06-08-2025, 04:38 PM
কিছু সম্পরকঃ ২ (গ)
দুই বন্ধু জয়নাল আর রহিম যখন রহিমদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসার কথা বলছে , ঠিক তখনি রাজীব আর রানী নিজেদের পুরোন বাড়ির পেছনে মায়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে । দুজন পাশাপাশি একে অপরের সাথে লেগে দাড়িয়ে আছে , রাজীব এক হাত দিয়ে রানীর কাঁধ বেষ্টন করে রেখছে আর রানী এক হাত দিয়ে রাজীবের কোমর ।
হুহু করে কাঁদছে রানী , কান্নার দমকে হেঁচকি উঠে গেছে , নাকের পানি আটকানোর জন্য বার বার নাক টানছে । রানীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ ধরে কান্না করার কারনে ।
রাজীব কাঁদছে না , অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছে। রানীর সামনে ও কাঁদতে চায় না । ও কাঁদলে রানীকে সামলাবে কে । রাজীব রানীর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে মাথায় রাখলো । তারপর মোলায়েম স্বরে বলল “এভাবে কাঁদছিস কেনো রে পাগলী”
রানী কোন উত্তর দিলো না , কেঁদেই চলল , রাজীব এবার রানীর মাথা নিজের কাধের কাছে টেনে আনলো , বলল “ এভাবে কাঁদলে আম্মু দুঃখ পাবে”
“ কিন্তু …… আম্মু …… আআ আমাদের ছেড়ে …… চলে গেলো কেনো” আসলে গতকাল থেকে আয়শার আদর পেয়ে , আর আয়শা আর জান্নাতের সম্পর্ক দেখে রানী মনে মনে খুব মুষড়ে পরেছে । ওর কাছে মনে হয়েছে ওর নিজের মা থাকলে নিশ্চয়ই ওর সাথেও এমন সম্পর্ক থাকতো । মা ওকে শাসন করতো , আবার বুকেও জড়িয়ে নিতো । জান্নাতের মত রান্না ঘরের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলতে পারতো ‘ আম্মু চা দাও তোওওও’ । কাপড় ধোয়ার চিন্তা থাকতো না , সকাল বেলা নিজে নিজে ঘুম থেকে উঠতে হত না কলেজে যাওয়ার জন্য , প্রতিদিন মায়ের বকুনি খেয়ে তবেই বিছানা থেকে উঠত , তার আগে নয়।
“ আম্মু মনেহয় আমার জন্যই মারা গেছে , নারে ভাইয়া? আমি যদি না জন্মাতাম তাহলে হয়তো আম্মু অসুস্থ হত না” এই বলে রানী আরো জোরে কাঁদতে লাগলো , ওর সমস্ত শরীর কেপে কেপে উঠতে লাগলো কান্নার কারনে ।
এবার রাজীবের সহ্যর সীমা অতিক্রম হলো । রাজীব রানীর দুই বাহু ধরে ওকে নিজের সামনা সামনি নিয়ে এলো । তারপর দু হাতে বোনের মুখ উপরের দিকে তুলে ধরলো, রানীর এমন মুখ দেখে রাজীবের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো , নিজের চোখের বাধ ও ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো রাজীব , দু হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের নিচে আর গাল মুছে দিলো , তারপর হাতের তালু দিয়ে নাকের নিচটাও মুছিয়ে দিলো । তারপর বলল “এই কথা কোনদিন বলবি না, কে বলেছে আম্মু চলে গেছে আমাদের ছেড়ে, আম্মু তোর মাঝে নিজের কিছুটা আমাদের কাছে রেখে গেছে , আর দূর থেকে আমাদের দেখছে, বুঝলি”
কিন্তু রাজীবের কথায় রানী চোখের পানি থামে না , অঝরে ঝরতে থাকে । রাজীব আরো বলে “ আম্মু তোর কারনে যায়নি , যদি কারো কারনে গিয়ে থাকে সেটা আমার কারনে ,বুঝলি আম্মু দেখতে চেয়েছে উনি আমাকে যে সব শিখিয়েছে তা আমি করতে পারি কিনা”
এবার চোখে খুলে তাকায় রানী , চোখে জিজ্ঞাসা । রাজীব বলতে থাকে “ জানিস তুই যেদিন প্রথম এলি আমি খুব রাগ করেছিলাম, ভেবেছিলাম এই কোন আপদ এলো” এটুকু বলে রাজীব একটু মুচকি হাসল , তারপর আবার বলতে লাগলো
“ তোকে নিয়ে আম্মু কিছু করতে গেলেই আমি জেদ করতাম , কান্নাকাটি করতাম , এমন কি তোকে মারতাম” এবার রানী অবাক হয় , রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতে ওর কষ্ট হয় ।
এদিকে রাজীব বলতে থাকে “ সব কিছুতেই হিংসা করতাম , তোকে কোন খেলনা কিনে দিলে আমাকেও কিনে দিতো হত”
“ ভাইয়া মিথ্যা বলিস কেনো বানিয়ে বানিয়ে” রানীর কান্না কিছুটা কমে এসেছে , তবে এখনো নাকের পানি থামানোর জন্য বার বার নাক টানতে হচ্ছে । একবার নাক টেনে নিয়ে আবার বলল “ তুই তখন দুই বছরের ছিলি , তোর কি এসব মনে আছে?”
“ না আমার মনে নেই , তবে আম্মু আমাকে বলছে , আর সুধু ছোট বেলায় নয় , আমি বড় হওয়ার পর ও তোকে কতবার মেরেছি, তুই হয়তো ভুলে গেছিস,”
“সত্যি?” রানী অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞাস করে । রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতেও ওর কষ্ট হয় । কারন ওর যতটুকু সৃতি আছে , রাজীব কোনদিন মারা তো দুরের কথা ধমক ও দেয়নি ।
“ হ্যাঁরে সত্যি , আমি কি দুষ্ট কম ছিলাম নাকি?” এই বলে রাজীব কয়েক সেকেন্ড থামে , তারপর আবার বলতে শুরু করে , “জানিস, আমি যখন তোকে মারতাম বা হিংসা করতাম তখন আম্মু কি বলতো?”
