12-06-2025, 12:23 AM
H : DESTINATION
সুমিত এই হঠাত আক্রমণে একটু অবাক হয়, আরো অবাক হয় সুনীতির মিনতি শুনে। মেয়ে বলে কি! সুমিত এর আগে সরাসরি সেক্সের প্রস্তাব পেলেও এরকম অধিকার নিয়ে ওকে কেউ কখনো নিজ দেহকে সমর্পণ করে নি। প্রথম দেখাতেই একদম অচেনা একটা ছেলেকে এমন আর্তি জানানোর মেয়ে যে সুনীতি নয় তা সুমিত ভালোমতই বুঝতে পারে, তাও ঠিক কীভাবে ওরা এখন এই অবস্থায় এসে পড়েছে সেটা সুমিতের বোধগম্য হচ্ছেনা।
সুমিত জিজ্ঞেস করে,"আপনি যা বলছেন ভেবে চিন্তে বলেছেন নাকি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন? যদি এমন হয় তাহলে এটাকে নিছক মজা হিসেবে ধরে নেবো।"
সুনীতি মাথা নাড়িয়ে বলে,"আমি যা বলেছি তা আমার স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধিতেই বলেছি। আমি কিন্তু এ ব্যাপারে সিরিয়াস। আমার তোমাকে লাগবে আর সেটা এখনই।"
সুমিত সুনীতির এমন সরাসরি উত্তরে আরো অবাক হয়ে যায়। ও কোনোমতে বলে,"আপনার বাসার লোক চিন্তা করবে না যে আপনি রাতে কই আছেন?"
সুনীতি মুচকি হেসে বলে,"তোমার মত আমিও এই এলাকার নই। আমি এখানে একটা ছাত্রীনিবাসে থাকি। আমি আমার রুমে একাই থাকি, তাই রুমমেট কেউ নেই যে আমার আশায় বসে থাকবে। আর ওখানে রাত ১১ টায় গেট লাগিয়ে দেয়। তার আগে পৌঁছাতে পারলেই হবে।"
একটু থেমে সুনীতি পুনরায় দুষ্টুমি করে বলে,"আমাদের কাজ তো তার আগেই হয়ে যাবে, নাকি আরো সময় দরকার তোমার?"
সুনীতির কথায় সুমিতের গাল লাল হয়ে যায়। অন্ধকার হওয়ার কারণে সুনীতি তা খেয়াল করে নি; তাহলে সুমিতকে আরো খোঁচা দিতে ছাড়ত না। সুমিত সুনীতির এক হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,"তা আপনার এই 'কাজ' করতে কত সময় লাগবে তা নাহয় নিজেই হিসাব করে নিবেন। এখন বলুন এই 'কাজ' করতে কোথায় যাবেন?"
সুনীতি বলে,"তুমি কোথায় থাক? সেখানে যাওয়া যাবে না?"
সুমিত একটা জায়গার নাম নিয়ে বলে,"আমি এখানে এক পরিচিতের বাসায় থাকি; কিছুটা 'হাউস গেস্ট' এর মত। আমার জন্য একটা রুম তারা ছেড়ে দিয়েছে। তবে এখন বাসায় হয়ত কেউ থাকতে পারে, দেখি আমি একটা ফোন করে দেখছি।" সুমিত সুনীতির হাত ধরেই ওখান থেকে বের হতে শুরু করে। সুনীতি সুমিতের হাতকে আরো জোড়ে আঁকড়ে ধরে ওর সাথে হাঁটতে থাকে। এবারো ওরা পাশাপাশি অবস্থান করে। এর আগের বার সুনীতি লজ্জা পেলেও এবার ও বেশ স্বাভাবিক থেকেই হাঁটতে থাকে; হয়ত অন্ধকার ওর লজ্জাকে লুকাতে সাহায্য করেছে। তবে ওর গাল এখনও অনেক লাল হয়ে রয়েছে; নদীর পাড়ে বিভিন্ন দোকান থেকে আসা আলো ওর গালের লালিমা আরো ফুটিয়ে তুলছে। ওর কানে সুমিতের কিছু কথা ভেসে আসে। ফোনের অপর পাশে কে আছে তা সুনীতি জানে না, তবে বুঝতে পারে সুমিত যে বাসায় থাকে সেই বাসার কেউ হবে। সুনীতি সুমিতের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর গালও লাল হয়ে গিয়েছে; ওপাশ থেকে কিছু বলা হয় যা শুনে সুমিতের এই অবস্থা। সুমিত একটু সময় চুপ থেকে বলে,"আরে না কী যে বল না তুমি! এরকম কিছুই নয়! আচ্ছা বাদ দেও এসব, তুমি কি এখন শর্মিলী আন্টির বাসায় আছো নাকি বাসায় এসে পড়েছ?"
অপর প্রান্ত থেকে আবার কিছু বলা হয় যা শুনে সুমিত একেবারে মিইয়ে যায়। একবার চকিতে সুনীতির দিকে তাকিয়ে বলে,"চোরের মনে পুলিশ পুলিশ! সারাদিন শুধু এসব চিন্তাই মাথায় ঘোরে তোমার। তোমাকে না ইচ্ছে করে; আচ্ছা বললাম না আর। আপনাদের রাজসভা চালিয়ে যান, মহারানী নয়নতারা।" সুমিত ফোন কেটে দেয়।
সুনীতি প্রথমে আন্দাজ করলেও মহারানী শোনার পর নিশ্চিত হয় ওপাশ থেকে একজন মহিলা কথা বলছে। সুনীতি অবশ্য খোঁচা দেয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে না। সুনীতি বলে,"বাহ! একেবারে মহারানী! পাশে সুন্দরী সিনিওর আপুকে রেখে কাকে রানী বানানো হচ্ছে?"
সুমিত মুচকি হেসে বলে,"উনি আমার 'মালকিন' হন।"
সুনীতি আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,"কীভাবে?"
সুমিত বলে,"যার সাথে কথা বললাম তার বাসাতেই আমি থাকি। সেই হিসেবে উনি আমার 'মালকিন' হন। ওনার স্বামী, হিরণ দাদা, আমার আব্বুর সরাসরি ছাত্র; সেই সুবাদে আমাকে তাদের নিজ বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন যাতে আমার কোনো প্রকার অসুবিধে না হয় খাবার নিয়ে।"
সুনীতি আবার জিজ্ঞেস করে,"আজকের এই ডেট এর ব্যাপারে তারা কি কিছু জানে?"
সুমিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,"দুজনেই সব জানে। আমার এক কাছের বন্ধুর Girlfriend এর সাথে নয়নাদির, মানে নয়নতারা বৌদির খুব ভাব, সে আবেগের বশে এই Blind Date এর ব্যাপারে সব বলে দেয়; তারপর হিরণ দাদাও জেনে যায় এই কারবার।"
সুনীতি বলে,"কিছু কি বলেছে এ নিয়ে?" সুনীতি অবশ্য সুমিতের দীর্ঘশ্বাস শুনেই এর উত্তর কি হতে পারে তা বুঝে নেয়।
সুমিত বলে,"কি বলেনি সেটা জিজ্ঞেস করেন। দুজনেই জীবন একেবারে তেজপাতা করে দিয়েছে এই কদিন। ক্লাসমেটরা কিছু বললে তবুও কথার পিঠে কিছু বলা যায়, কিন্তু এদের কিছুই বলা যায়না, শুধু শুনেই যেতে হয়। দাদা তবুও রয়েসয়ে বলে কিন্তু অন্যজন তো পুরাই আগুন! তার উপর গত দুইদিন ধরে শর্মিলী আন্টির খোঁচা তো ফাও! এমনকি এখনও দুইজন শর্মিলী আন্টির বাসায় বসে আলোচনা করছে যে আমি কতদূর পর্যন্ত গিয়েছি, কি করছি আপনার সাথে।"
সুনীতির মনে আবার লাজুকতা ফিরে এসেছে সুমিতের কথায়। ও একটু ভয় নিয়ে বলে,"তাহলে এখন আমরা যা করতে যাচ্ছি তা যদি কোনোভাবে জানতে পারে তখন?"
