16-07-2025, 11:47 PM
পর্ব-৬
শেষ কয়েক সপ্তাহে মিথিলা ও তার স্বামীর মধ্যে সম্পর্কটা এক অদ্ভুত তিক্ততায় পৌঁছেছে। রাজনীতির গন্ধ এখন শুধু ঘ্রাণে নয়, আচরণেও—তার স্বামী, আরিফ, দিন দিন বদলে যাচ্ছেন। ঘরে ফেরার সময় নেই, ফিরলেও যেন এক অদৃশ্য কণ্ঠে কারও প্রতি রাগ উগরে দেন। সবকিছুতেই শত্রুতা খোঁজেন, এমনকি নিজের স্ত্রীর চোখেও।
মিথিলা কথা কম বলে এখন। তার চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে অনুপস্থিত এক মৌনতা। রান্নাঘরে চা ঢালতে ঢালতে মাঝে মাঝে থমকে যান। যেন মনে মনে কেউকে ডাকছেন।
একদিন রাতে কথা বলতে বলতে হঠাৎই আরিফ চিৎকার করে উঠল—
“তুমি কিসের শান্তি খোঁজো, মিথিলা? এই ঘরে শান্তি নেই, কারণ তুমি নেই আমার সঙ্গে!”
মিথিলা কিছু বলেনি। শুধুই তাকিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অভিমান তখন ঠোঁটে রক্ত হয়ে ফুটছিল। সেই রাতে মাহিমা ঘুমোতে পারেনি।
পরদিন বিকেলে, এক অচেনা আবেগে সে ফোন করেছিল রোমেলকে।
“আপনি কি একটু সময় দিতে পারবেন আমাকে?” – তার কণ্ঠ ছিল থমথমে, কিন্তু দৃঢ়।
রোমেল বুঝতে পেরেছিলেন—এটা শুধু একটা অনুরোধ নয়, বরং একটা সুযোগ। যে মেয়েটি একদিন তার উপস্থিতিকে অবিশ্বাসের চোখে দেখেছিল, আজ নিজেই একান্তে কথা বলতে চাইছে।
ক্যাফের এক কোণায় বসে তারা দুজন।
রোমেল কিছু বলেন না। মাহিমা-ও না।
তবে নীরবতার মাঝখানে একটা অদ্ভুত স্বচ্ছতা তৈরি হয়।
মাহিমা বলে, “আমার আম্মুকে আপনি ভালোবাসেন—এইটা এখন বুঝি। কিন্তু আমি আগে বুঝতাম না... আসলে মানতেও চাইতাম না।”
রোমেল কেবল মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, “ভালোবাসা সবসময় বোঝার বিষয় না, মাহিমা। মাঝে মাঝে সেটা শুধু টের পাওয়া যায়।”
একটা মুহূর্ত থেমে থেকে মাহিমা বলে, “আমি সেই দিন তোমাদের যেভাবে দেখেছিলাম... ভাবতাম, আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এখন... কেমন যেন মনে হয়, আমার আম্মু প্রথমবার নিজের মতো ছিল। অবাধ্য, নরম, জীবন্ত।”
তার কণ্ঠ ভার হয়ে আসে, “আমার আম্মুকে আমি যেন নতুন করে দেখতে শিখেছি—একজন নারী হিসেবে। তাকে জড়িয়ে থাকা তোমার স্পর্শে আমি এখন ঘৃণা পাই না। বরং... একটা অদ্ভুত ভালো লাগা হয়। কী জানি কেন...”
রোমেল থমকে যায়। এমন সংলাপ সে আশা করেনি।
মাহিমা নিচু গলায় বলে, “তোমরা একসঙ্গে যখন থাকো, আম্মু হাসে। সেই হাসিটা আমি আগে কখনো দেখিনি। সেই হাসির ভেতরে আমার আম্মু নেই, আছে একজন প্রেমে পড়া মানুষ।”
বাইরে তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে।
রোমেল বলতে চায় কিছু—কিন্তু সে বোঝে, এ নীরবতা ভাঙার নয়।
মাহিমা জানে, সে এখনো দ্বিধায়। তার মাথার ভেতর অনেক প্রশ্ন, অনেক না-বলা বোধ।
তবুও, আজ তার বুকের ভিতর যে অনুভূতি গাঢ় হয়ে উঠছে—তা লজ্জা নয়, রাগ নয়।
সেটা যেন এক আশ্চর্য মমতা, এক অজানা গর্ব, এক প্রাচীন নারীচেতনার প্রতি নিঃশব্দ শ্রদ্ধা।
মিথিলা তার মা।
রোমেল তার মায়ের প্রেমিক।
আর মাহিমা—তাদের সেই নিষিদ্ধ প্রেমের এক নীরব সাক্ষী, এক আধা-ভাঙা আয়না।
যার ভেতর দিয়ে জীবন একদিন নতুন রঙে ধরা দেবে।
ঢাকার বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যাগুলো যেন কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দেয়।
মিথিলার বাসায় এখন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা—নিঃশব্দ শব্দের মতো। রাজনৈতিক গোলমাল আর পেশাগত চাপে মিথিলার স্বামী, এখন প্রায়ই তিরিক্ষে হয়ে থাকেন। ঘরে ফেরা মানেই যেন কোনো লড়াইয়ের শুরু। মিথিলা ক্লান্ত। ভীষণ ক্লান্ত।
এই সময়টায় রোমেল হয়ে ওঠে তার একমাত্র নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা।
তবে আজকাল শুধু মিথিলা নয়—রোমেলের কাছে মাঝে মাঝে আসে মাহিমাও।
সেই আগের ভয়, জড়তা, এমনকি ঘৃণার ছায়া এখন কিছুটা পাতলা হয়ে এসেছে। বরং মাহিমার চোখে এখন রোমেলের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জমে উঠেছে—যা শুধু একজন প্রেমিকের জন্য নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্বের জন্য।
এক সন্ধ্যায়, তারা তিনজন—মিথিলা, রোমেল আর মাহিমা—একসাথে বসেছিল বারান্দায়। মেঘলা আকাশের নিচে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছিল।
রোমেল বলল, মৃদু গলায়,
“মাহিমা, আমার একটা ছেলে আছে। জিসান। বয়স কুড়ি। বিদেশে ছিল, এখন ফিরেছে স্থায়ীভাবে। তোমার সঙ্গে ওর দেখা হওয়া উচিত।”
মাহিমা একটু চমকে তাকাল। তার চোখে একরকম দ্বিধা।
মিথিলা হেসে বলল,
“জিসান অনেকটা তোমার মতোই চিন্তাশীল। ওর সঙ্গে কথা বললে তোমার ভালো লাগবে।”
একটা অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরল মাহিমাকে—যেন এই মানুষেরা তাকে একটা নতুন জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তবে সে কিছু বলেনি। শুধু মাথা হেঁট করে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বসে রইলো।
দিন দিন মাহিমা বুঝতে শুরু করল—তার ভেতরে রোমেলকে ঘিরে যে একান্ত অনুভূতি, তা কোনো সাধারণ সম্পর্কের ব্যাখ্যায় ধরা যায় না।
সে কোনো প্রেমে পড়ে যায়নি, আবার তা অস্বীকারও করতে পারছিল না।
সে অনুভব করে—রোমেল যেন তার নিজের মা’র সবচেয়ে গোপন স্তরের দরজাটা খুলে দিয়েছিল। আর সেই দরজার ওপাশে সে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।
মাহিমা বুঝতে পারে, রোমেল তার জীবনে একটা স্থিরতা এনেছে—যেটা তার বাবা কখনো দিতে পারেনি।
সে এক রাতে চুপচাপ মেসেজ পাঠায় রোমেলকে:
“তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে... কারণ তুমি শুধু আমার মা’কে না, আমাকেও বুঝে ফেলো।”
রোমেল উত্তর দেয়:
“তোমরা দুইজনই আমার জীবনের অদ্ভুত আয়না। আমি শুধু সত্যটা স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম।”
ঢাকার বাতাসে আজ একধরনের ভার। মেঘলা আকাশ, দমবন্ধ করা ক্লান্তি। অথচ মাহিমার ভিতরে চলছে আরেক ধরণের বৃষ্টি—যেখানে ফোঁটা নয়, বরং পুরোনো বিশ্বাস, অহংকার, এবং নিজের পরিচয়ের প্রশ্নগুলো পড়ছে শব্দ করে।
মিথিলা আর রোমেল এখন আর কিছু লুকায় না। তবুও, তাদের ভালোবাসার গভীরতা যেন যত প্রকাশ্যে এসেছে, মাহিমার মনে ততই জেগে উঠেছে অন্যরকম একটা অনুভব—এটা ঈর্ষা নয়, বিরক্তিও নয়; বরং একধরনের বিস্ময়। কীভাবে একজন নারী, মা হয়েও একজন পুরুষের বাহুলগ্নে আবার নতুন করে বাঁচতে পারে?
