14-07-2025, 09:38 PM
পর্ব- ৪
ভোরের আলো এখনো পুরোপুরি জানালায় পড়ে না, কিন্তু ঘরের ভেতর যে রকম শান্তি—তা যেন সময়কেও ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।
মিথিলা ধীরে উঠে বসে।
রোমেল তখনও ঘুমিয়ে। তার নিঃশ্বাসে একটা ভারী প্রশান্তি, যেন বহু বছরের ক্লান্তি এখন একটু আশ্রয় পেয়ে প্রশমিত হয়েছে।
জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা জমে আছে আগের রাত থেকেই।
মিথিলা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকায়। শহরতলির ছাপ ধরা ছাদগুলো এখনো ভেজা, আর দূরে কোনো এক গাছে বসে কাক ডাকছে—একঘেয়ে, অথচ পরিচিত।
তার চোখ চলে যায় তার হাতের চুড়ির দিকে—যা সে গতকাল পরেছিল।
সে হঠাৎ ভাবে, এই চুড়ির শব্দ কবে থেকে এত নিরব হয়ে গেছে?
কবে থেকে সে নিজেকেই আর শোনে না?
রোমেলের কণ্ঠ পেছন থেকে আসে, ঘুম জড়ানো।
“তোমার ঘুম ভেঙে গেল?”
মিথিলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তার ঠোঁটে একটা ক্লান্ত অথচ শান্ত হাসি।
“ঘুম ভাঙে না, রোমেল। আমি শুধু আবার জেগে উঠি।”
রোমেল উঠে বসে, কুশন গায়ে পেঁচিয়ে নেয়।
তার চোখে সেই চিরচেনা মনোযোগ। সে কোনো শব্দ বলে না।
তবুও, তার চুপ থাকা যেন বলে— ‘তুমি বলো, আমি শুনছি।’
মিথিলা জানালার পাশে রাখা চেয়ারটায় গিয়ে বসে।
তার দৃষ্টি হারিয়ে যায় দূরের দিগন্তে। এক সময় সে ফিসফিস করে বলে,
“তুমি কি জানো, এই শহরের প্রতিটা কোণে আমার একটা করে ভুল রেখে এসেছি?”
“প্রথম প্রেম, প্রথম বিদ্রোহ, প্রথম আত্মসমর্পণ—সব কিছুই এখানে হয়েছিল।
তারপর, সব চুপ করে গেছে।
আমি সংসার করেছি, ভালো থেকেছি… অন্তত তেমনই দেখিয়েছি।”
রোমেল এগিয়ে আসে, পাশে বসে।
“তুমি ভালো ছিলে না?”
“ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে একসময় সেটা অভ্যেস হয়ে যায়।
আমি মা হয়েছি, দায়িত্ব নিয়েছি… কিন্তু মিথিলা ছিল না কোথাও।
তুমি যদি না ফিরে আসতে, আমি হয়তো ভুলেই যেতাম আমি কে ছিলাম একসময়।”
একটা দীর্ঘ নীরবতা ভর করে।
তাদের মাঝখানে শুধু এক কাপ অর্ধেক ঠান্ডা হয়ে আসা চা।
রোমেল ধীরে তার হাত ধরে।
“তুমি যা হারিয়েছো, আমি তার সাক্ষী নই।
কিন্তু যা আবার পেতে পারো—তার পাশে আমি থাকব।”
মিথিলা মাথা নিচু করে। তার চোখে জল জমে, আবার ফিরে যায়।
সে কাঁদে না।
সে কাঁদে না এই কারণে নয় যে সে শক্তিশালী,
বরং এই মুহূর্তটা যেন এত মূল্যবান যে—তার কান্না দিয়ে নষ্ট করতে চায় না।
হঠাৎ মোবাইলটা বাজে।
মাহিমা।
তার মেয়ে।
মিথিলা তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনে।
রিং থেমে যায়, কিন্তু একটি বার্তা আসে—
“মা, আজ দুপুরে একটু কথা বলতে পারি?”