সুমিত ওকে অবাক করে দিয়ে বলে,"তা কি আর জানে না মনে করেছেন! যখন জিজ্ঞেস করেছি সে বাসায় আছে কিনা তখনই বুঝতে পেরেছে। এ নিয়ে যে কতদিন জ্বালাবে! তবে আপনি ভয় পাবেন না, এসব কথা তাদের মধ্যেই থাকবে, এরা আর যাই হোক কথা গোপন রাখতে জানে। যদিও আপনাকে কাছে পেলে হয়ত কথা শুনাতে ছাড়বে না।" সুনীতি এই প্রথম ওর অভিসারে ভয় অনুভব করে। অবশ্য সেই সাথে সুমিতের নয়নতারা বৌদি এবং শর্মিলী আন্টির সাথে দেখা করার ইচ্ছে করছে। দেখা যাক ওর ইচ্ছে পূরণ হয় কিনা।
ওরা কথা বলতে বলতে নদীর পাড় থেকে একটু সামনে এসে একটা রিক্সা ঠিক করে উঠে পড়ে। রিক্সায় বসে ওরা বেশি কথা বলে না; ওরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে একে অপরের ছোঁয়া অনুভব করতে। সুমিত রিক্সায় সুনীতির হাত ছেড়ে ওর কোমড়ে হাত রাখে। ওর বাহু সুনীতির পিঠ ছুঁয়ে থাকে। সুনীতি ওর মাথা সুমিতের কাঁধে রাখে। ওরা দুজনেই এখন একে অপরের সাথে অনেকটাই ফ্রী হয়ে গিয়েছে। তবুও আসন্ন সময়ের কথা ভেবে দুজনেই একটু চিন্তিত। তবে এই চিন্তা খুবই অল্প, বেশিরভাগ মন জুড়ে রয়েছে কামনা। সুনীতি নদীর পাড়ে সুমিতের সাথে কথা বলে অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও এখন রিক্সায় সুমিতের ছোঁয়াতে ফের ওর শরীরের তাপ বাড়তে শুরু করেছে। অবাধ্য হচ্ছে সুমিতের মনও, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের শরীরকে সামলাচ্ছে, নিজেকে বিরত রাখছে উলটা পালটা কিছু করার থেকে। নিজেকে আশ্বাস দিচ্ছে যে আর কিছু সময় পরই একান্তেই পাবে পাশে বসা এই অতি সুন্দরী রমনীকে; এখন একটু ভদ্র হয়ে থাকতে কি সমস্যা?
রিক্সা যখন সুমিতের বাসার সামনে থামে তখন সুনীতি অবাক হয়ে সুমিতকে বলে,"আরে এই রাস্তা ধরে আরেকটু সামনেই তো আমার থাকার জায়গা!"
সুমিত বলে,"তাই নাকি। যাক ভালোই হল, রাতে আপনাকে এগিয়ে দিতে সুবিধা হবে। আর ভবিষ্যতে আমাদের দেখা করতে অন্য কোথাও যাওয়া লাগবে না।" শেষের কথাটা একটু হালকা স্বরে বলে সুমিত।
সুনীতি একটু লজ্জা পেয়ে বলে,"পরের কথা পরে; আগে বর্তমানের কথা ভাবো।"
সুমিত হেসে বলে,"যথা আজ্ঞা, মাননীয়া সুনি সাহেবা। এখন এই বান্দার বাসায় পদধূলি দিয়ে বাসার সৌন্দর্য বর্ধিত করে আমাকে বাধিত করুন।" সুনীতি এই 'গুরুগম্ভীর' কথায় নিজের হাসি আটকাতে পারেনা। হাসি বজায় রেখে সুমিতের সাথে প্রবেশ করে একটা মাঝারি আকারের পাঁচতলা ভবনের মধ্যে। সুনীতি ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারে বাইরে থেকে তেমন বড় না দেখালেও বিল্ডিংটিকে কোনোমতেই ছোট বলা যায়না। সামনে থেকে দেখলে বেশিরভাগ মানুষ সুনীতির মত ভুল করবে। লিফটের ব্যবস্থা থাকলেও সুমিত সুনীতিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়েই উঠতে শুরু করে। সুনীতি বুঝতে পারে ওদের যেন যথাসম্ভব কম লোকের সাথে দেখা হয়, তাই এই পথ বেছে নিয়েছে সুমিত। যদিও এখন আর কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলায় না তবুও সাবধানের মার নেই। সুনীতি এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো খেয়াল করেছে সুমিতের আচরণে। সুনীতির সাথে প্রথম হাত মিলানোর সময় বেশি সময় হাত