Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
(৪৭)

‘এসো গো নূতন জীবন’



পাশের ঘরটায় তখন জয়তীর কোলে মাথা রেখে নীরবে কেঁদে যাচ্ছে কুট্টি। ও জানে, ওদের আসল মা এবারে ওদের পাওয়ার জন্য সব কিছু করবে। কাল মামন এবং পিসির কাছে শুনেছে, মা কীভাবে আঙুল থেকে আসন্ন বিয়ের আঙটি খুলে নিজের ছোট বোনকে এক লহমায় অনাত্মীয় করে আপনি করে কথা বলে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু মামন? মায়ের কীর্তি দেখে বাবা ওদের নিয়ে চলে আসার পর থেকে আজ অবধি যে মামনের কোলে বুকে পিঠে ওরা এত বড় হয়েছে, তাকে ছেড়ে থাকতে পারবে ওরা? মামনই বা কি পারবে ওদের ছেড়ে থাকতে? কুট্টি জানে, ওরা নিজেরা যেমন পারবে না, মামনও না। এর মধ্যেই ঘরে ঢুকল সুভদ্রা। হাতে একটা ট্রেতে করে চায়ের ফ্লাস্ক আর বিস্কিট। সঙ্গে কয়েকটা কাপও। পাশের ঘরের বাঁদরিটাকেও তো দিতে হবে। তা ছাড়া ঈশিতাকেও দিতে হবে। ওর দিদি জামাইবাবু উঠলে তাঁদের জলখাবার দিতে হবে। সেটা অবশ্য বুড়ি বানাচ্ছে। ওদের সবার অবর্তমানে স্বামীহারা এই মেয়েটিই এই বাড়ির মালকিন শুধু না, ওদেরও গার্জিয়ান। জয়তী-সুভদ্রা প্রতিমাসে ওকে মোটা টাকা পাঠায়, ওর মেয়ের পড়াশোনার খরচ দেয়।  সৌমাভও এতদিন দিত। এই বাড়িতে বুড়ি যা ঠিক করবে, তাই হবে। এমনকি রান্নাও। বুড়িকে জলখাবার বানাতে বলে নিজে চা করেছে। সেটা নিয়েই এসেছে। তা ছাড়া এখন ওর অনেক কাজ। তার মধ্যেই ছেলের ঘরে ঢুকে দৃশ্যটা দেখে হেসে ফেলল সুভদ্রা। দামড়া ছেলে, পিসির কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে এখনও! কিন্তু ঈশিতা কোথায়? মেয়ের কাছে? জয়তীর দিকে তাকাতেই জয়তী ওকে ইশারায় ডেকে কানে কানে বলল কী হয়েছে। সুভদ্রা মুচকি হেসে ছেলেকে জয়তীর কোল থেকে টেনে নিজের কোলে নিল। তার পর বলল, ‘‘দিদিভাই, তুমি চা খাও। আমিও খাই। ও কান্না থামলে চা খাবে, না হলে জল খাবে।’’ মামনের কথা শুনে ওই অবস্থাতেও হেসে ফেলল কুট্টি। হাসল জয়তীও। তার পর মামনের কোলে মাথাটা আরও গুঁজে কোমর দুহাতে জোরে চেপে ধরে বলল, ‘‘হেসো না। তুমি সেই চার মাস বয়স থেকে আমাদের এত বড় করেছো। পিসিও করেছে। আর আজ...’’ গলাটা ধরে গেল কুট্টির। জয়তী ও সুভদ্রার চোখাচুখি হল। সুভদ্রা ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে সহজ গলায় বলল, ‘‘সাধে তোকে আমি দামড়া গাধা বলি? তোর বাপের দুটো বউ। একটা আমি ছোটবউ, অন্যটা বড়দি, বড়বউ। আমি তোদের মানুষ করেছি ঠিক, কিন্তু বড়দি তোদের জন্ম দিয়েছে, ভুলিস না সেটা। মামন এতদিন তোদের কাছে ছিল, এখন থেকে মা-ও তোদের কাছেই থাকবে। হ্যাঁ, সে ভুল-অন্যায় করেছিল একবার। কিন্তু তার জন্য কত শাস্তি একটা মানুষ পেতে পারে? এত বড় হয়েছিস, এত বুঝিস, আর এই সহজ সত্যগুলো বুঝিস না কেন সোনা? তাহলে এতদিন আমি, পিসি কি শেখালাম তোদের? তোদের বাবা কি শেখাল? বরং নিজেদের সহজ করে তুলতে শেখ, বাবার ডায়রির কথাগুলো মনে কর, পিসির কথাগুলো মনে কর। আমি কালও যে সব কথা বলেছি, ভাব। দেখবি, মনটা সাফ হয়ে গেছে। বরং এখন থেকে দুটো মা পাবি একসঙ্গে। তোর কোনও ক্ষতি হবে না, বরং আদরটা আরও বেশি পাবি, আরও বাঁদর হবি। আমার সেটাই চিন্তা। আর শোন, তোদের মামন কোথাও যাবে না তোদের ছেড়ে। মরলে মুখে আগুন..’’। কথাটা শেষ করতে পারল না। গায়ের জোরে কোমরটা দুহাতে চেপে ধরে সুভদ্রার পেটে কামড়ে দিল কুট্টি। ছোট থেকে এই ওর রোগ। রেগে গেলেই মামনকে কামড়ে দেয়! তবে কখনওই জোরে না, কিন্তু ওর রাগটা বুঝিয়ে দেয়। আর একটু বড় হয়ে থেকে দুহাতে চেপে ধরে শক্ত ভাবে। ছোটবেলায় একরকম ছিল, এখন বড় হওয়ায় ওর গায়ের জোরে চেপে ধরায় মামন, পিসির প্রাণ যায়। মুট্টিকেও অমন করে, কিন্তু সে পাল্টা কামড়ে, কেঁদে, খামচে রেহাই পায়। কিন্তু ওরা তো সেটা পারে না। বাবারে মারে করে করে উঠলে তবে ছাড়া পায়। সুভদ্রাও ‘ওরে বাবারে’ বলে ককিয়ে উঠতে ওকে ছেড়ে দিয়ে কোলে মাথা রেখেই রাগে গরগর করতে করতে কুট্টি বলল, ‘‘আর একদিন তুমি ওই কথা বোলো, দেখো কী করি!’’ বলেই পিসির দিকে তাকিয়ে একই রকম শাসানি দিয়ে বলল, ‘‘তোমাকেও ছাড়ব না। গলা টিপে মেরে জেলে চলে যাব, সেও ভাল।’’ মামনের কোলে মাথা গুঁজে থাকা কুট্টির চোখে পড়ল না সুভদ্রা আর জয়তীর জলভরা চোখে স্বস্তির হাসি।

সুভদ্রার ককিয়ে ওঠা আওয়াজে জোর না থাকলেও তা পাশের ঘরে ঈশিতার কানে গেছিল। ও কোনও বিপদ হয়েছে ভেবে উঠতে গিয়ে খেয়াল করল, মেয়ে সেই যে ওর বুকে মাথা গুঁজে নীরবে চোখের জল ফেলতে শুরু করেছে, তা তখনও থামেনি। উল্টে মেয়ের দুহাত যেন ওকে জড়িয়ে ধরেছে। আলতো করে হলেও সে ধরায় ছেড়ে না দেওয়ার একটা অনুভূতি, স্পর্শ যে আছে, সেটা টের পেল ঈশিতা। বুলি না ফোটা যে দুটো প্রাণ ওর থেকে গত ১৮ বছর হারিয়ে গিয়েছিল, আজ তাদের ছোঁয়া ওর ভিতরে হারানো মাতৃত্বকে যেন নতুন করে জাগাতে শুরু করেছে। ও মেয়েকে আরও জোরে বুকে টেনে চুমু খেতে খেতে বলল, ‘‘আজ সারাদিন আমার বুকের মধ্যে এভাবেই থাকবি, কেমন?’’

