Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica যাদুকর (চলমান)
#57
অলোক সিগারেট ধরালো, ওর চোখ মুখে গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ। হাত ঘড়িতে সময় দেখলো। আজকের নিমন্ত্রিত অতিথিদের লিস্ট চেক করে ডা. সামন্ত লালকে কল করে এই ঘরে আসতে বলেছে সে। প্রায় ১০ মিনিট পার হতে চললেও এখনো তিনি আসেননি। ধীরে ধীরে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে মেয়ে দুটোর দিকে লক্ষ করলো। ওরা এখনো খাটের উপরে নিথর পড়ে আছে, দুজনেই সম্পূর্ণ নগ্ন। মৃদু শ্বাস প্রশ্বাসের তালে তাদের বুক ওঠানামা করাতে এটুকু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে ওরা বেঁচে আছে।

অলোককে ফোন দিয়ে নাদের আলী খুব অল্প কথায় এখানকার ঘটনার যে প্রেক্ষাপট বলেছিলো তা হলো, গোয়েন্দা বিভাগের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা দুজন নারী সেলিব্রেটি নিয়ে এই গেস্ট রুমে ঢুকেছিলেন। এসব ব্যাপার এই ধরণের পার্টিতে ওপেন সিক্রেট। তাই সবকিছু ম্যানেজ করাই থাকে। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে সেই  কর্মকর্তা ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে আমদানিকৃত কিছু নতুন ধরণের ড্রাগ নিয়ে এসেছিলেন সঙ্গে করে, যেটা তিনি এবং ঐ সেলিব্রেটি মেয়ে দুটি সেবন করেছেন। এখন মেয়ে দুটি গত ১ ঘন্টা ধরে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। এদিকে নাদের আলী অলোককে দায়িত্ব দিয়েছে যাতে এই ঘটনা বাইরে জানাজানি না হয়। ওপেন সিক্রেট হলেও সবকিছু একেবারে নগ্নভাবে প্রকাশ হতে দেওয়া যায় না। চারিদিকে সাংবাদিকরা তক্কে তক্কে রয়েছে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্ক্যান্ডালের প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য। গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা দুজন নারী সেলিব্রেটিকে নিয়ে ড্রাগ সেবন করেছেন এটা নিজেই একটা বড় স্ক্যান্ডাল। তার উপর মেয়ে দুটি মিডিয়ায় যথেষ্ট পরিচিত মুখ। অলোকের যতটুকু জানা আছে যে এই মেয়েরা প্রত্যেকেই বিবাহিত। সুতরাং এদের কিছু হলে এদের স্বামীরা মিডিয়া পাড়া গরম করে ফেলবে।

অলোক ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়ে দুটোর স্বামীদের কথা চিন্তা করে। এরা যদি দেখতে পেত যে তাদের স্ত্রীরা হোটেলের পর পুরুষের বিছানায় ড্রাগ ওভারডোজ হয়ে নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে, কেমন হতো তাদের অনুভূতি! তাদের কী লজ্জায়, গ্লানিতে মাথা নীচু হয়ে যেত না! নাকি তারা সব মেনে নিত?

মেয়ে দুটো বেঁচে আছে নিশ্চিত হয়ে তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্স ডেকে ওদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছে অলোক। কিন্তু বাইরে খবর ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে নাদের আলী তাতে সম্মতি দেয়নি। অগত্যা ওর মাথায় তাৎক্ষণিক অন্য একটি সমাধান আসে। আজকের অতিথির তালিকায় বিভিন্ন পেশার অনেক বড় বড় মানুষের ভেতরে একজন ডাক্তারও আছেন। ভদ্রলোকের নাম ডা. সামন্ত লাল, বয়সে বেশ প্রবীণ। ভদ্রলোক একদিকে অনেক নামকরা একজন সার্জন, অন্যদিকে সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। শীঘ্রই টেকনোক্রেট মন্ত্রী হবেন বলে বাজারে গুঞ্জন আছে। ঢাকায় ওনার নিজের মালিকানায় বড় একটি হাসপাতাল আছে। মেয়ে দুটিকে ড্রাগ দেওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তাও সরকারি দলের খাস লোক। সুতরাং ডাক্তার সামন্ত লাল এরকম পরিস্থিতি ভালো সামলাতে পারবেন। অলোক টেলিফোনের মাধ্যমে অল্প কথায় পরিস্থিতি বর্ণনা করে ডা. সামন্তলালকে আসতে অনুরোধ করে। ওর যখন দ্বিতীয় সিগারেটটা প্রায় শেষের দিকে তখন সামন্ত লাল এসে পড়েন।

প্রথমেই মেয়ে দুটির পালস পরীক্ষা করে দেখলেন ডা. সামন্ত। চোখ টেনে আলো ফেলে দেখলেন চোখের মণি। তারপর বললেন, " ইমেডিয়েট হসপিটালাইজেশন জরুরি। আমার হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। বাই দা ওয়ে, হোয়াট ওয়াজ দা ড্রাগ?"

