Thread Rating:
  • 13 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR কালো কুয়াশার ছায়া
#76
কালুর কণ্ঠ যেন বাংলোর পচা কাঠের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়, তার গম্ভীর শব্দ আমার মাথায় তীক্ষ্ণ ছুরির মতো বিঁধে। “তাড়াতাড়ি চলো। এই জায়গা ভালো নয়। আমি তোমাদের বাইরে নিয়ে যাব।” তার কথায় একটা অদ্ভুত তাড়া, যেন সে কিছু জানে—কোনো অন্ধকার রহস্য, কোনো ভয়ঙ্কর সত্য—কিন্তু তার ঠোঁটে তালা লাগানো। তার বিশাল দেহ ঘরের কোণে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে, তার পেশীবহুল বাহুতে মরচে ধরা ছুরিটা ধরা, যার ফলায় জঙ্গলের অন্ধকারে হালকা ঝিলিক দিচ্ছে। তার চোখ আমার দিকে তাকিয়ে, কালো মণির মধ্যে একটা গভীর, অপাঠ্য দৃষ্টি, যেন সে আমার মনের প্রতিটি কোণে ঢুকে পড়তে পারছে। আমার শরীরে একটা ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায়, আমার হৃৎপিণ্ড যেন বুকের খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়। কালু কে? সে কি সত্যিই আমাদের উদ্ধারকারী, নাকি এই বাংলোর অভিশাপের আরেকটি অংশ?

আমরা তিনজন—আমি, রিনা, আর নাইমা—তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়াই। আমার পা কাঁপছে, আমার হাঁটু যেন গলে যাচ্ছে, আমার শরীরে কোনো শক্তি নেই। আমার পোশাক ঘামে ভিজে আমার ত্বকে লেপটে আছে, আমার হাতে জঙ্গলের মাটি আর কাঁটার দাগ। আমি তাদের পিছু নিই, আমার পায়ের শব্দ বাংলোর পুরনো কাঠের মেঝেতে প্রতিধ্বনি তুলছে, যেন ঘরটাই আমাকে ডাকছে, “ফিরে আয়, তুই পালাতে পারবি না।” আমরা ভারী কাঠের দরজাটা ঠেলে খুলি, দরজার কব্জা থেকে একটা কর্কশ শব্দ বেরোয়, যেন বাংলো আমাদের প্রতি তার ক্রোধ প্রকাশ করছে। বাইরে পা রাখতেই জঙ্গলের ঘন অন্ধকার আমাদের ঘিরে ধরে। আকাশে চাঁদের আলো নেই, শুধু অন্ধকারের একটা কালো পর্দা, যেন জঙ্গল নিজেই আমাদের গ্রাস করতে চায়। গাছের ডালপালা বাতাসে দুলছে, তাদের বিকৃত ছায়া মাটিতে নাচছে, যেন তারা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের ফিসফিস আমার কানে বাজছে, “তুই পালাতে পারবি না, আবীর।” আমার শরীর কেঁপে ওঠে, আমার ত্বকে ঠান্ডা ঘাম জমছে। আমি হাঁটতে থাকি, আমার পা জঙ্গলের শিকড়ে ঠোক্কর খায়, আমার ত্বকে কাঁটা বিঁধে, আমার রক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরে।