রানী কোন কিছু বলল না উত্তরে , তবে ওর নীরবতা বোঝাতে চাইলো ও জানতে চায় । মায়ের গল্প যতই শোনে ততই শুনতে আরো আগ্রহ বারে ।
রাজীব বলতে শুরু করলো , “ আম্মু তখন আমাকে কোলে তুলে নিত , খুব আদর করতো , আর বলতো… আমার রাজীব সোনা , চাঁদের কনা , তুই তোর বোন কে দেখতে পারিস না কেনো? আমি উত্তরে চুপ করে থাকতাম , তখন আম্মু আমাকে বলতো , তুই কি জানিস , তোর বোন দুনিয়ায় কেনো এসেছে ? আমি তখন একটু নরম হয়ে আসতাম মাথা নেড়ে বোঝাতাম, জানি না। তখন আম্মু বলতো , তোর বোন এসেছে তোর জন্য একটা জ্যান্ত খেলনা হয়ে , ঈশ্বর চিন্তা করেছে আমাদের রাজীব এতো ভালো ছেলে তাই ওর জন্য একটা সুন্দর জ্যান্ত পুতুল পাঠিয়ে দেই, আম্মুর এই কথা শুনে আমি খুব খুশি হতাম । তখন আম্মু আমাকে আরো বলতো , সব সময় মনে রাখবি , এই খেলনা তোর জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ , আর ঈশ্বরের আশীর্বাদের অপমান করতে নেই , তুই যতদিন থাকবি এর খেয়াল রাখবি । কোনদিন যেন ও দুঃখ কষ্ট না পায় সেটা দেখে রাখতে হবে , জীবনে যদি কোনদিন ওর কোন দুঃখ আসে আর ওর পাশে থাকার মত কেউ না থাকে , তখন ওর সবচেয়ে বড় আশ্রয় হবি তুই” এটুকু বলে রাজীব একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় ।
রানীর কান্না এতক্ষনে থেমে এসেছে , রাজীবের মুখে এসব কথা শুনতে ওর বেশ ভালো লাগে ।
রাজীব আবার বলতে শুরু করে “ কিন্তু আমি কিছুক্ষন পর ই আম্মুর বলা গুলো ভুলে যেতাম , আবার তোকে মারতাম , হিংসা করতাম , কিন্তু সব কিছু পালটে গেলো আম্মু চলে যাওয়ার পর, তুই যখন দরজা ধরে কাঁদছিলি তখন তোর দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো , সেদিন আমার বয়স কত আর ছিলো আট কি নয়, কিন্তু সেদিন ওই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আম্মু আমার জন্য একটা সুন্দর পুতুল রেখে গেছে , আমাকে যে করেই হোক ওই পুতুলের যত্ন নিতে হবে , কিছুতেই ওই পুতুলের কোন ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না । বিশ্বাস কর আজকে তোর সামনে যে রাজীব দাড়িয়ে আছে , যাকে নিয়ে তোর এতো গর্ব , যার উপর তোর এতো ভরসা , এ রাজীব এমন হতে পেরেছে সুধু আমার ঐদিনের সেই ছোট্ট পুতুল আর আজকের মহারানী তোর কারনে । না হলে হয়তো অন্য রকম হতাম আজ , আর এটা হয়তো আম্মু বুঝতে পেরেছিলো , তাই আমাদের রেখে দূরে গিয়ে, আমারদের জন্য অপেক্ষা করছে যেন আমরা আমাদের জীবন সুন্দর ভাবে কাটিয়ে আবার তার কোলে ফিরে যাবো ”
রানী জানে রাজীব সুধু ওর মন ভালো করার জন্য এই গল্প ফেঁদেছে , এটা সত্যি যে রাজীব ওর সব খেয়াল রাখে । রাজীব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের আগে ওর কথা ভেবে নিয়ে ওর প্রয়োজন মিটিয়ে তবেই সেই পক্ষেপ নিয়েছে । কিন্তু রানীর বিশ্বাস ওর জন্য নয় আজকে যে রাজীব ওর সামনে দাড়িয়ে আছে সে নিজের গুণাবলীর কারনেই আজকের অবস্থানে আছে । কিন্তু তবুও রাজীবের বলা মায়ের মৃত্যুর কারন , সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় , যদিও জানে এটা সুধুই রাজীবের মনগড়া কথা । আসল কারন রানী জানে ।
রানীর আর কাঁদতে ইচ্ছে হয় না , রাজীবের এতো চেষ্টার পরেও যদি ও কাঁদে সেটা রাজীবের উপর সু বিচার হবে না । তাই পরিবেশ হালকা করার জন্য রানী জিজ্ঞাস করে “ আচ্ছা আমার জন্য না হলে তুই কেমন হতি ভাইয়া”
রাজীব হাসতে হসাতে বলে “ জয়ের মত হয়তো”
“ কেনো জয় কি খারাপ ছেলে?” রানী জিজ্ঞাস করে , জিজ্ঞাস করার সময় গতকাল দেখা হওয়ার দৃশ্য ওর চোখে ভেসে ওঠে আর অজথা এই কষ্টের মাঝেও ঠোঁটের কোনে একটু হাসি ফুটে ওঠে ।
“ না না জয় খারাপ ছেলে না , ও হচ্ছে স্বাভাবিক ছেলে , এই বয়সের ছেলেরা যেমন হয় , কেয়ার ফ্রি , হিরো টাইপ”
“ তুই কি টাইপ ভাইয়া , আমার কাছে তো তোকেই হিরো মনে হয়” রানী আবার জিজ্ঞাস করে , ওর মনে একটা শঙ্কা তৈরি হয় , হয়তো রাজীবের স্বাভাবিক জীবন ওর জন্য ব্যাহত হয়েছে । মনটা আবার ভারি হতে শুরু করে ।
“ উহু আমি হচ্ছি ভাই টাইপ ছেলে হা হা হা” রাজীবের হাসিও রানীর মন কে সান্তনা দিতে পারলো না , বার বার ওর মনে হচ্ছে রাজীবের জন্য ও একটা বাড়তি দায়িত্ব , রাজীবের বয়সি কোন মানুষের কাধেই এমন বাড়তি দায়িত্বের বোঝার ভার পরা ঠিক নয়।
দুজনে এখন পাশাপাশি হাঁটছে রানী নিজের দু হাত দিয়ে রাজীবের একটা হাত আঁকড়ে আছে , ওর হাত যেন বলতে চাইছে ‘ধন্যবাদ ভাইয়া’ , যত শক্ত করে ধরবে তত বড় ধন্যবাদ । অবশ্য কোন ধন্যবাদ ই রাজীবের জন্য যথেষ্ট নয় । কারন রানী জানে যদি রাজীব ওকে সামলে না নিতো তাহলে হয়তো ও আজকের রানী হয়ে উঠতে পারতো না । ধিরে ধিরে ওরা দুজন পুরোন শিকদার বাড়ির আড়ালে চলে গেলো ।
রাজীব আর রানীর এতক্ষনের কার্যকলাপ একটা জোড়া চোখ চৌধুরী বাড়ির ছাদ থেকে অবলোকন করছিলো । জান্নাতের কাছে ওদের ভাই বোনের এরোকম ক্লোজ সম্পর্ক একটু অধভুত লাগলো , এই ধরনের ভাই বোনের সম্পর্ক দেখে ও অভ্যস্ত নয় । বিশেষ করে পিঠাপিঠি ভাই বোনের মাঝে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে , এমন নয় যে ভালবাসা থাকে না , থাকে কিন্তু তার চেয়ে বেশি থাকে হিংসা প্রতিযোগিতা , একজন ভাবে বাবা মা অন্যজন কে বেশি আদর করছে , অন্যজন কে বেশি দিচ্ছে । একজন একটু বেশি ভালো করলে অন্যজনের উপর সেটা চাপ হয়ে দাড়ায় , সবাই একজন কে দিয়ে অন্যজন কে বিচার করে , এতে করে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয় । একজন আরেক জনের প্রতি ভালবাসা খুলে প্রকাশ করতে লজ্জা পায় । এতক্ষণ রাজীব আর রানীর সম্পর্কের যে বন্ধন আর গভীরতা দেখা গেলো সেটা তো ভাবাই যায় না ।
