20-07-2025, 11:15 PM
পর্ব-৯
মিথিলা দরজার চাবি ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ঢোকে। রাত প্রায় দেড়টা। অন্ধকার ড্রয়িংরুমের নিস্তব্ধতা যেন ওর ভিতরের অপরাধবোধকে আরও প্রকট করে তুলছে। পায়ের শব্দ যেন নিজের কাছেই অপরাধপ্রমাণ। ক্লান্ত শরীর, এলোমেলো চুল, ঠোঁটে জরা হয়ে থাকা লিপস্টিকের একটুকরো দাগ—সবকিছুই বলে দিচ্ছে সে কোথা থেকে ফিরেছে।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয়—সে জানে, সে আর শুধু শরীর দিয়ে সুমনের কাছে নেই, বরং সুমনের হাতের এক খেলনা হয়ে গেছে।
একটা ভিডিও, কয়েকটা ছবি—মিথিলার অবচেতন মন এখনো বিশ্বাস করতে চায় না, এসব সত্যি।
“যদি না আসিস, আমি তোকে শেষ করে দেব,” সুমনের কণ্ঠস্বরটা কানে বাজে।
সে আর চায় না যেতে, কিন্তু উপায়?
ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই পেছন থেকে গলার স্বর—
“আম্মু, এত রাত হল কোথায় ছিলে?”
মিথিলা চমকে তাকায়। মহিমার চোখে স্পষ্ট প্রশ্ন, তীক্ষ্ণ সন্দেহ।
মহিমা এখন অনেক বড়, কিশোরী নয়—তার চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয়।
“এক বান্ধবীর বাসায় ছিলাম, হঠাৎ শরীরটা খারাপ লাগছিল, তাই থেকে গেলাম,” কণ্ঠে স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা করে মিথিলা।
কিন্তু মহিমা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
“তোমার ফোনটা অফ ছিল কেন?”
মিথিলা কোনো জবাব দেয় না। শুধু মাথা নিচু করে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
রাতের বাকি সময়টা বিছানায় শুয়ে কাটে মিথিলার চোখ খোলা রেখে। বারবার মনে পড়ে সুমনের সেই বিকৃত হাসি, মোবাইল স্ক্রিনে তার নগ্ন ছবি, আর সেই ভয়ংকর দৃষ্টি যা বলে,
“তুই আর পালাতে পারবি না।”
সে জানে, যদি সুমন চায়, আজই সব ফাঁস হয়ে যাবে—স্বামী, মেয়ে, সমাজ…সব তার বিপক্ষে দাঁড়াবে।
কিন্তু মিথিলা কি চিরকাল এমন পরাধীন থাকবে?
অন্যদিকে মহিমা নিজ ঘরে বসে মায়ের গত কয়েক সপ্তাহের আচরণ মনে করে।
দেখতে পায়—মা আগের মতো হাসে না, চোখে অদ্ভুত গ্লানি, আর মোবাইলটা সবসময় লুকিয়ে রাখে।
সেদিন সে মায়ের ফোনে সুমনের মেসেজের এক ঝলক দেখে ফেলেছিল—“আগামীকাল ৮টায়, পুরনো ঠিকানায়। আসবি। বাধ্য।”
মহিমার বুকের ভেতর কাঁপে—
“সুমন কে? কী হচ্ছে মায়ের সঙ্গে?”
