03-08-2025, 11:36 PM
পঞ্চম পর্ব
রাত দেড়টা। সোনালী নিজের রুমে বসে আয়নার সামনে। মেকআপ এখনো মোছেনি—গাঢ় লিপস্টিক, চোখে স্মোকি আইশ্যাডো, কিন্তু চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। পেছনে পড়ে থাকা পোশাক, ব্যাগ, চিত্রনাট্যের কাগজগুলো যেন তার উল্টোপথে ছুটে চলার প্রমাণ।
সে ধীরে ধীরে মেকআপ তুলতে থাকে। প্রতিটি স্ট্রোক যেন একটা করে মুখোশ খোলার মতো। নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে সে ফিসফিস করে—
“আমি কে? এই পরিচয়টাই কি আমার সব?”
আজকের শুটিংটা সহজ ছিল না। একটা 'রোল' হলেও, সেই চরিত্রে যাওয়া মানে নিজের আত্মাকে একটা অচেনা খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলা। সোনালীর মন আর শরীর এক নয় এখন।
তারপর ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে লেখা—Selena calling।
সে ফোনটা তুলে না। আজ সে কারো সঙ্গ চায় না, আজ সে নিজেকে জানতে চায়।
আসলে সেদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। স্বামীর বাড়ি থেকে আনা সোনালীর একটা বই ভর্তি সুটকেস অনেক দিন ধরে বন্ধ পরে ছিল। কাজের চাপে সেটা খুলে বই গুলো তাকে সাজিয়ে রাখা হয় নি। আজকে হঠাৎ কি মন হল পুরোনো সেই বই গুলো বার করে সাজাতে সাজাতে তার মধ্যে থেকে সে একটা পুরোনো নোটবুক খুঁজে পায়—কলকাতায় পড়ার সময়ের। ভিতরে নিজের আঁকা কিছু স্কেচ, কিছু কবিতা, আর একটা ছোট গল্প—
“একটা মেয়ে, যে ভুল পথে হেঁটেও ফিরে আসে নিজের সত্যিকারের স্বপ্ন খুঁজে পেতে।”
সে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাতাগুলোর দিকে। সত্যি একটা সময় তার জীবন দর্শন কতটা আলাদা ছিল, বিশেষ করে বিয়ের আগে আরো পরিষ্কার করে বলতে, স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা আসার আগে সোনালী সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষ ছিল।
ঘড়িতে রাত দুটো।
ফ্ল্যাটে হালকা আলো জ্বলছে, বাইরে শহরের নিস্তব্ধতা। হঠাৎ দরজার ল্যাচ খুলে যাওয়ার শব্দ।
সেলেনা ঢুকে পড়ে, এক হাতে ফোন, অন্য হাতে চাবি।
“Where the hell were you, babe? ফোনে ধরছো না, টেক্সটের রিপ্লাই নেই… I thought something went wrong!”
সোনালী চুপচাপ বিছানায় বসে। সেলেনার মুখে উদ্বেগ, কিন্তু চোখেমুখে একরকম অভ্যস্ত নির্লিপ্তি।
“বল তো, মুখ ক্যান এমন?” সেলেনা এগিয়ে এসে পাশে বসে।
সোনালী ধীরে ধীরে বলে, “ফোন ধরিনি, কারণ মনটা আজ খুব খারাপ… খুব খারাপ।”
সেলেনা হেসে ফেলে। “Oh come on! এই তো তোমাদের ইন্ডিয়ান দের প্রবলেম। তোমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকো। ফিউচারের কথা ভাবো না! হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ, সোনা?”
সোনালী কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “সব ঠিক আছে, শুধু আজ মনে পড়ছে আমার পুরোনো জীবনটা। যখন আমি একটা সরকারি কলেজে পড়াতাম, বাচ্চারা 'সোনালী ম্যাম' বলত। তখন সালোয়ার কামিজ পরতাম, স্লিভলেস ব্লাউজ পরতে লজ্জা করত…”
তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
“আর এখন?” সে নিজের বুকের ওপর হাত রাখে, “ক্যামেরার সামনে নগ্ন হই… লোকের স্পর্শ, লিপস্টিক আর আলোর ভিড়ে কোথাও আমি আর নিজেকে খুঁজে পাই না।”
সেলেনা হালকা হাসে, “Darling, grow up! তুমি পেছনে তাকালে চলবে না। তুমি এখন এক বিউটিফুল প্রোডাক্ট, ট্যালেন্টেড পারফর্মার। এসব ভাবলে টিকে থাকতে পারবে না।”
সোনালী রাগে ও হতাশায় বলে ওঠে, “তুমি বুঝবে না। তোমার জন্ম এই লাইফস্টাইলে। আর আমি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে মরছি প্রতিদিন।”
সেলেনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর বলল, “Okay, okay, calm down. আমি তোকে জোর করছি না। But tonight, I’m going to Mitch’s rave party. Lots of high people, crazy music. মুড ঠিক হয়ে যাবে। চল না আমার সাথে।”
সোনালী মাথা নেড়ে বলে, “না সেলেনা… আজ নয়। আমাকে একা থাকতে দাও।”
সেলেনা উঠে দাঁড়ায়, কাঁধ ঝাঁকায়, “Suit yourself. But remember, this life doesn’t wait. Either you swim, or you sink.”
দরজা বন্ধ হয়। সোনালী একা।
সে ধীরে ধীরে ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাইরের শহরে
র আলো আর তার চোখের জল মিশে যায়।
রাত কেটেছে নির্ঘুম। সকালে উঠে সোনালী টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি পুরোনো খাম বের করল। ভেতরে ছিল সেই কন্ট্রাক্ট পেপার, যা সে প্রথম সাইন করেছিল শুটিং শুরুর আগে।
কাগজগুলো ধীরে ধীরে পড়তে লাগল সে। প্রতিটি প্যারা যেন গলা চেপে ধরা একেকটা শ্বাস।
Clause 6.2: Artist shall not terminate the contract voluntarily before the stipulated tenure of 18 months without notice, failing which financial penalties shall be imposed.