মিথিলা ফোনটা নামিয়ে রাখে।
তার মুখে কোনো বিশেষ অভিব্যক্তি নেই, তবু ভেতরে একপ্রকার অজানা ঢেউ বয়ে যায়।
রোমেল জিজ্ঞেস করে না কিছুই।
সে শুধু বলে,
“যদি কখনো এই ঘর ছাড়তে হয়, প্রতিবার জানি, তুমি একদিন আবার ফিরে আসবে। কারণ এই জায়গাটা তোমার নিজেকে ফিরে পাওয়ার জায়গা।”
মিথিলা ধীরে মাথা নাড়ে।
তার চোখে তখনও আলো—বৃষ্টির ফোঁটার মতো নরম, অথচ গভীর।
বাইরে বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে।
একটা নতুন সকাল জন্ম নিচ্ছে, পুরোনো কিছু ভুল আর দুঃখের গায়ে জল মেখে।
দুপুরের সূর্যটা আজ অদ্ভুত রকম ধীর।
মেঘলা আকাশ, তবুও রোদ যেন জানে কখন কীভাবে ঢুকতে হয় জানালার ফাঁক দিয়ে।
মিথিলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
চুলটা আজ খোলা রাখেনি।
সামান্য কাজল আর হালকা ঠোঁটে রঙ।
নিজেকে সে দেখে একরকম অচেনা মনে হয়—যেমন কেউ দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধু দেখতে পায়।
ফোনের স্ক্রিনে আবার সেই বার্তাটি—
“মা, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।”
মিথিলা হালকা শ্বাস ফেলে।
তার বুকের ভেতর এখন গুঞ্জন করছে হাজারটা অজানা সম্ভাবনার শব্দ।
ক্যাফেটারিয়া।
একটি নিরিবিলি কোণার টেবিল।
দুজন নারী—একজন মধ্যবয়সী, অন্যজন তরুণী—চুপ করে বসে আছে।
মাহিমা আগে কথা বলে।
“মা, তুমি ভালো আছো?”
একটা সাধারণ প্রশ্ন, তবুও এত অপ্রস্তুত করে মিথিলাকে।
সে একটু হেসে উত্তর দেয়,
“ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তুই?”
মাহিমা চা খেতে খেতে একবার মায়ের চোখে তাকায়।
তার চোখে একরকম ধোঁয়াশা—যেখানে স্পষ্টতা আর অস্বস্তি পাশাপাশি বসে।
“মা, আমি রুমনকে চিনি। আর এখন রোমেলকেও চিনি।
আমি অনেক কিছু দেখেছি, বুঝেছি।
কিন্তু আমি আজ তোমার কাছে কিছু জানতে চাই না।
শুধু একটা কথা বলতে এসেছি।”
মিথিলা থমকে যায়।
সে বুঝতে পারে আজ সে আর ‘মা’ হয়ে কথা বলতে পারবে না।
আজ তার সামনে বসে আছে না-শুধু তার মেয়ে, বরং এক নারী, যার নিজের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি আর প্রশ্ন আছে।
মাহিমা ধীরে ফিসফিস করে,
“তুমি কি কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবে, মা?”
