Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
(৫১)

ঈশিতা চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই সমুদ্রকে নিয়ে জয়তী এ বাড়িতে এসে খবরটা শুনল। আপাতত কয়েক দিন ও এবাড়িতেই থাকবে। সল্টলেকের বাড়ি বিক্রি না করে মোটা টাকায় একটা ব্যাঙ্ককে ভাড়া দেবে বলে ঠিক করেছে। আর কয়েক দিন পরে বৈশাখ মাস পড়লে এ নিয়ে কথা ফাইনাল হবে। এ সব নিয়ে আজ কথা বলবে সবাই মিলে বলে ঠিক করেই এসেছিল, কিন্তু ঈশিতা নেই দেখে খারাপ লাগল জয়তীর। তার উপর যাওয়ার আগে ওকেও তো কিছু বলেনি! ও কিছু না বলে চুপ করে রইল। একফাঁকে চোখ পড়ল, সৌমাভর ছবিতে মালা দেওয়া। কী মনে হতে সৌমাভর শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখল, সেখানেও সৌমাভর ছবিতে মালা দেওয়া। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল, সৌমাভর বিছানার চাদরটা শুধু যত্ন করে খাটের মাথার দিকে রাখা। ওর মনে পড়ল, ঈশিতা আসার পর থেকে যখনই এসেছে, দেখেছে, একটা চাদর বিছানায় পাতা, অন্যটা পাশে ভাঁজ করে রাখা। যাতে রাতে গায়ে দিয়ে শুতে পারে। আজ একটা চাদর পরিপাটি করে রাখা, অন্যটা কোথায়? দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রীতিমতো ডেটল দিয়ে কেচে ইস্ত্রি করে রাখা চাদরটা। মনের ভিতরটা কী একটা কারণে যেন খচখচ করল জয়তীর। ফোন করে দেখল, ঈশিতার ফোন বন্ধ। ওদিকে সমুদ্র দুই দাদাদিদির সঙ্গে মেতে গেছে। ঈশিতা না থাকায় রান্না করা থেকে শুরু করে সব কাজ পড়েছে সুভদ্রার ঘাড়ে। সেটা দেখে জয়তীও ওর সঙ্গে হাত মেলাল। পরের দিন দোল আনন্দেই কেটে গেল সবার। তার পরের দিনও। সেদিন আবার খবরের কাগজ বন্ধ। কাগজ না পড়লে বাঙালির দিন ভাল করে শুরু হয় না। ওরা কেউই টিভি দেখতে পছন্দ করে না। তাই হাবিজাবি গল্প করে কাটাল সারাদিন। রান্নাও করল দু’জনে মিলে। অনেক কথা হল সৌমাভকে নিয়ে, এমনকি ঈশিতাকে নিয়েও। জয়তী দেখল, ঈশিতাকে নিয়ে আলোচনার সময় ছেলেমেয়ে চুপ করে আছে। এবার ওর একটু রাগই হল। তিন মাস হয়ে গেছে। সৌমাভর মৃত্যুর দিন থেকে ঈশিতার ছেলেমেয়েকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা ও দেখেছে। ছেলেমেয়ের কাছেও রাখঢাক না করে নিজেকে নোংরা মেয়ে বলে ওর বারবার ক্ষমা চাওয়া, কান্না— সব ওর চোখের সামনেই হয়েছে। তার পরেও একছাদের নীচে এতদিন থেকে কুট্টিমুট্টি একবারও মা বলে ডাকেনি! সে দিন রাতে ও শুতে গেল, মনের মধ্যে একটা অশান্তি আর খারাপ লাগা নিয়েই।

পরের দিন সকালে কাগজ আসার পরেই ও হুমড়ি খেয়ে পড়ল। চা খেতে খেতে কাগজ পড়তে পড়তে একটা ছোট্ট খবরে চোখ আটকে গেল, ‘দোলের আগের দিন সন্ধ্যায় কলকাতা চক্ররেলের লাইনে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির দেহ মিলেছে। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, প্রচুর মদ্যপান করে ছিলেন ওই ব্যক্তি। মৃতের নাম রাহুল দুবে, বাড়ি কলকাতায়। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তিনি কি কারণে চক্ররেলে চড়েছিলেন, তা তাঁদের অজানা। মৃতের স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, প্রচুর মদ খেয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বাইরে ঝুঁকতে গিয়েই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান তিনি। রেল পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।’

খবরটা পড়ে স্নায়ু টানটান হয়ে উঠল জয়তীর। এ কি সেই রাহুল দুবে? ও কাগজটা ভাঁজ করে রেখে চুপ করে ভাবতে বসল। কাউকে কিছু বলল না, শুধু ঈশিতার নম্বরে একটা ফোন করল এবং অবাক হয়ে দেখল, ফোনটা এখনও বন্ধ! ওর এবার অস্থির লাগল। সুভদ্রাকে ডেকে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘‘ঈশিতা পুরীতে গেছে ক’দিনের জন্য? তোকে ফোন করেছিল এর মধ্যে?’’ সুভদ্রা মাথা নেড়ে জানাল, কয়েকদিনের জন্য পুরী যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল, কবে ফিরবে বলেনি। সেদিনটা প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়েই কাটাল জয়তী। কারও সঙ্গে বেশি কথা বলল না। নিজের মতো চুপ করে আকাশপাতাল ভাবতে লাগল।