এতক্ষণ চোখের সামনে দেখা দৃশ্য জান্নতের মনে গভির দাগ কাটলো , বিশেষ করে রাজীবের ভুমিকা । এতো সেন্সিবল ভাবে ট্রিট করলো ছোট বোন কে। এরকম যে হয়, না দেখলে জান্নাত বিশ্বাস করতো না । রাজীবের আচরন দেখে মনে হচ্ছিলো রানী একটা মোমের পুতুল একটু এদিক সেদিক হলেই ভেঙ্গে যাবে ।
“ রাজীব তুই অন্য মাটি দিয়ে তৈরি রে , তোর আশেপাশের মানুষ খুব ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, কারন ওরা তোর মত কাউকে পেয়েছে নিজেদের পাশে” জান্নাত ফিসফিস করে নিজেকেই নিজে বলল ।
ততক্ষণে রাজীব আর রানী পুরোন শিকদার বাড়ির গেটের কাছে এসে দারিয়ছে । রাজীব পুরনো বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে , বাড়িটা ভুতের বাড়ি বলে মনে হচ্ছে । জানালা গুলো ভেঙ্গে পরেছে , দেয়ালের রঙ উঠে গেছে । রাজীব রানীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো “ এই বাড়ির কথা তোর মনে পরে?”
“ নাহ , তেমন কিছু না”
আফরোজা মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ঈদে রাজীব আর রানীকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতো জয়নাল আর আয়শা দম্পতি । কিন্তু রাহিম নিজে আসতো না বলে , ছেড়ে যাওয়ার পর এই বাড়িতে আর থাকা হয়নি রাজীব রানীর । ওরা আয়শা আর জয়নালের কাছে সপ্তা খানেক কাটিয়ে যেত ।
“ দেখিস আমরা আবারো এই বাড়িতে ফিরে আসবো একদিন” রাজীব এর কণ্ঠের দৃঢ় ভাব রানিকেও ছুয়ে যায় । বুঝতে পারে রাজীবের এই বাড়ির প্রতি কতটা টান ।
“ তুই যেখানে থাকবি , সেটাই আমার জন্য বাড়ি , ভাই। কোন বিশেষ বাড়ি আমার জন্য ইম্পরট্যান্ট না” রানী একটা উষ্ণ হাসি দিয়ে বলল , ওর বলার কারন হচ্ছে রাজীবের উপর থেকে কিছুটা হলেও চাপ কমানো । এমনিতেই রাজীব নিজের উপর এতো চাপ নিয়ে নিয়েছে । রানী চায় না এ বাড়ি ফিরে পেতে বাড়তি কোন চাপ রাজীব নিক ।
রাজীব রানীর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মুচকি হাসল , রানীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । একটু চুপ থেকে রানী আবার বলল “ আচ্ছা ভাইয়া তোর ইচ্ছা হয় না স্বাভাবিক ছেলেদের মত হাসি আনন্দে জীবন কাটাতে , এই বয়সে তোর এতো বড় ভারি বোঝা কাধে নিতে হচ্ছে, তোর কি মাঝে মাঝে মনে হয় না এরকম না হলেই ভালো হত”
রাজীব চুপ করে রানীর কথা শুনলো , তারপর কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর আপাদমস্তক একবার দেখে নিলো , রানী হঠাত রাজীবের এমন আচরনে অবাক হলো , ও একটা সিরিয়াস কথা বলছে আর রাজীব দুষ্টুমি করছে , রাগ হলো ওর কমরে দুই হাত রেখে বলল “ কি দেখিস হ্যা”
“ দেখলাম , বোঝার ওজন কত? নাহ বেশি ভারি না এই পঞ্চাশ কেজির মত হবে” বলে রাজীব হো হো করে হাসতে লাগলো আর রানী কপট রাগে রাজীবের বাহুতে একটা ঘুষি দিলো । আর বিরক্তির সাথে বলল “ পঞ্চাশ না আটচল্লিশ”
রাজীব হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাবে বলল “ শোন আর কোনদিন এমন বলবি না ,কে বলছে তুই বোঝা হয়ে আমার উপর পরেছিস , তুই আমাদের বাড়ির প্রান ভোমরা তুই না থাকলে হয়তো আব্বু এক দিকে চলে যেতো আর আমি অন্যদিকে , বাড়িতে ফিরে তোকে দেখলে মনে হয় এটা একটা ঘর , তুই না থাকলে সেটা ছন্নছাড়া হয়ে পরে রইতো আর মারা দুজন ঘরহীন মানুষ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম ”
রানী ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো , নাহ সেখানে মিথ্যা বা মন ভুলানো বানোয়াট কোন কিছু দেখতে পেলো না। তবুও ওর মন মানলো না , ওর কাছে যদি টাইম মেশিন থাকতো তাহলে ও অতিতে ফিরে গিয়ে সব ঠিক করে দিতো , অন্তত রাজীব কে মুক্ত করে দিতো । “ তুই তো কোনদিন ওই জীবন দেখিস ই নি ভাইয়া , তোর তো কোন বন্ধুও নেই , তোর সময় কেটেছে লেখা পড়া করে আমার আমাকে মানুষ করে”
“ কে বলছে আমার বন্ধু নেই , জয় আছে না , ওর মত একটা বন্ধু থাকলেই যথেষ্ট এর বেশি থাকলে আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম , হা হা হা” রাজীব উচ্চস্বরে হাসতে হসাতে বলল
রানীর গালে আবারো হালকা উষ্ণতা অনুভুত হতে লাগলো । কেনো যেন বার বার কালকের পর থেকে যখনি জয়ের সামনে এসেছে অথবা জয়ের নাম নেয়া হয়েছে তখনি ঠোঁটে একটা হাসি আপনাআপনি চলে আসছে , নয়তো গাল গরম হয়ে যাচ্ছে । অথচ যখনি দেখা হয় সুধু দুষ্টুমি করে কথা বলে। এরকম দুষ্ট ছেলে রানী সহ্য করতে পারে না । সব সময় শান্ত সৌম্য দুই পুরুষের সাথে থাকতে থাকতে রানীর কাছে ভালো ছেলে বলতে , ওর বাপ আর ভাইয়ের মত ছেলেকেই মনে হয় ।
কিন্তু জয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছেলে , সারাক্ষণ দুষ্টুমির মাঝেই থাকে এই যেমন গতকাল বিকেলে হঠাত বলল “এই রানী তুই কি ক্রিম মাখছিস রে?”