মিথিলা চুপ করে থাকে।
“আমি জানি, তুমি অন্যায় করেছো।
আমি জানি, তুমি এমন কিছু বেছে নিয়েছো, যা আমাকেও কষ্ট দিয়েছে।
কিন্তু তবুও… তোমার চোখে যখন আমি নিজেকে দেখি, তখন দেখি—তুমি এখনও ভালোবাসতে জানো।
সেটা হয়তো ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে… কিন্তু তাতে ভালোবাসার মান কমে না।”
মিথিলা তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।
তার চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সে সেই জল মুছে ফেলে না।
“আমি জানি না, মাহি, আমি ঠিক করেছি কি ভুল…
আমি শুধু জানি, আমি একসময় হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আর রোমেল আমাকে খুঁজে পেয়েছিল।
তুই যদি পারিস… শুধু এটুকু বুঝে নিস।”
মাহিমা এবার উঠে দাঁড়ায়।
“আমি তোমাকে বিচার করতে আসিনি, মা।
আমি শুধু চাই, তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখো না আর।
আমি এখন বড় হয়েছি। আমি তোমার ছায়া থেকে বেরিয়েছি।
কিন্তু এখনও তোমার ভেতরে যে মিথিলা আছে, তাকে দেখে নিজেকে বুঝতে চাই।”
চলে যাওয়ার আগে মাহিমা থামে, বলে,
“রোমেল… তিনি যদি সত্যিই তোমার আশ্রয় হন, তবে তাঁকে লুকিয়ে রাখা উচিত নয়।
একদিন না একদিন, তোমার নিজের কাছেই সত্যিটা বলতে হবে।
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব।”
মিথিলা চুপ করে বসে থাকে।
চায়ের কাপটা ঠান্ডা হয়ে যায়।
তার চোখের সামনে এখন মাহিমার মুখ—যেখানে না আছে অভিযোগ, না পুরোপুরি ক্ষমা।
শুধু আছে একরকম মৃদু প্রত্যাশা… যা সবচেয়ে বেশি ব্যথা দেয়।
ঘরের বাইরে তখন হালকা বাতাস বইছে।
জুলাইয়ের দুপুর।
তবুও যেন কাঁপুনি লাগে—ভেতরের কোনো অস্থিরতা থেকে।
মিথিলা নিজের বুকের ওপর হাত রাখে।
সে জানে—কিছু সম্পর্ক সমাজের কাছে ‘ভুল’,
কিন্তু কিছু সম্পর্ক হৃদয়ের কাছে ‘নির্ভুল’।
আর সেই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে সে--
একজন মা, একজন প্রেমিকা, একজন নারী…
যার প্রতিটি পরিচয়ের গায়ে সময়ের দাগ লেগে আছে।
ভোরের আলো এখনো পুরোপুরি জানালায় পড়ে না, কিন্তু ঘরের ভেতর যে রকম শান্তি—তা যেন সময়কেও ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।
মিথিলা ধীরে উঠে বসে।
রোমেল তখনও ঘুমিয়ে। তার নিঃশ্বাসে একটা ভারী প্রশান্তি, যেন বহু বছরের ক্লান্তি এখন একটু আশ্রয় পেয়ে প্রশমিত হয়েছে।
জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা জমে আছে আগের রাত থেকেই।
মিথিলা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকায়। শহরতলির ছাপ ধরা ছাদগুলো এখনো ভেজা, আর দূরে কোনো এক গাছে বসে কাক ডাকছে—একঘেয়ে, অথচ পরিচিত।
তার চোখ চলে যায় তার হাতের চুড়ির দিকে—যা সে গতকাল পরেছিল।
সে হঠাৎ ভাবে, এই চুড়ির শব্দ কবে থেকে এত নিরব হয়ে গেছে?
কবে থেকে সে নিজেকেই আর শোনে না?
রোমেলের কণ্ঠ পেছন থেকে আসে, ঘুম জড়ানো।
“তোমার ঘুম ভেঙে গেল?”
মিথিলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তার ঠোঁটে একটা ক্লান্ত অথচ শান্ত হাসি।
“ঘুম ভাঙে না, রোমেল। আমি শুধু আবার জেগে উঠি।”
রোমেল উঠে বসে, কুশন গায়ে পেঁচিয়ে নেয়।
তার চোখে সেই চিরচেনা মনোযোগ। সে কোনো শব্দ বলে না।
তবুও, তার চুপ থাকা যেন বলে— ‘তুমি বলো, আমি শুনছি।’
মিথিলা জানালার পাশে রাখা চেয়ারটায় গিয়ে বসে।
তার দৃষ্টি হারিয়ে যায় দূরের দিগন্তে। এক সময় সে ফিসফিস করে বলে,
“তুমি কি জানো, এই শহরের প্রতিটা কোণে আমার একটা করে ভুল রেখে এসেছি?”