পরদিন সকালে ওর কয়েকটা কাজ ছিল। সুভদ্রারও। সকাল সকাল দু’জনেই বেরিয়ে গেল। ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই রইল। রাতে ফিরে বিশেষ কথা হল না।  বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে দিনের কাগজটা চোখ বোলাতে লাগল। লাগল। অন্য একটা পাতায় গিয়ে একটা খবর চোখে পড়তেই মাথা ঘুরে জ্ঞান হারাল জয়তী। ওর পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে সুভদ্রা, কুট্টিমুট্টি, সমুদ্র সবাই মিলে চোখেমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাল। ওর উঠে বসে মুখচোখ মুছে সুভদ্রাকে খবরটা পড়াল, ‘‘দোলের দিন রাতে শান্তিনিকেতনের একটা হোটেল থেকে ঈশিতা নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। মহিলার বয়স আনুমানিক ৩৬-৩৭। পরণে লাল রঙের একটা পুরনো বেনারসী শাড়ি ছিল। হোটেলে নাম লেখানোর সময় তিনি কোনও পদবী ব্যবহার করেননি। ফলে মহিলার পুরো পরিচয় পেতে পুলিশের সমস্যা হচ্ছে। হোটেলে তাঁর যে ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, সেটা তাঁর ঘরে বা ব্যাগে মেলেনি। নম্বরটিও বন্ধ। বিকেলে হোটেল ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যে পর্যন্ত না বেরনোয় হোটেল থেকে খবর দেওয়া হয় থানায়। তারাই দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে। প্রচুর পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা। মহিলার মাথার কাছ থেকে দুটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি সুইসাইড নোট। মহিলা জানিয়েছেন, একাকীত্বের অবসাদ থেকেই এই পথ নিয়েছেন তিনি। চিঠিতে কারও নামে কোনও অভিযোগ করেননি। আর একটি নোট স্থানীয় পুলিশকে লেখা। চিঠিতে তিনি জানিয়ে গেছেন, তাঁর কোনও আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। ফলে দেহটি যেন পুলিশই দাহ করে। দাহ বাবদ বেশ কিছু টাকাও চিঠির সঙ্গে ক্লিপ দিয়ে আটকানো ছিল। একই সঙ্গে পুলিশকে অনুরোধ করা ছিল, তাঁর খোঁজে আসা কাউকে যেন হেনস্থা না করা হয়। পরের দিন ভোরে  দেহটি দাহ করা হয়েছে। পুলিশ তাঁর পরিচিত বা আত্মীয়দের খোজ পেতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেছে।’’

খবরটা পড়ে সুভদ্রা হাইমাউ করে কেঁদে উঠতে যেতেই জয়তী ওর মুখ চেপে ধরল। তার পরে মাথা চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘‘সৌমদার বাড়ি থেকে ফেরার কয়েক দিন পর থেকে ওর হাবভাব ভাল লাগেনি। যত দিন যাচ্ছিল, নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। কেন নিচ্ছিল, তুইও জানিস। যাক, এখন আর ও সব ভেবে লাভ নেই। তবে ও যে এটা করবে, ভাবিনি। অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেল মেয়েটা। সেদিন সৌমদার দুটো ছবিতে মালা আর বিছানার চাদর ওই ভাবে দেখে সন্দেহ হলেও বলতে পারছিলাম না। কিন্তু ক্রমাগত মনটা কুডাক গাইছিল রে।’’ তার পরেই নিজেকে সামলে সুভদ্রাকে বলল, ‘‘সমুদ্রকে ওর এক বন্ধুর বাড়িতে দিন কয়েকের জন্য রেখে চল আমরা একটু পরেই বেরিয়ে যাই। ছেলেমেয়েকে এখনই কিছু বলিস না। ওখানে সব দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তুই চেনাশোনা একটা এজেন্সি থেকে গাড়ি বুক কর। দরদাম বেশি করিস না। আর টাকাপয়সা যা আছে, সঙ্গে নিয়ে নে।’’ বলে ঘরে ঢুকে সমুদ্রকে বলল, ‘‘তুই কটা দিন জিশানদের বাড়ি থাক। আমি আন্টির সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।’’ বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে থাকবে শুনেই সমুদ্র নেচে উঠল। জয়তী ওকে রাখতে গেল। সুভদ্রা হতভম্বের মতো বসে রইল বারান্দায়। পিসির ওই ভাবে চলে যাওয়া আর মামনের থমথমে মুখচোখ দেখে কুট্টিমুট্টি ঘাবড়ে গেলেও কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেল না।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 21-05-2025, 03:40 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)