অলোক ঘরের অন্য প্রান্তে দণ্ডায়মান লোকটার দিকে তাকালো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। লোকটার নাম জিয়াউল আহসান। ইনিই মেয়ে দুটিকে নিয়ে এসেছিলেন। অলোক আসার পর থেকে লোকটা গম্ভীর মুখে সোফায় বসে এক হাতে মদের গ্লাস ধরে আর অন্য হাতে একের পর এক সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছেন।
"আইস এর এক নতুন  ভ্যারিয়েন্ট 'রেড আইস'। বাংলাদেশ-মিয়ানমান বর্ডার পার হওয়ার সময়ে Seize করেছি আমরা। বিশ্বাস করবেন না কত বড় চালান ছিল সেটা হেহ হে হে হে... কিছুটা নিয়ে এসেছিলাম। I thought... you know... নতুন কিছু ট্রাই করলে মন্দ হয় না। বুঝতেই পারছেন সামন্ত বাবু।"
"I understood completely. But the thing is এই ধরণের ড্রাগের সঙ্গে আমাদের ডাক্তারদের পরিচয় নেই। আপাতত সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট-ই ভরসা। মেয়ে দুটির যা অবস্থা ওদেরকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আমরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই ভালো। But I can not promise any positive outcome for sure.''

জিয়াউল আহসানের মুখে চিন্তার ছাপ দেখা গেল, "In that case , আমাদের আরো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।" তারপর অলোকের দিকে তুড়ি মেরে বললো, "অলোক বাবু আমি আমার দুজন ইনফর্মেন্টকে কল দিচ্ছি। ওরা হোটেলেই আছে। আপনার কাজ হলো ওদেরকে এস্কোর্ট করে সিকিউরিট পার করিয়ে এই রুমে নিয়ে আসা এবং পুনরায় বের হতে সাহায্য করা।" অলোক কাঁধ ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। আসলে  জিয়াউলের আদেশ শোনা ছাড়া ওর সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।

জিয়াউলের ইনফর্মেন্টরা দুটো তেলের ড্রাম নিয়ে এসে হাজির হলো। মেয়ে দুটোকে তেলের ড্রামে ভরে একটা লাগেজের ট্রলিতে উঠিয়ে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে গেল। অলোক ওদের সঙ্গে থাকলো যাতে সার্চ করার জন্য কেউ ওদেরকে না থামায়। ড্রাম দুটো একেবারে হোটেলের বাইরে নিয়ে এসে একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল আরেকদল লোক। ইনফর্মেন্ট দুজন চলে যাওয়ার আগে অলোককে ধন্যবাদ দিয়ে গেল। অলোক সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে দেখতে পেল মাইক্রোবাসটি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। অলোক ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর ফিরে চললো গ্রান্ড হলে, যেখানে ইতোমধ্যে পার্টির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। পিয়ানোর মিষ্টি সুরে আর আলো ঝলমলে বাতির নীচে মানুষগুলোর লোকচক্ষুর আড়ালে ঘটে যাওয়া মেয়ে দুটির পরিণতি সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। অলোক মনে মনে ভাবলো, "আজ থেকে তিন মাস আগে হলেও এই মেয়েটি দুটির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সে এভাবে চেপে যেতে পারতো? সে তো সাংবাদিক, লেখক, সমাজের বিবেক। অথচ আজ ও কীভাবে হুকুমের দাসের মত কাজ করতে পারলো? উপরের বসদের সন্তুষ্ট করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের লোভ ওকে অন্ধ করে দিয়েছে। এতদিন যে নিজের নৈতিক আদর্শ  নিয়ে নিজের খুব গর্ব বোধ হত, কোথায় গেল সেসব? মাত্র তিন থেকে চার মাস আগেও সে অন্য রকম মানুষ ছিলো। কিন্তু আজকের অলোক যেন ওর নিজের কাছেই অপরিচিত কেউ। কীভাবে হলো এই পরিবর্তন? কেন হলো?" অলোক আর ভাবতে পারে না। নতুন করে শুরু হওয়া ব্যান্ডের দ্রুত লয়ের মিউজিকের ছন্দ আর করতালির শব্দে ওর চিন্তার ব্যাঘাৎ ঘটে।

অলোক দাঁড়িয়েছিলো গ্রান্ড হলের এক প্রান্তে, কিছুটা উঁচু স্টেজে। এখান থেকে প্রায় সম্পূর্ণ হলসহ সামনের স্টেজ ভালো মতো দেখা যায়। অলোক দেখতে পেল একদল স্বল্পবসনা মোহময় সুন্দরী তরুণী স্টেজের ওপর থেকে ক্যাট ওয়াক করতে করতে নীচে নেমে এসে অতিথিদের মাঝে বিচরণ করতে লাগলো। এ যেন পুষ্পবনে হংস মিথুনের পদচারণা। প্রত্যেকটি মেয়ে দেখতে অত্যন্ত সুন্দরী ও সুগঠিত শরীরের অধিকারিনী। ওদের শরীরের সুগঠন প্রকাশ করার জন্যই বোধহয় এক জোড়া বিকিনি আর মিনি শর্টস কোনমতে তাদের আব্রু রক্ষা করছে, বাদ বাকী পুরো শরীরটাই উন্মুক্ত। কাঁধ থেকে আড়া আড়ি ভাবে ঝুলছে Miss.... এর পরে বিভিন্ন জেলার নাম — যেমন Miss Dhaka, Miss Barishal, Miss Chittagong ইত্যাদি। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম সকাল পত্রিকার স্পন্সরে আয়োজিত সেরা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগীতার ৬৪ জেলার বিজয়ীরা হল এই মেয়েরা। এদের ভেতর থেকে পরবর্তী ধাপে একজন চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সেরা সেরা সুন্দরীরা এই প্রতি্যোগীতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিচ্ছে। আর ফাইনাল রেজাল্টের আগে নাদের আলী এই মেয়েগুলোকে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মেরে নিচ্ছে। চূড়ান্ত বিজয়ী নির্বাচিত হবে দর্শক ভোট ও নির্বাচকমন্ডলীদের ভোট মিলিয়ে। এখানেই নাদের আলী কারসাজি করার সুযোগ। দর্শক ভোট বলুক, আর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট বলুক, সবই আসলে তার হাতে। সে যাকে চাইবে তাকেই বিজয়ী করা হবে। বিগত কয়েক মাসে কর্পোরেট জগতের পর্দার পেছনের এই ধরণের অনেক কারসাজির খবর জানা হয়ে গেছে অলোকের।