মাহিমা রোমেলের দিকে আজকাল আর অবিচার বা দোষের চোখে তাকায় না। বরং কখনো কখনো তার পাশে বসে থাকলে অদ্ভুত এক নির্ভরতা অনুভব করে। যেন কোনো পুরোনো যন্ত্রণার ওপর আলতো করে হাত রেখে কেউ বলছে, "ভয় পেও না।"
এক বিকেলে রোমেল ও মিথিলা তাকে নিয়ে চায়ের টেবিলে বসে।
“মাহিমা,” মিথিলা বলে, “চলো একদিন তোমার সঙ্গে জিসানের দেখা করিয়ে দিই।”
মাহিমা চমকে ওঠে না, কেবল প্রশ্ন জেগে ওঠে তার দৃষ্টিতে।
“কেন?” সে শুধায়।
রোমেল হালকা হেসে বলে—
“কারণ তোমার চোখে আজকাল এমন কিছু খুঁজে পাই, যা আগে দেখিনি। তুমি নিজের ভেতরে কিছু খুঁজছো—আমার মনে হয়, জিসানও সেটা করছে।”
পরিচয়ের দিনটা হয় এক সাদামাটা বিকেলে। গুলশানের এক কাফেতে।
জিসান—উচ্চতায় লম্বা, চুল একটু এলোমেলো, কিন্তু চোখে সেই একই রোমেল-সদৃশ গভীরতা। তার হাসিতে লাজুক এক কৌতুক আছে, আর কথায় —একটা পরিণত নীরবতা।
তারা কথা বলে বই নিয়ে, মিউজিক নিয়ে, এমনকি পৃথিবীর অনর্থকতা নিয়েও। প্রথমবারের মতো মাহিমা অনুভব করে, তার বুকের ভিতর যে অসমাপ্ত একটা কোলাহল ছিল, তা কেউ বুঝতে পারছে।
রাতে, ফিরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাহিমা নিজেকে দেখে।
সে হেসে ফেলে। মুখে অদ্ভুত এক উষ্ণতা।
তার মনে হয়, সে আর আগের মাহিমা নেই।
সে কেবল মিথিলার মেয়ে নয়, রোমেলের সেই ভাঙনের সাক্ষী নয়, বা জিসানের নতুন পরিচিতার ভূমিকাতেও নয়—
সে এক ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়া নারী, যে ভেতর থেকে নিজেকে ভাঙছে, গড়ছে, আর নতুন করে আবিষ্কার করছে।
একসময় তার মনে পড়ে যায় রোমেলের কথা
“তোমার মা শুধু তোমার জন্য মা ছিল না। তিনি একজন নারীও ছিলেন…”
এখন মাহিমা বুঝতে পারছে, নারী হওয়া মানে কেবল প্রেমে পড়া নয়—বরং নিজের ভিতরের সকল সত্তাকে একসাথে আলিঙ্গন করতে পারা।
জিসানের সঙ্গে পরিচয়ের কিছুদিন পর, এক বিকেলে তারা বসে ছিল ধানমণ্ডির লেকপাড়ে।
হালকা বাতাস, দূরে একটা গিটার বাজছিল।
মাহিমা হঠাৎ জিসানকে জিজ্ঞেস করে—
“তুমি কি জানো, তোমার বাবা আমার মায়ের প্রেমিক?”
জিসান এক মুহূর্ত থেমে যায়। তারপর হালকা হাসে, কিন্তু সেই হাসিতে কাঁপন ছিল।
“জানি,” সে বলে, “আমার মা নেই। আর বাবা অনেক বছর ধরে একা। আমি জানতাম, সে কাউকে ভালোবাসে। কে, জানতাম না। এখন জানি।”
মাহিমা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে
“তাহলে… আমাদের এই সম্পর্কটার নাম কী হবে?”