সে সিদ্ধান্ত নেয়, এবার সে সব জানবে। আর শুধু দেখবে না—প্রয়োজনে বাধা দেবে, কারণ সে জানে, মায়ের ভেতরে কিছু একটা ভেঙে পড়ছে।
রাতের অন্ধকারে যতটা না নিস্তব্ধতা থাকে, তার চেয়ে বেশি গোপন শব্দ। সেই শব্দগুলো মিথিলার বুকের ভিতর দাউ দাউ করে জ্বলছিল—ভয়, লজ্জা আর একটা অসমাপ্ত আর্তনাদ। কিন্তু মহিমার চোখে ছিল অন্য আগুন—সন্দেহ, ক্ষোভ, আর এক অদম্য সত্য উদ্ঘাটনের তৃষ্ণা।
পরদিন সকালে মিথিলা আবার বেরিয়ে গেল, অন্য দিনের মতোই সুমনের কাছে।
“কাজ আছে একটা,” বলে মহিমা আর আরিফকে এড়িয়ে গেল।
কিন্তু এবার মহিমা চুপ করে বসে থাকল না। সে ছায়ার মতো মায়ের পিছু নিল। ছেলেবেলার মতো নয়, এখন সে জানে কীভাবে চলতে হয় নিঃশব্দে, কীভাবে দেখতে হয় চেহারার আড়ালের গল্প।
মিথিলা পৌঁছায় পুরনো সেই বাসায়—সুমনের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্ট।
দরজা খুলতেই সুমন হাসে, কিন্তু তার চোখে সেই চিরচেনা হুমকি।
“তোকে নিয়ে আমার খেলা এবার অন্য লেভেলে যাবে,” সে ফিসফিস করে বলে,
“তোর মেয়েটার ফেসবুক প্রোফাইল দেখেছি... অনেক কিউট… তুই চাইলে ওকেও একদিন নিয়ে আয়…”
মিথিলার বুক ধ্বসে পড়ে।
“সুমন! আপনি পাগল? ও আমার মেয়ে!”
সুমনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি—“তুই তো মা হয়েও এসেছিস, তাহলে?
পরদিন মিথিলা ফিরেই দেখে—ঘরে নেই শান্তি।
মহিমা কোনো কথা বলে না, শুধু বলে,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো মা?”
মিথিলা কিছু বলতে চায়, কিন্তু চোখে জল এসে পড়ে।
মহিমা তখন মায়ের হাত ধরে ফিসফিস করে বলে— "আমি তোমার পাশে আছি সব সময়"
সুমন তখন নতুন চাল চালছে।
রাতের আঁধারে একটা চিঠি ফেলে যায় বাসার দরজায়—
“মেয়েটা তো বেশ চমৎকার... দেখা যাক, কবে ওকে দেখা যায় কাছ থেকে।”
মিথিলা বুঝে যায়, এবার শুধু সে নয়, সুমন টার্গেট করেছে মহিমাকেও।
সে জানে, এইবার তাকে পাল্টা কিছু করতে হবে—চুপ করে থাকলে মহিমাও শেষ হয়ে যাবে।
সুমন আর আগের মতো ফোন করে হুমকি দেয় না। এবার সে নীরব। আর এই নীরবতাই মিথিলার জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। সে জানে—ঝড় আসার আগে বাতাস এমনই থেমে যায়।
তিন দিন পেরিয়ে গেছে। মিথিলা যতটা সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে রাখছে, সুমনের সঙ্গে আর যোগাযোগ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহিমাও তার পাশে আছে, সাহস দিচ্ছে, খেয়াল রাখছে সবকিছুর।
কিন্তু সুমন তো থেমে থাকে না।
আরিফ অফিস থেকে হঠাৎ ফিরে আসে দুপুরে। চেহারায় অদ্ভুত রাগ, চোখে আগুন।
হাতের মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠে—
“এইসব কী! কে এই লোক? এসব ভিডিও আমার কাছে এসেছে। তুই কি পাগল? একটা মেয়ে বড় করছিস আর নিজে এইসব করছিস?”
মহিমা দৌড়ে আসে ঘরে। মিথিলার মুখ সাদা হয়ে যায়। আরিফ মোবাইলে মিথিলা এবং রোমেলের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও দেখায়—যা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন সে ইচ্ছা করেই এসব করেছে।
“আমার সব বন্ধুরা ভিডিওটা পেয়েছে। অফিসে লোকজন মুখ টিপে হাসছে। মহিমার কলেজে নোটিশ গেছে। জানিস তুই কী করেছিস?”
