29-07-2025, 08:25 PM
(This post was last modified: 30-07-2025, 03:48 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ১ (ক)
নয় বছর পর ঃ
আজকে রাজীবের আর জয়ের উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট বেড়িয়েছে । রাজীব নিজের রেজাল্ট দেখে প্রথম কল করে বন্ধু জয় কে । রাজীবের গলায় উচ্ছ্বাস “ কিরে হিরো রেজাল্ট বল”
এদিকে জয় ও রাজীবের কলের অপেক্ষায় ছিলো “না আগে তুই বল” ওপাশ থেকে জয়ের এর গলা ভেসে আসে
“ তুই পাক্কা ফেইল , ঠিক বলসি কিনা বল?” রাজীব জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে । যদিও ও নিজেও নিজের বলা কথাটি বিশ্বাস করে না ।
“এতো দিনেও তোর ভাইকে তুই চিনলিনা বোকাচোদা , আমার ডিকশেনারিতে ফেইল বলতে কোন শব্দ নেই , হোক সেটা পরিক্ষার খাতায় কিনবা মেয়েদের মন নিয়ে খেলায় ,সব জায়গায় আমি জিতেই অভ্যস্ত” জয় সিনেমার হিরোদের মত করে বলে ।
“ বুঝলাম আমার হিরো , কিন্তু রেজাল্ট তো বল” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ পাশ ব্রো” জয় চিৎকার করে বলে
“ পাশ তো বুঝলাম , গ্রেড বল” রাজীব দাঁত পিষে বলে , ধৈর্যের বাধ ভঙ্গে গেছে ওর
“A” জয় এমন ভাবে বলে যেন এটা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার না , তারপর জিজ্ঞাস করে “এবার তোরটা বল , দাড়া দড়া আমি গেস করি , A প্লাস নিশ্চয়ই , আমার ভাই এর কম পেতেই পারে না”
রাজীব ছোট্ট করে বলে “হুম, তবে তুই যে এতো ভালো রেজাল্ট করবি সেটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না , মেয়েদের শরীর থেকে বইয়ের পাতায় মন গেলো কবে তোর?”
“ তোর ভাই মাল্টি টাস্কিন ছেলে ব্রো , আর আমার জন্য সুধু এক ঝলক যথেষ্ট , বই হোক আর নারী সব মুখস্ত হয়ে যায়” জয় আবারো ফিল্মি স্টাইলে বলে
কথা গুলো শুনে রাজীবের ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে , মনে মনে শালা সব জায়গায় হিরোগিরি না করলে মন ভরে না , তারপর শান্ত স্বরে বলে “ সব কিছু কি মুখস্ত করলে হয় , কিছু কিছু ব্যাপার বুঝে নিয়ে মনে গেথে নিতে হয় ব্রো , সেটা বইয়ের পাতা হোক আর মানুষের মন , নয়তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে , দেখা গেলো তুই মুখস্ত লিখে দিয়ে এলি কিন্তু প্রস্নটাই বুঝতে পারিস নি”
কিন্তু জয় এখন এসব নীতিবাক্য শোনার মুডে নেই । ও রাজীবের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল “ তুই কখন আসছিস ? আমার ভাই কে ছাড়া কি পার্টি জমবে? ”
“ আজকে তো হবে না ভাই , কাল আব্বুকে বলে দেখবো “ রাজীব মনমড়া হয়ে বলে , ওর নিজেরো ভালো লাগছে না একা একা
“ ওকে ব্রো তুই যেদিন আসবি সেদিন ই আমার বিশেষ দিন , সেদিন ই পার্টি হবে , ভাই ছাড়া কিসের পার্টি” জয় রাজীবের মন ভালো করার জন্য বলল
“ ওকে ভাই , এখন রাখি , বাসায় ওয়েট করতেসে রেজাল্ট জানার জন্য” বলে রাজিব কল কেটে দেয় । তারপর রানীকে কল করে ,
কল রিসিভ করেই রানী চেঁচিয়ে বলে ওঠে “ ভাইয়া মিষ্টি ছাড়া ঘরে ঢুকবি না”
“ আরে পাগলী রেজাল্ট তো শোন আগে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ শুনতে হবে না , আমি জানি তোর চেয়ে ভালো রেজাল্ট আর কারো হতেই পারে না” রানী একদম দৃঢ় স্বরে বলে