রানী হঠাত এমন প্রস্নে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ কেনো তোমার তাতে কি দরকার?”
উত্তরে জয় বলেছিলো “ জান্নাতকে নামটা বলে দে , ওর জন্য পাত্র খুজতে সুবিধা হবে, না থাক আমাকেই বল আমিই কিনে এনে দেবো , বড় ভাই কোনদিন কাজে আসবে হ্যা”
এর পর আর কথা বলার সুযোগ পায়নি রানী , জান্নাত আর জয় ধুম লেগে গেছে ।
হঠাত রানীর কি মনে হলো ,ও রাজীব কে আজব একটা প্রস্ন করলো , বলল “ আচ্ছা জয় তোর বেশি আপন, নাকি আমি?”
রানীর প্রস্ন শুনে রাজীব মুচকি হাসে ,” এটা আবার কেমন প্রস্ন রে”
“ এটা এমনি প্রস্ন , উত্তর তোকে দিতেই হবে” রানী জেদ করে ।
“ তোরা দুজন , আব্বু , বড় আব্বু আম্মু এরা সকলে ই আমার জন্য বিশেষ মানুষ, এদের কারো সাথ কারো তুলনা করা কি সম্ভভ” রাজীব পাশ কাটানো উত্তর দেয় , আসলে এই নিয়ে রাজীব কখনো ভাবেই নি , উত্তর দিবে কি করে ।
“ উহু ডিপ্লমেট উত্তরে চলবে না , উত্তর চাই” রানী দু হাত কমরে রেখে দাড়ায় ।
রাজীব কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে , তারপর বলে “ জয় আর তুই দুজনেই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বেক্তি , তোদের ছাড়া আমি হয়তো ঠিক আমি থাকবো না । জয় হচ্ছে আমার এমন ভাই যাকে আমি নিজে পছন্দ করে নিয়েছি । আর তুই হচ্ছিস আমার জন্য ঈশ্বরের দেয়া উপহার , আর ঈশ্বরের দেয়া উপহারের চেয়ে বড় কিছু কারো জন্য কিছুই হতে পারে না । “
রানী মাথা চুল্কে বলে “ কিছুই বুঝলাম না ,”
“ আমি নিজেই বুঝিনি তুই কি বুঝবি” রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে
কিন্তু রানী থেমে যাওয়ার পাত্রী নয় , ইন্সটাগ্রাম রিলস এ দেখা বহুল প্রচলিত একটা রিলস , যা সাধারণত মা আর বউ এর ব্যাপারে ব্যবহার করা হয় , একটু পরিবর্তন করে রাজীবের দিকে ছুরে দিলো , বলল “ আচ্ছা ধর একটা নৌকাতে আমি আর জয় , নৌকা ডুবে যাচ্ছে , তুই সুধু একজন কে বাঁচাতে পারবি , এবার বল তুই কাকে বাঁচাবি” রানী মনে মনে ভাবে এবার জব্দ করতে পেরেছি ।
“ তুই ত দেখি আজকে আমার পরিক্ষা নিয়েই ছাড়বি , হঠাত জয়ের পেছনে লাগলি কেনো রে” রাজীব হাসতে হাসতে বলল
“ আমি কই জয়ের পেছনে লাগলাম , তুই উত্তর দে”
রাজীব ও ইন্সটাগ্রাম রিলসে দেখা একটি লাইন বলে উত্তর দিয়ে দিলো “ প্রথমে আমি তোকে বাচাবো , তারপর জয়ে কে বাঁচানোর চেষ্টা করবো , যদি না পারি দুজনে এক সাথে ডুবে যাবো হা হা হা “ রাজীব উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো , ইস্টাগ্রামে যখন এই উত্তর টা দেখেছিলো তখন ওর কাছে বেশ ক্রিঞ্জ লেগেছিলো ।
হাসিতে রানীও যোগ দিলো , বলল “ তুই ও আজকাল ইস্টাগ্রাম দেখিস খুব না? ”
এবার রানী পাশ থেকে রাজীব কে জড়িয়ে ধরলো , মুখে চোওড়া হাসি টেনে বলল “ আচ্ছা ভাইয়া আমি যদি কোনদিন তোর অবাধ্য হই , কথা না শুনি , অথবা তোকে দুঃখ দেই ,তুই কি খুব রাগ করবি ”
“ আরে আজকে আমাদের রানীকে কে কি প্রস্ন রোগে পেলো নাকি ?” এই বলে রাজীব একটু হেসে নিলো , তারপর বলল “না , আমি কোনদিন তোর উপর রাগ করবো না , কি করে রাগ করবো বল , তুই হচ্ছিস আমাদের মহারানী আর আমরা তোর প্রজা , প্রজা কি রানীর উপর রাগ করতে পারে? হয়তো বা দুঃখ পাবো ” রানী আরো ভালো করে রাজীব কে আকড়ে ধরে । দুজনের মুখের হাসি লেগে আছে দুজনেই নিজদের মাঝে আরামদায়ক উষ্ণতা অনুভব করে , টের পায় রক্তে রক্তে কথা বলছে । যা ওদের মুখের হাসিকে আরো চোওড়া করে ।
“ উহু তুই প্রজা না , তুই ও রাজা” রানী রাজীবের কাধে মাথা রেখে বলে ।
রাজীব নিজের কাধের উপর রাখা রানীর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “ নারে আমার পাগলী রানী , আমি রাজা নই , আমি তোর প্রজা হয়েই খুশি । তবে একদিন তোর রাজা আসবে ,যখন সেই রাজা আসবে তুই নিজে থেকেই বুঝে যাবি”
এবার রানী লজ্জা পায় , রাজীব কে ছেড়ে দিয়ে ওর বাহুতে আর একটি থাপ্পড় দেয় বলে “ আমার দরকার নেই , যেমন আছি তেমনি ভালো” কথা শেষে করে রানী চৌধুরী বাড়ির গেটের দিকে দ্রুত পদে হাটা দেয় । রাজীব পেছনে দাড়িয়ে হাসতে থাকে , কিন্তু সেই হাসির পেছনে আবছা একটা বেদনা ঢাকা পড়তে দেখা যায় ।
