14-05-2025, 03:31 AM
আগের পর্বটা পুরোটা দেওয়া হয় নি। আজ ওই পর্বটার বাকিটা দিলাম। পরের পর্ব কাল রাতে দিতে চেষ্টা করব।
সে দিন রাতে কেউ আর বিশেষ কিছু খেল না। সবাই মিলে চা আর বিস্কুট আর কয়েকটা মিষ্টি খেল। তার পর কুট্টি-মুট্টিকে জোর করেই শুতে পাঠাল জয়তী এবং সুভদ্রা। ঈশিতা অবাক হয়ে দেখল, মামন আর পিসির কোলে মাথা রেখে বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে গুডনাইট বলে চলে গেল। ঈশিতা যে ওখানে আছে, সেটা যেন দেখলই না! ওরা চলে গেলে জয়তী একটা কথাই বলল, ‘‘বড় কঠিন পাহাড়, ভাঙবে কি না জানি না। তবু দেখতে হবে।’’ দুচোখে জল নিয়ে ঈশিতার মনে পড়ল, সৌমাভর মনে অভিমানের পাহাড় টের পেয়েও তা ভাঙার চেষ্টা মন থেকে ও কোনওদিনই করেনি। কিন্তু এই দুটো পাহাড় ওকে যে করেই হোক ভাঙতে হবে। না হলে আবার নিজের কাছে নিজে তো হারবেই, প্রমাণ হয়ে যাবে, সেদিনের পর থেকে ওর দিকে তোলা সকলের সবক’টা অভিযোগই সত্যি। অর্থাৎ ও সৌমাভকে প্রথম থেকে ঠকিয়েছে শুধু রাহুলের সঙ্গে শোবে বলে এবং ওই রকম ভয়ঙ্কর শরীরি উৎসবে মেতে উঠবে বলেই। এবং ওর শরীরের খিদে এতটাই যে, সংসার-স্বামী-সন্তান সব হারানোর পরেও চল্লিশের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়েও নতুন করে অন্য একটা অপরিচিত লোকের সঙ্গে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবতেও ওর অসুবিধা হয়নি। আর পাঁচটা কামুক, ব্যাভিচারী, দেহসর্বস্ব মেয়ের সঙ্গে ওর কোনও ফারাকই থাকবে না। বড়জোর চাকরি, শিক্ষার দৌলতে ও নিজের তো বটেই চেনাজানা সকলের কাছেই পরিচিত হবে একটা শিক্ষিত হাইফাই বেশ্যা হিসেবে! যার ‘ক্লায়েন্ট’রা সমাজের তথাকথিত নিচু শ্রেনীর নয়, একটু উঁচু শ্রেনীর। তবে বেশ্যা পরিচয়ই সেঁটে যাবে সরাবরের মতো। নিজের ভিতরেই যেন কেঁপে উঠল ঈশিতা!
রাতের দিকে ঈশিতার হাত ধরে জয়তী বারান্দায় টেনে বসিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করল। অনেক পরামর্শ দিল। মাঝেমাঝে সুভদ্রাও কয়েকটা কথা বলল, যা বারবার ঈশিতাকে কাঁদাল। কুট্টি-মুট্টির প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, মা মা বলে ডাকা, পায়ে পায়ে বড় হওয়া, দুরন্তপনা, আদর-আব্দার, পড়তে বসে বা দুষ্টুমি করার জন্য সুভদ্রার হাতে মারধর খাওয়া— টুকরো টুকরো বহু ঘটনার ঝাঁপি খুলে বসল সুভদ্রা। মাঝেমাঝে ওকে ‘ওটা বল’, সেই যে সেটা, বল বল’ বলে মনে করিয়ে দিল জয়তী। আদো বুলিও না ফোটা দুটো কাদার তাল আজ কি করে ১৮ বছর বয়সে গানে-কবিতায়-ছবিতে হাজারখানেক লোককে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়ার মতো জায়গায় এসেছে, মা হিসেবে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখার সুযোগ হয়নি ঈশিতার। গর্ভে ধারণ না করলেও ওদের এই বেড়ে ওঠার পর্বটা সবটাই সুভদ্রার কোলেপিঠে। জয়তীও অনেক কিছুর সাক্ষী। শুধু