Clause 8.4: During the notice period, the Artist shall complete all scheduled work, including shoots, promotional events, and private parties, failing which legal action may be taken.
সোনালী এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করল। মনে পড়ে গেল সেলেনার বলা কথা: “Either you swim or you sink.”
হঠাৎ একটা দৃঢ়তা এল তার চোখে। সে ফোন করল তার পরিচিত এক আইনজীবীকে, মৃণাল সেন নামে এক ভদ্রলোক, যিনি একসময় তার ভাইয়ের মামলাও সামলেছিলেন। এখন সোনালীর মতোই আমেরিকাতে আছেন।
মৃণালবাবু ফোন কলে মনোযোগ দিয়ে সব শোনার পর বললেন, " আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোর মতো মেয়ে এই জগতে যেতে পারে। অনেক কিছু শুনেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করি নি। যাই হোক, কন্ট্রাক্ট পেপার গুলো পিডিএফ এ কনভার্ট করে আমায় মেইল কর আমি দেখছি।"
1 দিন পর আবার মৃণাল বাবুর সাথে সোনালীর ফোনে কথা হল,
“সোনালী, চুক্তির ভাষা কঠিন। কিন্তু আইনের পথ আছে। তুই যদি সত্যিই বেরিয়ে আসতে চাস, তাহলে একটাই রাস্তা—লিখিতভাবে কোম্পানিকে নোটিস পাঠা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নোটিস পিরিয়ডে যতদিন কাজ করতে হবে, চুপচাপ করে ফেল। কিন্তু তারপরে বেরিয়ে আসার অধিকার তোর আছে।”
সোনালী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মানে আমাকে এখনও তিন-চার মাস এই কাজ করতে হবে?”
“হ্যাঁ,” মৃণালবাবু জবাব দিলেন, “তবে এই সময়টা তুমি নিজের পরবর্তী প্ল্যান সাজাতে পারিস। টাকা জোগাড় করতে পারো, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিস।”
ফোন রাখার পর সোনালী কিছুক্ষণ স্তব্ধ।
সে বুঝতে পারে—এই দুনিয়া থেকে বেরোনোও একটা যুদ্ধ।এটা কেবল শরীরের নয়, মনেরও লড়াই।
ঘরের কোণে রাখা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে—
“আমি এখনো হেরে যাইনি।”
সে আবার মেকআপ টেবিলে বসে। আজকের শুটিং-এ যেতে হবে। আবার ক্যামেরার সামনে হাসতে হবে… সংলাপ বলতে হবে।
কিন্তু এবার এই ‘অভিনয়’ তার কাছে মুক্তির পথের একটা ধাপ মাত্র।
আইনজীবী মৃণালবাবুর পরামর্শে বানানো সেই নোটিস ড্রাফট শেষবার পড়ে দেখেছিল সোনালী। প্রতিটি শব্দ ছিল মাপা, শান্ত অথচ কঠোর—নিজেকে ফিরে পাওয়ার ঘোষণা। এরপর নিজের অফিসিয়াল ইমেল আইডি থেকে সেটি কোম্পানির লিগ্যাল বিভাগ ও ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দিল সে।
মাত্র একদিন পরেই ভার্চুয়াল কলে ডাকা হল তাকে।
স্ক্রিনে ভেসে উঠল ঐ পর্ন ফিল্ম কোম্পানির ম্যানেজার এর মুখ। উনি লন্ডন থেকে কল ধরেছেন। গলায় সেই চিরচেনা কর্পোরেট স্মিত হাসি।
“সোনালী, I read your notice. আমি বুঝতে পারি তুমি একটু overwhelmed... কিন্তু তুমি জানো না তুমি কত বড় প্ল্যাটফর্মে এসেছো। Just a few more films and you’ll be international. Think about it.”
সোনালী ধীরে বলল, “আমি ভেবে নিয়েছি, স্যার। আমার নিজেকে push করার ও একটা সীমা আছে, আর ওটা আমি পেরিয়ে এসেছি। Now I just want a clean exit. Professionally.”
ম্যানেজার খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর কাঁচা হেসে বললেন,
“Fair enough. Then let’s make it smooth. Contractually, you will need to complete five more months. No sudden drop-outs.”
“ঠিক আছে,” শান্ত গলায় বলল সোনালী।
কল শেষ হওয়ার ঠিক ২০ মিনিট পরেই তার ইনবক্সে ঢুকল “Upcoming Production Schedule – Priority Tagged” এক ইমেল।
সোনালী মেইলটা খুলে দেখে কপাল কুঁচকে যায়।
আগামী এক সপ্তাহে দুইটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিল্ম—
একটি সলো, আরেকটি গ্রুপ পারফরম্যান্স।
প্রোডাকশন ডিরেক্টরের নোটে স্পষ্ট লেখা,
> “Since S is exiting in 5 months, let us utilize her final arc in the most impactful way. Prepare her mentally for the upcoming group dynamic. Schedule rehearsals accordingly.”
সোনালীর ঠোঁট কাঁপল। হাত থেকে মাউসটা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল।
গ্রুপ সিন… এতদিন যেগুলো সে এড়িয়ে গেছে নানা অজুহাতে, আজ সেটাই তার সামনে এনে দাঁড় করানো হয়েছে।
সে উঠে দাঁড়াল, বারান্দায় গেল।
বাইরে ছড়িয়ে থাকা কলকাতার সন্ধ্যা… ট্রাফিক, আলো, গলা ছাপানো হর্ণ। এই শহরেই তো তার মডেলিং কেরিয়ার শুরু হয়েছিল…
তখন সে ক্লাসি ছিল, সালোয়ার কামিজে স্টুডিওতে গিয়ে দাঁড়াত। এখন?