মিথিলা বোঝে—সুমন এবার খেলার শেষ চাল দিয়েছে।
মহিমা মায়ের কাঁপা হাত ধরে বলে,
“মা, ও আমাদের ভেঙে দিতে চাইছে। এবার আর সহ্য করা যাবে না।”
তার চোখে দেখা যায় প্রতিজ্ঞা।
“আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে সব তথ্য দিয়েছি। কিন্তু আমাদের আরও প্রমাণ দরকার। সুমনকে যদি থামাতে হয়, তার বিরুদ্ধে বড় কিছু আনতে হবে।”
একই সময়ে সুমন নতুন খেলা শুরু করে।
নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি ভুয়া চাইল্ড অ্যাবিউস অভিযোগ করে থানায়—মিথিলার নামে।
দাবি করে, “ওর মেয়ের সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অমানবিক ব্যবহার করে মিথিলা। একজন অসুস্থ মা।”
পুলিশ হানা দেয় বাসায়।
প্রতিবেশীরা কানাঘুষো করে।
আরিফ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
মিথিলা আর মহিমা যেন ঘিরে পড়ে এক অদৃশ্য শত্রুর জালে—যেখানে সত্য নেই, যুক্তি নেই, আছে শুধু অপমান, ভয় আর সামাজিক মৃত্যুর ছায়া।
সুমন এবার আর কোনো মুখোশ পরছে না।
তাঁর নীরবতা ভেঙে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়—প্রভাব, প্রতিশোধ আর বিকৃত ক্ষমতার নগ্ন প্রদর্শনে।
সে জানে—মিথিলা এখন দুর্বল, তার পাশে স্বামী নেই, সমাজ নেই, আত্মীয়স্বজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর মহিমা? সে তো ১৮ বছরের এক যোদ্ধা, কিন্তু দুর্বল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে—কলেজ , সমাজ আর একা মায়ের স্বপ্নের ভার নিয়ে।
সুমন নিজের রাজনৈতিক দলের জেলা শাখার নেতাদের বলে,
“এই মেয়েটা আমার চরিত্রে কালি ছেটাচ্ছে। একটা পতিতা আর তার বেয়াদব মেয়ে মিলে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চায়।”
তারপর শুরু হয় ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের আয়োজন—
স্থানীয় পত্রিকায় ছাপানো হয় মিথিলার বিকৃত করা ছবি আর মিথ্যা খবর—“এক উচ্চপদস্থ নেতার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রেখে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা”।
মহিমার কলেজে তার নামে চলে মানসিক নির্যাতন, সহপাঠীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে—“এই মেয়ের চরিত্র ঠিক না, আমাদের সন্তানদের ক্ষতি হবে।”
মহিমা, যে এতদিন বুক চিতিয়ে লড়ছিল, এবার কাঁপে।
সে কলেজে গেলে সবাই চুপ করে যায়, কেউ কেউ হাসে, কেউ খোলা মুখে বলে,
“তোমার মা কি সত্যিই ভিডিওতে ওই কাজগুলো করছিল?”