না ধরে থাকা, ক্যাফেতে থাকাকালীন কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন না করা, ওর অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে না চাওয়া যখন ও একবার বলতে রাজি হয়নি, ওর শরীরের কোথাও বাজে ভাবে স্পর্শ করেনি সুযোগ পেলেও, ওর কোমড় বা পিঠে হাত দেয়ার সময় শাড়ির উপর থেকেই হাত রাখা, এমনকি ওকে কিস করার সময়ও সুমিত ওর পিঠের উপর রাখা শাড়ির আঁচলের উপর থেকেই ওর হাত রাখা, রিক্সায় সুমিতের হাত যেন ওর কোমড়ের উপরে না উঠে পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখা; একেবারে শুরু থেকেই এরকম কিছু কিছু জিনিস সুনীতি লক্ষ করেছে। এসব ঘটনা ছেলেদের চোখে ধরা না পড়লেও মেয়েরা খুব সহজেই ধরে ফেলে। এই ছোট ছোট যত্ন-আত্তিই মেয়েদেরকে মুগ্ধ করে; যেমনটা সুনীতি মুগ্ধ হয়ে রয়েছে সুমিতের উপর। অবশ্য সুমিতের চেহারাই মেয়েদেরকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট, আর এসব ছোট কিন্তু কার্যকরি পদক্ষেপ তো মেয়েদের একেবারে গলিয়ে দেয়। এসব কথা চিন্তা করতে করতে ওরা তিন তলায় আসে। এখানে তিনটি ইউনিট রয়েছে। সুমিত ওকে নিয়ে '৩০২' লেখা দরজার সামনে আসে। দরজায় সাধারণ তালার সাথে অটোম্যাটিক লকও রয়েছে। ঘরের ভিতরে বাহির থেকে আসা অল্প আলোতে সুনীতি বুঝতে পারে ও এখন ড্রয়িং রুমে আছে। রুমটা বেশ বড়। একটু দূরেই একটা দরজা দেখা যাচ্ছে, সুমিত ওই দিকে যেতে যেতে বলে,"এইটাই আমার রুম। আগেই বলে রাখছি একটু অগোছালো রয়েছে রুমটি, কিছু মনে করবেন না।"
সুনীতির কাছে সুমিতের রুম বেশ গোছানোই মনে হচ্ছে। রুমটা বেশ বড়। রুমের সাথে একটা বাথরুম ও বারান্দা রয়েছে। রুমে একটা খাট, একটা টেবিল, দুটি চেয়ার, একটা প্লাস্টিকের ওয়্যারড্রব আর একটা বই রাখার সেলফ আছে। এরপরও রুমটাকে খালি খালি মনে হচ্ছে। তবে সুনীতি রুমের জানালা দেখে ভালোই অবাক হয়; এতো বড় জানালা! সাধারণত এতো বড় জানালা ফ্লাট বাসায় দেখা যায় না। ওর রুমে জানালার উপর নীল রঙের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা ছিলো আগে থেকেই। সুনীতি খাটের একপাশে বসে রুমের চারদিক চোখ বুলাতে থাকে। ওর রুমটাকে কোনো দিক থেকেই খারাপ মনে হয় না। সুমিত ততক্ষণে ওদের জুতো ভিতরে রেখে মূল দরজা আটকে রান্নাঘর থেকে এক বোতল পানি নিয়ে ওর রুমে আসে। ওর রুমের দরজা আটকানোর শব্দে সুনীতি ওর দিকে তাকায়। সুমিত বোতলটি সুনীতিকে দেখিয়ে জানতে চায় ওর পিপাসা পেয়েছে কিনা। সুনীতি বোতল থেকে অল্প একটু পানি পান করে সুমিতকে ফিরিয়ে দেয়। সুমিত বোতলটি টেবিলের উপর রেখে সুনীতির পাশে বসে। দুজনেই এই মুহূর্তে অনেক কিছু করার চিন্তা করলেও কীভাবে শুরু করবে তা নিয়ে একটু চিন্তিত। সুনীতির মধ্যে আবার ওর লাজুকতা ফিরে আসছে। ওর মনে হচ্ছে ওকে কেউ বেঁধে রেখেছে; ওর শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছে না। এখন শুধু এই বদ্ধ রুমে ফ্যান ঘোরার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এই রুমে থাকা একজোড়া নর-নারী একে অপরকে নিয়ে সুখের সাগরে ভাসতে চাচ্ছে। দুজনের মনে একই জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কীভাবে এই চিন্তাকে বাস্তবে নিয়ে আসবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