সে নিজেই উত্তর দিল মনের মধ্যে—
“আর পাঁচটা মাস… তারপর আমি এই জীবনকে পেছনে ফেলে দেব। যা কিছু অন্ধকার, সেটা ফেলে যাব… কিন্তু যতক্ষণ থাকছি, ভেঙে পড়ে নয়—দাঁড়িয়ে থেকে যাব।”
হাত তুলে চোখ মোছে সোনালী।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডারে শিডিউল নোট করে সে।
আগামী সোমবার - Full-day shoot, Title: “Forbidden Island” (Group).
সে জানে… ওটাই হতে চলেছে তার মানসিক পরীক্ষার প্রথম ধাপ।
সোনালী বুঝে গিয়েছিল—এই পাঁচ মাস ওর জন্য শাস্তির মত। চুক্তি থেকে বেরোতে চাওয়ার “শাস্তি”।
প্রোডাকশন হাউসের লোকেরা এটা বুঝিয়ে দিয়েছিল সূক্ষ্মভাবে, “Exit clause active, use to max.”
“Forbidden Island”—এই নামেই শুটটা হবে। গল্প এক গ্রুপ জেল বন্দীর, যারা পর্ন-প্রডাকশন কোম্পানির মালিকানায় এক দ্বীপে আটকে। পুরো সিনেমাটা ন্যুড, যৌন দৃশ্য ও যৌথ অংশগ্রহণে তৈরি।
প্রথম তিন দিন “রিহার্সাল”।
কোনো ডায়লগ নেই—শুধু শরীরের চর্চা। কোরিওগ্রাফার এসে দেখাচ্ছেন কোন কোন অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা থাকবে, কার কার সাথে কতটা প্রোক্সিমিটি থাকবে।
সোনালী বুঝে গিয়েছিল—এখানে শরীর নয়, আত্মা নগ্ন হচ্ছে।
চতুর্থ দিন সকালে কস্টিউম ট্রায়াল।
সেটা বলতে গেলে ছিলই না।
শুধু এক পাতলা রাবারের শাড়ি, যার নিচে শরীরের প্রতিটি রেখা স্পষ্ট।
সেলিনা এসে এক পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলেছিল,
“Welcome to real power performance, darling. এখানে মুখে কিছু থাকে না, গায়ে কিছু থাকে না, শুধু শরীর কথা বলে।”
সোনালী চুপ করে ছিল। তার বুকের ভেতর কেবল একটা ঢেউ উঠছিল—লজ্জা নয়, ক্ষোভ।
“Forbidden Island – Group Scene – Day 1”
ফ্লোরে ঢুকতেই আলোর ঝলক।
মেকআপ রুমে বসে সোনালী শেষবার চোখ বুজল। মুখে গ্লস, চোখে হালকা স্মোকি আইশ্যাডো।
শরীরে প্রায় কিছুই নেই।
চিত্রনাট্য ছিল এমন:
একটি দৃশ্যে সোনালী সহ চারজন পারফর্মার, সবাই বন্দী চরিত্রে। তারা একে অপরের সাথে “সারভাইভাল বন্ড” গড়ে তুলছে… শরীরের মাধ্যমে।
ডিরেক্টর চেঁচিয়ে বলল,
“Camera rolling. No hesitation. We need chemistry, body flow. Sona, you're the centre. Let them move around you.”
প্রথম স্পর্শ এসেছিল এক নতুন ছেলে পারফর্মার Samuel এর কাছ থেকে। সোনালীর পিঠে হাত রাখতেই ওর শরীর সেঁধিয়ে গেল কেমন যেন।
তারপর বাকি দুই পুরুষ ও এক নারী পারফর্মার এগিয়ে এল… কেউ ঘাড়ে হাত রাখছে, কেউ কোমরে চাপ দিচ্ছে… কেউ নিচু হয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে যাচ্ছে…
সোনালী সব অনুভব করছিল—নির্বাক, ঠান্ডা, রোবটের মতো।
এটাই ছিল তার প্রতিরোধ।
ওর আত্মা যেন শরীর ছেড়ে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে
ছিল—দর্শকের মতো।
সোনালী একা বসে ছিল লনে। চুপচাপ সিগারেটে টান দিচ্ছিল।
সেলিনা এসে পাশে বসে বলল,
“তুমি এত স্টিল, এত প্যাসিভ কেন? ডিরেক্টর খুশি নয়।”
সোনালী মুচকি হেসে বলল,
“কারা খুশি হচ্ছে, সেটা এখন আমার ম্যাটার করে না।”
সেলিনা অবাক হয়ে সিগারেটটা তার থেকে নিয়ে এক টান দিল।
“Interesting. তুমি বেরিয়ে যাচ্ছ ঠিকই, কিন্তু তুমি কাউকে তোমার উপর প্রভাব ফেলতে দিচ্ছ না। Dangerous trait for this industry.”
সোনালী শান্ত গলায় বলল,
“আমি এবার শুধু আমার গল্পের শেষটা লিখে যাব… যেন আর কেউ সেটা জোর করে না লেখে।”
সেলিনা: " দেখো গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। পাচ মাস লম্বা সময়। কতদিন এরকম নিজেকে শক্ত রাখতে পার আমিও দেখব। আজ অবধি যারা প্রো লেভেল পর্ন actress হিসেবে যারা কাজ করেছে কেউ নিজের শরীর টা সেক্সী এন্ড অ্যাটাকটিভ থাকা অবস্থায় বেরাতে পারে নি।।তুমিও পারবে না।"
ডিরেক্টর হালকা ধমক দিয়েছিল,
“We need rawness, passion. Not ice.”
