10-07-2025, 06:28 PM
এখন আমার দায়িত্ব দিনকেদিন বাড়ছে , আমার নিজের কাজ সাথে শশুড়বাড়ির ব্যবসা , দুদিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি , প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি সমাধান খুঁজে বার করছি , একান্ত না পারলে বাপিকে জিজ্ঞেস করছি লাবনীর সাহায্য নিচ্ছি তুবড়িও যতটা পারছে আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে | বাপির শরীরের দিনদিন অবনতিই হচ্ছে বারবার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে , আমি মন থেকে তৈরী , লাবনীও খানিকটা বুঝছে কি হতে চলেছে কিন্তু তুবড়ি খুবই ভেঙে পড়েছে যদিও বাপির সামনে কিছুই প্রকাশ করিনা আমরা কেউই , একদিন তখন আমি তুবড়িদের বাড়িতেই , বাপি নিজের ঘরে আমাদের একসাথে ডাকলেন , আমরা যেতে বাপি আমার হাতটা দুই হাতে চেপে ধরে দুর্বল কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বললেন '' শুভ আজ তোমায় একটা কথা বলি আশা করি তুমি আমায় ভুল বুঝবে না , তুমি জানো নিশ্চই আমি কোন পরিস্থিতিতে লাবনীকে বিয়ে করেছিলাম ! '' আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম '' আইনত লাবনী আমার স্ত্রী হলেও ওকে আমি নিজের মেয়ের মতোই দেখেছি '' '' হ্যাঁ বাপি আমায় তুবড়ি এটা বলেছে '' '' আমার হাতে আর বেশি সময় নেই এটা আমি বুঝতেই পারছি তাই একটা কথা বলতে চাই তিন্নিও জানে বিষয়টা '' '' কি বিষয় বাপি ? '' শ্যামলের ঐখানে বেশ কয়েকবার তোমায় দেখে ওর তোমায় ভালো লেগে যায় একমাত্র আমাকেই বিষয়টা জানায় , আমি তোমায় কালীপুজোর পরেরদিন নিমন্ত্রণ করি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে যে ওর সম্পর্কে তোমায় সব জানিয়ে যদি তুমি রাজি থাকো তোমার হাতে লাবনীকে সোঁপে দেব '' আমি তুবড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম '' তুই তো আমায় কখনো বলিসনি '' '' আমিও অনেক পরে জেনেছি কারণ আমি সেইসময় পিসিমনির সাথে ইউরোপে বেড়াতে গিয়েছিলাম জাস্ট কালীপুজোর আগেই ফিরে সব শুনলাম আমার ধারণাতেই ছিলোনা যে ছেলেটা তুই তোকে এইখানে দেখে বনিকে বলতে বনি বাপিকে বলতে বাপি .......'' আমি বাপির দিকে তাকালাম , বাপি আমার হাতটা আরো চেপে ধরে বললেন '' শুভ আমার অবর্তমানে লাবনীর দায়িত্ব তোমার আর তিন্নির হাতে দিয়ে যেতে চাই '' আমি লাবনীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর দুইচোখ থেকে ঝরঝর করে জল বেরিয়ে গল্ ভিজিয়ে দিচ্ছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে আমি এবার বাপির হাতের ওপরে হাত রেখে বললাম '' বাপি আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি বনির কোনো অমর্যাদা হবে না আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন '' তারপর বনির দিকে তাকিয়ে বললাম '' আমরা তো খুব ভালো বন্ধু তাইনা বনি ? '' চোখে জল মৃদু হেসে বনি মাথা নেড়ে সায় জানালো আমার দিকে তাকিয়ে | বাপি একটু সুস্থ হতে আমি আর তুবড়ি সল্টলেকে ফিরলাম , একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি হটাৎ তুবড়ি আমায় ডেকে তুললো '' শুভ ওঠ কেউ নক করছে '' আমি উঠে দরজা খুলে দেখলাম আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের রতন কাকুর বৌ কাকিমা দাঁড়িয়ে আছে , আমি কিছু বলার আগেই কাকিমা বললেন '' দিপু একটু চলো তোমার কাকুর শরীরটা খুব খারাপ হয়েছে '' আমি দৌড়ে গেলাম তুবড়িকে বললাম দাদাভাইকে খবর দিতে কাকুর ঘরে ঢুকে যা বুঝলাম তখুনি হসপিটালে নেওয়া দরকার আমি কাছের নার্সিংহোমে ফোন করে এম্বুলেন্স আনলাম তারপর আমি এম্বুলেন্সে আর দাদাভাই কাকিমাকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম কাকিমা তাড়াতাড়ি সব কাগজ পত্র নিয়ে এসেছিলো হসপিটালে সাথেসাথেই ভর্তি করে নিলো ,কাকিমা ভিতরেই বসে রইলো ,আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে সিগাটের ধরালাম কাকু কাকিমার একমাত্র মেয়ে কুন্তলাদি নিজেও ডাক্তার পুনাতে থাকে ওর হাসব্যান্ড ও ডাক্তার কাকিমা বোধহয় ফোন করেছিল কুন্তলাদি দাদাভাইকে ফোন করলো কুন্তলাদি দাদাভাবে থেকে বেশ বড়ো বয়সে , দাদাভাই সবটা বলতে কুন্তলাদি বললো ভোরের প্রথম ফ্লাইটেই কলকাতায় আসবে , কাকুকে আই, সি, ইউ তে দিলো আমাদের আর থাকতে হবে না বলতে অনেক রাতে আমরা কাকিমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম | প্রায় ভোর হয়ে এসেছে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হলাম তুবড়ি চা করে দিলো চা খেয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম তুবড়ি এসে পাশে দাঁড়ালো সিগারেটটা শেষ করে শুতে গেলাম একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম তুবড়িও শুলো কিন্তু ঘুম আসছিলো না , নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছি ঘুম ভাঙলো অনেক বেলায় দাদাভাই অফিসে যায়নি আমি হসপিটালে ফোন করে কাকুর খবর নিলাম , একই রকম অবস্থা , দুপুরবেলায় কুন্তলাদি এলো , আমরা নিশ্চিন্ত হলাম কাকিমাও একটু স্বস্তি পেলো কুন্তলাদি নিজেই যেহেতু ডাক্তার তাই আমরা সবাই নিশ্চিন্ত ছিলাম , কিন্তু পরেরদিন থেকেই অবস্থার অবনতি হলো তিনদিনের মাথায় কাকি চলে গেলেন কুন্তলাদি থেকেই শ্রাদ্ধশান্তি করলো , তারপর কাকিমাকে নিয়েই পুনাতে ফিরে গ্যালো , যাবার আগে দাদাভাইকে দায়িত্ব দিলো ওদের ফ্ল্যাটটা যদি বিক্রি করা যায় কোঅপারেটিভের নিয়ম অনুযায়ী বাইরের কাউকে বিক্রি করা সমস্যার বিষয় তাই আমি প্রস্তাব দিলাম আমিই তুবড়ির নামে ফ্ল্যাটটা কিনে নেবো জেঠিমাও রাজি হয়ে গ্যালো সেইমতো মিটিং ডেকে রেসোলিউশন নিয়ে আমিই ফ্ল্যাটটা কিনে নিলাম , যেহেতু বাপির শরীর ভালো নেই আমার উদ্দেশ্য ছিল বাপিকে যাতে নিজের কাছেই রাখা যায় | ব্যাপীও রাজি হয়ে গেলেন ফ্ল্যাটটা রেনোভেট করিয়ে নতুন ফার্নিচার কিনে গৃহপ্রবেশ হলো | বাপিকে আর লাবনীকে নিয়ে এলাম |