সুমিত এই হঠাত আক্রমণে একটু অবাক হয়, আরো অবাক হয় সুনীতির মিনতি শুনে। মেয়ে বলে কি! সুমিত এর আগে সরাসরি সেক্সের প্রস্তাব পেলেও এরকম অধিকার নিয়ে ওকে কেউ কখনো নিজ দেহকে সমর্পণ করে নি। প্রথম দেখাতেই একদম অচেনা একটা ছেলেকে এমন আর্তি জানানোর মেয়ে যে সুনীতি নয় তা সুমিত ভালোমতই বুঝতে পারে, তাও ঠিক কীভাবে ওরা এখন এই অবস্থায় এসে পড়েছে সেটা সুমিতের বোধগম্য হচ্ছেনা।
সুমিত জিজ্ঞেস করে,"আপনি যা বলছেন ভেবে চিন্তে বলেছেন নাকি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন? যদি এমন হয় তাহলে এটাকে নিছক মজা হিসেবে ধরে নেবো।"
সুনীতি মাথা নাড়িয়ে বলে,"আমি যা বলেছি তা আমার স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধিতেই বলেছি। আমি কিন্তু এ ব্যাপারে সিরিয়াস। আমার তোমাকে লাগবে আর সেটা এখনই।"
সুমিত সুনীতির এমন সরাসরি উত্তরে আরো অবাক হয়ে যায়। ও কোনোমতে বলে,"আপনার বাসার লোক চিন্তা করবে না যে আপনি রাতে কই আছেন?"
সুনীতি মুচকি হেসে বলে,"তোমার মত আমিও এই এলাকার নই। আমি এখানে একটা ছাত্রীনিবাসে থাকি। আমি আমার রুমে একাই থাকি, তাই রুমমেট কেউ নেই যে আমার আশায় বসে থাকবে। আর ওখানে রাত ১১ টায় গেট লাগিয়ে দেয়। তার আগে পৌঁছাতে পারলেই হবে।"
একটু থেমে সুনীতি পুনরায় দুষ্টুমি করে বলে,"আমাদের কাজ তো তার আগেই হয়ে যাবে, নাকি আরো সময় দরকার তোমার?"
সুনীতির কথায় সুমিতের গাল লাল হয়ে যায়। অন্ধকার হওয়ার কারণে সুনীতি তা খেয়াল করে নি; তাহলে সুমিতকে আরো খোঁচা দিতে ছাড়ত না। সুমিত সুনীতির এক হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,"তা আপনার এই 'কাজ' করতে কত সময় লাগবে তা নাহয় নিজেই হিসাব করে নিবেন। এখন বলুন এই 'কাজ' করতে কোথায় যাবেন?"
সুনীতি বলে,"তুমি কোথায় থাক? সেখানে যাওয়া যাবে না?"
সুমিত একটা জায়গার নাম নিয়ে বলে,"আমি এখানে এক পরিচিতের বাসায় থাকি; কিছুটা 'হাউস গেস্ট' এর মত। আমার জন্য একটা রুম তারা ছেড়ে দিয়েছে। তবে এখন বাসায় হয়ত কেউ থাকতে পারে, দেখি আমি একটা ফোন করে দেখছি।" সুমিত সুনীতির হাত ধরেই ওখান থেকে বের হতে শুরু করে। সুনীতি সুমিতের হাতকে আরো জোড়ে আঁকড়ে ধরে ওর সাথে হাঁটতে থাকে। এবারো ওরা পাশাপাশি অবস্থান করে। এর আগের বার সুনীতি লজ্জা পেলেও এবার ও বেশ স্বাভাবিক থেকেই হাঁটতে থাকে; হয়ত অন্ধকার ওর লজ্জাকে লুকাতে সাহায্য করেছে। তবে ওর গাল এখনও অনেক লাল হয়ে রয়েছে; নদীর পাড়ে বিভিন্ন দোকান থেকে আসা আলো ওর গালের লালিমা আরো ফুটিয়ে তুলছে। ওর কানে সুমিতের কিছু কথা ভেসে আসে। ফোনের অপর পাশে কে আছে তা সুনীতি জানে না, তবে বুঝতে পারে সুমিত যে বাসায় থাকে সেই বাসার কেউ হবে। সুনীতি সুমিতের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর গালও লাল হয়ে গিয়েছে; ওপাশ থেকে কিছু বলা হয় যা শুনে সুমিতের এই অবস্থা। সুমিত একটু সময় চুপ থেকে বলে,"আরে না কী যে বল না তুমি! এরকম কিছুই নয়! আচ্ছা বাদ দেও এসব, তুমি কি এখন শর্মিলী আন্টির বাসায় আছো নাকি বাসায় এসে পড়েছ?"