সোনালী শুধু চোখ বন্ধ করল।
ক্যামেরা চলতে শুরু করল… ওর চারপাশে চারজন শরীর একসাথে নড়ছে, ওর শরীরের অংশে অংশে ছোঁয়া, উত্তেজনা, রিয়্যাকশন।
সেদিন এর মতো আলো কমে আসায় প্যাক আপ হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন আবার নতুন উদ্যমে শুট শুরু হল। ডিরেক্টর চরিত্রে কিছু বদল আনলেন। আগের দিন যারা কাজ করেছিল, তাদের জায়গায় দুজন নতুন এলো।
সেট লোকেশন:
একটা হাই-ফাই ইনডোর সেট। মেঝেতে বালি ছড়ানো, চারপাশে কৃত্রিম গাছ, বনের শব্দ চলছে স্পিকারে।
ছাদ থেকে বিশাল ডিম-আকৃতির ক্যামেরা ঝুলে আছে। লাইটের তাপে ঘরটা যেন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
পাঁচজন পারফর্মার – পাঁচটি চরিত্র:
Sonalie – একমাত্র ভারতীয়, মুখে মাধুর্য, শরীরে আগুন। চরিত্রে বন্দিনী, আগেও পণ্য ছিল, এখন বিদ্রোহী।
Rico – কিউবান বডি বিল্ডার, শরীর যেন পাথরের তৈরি।
Mason – ফরাসি, ঠোঁটে কৌতুক, চোখে শয়তানি।
Aaliyah – আফ্রিকান-আমেরিকান ডমিনেট্রিক্স, একেবারে কম্যান্ডিং উপস্থিতি।
Zane – ক্যালিফোর্নিয়ান সার্ফার টাইপ, নিরীহ মুখ, কিন্তু বন্য আচরণ।
সিন #1: “Initiation”
ডিরেক্টর চেঁচিয়ে বলল:
“Camera A – wide. Camera B – close on Sonalie. No cuts. No script. Just rhythm. Action!”
সোনালির সামনে Rico হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। হাতে ছিল এক লম্বা কাঁচের পানীয় গ্লাস—ভেতরে একধরনের হালকা নীল লিকুইড। গ্লাসটা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে বলল,
“Drink it. Your freedom starts with submission.”
সোনালী কিছু না বলে চোখ বন্ধ করল। গ্লাসটা ধরে চুমুক দিল।
এটা ছিল সিনেমার সিম্বলিক শুরু—বশীভবন।
Mason তখন পেছন থেকে এগিয়ে এলো, হাত রাখল সোনালির ঘাড়ে, তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
“Don’t act… feel. We all belong to the Island now.”
একটা ঠাণ্ডা হাত পিঠ বেয়ে
নিচে নামছিল…।
সিন #2: “The Ritual”
Zane পেছন থেকে সোনালিকে কোমরে জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলল, হালকা বালির ওপর।
ওর শরীর এখন চিৎ হয়ে শুয়ে, চারদিক থেকে ক্যামেরা আসছে।
Aaliyah তখন নিজের স্লো গান চালিয়ে হেঁটে এল, গায়ে কেবল একটা রাবার নেট।
সে সোনালির পাশে বসে ওর বুকের উপরে হাত রাখল—না আদরে, না হিংসায়—একটা আদেশের মত।
“Now you breathe with me… and let go.”
Rico তখন সোনালির পায়ে ঠাণ্ডা তেল ঢালছিল… ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করছিল। প্রতিটি আঙুল আলাদা আলাদা করে ঘষছিল, যেন ঐ পা দু’টি আর চলার নয়, শুধুই শুয়ে থাকার।
সোনালির শরীর উত্তেজনায় নয়, অবসাদের ভারে কাঁপছিল।
ক্যামেরা তার বুকের ওঠানামা রেকর্ড করছিল—তার মুখের অসহায়তা, ঠোঁটের নড়াচড়া
, চোখের জল।
সিন #3: “Unity” – The Group
একসাথে সব পারফর্মার মঞ্চে।
Zane ও Rico দু’পাশ থেকে সোনালিকে জড়িয়ে ধরেছে, Aaliyah পিছন থেকে ওর গলায় চুমু দিচ্ছে, আর Mason ওর থাইয়ে ধীরে ধীরে চিরুনির মতো আঙুল চালাচ্ছে।
লাইট এবার আরও গরম। ঘামে ভিজে যাচ্ছে সবার শরীর।
এটা এখন আর অভিনয় নয়—শরীরের যুদ্ধ।
ক্যামেরা ঘুরছে—close-up এ সোনালির কাঁধ, কোমর, নাভি, ঘাড়, মুখ… তার চোখে আগুন নেই, কেবল অভিমান।
মাঝে মাঝে সোনালী শরীর নাড়াচ্ছে, শ্বাস নিচ্ছে, কিন্তু ভেতরে সে ফাঁকা।
ডিরেক্টর মনিটর দেখে বলে উঠল,
“She’s perfect. This is raw surrender. We got gold.”
বিরতির পর: Dressing Room
সোনালী দরজা আটকে বসে আছে আয়নার সামনে।
চুল ছড়িয়ে গেছে, ঠোঁট কেটে গেছে হালকা, বুকের নিচে একটা আঁচড়—সম্ভবত Mason এর আঙুলের নখ।
ওর চোখে জল আসেনি।
ও শুধু ধীরে ধীরে একটা লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগাল। তারপর নিজেকে আয়নায় দেখে বলল:
—আর মাত্র ৪ মাস ২৭ দিন।
তারপর এই লাইট, এই স্পর্শ, এই চাপ—সব শেষ।
চলবে...
