20-05-2025, 02:49 AM
(08-05-2025, 03:53 AM)Choton Wrote: (৩৬)
তার দীপের আলো কে নিভালো
ঈশিতার সারা শরীরে কাঁটা তুলে ওপাশ থেকে সেই বরাবরের শান্ত গলা ভেসে এল টেলিফোনের রিসিভারে। ঈশিতা তখন রিসিভারে কান ঠেসে ধরেছে, যাতে কথাগুলো সব শুনতে পায়। ও প্রান্ত থেকে তখন সৌমাভ বলছে, ‘‘সরি গো। ঈশিতা রায়চৌধুরীর কাছে আমি আর ফিরতে পারব না। আমি তো ওর নকল বর, ওর আসল স্বামী কে, সেটা আমি সেদিন নিজে জেনেছি, শুনেছি। তবে তুমি বললে, ছেলেমেয়েকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেব। আমার পক্ষে ওকে আর স্পর্শ করা সম্ভব নয় জয়তী। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস, যা ভেঙে গেলে কোনও দিন জোড়া লাগে না। কাঁচের থেকেও পলকা জিনিস হল বিশ্বাস। তা ভাঙলে হাজার চেষ্টাতেও জোড়া লাগে না। কথাটা ওকে অনেকবার বলেছি। জীবনে অনেক ধাক্কা, কষ্ট, অপমান সহ্য করে এখানে এসেছি তো, আমি পারব না গো, সরি। তা ছাড়া গত বছর জানুয়ারিতে কলকাতায় ফিরে শেষ দিন অবধি ওর উপেক্ষা, অবহেলা, ওর বাড়ির লোকের ব্যবহার সব যদি ভুলেও যাই তোমার কথা মেনে, তা হলেও বলো তো, ওর পাশে আমি শোব কী করে? ওর সেদিনের প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ আজও আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে। এমন নয় যে ও সেদিন রে*ড হয়েছিল। তা হলে ওকে আমি সবদিক থেকে রক্ষা করতাম, পাশে দাঁড়াতাম। ওর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যেতাম। কিন্তু তা তো হয়নি। সেদিন ও নিজের ইচ্ছেয় নিজের দেহ তুলে দিয়েছিল ওর প্রেমিকের কাছে। সে সব আওয়াজ, কথাবার্তা অনেকটা আমি নিজের কানে শুনেছি। তার পরে কিসের জোরে কোন ভরসায় ওকে আর বিশ্বাস করব, বলো? ও যে আবার সেই একই কাজ করবে না, সেটা কীকরে মেনে নেব? আমি অফিসে চলে গেলে ও যে আবার অন্য কারও নীচে শোবে না, এই রাহুলের সঙ্গেই লুকিয়ে লুকিয়ে লীলাখেলা চালাবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? এখন কাঁদছে, সেদিন ভুলে যেতে কতক্ষণ? আন্দামানের ভালবাসার নাটকটা ভালই করেছিল, কিন্তু সেই নাটকটাও ও কলকাতায় নামার আগেই বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি বোকা বলে। ওর সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবন মাত্র এক মাস কয়েক দিন। সেটা ওর কাছে পুতুলখেলা হতে পারে, আমার কাছে দাম্পত্য ছিল। কাগজে-কলমে যাই বলা হোক, দিন-তিথি যা-ই হোক, আমার দাম্পত্য জীবন মাত্র একমাস এবং কয়েকটা দিন মাত্র। ভাবতে পারো? কলকাতায় পা রেখেই ও নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছিল। তখন দাম্পত্য বলতে যা বোঝায়, তা অন্তত ওর মধ্যে আর ছিল না। রাতে পাশে শুলেও কতদিন ক্লান্তির নাম করে আমার পাশ থেকে সরে গেছে। এবং সেটা ওই ঘটনার দিন সকাল পর্যন্ত। এ বার ভাবো। তবে আমি ওকে ছাড়া অন্য কোনও মেয়েকে কোনওদিন ভালবাসিনি, আগামী দিনেও বাসব না। ওকেই ভালবেসে যাব। ও ছাড়া অন্য কোনও মেয়ের শরীর কোনওদিন ছুঁইনি, ছোঁবও না কোনওদিন। কিন্তু ও তো তা নয়। ওর প্রেমিক আছে। একটাকে জেনেছি, আরও কত আছে কে জানে? তোমার কথা মেনে আমি ফিরে এলে ও যে আবার সেই সব দিনে ফিরে যাবে না, সেই কাজগুলোই করবে না, সেটা তুমি বলতে পারো? এবারে তুমি ভাল করে ভেবে জানিয়ো, ছেলেমেয়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হলে ভাল, আমি মেনে নেব। তুমি তো বলেছো, তুমি আমার ভাল বন্ধু। ভেবে জানিয়ো, আমি তোমার কথা মেনে নেব। আমি শুধু এটুকু তোমাকে বলে দিচ্ছি, আমার জীবিত শরীর ও আর কোনও দিন স্পর্শ করতে পারবে না।’’ বলেই ফোনটা রেখে দিল।
কত মাস পরে গলাটা শুনছিল ঈশিতা! কিন্তু সৌমাভর শেষের দিকের কথাগুলো শুনতে শুনতেই জ্ঞান হারাল গত কালের মতো। জয়তী বুঝল, মানসিক ধাক্কা সামলাতে পারেনি। এও বুঝল, সৌমাভর এই পাহাড় ভাঙা অসম্ভব। ওর পক্ষে তো বটেই। অনেকক্ষণ পরে ঈশিতার জ্ঞান ফিরল। ধীর পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে জলে ভরা চোখ নিয়ে জয়তীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আমি সারাজীবন অপেক্ষা করব জয়তীদি। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব। তবু দেখো, একবার হলেও ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারব। সে যেদিনই হোক, আমি পারবই।’’ বলে নেমে গেল।
বেশ চমৎকার মেলোড্রামা। সুখপাঠ্য। একটু চিত্তরঞ্জন মাইতি গোছের ছাপ আছে যদিও। এই রে, আবার জ্ঞান হারাল নায়িকা।
কিন্তু একটি পুরুষ এত সহজে ভালবাসে? শারীরিক ভালবাসায় উন্মাদনা থাকলেও গভীর ভালবাসা জন্মাতে বহুদিন লাগে। সৌমাভর ভালবাসা, না অভিমান বোঝা দুষ্কর।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)