এই সময় ওকে আর মুট্টিকে চমকে দিয়ে সুভদ্রার খিলখিল হাসি ভেসে এল দরজা থেকে। ‘‘বড়দি, তুমি আর বাঁদরিটাকে মাথায় তুলো না। এটা বেশি কুঁড়ে, বেশি শয়তান। ওটাকে তুলে বাথরুমে পাঠাও আর ওঘরে চা আছে, এসো খাব। আজ অনেক কাজ। এই দুটো শয়তানকে আদর দিয়ে মাথায় তুলো না। এসো, এসো। অনেক প্ল্যান করতে হবে।’’ বলে চলে গেল।

বড়দি? আপনি নয়, একেবারে তুমি? কয়েক ঘন্টা আগে দেখা, বয়সে ওর থেকে সামান্য ছোট এই মেয়েটার কাছে এত বছর তো বটেই, কাল থেকেও প্রতি মুহূর্তে হেরে যাচ্ছে বুঝেও কষ্ট নয়, একটা স্বস্তি ঈশিতাকে ঘিরে ধরছে। বয়সে একদিনের বড় হলেও ওকে প্রণাম করত ঈশিতা। এ কে? এ তো সাক্ষাৎ দেবী! ওকে সরাসরি বড়দি বলে ডাকছে এবং তার মধ্যে কোনও কৃত্রিমতা নেই, সেটা স্পষ্ট। সুভদ্রা ঘর ছাড়ার পরে মুট্টিকে আরও একটু আদর করে, চুমু খেয়ে ফ্রেস হতে পাঠিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে ঈশিতা দেখল, খাটে ছেলে নেই। নিশ্চয়ই মামন আর পিসির তাড়া খেয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। ও সোজা গিয়ে খাটে উঠে এবার সুভদ্রাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। একটা কথাই ওর মুখ থেকে বেরোল, ‘‘তুমি সত্যিই দেবী, আমার তোমাকে প্রণাম করা উচিত, তবু যদি একটু শুদ্ধ হতে পারি। তুমি অনেক পবিত্র, শুদ্ধ। আমার কাছে আজ থেকে তুমিই কুট্টি-মুট্টির বাবার বড়বউ। তুমিই এই সংসারের লক্ষ্মী। বিশ্বাস কর, একটা শব্দও বাড়িয়ে বলছি না। তোমার সামনে দাঁড়ালে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে কত ছোট, কত নোংরা, কত পাপী, কত হীন মনে হচ্ছে! তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। আমি তোমার মধ্যে ওদের বাবার স্পর্শ পাব, তোমাকে ছুঁয়ে থাকাতেও পূণ্য, বিশ্বাস কর। তুমি....’’ কথাটা শেষ করতে না পেরে সুভদ্রার বুকের মধ্যে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ঈশিতা। টের পেল সুভদ্রার নরম হাত ওর মাথায় আদরের ছোঁয়া বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু পরে জয়তী গলা খাঁকড়ে বলল, ‘‘কাঁদবি পরে, চা খা আগে। চা জল হয়ে যাবে এর পরে।’’ ঈশিতা চোখ মুছে উঠে খাট থেকে নেমে জয়তীকে চমকে দিয়ে একটা প্রণাম করে বলল, ‘‘আজ থেকে তুমি আমার নিজের দিদিরও বেশি। সুভদ্রা যেমন ওদের মা, তুমি তেমনি ওদের পিসি। আজ থেকে তোমাকে দিদি বলো, ননদ বলো, মা বলো, সব রকম ভাবে দেখব। আমি খারাপ, কিন্তু তোমাদের দু’জনের কাছে থাকলে হয়তো একদিন ভাল হবো, কিছুটা হলেও।’’ জয়তী এমনিই এই ভাবে প্রণাম পেয়ে চমকে গেছিল। তার পরের কথাগুলো শুনে ওরও চোখে জল এল। ঈশিতাকে বুকে টেনে বলল, ‘‘সব ঠিক হবে দেখিস। নিজেকে শুদ্ধ রাখিস, আর এই মেয়েটাকে কোনওদিন কষ্ট দিস না, অপমান করিস না, দুঃখ দিস না। তা হলে কিন্তু আবার সব হারাবি।’’ জয়তীর কাঁধে মাথা রেখে ঈশিতা বোঝাল, ও সব মেনে চলবে।