এই কাহিনী কেমন লাগছে কমেন্ট করুন সরাসরি মেসেজ করতে পারেন আমার টেলিগ্রাম আইডি @Suro Tann 21
রাত দেড়টা। সোনালী নিজের রুমে বসে আয়নার সামনে। মেকআপ এখনো মোছেনি—গাঢ় লিপস্টিক, চোখে স্মোকি আইশ্যাডো, কিন্তু চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। পেছনে পড়ে থাকা পোশাক, ব্যাগ, চিত্রনাট্যের কাগজগুলো যেন তার উল্টোপথে ছুটে চলার প্রমাণ।
সে ধীরে ধীরে মেকআপ তুলতে থাকে। প্রতিটি স্ট্রোক যেন একটা করে মুখোশ খোলার মতো। নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে সে ফিসফিস করে—
“আমি কে? এই পরিচয়টাই কি আমার সব?”
আজকের শুটিংটা সহজ ছিল না। একটা 'রোল' হলেও, সেই চরিত্রে যাওয়া মানে নিজের আত্মাকে একটা অচেনা খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলা। সোনালীর মন আর শরীর এক নয় এখন।
তারপর ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে লেখা—Selena calling।
সে ফোনটা তুলে না। আজ সে কারো সঙ্গ চায় না, আজ সে নিজেকে জানতে চায়।
আসলে সেদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। স্বামীর বাড়ি থেকে আনা সোনালীর একটা বই ভর্তি সুটকেস অনেক দিন ধরে বন্ধ পরে ছিল। কাজের চাপে সেটা খুলে বই গুলো তাকে সাজিয়ে রাখা হয় নি। আজকে হঠাৎ কি মন হল পুরোনো সেই বই গুলো বার করে সাজাতে সাজাতে তার মধ্যে থেকে সে একটা পুরোনো নোটবুক খুঁজে পায়—কলকাতায় পড়ার সময়ের। ভিতরে নিজের আঁকা কিছু স্কেচ, কিছু কবিতা, আর একটা ছোট গল্প—
“একটা মেয়ে, যে ভুল পথে হেঁটেও ফিরে আসে নিজের সত্যিকারের স্বপ্ন খুঁজে পেতে।”
সে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাতাগুলোর দিকে। সত্যি একটা সময় তার জীবন দর্শন কতটা আলাদা ছিল, বিশেষ করে বিয়ের আগে আরো পরিষ্কার করে বলতে, স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা আসার আগে সোনালী সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষ ছিল।
ঘড়িতে রাত দুটো।
ফ্ল্যাটে হালকা আলো জ্বলছে, বাইরে শহরের নিস্তব্ধতা। হঠাৎ দরজার ল্যাচ খুলে যাওয়ার শব্দ।
সেলেনা ঢুকে পড়ে, এক হাতে ফোন, অন্য হাতে চাবি।
“Where the hell were you, babe? ফোনে ধরছো না, টেক্সটের রিপ্লাই নেই… I thought something went wrong!”
সোনালী চুপচাপ বিছানায় বসে। সেলেনার মুখে উদ্বেগ, কিন্তু চোখেমুখে একরকম অভ্যস্ত নির্লিপ্তি।
“বল তো, মুখ ক্যান এমন?” সেলেনা এগিয়ে এসে পাশে বসে।
সোনালী ধীরে ধীরে বলে, “ফোন ধরিনি, কারণ মনটা আজ খুব খারাপ… খুব খারাপ।”
সেলেনা হেসে ফেলে। “Oh come on! এই তো তোমাদের ইন্ডিয়ান দের প্রবলেম। তোমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকো। ফিউচারের কথা ভাবো না! হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ, সোনা?”
সোনালী কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “সব ঠিক আছে, শুধু আজ মনে পড়ছে আমার পুরোনো জীবনটা। যখন আমি একটা সরকারি কলেজে পড়াতাম, বাচ্চারা 'সোনালী ম্যাম' বলত। তখন সালোয়ার কামিজ পরতাম, স্লিভলেস ব্লাউজ পরতে লজ্জা করত…”
তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
“আর এখন?” সে নিজের বুকের ওপর হাত রাখে, “ক্যামেরার সামনে নগ্ন হই… লোকের স্পর্শ, লিপস্টিক আর আলোর ভিড়ে কোথাও আমি আর নিজেকে খুঁজে পাই না।”
সেলেনা হালকা হাসে, “Darling, grow up! তুমি পেছনে তাকালে চলবে না। তুমি এখন এক বিউটিফুল প্রোডাক্ট, ট্যালেন্টেড পারফর্মার। এসব ভাবলে টিকে থাকতে পারবে না।”
সোনালী রাগে ও হতাশায় বলে ওঠে, “তুমি বুঝবে না। তোমার জন্ম এই লাইফস্টাইলে। আর আমি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে মরছি প্রতিদিন।”
সেলেনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর বলল, “Okay, okay, calm down. আমি তোকে জোর করছি না। But tonight, I’m going to Mitch’s rave party. Lots of high people, crazy music. মুড ঠিক হয়ে যাবে। চল না আমার সাথে।”
সোনালী মাথা নেড়ে বলে, “না সেলেনা… আজ নয়। আমাকে একা থাকতে দাও।”
সেলেনা উঠে দাঁড়ায়, কাঁধ ঝাঁকায়, “Suit yourself. But remember, this life doesn’t wait. Either you swim, or you sink.”
দরজা বন্ধ হয়। সোনালী একা।
সে ধীরে ধীরে ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাইরের শহরে
র আলো আর তার চোখের জল মিশে যায়।
রাত কেটেছে নির্ঘুম। সকালে উঠে সোনালী টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি পুরোনো খাম বের করল। ভেতরে ছিল সেই কন্ট্রাক্ট পেপার, যা সে প্রথম সাইন করেছিল শুটিং শুরুর আগে।
কাগজগুলো ধীরে ধীরে পড়তে লাগল সে। প্রতিটি প্যারা যেন গলা চেপে ধরা একেকটা শ্বাস।
Clause 6.2: Artist shall not terminate the contract voluntarily before the stipulated tenure of 18 months without notice, failing which financial penalties shall be imposed.