কিছুদূর হাঁটার পর আমরা একটা খোলা জায়গায় পৌঁছাই, যেখানে কালুর গাড়ি দাঁড়িয়ে। এটা একটা পুরনো, মরচে ধরা জিপ, যার ধাতব শরীরে জঙ্গলের কাদা আর পাতা লেপটে আছে। জিপের জানালা ভাঙা, কাচের ধারালো টুকরো জানালার ফ্রেমে ঝুলছে, যেন এটাও আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আসনগুলো ছিঁড়ে ঝংলছে, ভেতর থেকে পুরু, স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ বেরচ্ছছে, যেন জিপটিও এই জঙ্গলের অভিশাপের অংশ। কালু আমাদের গাড়িতে উঠতে বলে, তার কণ্ঠে একটা কঠোরতা, যেন আমাদের কোনো প্রশ্ন করার অধিকার নেই। আমরা তিনজন পিছনের সিটে উঠে বসি, আমার মাঝে রিনা আর নাইমা। রিনার কাঁধ আমার কাঁধে ঠেকছে, তার শ্বাস ভারী, তার ত্বকে জঙ্গলের মাটির গন্ধ। নাইমার হাত কাঁপছে, তার নখ তার পোশাকের কিনারে শক্ত করে ধরে, তার মুখ ফ্যাকাশে। তাদের মুখে কোনো কথা নেই, তাদের চোখ মাটিতে, কিন্তু আমি তাদের শ্বাসের মধ্যে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা টের পাই, যেন তারা কিছু লুকোচ্ছে। আমার মনে একটা সন্দেহ জাগে—তারা কি কালুর সাথে জড়িত? তারা কি আমাকে ফাঁসাতে চায়?

কালু গাড়ি স্টার্ট দেয়, ইঞ্জিনের গর্জন জঙ্গলের নিস্তব্ধতাকে ছিন্নভিন্ন করে। গাড়িটা কাঁচা পথে ঝাঁকুনি দিয়ে এগিয়ে যায়, প্রতিটি ঝাঁকুনি আমার শরীরে ব্যথার ঢেউ তুলছে। আমার হাড় যেন ভেঙে যাচ্ছে, আমার মাথা গাড়ির জানালায় ঠোক্কর খাচ্ছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার জঙ্গলের দিকে তাকাই। গাছের ছায়া আমাদের তাড়া করছে, তাদের ডালপালা জানালায় আঁচড় কাটছে, যেন তারা আমাকে ধরতে চায়। জঙ্গলের অন্ধকারে কিছু নড়ছে, কোনো অমানুষিক ছায়া, যেন তারা আমাদের পিছু নিয়েছে। আমার শরীর কেঁপে ওঠে, আমার হৃৎপিণ্ড যেন গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। আমার চোখ কালুর পিঠে স্থির হয়। তার পেশীগুলো জিপের হ্যান্ডেল ধরে শক্ত হয়ে আছে, তার মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, তার চোখ সামনের অন্ধকার পথে। তার হাতে সেই ছুরিটা এখনো ধরা, জিপের সিটের পাশে ঝুলছে, যেন সে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের দিকে ফিরে তাকাতে পারে। আমার মনে একটা ভয়ঙ্কর প্রশ্ন—কালু আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? সে কি সত্যিই আমাদের বাঁচাতে চায়, নাকি সে এই খুনের পিছনে জড়িত? আমার মাথায় একটা চিন্তা ঝলক দেয়—কালু কীভাবে জঙ্গলের এই গোপন পথ চিনল? আমি দুই দিন ঘুরেও রাস্তা খুঁজে পাইনি, কিন্তু কালু কীভাবে ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছে গেল?

গাড়ির গর্জনের মাঝে আমি আনমনা হয়ে ভাবতে থাকি। জঙ্গলের বাংলোতে আমরা একের পর এক ভয়ঙ্কর খুনের মুখোমুখি হয়েছি। মিলি, কাজল, নববী, মানিক মিয়া, মিলির মা, মহিউদ্দিন, রোহান, হাবিব, শরিফা, লতা, সুমন—একে একে সবাই মারা গেছে। তাদের মৃত্যুর ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যেন কেউ আমার মাথায় একটা রক্তাক্ত চলচ্চিত্র চালিয়ে দিয়েছে। শরিফার গলায় দড়ি, তার চোখ ফোলা, তার মুখে রক্তমাখা আর্তনাদের ছাপ। লতার বুকে ছুরি, তার রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে, তার হাতে ছিটকে পড়া ছুরিটা। সুমনের মাথা ভাঙা, তার মাখা রক্ত আর মগজ মিশে মাটিতে, তার চোখে অবিশ্বাসের দৃষ্টি। আমরা তিনজন—আমি, রিনা, আর নাইমা—হেলিকপ্টারে উদ্ধার হয়ে বেঁচে ফিরেছি, কিন্তু সেটা কি সত্যি ছিল? আমার মাথায় হেলিকপ্টারের গর্জন, উদ্ধারকারী দলের কালো ইউনিফর্ম, তাঁবুর স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ—সবকিছু ঝাপসা, যেন সেটা আমার মনের ভ্রম। আমার মনে একটা অন্ধকার সন্দেহ জেগে আছে—খুনী আমাদের তিনজনের মাঝেই ছিল।

