Thread Rating:
  • 50 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প
এবার তমাল নিজেও চমকে গেলো এই অকল্পনীয় খবরে। ঘরে এখন একটা পিন পড়লেও সেটা বজ্রপাতের মতো শোনাবে এমন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না বিস্ময়ে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছেন মধুছন্দা দেবী নিজে। তার চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে। এ খবর যে তার কাছেও নতুন সেটা তার ভেঙে পড়া চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতো দিন ধরে এতো প্ল্যানিং, এতো নৃশংসতা, এতো নাটকীয়তা সব মাঠে মারা যেতে বসেছে। 


কোনো রকমে ঢোক গিলে সে ভাঙা গলায় বললো, কি... কি বলছো তুমি মা? তুমি নিজেই তো বলেছিলে আমি তোমার আর বাবার মেয়ে? সুলতা দেবী মাথা উঁচু করে বললেন, হ্যাঁ বলেছিলাম। বলেছিলাম কারণ বড় বাবু আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন এ কথা আমি যেন কখনো প্রকাশ না করি। তিনি চেয়েছিলেন যেন তুমিও এই পরিবারের মেয়ে হয়ে ওঠো। কিন্তু তুমি অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করেছো। বাড়ি থেকে পালিয়ে বড় বাবুর অসম্মান করেছো, মেনে নিয়েছি। ফিরে এসে সম্পত্তি দখল করেছো, মেনে নিয়েছি, কারণ ভেবেছিলাম তুমি ছোটবাবুর সন্তানদের ঠকাবে না। কিন্তু এ কি শুনছি আমি? তুমি খুনী! তুমি ছোট বাবুকে খুন করেছো? নিজের স্বামীকে খুন করেছো? হিসাব বাবুর সাথে অবিচার করেছো? রাজীবকে খুন করতে চেয়েছিলে? এতো নীচ তুমি? আমরা হো উপজাতিরা খুন করি শুধু নিজেদের আদর্শের জন্য। সাহেবদের সাথে লড়েছি, তাদের মেরেছি দেশের জন্য! আমরা নিজেদের গোত্র বাঁচাতে খুন করি, কিন্তু সম্পত্তির লোভে খুন করি না। তুমি হো গোত্রকে অপমানিত করেছো। আমার কাছে দেবতার তুল্য বড় বাবুর পরিবারের ক্ষতি করেছো, তাই আমাকে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে হলো। জানি বড় বাবু স্বর্গ থেকে আমাকে এজন্য ক্ষমা করবেন।

মধুছন্দা দেবীকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো রাজকীয় মহলের ভগ্নস্তূপ। কোন রকমে মুখ তুলে বললেন, তাহলে কে আমার বাবা! বলো মা, অন্তত এটুকু জেনে যাই আমি! কি আমার জন্ম পরিচয়?

সুলতা দেবী বললেন, বড় বাবু আর হিসাব বাবু তখন ব্যবসার কাজে হরিপুরা গ্রামে গেলেন। আমার বাবার সাথে পরিচয় হয় তাদের এক অভ্র খনিতে। থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না বলে আমাদের বাড়িতেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। খনিটা ছিলো সাহেবদের। সেই খনির ম্যানেজার ব্লেক সাহেবের বাড়িতে আমি পরিচারিকার কাজ করতাম। বয়স অল্প ছিলো, সাহেব বাড়ির জাঁকজমক দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। সাহেবের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এদিকে বড় বাবুরও আমাকে ভালো লেগে যায়। কিন্তু তখনি আমি বুঝতে পারি আমার পেটে তুমি এসেছো। 

আমি জানতাম আমাদের গোত্র এটা কিছুতেই মেনে নেবে না। সিংবোঙ্গার কাছে বলি দেবে আমাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বড় বাবুকে সব খুলে বলি। তিনি আমাকে নিয়ে পালিয়ে চলে আসেন। অন্যের পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। নিজের স্ত্রীকে বললেন আমার পেটে তার সন্তান। বড় গিন্নীও আমাকে মেনে নিলেন। বড় বাবু ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে কোনো দিন আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে কেউ তাড়িয়ে না দেয়,এমন কি নিজের ছেলেকেও বলে গেলেন সে কথা। এমন একটা পরিবারের সন্তান সন্ততির এতো বড় বিপদে চুপ করে থাকলে সিংবোঙ্গা আমাকে কোনোদিন পৃথিবী প্রদক্ষিনের অনুমতি দেবেন না, অন্ধকূপে বন্দী হয়ে থাকবো মৃত্যুর পরে।

দুহাতে মুখ ঢেকে তখন মধুছন্দা দেবী ঝরঝর করে কেঁদে চলেছেন। বন্দনা তার মাথায় হাত রেখে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে নিজের জন্ম পরিচয় পেয়ে আবেগে ভেসে গেছিলো, এখন তার পৃথিবীটা শূন্য মনে হচ্ছে। ভাবছে এতো সব কিছু না জানাই তো ভালো ছিলো। সত্য যদি এতো যন্ত্রণা দেয়, তাহলে মিথ্যার কোলেই তো আরামে কাটিয়ে দেওয়া ভালো ছিলো!

তমাল ইশারা করতেই ইনস্পেকটর ঘোষের আদেশে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কনস্টেবল এসে ঘনশ্যাম আর মধুছন্দা দেবীকে নিয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সুলতা দেবী উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। ঘরের অন্য সবাই চুপচাপ বসে রইলো। 

মিনিট পনেরো পরে সবাই একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে তমাল বললো, আমি রাহুলের কাছে একটা অনুমতি চাই, কারণ এই মুখার্জি বাড়ির কর্তা এখন সে। সবাই তমালের দিকে তাকালে সে বললো, আমি বন্দনাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাই। তার লেখাপড়া এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর এই এক লাখ টাকার চেকটা আমি সুরেশ বাবুকে দিতে চাই। তোমার আপত্তি নেই তো রাহুল?

রাহুল উঠে এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো তমালকে। তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বেয়ে নামছে। ভেজা গলায় সে বললো, না তমাল, বন্দনা কোথাও যাবে না। সে আমাদের ছোট বোন হয়ে এই বাড়িতেই থাকবে। তার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের। সুরেশ বাবুও আজ থেকে আমৃত্যু এই বাড়িতে থাকবেন। তার সেই পুরানো নিজের ঘরেই। রামহরি কাকারও যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে খেয়ালও আমি রাখবো। তুমি মুখার্জি পরিবারের জন্য যা করলে, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, তোমার জন্য মুখার্জি বাড়ির দরজা সারাজীবনের জন্য খোলা রইলো তমাল। পিসি যে চেকটা তোমাকে দিয়েছে সেটা তোমারই রইলো। এছাড়াও আমি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কিছু দিতে চাই, প্লিজ না কোরোনা তমাল।

সেদিন রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। ডাইনিং টেবিলে তমালের এতো।প্রশংসা চলছে যে সে রীতিমতো অস্বস্তি বোধ করছে। তাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য গার্গীর কদরও বেড়ে গেছে অনেক। ডিনার শেষ করে রাহুল নিজের ঘরে চলে গেলে গার্গী বললো, আচ্ছা তমালদা, একটা প্রশ্ন আমার মনে আসছে বারবার, একটু ক্লিয়ার করে দাও। তমাল বললো, কি প্রশ্ন? গার্গী জিজ্ঞেস করলো সেই রাতে পিসি রাজীবকে কল করেছিলো কেন, সে তো বুঝলাম, কিন্তু অদিতি কেন তাকে কল করেছিলো?

তমাল তাকিয়ে দেখলো, অদিতির গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে গার্গীর প্রশ্ন শুনে। সে বললো, এই উত্তর আমার চেয়ে অদিতির মুখের পরে শুনে নিলে ভালো হয়। আমি অনুমান করতে পারি, কিন্তু অদিতি সত্যিটাই বলবে। বেচারিকে আর লজ্জা দিয়ে কি লাভ? মৌপিয়া হৈ হৈ করে উঠলো। বললো, না তোমার মুখেই শুনতে চাই। মিলিয়ে দেখতে চাই গোয়েন্দা তমাল ঠিকঠাক অনুমান করতে পারে কি না?

তমাল বললো, বেশ বলছি। অদিতি আমাকে মিথ্যা বলেছিলো যে প্রায় সাত মাস রাজীবের সাথে তার কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। আমার ধারনা ওই ঘটনার তিন থেকে চার সপ্তাহের আগেই অন্তত একবার তাদের শারীরিক মিলন ঘটে, এবং সেই মাসে অদিতি পিরিয়ড মিস করে। সে ভয় পায়, ভাবে প্রেগন্যান্ট হয়েছে সে। সে রাতে সম্ভবত এই কথা জানাতেই সে কল করে ডাকে রাজীবকে। অদিতি জানতো না তখন রাজীব মধুছন্দা দেবীর ঘরে আছে। রাজীব তার ঘর থেকে অদিতির ঘরে যায়, এবং তার পরে কি হয় তা তো তোমরা জানোই। কিন্তু অদিতির ঘরের ভিতরে সেদিন কি হয়েছিলো, সেটা আমি সত্যিই জানি না। এই কথা বলার সাথে সাথে অদিতির এক জোরালো চিমটিতে আউচ্‌ বলে চেঁচিয়ে উঠলো তমাল।


গার্গী গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বললো, অদিতি প্রেগন্যান্ট! তমাল হাসতে হাসতে বললো, না কিছুই হয়নি তার। আমি অদিতির আলমারিতে জামা কাপড়ের পিছনে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কার্ডটা দেখেছি। নেগেটিভ! অবশ্য আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বন্দনাও সেটা দেখেছে, তাই না? বন্দনা লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলো যেনো। মৌপিয়া অদিতিকে জিজ্ঞেস করলো, কি রে, তমাল ঠিক বলছে? মুচকি হেসে মাথা নাড়লো অদিতি।

তারপর একটু গম্ভীর হয়ে তমাল বললো, এবার একটা জরুরী কথা বলি। সকালে শালিনী কল করেছিলো। কলকাতায় একটা কেসে আমাকে দরকার। আমাকে কালই ফিরতে হবে। গার্গী কি আমার সাথেই ফিরবে? তমালের কথা শেষ হতেই সবাই মিলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে লাগলো। অন্তত আরো দিন তিনেক থেকে যেতে হবে সবার দাবী। কিন্তু তমাল তাদের বোঝালো সেটা সম্ভব নয়। পরে আবার আসবে তমাল। 

তখন গার্গী একটা প্রস্তাব দিলো। বললো, একটা কাজ করা যেতে পারে। কথা ছিলো তমালদা এখানের কাজ মিটিয়ে গরলমুরিতে কিছুদিন থাকবে কলকাতায় ফেরার আগে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব হচ্ছে না, ওকে কলকাতায় ফিরতেই হবে। তাই আমি ভাবছি কাল আমি গাড়ি নিয়েই ওকে কলকাতায় ছাড়তে যাবো। কয়েকদিন কলকাতায় কাটিয়ে ওকে আবার গরলমুরিতে নিয়ে আসবো। আর তোমরা এখান থেকে গরলমুরিতে আসবে। আসার সময় কুহেলি কে তুলে নেবে। জমিয়ে মজা করা যাবে, কি বলো?

সবাই রাজি হলো প্রস্তাবে। কিন্তু মৌপিয়া বললো তুমি খুব চালাক গার্গী। আমাদের কাছ থেকে তমালকে সরিয়ে নিয়ে কলকাতায় একা ভোগ করতে চাও! সেটা হতে পারে যদি আজ রাতটা আমরা তমালের সাথে কাটাই এক ঘরে! তমাল বললো আমি নেই, চার চারটে জংলী বিল্লিকে আমি একা সামলাতে পারবো না। অসম্ভব। অদিতি বললো, তোমাকে সামলাতে কে বলেছে? আজ আমরা বনভোজন করবো একটা শিকারে। গার্লস, গেট রেডি ফর দ্যা লাস্ট সাপার! সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো... ইয়াহুউউউ!

এর পরে কি হলো সেটা কেউ জিজ্ঞেস করোনা, কারণ তমাল আর উত্তর দেবার মতো অবস্থায় নেই। আপাতত কিছুদিন সে সম্পূর্ণ বিশ্রামে আছে!

                         (সমাপ্ত)

বন্ধুরা কেমন লাগলো গল্প জানাতে ভুলবেন না। আপাতত কিছুদিন বিশ্রামে যাচ্ছি। বিশ্রাম কতো লম্বা হবে সেটা নির্ভর করবে আপনাদের ফিডব্যাক আর মেইলের উপর। যদি তমালের অনুপস্থিতি আপনাদের খারাপ লাগে তাহলে হয়তো জলদি ফিরবো। নাহলে লম্বা বিশ্রাম বা অবসর নেবো। তবে পাঠিকাদের স্পেশাল আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। তারা যোগাযোগ করলে দুজনে মিলে নতুন নতুন গল্প তৈরি করতে পারি গোপনে, কি বলেন? আমার মেইল আইডি জানা আছে তো? ভালো থাকবেন সবাই... সাময়িক বিদায় বন্ধুরা!
Tiger

                kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 23-05-2025, 08:19 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)