
পর্ব-০৪(১)
ছোটবেলা থেকেই খেলার সাথী একা। ভীষন চঞ্চল একটা মেয়ে, এক সেকেন্ড কোথাও স্থির হয়ে দাড়াতে পারতো না সারাক্ষন তিরিং বিড়িং করতেই থাকত। বয়সে আমার বছর দুয়েকের ছোট হলেও ও কখনও বুঝতে দেয়নি সেটা। সমানতালে ক্রিকেট, ফুটবল, গোল্লাছুট, বৌ-চি খেলেছি আর একটু পরে পরেই মারামারি করেছি আমরা। কাউকে মেরে দৌড় দিয়ে ঘরে ঢুকে যাওয়া ছিল বিশাল বিজয় আমদের জন্য আর মার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করলেও বিশেষ পাত্তা দিত না দু-বাড়ির কেউই। মামাদের বাড়িতে যাওয়া হত বছরে দু-একবার আর গেলেই হৈ-হুল্লোর করে খেলাধূলা আর মারামারি কান্নাকাটি করে কয়েকদিন পরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসাই ছিল রুটিন।
সেবার আমি গেলাম আমার এসএসসি পরিক্ষার পরে একা তখন এইটে পড়ে। প্রায় একমাস ছিলাম তখন। আগেকার মত খেলাধুলা না করলেও ছোট মামার ঘরের পিছনের নাড়িকেল গাছের সাথে বাঁধা মাচায় বসে গল্প করা হত তখন। এমনি একদিনে একা আবিষ্কার করলো আমি সিগারেট খাই। গায়ের গন্ধে টের পেয়েছিলো ও। ব্যাস মাচালে বসে চেপে ধরলো আমাকে। কেন খাই, কবে থেকে খাই ইত্যাদি বলতে হবে ওকে না বললে বড় মামাকে বলে দেয়ার হুমকি দিলো আমাকে। বিরক্ত হলেও বললাম কবে থেকে খাই আর কেন খাই তা তো আমি নিজেই জানি না। সবশুনে মুখ বন্ধ রাখার ঘুষ হিসেবে বাজারের সিঙ্গারা আর পিঁয়াজু খেতে চাইলো। ইচ্ছা না থাকলেও এনে দিতে বাধ্য হলাম। আর তখন থেকেই একার ডিউটি পরলো ম্যাচ যোগার করে দেয়ার। ওর সামনে যখন সিগারেটটা ধরিয়ে মুখের ভেতরে ধোঁয়া নিয়ে আবার বাহিরে ছাড়তাম অবাক হয়ে দেখত একা আর বলতো কিসব ছাইপাশ খাস। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিন। সত্যি কথা বলতে কি সে সময়ে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে প্রচুর আগ্রহ থাকলেও যৌনতা নিয়ে জ্ঞান ছিলো অস্পষ্ট। দেহের বিশেষ অঙ্গ বিশেষভাবে নাড়ালে ভীষন সুখ হয় জানতাম আবার ওই সময়ে নারীদেহের স্পর্শও পেতে চাইতাম কিন্তু কিভাবে কি করা হয় তার বিন্দুমাত্রও ধারনা ছিলো না।
হঠাৎ একদিন রাতে মেঝ মামা সিগারেট খাই বলে বকাবকি করতে লাগলো। মেঝ মামি বাঁচালো আমাকে। রাতে শুয়ে ভাবতে লাগলাম মেঝ মামাকে সিগারেট খাওয়ার কথা কে বলল, একা ছাড়া কারও কথা মনে হলোনা আমার। প্রচন্ড রাগ হলো একার উপরে ভাবলাম ঘুষ খেয়েও বলে দিলো, কালকে ধরবো ওকে। পরের দিন একা কলেজ থেকে ফিরে পুকুরে স্নান করতে গেলে গামছা কাঁধে নিয়ে পুকুর ঘাটে গেলাম আমি। আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-কিরে কি খবর? রাগে চোয়াল শক্ত করে পুকুরে নেমে গেলাম আমি। কথা বলছিনা দেখে আবার জিজ্ঞেস করলো-কথা বলছিসনা যে?