আমি রিনার দিকে তাকাই। তার মুখ ফ্যাকাশে, তার চোখে ক্লান্তি, কিন্তু তার ঠোঁটে একটা অদ্ভুত কম্পন, যেন সে কিছু লুকোচ্ছে। তার চুলে জঙ্গলের কাঁটা লেগে আছে, তার ত্বকে ধুলো আর ঘামের দাগ। আমি নাইমার দিকে তাকাই। তার হাত কাঁপছে, তার নখ তার পোশাকের কিনারে শক্ত করে ধরে, তার মুখে ভয়। তার ঠোঁট কাঁপছে, তার চোখে অশ্রু টলটল করছে, কিন্তু তার দৃষ্টিতে একটা তীক্ষ্ণতা, যেন সে আমার প্রতিটি নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের এই ভয় কি সত্যি, নাকি তারা কিছু লুকোচ্ছে? আমার মাথায় রোহানের সেই রহস্যময় হাসি ভেসে ওঠে। তার দিনলিপির পাতায় লেখা ছিল, “একের শেষে শবংশ, শত পাপে পুনর্জন্ম।” তার লাল চোখ, তার অমানুষিক হাসি, তার শিশুসুলভ চেহারা—সে কি এই খুনগুলোর মাস্টারমাইন্ড ছিল, নাকি সে নিজেও শিকার হয়েছে? আমি ভাবি, এই খুনগুলোর পিছনে কোনো ভৌতিক কারবার নেই—সবটাই মানুষের হাতে রচিত। কিন্তু কে এই খুনী? কেন সে এত নৃশংসভাবে একে একে সবাইকে শেষ করল? কীভাবে সে এত নিখুঁতভাবে এই খুনগুলো করল?


মিলির মৃত্যু ছিল এই ভয়ঙ্কর শৃঙ্খলার প্রথম ধাক্কা, যেন কেউ আমাদের সবাইকে একটা অন্ধকার খেলায় টেনে নিয়েছে। আমি এখনো সেই দৃশ্য ভুলতে পারি না—বাংলোর পুরনো কাঠের মেঝেতে তার দেহ পড়ে ছিল, যেন একটা ভাঙা পুতুল। তার শরীর ছুরি দিয়ে এত নৃশংসভাবে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল যে তার মাংস ছিঁড়ে ঝুলছিল, তার বুকের হাড়গুলো উন্মুক্ত, তার হৃৎপিণ্ড প্রায় বেরিয়ে এসেছিল। রক্তের একটা কালো, আঠালো পুকুর তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন মেঝেটা তার জীবনশক্তি গিলে নিচ্ছে। মাছিরা ভনভন করছিল, তাদের ডানার শব্দ আমার কানে বাজছিল, যেন তারা মিলির মৃত্যু উদযাপন করছে। তার চোখ খোলা ছিল, ফ্যাকাশে, ভয়ে আর যন্ত্রণায় ঢেকে গেছে, যেন সে তার শেষ মুহূর্তে খুনীর মুখ দেখেছিল। তার মুখে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিল, তার ঠোঁট কাঁপছিল, যেন সে আমাদের কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।

আমি মানিক মিয়ার দিকে তাকিয়েছিলাম, তার বাবা। তার মুখে একটা অদ্ভুত শূন্যতা, যেন সে তার মেয়ের মৃত্যুতে বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু তার চোখে একটা গভীর, অন্ধকার দৃষ্টি ছিল, যেন সে কিছু জানত, কিন্তু তার ঠোঁট সেলাই করা। তার হাতে সেই রাতে একটা পুরনো দড়ি ছিল, তার আঙুলে মাটির দাগ। সে ফিসফিস করে বলেছিল, “আমি আমার মেয়েকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম!” কিন্তু তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত কম্পন, যেন সে নিজেকেই বোঝাতে চাইছিল। আমার মনে প্রশ্ন জাগে—মানিক মিয়া কি তার মেয়ের মৃত্যুর পেছনে ছিল? সে কি কোনো পুরনো পাপের শাস্তি দিচ্ছিল, নাকি সে নিজেই শিকার?