“প্রথম প্রেম, প্রথম বিদ্রোহ, প্রথম আত্মসমর্পণ—সব কিছুই এখানে হয়েছিল।
তারপর, সব চুপ করে গেছে।
আমি সংসার করেছি, ভালো থেকেছি… অন্তত তেমনই দেখিয়েছি।”
রোমেল এগিয়ে আসে, পাশে বসে।
“তুমি ভালো ছিলে না?”
“ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে একসময় সেটা অভ্যেস হয়ে যায়।
আমি মা হয়েছি, দায়িত্ব নিয়েছি… কিন্তু মিথিলা ছিল না কোথাও।
তুমি যদি না ফিরে আসতে, আমি হয়তো ভুলেই যেতাম আমি কে ছিলাম একসময়।”
একটা দীর্ঘ নীরবতা ভর করে।
তাদের মাঝখানে শুধু এক কাপ অর্ধেক ঠান্ডা হয়ে আসা চা।
রোমেল ধীরে তার হাত ধরে।
“তুমি যা হারিয়েছো, আমি তার সাক্ষী নই।
কিন্তু যা আবার পেতে পারো—তার পাশে আমি থাকব।”
মিথিলা মাথা নিচু করে। তার চোখে জল জমে, আবার ফিরে যায়।
সে কাঁদে না।
সে কাঁদে না এই কারণে নয় যে সে শক্তিশালী,
বরং এই মুহূর্তটা যেন এত মূল্যবান যে—তার কান্না দিয়ে নষ্ট করতে চায় না।
হঠাৎ মোবাইলটা বাজে।
মাহিমা।
তার মেয়ে।
মিথিলা তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনে।
রিং থেমে যায়, কিন্তু একটি বার্তা আসে—
“মা, আজ দুপুরে একটু কথা বলতে পারি?”
মিথিলা ফোনটা নামিয়ে রাখে।
তার মুখে কোনো বিশেষ অভিব্যক্তি নেই, তবু ভেতরে একপ্রকার অজানা ঢেউ বয়ে যায়।
রোমেল জিজ্ঞেস করে না কিছুই।
সে শুধু বলে,
“যদি কখনো এই ঘর ছাড়তে হয়, প্রতিবার জানি, তুমি একদিন আবার ফিরে আসবে। কারণ এই জায়গাটা তোমার নিজেকে ফিরে পাওয়ার জায়গা।”
মিথিলা ধীরে মাথা নাড়ে।
তার চোখে তখনও আলো—বৃষ্টির ফোঁটার মতো নরম, অথচ গভীর।
বাইরে বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে।
একটা নতুন সকাল জন্ম নিচ্ছে, পুরোনো কিছু ভুল আর দুঃখের গায়ে জল মেখে।
দুপুরের সূর্যটা আজ অদ্ভুত রকম ধীর।
মেঘলা আকাশ, তবুও রোদ যেন জানে কখন কীভাবে ঢুকতে হয় জানালার ফাঁক দিয়ে।
মিথিলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
চুলটা আজ খোলা রাখেনি।
সামান্য কাজল আর হালকা ঠোঁটে রঙ।
নিজেকে সে দেখে একরকম অচেনা মনে হয়—যেমন কেউ দীর্ঘদিন পর পুরোনো বন্ধু দেখতে পায়।
ফোনের স্ক্রিনে আবার সেই বার্তাটি—
“মা, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।”
মিথিলা হালকা শ্বাস ফেলে।
তার বুকের ভেতর এখন গুঞ্জন করছে হাজারটা অজানা সম্ভাবনার শব্দ।
ক্যাফেটারিয়া।
একটি নিরিবিলি কোণার টেবিল।
দুজন নারী—একজন মধ্যবয়সী, অন্যজন তরুণী—চুপ করে বসে আছে।
মাহিমা আগে কথা বলে।
“মা, তুমি ভালো আছো?”