Clause 8.4: During the notice period, the Artist shall complete all scheduled work, including shoots, promotional events, and private parties, failing which legal action may be taken.
সোনালী এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করল। মনে পড়ে গেল সেলেনার বলা কথা: “Either you swim or you sink.”
হঠাৎ একটা দৃঢ়তা এল তার চোখে। সে ফোন করল তার পরিচিত এক আইনজীবীকে, মৃণাল সেন নামে এক ভদ্রলোক, যিনি একসময় তার ভাইয়ের মামলাও সামলেছিলেন। এখন সোনালীর মতোই আমেরিকাতে আছেন।
মৃণালবাবু ফোন কলে মনোযোগ দিয়ে সব শোনার পর বললেন, " আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোর মতো মেয়ে এই জগতে যেতে পারে। অনেক কিছু শুনেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করি নি। যাই হোক, কন্ট্রাক্ট পেপার গুলো পিডিএফ এ কনভার্ট করে আমায় মেইল কর আমি দেখছি।"
1 দিন পর আবার মৃণাল বাবুর সাথে সোনালীর ফোনে কথা হল,
“সোনালী, চুক্তির ভাষা কঠিন। কিন্তু আইনের পথ আছে। তুই যদি সত্যিই বেরিয়ে আসতে চাস, তাহলে একটাই রাস্তা—লিখিতভাবে কোম্পানিকে নোটিস পাঠা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নোটিস পিরিয়ডে যতদিন কাজ করতে হবে, চুপচাপ করে ফেল। কিন্তু তারপরে বেরিয়ে আসার অধিকার তোর আছে।”
সোনালী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মানে আমাকে এখনও তিন-চার মাস এই কাজ করতে হবে?”
“হ্যাঁ,” মৃণালবাবু জবাব দিলেন, “তবে এই সময়টা তুমি নিজের পরবর্তী প্ল্যান সাজাতে পারিস। টাকা জোগাড় করতে পারো, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিস।”
ফোন রাখার পর সোনালী কিছুক্ষণ স্তব্ধ।
সে বুঝতে পারে—এই দুনিয়া থেকে বেরোনোও একটা যুদ্ধ।এটা কেবল শরীরের নয়, মনেরও লড়াই।
ঘরের কোণে রাখা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে—
“আমি এখনো হেরে যাইনি।”
সে আবার মেকআপ টেবিলে বসে। আজকের শুটিং-এ যেতে হবে। আবার ক্যামেরার সামনে হাসতে হবে… সংলাপ বলতে হবে।
কিন্তু এবার এই ‘অভিনয়’ তার কাছে মুক্তির পথের একটা ধাপ মাত্র।
আইনজীবী মৃণালবাবুর পরামর্শে বানানো সেই নোটিস ড্রাফট শেষবার পড়ে দেখেছিল সোনালী। প্রতিটি শব্দ ছিল মাপা, শান্ত অথচ কঠোর—নিজেকে ফিরে পাওয়ার ঘোষণা। এরপর নিজের অফিসিয়াল ইমেল আইডি থেকে সেটি কোম্পানির লিগ্যাল বিভাগ ও ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দিল সে।
মাত্র একদিন পরেই ভার্চুয়াল কলে ডাকা হল তাকে।
স্ক্রিনে ভেসে উঠল ঐ পর্ন ফিল্ম কোম্পানির ম্যানেজার এর মুখ। উনি লন্ডন থেকে কল ধরেছেন। গলায় সেই চিরচেনা কর্পোরেট স্মিত হাসি।
“সোনালী, I read your notice. আমি বুঝতে পারি তুমি একটু overwhelmed... কিন্তু তুমি জানো না তুমি কত বড় প্ল্যাটফর্মে এসেছো। Just a few more films and you’ll be international. Think about it.”
সোনালী ধীরে বলল, “আমি ভেবে নিয়েছি, স্যার। আমার নিজেকে push করার ও একটা সীমা আছে, আর ওটা আমি পেরিয়ে এসেছি। Now I just want a clean exit. Professionally.”
ম্যানেজার খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর কাঁচা হেসে বললেন,
“Fair enough. Then let’s make it smooth. Contractually, you will need to complete five more months. No sudden drop-outs.”
“ঠিক আছে,” শান্ত গলায় বলল সোনালী।
কল শেষ হওয়ার ঠিক ২০ মিনিট পরেই তার ইনবক্সে ঢুকল “Upcoming Production Schedule – Priority Tagged” এক ইমেল।
সোনালী মেইলটা খুলে দেখে কপাল কুঁচকে যায়।
আগামী এক সপ্তাহে দুইটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিল্ম—
একটি সলো, আরেকটি গ্রুপ পারফরম্যান্স।
প্রোডাকশন ডিরেক্টরের নোটে স্পষ্ট লেখা,
> “Since S is exiting in 5 months, let us utilize her final arc in the most impactful way. Prepare her mentally for the upcoming group dynamic. Schedule rehearsals accordingly.”
সোনালীর ঠোঁট কাঁপল। হাত থেকে মাউসটা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল।
গ্রুপ সিন… এতদিন যেগুলো সে এড়িয়ে গেছে নানা অজুহাতে, আজ সেটাই তার সামনে এনে দাঁড় করানো হয়েছে।
সে উঠে দাঁড়াল, বারান্দায় গেল।
বাইরে ছড়িয়ে থাকা কলকাতার সন্ধ্যা… ট্রাফিক, আলো, গলা ছাপানো হর্ণ। এই শহরেই তো তার মডেলিং কেরিয়ার শুরু হয়েছিল…
তখন সে ক্লাসি ছিল, সালোয়ার কামিজে স্টুডিওতে গিয়ে দাঁড়াত। এখন?