- তুই মেঝ মামাকে বলে দিলি?
একা অবাক হয়ে বলল- কি বলে দিলাম? ওর অবাক হবার ভান করা দেখে রাগে হাড় জ্বলে গেলো আমার বললাম- তুই মেঝ মামাকে সিগারেট খাবার কথা বলিসনি? আকাশ থেকে পরার মত করে বলল-কই না তো, তার সাথে তো দেখাই হয়নি আমার। মুখের উপর মিথ্যে কথা বলা দেখে ঝাঁঝালো কন্ঠে কিছু কথা বলতেই ঝগড়া লেগে গেলো দুজনের। ঝগড়ার এক পর্যায়ে একা হঠাৎ করে জলে ডুব দিয়ে পায়ের নিচ থেকে একদলা মাটি নিয়ে ছুড়ে মারলো আমার মুখে। রাগে আমিও একদলা মাটি নিয়ে সজোরে ছুড়ে মারলাম একার দিকে। একা চিৎকার দিলে তাকিয়ে দেখি চোখের উপর দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে, আমার ছোঁড়া মাটির দলার মধ্যে যে ইটের কণা ছিলো বুঝতে পারিনি আমি। চোখ নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ভয় ওকে ফেলে রেখে দৌড়ে বাড়ীতে চলে এলাম আমি। ভয়ে গা কাপছিলো একেতো সিগারেট খাওয়া তার উপর সেটা বলে দেয়ার জন্য একার চোখ নষ্ট করা আজকে বাড়িতে তুলকালাম লেগে যাবে। ভাবতে ভাবতে জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে গেলাম পালানোর জন্য। ছোট মামি খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করলেও উত্তর দিলাম না। শুধু ভাবতে লাগলাম কখন শুরু হবে কিছুক্ষন কেটে যাবার পরও কিছু হচ্ছে না দেখে দুরু দুরু বুকে বাইরে বেড়িয়ে একাদের উঠান বরাবর উঁকি দিলাম, না কেউ নেই। মরে গেলো নাকি? ভাবতে ভাবতে আবার পুকুর পাড়ে গেলাম না কেউতো নেই, একাদের বাড়িতে যাবার সাহস হলো না পুকুর পাড়েই হাটতে লাগলাম। ছোট মামি এসে খাওয়ার জন্য দাক দিতেই ভেজা বেড়ালের মত গিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। সন্ধ্যার আগে ঘুম থেকে উঠে শুরু হলো নতুন টেনশন রাতে মনে হয় বড় মামাকে বলে দেবে একা নাহ চলে গেলেই ভালো হত। রাতে তেমন কিছুই হলো না দেখে নিশ্চিন্তে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। তার পরের কয়েকদিন একার সাথে দেখা হলো না আমার আমিও যেচে গিয়ে ডাকলাম না। যেদিন চলে আসবো সেদিন রেডি হয়ে মামা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একার ঘরের দিকে তাকাতেই দেখলাম জানালায় দাড়িয়ে একা। বাম চোখে উপরে ভ্রু বরাবর একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো, ভাবলাম খুব রেগে আছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে ওর দৃষ্টিতে কোনো রাগ ছিলোনা ছিলো ভীষন অভিমান।
থমকে গেলাম আমি পা দুটো ভারি মনে হলো, জীবনে প্রথমবারের মতো বুকের বাম পাশটায় মোচড় দিয়ে উঠলো। একার সাথে একটু কথা বলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করলাম আমি। এমন কখনও অনুভব করিনি আমি এ এক নতুন অনুভূতি। আপনজনকে দূরে রেখে চলে যাওয়ার অনুভূতির মতো। মামার ডাকে মাথা নিচু করে বুকের ব্যাথাটা সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম আমি।