তার মধ্যে কোথাও ঈশিতার নামগন্ধ নেই। একটা মায়ের কাছে এরচেয়ে বড় মানসিক যন্ত্রণার কিছু হয় না। এবং সবটাই যে ওর নিজেরই দোষে, ঈশিতার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেও তাকে পাত্তাই দিল না জয়তী। বলল, ‘‘তোর সঙ্গে যদি সৌমাভদার কলকাতায় ফেরার পর থেকে ওই রকম দূরত্ব তুই নিজে তৈরি না করতিস, শারিরীক এবং মানসিক ভাবে তুই আন্দামানের মতো জায়গায় নিজেকে রাখতে পারতিস, সৌমাভদার বুকে লেপ্টে থাকতে পারতিস, অন্তত ছেলেমেয়ে হওয়ার পরেও, এমনকী ঠিক করে কথা বলতিস, তার শরীর-মন নিয়ে প্রশ্ন করতিস, আদর করতিস, আব্দার করতিস, একসঙ্গে গান গাওয়ার জেদ করতিস, রাতে বুকে উঠে খুনসুটি করতিস— মানে আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রী যা করে থাকে, তা হলেও একরকম হত। তাতে তোর সংসারটাও বাঁচত, আর এগুলো তোরই সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থেকে যেত। তা হলে সেদিন তুই রাহুলকে দরজা থেকেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিতিস। ঘরে ঢুকতে দেওয়া তো দূর। কিন্তু তুই নিজেই সৌমাভদার থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলি, কারণ তোর নিজের মধ্যেই পাপ ছিল। এখন যাই সাফাই দে, তুই নিজেও জানিস, তোর মধ্যে রাহুলের প্রতি টানটা বেশি ছিল। সে কারণেই ওকে ঢুকতেও দিয়েছিলি, ওই সব করতেও বাধা দিসনি। যে কারণে এমনিই তোর আর সৌমাভদার সম্পর্কটা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছিল, তার উপর ওই একটা ঘটনা সম্পর্কটাকেই শেষ করে দিয়েছে। আজ তো লোকটাই চলে গেল! কিছুই করতে পারলি না। শেষবার যখন ছুঁলি, তখন শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। তার শরীরের উষ্ণতাটাই তোর আর কোনওদিন পাওয়া হবে না। এ সব অবান্তর হলেও আমি বলে ফেললাম। কারণ লোকটার ওই যন্ত্রণার একমাত্র সাক্ষী ছিলাম আমি। তুই ওই একটা দিনে যেমন সৌমাভদাকে বরাবরের মতো হারিয়ে ফেলেছিস, তেমনই কুট্টি-মুট্টিদের বড় হওয়ার ওই দিনগুলো, একটা মা হিসেবে দুটো শিশুকে জন্ম দেওয়ার পরে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে তাদের বড় করে তোলার ওই আনন্দগুলো তুই আর হাজার চেষ্টা করলেও কোনওদিন ফিরে পাবি না।’’ এর পরে একটু থেমে বলল, ‘‘ওদের ১৮ বছর হওয়ার দিন সৌমাভদা প্রচুর আয়োজন করেছিল, নিজে রান্নাও করেছিল। আজ মনে হয় জানিস, যে লোকটা ছেলেমেয়ের অন্নপ্রাশন, প্রথম জন্মদিন, পাঁচ বছরের জন্মদিন বা দশ বছরের জন্মদিনও পালন করেনি, সেই লোকটা ওইদিন অমন করেছিল কেন, তার একটা ব্যাখ্যা আমি আমার মতো করে করেছি। তোকে একবার বলেছিলাম মনে কর, সৌমাভদা গন্ধ পেত, অনেক কিছু আগাম আঁচ করত। বোধহয় বুঝেছিল, ওদের পরের জন্মদিনটা আর পালন করতে পারবে না। তাই ও রকম পাগলের মতো আয়োজন করেছিল। খাব আমরা ছ’টা প্রাণী, আয়োজন অন্তত পঞ্চাশ জনের! কেউ করে?