যন্ত্রসঙ্গীতের তালে তালে মোহনীয় ভঙ্গিমায় শরীর দুলিয়ে হাঁটছে মেয়েগুলো, অতিথিদের মাঝে ছড়িয়ে গিয়ে তাদের শরীরের কাছ দিয়ে ঘুরে বেঁড়াচ্ছে হংসপালের মত। যত যাই হোক, অলোক নিজেও মেয়েগুলোর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। কাছেই ঘুরে বেড়ানো বেয়ারার ট্রে থেকে আরেক গ্লাস পানীয় তুলে নিয়ে গলায় ঢেলে দিতে লাগল সে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় মনের ভিতর যে গ্লানি কাজ করছিলো সব যেন নিমিষেই হারিয়ে গেল। হালকা একটা নেশাভাব ওকে আচ্ছ্বন্ন করে ফেলতে লাগলো। হংসপালের এক হংসী ওর কাছাকাছি চলে এসে ওর কোমরের কাছে নিজের সুডৌল ফর্সা নিতম্ব স্পর্শ করতে লাগলো। অলোক ঢুলু ঢুলু চোখে মেয়েটার গায়ে ঝুলানো ব্যানার পড়ার চেষ্টা করলো, চোখ আটকে গেল ব্যানারের পেছনের গভীর স্তন বিভাজিকায়। মেয়েটার পেটে কোন মেদ নেই, একদম মসৃণ, ফর্সা, দাগহীন কোমল ত্বক — যেন একটা জীবন্ত বার্বি ডল। অলোকের একেবারে কাছে এসে মেয়েটি ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে অবশিষ্ট পানীয়টুকু নিজের মুখে ঢেলে দিলো। তারপর  অলোকের গলায় দু'হাত জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটের উপর নিজের কোমল ঠোঁট চেপে ধরলো। এই চুমুর জন্য অলোক প্রস্তুত ছিল না, আবার মেয়েটির বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়েও নিতে পারলো না। মেয়েটি যেন ওকে যাদু করেছে, পিয়ানোর সুর আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো দামি পারফিউমের ঘ্রাণ সবমিলিয়ে ও যেন হারিয়ে গেল অন্য এক জগতে। অলোকের ঠোঁটের সঙ্গে মেয়েটি এমনভাবে ঠোঁট চেপে ধরলো যাতে দুই জোড়া ঠোঁটের মাঝে কোন ফাঁকা না থাকে। অলোক টের পেল ওর মুখের ভেতরে মদের প্রবাহ — অর্থাৎ গ্লাস থেকে পান করা মদ মেয়েটি চুমু খাওয়ার অজুহাতে নিজের মুখ থেকে ধীরে ধীরে ওর মুখে ঢেলে দিচ্ছে। অলোক হাত বাড়িয়ে মেয়েটির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের আরো কাছে টেনে আনলো। সম্পূর্ণ মদ মুখে ঢালার পরে মেয়েটি ওর গলা ছেড়ে দিয়ে আবারো মৃদু দেহভঙ্গিমায় নাচতে নাচতে হারিয়ে গেল ভীড়ের মাঝে। অলোক নেশাগ্রস্থ চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আমন্ত্রিত অতিথিরা অনেকেই এসব সুন্দরীদের জড়িয়ে আছে। কেউ কেউ চুম্বনরত। কেউ আবার কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে। যেমন এক টেবিলে ডাক্তার সামন্ত লালকে মিস চট্টগ্রামকে নিজের কোলে বসিয়ে রাখতে দেখা গেল , তার এক হাত মেয়েটির সরু কোমর হতে নেমে পাছার উপরে ঘোরাফেরা করছে। অন্য হাত মেয়েটির স্তন দুটোকে নাড়াচাড়া করছে।

হঠাৎ ভীড়ের ভেতর থেকে একটা হাত অলোকের বাহু চেপে ধরলো। অলোক সেদিকে ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলো মানুষটি আর কেউ নয়, ওর বউ শান্তি। এতক্ষণ পরে শান্তিকে পেয়ে খুশি হয়ে উঠলো ওর মন। শান্তিকে বললো, "এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি তোমার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।"
"সিকিউরিটি আটকায় নি। আমি তো তোমার বস নাদের আলীর সঙ্গেই ছিলাম। উনিই আমাকে এস্কোর্ট করে নিয়ে এলেন এখানে।"
"নাদের আলীর সঙ্গে ছিলে!" অলোক নিজের বিস্ময় চেপে রাখতে না পেরে বললো। মনে মনে ভাবলো নাদের আলী তো একবারও বললো না শান্তির কথা। 
"আরে হ্যাঁ, আমার পারফর্মেন্সের পর উনিসহ আরো বেশ ক জন ভি ভি আই পি আমার সঙ্গে ব্যাক স্টেজে দেখা করেছিলেন। ওনারা আমার নাচের খুব প্রশংসা করেছেন। নাদের আলী বললেন যে উনিই আমাকে ডিনার পার্টিতে নিয়ে আসবেন। আমিও ভাবলাম তুমি তো এমনিতেই এখানে থাকবে। তাই আর আলাদা করে তোমাকে জানাইনি।''
" ও আচ্ছা।" অলোক নিস্প্রিহভাবে বললো।