“ আরে আমার রানী পাগলী আমি এ প্লাস পাইসি , এরকম হাজার হাজার আছে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ থাকুক , নাম্বার যোগ করলে দেখবি তোর নাম্বার সবচেয়ে বেশি, এখন ফালতু কথা বাদ দিয়ে মিষ্টি আন , আমার জিভে লালা চলে আসছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য” এই বলে রানী কল কেটে দেয় ।
রাজীব মনে মনে ভাবে এই দুই পাগল এর কাছ থেকে কবে রেহাই পাবে ও । রেহাই পাওয়া কি আদৌ সম্ভব । দুজনের সাথেই যে আজন্ম বাধন , একজনের সাথে রক্তের অন্যজনের সাথে আত্মার। রাজীব হাসতে হাসতে একটা রিক্সা থামায় , তারপ মিষ্টি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
বাড়িতে ঢুকেতেই রানী দৌরে আসে , রাজীবের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় , তারপর সেটা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খুলে , আস্তো একটা মিষ্টি মুখে ভরে চিবুতে থাকে ।
রাজীবের শব্দ পেয়ে রহিম শিকদার বেড়িয়ে আসে , রহিম শিকদার কে এখন আর চেনা যায় না মুখে দাড়ি , বয়সের তুলনায় শরীর যেন একটু বেশি বুড়িয়ে গেছে , চেহারায় ও বয়সের ছাপ পরেছে। স্ত্রী বিয়োগ ঠিক মত হ্যান্ডেল করতে পারেনি রহিম শিকদার ।
আব্বুকে দেখে রাজীব দ্রুত পা ছুয়ে সালাম করে । রহিম শিকদারের চোখ ছলছল করে , মনে মনে ভাবে এই দুটো হীরের টুকরা উপহার দিয়ে আফরোজা ওকে ছেড়ে চলে গেলো । গত নয় বছর সুধু টাকা উপার্জন করেছে রহিম শিকদার , আর বাকি সময় স্ত্রীর সৃতি বুকে নিয়ে মরার মত বেচেছেন । ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে তেমন কোন নজর দিতে পারেনি । রহিম শিকদারের একটাই ইচ্ছা ছেলে মেয়ে দুটো যেন কোনদিন টকার অভাবে না থাকে । ছেলে মেয়ের জন্য ভালো একটা কিছু করতে পারলেই তবে রহিম শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে , তাই নিজের পছন্দের কাজ শিক্ষকতা ছেড়ে বেছে নিয়েছে কোচিং বিজনেস।
তবে আজকাল মনে একটা চিন্তা কাঁটার মত বিধে থাকে রহিমের । সুধু আর্থ যোগান দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেন নি ছেলে মেয়ের জন্য । ওরা নিজেরাই বড় হয়েছে , অবশ্য ছেলে রাজীবের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ রহিম । নিজেকে তো সামলেছেই সাথে বোন কেও সামলেছে । রাজীব বেশ শক্ত পোক্ত ছেলে , বেশ দৃঢ় স্বভাবের ছেলে , সহজে বিচলিত হয় না । কিন্তু রানী খুব নরম স্বভাবের আর মুখ চোরা , বেশ অভিমানিও । কিন্তু রাজীব আগলে রেখেছে ছোট বোন কে, ছোট বোনের মনের কথা বুঝে ফেলে । রহিম শিকদারের মাঝেমাঝে মনে হয়ব ওদের মা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন করে বুঝতে পারতো না। যেমনটা রাজীব বুঝতে পারে । রহিম শিকদার দূর থেকে এসব খেয়াল করেছে কিন্তু কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি । ওর মনে হয়েছে কাছে গেলেই কিছু গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলবে ।
রহিম শিকদার ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রান ভরে দোয়া করলেন । দোয়া করলেন যেন এই ছেলে জিবনে কোথাও পরাজিত না হয় । কিন্তু মুখে কিছু বললেন না । অবশ্য মুখে বলার প্রয়োজন হলো না , রাজীব বাবার হাতের উষ্ণতা থেকেই বুঝে নিলো ওর বাবা কি বলতে চাইছে । গলার ভেতর একটা কিছু দলা পাকিয়ে উঠলো রাজীবের ।