চোখের জল আর মোছার চেষ্টা করছে না ঈশিতা। তবে তার মধ্যেই নিজে নিজেকে বারবার বলে চলেছে, যে করেই হোক, ছেলে মেয়ের অভিমানের পাহাড় ওকে ভাঙতে হবেই। একবার সবার কাছে হেরেছে, আর ও হারবে না।
সে দিন রাতে কেউ আর বিশেষ কিছু খেল না। সবাই মিলে চা আর বিস্কুট আর কয়েকটা মিষ্টি খেল। তার পর কুট্টি-মুট্টিকে জোর করেই শুতে পাঠাল জয়তী এবং সুভদ্রা। ঈশিতা অবাক হয়ে দেখল, মামন আর পিসির কোলে মাথা রেখে বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে গুডনাইট বলে চলে গেল। ঈশিতা যে ওখানে আছে, সেটা যেন দেখলই না! ওরা চলে গেলে জয়তী একটা কথাই বলল, ‘‘বড় কঠিন পাহাড়, ভাঙবে কি না জানি না। তবু দেখতে হবে।’’ দুচোখে জল নিয়ে ঈশিতার মনে পড়ল, সৌমাভর মনে অভিমানের পাহাড় টের পেয়েও তা ভাঙার চেষ্টা মন থেকে ও কোনওদিনই করেনি। কিন্তু এই দুটো পাহাড় ওকে যে করেই হোক ভাঙতে হবে। না হলে আবার নিজের কাছে নিজে তো হারবেই, প্রমাণ হয়ে যাবে, সেদিনের পর থেকে ওর দিকে তোলা সকলের সবক’টা অভিযোগই সত্যি। অর্থাৎ ও সৌমাভকে প্রথম থেকে ঠকিয়েছে শুধু রাহুলের সঙ্গে শোবে বলে এবং ওই রকম ভয়ঙ্কর শরীরি উৎসবে মেতে উঠবে বলেই। এবং ওর শরীরের খিদে এতটাই যে, সংসার-স্বামী-সন্তান সব হারানোর পরেও চল্লিশের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়েও নতুন করে অন্য একটা অপরিচিত লোকের সঙ্গে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবতেও ওর অসুবিধা হয়নি। আর পাঁচটা কামুক, ব্যাভিচারী, দেহসর্বস্ব মেয়ের সঙ্গে ওর কোনও ফারাকই থাকবে না। বড়জোর চাকরি, শিক্ষার দৌলতে ও নিজের তো বটেই চেনাজানা সকলের কাছেই পরিচিত হবে একটা শিক্ষিত হাইফাই বেশ্যা হিসেবে! যার ‘ক্লায়েন্ট’রা সমাজের তথাকথিত নিচু শ্রেনীর নয়, একটু উঁচু শ্রেনীর। তবে বেশ্যা পরিচয়ই সেঁটে যাবে সরাবরের মতো। নিজের ভিতরেই যেন কেঁপে উঠল ঈশিতা!
রাতের দিকে ঈশিতার হাত ধরে জয়তী বারান্দায় টেনে বসিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করল। অনেক পরামর্শ দিল। মাঝেমাঝে সুভদ্রাও কয়েকটা কথা বলল, যা বারবার ঈশিতাকে কাঁদাল। কুট্টি-মুট্টির প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, মা মা বলে ডাকা, পায়ে পায়ে বড় হওয়া, দুরন্তপনা, আদর-আব্দার, পড়তে বসে বা দুষ্টুমি করার জন্য সুভদ্রার হাতে মারধর খাওয়া— টুকরো টুকরো বহু ঘটনার ঝাঁপি খুলে বসল সুভদ্রা। মাঝেমাঝে ওকে ‘ওটা বল’, সেই যে সেটা, বল বল’ বলে মনে করিয়ে দিল জয়তী। আদো বুলিও না ফোটা দুটো কাদার তাল আজ কি করে ১৮ বছর বয়সে গানে-কবিতায়-ছবিতে হাজারখানেক লোককে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়ার মতো জায়গায় এসেছে, মা হিসেবে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখার সুযোগ হয়নি ঈশিতার। গর্ভে ধারণ না করলেও ওদের এই বেড়ে ওঠার পর্বটা সবটাই সুভদ্রার কোলেপিঠে। জয়তীও অনেক কিছুর সাক্ষী। শুধু তার মধ্যে কোথাও ঈশিতার নামগন্ধ নেই। একটা মায়ের কাছে এরচেয়ে বড় মানসিক যন্ত্রণার কিছু