মহিমা একদিন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“মা... আমি পারছি না। আমার ভুল ছিল ভেবে ছিলাম, আমরা ওর সঙ্গে লড়তে পারব। ও তো মানুষ না... দানব।”
মিথিলা তখনও চোখ মুছে, তাকে বুকের কাছে টেনে নেয়, কিন্তু তার নিজের ভিতরও এক ক্রমাগত ভাঙনের ধ্বনি।
রাত হলে মেঝেতে বসে সে কাঁদে—চুপচাপ, নিঃশব্দ, যেন পুরো পৃথিবী শুনে ফেললে আরও বেশি লজ্জা পাবে।
এক রাতে মিথিলার ফোনে একটা অডিও ক্লিপ আসে।
সুমনের কণ্ঠ—
“তুই যদি এত সাহস করে আদালত, পুলিশ বা সাংবাদিকদের কাছে যাস, তাহলে তোর মেয়েটার কী হবে জানিস তো? ১৮ বছর বয়স... অনেক খদ্দের খুঁজে পাবে ওর মতো মেয়েকে।”
মিথিলা দরজার চাবি ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ঢোকে। রাত প্রায় দেড়টা। অন্ধকার ড্রয়িংরুমের নিস্তব্ধতা যেন ওর ভিতরের অপরাধবোধকে আরও প্রকট করে তুলছে। পায়ের শব্দ যেন নিজের কাছেই অপরাধপ্রমাণ। ক্লান্ত শরীর, এলোমেলো চুল, ঠোঁটে জরা হয়ে থাকা লিপস্টিকের একটুকরো দাগ—সবকিছুই বলে দিচ্ছে সে কোথা থেকে ফিরেছে।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয়—সে জানে, সে আর শুধু শরীর দিয়ে সুমনের কাছে নেই, বরং সুমনের হাতের এক খেলনা হয়ে গেছে।
একটা ভিডিও, কয়েকটা ছবি—মিথিলার অবচেতন মন এখনো বিশ্বাস করতে চায় না, এসব সত্যি।
“যদি না আসিস, আমি তোকে শেষ করে দেব,” সুমনের কণ্ঠস্বরটা কানে বাজে।
সে আর চায় না যেতে, কিন্তু উপায়?
ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই পেছন থেকে গলার স্বর—
“আম্মু, এত রাত হল কোথায় ছিলে?”
মিথিলা চমকে তাকায়। মহিমার চোখে স্পষ্ট প্রশ্ন, তীক্ষ্ণ সন্দেহ।
মহিমা এখন অনেক বড়, কিশোরী নয়—তার চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ নয়।
“এক বান্ধবীর বাসায় ছিলাম, হঠাৎ শরীরটা খারাপ লাগছিল, তাই থেকে গেলাম,” কণ্ঠে স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা করে মিথিলা।
কিন্তু মহিমা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
“তোমার ফোনটা অফ ছিল কেন?”
মিথিলা কোনো জবাব দেয় না। শুধু মাথা নিচু করে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
রাতের বাকি সময়টা বিছানায় শুয়ে কাটে মিথিলার চোখ খোলা রেখে। বারবার মনে পড়ে সুমনের সেই বিকৃত হাসি, মোবাইল স্ক্রিনে তার নগ্ন ছবি, আর সেই ভয়ংকর দৃষ্টি যা বলে,
“তুই আর পালাতে পারবি না।”
সে জানে, যদি সুমন চায়, আজই সব ফাঁস হয়ে যাবে—স্বামী, মেয়ে, সমাজ…সব তার বিপক্ষে দাঁড়াবে।
কিন্তু মিথিলা কি চিরকাল এমন পরাধীন থাকবে?
অন্যদিকে মহিমা নিজ ঘরে বসে মায়ের গত কয়েক সপ্তাহের আচরণ মনে করে।
দেখতে পায়—মা আগের মতো হাসে না, চোখে অদ্ভুত গ্লানি, আর মোবাইলটা সবসময় লুকিয়ে রাখে।
সেদিন সে মায়ের ফোনে সুমনের মেসেজের এক ঝলক দেখে ফেলেছিল—“আগামীকাল ৮টায়, পুরনো ঠিকানায়। আসবি। বাধ্য।”
মহিমার বুকের ভেতর কাঁপে—
“সুমন কে? কী হচ্ছে মায়ের সঙ্গে?”