বেশ কিছুক্ষন বাবা ছেলে চুপ করেই দাড়িয়ে রইলো , এদিকে রানী ডাইনিং টেবিলের কাছ থেকে মুখ ভর্তি মিষ্টি নিয়ে বলল ,
“ তোমারা কি মুখে কিছু বলবে নাকি ট্যালিপ্যাথিতেই কথা বলবে”
রানীর কথা শুনে রহিম শিকদার আর রাজীব দুজনেই হেসে ফেললো , রহিম শিকদার ইশারায় মেয়েকে কাছে ডাকল , তারপর দুই ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । অনেক দিন পর রহিম শিকদার এমন করলেন , কতদিন পর সেটা জানা নেই । তবে এক আরামদায়ক উষ্ণতায় যেন জড়িয়ে যেতে লাগলো রহিম শিকদার ।
রাজীবের কাছে প্রথম কিছুটা বিব্রতকর লেগ্লেও ধিরে ধিরে ভালো লাগতে শুরু করলো । এদিকে রানী দুহাতে বাবা কে জড়িয়ে ধরেছে । মুখে চওড়া হাসি । রাজীবের সাথে চোখাচোখি হতেই রাজীব ও মুচকি হাসি দিলো ।
ওয়ার্ম ফ্যামিলি হাগ শেষে , রাজীব নিজের খাঁকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলল “ আব্বু আগামিকাল আমি বাড়ি যাই? বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে মিষ্টি দিয়ে আসি?”
“ যাও বাবা” ছোট করে উত্তর দিলো রহিম শিকদার ।
“ আমিও যাই বাবা , আমার পরিক্ষার পর তো যাওয়া হয়নি ” রানী ও জিজ্ঞাস করলো, বান্ধুবি জান্নাত কে দেখার তর সইছে না ওর , প্রায় দের বছর হলো যাওয়া হয় না । আগে বছরে দুবার করে যাওয়া হতো । রহিম না গেলেও ছেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিতো । নইলে আয়শা খুব রাগ করতো । কিন্তু দুজনের বোর্ড পরিক্ষা চলে আসায় এই দের বছর আর যাওয়া হয়নি ।
“ যাও মা” রানী খুশিতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবা কে ।
তখন রাজীব বলল “ আব্বু তুমিও চলো”
“ ঠিক আছে চল তোর মায়ের কবর দেখা হয় না অনেক দিন।“
******
নয় বছর পর ঃ
আজকে রাজীবের আর জয়ের উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট বেড়িয়েছে । রাজীব নিজের রেজাল্ট দেখে প্রথম কল করে বন্ধু জয় কে । রাজীবের গলায় উচ্ছ্বাস “ কিরে হিরো রেজাল্ট বল”
এদিকে জয় ও রাজীবের কলের অপেক্ষায় ছিলো “না আগে তুই বল” ওপাশ থেকে জয়ের এর গলা ভেসে আসে
“ তুই পাক্কা ফেইল , ঠিক বলসি কিনা বল?” রাজীব জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে । যদিও ও নিজেও নিজের বলা কথাটি বিশ্বাস করে না ।
“এতো দিনেও তোর ভাইকে তুই চিনলিনা বোকাচোদা , আমার ডিকশেনারিতে ফেইল বলতে কোন শব্দ নেই , হোক সেটা পরিক্ষার খাতায় কিনবা মেয়েদের মন নিয়ে খেলায় ,সব জায়গায় আমি জিতেই অভ্যস্ত” জয় সিনেমার হিরোদের মত করে বলে ।
“ বুঝলাম আমার হিরো , কিন্তু রেজাল্ট তো বল” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ পাশ ব্রো” জয় চিৎকার করে বলে
“ পাশ তো বুঝলাম , গ্রেড বল” রাজীব দাঁত পিষে বলে , ধৈর্যের বাধ ভঙ্গে গেছে ওর
“A” জয় এমন ভাবে বলে যেন এটা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার না , তারপর জিজ্ঞাস করে “এবার তোরটা বল , দাড়া দড়া আমি গেস করি , A প্লাস নিশ্চয়ই , আমার ভাই এর কম পেতেই পারে না”
রাজীব ছোট্ট করে বলে “হুম, তবে তুই যে এতো ভালো রেজাল্ট করবি সেটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না , মেয়েদের শরীর থেকে বইয়ের পাতায় মন গেলো কবে তোর?”