কাজলের কথাও মাথায় আসে। সেই রাতে তার হাতে একটা ছুরি দেখা গিয়েছিল, তার ফলায় রক্তের দাগ। তার মুখে ছিল অবিশ্বাস, তার চোখে ভয়। সে চিৎকার করে বলেছিল, “আমি এটা করিনি! আমি মিলিকে মরতে দেখিনি!” কিন্তু তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত দুর্বলতা, যেন সে নিজেকে রক্ষা করতে পারছিল না। কাজল কি কোনো গোপন কারণে মিলিকে মেরেছিল? তারা কি একসঙ্গে কোনো রহস্যে জড়িয়ে ছিল? মিলির মৃত্যু কি এই খুনের শৃঙ্খলার শুরু ছিল, নাকি এর পেছনে কোনো পুরনো পাপের প্রতিশোধ? আমার মাথায় একটা চিন্তা—মিলির দেহে যে ছুরির আঘাত, তা কি কেবল একজনের হাতের কাজ, নাকি এর পেছনে একটা বড় পরিকল্পনা?

কাজলের মৃত্যু ছিল আরও ভয়ঙ্কর, যেন খুনী তার ক্রোধের পূর্ণ শক্তি প্রকাশ করেছিল। বাংলোর পিছনের ঘরে তার দেহ পড়ে ছিল, তার মাথার একপাশ হাতুড়ির আঘাতে চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তার মগজ মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছিল, রক্তের সঙ্গে মিশে একটা কালো, আঠালো পদার্থে পরিণত হয়েছিল। তার চোখে অবিশ্বাস আর যন্ত্রণার একটা অদ্ভুত মিশ্রণ, যেন সে তার খুনীর মুখ দেখে হতবাক হয়েছিল। তার মুখে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিল, তার ঠোঁট কাঁপছিল, যেন সে শেষ মুহূর্তে কিছু বলতে চেয়েছিল। হাতুখি ঘরের এক কোণে পড়ে ছিল, যেন খুনী এটিকে ফেলে পালিয়ে গেছে। হাতুখির হাতলে রক্তের দাগ, কিন্তু কোনো আঙুলের ছাপ নেই, যেন খুনী তার চিহ্ন মুছে দিয়েছে।

নববী কেন কাজলের শরীর পরীক্ষা করছিল? সে তার দেহের কাছে হাঁটু গেড়ে বসেছিল, তার হাত কাজলের গুদে ছিল, যেন সে কোনো সূত্র খুঁজছিল। তার মুখে একটা অদ্ভুত হাসি, যেন সে কিছু জানত, কিন্তু বলতে চায়নি। তার চোখে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, যেন সে কাজলের দেহে কোনো গোপন চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তুমি কী খুঁজছ?” কিন্তু সে শুধু মাথা নাড়িয়ে বলেছিল, “কিছু না।” তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত শান্তি, যেন সে কোনো রহস্যের চাবিকাঠি ধরেছিল। কাজলের খুন কি মিলির মৃত্যুর প্রতিশোধ ছিল? নাকি কাজল কিছু জানত, যার জন্য তাকে শেষ করা হলো? হাতুখি কোথায় ছিল? বাংলোর পুরনো টুলশেডে একটা হাতুখি ছিল, কিন্তু সেটা কে নিয়েছিল? আমার মনে একটা সন্দেহ—নববী কি কাজলের মৃত্যুর পেছনে জড়িত ছিল? তার হাসি, তার হাতের নড়াচড়া—সবকিছু যেন আমাকে সন্দেহের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল।