সে নিজেই উত্তর দিল মনের মধ্যে—
“আর পাঁচটা মাস… তারপর আমি এই জীবনকে পেছনে ফেলে দেব। যা কিছু অন্ধকার, সেটা ফেলে যাব… কিন্তু যতক্ষণ থাকছি, ভেঙে পড়ে নয়—দাঁড়িয়ে থেকে যাব।”
হাত তুলে চোখ মোছে সোনালী।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডারে শিডিউল নোট করে সে।
আগামী সোমবার - Full-day shoot, Title: “Forbidden Island” (Group).
সে জানে… ওটাই হতে চলেছে তার মানসিক পরীক্ষার প্রথম ধাপ।
সোনালী বুঝে গিয়েছিল—এই পাঁচ মাস ওর জন্য শাস্তির মত। চুক্তি থেকে বেরোতে চাওয়ার “শাস্তি”।
প্রোডাকশন হাউসের লোকেরা এটা বুঝিয়ে দিয়েছিল সূক্ষ্মভাবে, “Exit clause active, use to max.”
“Forbidden Island”—এই নামেই শুটটা হবে। গল্প এক গ্রুপ জেল বন্দীর, যারা পর্ন-প্রডাকশন কোম্পানির মালিকানায় এক দ্বীপে আটকে। পুরো সিনেমাটা ন্যুড, যৌন দৃশ্য ও যৌথ অংশগ্রহণে তৈরি।
প্রথম তিন দিন “রিহার্সাল”।
কোনো ডায়লগ নেই—শুধু শরীরের চর্চা। কোরিওগ্রাফার এসে দেখাচ্ছেন কোন কোন অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা থাকবে, কার কার সাথে কতটা প্রোক্সিমিটি থাকবে।
সোনালী বুঝে গিয়েছিল—এখানে শরীর নয়, আত্মা নগ্ন হচ্ছে।
চতুর্থ দিন সকালে কস্টিউম ট্রায়াল।
সেটা বলতে গেলে ছিলই না।
শুধু এক পাতলা রাবারের শাড়ি, যার নিচে শরীরের প্রতিটি রেখা স্পষ্ট।
সেলিনা এসে এক পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলেছিল,
“Welcome to real power performance, darling. এখানে মুখে কিছু থাকে না, গায়ে কিছু থাকে না, শুধু শরীর কথা বলে।”
সোনালী চুপ করে ছিল। তার বুকের ভেতর কেবল একটা ঢেউ উঠছিল—লজ্জা নয়, ক্ষোভ।
“Forbidden Island – Group Scene – Day 1”
ফ্লোরে ঢুকতেই আলোর ঝলক।
মেকআপ রুমে বসে সোনালী শেষবার চোখ বুজল। মুখে গ্লস, চোখে হালকা স্মোকি আইশ্যাডো।
শরীরে প্রায় কিছুই নেই।
চিত্রনাট্য ছিল এমন:
একটি দৃশ্যে সোনালী সহ চারজন পারফর্মার, সবাই বন্দী চরিত্রে। তারা একে অপরের সাথে “সারভাইভাল বন্ড” গড়ে তুলছে… শরীরের মাধ্যমে।
ডিরেক্টর চেঁচিয়ে বলল,
“Camera rolling. No hesitation. We need chemistry, body flow. Sona, you're the centre. Let them move around you.”
প্রথম স্পর্শ এসেছিল এক নতুন ছেলে পারফর্মার Samuel এর কাছ থেকে। সোনালীর পিঠে হাত রাখতেই ওর শরীর সেঁধিয়ে গেল কেমন যেন।
তারপর বাকি দুই পুরুষ ও এক নারী পারফর্মার এগিয়ে এল… কেউ ঘাড়ে হাত রাখছে, কেউ কোমরে চাপ দিচ্ছে… কেউ নিচু হয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে যাচ্ছে…
সোনালী সব অনুভব করছিল—নির্বাক, ঠান্ডা, রোবটের মতো।
এটাই ছিল তার প্রতিরোধ।
ওর আত্মা যেন শরীর ছেড়ে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে
ছিল—দর্শকের মতো।
সোনালী একা বসে ছিল লনে। চুপচাপ সিগারেটে টান দিচ্ছিল।
সেলিনা এসে পাশে বসে বলল,
“তুমি এত স্টিল, এত প্যাসিভ কেন? ডিরেক্টর খুশি নয়।”
সোনালী মুচকি হেসে বলল,
“কারা খুশি হচ্ছে, সেটা এখন আমার ম্যাটার করে না।”
সেলিনা অবাক হয়ে সিগারেটটা তার থেকে নিয়ে এক টান দিল।
“Interesting. তুমি বেরিয়ে যাচ্ছ ঠিকই, কিন্তু তুমি কাউকে তোমার উপর প্রভাব ফেলতে দিচ্ছ না। Dangerous trait for this industry.”
সোনালী শান্ত গলায় বলল,
“আমি এবার শুধু আমার গল্পের শেষটা লিখে যাব… যেন আর কেউ সেটা জোর করে না লেখে।”
সেলিনা: " দেখো গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। পাচ মাস লম্বা সময়। কতদিন এরকম নিজেকে শক্ত রাখতে পার আমিও দেখব। আজ অবধি যারা প্রো লেভেল পর্ন actress হিসেবে যারা কাজ করেছে কেউ নিজের শরীর টা সেক্সী এন্ড অ্যাটাকটিভ থাকা অবস্থায় বেরাতে পারে নি।।তুমিও পারবে না।"
ডিরেক্টর হালকা ধমক দিয়েছিল,
“We need rawness, passion. Not ice.”