শান্তি ইতোমধ্যে ওর নাচের পোশাক পালটে এসেছে, ওর পরনে কালো রঙের শর্ট ওয়ানপিস। সরু স্ট্র‍্যাপ দিয়ে কাঁধের উপর ঝুলে থাকা পোশাকটি হাঁটুর ৬ ইঞ্চি উপরে এসে শেষ হয়েছে, পিছনে ব্যাকলেস হওয়ায় শান্তির ফর্সা পিঠটা প্রায় কোমর পর্যন্ত উন্মুক্ত। শান্তির স্তন দুটো বেশ ভারি হওয়ায় ওয়ানপিসটা বুকের কাছে টাইট হয়ে আছে, তবে শান্তির শরীরটা একটু Bubbly হলেও কোমর আর পেট মেদহীন। তাই কোমরের নীচ পোশাকটা বেশ ফিট করেছে।  অলোকের মনে হল কাপড়ের নীচে শান্তির স্তনের বোঁটা দুটোর অবস্থান দেখতে পাচ্ছে। যেহেতু সে দেখতে পাচ্ছে, তার মানে আরো অনেকেরই বিষয়টা চোখে পড়ার কথা। শান্তি কী ইচ্ছে করেই এমন পোশাক পরেছে! অবশ্য এ ধরণের পার্টিতে এমন পোশাক অস্বাভাবিক বা দৃষ্টি কটু নয়। শান্তির ফ্যাশন সেন্স নিয়ে অলোকের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাঙ্গালি বিবাহিত পুরুষের স্বাভাবিক রক্ষণশীল মন ওকে খোঁচাতে থাকে সুক্ষ্মভাবে। যদিও বউকে মুখে কিছু বলে না।

শান্তির হাতেও মদের গ্লাস, তবে চুমুক দিচ্ছে অল্প অল্প করে। অলোকের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বললো, "You are supposed to be the co ordinator of this event. কিন্তু তুমি তো এখনই ড্রাংক হয়ে গিয়েছো। Oh Come on অলোক।"
"আরে নাহ, I am still sober." যদিও শান্তির কথাটা সত্যি,  অলোক হাত নেড়ে বউয়ের কথা উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলো।

পার্টি মিউজিক, আলোর ঝলমলানি, নারী ও সুরার ফোয়ারার মাঝে মাইক্রোফোন হাতে নাদের আলীর কণ্ঠ উপস্থিত  সকলের মনোযোগ কেড়ে নিলো স্টেজের দিকে। সেখানে স্পট লাইটের আলোর নীচে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছেন নাদের আলী। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। পরণে কালো রঙের স্যুট। ঠোঁটের নীচে চিকন গোঁফ। চেহারায় ধূর্ততার ছাপ।
"Ladies and gentleman, thank you all for accepting our invitation tonight. We are very honoured to be able to host you. Please go ahead and enjoy yourself at fullest. Thanks again." মাথা নুয়ে ইউরোপীয়ান কায়দায় সম্মান জানায় নাদের আলী। মুহুর্মূহু করতালিতে ভরে ওঠে হলরুম। বেজে ওঠে বাজনা। অলোক শান্তির দিকে তাকিয়ে থাকে, বিদেশীনিদের মতো ফর্সা গলা থেকে একটি চিকন ডায়মন্ডের নেকলেস ওর স্তনের গভীর খাঁজের উপরে ঝুলে আছে। নেশাতুর অলোক বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়, শান্তিকে এমন কোন নেকলেস কবে কিনে দিয়েছে ওর মনে পড়ে না। অলোক বুঝতে পারে ওর গাঢ় নেশার কারণে স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি লোপ পাচ্ছে। চারিদিকের আলো আঁধারি, পারফিউমের কড়া ঘ্রাণ, হাততালি, কৃত্রিম হাসির শব্দ সবকিছু ওর কাছে পরাবাস্তব মনে হতে থাকে। অলোক হাত বাড়িয়ে শান্তিকে ধরতে চায়। কিন্তু পারে না। শান্তি যেন দূরে সরে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। সরতে সরতে ভীড়ের ভিতরে মিশে যেতে থাকে। অলোক আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে থাকে শান্তিকে, কোথায় গেল শান্তি? কোথায়? হঠাৎ একদিকে ওর দৃষ্টি আটকে যায়। 

একজন মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা শার্টের উপরে ওয়েটারদের মতো কালো কোটি পরিহিত, অস্বাভাবিক রোগা ও লম্বা লোকটি সামনের দিকে কুঁজো হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। লোকটির মাথার লম্বা তেল চিটচিটে কালো চুল ঝুলে আছে মুখের উপর। তার ফাঁক দিয়ে একজোঁড়া জ্বলজ্বলে চোখ তাকিয়ে আছে। স্তম্ভিত অলোক দেখতে থাকে লোকটাকে। ওর কাছে চেনা চেনা মনে হয়। কে ঐ লোকটি? হাত মুঠো করে কপালে ঠেকিয়ে তর্জনী আর কনিষ্ঠা উঁচু করে লোকটি কীসের যেন ইশারা দেখায় ওকে। অলোক এর আগেও কোথায় যেন দেখেছে এই চিহ্ন। কিন্তু কে দেখিয়েছে? ব্যান্ডের সুর বদলে গেছে ইতোমধ্যে। এখন পার্টিতে নারী পুরুষরা জোড়ায় জোড়ায় ইউরোপীয়ান কায়দায় নাচতে শুরু করেছে। কেবল নেশাগ্রস্থ, বিভ্রান্ত অলোক জড় মূর্তির ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে সবার মাঝে।