নববীর মৃত্যু ছিল আরও রহস্যময়। জঙ্গলের একটা ভাঙা গাছের পাশে তার দেহ পড়ে ছিল, তার মাথা একটা পাথরের আঘাতে ফেটে গিয়েছিল। পাথরটা তার পাশে পড়ে ছিল, রক্তে ভেজা, যেন সেটা জঙ্গলের নিজের অস্ত্র। তার চোখে বিস্ময়, তার মুখে যন্ত্রণা, যেন সে তার খুনীর আঘাত আশা করেনি। তার হাত মুঠো করে ধরা ছিল, যেন সে শেষ মুহূর্তে কিছু আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল। পাথরটা কোথা থেকে এল? জঙ্গলের মাটিতে এমন পাথর ছড়িয়ে ছিল, কিন্তু কে এটাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিল? হাবিব, তার স্বামী, কি তার অদ্ভুত আচরণের জন্য তাকে শেষ করল? হাবিবের চোখে সেই রাতে একটা অদ্ভুত ক্রোধ ছিল, যেন সে নববীর কোনো কাজে রাগান্বিত ছিল। হাবিব কি নববীকে চুপ করাতে চেয়েছিল, কারণ সে কিছু জানত? নাকি এটা অন্য কারো কাজ? আমার মনে একটা প্রশ্ন—নববী কি কাজলের দেহে কিছু খুঁজে পেয়েছিল, যার জন্য তাকে শেষ করা হলো?

মানিক মিয়ার মৃত্যু ছিল নৃশংস। তার গলা কাটা হয়েছিল, একটা ধারালো ছুরির এক আঘাতে। তার গলা থেকে রক্ত ছুটে বেরিয়েছিল, মেঝেতে একটা রক্তের নদী গড়িয়ে পড়েছিল। তার মুখে যন্ত্রণা আর অবিশ্বাস, তার চোখ ফোলা, যেন সে তার খুনীর মুখ দেখে হতবাক হয়েছিল। আমি, নাইমা, আর মানিক সেই রাতে গোপনে চোদাচুদি করেছিলাম। তার শরীর আমার শরীরে লেগেছিল, তার ঘামের গন্ধ আমার নাকে। আমরা অন্ধকার ঘরে ছিলাম, বাংলোর পুরনো দেয়াল আমাদের পাপ গিলে নিচ্ছিল। কেউ কি আমাদের দেখেছিল? নাইমার চোখে সেই রাতে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি ছিল, যেন সে কিছু লুকোচ্ছিল। তার হাত কাঁপছিল, তার ঠোঁটে একটা ক্ষীণ হাসি। মানিক কি মিলির মৃত্যুর কোনো রহস্য জানত? সে বলেছিল, “এই বাংলো আমাদের শেষ করবে,” কিন্তু তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত ভয়। আমার মনে একটা সন্দেহ—নাইমা কি মানিকের মৃত্যুর পেছনে জড়িত? তার হাসি, তার নীরবতা—সবকিছু যেন আমাকে সন্দেহের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। 

মিলির মা পানিতে বিষ মিশিয়ে মারা যান। তার দেহ বাংলোর রান্নাঘরে পড়ে ছিল, তার মুখে ফেনা, তার চোখ ফোলা, তার হাতে একটা খালি গ্লাস। তার শরীর কুঁকড়ে গিয়েছিল, যেন বিষ তার শরীরের প্রতিটি কোষকে ধ্বংস করেছিল। খুনী কি জানত তিনি প্রথমে পানি খাবেন? নাকি এটা সবাইকে মারার পরিকল্পনা ছিল? গ্লাসের পাশে একটা ছোট শিশি পড়ে ছিল, যাতে বিষের গন্ধ। মিলির মা কি তাদের নোংরা কাণ্ডের জন্য শাস্তি পেলেন? তার চোখে সেই রাতে একটা অদ্ভুত ভয় ছিল, যেন সে কিছু দেখেছিল। আমার মনে একটা প্রশ্ন—মিলির মা কি কোনো গোপন রহস্য জানত, যার জন্য তাকে চুপ করানো হলো?