জিসান বলে না কিছু। তার চোখে কেবল একধরনের স্বস্তি—অথবা নিরাশা, বোঝা যায় না।
তারপর একদিন—বৃষ্টিভেজা এক সন্ধ্যায়, মাহিমা হঠাৎ তার হাত ধরল। এটা কোনো নাটকীয় প্রেম ছিল না, বরং এক ধরণের আত্মরক্ষা। যেন তার ভিতরে কিছু ভেঙে যাচ্ছে, আর সে কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে।
সেদিন জিসান তার হাত ছাড়ায়নি।
মিথিলা প্রথম টের পায় কিছু একটা বদলেছে।
মাহিমার চোখে একধরনের অস্থির প্রশান্তি, আর জিসান হঠাৎ করেই ঘন ঘন তাদের বাসায় আসছে।
রোমেল যখন জানতে চায়, মিথিলা কিছু বলে না। শুধু চুপ করে থাকে।
তিনজনের সম্পর্ক তখন কাঁটার মতো জড়িয়ে যাচ্ছে—মিথিলা জানে, জিসান যদি মাহিমাকে ভালোবেসে ফেলে, তাহলে সেই সম্পর্কের ভিতরে তারা সবাই তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বাঁচবে।
রোমেল ভাবে, কী নিষ্ঠুর এক ভাগ্য—যে পুরুষ নিজের প্রেমকে পূর্ণ করতে চেয়েছিল, এখন তাকেই তার ছেলের সঙ্গে সেই নারীর মেয়ের সম্পর্ক সহ্য করতে হবে।
কিন্তু মাহিমা?
সে দিনকে দিন বদলাচ্ছে।
তার ভিতরে যৌবনের যে ঘূর্ণি জেগেছিল, তা এখন দেহের অনুরণনে প্রকাশ পায়।
সে আয়নার সামনে সম্পুর্ন ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরকে দেখে এক নতুন চোখে। নিজেকে চায়, অনুভব করতে চায়। ইসস! জিসান যদি এভাবে আমাকে ন্যাংটো দেখতো!
জিসান তাকে ছুঁলে সে কাঁপে। কিন্তু সে সেই কাঁপন থেকে পালায় না।
একদিন রাতে, ডাইনিং টেবিলে চারজন—মিথিলা, রোমেল, জিসান ও মাহিমা।
হাওয়া থেমে গেছে, ছুরি-কাঁটা ঠোকাঠুকির শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই।
মাহিমা হঠাৎ বলে ওঠে,
“আমরা কি আসলেই পরিবার?”
জিসান তাকায় তার দিকে।
মিথিলার কাঁধ শক্ত হয়ে ওঠে।
রোমেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“পরিবার? নাকি জটলা?”—মাহিমা ফিসফিস করে।
মিথিলা বলে,
“এইসব সম্পর্ক, মাহিমা, নাম দিয়ে বোঝা যায় না। কেবল অনুভব দিয়ে টিকে থাকে।”
“তাহলে," মাহিমা বলে, “আমি যদি জিসানকে ভালোবাসি, সেটা কি অন্যায় হবে?”
রোমেল চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।
তার ছেলে, তার প্রেমিকার মেয়ে।
একটা নতুন প্রজন্ম সেই পুরোনো শেকলের মধ্যে আটকে যাচ্ছে—যেখানে ভালোবাসা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ, নিষিদ্ধ।
কিন্তু মাহিমা এখন আর থামতে চায় না।
তার মনে হয়, সে যদি না ভালোবাসে, তবে মিথিলার সেই সংগ্রাম—জীবনের ভালোবাসার জন্য লড়াই—সেটাও অর্থহীন হয়ে যাবে।
রাতে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাহিমা নিজেকে দেখে।
তার চোখে ভেসে ওঠে আম্মু ও রোমেলের সেই বুনো উদ্দাম যৌনতার দৃশ্য, মনে পড়ে যায় আম্মুর পাছায় রোমেলের চটাশ চটাশ থাপ্পড়ের কথা। মাহিমা মুচকি হেসে নিজের পাছায় হাত বুলিয়ে বললো,, "তুমি আরেকটু অপেক্ষা করো এমন এমন চড় খাবার জন্যে। আবার ভেসে ওঠে জিসানের চোখে তার প্রতিচ্ছবি। জিসানের কথা ভাবতেই শরীরের সমস্ত লোমকুপ খাড়া হয়ে গেল উত্তেজনায়।
সে বুঝে—সে কারো ছায়া নয়।
সে নিজেই এক রোদচূর্ণ মেয়ের গল্প, যার শরীরে জেগে উঠেছে দাবী, অধিকার, স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা।
সে ভাঙবে, গড়বে, পোড়াবে… কিন্তু নিজেকে খুঁজে নেবে।
এই ঘূর্ণিপাক থেকে মুক্তি নেই—কিন্তু হয়তো মুক্তির ঠিক আগের নামই হচ্ছে ভালোবাসা।
শেষ কয়েক সপ্তাহে মিথিলা ও তার স্বামীর মধ্যে সম্পর্কটা এক অদ্ভুত তিক্ততায় পৌঁছেছে। রাজনীতির গন্ধ এখন শুধু ঘ্রাণে নয়, আচরণেও—তার স্বামী, আরিফ, দিন দিন বদলে যাচ্ছেন। ঘরে ফেরার সময় নেই, ফিরলেও যেন এক অদৃশ্য কণ্ঠে কারও প্রতি রাগ উগরে দেন। সবকিছুতেই শত্রুতা খোঁজেন, এমনকি নিজের স্ত্রীর চোখেও।
মিথিলা কথা কম বলে এখন। তার চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে অনুপস্থিত এক মৌনতা। রান্নাঘরে চা ঢালতে ঢালতে মাঝে মাঝে থমকে যান। যেন মনে মনে কেউকে ডাকছেন।
একদিন রাতে কথা বলতে বলতে হঠাৎই আরিফ চিৎকার করে উঠল—
“তুমি কিসের শান্তি খোঁজো, মিথিলা? এই ঘরে শান্তি নেই, কারণ তুমি নেই আমার সঙ্গে!”