চা খেতে খেতে জয়তী এবারে পরপর কয়েকটা প্রশ্ন করল। ঈশিতার চাকরির কি হবে? ঈশিতা জানাল, আজ ও শান্তিনিকেতনে ফিরে রেজিগনেশন পাঠিয়ে দেবে। লিখিত ভাবে এবং মেল করে। এখন ছুটি চলছে, ইউনিভার্সিটি খুললে সেটা অ্যাক্সেপ্ট হবে। তবে যেহেতু বেশি দিন চাকরি করেনি, মাত্র আট বছর, তাই শুধু পিএফের টাকা বাবদ সামান্য কিছু পাবে। ওই বাড়ি ও বিক্রি করে দেবে, সেটা থেকে ভালই টাকা পাবে। প্লাস নিজের কিছু সঞ্চয় আছে। কাঁকুরগাছির ফ্ল্যাটও বিক্রি করে দেবে। যেটুকু নিজের যা গয়নাগাঁটি, তা মেয়েকে আর ছেলেকে ভাগ করে দেবে। তাই আজ একবার কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও ও শান্তিনিকেতন যাবে। টাকাপয়সাও ওদের নামে ভাগ করে দেবে। ও বাড়ি থেকে জামাকাপড় কিছু না আনলেও দরকারি সব কাগজপত্র নিয়ে আসবে। বাকি আসবাবপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করবে। ওর প্ল্যান শুনে সুভদ্রাকে চোখ মেরে জয়তী হাসতে হাসতে বলল, ‘‘সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের নিশ্চিন্ত চাকরি ছাড়বি, বাড়ি-ফ্ল্যাট বেচে দিবি, গয়না দিয়ে দিবি, সঞ্চয় দিয়ে দিবি। তার পরে? তোকে যদি সুভদ্রা বা ছেলেমেয়ে ও বাড়িতে না রাখে?’’ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুভদ্রা ও জয়তীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় হাসিহাসি মুখে বলল, ‘’১৯ বছর আগে একবার সব পেয়েও নিজের অসভ্যতায়, নিজের লোভে, নিজের নোংরামিতে সব হারিয়েছিলাম। ১৮ বছর পরে অল্প হলেও কিছু পাওয়ার লোভে এই সব তুচ্ছ জিনিস সব ছাড়ছি। তাতেও যদি কিছু না পাই, তা হলে এ দেশে রেললাইন তো আছে!’’ সুভদ্রা, জয়তী দু’জনেই চমকে উঠল। ঈশিতার গলার এই কাঠিন্য, এই দৃঢ়তা জয়তীর অচেনা। আর সুভদ্রা? জয়তী-সৌমাভর শিক্ষা-সহবতে বড় হয়ে আজ বড় সরকারি পদে চাকরি করলেও নিজের সহজাত সংস্কার, বিশ্বাস নিয়ে ৩৬ বছরে পৌঁছনো সুভদ্রা চায়ের কাপ ফেলে রেখে ধড়মড় করে খাট থেকে নেমে ঈশিতাকে বুকে জড়িয়ে বলল, ‘‘আমাকে যদি সত্যিই নিজের বোন বলে মনে কর, দিদিভাইকে নিজের দিদি বলে মনে কর, আর কোনওদিন একথাটা বোলো না। ছেলেমেয়েরও কতবড় অমঙ্গল হবে, বোঝো না?’’ বলে কেঁদে ফেলল। চোখে জল নিয়ে ঈশিতা প্রবল আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘‘ভয় নেই তোমাদের। এত বছর ধরে এত অপমান, এত মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেও যখন মরিনি, তখন সহজে মরব না। তা ছাড়া, তোমরা দু’জন যার পাশে আছো, তার খারাপ হবে কি করে!’’ ওর বুকের মধ্যে চোখের জল মুছে সুভদ্রা বলল, ‘‘আজ এখন থেকে আমাকে আর তুমি বোলো না, তুই করেই বোলো। বড় দিদির কাছে তুমি শুনলে দূরের মানুষ মনে হয়।’’ ঈশিতা ওর মাথায় আর গালে চুমু খেয়ে বলল, ‘‘বলব। তোর কথা ফেলার সাহস বা ইচ্ছে কোনওটাই আমার নেই।’’
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 16-05-2025, 03:15 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)