****

অফিসে অলোকের জন্য পৃথক ঘর বরাদ্দ করা আছে। কাচ ঘেরা ঘরটির ভেতরে বসে বাইরের কর্মব্যস্ত ডেস্কের সবাইকে দেখতে পায় সে। কিন্তু বাইরে থেকে ওকে স্পষ্ট দেখা যায় না। অলোক খোলা ল্যাপটপের সামনে বসে আনমনেই দূরে তাকিয়ে ছিলো। কাচের ওপাশ থেকে একটি মেয়েকে ওর রুমের দিকেই আসতে দেখতে পায় তখন। মেয়েটির নাম মৌসুমী, সদ্য গ্রাজুয়েশন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানে কয়েক মাস হলো ইন্টার্নশিপ করছে। দরজা খুলে কেবল মাথা ঢুকিয়ে মৌসুমী বললো, "আসতে পারি অলোকদা?"
"অবশ্যই, আয় ভেতরে আয়। কিছু বলবি?"
"হ্যাঁ দাদা, বলবো বলেই তো এসেছি। বলছি যে দাদা নায়িকা অপু বিশ্বাসের প্রেগ্নেন্সির নিউজ নিয়ে আপনার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। আপনি কী আমাকে কখনো ফাঁকিবাজি করতে দেখেছেন?" মৌসুমী যথাসম্ভব শান্ত গলায় কথা বললেও ঝাঁঝটা ঠিকই টের পেল অলোক।
''না রে। তুই তো খুবই এক্টিভ এন্ড পাংচুয়াল। কি হয়েছে?''
"'দেখেন দাদা, আমাকে সঞ্জয়দা বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচীর নিউজ কাভার করতে নিয়ে গেলেন কয়দিন ধরে। বলতে গেলে আমি তার চাকর বাকরের মত কাজ করে দিলাম টানা ৩/৪দিন। আজ পুলিশ ওখানে লাঠিচার্জ করেছে। সঞ্জয়দা আগেই খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে গেলেন। উনি লাইভও করলেন। অথচ আমাকে একবারও বললেন না। এসব কী দাদা? এত কাজ করেও যদি ন্যূনতম স্বীকৃতিটাই না পাই...''
অলোক মৃদু হেসে বললো, "আরে মাথা ঠান্ডা করে বস তো।"
ধপ করে সামনের চেয়ারে বসে পড়ে মৌসুমী। না চাইতেও উপরে নীচে দুলে ওঠা মৌসুমীর ওড়নাবিহীন বক্ষের দিকে নজর চলে গেল অলোকের। ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার জন্য টেবিল থেকে সিগারেট নিয়ে ফস করে ধরিয়ে ঠোঁটে নিলো সে। মৌসুমী হাতে গাল ঠেকিয়ে বেজার মুখে বসে রইলো।
"শোন, মিডিয়ায় এসব সাধারণ ব্যাপার। ধৈর্য্য ধর। এই যে কাজ করছিস। অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তাই না? এটাই আপাতত তোর অর্জন। স্বীকৃতি তুই পাবি। সবকিছুই তো একবারে আসবে না।" ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অলোক বলে।
"না দাদা। আপনি আমাকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বলছেন। আমি সঞ্জয়দার সাথে কাজ করতে চাই না। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই।"
" আমি কিন্তু প্রচণ্ড চাপ দেই। কাজের ভিতরে থাকলে আমার এখনকার মত এত সুন্দর সুন্দর ব্যবহার পাবি না।"
''সে যাই হোক দাদা, আপনার সঙ্গে কাজ করতে হলে কী করতে হবে বলুন।"
"এত ডেস্পারেট? যা করতে বলবো তাই করবি?" অলোক মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলে।
"হ্যাঁ দাদা। যা করতে বলবেন সব করতে রাজি আমি।"
অলোক আরেক দফা হাসে মৌসুমীর কথা শুনে। তবে ওর চেহারা আর বলার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে যে মেয়েটা আসলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একটা সম্ভাবনার কথা আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে ওঠে অলোকের মনে। পরক্ষণেই সেটাকে ছাই চাপা দিয়ে দেয় অলোক। গম্ভীর গলায় বলে, "বেশ তো দেখি কেমন কাজ করতে পারিস। আপাতত তোর এসাইনমেন্ট হলো আমাদের গতকালকের প্রোগ্রাম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেমন প্রতিক্রীয়া হচ্ছে, কোন অংশটা বেশি ভাইরাল হয়েছে, নেটিজেনরা কী মন্তব্য করছে সেটা নিয়ে একটা ড্রাফট তৈরি করবি। কিছু ভাইরাল ভিডিওর রেফারেন্স লিংক, ফেসবুক সেলিব্রেটিদের গতকালকের প্রোগ্রাম সম্পর্কিত পোস্টের লিংক যুক্ত করে দিবি। সন্ধ্যার ভিতরে তুই আমাকে এই সব কিছু মেইল করবি। অলরাইট?"
"অবশ্যই স্যার। আমি সব কমপ্লিট করে সময়মতো পাঠিয়ে দেব।" খুশিতে ডগমগ করতে করতে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মৌসুমী। সিগারেটের ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে অলোকের চোখ দেখে নিলো সে দৃশ্য। শান্তির মত ফর্সা আর স্বাস্থ্যবান না হলেও পুরুষদের আকর্ষণ করার মতো একটা ব্যাপার আছে মেয়েটির ভিতরে। গায়ের রঙটা উজ্জ্বল শ্যামলা। ক্রিমি একটা ভাইভ আছে। জিন্স পরা পশ্চাৎদেশে বেশ দারুণ একটা ঢেউ খেলে যায় ছোটার সময়ে। অলোক জোর করে নিজের মনকে সংযত করার চেষ্টা করে। নিজের ল্যাপটপে মন দেয় সে। সেখানে গতকালের প্রোগ্রাম নিয়ে একটি খসড়া রিপোর্টের অর্ধেক লেখা আছে। লিখতে গিয়েও হাত আটকে যায় গতকালের কথা ভেবে। অনেক পরিশ্রম করে অনুষ্ঠানটি নামাতে হয়েছে ওর। সবকিছুই ঠিকঠাক হয়েছে বলা যায়। তারপরেও মনটা খুঁতখুঁত করছে৷ অলোকের টেবিলের উপরের টেলিফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নাদের আলীর কণ্ঠ শুনতে পেল। বসের ঘরে ডাক পড়েছে অলোকের।