সে সিদ্ধান্ত নেয়, এবার সে সব জানবে। আর শুধু দেখবে না—প্রয়োজনে বাধা দেবে, কারণ সে জানে, মায়ের ভেতরে কিছু একটা ভেঙে পড়ছে।
রাতের অন্ধকারে যতটা না নিস্তব্ধতা থাকে, তার চেয়ে বেশি গোপন শব্দ। সেই শব্দগুলো মিথিলার বুকের ভিতর দাউ দাউ করে জ্বলছিল—ভয়, লজ্জা আর একটা অসমাপ্ত আর্তনাদ। কিন্তু মহিমার চোখে ছিল অন্য আগুন—সন্দেহ, ক্ষোভ, আর এক অদম্য সত্য উদ্ঘাটনের তৃষ্ণা।
পরদিন সকালে মিথিলা আবার বেরিয়ে গেল, অন্য দিনের মতোই সুমনের কাছে।
“কাজ আছে একটা,” বলে মহিমা আর আরিফকে এড়িয়ে গেল।
কিন্তু এবার মহিমা চুপ করে বসে থাকল না। সে ছায়ার মতো মায়ের পিছু নিল। ছেলেবেলার মতো নয়, এখন সে জানে কীভাবে চলতে হয় নিঃশব্দে, কীভাবে দেখতে হয় চেহারার আড়ালের গল্প।
মিথিলা পৌঁছায় পুরনো সেই বাসায়—সুমনের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্ট।
দরজা খুলতেই সুমন হাসে, কিন্তু তার চোখে সেই চিরচেনা হুমকি।
“তোকে নিয়ে আমার খেলা এবার অন্য লেভেলে যাবে,” সে ফিসফিস করে বলে,
“তোর মেয়েটার ফেসবুক প্রোফাইল দেখেছি... অনেক কিউট… তুই চাইলে ওকেও একদিন নিয়ে আয়…”
মিথিলার বুক ধ্বসে পড়ে।
“সুমন! আপনি পাগল? ও আমার মেয়ে!”
সুমনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি—“তুই তো মা হয়েও এসেছিস, তাহলে?
পরদিন মিথিলা ফিরেই দেখে—ঘরে নেই শান্তি।
মহিমা কোনো কথা বলে না, শুধু বলে,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো মা?”
মিথিলা কিছু বলতে চায়, কিন্তু চোখে জল এসে পড়ে।
মহিমা তখন মায়ের হাত ধরে ফিসফিস করে বলে— "আমি তোমার পাশে আছি সব সময়"
সুমন তখন নতুন চাল চালছে।
রাতের আঁধারে একটা চিঠি ফেলে যায় বাসার দরজায়—
“মেয়েটা তো বেশ চমৎকার... দেখা যাক, কবে ওকে দেখা যায় কাছ থেকে।”
মিথিলা বুঝে যায়, এবার শুধু সে নয়, সুমন টার্গেট করেছে মহিমাকেও।
সে জানে, এইবার তাকে পাল্টা কিছু করতে হবে—চুপ করে থাকলে মহিমাও শেষ হয়ে যাবে।
সুমন আর আগের মতো ফোন করে হুমকি দেয় না। এবার সে নীরব। আর এই নীরবতাই মিথিলার জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। সে জানে—ঝড় আসার আগে বাতাস এমনই থেমে যায়।
তিন দিন পেরিয়ে গেছে। মিথিলা যতটা সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে রাখছে, সুমনের সঙ্গে আর যোগাযোগ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহিমাও তার পাশে আছে, সাহস দিচ্ছে, খেয়াল রাখছে সবকিছুর।
কিন্তু সুমন তো থেমে থাকে না।
আরিফ অফিস থেকে হঠাৎ ফিরে আসে দুপুরে। চেহারায় অদ্ভুত রাগ, চোখে আগুন।
হাতের মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠে—
“এইসব কী! কে এই লোক? এসব ভিডিও আমার কাছে এসেছে। তুই কি পাগল? একটা মেয়ে বড় করছিস আর নিজে এইসব করছিস?”
মহিমা দৌড়ে আসে ঘরে। মিথিলার মুখ সাদা হয়ে যায়। আরিফ মোবাইলে মিথিলা এবং রোমেলের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও দেখায়—যা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন সে ইচ্ছা করেই এসব করেছে।
“আমার সব বন্ধুরা ভিডিওটা পেয়েছে। অফিসে লোকজন মুখ টিপে হাসছে। মহিমার কলেজে নোটিশ গেছে। জানিস তুই কী করেছিস?”