একটা সাধারণ প্রশ্ন, তবুও এত অপ্রস্তুত করে মিথিলাকে।
সে একটু হেসে উত্তর দেয়,
“ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তুই?”
মাহিমা চা খেতে খেতে একবার মায়ের চোখে তাকায়।
তার চোখে একরকম ধোঁয়াশা—যেখানে স্পষ্টতা আর অস্বস্তি পাশাপাশি বসে।
“মা, আমি রুমনকে চিনি। আর এখন রোমেলকেও চিনি।
আমি অনেক কিছু দেখেছি, বুঝেছি।
কিন্তু আমি আজ তোমার কাছে কিছু জানতে চাই না।
শুধু একটা কথা বলতে এসেছি।”
মিথিলা থমকে যায়।
সে বুঝতে পারে আজ সে আর ‘মা’ হয়ে কথা বলতে পারবে না।
আজ তার সামনে বসে আছে না-শুধু তার মেয়ে, বরং এক নারী, যার নিজের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি আর প্রশ্ন আছে।
মাহিমা ধীরে ফিসফিস করে,
“তুমি কি কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবে, মা?”
মিথিলা চুপ করে থাকে।
“আমি জানি, তুমি অন্যায় করেছো।
আমি জানি, তুমি এমন কিছু বেছে নিয়েছো, যা আমাকেও কষ্ট দিয়েছে।
কিন্তু তবুও… তোমার চোখে যখন আমি নিজেকে দেখি, তখন দেখি—তুমি এখনও ভালোবাসতে জানো।
সেটা হয়তো ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে… কিন্তু তাতে ভালোবাসার মান কমে না।”
মিথিলা তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।
তার চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সে সেই জল মুছে ফেলে না।
“আমি জানি না, মাহি, আমি ঠিক করেছি কি ভুল…
আমি শুধু জানি, আমি একসময় হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আর রোমেল আমাকে খুঁজে পেয়েছিল।
তুই যদি পারিস… শুধু এটুকু বুঝে নিস।”
মাহিমা এবার উঠে দাঁড়ায়।
“আমি তোমাকে বিচার করতে আসিনি, মা।
আমি শুধু চাই, তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখো না আর।
আমি এখন বড় হয়েছি। আমি তোমার ছায়া থেকে বেরিয়েছি।
কিন্তু এখনও তোমার ভেতরে যে মিথিলা আছে, তাকে দেখে নিজেকে বুঝতে চাই।”
চলে যাওয়ার আগে মাহিমা থামে, বলে,
“রোমেল… তিনি যদি সত্যিই তোমার আশ্রয় হন, তবে তাঁকে লুকিয়ে রাখা উচিত নয়।
একদিন না একদিন, তোমার নিজের কাছেই সত্যিটা বলতে হবে।
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব।”
মিথিলা চুপ করে বসে থাকে।
চায়ের কাপটা ঠান্ডা হয়ে যায়।
তার চোখের সামনে এখন মাহিমার মুখ—যেখানে না আছে অভিযোগ, না পুরোপুরি ক্ষমা।
শুধু আছে একরকম মৃদু প্রত্যাশা… যা সবচেয়ে বেশি ব্যথা দেয়।
ঘরের বাইরে তখন হালকা বাতাস বইছে।
জুলাইয়ের দুপুর।
তবুও যেন কাঁপুনি লাগে—ভেতরের কোনো অস্থিরতা থেকে।
মিথিলা নিজের বুকের ওপর হাত রাখে।
সে জানে—কিছু সম্পর্ক সমাজের কাছে ‘ভুল’,
কিন্তু কিছু সম্পর্ক হৃদয়ের কাছে ‘নির্ভুল’।
আর সেই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে সে--
একজন মা, একজন প্রেমিকা, একজন নারী…
যার প্রতিটি পরিচয়ের গায়ে সময়ের দাগ লেগে আছে।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)