মহিউদ্দিনের মৃত্যু ছিল নৃশংস। তার বুকে একটা লোহার রড গাঁথা ছিল, যেন কেউ তার হৃৎপিণ্ডকে লক্ষ্য করে আঘাত করেছিল। তার বুক ফুটো হয়ে গিয়েছিল, তার রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছিল, তার মুখে যন্ত্রণা। তার চোখ খোলা ছিল, যেন সে তার খুনীর মুখ দেখেছিল। রোহান, যে তাকে চুদেছিল, কি তাকে শেষ করল? রোহানের হাতে সেই রাতে একটা অদ্ভুত হাসি ছিল, যেন সে কিছু জানত। নাকি হাবিব, যে রোহানের সাথে ছিল, কোনো গোপন কারণে এটা করল? লোহার রডটা বাংলোর পুরনো গোডাউনে ছিল, কিন্তু কে এটাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিল? আমার মনে একটা সন্দেহ—রোহান কি মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পেছনে জড়িত? 

রোহানের মৃত্যু ছিল রহস্যময়। তার বুকে একটা ছুরি গাঁথা ছিল, তার রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছিল। তার চোখে অবিশ্বাস, তার মুখে যন্ত্রণা। হাবিব ফাঁসিতে ঝুলছিল, তার গলায় একটা দড়ি, তার চোখে পাপবোধ। হাবিব কি রোহানকে খুন করে পাপবোধে ফাঁসি নিল? নাকি খুনী তাদের দুজনকেই শেষ করল? রোহানের দিনলিপিতে লেখা ছিল, “৪০ বছরের পাপ, শত পুনর্জন্মে ধোয়া যায় না।” তার শিশুসুলভ চেহারা, তার লাল চোখ—সে কি এই খুনগুলোর চাবিকাঠি ছিল? সে কেন এমন অদ্ভুতভাবে লুকিয়ে ছিল? আমার মনে একটা প্রশ্ন—রোহান কি এই খুনগুলোর মাস্টারমাইন্ড ছিল, নাকি সে নিজেই শিকার?

শরিফার গলায় দড়ি ছিল, তার চোখ ফোলা, তার মুখে রক্ত। তার শরীর বাংলোর ঘরে ঝুলছিল, যেন কেউ তাকে শাস্তি দিয়েছে। লতার বুকে ছুরি, তার রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছিল, তার হাতে ছিটকে পড়া ছুরি। সুমনের মাথা ভাঙা, তার মগজ মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, কিন্তু খুনী কীভাবে তাদের একে একে শেষ করল? রিনার চোখে সেই রাতে একটা অদ্ভুত শান্তি ছিল, যেন সে কিছু জানত। নাইমার হাত কাঁপছিল, তার ঠোঁটে একটা ক্ষীণ হাসি। আমার মনে একটা সন্দেহ—রিনা কি কিছু লুকোচ্ছে? নাইমা কি কিছু জানে? নাকি আমি নিজেই কিছু মিস করছি?

জঙ্গলে দুই দিন ঘুরেও আমি কেন রাস্তা খুঁজে পেলাম না? গাছের ডালপালা আমাকে আঁকড়ে ধরছিল, তাদের ছায়া আমার পিছু নিয়েছিল। আমার পা কাঁটায় বিঁধছিল, আমার শরীরে ক্ষতের পর ক্ষত। কিন্তু হঠাৎ করেই কালু কোথা থেকে উদয় হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল। তার বিশাল দেহ জঙ্গলের অন্ধকারে ঝিলিক দিচ্ছিল, তার হাতে সেই মরচে ধরা ছুরি। সে কীভাবে রাস্তা খুঁজে পেল? তার চোখে একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস, যেন সে জঙ্গলের প্রতিটি কোণ চেনে। আমার মনে একটা সন্দেহ—কালু কি এই বাংলোর অংশ? সে কি এই খুনের পিছনে জড়িত?

