতি দখল করে নিলো ।
 
এদিকে রানী গট গট করে হাটা শুরু করে দিয়েছে , মুখে বিড়বিড় করে বলছে ‘ লোকজন দেখলে বলবে , ছোট খুকি পরিক্ষা দিতে এসেছে’
 
বিদায় নেয়ার আগে জান্নাত আর রাজীবের মাঝে আরো একবার ওয়েল উইশ আর ধন্যবাদ বিনিময় হলো তবে এবার সুধু চোখের ভাষায় ।
 
পরিক্ষা শেষে অবশ্য রানী মনে  মনে রাজীবের ওই দুষ্টুমির জন্য রাজীব কে ধন্যবাদ ই দিলো । জয়ের ওই মর্ম ভেদি চাহনি ওকে সত্যি ই পরিক্ষা থেকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিলো । ছেলেটা যে কি না একটা , সব কথা সুধু চোখে চোখেই বলতে চায় ।
 
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


[+] 7 users Like gungchill's post
Like Reply


Messages In This Thread
কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 29-07-2025, 04:17 PM
RE: কিছু সম্পর্ক - by gungchill - 12-08-2025, 04:33 PM



Users browsing this thread: