Thread Rating:
  • 13 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR কালো কুয়াশার ছায়া
রানা ডাকবাংলোর ডাইনিং হলের মাঝখানে বসে, তার চোখে দশ বছরের অদ্ভুত যাত্রার প্রতিফলন, যেন সে এখনও সেই অজানা জগতের ছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। 
সুজাতা ও অমিত হাত ধরে তার সামনে, তাদের চোখে রানার গল্পের প্রতি আকাঙ্ক্ষা আর উদ্বেগ। মালতী ও কামিনী পাশে, তাদের মুখে নিঃশব্দ কৌতূহল। বাইরে জঙ্গলের রাত নিশ্চুপ, দূরে একটা পাখির ডাক ভেসে আসছে, যেন রানার কথার সাথে মিশে যাচ্ছে। রানা গভীর শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে।

“আমি যখন পোর্টালের ওপার থেকে বেরিয়ে আসি, তখন দেখি পোর্টালের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। চারপাশে অন্ধকার, ঠান্ডা পাথরের দেয়াল। আমি একটা গুহার মধ্যে দাঁড়িয়ে। মাথার ওপর থেকে পানির ফোঁটা টপটপ করে পড়ছে, দেয়ালে আর্দ্রতার কারণে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ। দূরে কোথাও একটা অদ্ভুত গুঞ্জন, যেন গুহাটা নিজেই শ্বাস নিচ্ছে। আলো বলতে কোণে কয়েকটা মোমবাতি, তাদের ম্লান শিখা দেয়ালে অদ্ভুত ছায়া ফেলছে। সামনে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে, তাদের হাতে একটা পুরনো বই, চামড়ার বাঁধাই, পাতাগুলো হলদেটে, কোণগুলো কুঁচকে গেছে। তারা অদ্ভুত ভাষায় মন্ত্র পড়ছিল, তাদের কণ্ঠে একটা ছন্দ, যেন কোনো প্রাচীন গান। আমাকে দেখে তারা থমকে যায়। মেয়েটা, জেনি, তার লম্বা কালো চুল কাঁধে ছড়ানো, চোখে বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কে?’ ছেলেটা, হ্যারি, তার চোখে সন্দেহ, বলে, ‘তুমি এখানে কীভাবে এলে?’

আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘আমি রানা। তোমরা কে? আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ? আমার বাবা-মা কোথায়?’ আমার কণ্ঠে উদ্বেগ, কারণ আমি তখনও জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের কথা মনে করছি। জেনি আর হ্যারি একে অপরের দিকে তাকায়, তাদের মুখে বিভ্রান্তি। হ্যারি বলে, ‘আমরা তো জানি না তুমি কে, বা তোমার বাবা-মা কোথায়। আমরা শুধু একটা প্রাচীন বই থেকে মন্ত্র পড়ছিলাম।’ জেনি বইটা তুলে দেখায়,  ‘এটা হাজার বছরের পুরনো। আমরা এই ভাষা শিখতে বছরের পর বছর লেগেছে। আমরা জানতাম না এটা কাউকে এখানে টেনে আনবে।’

আমি গুহাটা ভালো করে দেখি। দেয়ালে অদ্ভুত নকশা খোদাই করা—ঘূর্ণায়মান চক্র, অজানা প্রাণীর মূর্তি, আর কিছু অক্ষর যা যেন নিজে থেকে নড়ছে। মাটিতে ধুলো জমে আছে, কোথাও কোথাও ছোট ছোট হাড়ের টুকরো ছড়িয়ে। মোমবাতির আলোয় গুহার দেয়ালে ছায়া নাচছে, যেন কোনো প্রাচীন আত্মা জেগে উঠেছে। আমি উত্তেজিত হয়ে বলি, ‘তাহলে আবার মন্ত্র পড়ো! আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কর!’ জেনি আর হ্যারি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, তাদের চোখে একটা অস্বস্তি। হ্যারি বলে, ‘ঠিক আছে, চেষ্টা করছি।’ তারা বইটা খুলে, আবার মন্ত্র পড়া শুরু করে। তাদের কণ্ঠ গুহায় প্রতিধ্বনিত হয়, বাতাসে একটা ঠান্ডা শিহরণ ছড়ায়, কিন্তু কিছুই হয় না। পোর্টালের কোনো চিহ্ন নেই। আমি রেগে গিয়ে বলি, ‘কী ব্যাপার? কেন কিছু হচ্ছে না?’

জেনি হতাশ কণ্ঠে বলে, ‘আমরা ঠিক সেই মন্ত্রই পড়ছি যেটা আগে পড়েছিলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।’ আমি জিজ্ঞেস করি, ‘এটা কিসের মন্ত্র?’ হ্যারি বইটা হাতে নিয়ে বলে, ‘প্রাচীন আমলের রূপকথার মন্ত্র। এটা কোনো কিংবদন্তির অংশ, যা আমরা পড়ে দেখছিলাম।’ আমি হতাশ হয়ে বলি, ‘তাহলে আমাকে বইটা দাও, আমি চেষ্টা করি।’ জেনি হেসে বলে, ‘এই বইয়ের কিছুই তুমি বুঝবে না। আমরা এই ভাষা শিখতে অনেক কষ্ট করেছি।’ কিন্তু আমি জেদ করে বলি, ‘তবু দাও।’

বইটা হাতে নিয়ে দেখি, পাতাগুলোতে অদ্ভুত, অজানা ভাষায় লেখা। অক্ষরগুলো যেন নিজেরাই নড়ছে, আঁকাবাঁকা নকশা আর চিহ্নে ভরা। আমি পাতা উল্টাতে থাকি, হঠাৎ একটা ছবি চোখে পড়ে—কালো কুয়াশার একটা অবয়ব, ঠিক যেটা আমি জমিদার বাড়িতে দেখেছি। আমার বুক ধক করে ওঠে, হৃৎপিণ্ড দ্রুত পড়তে থাকে। আমি বইটা তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বলি, ‘ঠিক আছে, তোমরা চেষ্টা করো।’ আমার মন খারাপ দেখে জেনি নরম কণ্ঠে বলে, ‘চিন্তা করো না, রানা। আমরা তো আছি। আমরা তোমার বাবা-মাকে খুঁজে তাদের কাছে পৌঁছে দেব।’ আমার চোখ দিয়ে পানি গড়ায়, আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি।

এমন সময় বাইরে থেকে ডাক ভেসে আসে, ‘জেনি! হ্যারি!’ জেনি সাড়া দেয়, ‘আসছি!’ তারা উঠে দাঁড়ায়, আমাকে বলে, ‘চলো আমাদের সাথে।’ আমি তাদের পিছু পিছু গুহা থেকে বেরিয়ে আসি। বাইরে এক অদ্ভুত দৃশ্য—আকাশ রক্তলাল, যেন আগুন জ্বলছে। চারপাশে অচেনা গাছপালা, তাদের পাতা ধাতব নীল, বাতাসে অদ্ভুত গন্ধ। আমাদের বয়সী আরও অনেক ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে, তাদের চোখে উত্তেজনা। হঠাৎ একদল জলদস্যু আক্রমণ করে। তাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা, হাতে ধাতব অস্ত্র, যা নীল আলোয় ঝকঝক করছে। তারা আমাদের সবাইকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে শুরু করে। আমি লক্ষ্য করি, জেনি আর হ্যারি তাদের বইটা হাতে নিয়ে দ্রুত কিছু মন্ত্র পড়ছে। হঠাৎ তাদের শরীর ঝাপসা হয়ে যায়, আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়, যেন বাতাসে মিশে গেছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, কিন্তু আমার হাতে দড়ি বাঁধা হয়ে যায়। জলদস্যুরা আমাদের বাকিদের তাদের জাহাজে তুলে নিয়ে যায়।

জলদস্যুরা আমাদের জাহাজের নিচের একটা অন্ধকার কামরায় নিয়ে যায়। কামরাটা ঠান্ডা, ভেজা পাথরের দেয়াল, মাটিতে খড় ছড়ানো। বাতাসে লবণ আর পচা কাঠের গন্ধ। আমরা, যারা ধরা পড়েছি, সবাই হাত-পা বাঁধা, একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভয় আর বিভ্রান্তিতে। জলদস্যুদের ক্যাপ্টেন আমাদের সামনে দাঁড়ায়। তার মুখে কালো পট্টি, দাড়িতে ধুলো জমে আছে, হাতে একটা তলোয়ার, যার ফলায় রুনিক চিহ্ন খোদাই করা। সে নিজেকে পরিচয় দেয়, ‘আমি ক্যাপ্টেন হুক। তোদের এখন থেকে আমার জাহাজে কাজ করতে হবে। যারা ভালো কাজ করবে, তারা বাঁচবে। যারা অবাধ্য হবে, তাদের সমুদ্রে ফেলে দেব।’ তার কণ্ঠে হাসি, কিন্তু সে হাসি ঠান্ডা, যেন আমাদের ভাগ্য তার হাতে।

জাহাজটা ছিল অদ্ভুত,  এটা কাঠের তৈরি, কিন্তু কাঠগুলো যেন জীবন্ত—দেয়ালে হাত দিলে মনে হয় কিছু নড়ছে। ডেকে দাঁড়ালে বাতাসে অদ্ভুত গানের সুর ভেসে আসে, যেন সমুদ্র নিজেই গাইছে। পালগুলো ছেঁড়া, কিন্তু বাতাস ছাড়াই জাহাজটা এগিয়ে চলছে, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি এটাকে টানছে। জাহাজের মাঝখানে একটা বড় হুইল, যেটা ক্যাপ্টেন নিজে ঘোরায়। তার পাশে একটা পুরনো ম্যাপ, চামড়ার উপর কালিতে আঁকা, যেখানে কিছু দ্বীপের নাম লেখা—‘মৃত্যুর দ্বীপ’, ‘ছায়ার উপকূল’, ‘হারানো আত্মার খাঁড়ি’। আমি বুঝতে পারি, এটা কোনো সাধারণ সমুদ্র নয়।

জলদস্যুরা আমাদের কাজে লাগায়। আমাকে ডেক পরিষ্কার করতে বলা হয়। ডেকে কালো দাগ, যেন রক্ত শুকিয়ে গেছে, আর কিছু জায়গায় অদ্ভুত নকশা খোদাই করা, যা দেখে শরীর শিউরে ওঠে। একজন জলদস্যু, যার নাম ছিল গ্রাক, আমাদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে, ‘কাজ কর! নয়তো তোদের পা দিয়ে শিকল বেঁধে সমুদ্রে ঝুলিয়ে দেব!’ তার হাতে একটা চাবুক, যার প্রতিটি আঘাতে বাতাসে ঝড় ওঠে। আমার হাতে একটা পুরনো মোপ, যেটা দিয়ে ডেক ঘষতে হয়। জাহাজের নড়াচড়ায় আমার মাথা ঘুরছে, কিন্তু আমি থামি না। কাজ করতে করতে আমি লক্ষ্য করি, জলদস্যুরা ক্রমাগত একটা কথা বলছে—‘কালো হীরা’। এটা কোনো রত্ন নয়, বরং একটা অভিশপ্ত বস্তু, যা তারা খুঁজছে। ক্যাপ্টেন হুক ম্যাপের সামনে দাঁড়িয়ে, তার একমাত্র চোখ ম্যাপের উপর স্থির। সে ফিসফিস করে, ‘কালো হীরা আমাদের অমর করবে। এটা পেলে আমরা সমুদ্রের রাজা হব।’ আমি বুঝতে পারি, এই কালো হীরা তাদের লোভের কেন্দ্র, কিন্তু এটা কী, তা কেউ স্পষ্ট করে না।

রাত নামে। জাহাজের উপর আকাশে তারা নেই, শুধু একটা অদ্ভুত লাল আলো, যেন কোনো অশুভ গ্রহ জ্বলছে। আমরা ক্লান্ত হয়ে ডেকে বসে পড়ি। আমি জানি, এই জাহাজ থেকে পালাতে হবে, কিন্তু কীভাবে? আমরা এই অজানা জগতে আটকে আছি। একদিন জাহাজটা একটা বন্দরে এসে থামে। বন্দরটা ছিল অদ্ভুত—চারপাশে ধূসর পাথরের ঘাট, জলের রঙ কালো, বাতাসে পচা মাছ আর লোহার গন্ধ। জলদস্যুরা আমাদের ডেকে কাজ করাচ্ছিল, কিন্তু তাদের মনোযোগ ছিল বন্দরের একটা পুরনো গুদামের দিকে। আমি সুযোগ পেয়ে যাই। একটা দড়ির বান্ডিলের আড়ালে লুকিয়ে আমি ডেক থেকে নেমে পড়ি, পাথরের ঘাট ধরে দৌড় দিই। পিছনে তাকিয়ে দেখি, জলদস্যু স্কার আমাকে দেখে ফেলেছে। তার মুখে দাগ, হাতে একটা বাঁকানো ছুরি, সে চিৎকার করে, ‘ওই ছেলে পালাচ্ছে!’ আমার হৃৎপিণ্ড দ্রুত পড়তে থাকে, আমি দৌড়ে বন্দরের ভিড়ে মিশে যাই।

বন্দরের রাস্তাগুলো সরু, পাথরের দেয়ালে ঘেরা। চারপাশে অদ্ভুত মানুষ—কেউ মুখে মুখোশ পরা, কারো হাতে অজানা ধাতুর তৈরি অস্ত্র। আমি শুধু দৌড়াতে থাকি, মন বলছিল পালাতে হবে, কিন্তু কোথায় যাব, কীভাবে বাবা-মাকে খুঁজব—কিছুই মাথায় আসছিল না। শহরের সরু গলি, উড়ন্ত গাড়ির নিচ দিয়ে, আলো-ঝলমলে রাস্তা পেরিয়ে আমি দৌড়াই। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, আর মানসিক চাপে আমার শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। একসময় সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।

যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি আমি একটা অচেনা বাড়িতে। ঘরটা সাধারণ, কাঠের আসবাব, দেয়ালে কিছু অদ্ভুত ছবি—যেন ভবিষ্যতের শিল্প। আমার পাশে একজন বয়স্ক লোক আর একজন মহিলা বসে আছেন। তাদের সঙ্গে একটি মেয়ে, বয়সে আমার চেয়ে তিন-চার বছরের বড়, তার চোখে কৌতূহল, মুখে নরম হাসি। মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে আদর করে বললেন, ‘বাবা, তুমি কে? আমরা তোমাকে রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি, তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তোমার বাড়ি কোথায়? তোমার সাথে কী হয়েছে?’

তাদের কথা শুনে আমার বুক ভারী হয়ে গেল। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। কী বলব? আমি তো নিজেই জানি না আমি কোথা থেকে এসেছি, কীভাবে এই ভবিষ্যতের শহরে এলাম। আমার বাবা-মার কথা মনে পড়ছিল, কিন্তু আমি শুধু কাঁদতে পারলাম, কারণ আমার জীবন যেন একটা দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হয়েছে।

লিসার পরিবার আমাকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিল। তারা ছিল সাধারণ কৃষক, তবে ধনী। শহর থেকে অনেক দূরে, একটা গ্রামে তাদের বাড়ি। গ্রামটা যেন ভবিষ্যতের একটা ছবি—রাস্তায় রোবট ঝাড়ু দিচ্ছে, বাড়ির জানালায় স্বয়ংক্রিয় পর্দা, ফসলের ক্ষেতে অত্যাধুনিক যন্ত্র কাজ করছে। তাদের বাড়িটা ঝকঝকে—কাচের দেয়াল, স্মার্ট আলো, আর ভেতরে এমন সব গ্যাজেট যা আমি আগে কখনো দেখিনি। লিসার বাবা-মা ছিলেন সহজ-সরল মানুষ। তারা বেশি মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না, তাই আমার কথা কাউকে জানানোর দরকার পড়ল না। তারা আমাকে নিজেদের ছেলের মতো আদর করে রাখলেন। লিসার মা আমাকে আর লিসাকে আদর করে খাবার খাওয়াতেন—গরম রুটি, ফলের সালাদ, আর কখনো কখনো অদ্ভুত কিন্তু সুস্বাদু খাবার, যা এই ভবিষ্যতের গ্রামে তৈরি হত।

লিসার সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সে আমার চেয়ে তিন-চার বছরের বড়, কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলে মনে হত আমরা একই বয়সের। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতাম—সে তার গ্রামের গল্প বলত, আর আমি জলদস্যুদের জাহাজ আর অজানা জগতের কথা বলতাম। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম—কখনো গ্রামের ক্ষেতের মাঝে দৌড়াদৌড়ি, কখনো তাদের বাড়ির ছাদে একটা ভবিষ্যতের খেলা, যেখানে আলোর বল ধরতে হত। আমার মনে হচ্ছিল, হয়তো এই গ্রামে, এই পরিবারের সঙ্গে আমার বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। আমার বাবা-মার কথা মনে পড়ত, কিন্তু এই নতুন জীবনে আমি আস্তে আস্তে তাদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলাম। লিসার হাসি, তার বাবা-মায়ের আদর—এসব যেন আমাকে একটা নতুন পরিবার দিয়েছিল।

কিন্তু একদিন আমি লিসার বাবার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটা যন্ত্রে চোখ পড়ল। সেটা ছিল একটা ডিজিটাল ক্যালেন্ডার, যেখানে তারিখ দেখাচ্ছিল—২৫৭৫। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কী বছর?’ লিসার বাবা হেসে বললেন, ‘বাবা, তুমি শুধু অন্য জায়গায় আসনি, তুমি সময়েরও অনেক দূরে চলে এসেছ। এটা ভবিষ্যৎ, পৃথিবীর হাজার বছর পরের সময়।’ আমার মাথা ঘুরে গেল। আমি বুঝতে পারলাম, আমি শুধু পোর্টাল দিয়ে অন্য জগতে নয়, ভবিষ্যতের এক অজানা পৃথিবীতেও পড়েছি। আমার হৃৎপিণ্ড ভারী হয়ে গেল, কারণ আমার বাবা-মা এখন শুধু দূরে নয়, সময়েরও অনেক দূরে।”

রানা থামে, তার কণ্ঠে ক্লান্তি আর আবেগ মিশে আছে। সুজাতার চোখে অশ্রু, অমিত তার হাত শক্ত করে ধরে। মালতী ও কামিনী নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে, তাদের মুখে রানার গল্পের বিস্ময়। বাইরে জঙ্গলের অন্ধকারে একটা হালকা শব্দ, যেন কেউ পায়ের শব্দ লুকিয়ে চলেছে, কিন্তু ঘরের ভেতর শুধু রানার কথার প্রতিধ্বনি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কালো কুয়াশার ছায়া - by Abirkkz - 14-07-2025, 05:09 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)