******
দুই বন্ধু জয়নাল আর রহিম যখন রহিমদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসার কথা বলছে , ঠিক তখনি রাজীব আর রানী নিজেদের পুরোন বাড়ির পেছনে মায়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে । দুজন পাশাপাশি একে অপরের সাথে লেগে দাড়িয়ে আছে , রাজীব এক হাত দিয়ে রানীর কাঁধ বেষ্টন করে রেখছে আর রানী এক হাত দিয়ে রাজীবের কোমর ।
হুহু করে কাঁদছে রানী , কান্নার দমকে হেঁচকি উঠে গেছে , নাকের পানি আটকানোর জন্য বার বার নাক টানছে । রানীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ ধরে কান্না করার কারনে ।
রাজীব কাঁদছে না , অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছে। রানীর সামনে ও কাঁদতে চায় না । ও কাঁদলে রানীকে সামলাবে কে । রাজীব রানীর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে মাথায় রাখলো । তারপর মোলায়েম স্বরে বলল “এভাবে কাঁদছিস কেনো রে পাগলী”
রানী কোন উত্তর দিলো না , কেঁদেই চলল , রাজীব এবার রানীর মাথা নিজের কাধের কাছে টেনে আনলো , বলল “ এভাবে কাঁদলে আম্মু দুঃখ পাবে”
“ কিন্তু …… আম্মু …… আআ আমাদের ছেড়ে …… চলে গেলো কেনো” আসলে গতকাল থেকে আয়শার আদর পেয়ে , আর আয়শা আর জান্নাতের সম্পর্ক দেখে রানী মনে মনে খুব মুষড়ে পরেছে । ওর কাছে মনে হয়েছে ওর নিজের মা থাকলে নিশ্চয়ই ওর সাথেও এমন সম্পর্ক থাকতো । মা ওকে শাসন করতো , আবার বুকেও জড়িয়ে নিতো । জান্নাতের মত রান্না ঘরের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলতে পারতো ‘ আম্মু চা দাও তোওওও’ । কাপড় ধোয়ার চিন্তা থাকতো না , সকাল বেলা নিজে নিজে ঘুম থেকে উঠতে হত না কলেজে যাওয়ার জন্য , প্রতিদিন মায়ের বকুনি খেয়ে তবেই বিছানা থেকে উঠত , তার আগে নয়।
“ আম্মু মনেহয় আমার জন্যই মারা গেছে , নারে ভাইয়া? আমি যদি না জন্মাতাম তাহলে হয়তো আম্মু অসুস্থ হত না” এই বলে রানী আরো জোরে কাঁদতে লাগলো , ওর সমস্ত শরীর কেপে কেপে উঠতে লাগলো কান্নার কারনে ।
এবার রাজীবের সহ্যর সীমা অতিক্রম হলো । রাজীব রানীর দুই বাহু ধরে ওকে নিজের সামনা সামনি নিয়ে এলো । তারপর দু হাতে বোনের মুখ উপরের দিকে তুলে ধরলো, রানীর এমন মুখ দেখে রাজীবের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো , নিজের চোখের বাধ ও ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো রাজীব , দু হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের নিচে আর গাল মুছে দিলো , তারপর হাতের তালু দিয়ে নাকের নিচটাও মুছিয়ে দিলো । তারপর বলল “এই কথা কোনদিন বলবি না, কে বলেছে আম্মু চলে গেছে আমাদের ছেড়ে, আম্মু তোর মাঝে নিজের কিছুটা আমাদের কাছে রেখে গেছে , আর দূর থেকে আমাদের দেখছে, বুঝলি”
কিন্তু রাজীবের কথায় রানী চোখের পানি থামে না , অঝরে ঝরতে থাকে । রাজীব আরো বলে “ আম্মু তোর কারনে যায়নি , যদি কারো কারনে গিয়ে থাকে সেটা আমার কারনে ,বুঝলি আম্মু দেখতে চেয়েছে উনি আমাকে যে সব শিখিয়েছে তা আমি করতে পারি কিনা”
এবার চোখে খুলে তাকায় রানী , চোখে জিজ্ঞাসা । রাজীব বলতে থাকে “ জানিস তুই যেদিন প্রথম এলি আমি খুব রাগ করেছিলাম, ভেবেছিলাম এই কোন আপদ এলো” এটুকু বলে রাজীব একটু মুচকি হাসল , তারপর আবার বলতে লাগলো
“ তোকে নিয়ে আম্মু কিছু করতে গেলেই আমি জেদ করতাম , কান্নাকাটি করতাম , এমন কি তোকে মারতাম” এবার রানী অবাক হয় , রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতে ওর কষ্ট হয় ।
এদিকে রাজীব বলতে থাকে “ সব কিছুতেই হিংসা করতাম , তোকে কোন খেলনা কিনে দিলে আমাকেও কিনে দিতো হত”
“ ভাইয়া মিথ্যা বলিস কেনো বানিয়ে বানিয়ে” রানীর কান্না কিছুটা কমে এসেছে , তবে এখনো নাকের পানি থামানোর জন্য বার বার নাক টানতে হচ্ছে । একবার নাক টেনে নিয়ে আবার বলল “ তুই তখন দুই বছরের ছিলি , তোর কি এসব মনে আছে?”
“ না আমার মনে নেই , তবে আম্মু আমাকে বলছে , আর সুধু ছোট বেলায় নয় , আমি বড় হওয়ার পর ও তোকে কতবার মেরেছি, তুই হয়তো ভুলে গেছিস,”
“সত্যি?” রানী অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞাস করে । রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতেও ওর কষ্ট হয় । কারন ওর যতটুকু সৃতি আছে , রাজীব কোনদিন মারা তো দুরের কথা ধমক ও দেয়নি ।
“ হ্যাঁরে সত্যি , আমি কি দুষ্ট কম ছিলাম নাকি?” এই বলে রাজীব কয়েক সেকেন্ড থামে , তারপর আবার বলতে শুরু করে , “জানিস, আমি যখন তোকে মারতাম বা হিংসা করতাম তখন আম্মু কি বলতো?”