কালুর পুরনো জিপের গর্জন থেমে গেছে, আর আমরা এখন একটা নীরব, নির্জন জায়গায় পৌঁছে গেছি, যেখানে জঙ্গল যেন তার অন্ধকার পঞ্জা গুটিয়ে নিয়েছে। চারপাশে শুধু গভীর নিস্তব্ধতা, শুধুমাত্র দূরে কোথাও একটা অজানা পাখির কর্কশ ডাক ভেসে আসছে, যেন জঙ্গল আমাদের উপর নজর রাখছে। আকাশে কালো মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকিয়ে আছে, শুধুমাত্র তার ক্ষীণ আলো মাটিতে ছায়ার বিকৃত রূপ ফেলছে। আমরা তিনজন—আমি, রিনা, আর নাইমা—একটা পুরনো, জীর্ণ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছি। তাঁবুটার ক্যানভাস ছেঁড়া, কোণে কোণে মাকড়সার জাল ঝুলছে, আর ভেতরে একটা স্যাঁতস্যাঁতে, পচা গন্ধ, যেন এটা জঙ্গলের পচনশীল হৃৎপিণ্ডের অংশ। মাটিতে ছড়ানো কিছু শুকনো পাতা আমাদের পায়ের তলায় মচমচ করছে, আর তাঁবুর ভেতরের ঠান্ডা আমাদের ত্বকে কাঁটা তুলছে। আমাদের পোশাক ছেঁড়া, আমাদের ত্বকে জঙ্গলের কাঁটা, মাটির দাগ, আর ঘামের আঠালো স্তর। আমাদের শরীর ক্লান্ত, হাড়ে হাড়ে ব্যথা, কিন্তু আমাদের মন এখনো ভয় আর সন্দেহের জালে জড়ানো। তবুও, আমাদের ভেতরে একটা অদ্ভুত, নিষিদ্ধ কামনার আগুন জ্বলছে, যেন এই অন্ধকার আমাদের পাপকে আরও উস্কে দিচ্ছে, আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে।

তাঁবুর মুখে কালু দাঁড়িয়ে, তার বিশাল দেহ যেন একটা কালো পাহাড়, জঙ্গলের অন্ধকারে তার ছায়া আরও ভয়ঙ্কর। তার চোখ আমাদের উপর স্থির, কালো মণিতে একটা অদ্ভুত ঝিলিক, যেন সে আমাদের প্রতিটি নড়াচড়া, প্রতিটি শ্বাস পড়তে পারছে। তার পেশীবহুল বাহুতে জঙ্গলের মাটির দাগ, তার ত্বকে ঘামের চিকচিকে আভা। তার হাতে সেই মরচে ধরা ছুরিটা এখনো ঝুলছে, যেন সে যেকোনো মুহূর্তে এটাকে আমাদের দিকে তাক করতে পারে। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, আমার হৃৎপিণ্ড বুকের খাঁচায় ধুকপুক করছে, কিন্তু আমার ভেতরে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা, যেন আমি নিজেকেই চিনতে পারছি না। আমি তার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলি, “কালু, তুমি কি আমাদের খুদা মেটাতে পারবে?” আমার কণ্ঠে একটা নিষিদ্ধ কামনা, যেন আমি আমার নিজের পাপের গভীরে ডুব দিতে চাই। রিনা আর নাইমার শ্বাস ভারী হয়ে ওঠে, তাদের চোখ কালুর দিকে তাকিয়ে, তাদের ঠোঁট কাঁপছে, যেন তারাও এই পাপের অংশ হতে প্রস্তুত।