“ তোর ভাই মাল্টি টাস্কিন ছেলে ব্রো , আর আমার জন্য সুধু এক ঝলক যথেষ্ট , বই হোক আর নারী সব মুখস্ত হয়ে যায়” জয় আবারো ফিল্মি স্টাইলে বলে
কথা গুলো শুনে রাজীবের ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে , মনে মনে শালা সব জায়গায় হিরোগিরি না করলে মন ভরে না , তারপর শান্ত স্বরে বলে “ সব কিছু কি মুখস্ত করলে হয় , কিছু কিছু ব্যাপার বুঝে নিয়ে মনে গেথে নিতে হয় ব্রো , সেটা বইয়ের পাতা হোক আর মানুষের মন , নয়তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে , দেখা গেলো তুই মুখস্ত লিখে দিয়ে এলি কিন্তু প্রস্নটাই বুঝতে পারিস নি”
কিন্তু জয় এখন এসব নীতিবাক্য শোনার মুডে নেই । ও রাজীবের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল “ তুই কখন আসছিস ? আমার ভাই কে ছাড়া কি পার্টি জমবে? ”
“ আজকে তো হবে না ভাই , কাল আব্বুকে বলে দেখবো “ রাজীব মনমড়া হয়ে বলে , ওর নিজেরো ভালো লাগছে না একা একা
“ ওকে ব্রো তুই যেদিন আসবি সেদিন ই আমার বিশেষ দিন , সেদিন ই পার্টি হবে , ভাই ছাড়া কিসের পার্টি” জয় রাজীবের মন ভালো করার জন্য বলল
“ ওকে ভাই , এখন রাখি , বাসায় ওয়েট করতেসে রেজাল্ট জানার জন্য” বলে রাজিব কল কেটে দেয় । তারপর রানীকে কল করে ,
কল রিসিভ করেই রানী চেঁচিয়ে বলে ওঠে “ ভাইয়া মিষ্টি ছাড়া ঘরে ঢুকবি না”
“ আরে পাগলী রেজাল্ট তো শোন আগে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ শুনতে হবে না , আমি জানি তোর চেয়ে ভালো রেজাল্ট আর কারো হতেই পারে না” রানী একদম দৃঢ় স্বরে বলে
“ আরে আমার রানী পাগলী আমি এ প্লাস পাইসি , এরকম হাজার হাজার আছে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ থাকুক , নাম্বার যোগ করলে দেখবি তোর নাম্বার সবচেয়ে বেশি, এখন ফালতু কথা বাদ দিয়ে মিষ্টি আন , আমার জিভে লালা চলে আসছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য” এই বলে রানী কল কেটে দেয় ।
রাজীব মনে মনে ভাবে এই দুই পাগল এর কাছ থেকে কবে রেহাই পাবে ও । রেহাই পাওয়া কি আদৌ সম্ভব । দুজনের সাথেই যে আজন্ম বাধন , একজনের সাথে রক্তের অন্যজনের সাথে আত্মার। রাজীব হাসতে হাসতে একটা রিক্সা থামায় , তারপ মিষ্টি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
বাড়িতে ঢুকেতেই রানী দৌরে আসে , রাজীবের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় , তারপর সেটা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খুলে , আস্তো একটা মিষ্টি মুখে ভরে চিবুতে থাকে ।
রাজীবের শব্দ পেয়ে রহিম শিকদার বেড়িয়ে আসে , রহিম শিকদার কে এখন আর চেনা যায় না মুখে দাড়ি , বয়সের তুলনায় শরীর যেন একটু বেশি বুড়িয়ে গেছে , চেহারায় ও বয়সের ছাপ পরেছে। স্ত্রী বিয়োগ ঠিক মত হ্যান্ডেল করতে পারেনি রহিম শিকদার ।
আব্বুকে দেখে রাজীব দ্রুত পা ছুয়ে সালাম করে । রহিম শিকদারের চোখ ছলছল করে , মনে মনে ভাবে এই দুটো হীরের টুকরা উপহার দিয়ে আফরোজা ওকে ছেড়ে চলে গেলো । গত নয় বছর সুধু টাকা উপার্জন করেছে রহিম শিকদার , আর বাকি সময় স্ত্রীর সৃতি বুকে নিয়ে মরার মত বেচেছেন । ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে তেমন কোন নজর দিতে পারেনি । রহিম শিকদারের একটাই ইচ্ছা ছেলে মেয়ে দুটো যেন কোনদিন টকার অভাবে না থাকে । ছেলে মেয়ের জন্য ভালো একটা কিছু করতে পারলেই তবে রহিম শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে , তাই নিজের পছন্দের কাজ শিক্ষকতা ছেড়ে বেছে নিয়েছে কোচিং বিজনেস।