মিথিলা কিছু বলেনি। শুধুই তাকিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অভিমান তখন ঠোঁটে রক্ত হয়ে ফুটছিল। সেই রাতে মাহিমা ঘুমোতে পারেনি।
পরদিন বিকেলে, এক অচেনা আবেগে সে ফোন করেছিল রোমেলকে।
“আপনি কি একটু সময় দিতে পারবেন আমাকে?” – তার কণ্ঠ ছিল থমথমে, কিন্তু দৃঢ়।
রোমেল বুঝতে পেরেছিলেন—এটা শুধু একটা অনুরোধ নয়, বরং একটা সুযোগ। যে মেয়েটি একদিন তার উপস্থিতিকে অবিশ্বাসের চোখে দেখেছিল, আজ নিজেই একান্তে কথা বলতে চাইছে।
ক্যাফের এক কোণায় বসে তারা দুজন।
রোমেল কিছু বলেন না। মাহিমা-ও না।
তবে নীরবতার মাঝখানে একটা অদ্ভুত স্বচ্ছতা তৈরি হয়।
মাহিমা বলে, “আমার আম্মুকে আপনি ভালোবাসেন—এইটা এখন বুঝি। কিন্তু আমি আগে বুঝতাম না... আসলে মানতেও চাইতাম না।”
রোমেল কেবল মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, “ভালোবাসা সবসময় বোঝার বিষয় না, মাহিমা। মাঝে মাঝে সেটা শুধু টের পাওয়া যায়।”
একটা মুহূর্ত থেমে থেকে মাহিমা বলে, “আমি সেই দিন তোমাদের যেভাবে দেখেছিলাম... ভাবতাম, আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এখন... কেমন যেন মনে হয়, আমার আম্মু প্রথমবার নিজের মতো ছিল। অবাধ্য, নরম, জীবন্ত।”
তার কণ্ঠ ভার হয়ে আসে, “আমার আম্মুকে আমি যেন নতুন করে দেখতে শিখেছি—একজন নারী হিসেবে। তাকে জড়িয়ে থাকা তোমার স্পর্শে আমি এখন ঘৃণা পাই না। বরং... একটা অদ্ভুত ভালো লাগা হয়। কী জানি কেন...”