কালু একটা নোংরা হাসি দেয়, তার দাঁতে জঙ্গলের অন্ধকার ঝিলিক দেয়। তার হাসিতে একটা কঠোর্তা, একটা প্রুষীয় ক্ষুধা, যেন সে আমাদের কামনাকে তার নিজের করে নিতে চায়। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “পারব না কেন? অবশ্যই পারবো।” তার কথায় একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস, যেন সে জানে আমরা তার হাতের মুঠোয়। আমার শরীরে একটা ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায়, আমার ত্বকে কাঁটা ফুটে, আমার হৃৎপিণ্ড যেন গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। আমার মনে একটা ভয়ঙ্কর প্রশ্ন—এই কামনার আগুন কি আমাদের শেষ করে দেবে? আমরা কি এই জঙ্গলের অভিশাপের আরেকটি শিকার হতে চলেছি?
কালু তার হাসি থামায় না। সে ধীরে ধীরে তাঁবুর ভেতরে পা রাখে, তার পায়ের শব্দ মাটিতে শুকনো পাতা মচমচ করে। তার বিশাল দেহ তাঁবুর ছোট্ট জায়গাটাকে আরও সংকুচিত করে দেয়, তার উপস্থিতি যেন আমাদের শ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে। সে তার ছেঁড়া, ময়লা পোশাকের দিকে তাকায়, তার আঙুল তার কাপড়ের কিনারায় ঘষে। তারপর, একটা শয়তানি হাসি দিয়ে, সে তার শরীরের সব কাপড় খুলে ফেলে। তার কালো, পেশীবহুল শরীর তাঁবুর ক্ষীণ আলোয় ঝিলিক দেয়, যেন সে কোনো প্রাচীন দেবতার মূর্তি, অথবা জঙ্গলের নিজস্ব অন্ধকারের অবতার। তার ত্বকে জঙ্গলের কাঁটা আর মাটির দাগ, তার পেশীগুলো প্রতিটি নড়াচড়ায় কাঁপছে, তার বুকে ঘামের ফোঁটা ঝিলিক দিচ্ছে। আমরা তিনজন তার দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের চোখে একটা নিষিদ্ধ কামনা, আমাদের শ্বাস ভারী, আমাদের ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ।

আমাদের দৃষ্টি কালুর শরীরের নিচে নেমে যায়, যেখানে তার বিশাল, মোটা, লম্বা ধোন ঝুলছে, যেন একটা অস্ত্র, একটা হুমকি। এটা অমানুষিক, তার শিরাগুলো ফুলে উঠেছে, তার গোড়ায় মোটা মোটা বিচি দুটি থলেতে ঝুলছে, যেন তার ক্ষুধার প্রতীক। তাঁবুর ক্ষীণ আলোয় এটা আরও ভয়ঙ্কর দেখায়, যেন এটা আমাদের গ্রাস করতে প্রস্তুত। আমাদের চোখ কামনায় চিকচিক করছে, আমাদের শরীরে একটা অদ্ভুত তাপ ছড়িয়ে পড়ছে, যেন আমরা আমাদের ভয়, আমাদের সন্দেহ ভুলে গেছি। রিনার হাত কাঁপছে, তার আঙুল তার ঠোঁটে ঘষছে, তার চোখ কালুর শরীরে স্থির। নাইমার শ্বাস ভারী, তার বুক ওঠানামা করছে, তার চোখে একটা অদ্ভুত ক্ষুধা, যেন সে এই পাপের গভীরে ডুব দিতে চায়। আমার নিজের শরীরে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা, আমার হৃৎপিণ্ড যেন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি জানি এটা ভুল, এটা বিপজ্জনক, কিন্তু আমরা তিনজন যেন জঙ্গলের এই অন্ধকারে আমাদের পাপের কাছে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত।

কালু আরও একধাপ এগিয়ে আসে, তার বিশাল শরীর আমাদের উপর ছায়া ফেলছে। তার হাসি এখন আরও গভীর, তার চোখে একটা শিকারীর দৃষ্টি। সে ফিসফিস করে বলে, “তোরা তিনজনই আমার কাছে এসেছিস। এখন আমি তোদের খুদা মেটাবো।” তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত কঠোরতা, যেন সে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আমার শরীর কেঁপে ওঠে, আমার মনে একটা ভয়ঙ্কর চিন্তা—এই কামনার আগুন কি আমাদের পুড়িয়ে ছাই করে দেবে? কালু কি আমাদের উদ্ধারকারী, নাকি সে এই জঙ্গলের অভিশাপের আরেকটি মুখ? আমরা কি এই পাপের ফাঁদ থেকে বের হতে পারব, নাকি এটা আমাদের শেষ?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কালো কুয়াশার ছায়া - by Abirkkz - 11-06-2025, 11:36 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)