হয় না। এবং সবটাই যে ওর নিজেরই দোষে, ঈশিতার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেও তাকে পাত্তাই দিল না জয়তী। বলল, ‘‘তোর সঙ্গে যদি সৌমাভদার কলকাতায় ফেরার পর থেকে ওই রকম দূরত্ব তুই নিজে তৈরি না করতিস, শারিরীক এবং মানসিক ভাবে তুই আন্দামানের মতো জায়গায় নিজেকে রাখতে পারতিস, সৌমাভদার বুকে লেপ্টে থাকতে পারতিস, অন্তত ছেলেমেয়ে হওয়ার পরেও, এমনকী ঠিক করে কথা বলতিস, তার শরীর-মন নিয়ে প্রশ্ন করতিস, আদর করতিস, আব্দার করতিস, একসঙ্গে গান গাওয়ার জেদ করতিস, রাতে বুকে উঠে খুনসুটি করতিস— মানে আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রী যা করে থাকে, তা হলেও একরকম হত। তাতে তোর সংসারটাও বাঁচত, আর এগুলো তোরই সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থেকে যেত। তা হলে সেদিন তুই রাহুলকে দরজা থেকেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিতিস। ঘরে ঢুকতে দেওয়া তো দূর। কিন্তু তুই নিজেই সৌমাভদার থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলি, কারণ তোর নিজের মধ্যেই পাপ ছিল। এখন যাই সাফাই দে, তুই নিজেও জানিস, তোর মধ্যে রাহুলের প্রতি টানটা বেশি ছিল। সে কারণেই ওকে ঢুকতেও দিয়েছিলি, ওই সব করতেও বাধা দিসনি। যে কারণে এমনিই তোর আর সৌমাভদার সম্পর্কটা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছিল, তার উপর ওই একটা ঘটনা সম্পর্কটাকেই শেষ করে দিয়েছে। আজ তো লোকটাই চলে গেল! কিছুই করতে পারলি না। শেষবার যখন ছুঁলি, তখন শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। তার শরীরের উষ্ণতাটাই তোর আর কোনওদিন পাওয়া হবে না। এ সব অবান্তর হলেও আমি বলে ফেললাম। কারণ লোকটার ওই যন্ত্রণার একমাত্র সাক্ষী ছিলাম আমি। তুই ওই একটা দিনে যেমন সৌমাভদাকে বরাবরের মতো হারিয়ে ফেলেছিস, তেমনই কুট্টি-মুট্টিদের বড় হওয়ার ওই দিনগুলো, একটা মা হিসেবে দুটো শিশুকে জন্ম দেওয়ার পরে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে তাদের বড় করে তোলার ওই আনন্দগুলো তুই আর হাজার চেষ্টা করলেও কোনওদিন ফিরে পাবি না।’’ এর পরে একটু থেমে বলল, ‘‘ওদের ১৮ বছর হওয়ার দিন সৌমাভদা প্রচুর আয়োজন করেছিল, নিজে রান্নাও করেছিল। আজ মনে হয় জানিস, যে লোকটা ছেলেমেয়ের অন্নপ্রাশন, প্রথম জন্মদিন, পাঁচ বছরের জন্মদিন বা দশ বছরের জন্মদিনও পালন করেনি, সেই লোকটা ওইদিন অমন করেছিল কেন, তার একটা ব্যাখ্যা আমি আমার মতো করে করেছি। তোকে একবার বলেছিলাম মনে কর, সৌমাভদা গন্ধ পেত, অনেক কিছু আগাম আঁচ করত। বোধহয় বুঝেছিল, ওদের পরের জন্মদিনটা আর পালন করতে পারবে না। তাই ও রকম পাগলের মতো আয়োজন করেছিল। খাব আমরা ছ’টা প্রাণী, আয়োজন অন্তত পঞ্চাশ জনের! কেউ করে?
চোখের জল আর মোছার চেষ্টা করছে না ঈশিতা। তবে তার মধ্যেই নিজে নিজেকে বারবার বলে চলেছে, যে করেই হোক, ছেলে মেয়ের অভিমানের পাহাড় ওকে ভাঙতে হবেই। একবার সবার কাছে হেরেছে, আর ও হারবে না।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)