রানী কোন কিছু বলল না উত্তরে , তবে ওর নীরবতা বোঝাতে চাইলো ও জানতে চায় । মায়ের গল্প যতই শোনে ততই শুনতে আরো আগ্রহ বারে ।
রাজীব বলতে শুরু করলো , “ আম্মু তখন আমাকে কোলে তুলে নিত , খুব আদর করতো , আর বলতো… আমার রাজীব সোনা , চাঁদের কনা , তুই তোর বোন কে দেখতে পারিস না কেনো? আমি উত্তরে চুপ করে থাকতাম , তখন আম্মু আমাকে বলতো , তুই কি জানিস , তোর বোন দুনিয়ায় কেনো এসেছে ? আমি তখন একটু নরম হয়ে আসতাম মাথা নেড়ে বোঝাতাম, জানি না। তখন আম্মু বলতো , তোর বোন এসেছে তোর জন্য একটা জ্যান্ত খেলনা হয়ে , ঈশ্বর চিন্তা করেছে আমাদের রাজীব এতো ভালো ছেলে তাই ওর জন্য একটা সুন্দর জ্যান্ত পুতুল পাঠিয়ে দেই, আম্মুর এই কথা শুনে আমি খুব খুশি হতাম । তখন আম্মু আমাকে আরো বলতো , সব সময় মনে রাখবি , এই খেলনা তোর জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ , আর ঈশ্বরের আশীর্বাদের অপমান করতে নেই , তুই যতদিন থাকবি এর খেয়াল রাখবি । কোনদিন যেন ও দুঃখ কষ্ট না পায় সেটা দেখে রাখতে হবে , জীবনে যদি কোনদিন ওর কোন দুঃখ আসে আর ওর পাশে থাকার মত কেউ না থাকে , তখন ওর সবচেয়ে বড় আশ্রয় হবি তুই” এটুকু বলে রাজীব একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় ।
রানীর কান্না এতক্ষনে থেমে এসেছে , রাজীবের মুখে এসব কথা শুনতে ওর বেশ ভালো লাগে ।
রাজীব আবার বলতে শুরু করে “ কিন্তু আমি কিছুক্ষন পর ই আম্মুর বলা গুলো ভুলে যেতাম , আবার তোকে মারতাম , হিংসা করতাম , কিন্তু সব কিছু পালটে গেলো আম্মু চলে যাওয়ার পর, তুই যখন দরজা ধরে কাঁদছিলি তখন তোর দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো , সেদিন আমার বয়স কত আর ছিলো আট কি নয়, কিন্তু সেদিন ওই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আম্মু আমার জন্য একটা সুন্দর পুতুল রেখে গেছে , আমাকে যে করেই হোক ওই পুতুলের যত্ন নিতে হবে , কিছুতেই ওই পুতুলের কোন ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না । বিশ্বাস কর আজকে তোর সামনে যে রাজীব দাড়িয়ে আছে , যাকে নিয়ে তোর এতো গর্ব , যার উপর তোর এতো ভরসা , এ রাজীব এমন হতে পেরেছে সুধু আমার ঐদিনের সেই ছোট্ট পুতুল আর আজকের মহারানী তোর কারনে । না হলে হয়তো অন্য রকম হতাম আজ , আর এটা হয়তো আম্মু বুঝতে পেরেছিলো , তাই আমাদের রেখে দূরে গিয়ে, আমারদের জন্য অপেক্ষা করছে যেন আমরা আমাদের জীবন সুন্দর ভাবে কাটিয়ে আবার তার কোলে ফিরে যাবো ”
রানী জানে রাজীব সুধু ওর মন ভালো করার জন্য এই গল্প ফেঁদেছে , এটা সত্যি যে রাজীব ওর সব খেয়াল রাখে । রাজীব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের আগে ওর কথা ভেবে নিয়ে ওর প্রয়োজন মিটিয়ে তবেই সেই পক্ষেপ নিয়েছে । কিন্তু রানীর বিশ্বাস ওর জন্য নয় আজকে যে রাজীব ওর সামনে দাড়িয়ে আছে সে নিজের গুণাবলীর কারনেই আজকের অবস্থানে আছে । কিন্তু তবুও রাজীবের বলা মায়ের মৃত্যুর কারন , সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় , যদিও জানে এটা সুধুই রাজীবের মনগড়া কথা । আসল কারন রানী জানে ।
রানীর আর কাঁদতে ইচ্ছে হয় না , রাজীবের এতো চেষ্টার পরেও যদি ও কাঁদে সেটা রাজীবের উপর সু বিচার হবে না । তাই পরিবেশ হালকা করার জন্য রানী জিজ্ঞাস করে “ আচ্ছা আমার জন্য না হলে তুই কেমন হতি ভাইয়া”
রাজীব হাসতে হসাতে বলে “ জয়ের মত হয়তো”
“ কেনো জয় কি খারাপ ছেলে?” রানী জিজ্ঞাস করে , জিজ্ঞাস করার সময় গতকাল দেখা হওয়ার দৃশ্য ওর চোখে ভেসে ওঠে আর অজথা এই কষ্টের মাঝেও ঠোঁটের কোনে একটু হাসি ফুটে ওঠে ।
“ না না জয় খারাপ ছেলে না , ও হচ্ছে স্বাভাবিক ছেলে , এই বয়সের ছেলেরা যেমন হয় , কেয়ার ফ্রি , হিরো টাইপ”
“ তুই কি টাইপ ভাইয়া , আমার কাছে তো তোকেই হিরো মনে হয়” রানী আবার জিজ্ঞাস করে , ওর মনে একটা শঙ্কা তৈরি হয় , হয়তো রাজীবের স্বাভাবিক জীবন ওর জন্য ব্যাহত হয়েছে । মনটা আবার ভারি হতে শুরু করে ।
“ উহু আমি হচ্ছি ভাই টাইপ ছেলে হা হা হা” রাজীবের হাসিও রানীর মন কে সান্তনা দিতে পারলো না , বার বার ওর মনে হচ্ছে রাজীবের জন্য ও একটা বাড়তি দায়িত্ব , রাজীবের বয়সি কোন মানুষের কাধেই এমন বাড়তি দায়িত্বের বোঝার ভার পরা ঠিক নয়।
দুজনে এখন পাশাপাশি হাঁটছে রানী নিজের দু হাত দিয়ে রাজীবের একটা হাত আঁকড়ে আছে , ওর হাত যেন বলতে চাইছে ‘ধন্যবাদ ভাইয়া’ , যত শক্ত করে ধরবে তত বড় ধন্যবাদ । অবশ্য কোন ধন্যবাদ ই রাজীবের জন্য যথেষ্ট নয় । কারন রানী জানে যদি রাজীব ওকে সামলে না নিতো তাহলে হয়তো ও আজকের রানী হয়ে উঠতে পারতো না । ধিরে ধিরে ওরা দুজন পুরোন শিকদার বাড়ির আড়ালে চলে গেলো ।
রাজীব আর রানীর এতক্ষনের কার্যকলাপ একটা জোড়া চোখ চৌধুরী বাড়ির ছাদ থেকে অবলোকন করছিলো । জান্নাতের কাছে ওদের ভাই বোনের এরোকম ক্লোজ সম্পর্ক একটু অধভুত লাগলো , এই ধরনের ভাই বোনের সম্পর্ক দেখে ও অভ্যস্ত নয় । বিশেষ করে পিঠাপিঠি ভাই বোনের মাঝে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে , এমন নয় যে ভালবাসা থাকে না , থাকে কিন্তু তার চেয়ে বেশি থাকে হিংসা প্রতিযোগিতা , একজন ভাবে বাবা মা অন্যজন কে বেশি আদর করছে , অন্যজন কে বেশি দিচ্ছে । একজন একটু বেশি ভালো করলে অন্যজনের উপর সেটা চাপ হয়ে দাড়ায় , সবাই একজন কে দিয়ে অন্যজন কে বিচার করে , এতে করে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয় । একজন আরেক জনের প্রতি ভালবাসা খুলে প্রকাশ করতে লজ্জা পায় । এতক্ষণ রাজীব আর রানীর সম্পর্কের যে বন্ধন আর গভীরতা দেখা গেলো সেটা তো ভাবাই যায় না ।