মিথিলা বোঝে—সুমন এবার খেলার শেষ চাল দিয়েছে।
মহিমা মায়ের কাঁপা হাত ধরে বলে,
“মা, ও আমাদের ভেঙে দিতে চাইছে। এবার আর সহ্য করা যাবে না।”
তার চোখে দেখা যায় প্রতিজ্ঞা।
“আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে সব তথ্য দিয়েছি। কিন্তু আমাদের আরও প্রমাণ দরকার। সুমনকে যদি থামাতে হয়, তার বিরুদ্ধে বড় কিছু আনতে হবে।”
একই সময়ে সুমন নতুন খেলা শুরু করে।
নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি ভুয়া চাইল্ড অ্যাবিউস অভিযোগ করে থানায়—মিথিলার নামে।
দাবি করে, “ওর মেয়ের সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অমানবিক ব্যবহার করে মিথিলা। একজন অসুস্থ মা।”
পুলিশ হানা দেয় বাসায়।
প্রতিবেশীরা কানাঘুষো করে।
আরিফ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
মিথিলা আর মহিমা যেন ঘিরে পড়ে এক অদৃশ্য শত্রুর জালে—যেখানে সত্য নেই, যুক্তি নেই, আছে শুধু অপমান, ভয় আর সামাজিক মৃত্যুর ছায়া।
সুমন এবার আর কোনো মুখোশ পরছে না।
তাঁর নীরবতা ভেঙে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়—প্রভাব, প্রতিশোধ আর বিকৃত ক্ষমতার নগ্ন প্রদর্শনে।
সে জানে—মিথিলা এখন দুর্বল, তার পাশে স্বামী নেই, সমাজ নেই, আত্মীয়স্বজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর মহিমা? সে তো ১৮ বছরের এক যোদ্ধা, কিন্তু দুর্বল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে—কলেজ , সমাজ আর একা মায়ের স্বপ্নের ভার নিয়ে।
সুমন নিজের রাজনৈতিক দলের জেলা শাখার নেতাদের বলে,
“এই মেয়েটা আমার চরিত্রে কালি ছেটাচ্ছে। একটা পতিতা আর তার বেয়াদব মেয়ে মিলে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চায়।”
তারপর শুরু হয় ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের আয়োজন—
স্থানীয় পত্রিকায় ছাপানো হয় মিথিলার বিকৃত করা ছবি আর মিথ্যা খবর—“এক উচ্চপদস্থ নেতার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রেখে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা”।
মহিমার কলেজে তার নামে চলে মানসিক নির্যাতন, সহপাঠীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে—“এই মেয়ের চরিত্র ঠিক না, আমাদের সন্তানদের ক্ষতি হবে।”
মহিমা, যে এতদিন বুক চিতিয়ে লড়ছিল, এবার কাঁপে।
সে কলেজে গেলে সবাই চুপ করে যায়, কেউ কেউ হাসে, কেউ খোলা মুখে বলে,
“তোমার মা কি সত্যিই ভিডিওতে ওই কাজগুলো করছিল?”
মহিমা একদিন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“মা... আমি পারছি না। আমার ভুল ছিল ভেবে ছিলাম, আমরা ওর সঙ্গে লড়তে পারব। ও তো মানুষ না... দানব।”
মিথিলা তখনও চোখ মুছে, তাকে বুকের কাছে টেনে নেয়, কিন্তু তার নিজের ভিতরও এক ক্রমাগত ভাঙনের ধ্বনি।
রাত হলে মেঝেতে বসে সে কাঁদে—চুপচাপ, নিঃশব্দ, যেন পুরো পৃথিবী শুনে ফেললে আরও বেশি লজ্জা পাবে।
এক রাতে মিথিলার ফোনে একটা অডিও ক্লিপ আসে।
সুমনের কণ্ঠ—
“তুই যদি এত সাহস করে আদালত, পুলিশ বা সাংবাদিকদের কাছে যাস, তাহলে তোর মেয়েটার কী হবে জানিস তো? ১৮ বছর বয়স... অনেক খদ্দের খুঁজে পাবে ওর মতো মেয়েকে।”


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)