রোমেল থমকে যায়। এমন সংলাপ সে আশা করেনি।
মাহিমা নিচু গলায় বলে, “তোমরা একসঙ্গে যখন থাকো, আম্মু হাসে। সেই হাসিটা আমি আগে কখনো দেখিনি। সেই হাসির ভেতরে আমার আম্মু নেই, আছে একজন প্রেমে পড়া মানুষ।”
বাইরে তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে।
রোমেল বলতে চায় কিছু—কিন্তু সে বোঝে, এ নীরবতা ভাঙার নয়।
মাহিমা জানে, সে এখনো দ্বিধায়। তার মাথার ভেতর অনেক প্রশ্ন, অনেক না-বলা বোধ।
তবুও, আজ তার বুকের ভিতর যে অনুভূতি গাঢ় হয়ে উঠছে—তা লজ্জা নয়, রাগ নয়।
সেটা যেন এক আশ্চর্য মমতা, এক অজানা গর্ব, এক প্রাচীন নারীচেতনার প্রতি নিঃশব্দ শ্রদ্ধা।
মিথিলা তার মা।
রোমেল তার মায়ের প্রেমিক।
আর মাহিমা—তাদের সেই নিষিদ্ধ প্রেমের এক নীরব সাক্ষী, এক আধা-ভাঙা আয়না।
যার ভেতর দিয়ে জীবন একদিন নতুন রঙে ধরা দেবে।
ঢাকার বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যাগুলো যেন কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দেয়।
মিথিলার বাসায় এখন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা—নিঃশব্দ শব্দের মতো। রাজনৈতিক গোলমাল আর পেশাগত চাপে মিথিলার স্বামী, এখন প্রায়ই তিরিক্ষে হয়ে থাকেন। ঘরে ফেরা মানেই যেন কোনো লড়াইয়ের শুরু। মিথিলা ক্লান্ত। ভীষণ ক্লান্ত।
এই সময়টায় রোমেল হয়ে ওঠে তার একমাত্র নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা।
তবে আজকাল শুধু মিথিলা নয়—রোমেলের কাছে মাঝে মাঝে আসে মাহিমাও।
সেই আগের ভয়, জড়তা, এমনকি ঘৃণার ছায়া এখন কিছুটা পাতলা হয়ে এসেছে। বরং মাহিমার চোখে এখন রোমেলের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জমে উঠেছে—যা শুধু একজন প্রেমিকের জন্য নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্বের জন্য।
এক সন্ধ্যায়, তারা তিনজন—মিথিলা, রোমেল আর মাহিমা—একসাথে বসেছিল বারান্দায়। মেঘলা আকাশের নিচে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছিল।
রোমেল বলল, মৃদু গলায়,
“মাহিমা, আমার একটা ছেলে আছে। জিসান। বয়স কুড়ি। বিদেশে ছিল, এখন ফিরেছে স্থায়ীভাবে। তোমার সঙ্গে ওর দেখা হওয়া উচিত।”
মাহিমা একটু চমকে তাকাল। তার চোখে একরকম দ্বিধা।
মিথিলা হেসে বলল,
“জিসান অনেকটা তোমার মতোই চিন্তাশীল। ওর সঙ্গে কথা বললে তোমার ভালো লাগবে।”
একটা অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরল মাহিমাকে—যেন এই মানুষেরা তাকে একটা নতুন জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তবে সে কিছু বলেনি। শুধু মাথা হেঁট করে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বসে রইলো।
দিন দিন মাহিমা বুঝতে শুরু করল—তার ভেতরে রোমেলকে ঘিরে যে একান্ত অনুভূতি, তা কোনো সাধারণ সম্পর্কের ব্যাখ্যায় ধরা যায় না।
সে কোনো প্রেমে পড়ে যায়নি, আবার তা অস্বীকারও করতে পারছিল না।
সে অনুভব করে—রোমেল যেন তার নিজের মা’র সবচেয়ে গোপন স্তরের দরজাটা খুলে দিয়েছিল। আর সেই দরজার ওপাশে সে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।
মাহিমা বুঝতে পারে, রোমেল তার জীবনে একটা স্থিরতা এনেছে—যেটা তার বাবা কখনো দিতে পারেনি।
সে এক রাতে চুপচাপ মেসেজ পাঠায় রোমেলকে:
“তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে... কারণ তুমি শুধু আমার মা’কে না, আমাকেও বুঝে ফেলো।”
রোমেল উত্তর দেয়:
“তোমরা দুইজনই আমার জীবনের অদ্ভুত আয়না। আমি শুধু সত্যটা স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম।”
ঢাকার বাতাসে আজ একধরনের ভার। মেঘলা আকাশ, দমবন্ধ করা ক্লান্তি। অথচ মাহিমার ভিতরে চলছে আরেক ধরণের বৃষ্টি—যেখানে ফোঁটা নয়, বরং পুরোনো বিশ্বাস, অহংকার, এবং নিজের পরিচয়ের প্রশ্নগুলো পড়ছে শব্দ করে।
মিথিলা আর রোমেল এখন আর কিছু লুকায় না। তবুও, তাদের ভালোবাসার গভীরতা যেন যত প্রকাশ্যে এসেছে, মাহিমার মনে ততই জেগে উঠেছে অন্যরকম একটা অনুভব—এটা ঈর্ষা নয়, বিরক্তিও নয়; বরং একধরনের বিস্ময়। কীভাবে একজন নারী, মা হয়েও একজন পুরুষের বাহুলগ্নে আবার নতুন করে বাঁচতে পারে?