নাদেরের অফিসে ঢুকে নাদের আলীকে বেশ খোশ মেজাজে দেখতে পেল। কর্পোরেট চাকরিতে বস যতক্ষণ খুশি থাকে ততক্ষণ কর্মচারীরাও ভালো থাকে। অলোক অনেকটা নির্ভার হলো এই ভেবে যে ওর জন্য কোন দুঃসংবাদ নেই অন্তত।
"এসো অলোক, বসো।" নাদের বললো।
"ধন্যবাদ।"
"ফার্স্ট অফ অল, ইউ ডিড আ গুড জব। অনুষ্ঠানের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছ। আশা করি পরবর্তী প্রোগ্রাম আরো ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবে।"
"জ্বি স্যার। আমি চেষ্টা করেছি। আপনি পাশে ছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছে। আমার উপরে আপনার আস্থা অনেক আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল।"
"না না। তোমার ক্রেডিটও কম নয়।" নাদের মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে অলোকের তেল দেওয়াতে কাজ হয়েছে।
"বাই দা ওয়ে, আরেকটা ব্যাপারে তোমার স্পেশাল ধন্যবাদ প্রাপ্য। সেটা হলো তোমার ওয়াইফ, শান্তিকে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করানোর জন্য। She was absolutely mind blowing.''
''ধন্যবাদ স্যার। আসলে ও ছোটবেলা থেকেই এসবে পারদর্শী। আমাদের ইউনিভার্সিটি লাইফেও অনেক ডিপার্টমেন্টাল প্রোগ্রামে পারফর্ম করেছে। কিন্তু প্রফেশনালি কোথাও পারফর্ম করতে চায় না। অনেকটা আমার অনুরোধেই গত অনুষ্ঠানে এসেছিল।"
"আহা! বলো কি! পারসোনালি আমার মতামত হলো গত অনুষ্ঠানের অনেক সেলিব্রেটির থেকেও সে স্টেজে সাবলীল ছিলো। শান্তি মিডিয়ায় আসলে দারুণ করবে। ওরকম ট্যালেন্ট ওয়েস্টেড করার কোন মানেই হয় না।"
অলোক কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করলো। নাদের আলী আলোচনাটা হঠাৎ শান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেন বুঝতে পারলো না।
"সবাই তো আসলে মিডিয়ায় ক্যারিয়ার করতে চায় না। শান্তিও চায়নি। আমিও কখনো চাপ দেইনি।"
"না না। আমি তো গত অনুষ্ঠানে তোমার বউয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছি ওর সঙ্গে। আমার মনে হয়েছে সে মিডিয়ায় কাজ করতে যথেষ্ট আগ্রহী।"
নাদের আলী শান্তির সঙ্গে ব্যাকস্টেজে সময় কাটিয়েছে শুনে অলোক ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি অনুভব করলো। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
"তুমি এক কাজ করো। শান্তির ফোন নাম্বার দাও। আমি ওর সঙ্গে কথা বলবো।"
এবার অলোকের ভেতরটা বেশ তেতে উঠলো। নাদের আলী যতই তার বস হোক। সে যে এভাবে আরেকজন স্বামীর কাছে তার বউয়ের নাম্বার চাইতে পারে না, সেটা কে বুঝাবে এই লোকটাকে! এমনকি নিজের অফিস রুমে ফিরে এসেও অলোকের মেজাজটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে রইলো সারাদিন।

বাড়িতে ফিরে কলিং বেল চেপে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল। দরজার ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ পেল না। একটা সময়ে লক খোলার শব্দ পেল। কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে অলোক জিজ্ঞেস করলো, "তোর ম্যাডাম ফেরেনি এখনো?"
"যে না।"
ফ্রেশ হয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ল্যাপটপ আর কফি নিয়ে ব্যালকনিতে বসলো। এখান থেকে রাস্তা দেখা যায়। ঘড়িতে রাত বাজে ৯টা। শান্তি হয়তো দেরীতে ফিরবে। যতই দেরী হোক, বউকে ফোন করে খবরদারি করার মানুষ সে নয়। মনকে ব্যস্ত রাখার জন্য আপাতত কাজে মনযোগ দিলো।