এতক্ষণ চোখের সামনে দেখা দৃশ্য জান্নতের মনে গভির দাগ কাটলো , বিশেষ করে রাজীবের ভুমিকা । এতো সেন্সিবল ভাবে ট্রিট করলো ছোট বোন কে। এরকম যে হয়, না দেখলে জান্নাত বিশ্বাস করতো না । রাজীবের আচরন দেখে মনে হচ্ছিলো রানী একটা মোমের পুতুল একটু এদিক সেদিক হলেই ভেঙ্গে যাবে ।
“ রাজীব তুই অন্য মাটি দিয়ে তৈরি রে , তোর আশেপাশের মানুষ খুব ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, কারন ওরা তোর মত কাউকে পেয়েছে নিজেদের পাশে” জান্নাত ফিসফিস করে নিজেকেই নিজে বলল ।
ততক্ষণে রাজীব আর রানী পুরোন শিকদার বাড়ির গেটের কাছে এসে দারিয়ছে । রাজীব পুরনো বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে , বাড়িটা ভুতের বাড়ি বলে মনে হচ্ছে । জানালা গুলো ভেঙ্গে পরেছে , দেয়ালের রঙ উঠে গেছে । রাজীব রানীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো “ এই বাড়ির কথা তোর মনে পরে?”
“ নাহ , তেমন কিছু না”
আফরোজা মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ঈদে রাজীব আর রানীকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতো জয়নাল আর আয়শা দম্পতি । কিন্তু রাহিম নিজে আসতো না বলে , ছেড়ে যাওয়ার পর এই বাড়িতে আর থাকা হয়নি রাজীব রানীর । ওরা আয়শা আর জয়নালের কাছে সপ্তা খানেক কাটিয়ে যেত ।
“ দেখিস আমরা আবারো এই বাড়িতে ফিরে আসবো একদিন” রাজীব এর কণ্ঠের দৃঢ় ভাব রানিকেও ছুয়ে যায় । বুঝতে পারে রাজীবের এই বাড়ির প্রতি কতটা টান ।
“ তুই যেখানে থাকবি , সেটাই আমার জন্য বাড়ি , ভাই। কোন বিশেষ বাড়ি আমার জন্য ইম্পরট্যান্ট না” রানী একটা উষ্ণ হাসি দিয়ে বলল , ওর বলার কারন হচ্ছে রাজীবের উপর থেকে কিছুটা হলেও চাপ কমানো । এমনিতেই রাজীব নিজের উপর এতো চাপ নিয়ে নিয়েছে । রানী চায় না এ বাড়ি ফিরে পেতে বাড়তি কোন চাপ রাজীব নিক ।
রাজীব রানীর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মুচকি হাসল , রানীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । একটু চুপ থেকে রানী আবার বলল “ আচ্ছা ভাইয়া তোর ইচ্ছা হয় না স্বাভাবিক ছেলেদের মত হাসি আনন্দে জীবন কাটাতে , এই বয়সে তোর এতো বড় ভারি বোঝা কাধে নিতে হচ্ছে, তোর কি মাঝে মাঝে মনে হয় না এরকম না হলেই ভালো হত”
রাজীব চুপ করে রানীর কথা শুনলো , তারপর কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর আপাদমস্তক একবার দেখে নিলো , রানী হঠাত রাজীবের এমন আচরনে অবাক হলো , ও একটা সিরিয়াস কথা বলছে আর রাজীব দুষ্টুমি করছে , রাগ হলো ওর কমরে দুই হাত রেখে বলল “ কি দেখিস হ্যা”
“ দেখলাম , বোঝার ওজন কত? নাহ বেশি ভারি না এই পঞ্চাশ কেজির মত হবে” বলে রাজীব হো হো করে হাসতে লাগলো আর রানী কপট রাগে রাজীবের বাহুতে একটা ঘুষি দিলো । আর বিরক্তির সাথে বলল “ পঞ্চাশ না আটচল্লিশ”
রাজীব হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাবে বলল “ শোন আর কোনদিন এমন বলবি না ,কে বলছে তুই বোঝা হয়ে আমার উপর পরেছিস , তুই আমাদের বাড়ির প্রান ভোমরা তুই না থাকলে হয়তো আব্বু এক দিকে চলে যেতো আর আমি অন্যদিকে , বাড়িতে ফিরে তোকে দেখলে মনে হয় এটা একটা ঘর , তুই না থাকলে সেটা ছন্নছাড়া হয়ে পরে রইতো আর মারা দুজন ঘরহীন মানুষ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম ”
রানী ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো , নাহ সেখানে মিথ্যা বা মন ভুলানো বানোয়াট কোন কিছু দেখতে পেলো না। তবুও ওর মন মানলো না , ওর কাছে যদি টাইম মেশিন থাকতো তাহলে ও অতিতে ফিরে গিয়ে সব ঠিক করে দিতো , অন্তত রাজীব কে মুক্ত করে দিতো । “ তুই তো কোনদিন ওই জীবন দেখিস ই নি ভাইয়া , তোর তো কোন বন্ধুও নেই , তোর সময় কেটেছে লেখা পড়া করে আমার আমাকে মানুষ করে”
“ কে বলছে আমার বন্ধু নেই , জয় আছে না , ওর মত একটা বন্ধু থাকলেই যথেষ্ট এর বেশি থাকলে আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম , হা হা হা” রাজীব উচ্চস্বরে হাসতে হসাতে বলল
রানীর গালে আবারো হালকা উষ্ণতা অনুভুত হতে লাগলো । কেনো যেন বার বার কালকের পর থেকে যখনি জয়ের সামনে এসেছে অথবা জয়ের নাম নেয়া হয়েছে তখনি ঠোঁটে একটা হাসি আপনাআপনি চলে আসছে , নয়তো গাল গরম হয়ে যাচ্ছে । অথচ যখনি দেখা হয় সুধু দুষ্টুমি করে কথা বলে। এরকম দুষ্ট ছেলে রানী সহ্য করতে পারে না । সব সময় শান্ত সৌম্য দুই পুরুষের সাথে থাকতে থাকতে রানীর কাছে ভালো ছেলে বলতে , ওর বাপ আর ভাইয়ের মত ছেলেকেই মনে হয় ।
কিন্তু জয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছেলে , সারাক্ষণ দুষ্টুমির মাঝেই থাকে এই যেমন গতকাল বিকেলে হঠাত বলল “এই রানী তুই কি ক্রিম মাখছিস রে?”