অপর প্রান্ত থেকে আবার কিছু বলা হয় যা শুনে সুমিত একেবারে মিইয়ে যায়। একবার চকিতে সুনীতির দিকে তাকিয়ে বলে,"চোরের মনে পুলিশ পুলিশ! সারাদিন শুধু এসব চিন্তাই মাথায় ঘোরে তোমার। তোমাকে না ইচ্ছে করে; আচ্ছা বললাম না আর। আপনাদের রাজসভা চালিয়ে যান, মহারানী নয়নতারা।" সুমিত ফোন কেটে দেয়।
সুনীতি প্রথমে আন্দাজ করলেও মহারানী শোনার পর নিশ্চিত হয় ওপাশ থেকে একজন মহিলা কথা বলছে। সুনীতি অবশ্য খোঁচা দেয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে না। সুনীতি বলে,"বাহ! একেবারে মহারানী! পাশে সুন্দরী সিনিওর আপুকে রেখে কাকে রানী বানানো হচ্ছে?"
সুমিত মুচকি হেসে বলে,"উনি আমার 'মালকিন' হন।"
সুনীতি আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,"কীভাবে?"
সুমিত বলে,"যার সাথে কথা বললাম তার বাসাতেই আমি থাকি। সেই হিসেবে উনি আমার 'মালকিন' হন। ওনার স্বামী, হিরণ দাদা, আমার আব্বুর সরাসরি ছাত্র; সেই সুবাদে আমাকে তাদের নিজ বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন যাতে আমার কোনো প্রকার অসুবিধে না হয় খাবার নিয়ে।"
সুনীতি আবার জিজ্ঞেস করে,"আজকের এই ডেট এর ব্যাপারে তারা কি কিছু জানে?"
সুমিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,"দুজনেই সব জানে। আমার এক কাছের বন্ধুর Girlfriend এর সাথে নয়নাদির, মানে নয়নতারা বৌদির খুব ভাব, সে আবেগের বশে এই Blind Date এর ব্যাপারে সব বলে দেয়; তারপর হিরণ দাদাও জেনে যায় এই কারবার।"
সুনীতি বলে,"কিছু কি বলেছে এ নিয়ে?" সুনীতি অবশ্য সুমিতের দীর্ঘশ্বাস শুনেই এর উত্তর কি হতে পারে তা বুঝে নেয়।
সুমিত বলে,"কি বলেনি সেটা জিজ্ঞেস করেন। দুজনেই জীবন একেবারে তেজপাতা করে দিয়েছে এই কদিন। ক্লাসমেটরা কিছু বললে তবুও কথার পিঠে কিছু বলা যায়, কিন্তু এদের কিছুই বলা যায়না, শুধু শুনেই যেতে হয়। দাদা তবুও রয়েসয়ে বলে কিন্তু অন্যজন তো পুরাই আগুন! তার উপর গত দুইদিন ধরে শর্মিলী আন্টির খোঁচা তো ফাও! এমনকি এখনও দুইজন শর্মিলী আন্টির বাসায় বসে আলোচনা করছে যে আমি কতদূর পর্যন্ত গিয়েছি, কি করছি আপনার সাথে।"
সুনীতির মনে আবার লাজুকতা ফিরে এসেছে সুমিতের কথায়। ও একটু ভয় নিয়ে বলে,"তাহলে এখন আমরা যা করতে যাচ্ছি তা যদি কোনোভাবে জানতে পারে তখন?"