ল্যাপটপ খুলে দেখতে পেল মৌসুমী মেইল পাঠিয়ে রেখেছে। মেইলটা চেক করে দেখলো বেশ ভালোই গুছিয়ে কাজ করেছে মেয়েটি। ১০০০ শব্দের একটা রিপোর্ট লিখেছে 'দৈনিক প্রথম সকাল পত্রিকার বার্ষিক এওয়ার্ড অনুষ্ঠান সম্পর্কে নেটিজেনদের প্রতিক্রীয়া' এই শিরোনামে। অলোক সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে সম্পূর্ণটাই পড়লো। মেয়েটার লেখার হাত  ভালোই মনে হলো। কিছু জনপ্রিয় ফেসবুক পেজের রেফারেন্স দিয়েছে যারা ঐ প্রোগ্রামের বিভিন্ন ক্লিপ ভাইরাল করেছে। রেফারেন্স হিসেবে ১০/১২টা লিংক যুক্ত করা আছে রিপোর্টে। অলোক একে একে লিংকগুলো চেক করতে লাগলো আর ওর মুখটা গম্ভীর হয়ে যেতে লাগলো। অধিকাংশ পেজেই সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ক্লিপ হলো শান্তির নাচের পারফর্মেন্স। প্রতিটা পোস্টে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন ভিউজ। লাখ খানেক রিএকশন এবং হাজার খানেক কমেন্টস। কমেন্টসগুলো স্ক্রল করতে লাগলো অলোক। একই ধরণের কিছু কমেন্ট দিয়ে কমেন্ট বক্স ভর্তি। যেমন,

"এসব কী নাচ! মানুষ নাচ দেখবে নাকি নাচনেওয়ালীকে দেখবে।''

" আগে রাজা বাদশাহরা পয়সা খরচ করে বাঈজীদের নাচ দেখতো। এখন বাঈজীরা ফ্রিতেই নাচ দেখায়। ভালো তো।"

"সৌভাগ্য তাহার
উর্বর দুটি পাহাড়
যে করিয়াছে আহার।"

"আপা কয় লিটার?"

"একদম ইন্ডিয়ান নায়িকা পূজা ভাটের মত দেখতে। কেবল দুধ পাছা নোরা ফাতেহির মত। অসাম জিনিস মামা।"

"কী নাভিরে ভাই! কূয়ার মতো গভীর।"

এর ভিতরে একটা কমেন্টে এসে অলোকের চোখ আটকে গেল।

"এসব রাতের রাণীদের আমরা গরীবেরা মোবাইলে দেখমু আর খেচমু। আর বড়লোকেরা এগুলোরে বেশ্যার মতো চোদে। এরা বড়লোকের খেলার জিনিস।"

বড়লোকের খেলার জিনিস!

না না! শান্তি ওর স্ত্রী। শান্তি কারো খেলার জিনিস নয়। অলোকের স্মৃতিতে সেদিন রাতের হোটেল কক্ষের খাটের উপরে পড়ে থাকা দুই সেলিব্রেটি মেয়ের নগ্ন শরীর মনে পড়ে গেল। এই কমেন্ট ঐ মেয়েগুলোর জন্য প্রযোজ্য। শান্তির জন্যে মোটেও প্রযোজ্য নয়। শান্তি অমন হতেই পারে না। অলোক সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে অনেকক্ষণ দম ধরে রেখে ফস করে ধোয়া ছেড়ে দেয়। মোবাইলের স্ক্রিনও ধোয়ার কুন্ডলীর মাঝে হারিয়ে যায়। শান্তি কেবলই অলোককে ভালোবাসে। ওদের বিয়ের বয়স কত হলো! অলোক মনে মনে হিসেব করে দেখে ৭ বছর পূর্ণ হবে ওদের। খুব কম সময় নয় কিন্তু! বিশেষত বর্তমান যুগে যেখানে ডিভোর্স মুড়ি মুড়কির মতো ঘটতে থাকে, বনিবনা না হলেই ছেলে মেয়ে উকিল ডেকে কাগজে সই করেই যে যার পথে চলে যেতে দুইবার ভাবে না। সেখানে শান্তি বিয়ের এত বছরেও কখনো ওকে এরকম পরিস্থিতে ফেলেনি। শান্তির মত শিক্ষিত, সুন্দরী, গুণবতী মেয়ে ওকে এবং ওর সংসারকে যেভাবে আগলে রেখেছে সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসলেই বিরল। অলোক প্রায়ই ভাবে শান্তি চাইলেই ওর চেয়ে অনেক ভালো ছেলে বিয়ে করতে পারতো। ওর সঙ্গেই কেন থেকে গেল মেয়েটি। অলোক কী শান্তিকে তার স্বপ্নের জীবনটা দিতে পেরেছে! নাহ! অলোক হাতের সিগারেটটি শেষ টান দিয়ে সামনের এস্ট্রেতে গুঁজে দেয়। অলোক মোবাইলে স্ক্রিনের কমেন্টবক্সে আবারো চোখ রাখে। হাজার খানেক মানুষ কমেন্ট করেছে। প্রত্যেকেই ওর স্ত্রীর রূপ যৌবনে মুগ্ধ হয়েছেন এই কমেন্টগুলো খারাপভাবে না নিয়ে বরং কত শত পুরুষের স্বপ্নের নারীকে একমাত্র ওর দখলেই রেখেছে, এভাবে ভাবলে একটা আত্মতৃপ্তি অনুভূত হয়। এভাবে চিন্তা করার কারণে অলোকের ভিতরে একরকম যৌন উত্তেজনা জেগে উঠতে থাকে। কেউ কেউ স্রেফ শান্তির রূপের প্রশংসা করেছে। কেউ কেউ আবার ওর সঙ্গে কীভাবে সঙ্গম করবে তার বর্ণনা লিখেছে। সেগুলো পড়তে পড়তে  ওর পুরুষাঙ্গটা কিছুটা শক্ত হয়ে উঠতে থাকে। এর মাঝে একটি ব্যতিক্রমী মন্তব্য সামনে আসে অলোকের। কমেন্টি করেছে একটি ছদ্মনামের আইডি। প্রোফাইল পিকচারে লাল রঙ্গের শিং ওয়ালা ডেভিলের ছবি দেওয়া। কমেন্টে লেখা আছে, "আমি ঐ অনুষ্ঠানের ক্যাটারিং কোম্পানিতে কাজ করছি। এই মাগীর ব্যাকস্টেজে গরম পারফর্মেন্স দেখতে চাইলে আমাকে ইনবক্স করো। সীমিত কিছু মানুষকে দেব।"