মাহিমা রোমেলের দিকে আজকাল আর অবিচার বা দোষের চোখে তাকায় না। বরং কখনো কখনো তার পাশে বসে থাকলে অদ্ভুত এক নির্ভরতা অনুভব করে। যেন কোনো পুরোনো যন্ত্রণার ওপর আলতো করে হাত রেখে কেউ বলছে, "ভয় পেও না।"
এক বিকেলে রোমেল ও মিথিলা তাকে নিয়ে চায়ের টেবিলে বসে।
“মাহিমা,” মিথিলা বলে, “চলো একদিন তোমার সঙ্গে জিসানের দেখা করিয়ে দিই।”
মাহিমা চমকে ওঠে না, কেবল প্রশ্ন জেগে ওঠে তার দৃষ্টিতে।
“কেন?” সে শুধায়।
রোমেল হালকা হেসে বলে—
“কারণ তোমার চোখে আজকাল এমন কিছু খুঁজে পাই, যা আগে দেখিনি। তুমি নিজের ভেতরে কিছু খুঁজছো—আমার মনে হয়, জিসানও সেটা করছে।”
পরিচয়ের দিনটা হয় এক সাদামাটা বিকেলে। গুলশানের এক কাফেতে।
জিসান—উচ্চতায় লম্বা, চুল একটু এলোমেলো, কিন্তু চোখে সেই একই রোমেল-সদৃশ গভীরতা। তার হাসিতে লাজুক এক কৌতুক আছে, আর কথায় —একটা পরিণত নীরবতা।
তারা কথা বলে বই নিয়ে, মিউজিক নিয়ে, এমনকি পৃথিবীর অনর্থকতা নিয়েও। প্রথমবারের মতো মাহিমা অনুভব করে, তার বুকের ভিতর যে অসমাপ্ত একটা কোলাহল ছিল, তা কেউ বুঝতে পারছে।
রাতে, ফিরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাহিমা নিজেকে দেখে।
সে হেসে ফেলে। মুখে অদ্ভুত এক উষ্ণতা।
তার মনে হয়, সে আর আগের মাহিমা নেই।
সে কেবল মিথিলার মেয়ে নয়, রোমেলের সেই ভাঙনের সাক্ষী নয়, বা জিসানের নতুন পরিচিতার ভূমিকাতেও নয়—
সে এক ঘূর্ণিপাকের মধ্যে পড়া নারী, যে ভেতর থেকে নিজেকে ভাঙছে, গড়ছে, আর নতুন করে আবিষ্কার করছে।
একসময় তার মনে পড়ে যায় রোমেলের কথা
“তোমার মা শুধু তোমার জন্য মা ছিল না। তিনি একজন নারীও ছিলেন…”
এখন মাহিমা বুঝতে পারছে, নারী হওয়া মানে কেবল প্রেমে পড়া নয়—বরং নিজের ভিতরের সকল সত্তাকে একসাথে আলিঙ্গন করতে পারা।
জিসানের সঙ্গে পরিচয়ের কিছুদিন পর, এক বিকেলে তারা বসে ছিল ধানমণ্ডির লেকপাড়ে।
হালকা বাতাস, দূরে একটা গিটার বাজছিল।
মাহিমা হঠাৎ জিসানকে জিজ্ঞেস করে—
“তুমি কি জানো, তোমার বাবা আমার মায়ের প্রেমিক?”
জিসান এক মুহূর্ত থেমে যায়। তারপর হালকা হাসে, কিন্তু সেই হাসিতে কাঁপন ছিল।
“জানি,” সে বলে, “আমার মা নেই। আর বাবা অনেক বছর ধরে একা। আমি জানতাম, সে কাউকে ভালোবাসে। কে, জানতাম না। এখন জানি।”
মাহিমা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে
“তাহলে… আমাদের এই সম্পর্কটার নাম কী হবে?”