সোনালী শুধু চোখ বন্ধ করল।
ক্যামেরা চলতে শুরু করল… ওর চারপাশে চারজন শরীর একসাথে নড়ছে, ওর শরীরের অংশে অংশে ছোঁয়া, উত্তেজনা, রিয়্যাকশন।
সেদিন এর মতো আলো কমে আসায় প্যাক আপ হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন আবার নতুন উদ্যমে শুট শুরু হল। ডিরেক্টর চরিত্রে কিছু বদল আনলেন। আগের দিন যারা কাজ করেছিল, তাদের জায়গায় দুজন নতুন এলো।
সেট লোকেশন:
একটা হাই-ফাই ইনডোর সেট। মেঝেতে বালি ছড়ানো, চারপাশে কৃত্রিম গাছ, বনের শব্দ চলছে স্পিকারে।
ছাদ থেকে বিশাল ডিম-আকৃতির ক্যামেরা ঝুলে আছে। লাইটের তাপে ঘরটা যেন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
পাঁচজন পারফর্মার – পাঁচটি চরিত্র:
Sonalie – একমাত্র ভারতীয়, মুখে মাধুর্য, শরীরে আগুন। চরিত্রে বন্দিনী, আগেও পণ্য ছিল, এখন বিদ্রোহী।
Rico – কিউবান বডি বিল্ডার, শরীর যেন পাথরের তৈরি।
Mason – ফরাসি, ঠোঁটে কৌতুক, চোখে শয়তানি।
Aaliyah – আফ্রিকান-আমেরিকান ডমিনেট্রিক্স, একেবারে কম্যান্ডিং উপস্থিতি।
Zane – ক্যালিফোর্নিয়ান সার্ফার টাইপ, নিরীহ মুখ, কিন্তু বন্য আচরণ।
সিন #1: “Initiation”
ডিরেক্টর চেঁচিয়ে বলল:
“Camera A – wide. Camera B – close on Sonalie. No cuts. No script. Just rhythm. Action!”
সোনালির সামনে Rico হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। হাতে ছিল এক লম্বা কাঁচের পানীয় গ্লাস—ভেতরে একধরনের হালকা নীল লিকুইড। গ্লাসটা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে বলল,
“Drink it. Your freedom starts with submission.”
সোনালী কিছু না বলে চোখ বন্ধ করল। গ্লাসটা ধরে চুমুক দিল।
এটা ছিল সিনেমার সিম্বলিক শুরু—বশীভবন।
Mason তখন পেছন থেকে এগিয়ে এলো, হাত রাখল সোনালির ঘাড়ে, তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
“Don’t act… feel. We all belong to the Island now.”
একটা ঠাণ্ডা হাত পিঠ বেয়ে
নিচে নামছিল…।
সিন #2: “The Ritual”
Zane পেছন থেকে সোনালিকে কোমরে জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলল, হালকা বালির ওপর।
ওর শরীর এখন চিৎ হয়ে শুয়ে, চারদিক থেকে ক্যামেরা আসছে।
Aaliyah তখন নিজের স্লো গান চালিয়ে হেঁটে এল, গায়ে কেবল একটা রাবার নেট।
সে সোনালির পাশে বসে ওর বুকের উপরে হাত রাখল—না আদরে, না হিংসায়—একটা আদেশের মত।
“Now you breathe with me… and let go.”
Rico তখন সোনালির পায়ে ঠাণ্ডা তেল ঢালছিল… ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করছিল। প্রতিটি আঙুল আলাদা আলাদা করে ঘষছিল, যেন ঐ পা দু’টি আর চলার নয়, শুধুই শুয়ে থাকার।
সোনালির শরীর উত্তেজনায় নয়, অবসাদের ভারে কাঁপছিল।
ক্যামেরা তার বুকের ওঠানামা রেকর্ড করছিল—তার মুখের অসহায়তা, ঠোঁটের নড়াচড়া
, চোখের জল।
সিন #3: “Unity” – The Group
একসাথে সব পারফর্মার মঞ্চে।
Zane ও Rico দু’পাশ থেকে সোনালিকে জড়িয়ে ধরেছে, Aaliyah পিছন থেকে ওর গলায় চুমু দিচ্ছে, আর Mason ওর থাইয়ে ধীরে ধীরে চিরুনির মতো আঙুল চালাচ্ছে।
লাইট এবার আরও গরম। ঘামে ভিজে যাচ্ছে সবার শরীর।
এটা এখন আর অভিনয় নয়—শরীরের যুদ্ধ।
ক্যামেরা ঘুরছে—close-up এ সোনালির কাঁধ, কোমর, নাভি, ঘাড়, মুখ… তার চোখে আগুন নেই, কেবল অভিমান।
মাঝে মাঝে সোনালী শরীর নাড়াচ্ছে, শ্বাস নিচ্ছে, কিন্তু ভেতরে সে ফাঁকা।
ডিরেক্টর মনিটর দেখে বলে উঠল,
“She’s perfect. This is raw surrender. We got gold.”
বিরতির পর: Dressing Room
সোনালী দরজা আটকে বসে আছে আয়নার সামনে।
চুল ছড়িয়ে গেছে, ঠোঁট কেটে গেছে হালকা, বুকের নিচে একটা আঁচড়—সম্ভবত Mason এর আঙুলের নখ।
ওর চোখে জল আসেনি।
ও শুধু ধীরে ধীরে একটা লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগাল। তারপর নিজেকে আয়নায় দেখে বলল:
—আর মাত্র ৪ মাস ২৭ দিন।
তারপর এই লাইট, এই স্পর্শ, এই চাপ—সব শেষ।
চলবে...
এই কাহিনী কেমন লাগছে কমেন্ট করুন সরাসরি মেসেজ করতে পারেন আমার টেলিগ্রাম আইডি @Suro Tann 21


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)