অলোক ভ্রু কুঁচকে আরো কয়েকবার কমেন্টটা পড়ে। ছবিতে ক্লিক করে আইডির প্রোফাইলে যায়। লক করা প্রোফাইল। হাজার খানের ফ্রেন্ড আছে দেখা যাচ্ছে। অলোক একবার ভাবলো কমেন্টটা ইগনোর করবে। অনলাইনে কত মানুষ কত রকম ঠগবাজি করে। এটাও তেমনই হবে।

অলোক ব্যাক করে বের হয়ে আসতে গিয়েও মনের মাঝে কোথায় যেন টান অনুভব করে। ঠগবাজটাকে একটু বাজিয়ে দেখলে কেমন হয়। হয়তো পত্রিকায় লেখার মত ভালো টপিক পাওয়া যেতে পারে। অলোকেরও একটা ছদ্ম নামের আইডি আছে। সেখান থেকে লোকটাকে কমেন্টে ইনবক্স চেক করতে বললো। সে ভেবেছিলো রিপ্লাই পেতে দেরি হবে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে লোকটা সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিলো 'ওকে।'

অলোক ইনবক্সে লিখলো, "আপনার কাছে কী ঐ মেয়েটির ভিডিও আছে?"
ফিরতি মেসেজ এলো, "আছে।"
অলোক কয়েকমুহূর্ত দম নিলো। এরকম ঝটপট প্রতিউত্তর ওকে কিছুটা ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। আছে মানে কি! কী বলতে চাচ্ছে লোকটা। অলোক মন থেকে জানে যে এই লোকটা একটা ফ্রড। কিন্তু এত কনফিডেন্টলি কী করে উত্তর দিচ্ছে! আচ্ছা যাই হোক, বাটপাররা শুরুতে এমন কনফিডেন্ট ভাব দেখায়, এটাই স্বাভাবিক। একটু চাপ দিলে তখন আসল রূপ বেরিয়ে আসে। অলোক নিজেকে সামলে নিয়ে লিখলো, "আমাকে সেন্ড করেন ভাই।"
"বিকাশ পেমেন্ট লাগবে।"
অলোক মুচকি হাসে এবার। ওর অনুমানই ঠিকই ছিলো। সব টাকা মারার ধান্দা।

(চলবে)
[+] 6 users Like শূন্যপুরাণ's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: যাদুকর - by nusrattashnim - 07-01-2025, 06:18 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 02:05 AM
RE: যাদুকর - by Jibon Ahmed - 07-01-2025, 11:50 PM
RE: যাদুকর - by Anita Dey - 08-01-2025, 12:08 AM
RE: যাদুকর - by Maleficio - 08-01-2025, 12:08 AM
RE: যাদুকর - by 212121 - 15-02-2025, 12:12 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 02:02 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 09-01-2025, 11:52 PM
RE: যাদুকর - by Dipto78 - 10-01-2025, 12:58 AM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 01:53 AM
RE: যাদুকর - by Robert Smith - 10-01-2025, 03:44 PM
RE: যাদুকর - by বহুরূপী - 11-01-2025, 06:57 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 01:45 AM
RE: যাদুকর - by Luck by chance - 10-01-2025, 11:16 PM
RE: যাদুকর - by chndnds - 11-01-2025, 03:57 PM
RE: যাদুকর - by blackdesk - 12-01-2025, 02:47 AM
RE: যাদুকর - by alex2023 - 12-01-2025, 06:28 AM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 01:42 AM
RE: যাদুকর - by Luca Modric - 12-01-2025, 09:32 AM
RE: যাদুকর - by Maleficio - 13-01-2025, 11:51 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 15-01-2025, 08:34 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 31-07-2025, 10:39 PM
RE: যাদুকর - by Mohan88 - 15-01-2025, 10:34 PM
RE: যাদুকর - by Damphu-77 - 23-01-2025, 03:45 AM
RE: যাদুকর - by Damphu-77 - 23-01-2025, 03:47 AM
RE: যাদুকর - by Panu2 - 24-01-2025, 02:33 PM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 04-02-2025, 12:36 AM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 02:18 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 05-02-2025, 01:46 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 11-02-2025, 02:55 AM
RE: যাদুকর - by 212121 - 01-08-2025, 02:16 AM
RE: যাদুকর - by Jibon Ahmed - 05-02-2025, 02:25 AM
RE: যাদুকর - by sudipto-ray - 10-02-2025, 01:36 PM
RE: যাদুকর - by dreampriya - 15-02-2025, 12:33 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 15-02-2025, 05:58 PM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 15-02-2025, 11:25 PM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 24-02-2025, 12:18 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 11-03-2025, 01:24 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 28-03-2025, 01:55 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 11-04-2025, 01:42 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 20-04-2025, 01:37 AM
RE: যাদুকর - by Black_Rainbow - 21-04-2025, 01:53 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 02-05-2025, 04:44 AM
RE: যাদুকর - by ray.rowdy - 03-06-2025, 01:42 AM
RE: যাদুকর - by Mohomoy - 03-06-2025, 04:10 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 31-07-2025, 09:40 PM
RE: যাদুকর - by Shuvo1 - 01-08-2025, 12:56 AM
RE: যাদুকর - by শূন্যপুরাণ - 07-08-2025, 01:22 PM
RE: যাদুকর - by 212121 - 31-07-2025, 09:31 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)