রানী হঠাত এমন প্রস্নে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ কেনো তোমার তাতে কি দরকার?”
উত্তরে জয় বলেছিলো “ জান্নাতকে নামটা বলে দে , ওর জন্য পাত্র খুজতে সুবিধা হবে, না থাক আমাকেই বল আমিই কিনে এনে দেবো , বড় ভাই কোনদিন কাজে আসবে হ্যা”
এর পর আর কথা বলার সুযোগ পায়নি রানী , জান্নাত আর জয় ধুম লেগে গেছে ।
হঠাত রানীর কি মনে হলো ,ও রাজীব কে আজব একটা প্রস্ন করলো , বলল “ আচ্ছা জয় তোর বেশি আপন, নাকি আমি?”
রানীর প্রস্ন শুনে রাজীব মুচকি হাসে ,” এটা আবার কেমন প্রস্ন রে”
“ এটা এমনি প্রস্ন , উত্তর তোকে দিতেই হবে” রানী জেদ করে ।
“ তোরা দুজন , আব্বু , বড় আব্বু আম্মু এরা সকলে ই আমার জন্য বিশেষ মানুষ, এদের কারো সাথ কারো তুলনা করা কি সম্ভভ” রাজীব পাশ কাটানো উত্তর দেয় , আসলে এই নিয়ে রাজীব কখনো ভাবেই নি , উত্তর দিবে কি করে ।
“ উহু ডিপ্লমেট উত্তরে চলবে না , উত্তর চাই” রানী দু হাত কমরে রেখে দাড়ায় ।
রাজীব কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে , তারপর বলে “ জয় আর তুই দুজনেই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বেক্তি , তোদের ছাড়া আমি হয়তো ঠিক আমি থাকবো না । জয় হচ্ছে আমার এমন ভাই যাকে আমি নিজে পছন্দ করে নিয়েছি । আর তুই হচ্ছিস আমার জন্য ঈশ্বরের দেয়া উপহার , আর ঈশ্বরের দেয়া উপহারের চেয়ে বড় কিছু কারো জন্য কিছুই হতে পারে না । “
রানী মাথা চুল্কে বলে “ কিছুই বুঝলাম না ,”
“ আমি নিজেই বুঝিনি তুই কি বুঝবি” রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে
কিন্তু রানী থেমে যাওয়ার পাত্রী নয় , ইন্সটাগ্রাম রিলস এ দেখা বহুল প্রচলিত একটা রিলস , যা সাধারণত মা আর বউ এর ব্যাপারে ব্যবহার করা হয় , একটু পরিবর্তন করে রাজীবের দিকে ছুরে দিলো , বলল “ আচ্ছা ধর একটা নৌকাতে আমি আর জয় , নৌকা ডুবে যাচ্ছে , তুই সুধু একজন কে বাঁচাতে পারবি , এবার বল তুই কাকে বাঁচাবি” রানী মনে মনে ভাবে এবার জব্দ করতে পেরেছি ।
“ তুই ত দেখি আজকে আমার পরিক্ষা নিয়েই ছাড়বি , হঠাত জয়ের পেছনে লাগলি কেনো রে” রাজীব হাসতে হাসতে বলল
“ আমি কই জয়ের পেছনে লাগলাম , তুই উত্তর দে”
রাজীব ও ইন্সটাগ্রাম রিলসে দেখা একটি লাইন বলে উত্তর দিয়ে দিলো “ প্রথমে আমি তোকে বাচাবো , তারপর জয়ে কে বাঁচানোর চেষ্টা করবো , যদি না পারি দুজনে এক সাথে ডুবে যাবো হা হা হা “ রাজীব উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো , ইস্টাগ্রামে যখন এই উত্তর টা দেখেছিলো তখন ওর কাছে বেশ ক্রিঞ্জ লেগেছিলো ।
হাসিতে রানীও যোগ দিলো , বলল “ তুই ও আজকাল ইস্টাগ্রাম দেখিস খুব না? ”
এবার রানী পাশ থেকে রাজীব কে জড়িয়ে ধরলো , মুখে চোওড়া হাসি টেনে বলল “ আচ্ছা ভাইয়া আমি যদি কোনদিন তোর অবাধ্য হই , কথা না শুনি , অথবা তোকে দুঃখ দেই ,তুই কি খুব রাগ করবি ”
“ আরে আজকে আমাদের রানীকে কে কি প্রস্ন রোগে পেলো নাকি ?” এই বলে রাজীব একটু হেসে নিলো , তারপর বলল “না , আমি কোনদিন তোর উপর রাগ করবো না , কি করে রাগ করবো বল , তুই হচ্ছিস আমাদের মহারানী আর আমরা তোর প্রজা , প্রজা কি রানীর উপর রাগ করতে পারে? হয়তো বা দুঃখ পাবো ” রানী আরো ভালো করে রাজীব কে আকড়ে ধরে । দুজনের মুখের হাসি লেগে আছে দুজনেই নিজদের মাঝে আরামদায়ক উষ্ণতা অনুভব করে , টের পায় রক্তে রক্তে কথা বলছে । যা ওদের মুখের হাসিকে আরো চোওড়া করে ।
“ উহু তুই প্রজা না , তুই ও রাজা” রানী রাজীবের কাধে মাথা রেখে বলে ।
রাজীব নিজের কাধের উপর রাখা রানীর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “ নারে আমার পাগলী রানী , আমি রাজা নই , আমি তোর প্রজা হয়েই খুশি । তবে একদিন তোর রাজা আসবে ,যখন সেই রাজা আসবে তুই নিজে থেকেই বুঝে যাবি”
এবার রানী লজ্জা পায় , রাজীব কে ছেড়ে দিয়ে ওর বাহুতে আর একটি থাপ্পড় দেয় বলে “ আমার দরকার নেই , যেমন আছি তেমনি ভালো” কথা শেষে করে রানী চৌধুরী বাড়ির গেটের দিকে দ্রুত পদে হাটা দেয় । রাজীব পেছনে দাড়িয়ে হাসতে থাকে , কিন্তু সেই হাসির পেছনে আবছা একটা বেদনা ঢাকা পড়তে দেখা যায় ।
******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)