জিসান বলে না কিছু। তার চোখে কেবল একধরনের স্বস্তি—অথবা নিরাশা, বোঝা যায় না।
তারপর একদিন—বৃষ্টিভেজা এক সন্ধ্যায়, মাহিমা হঠাৎ তার হাত ধরল। এটা কোনো নাটকীয় প্রেম ছিল না, বরং এক ধরণের আত্মরক্ষা। যেন তার ভিতরে কিছু ভেঙে যাচ্ছে, আর সে কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে।
সেদিন জিসান তার হাত ছাড়ায়নি।
মিথিলা প্রথম টের পায় কিছু একটা বদলেছে।
মাহিমার চোখে একধরনের অস্থির প্রশান্তি, আর জিসান হঠাৎ করেই ঘন ঘন তাদের বাসায় আসছে।
রোমেল যখন জানতে চায়, মিথিলা কিছু বলে না। শুধু চুপ করে থাকে।
তিনজনের সম্পর্ক তখন কাঁটার মতো জড়িয়ে যাচ্ছে—মিথিলা জানে, জিসান যদি মাহিমাকে ভালোবেসে ফেলে, তাহলে সেই সম্পর্কের ভিতরে তারা সবাই তীব্র অস্বস্তি নিয়ে বাঁচবে।
রোমেল ভাবে, কী নিষ্ঠুর এক ভাগ্য—যে পুরুষ নিজের প্রেমকে পূর্ণ করতে চেয়েছিল, এখন তাকেই তার ছেলের সঙ্গে সেই নারীর মেয়ের সম্পর্ক সহ্য করতে হবে।
কিন্তু মাহিমা?
সে দিনকে দিন বদলাচ্ছে।
তার ভিতরে যৌবনের যে ঘূর্ণি জেগেছিল, তা এখন দেহের অনুরণনে প্রকাশ পায়।
সে আয়নার সামনে সম্পুর্ন ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরকে দেখে এক নতুন চোখে। নিজেকে চায়, অনুভব করতে চায়। ইসস! জিসান যদি এভাবে আমাকে ন্যাংটো দেখতো!
জিসান তাকে ছুঁলে সে কাঁপে। কিন্তু সে সেই কাঁপন থেকে পালায় না।
একদিন রাতে, ডাইনিং টেবিলে চারজন—মিথিলা, রোমেল, জিসান ও মাহিমা।
হাওয়া থেমে গেছে, ছুরি-কাঁটা ঠোকাঠুকির শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই।
মাহিমা হঠাৎ বলে ওঠে,
“আমরা কি আসলেই পরিবার?”
জিসান তাকায় তার দিকে।
মিথিলার কাঁধ শক্ত হয়ে ওঠে।
রোমেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“পরিবার? নাকি জটলা?”—মাহিমা ফিসফিস করে।
মিথিলা বলে,
“এইসব সম্পর্ক, মাহিমা, নাম দিয়ে বোঝা যায় না। কেবল অনুভব দিয়ে টিকে থাকে।”
“তাহলে," মাহিমা বলে, “আমি যদি জিসানকে ভালোবাসি, সেটা কি অন্যায় হবে?”
রোমেল চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।
তার ছেলে, তার প্রেমিকার মেয়ে।
একটা নতুন প্রজন্ম সেই পুরোনো শেকলের মধ্যে আটকে যাচ্ছে—যেখানে ভালোবাসা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ, নিষিদ্ধ।
কিন্তু মাহিমা এখন আর থামতে চায় না।
তার মনে হয়, সে যদি না ভালোবাসে, তবে মিথিলার সেই সংগ্রাম—জীবনের ভালোবাসার জন্য লড়াই—সেটাও অর্থহীন হয়ে যাবে।
রাতে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাহিমা নিজেকে দেখে।
তার চোখে ভেসে ওঠে আম্মু ও রোমেলের সেই বুনো উদ্দাম যৌনতার দৃশ্য, মনে পড়ে যায় আম্মুর পাছায় রোমেলের চটাশ চটাশ থাপ্পড়ের কথা। মাহিমা মুচকি হেসে নিজের পাছায় হাত বুলিয়ে বললো,, "তুমি আরেকটু অপেক্ষা করো এমন এমন চড় খাবার জন্যে। আবার ভেসে ওঠে জিসানের চোখে তার প্রতিচ্ছবি। জিসানের কথা ভাবতেই শরীরের সমস্ত লোমকুপ খাড়া হয়ে গেল উত্তেজনায়।
সে বুঝে—সে কারো ছায়া নয়।
সে নিজেই এক রোদচূর্ণ মেয়ের গল্প, যার শরীরে জেগে উঠেছে দাবী, অধিকার, স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা।
সে ভাঙবে, গড়বে, পোড়াবে… কিন্তু নিজেকে খুঁজে নেবে।
এই ঘূর্ণিপাক থেকে মুক্তি নেই—কিন্তু হয়তো মুক্তির ঠিক আগের নামই হচ্ছে ভালোবাসা।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)