তবে আজকাল মনে একটা চিন্তা কাঁটার মত বিধে থাকে রহিমের । সুধু আর্থ যোগান দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেন নি ছেলে মেয়ের জন্য । ওরা নিজেরাই বড় হয়েছে , অবশ্য ছেলে রাজীবের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ রহিম । নিজেকে তো সামলেছেই সাথে বোন কেও সামলেছে । রাজীব বেশ শক্ত পোক্ত ছেলে , বেশ দৃঢ় স্বভাবের ছেলে , সহজে বিচলিত হয় না । কিন্তু রানী খুব নরম স্বভাবের আর মুখ চোরা , বেশ অভিমানিও । কিন্তু রাজীব আগলে রেখেছে ছোট বোন কে, ছোট বোনের মনের কথা বুঝে ফেলে । রহিম শিকদারের মাঝেমাঝে মনে হয়ব ওদের মা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন করে বুঝতে পারতো না। যেমনটা রাজীব বুঝতে পারে । রহিম শিকদার দূর থেকে এসব খেয়াল করেছে কিন্তু কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি । ওর মনে হয়েছে কাছে গেলেই কিছু গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলবে ।
রহিম শিকদার ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রান ভরে দোয়া করলেন । দোয়া করলেন যেন এই ছেলে জিবনে কোথাও পরাজিত না হয় । কিন্তু মুখে কিছু বললেন না । অবশ্য মুখে বলার প্রয়োজন হলো না , রাজীব বাবার হাতের উষ্ণতা থেকেই বুঝে নিলো ওর বাবা কি বলতে চাইছে । গলার ভেতর একটা কিছু দলা পাকিয়ে উঠলো রাজীবের ।
বেশ কিছুক্ষন বাবা ছেলে চুপ করেই দাড়িয়ে রইলো , এদিকে রানী ডাইনিং টেবিলের কাছ থেকে মুখ ভর্তি মিষ্টি নিয়ে বলল ,
“ তোমারা কি মুখে কিছু বলবে নাকি ট্যালিপ্যাথিতেই কথা বলবে”
রানীর কথা শুনে রহিম শিকদার আর রাজীব দুজনেই হেসে ফেললো , রহিম শিকদার ইশারায় মেয়েকে কাছে ডাকল , তারপর দুই ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । অনেক দিন পর রহিম শিকদার এমন করলেন , কতদিন পর সেটা জানা নেই । তবে এক আরামদায়ক উষ্ণতায় যেন জড়িয়ে যেতে লাগলো রহিম শিকদার ।
রাজীবের কাছে প্রথম কিছুটা বিব্রতকর লেগ্লেও ধিরে ধিরে ভালো লাগতে শুরু করলো । এদিকে রানী দুহাতে বাবা কে জড়িয়ে ধরেছে । মুখে চওড়া হাসি । রাজীবের সাথে চোখাচোখি হতেই রাজীব ও মুচকি হাসি দিলো ।
ওয়ার্ম ফ্যামিলি হাগ শেষে , রাজীব নিজের খাঁকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলল “ আব্বু আগামিকাল আমি বাড়ি যাই? বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে মিষ্টি দিয়ে আসি?”
“ যাও বাবা” ছোট করে উত্তর দিলো রহিম শিকদার ।
“ আমিও যাই বাবা , আমার পরিক্ষার পর তো যাওয়া হয়নি ” রানী ও জিজ্ঞাস করলো, বান্ধুবি জান্নাত কে দেখার তর সইছে না ওর , প্রায় দের বছর হলো যাওয়া হয় না । আগে বছরে দুবার করে যাওয়া হতো । রহিম না গেলেও ছেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিতো । নইলে আয়শা খুব রাগ করতো । কিন্তু দুজনের বোর্ড পরিক্ষা চলে আসায় এই দের বছর আর যাওয়া হয়নি ।
“ যাও মা” রানী খুশিতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবা কে ।
তখন রাজীব বলল “ আব্বু তুমিও চলো”
“ ঠিক আছে চল তোর মায়ের কবর দেখা হয় না অনেক দিন।“
******
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)