সুমিত ওকে অবাক করে দিয়ে বলে,"তা কি আর জানে না মনে করেছেন! যখন জিজ্ঞেস করেছি সে বাসায় আছে কিনা তখনই বুঝতে পেরেছে। এ নিয়ে যে কতদিন জ্বালাবে! তবে আপনি ভয় পাবেন না, এসব কথা তাদের মধ্যেই থাকবে, এরা আর যাই হোক কথা গোপন রাখতে জানে। যদিও আপনাকে কাছে পেলে হয়ত কথা শুনাতে ছাড়বে না।" সুনীতি এই প্রথম ওর অভিসারে ভয় অনুভব করে। অবশ্য সেই সাথে সুমিতের নয়নতারা বৌদি এবং শর্মিলী আন্টির সাথে দেখা করার ইচ্ছে করছে। দেখা যাক ওর ইচ্ছে পূরণ হয় কিনা।
ওরা কথা বলতে বলতে নদীর পাড় থেকে একটু সামনে এসে একটা রিক্সা ঠিক করে উঠে পড়ে। রিক্সায় বসে ওরা বেশি কথা বলে না; ওরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে একে অপরের ছোঁয়া অনুভব করতে। সুমিত রিক্সায় সুনীতির হাত ছেড়ে ওর কোমড়ে হাত রাখে। ওর বাহু সুনীতির পিঠ ছুঁয়ে থাকে। সুনীতি ওর মাথা সুমিতের কাঁধে রাখে। ওরা দুজনেই এখন একে অপরের সাথে অনেকটাই ফ্রী হয়ে গিয়েছে। তবুও আসন্ন সময়ের কথা ভেবে দুজনেই একটু চিন্তিত। তবে এই চিন্তা খুবই অল্প, বেশিরভাগ মন জুড়ে রয়েছে কামনা। সুনীতি নদীর পাড়ে সুমিতের সাথে কথা বলে অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও এখন রিক্সায় সুমিতের ছোঁয়াতে ফের ওর শরীরের তাপ বাড়তে শুরু করেছে। অবাধ্য হচ্ছে সুমিতের মনও, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের শরীরকে সামলাচ্ছে, নিজেকে বিরত রাখছে উলটা পালটা কিছু করার থেকে। নিজেকে আশ্বাস দিচ্ছে যে আর কিছু সময় পরই একান্তেই পাবে পাশে বসা এই অতি সুন্দরী রমনীকে; এখন একটু ভদ্র হয়ে থাকতে কি সমস্যা?
রিক্সা যখন সুমিতের বাসার সামনে থামে তখন সুনীতি অবাক হয়ে সুমিতকে বলে,"আরে এই রাস্তা ধরে আরেকটু সামনেই তো আমার থাকার জায়গা!"
সুমিত বলে,"তাই নাকি। যাক ভালোই হল, রাতে আপনাকে এগিয়ে দিতে সুবিধা হবে। আর ভবিষ্যতে আমাদের দেখা করতে অন্য কোথাও যাওয়া লাগবে না।" শেষের কথাটা একটু হালকা স্বরে বলে সুমিত।
সুনীতি একটু লজ্জা পেয়ে বলে,"পরের কথা পরে; আগে বর্তমানের কথা ভাবো।"
সুমিত হেসে বলে,"যথা আজ্ঞা, মাননীয়া সুনি সাহেবা। এখন এই বান্দার বাসায় পদধূলি দিয়ে বাসার সৌন্দর্য বর্ধিত করে আমাকে বাধিত করুন।" সুনীতি এই 'গুরুগম্ভীর' কথায় নিজের হাসি আটকাতে পারেনা। হাসি বজায় রেখে সুমিতের সাথে প্রবেশ করে একটা মাঝারি আকারের পাঁচতলা ভবনের মধ্যে। সুনীতি ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারে বাইরে থেকে তেমন বড় না দেখালেও বিল্ডিংটিকে কোনোমতেই ছোট বলা যায়না। সামনে থেকে দেখলে বেশিরভাগ মানুষ সুনীতির মত ভুল করবে। লিফটের ব্যবস্থা থাকলেও সুমিত সুনীতিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়েই উঠতে শুরু করে। সুনীতি বুঝতে পারে ওদের যেন যথাসম্ভব কম লোকের সাথে দেখা হয়, তাই এই পথ বেছে নিয়েছে সুমিত। যদিও এখন আর কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলায় না তবুও সাবধানের মার নেই। সুনীতি এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো খেয়াল করেছে সুমিতের আচরণে। সুনীতির সাথে প্রথম হাত মিলানোর সময় বেশি সময় হাত না ধরে থাকা, ক্যাফেতে থাকাকালীন কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন না করা, ওর অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে না চাওয়া যখন ও একবার বলতে রাজি হয়নি, ওর শরীরের কোথাও বাজে ভাবে স্পর্শ করেনি সুযোগ পেলেও, ওর কোমড় বা পিঠে হাত দেয়ার সময় শাড়ির উপর থেকেই হাত রাখা, এমনকি ওকে কিস করার সময়ও সুমিত ওর পিঠের উপর রাখা শাড়ির আঁচলের উপর থেকেই ওর হাত রাখা, রিক্সায় সুমিতের হাত যেন ওর কোমড়ের উপরে না উঠে পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখা; একেবারে শুরু থেকেই এরকম কিছু কিছু জিনিস সুনীতি লক্ষ করেছে। এসব ঘটনা ছেলেদের চোখে ধরা না পড়লেও মেয়েরা খুব সহজেই ধরে ফেলে। এই ছোট ছোট যত্ন-আত্তিই মেয়েদেরকে মুগ্ধ করে; যেমনটা সুনীতি মুগ্ধ হয়ে রয়েছে সুমিতের উপর। অবশ্য সুমিতের চেহারাই মেয়েদেরকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট, আর এসব ছোট কিন্তু কার্যকরি পদক্ষেপ তো মেয়েদের একেবারে গলিয়ে দেয়। এসব কথা চিন্তা করতে করতে ওরা তিন তলায় আসে। এখানে তিনটি ইউনিট রয়েছে। সুমিত ওকে নিয়ে '৩০২' লেখা দরজার সামনে আসে। দরজায় সাধারণ তালার সাথে অটোম্যাটিক লকও রয়েছে। ঘরের ভিতরে বাহির থেকে আসা অল্প আলোতে সুনীতি বুঝতে পারে ও এখন ড্রয়িং রুমে আছে। রুমটা বেশ বড়। একটু দূরেই একটা দরজা দেখা যাচ্ছে, সুমিত ওই দিকে যেতে যেতে বলে,"এইটাই আমার রুম। আগেই বলে রাখছি একটু অগোছালো রয়েছে রুমটি, কিছু মনে করবেন না।"
সুনীতির কাছে সুমিতের রুম বেশ গোছানোই মনে হচ্ছে। রুমটা বেশ বড়। রুমের সাথে একটা বাথরুম ও বারান্দা রয়েছে। রুমে একটা খাট, একটা টেবিল, দুটি চেয়ার, একটা প্লাস্টিকের ওয়্যারড্রব আর একটা বই রাখার সেলফ আছে। এরপরও রুমটাকে খালি খালি মনে হচ্ছে। তবে সুনীতি রুমের জানালা দেখে ভালোই অবাক হয়; এতো বড় জানালা! সাধারণত এতো বড় জানালা ফ্লাট বাসায় দেখা যায় না। ওর রুমে জানালার উপর নীল রঙের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা ছিলো আগে থেকেই। সুনীতি খাটের একপাশে বসে রুমের চারদিক চোখ বুলাতে থাকে। ওর রুমটাকে কোনো দিক থেকেই খারাপ মনে হয় না। সুমিত ততক্ষণে ওদের জুতো ভিতরে রেখে মূল দরজা আটকে রান্নাঘর থেকে এক বোতল পানি নিয়ে ওর রুমে আসে। ওর রুমের দরজা আটকানোর শব্দে সুনীতি ওর দিকে তাকায়। সুমিত বোতলটি সুনীতিকে দেখিয়ে জানতে চায় ওর পিপাসা পেয়েছে কিনা। সুনীতি বোতল থেকে অল্প একটু পানি পান করে সুমিতকে ফিরিয়ে দেয়। সুমিত বোতলটি টেবিলের উপর রেখে সুনীতির পাশে বসে। দুজনেই এই মুহূর্তে অনেক কিছু করার চিন্তা করলেও কীভাবে শুরু করবে তা নিয়ে একটু চিন্তিত। সুনীতির মধ্যে আবার ওর লাজুকতা ফিরে আসছে। ওর মনে হচ্ছে ওকে কেউ বেঁধে রেখেছে; ওর শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে পারছে না। এখন শুধু এই বদ্ধ রুমে ফ্যান ঘোরার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এই রুমে থাকা একজোড়া নর-নারী একে অপরকে নিয়ে সুখের সাগরে ভাসতে চাচ্ছে। দুজনের মনে একই জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কীভাবে এই চিন্তাকে বাস্তবে নিয়ে আসবে সেটাই বুঝতে পারছে না।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)