Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2.75 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy নীরবতার শরীর
#1
Photo 
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে ধানমন্ডির আকাশে। পাখির ডানা ঝাপটা আর মৃদু ট্রাফিক সাউন্ড ছুঁয়ে যাচ্ছে ছয়তলার অ্যাপার্টমেন্ট। সাদিয়া ইসলাম মৌ বসে আছে তার বেডরুমের জানালার পাশে, একটা হাত দিয়ে চায়ের কাপ ধরেছে, আরেকটা হাত চিবুক ছুঁয়ে রেখেছে। এই ছোঁয়াতে কোনো উত্তাপ নেই—নিজের অস্তিত্ব টের পাওয়ার জন্য একটা সান্ত্বনা মাত্র। ৪৯ বছরের সাদিয়া ইসলাম মৌ, এক সময়ের বিখ্যাত মডেল, নৃত্যশিল্পী, নাট্যাভিনেত্রী। মঞ্চে যিনি নাচতেন এক ছায়ার মতো—নরম, মসৃণ, উত্তাল। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর চোখের চাহনি নিয়ে তখনকার তরুণেরা গল্প করত। অথচ আজ, আয়নার সামনে দাঁড়ালে তিনি নিজের চোখেই নিজেকে চিনতে পারেন না। স্বামী সন্তান নিয়ে অবশ্য সুখেই আছেন, তবে এক উৎসহীন দুঃখ আর একাকীত্ব প্রায়শই তাকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। দুই সন্তান, পুষ্পিতা আর পূর্ণ। একজন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া পড়ছে, আরেকজন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস। স্বামী জাহিদ হাসানও একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা। জনপ্রিয়তায় হালকা ভাঁটা পড়লেও জাহিদ এখনো পুরোদমে কাজ নিয়েই আছেন, শুটিংয়ে ছুটছেন সারা বছর। সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর অবশ্য মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কাজের ডাক আসে। কিন্তু তিনি যেতে চান না। একেতো বয়স হয়েছে, আর দুই এসব ফরমায়েশি কাজে এখন আর আগ্রহ পান না। তাও মাঝেমধ্যে শুধু সময় কাটানোর জন্য দু-একটা ফরমায়েশি উপস্থাপনা বা সাক্ষাৎকারের কাজ করেন অবশ্য। কিন্তু তাতে না থাকে আগ্রহ, না থাকে টাকা-জনপ্রিয়তার লোভ। জীবনের কাছে যেনো আর কিছুই চাওয়ার নেই। শুধু শূন্যতা আর একাকীত্ব।

সকাল বেলা জাহিদ হাসান বেরিয়ে যান কাজে, ফিরেন সন্ধ্যা ৭-৮টায়। পুস্পিতা আর পুণ্য দুজনেই দুপুরে চলে যায় ভার্সিটি। ফিরে সন্ধ্যায়। এসেই যার যার নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে নিজেদের জগত নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নাদিয়ার দিন কাটে ঘড়ির কাঁটা দেখে—“কখন দুপুর হবে, কখন বিকেল পার হবে, কখন রাত হবে, আর কখন সবাই বাসায় ফিরবে।” আজ দুপুরেও একাই খেতে হবে জেনেও ডাইনিং টেবিলে চারটা প্লেট রাখা ছিল। কাজের মেয়ে সুমি এসে বলেছে,

— “আপা, খেয়ে নেন।”
— “রাখো। পরে খাব।”
— “আপা, খালি খালি না খায়া থাকেন ক্যান? আপনার শরীর খারাপ হইব।”
— “শরীর তো খারাপই, সুমি । শুধু ওষুধেই বাঁচি।”

কথাটা বলেই থেমে যায় নাদিয়া। না, শরীর খারাপ নয়—শরীর ঠিক আছে। কিন্তু শরীরটা অনেকদিন ধরে স্পর্শ পায় না। সেই স্পর্শের অভাব তাঁর মনের অসুখে পরিণত হয়েছে।  একটা শরীর শুধু খাওয়ার, ঘুমের, আর চলাফেরার জন্য নয়। একটা শরীরেরও চাওয়া থাকে—মৃদু স্পর্শ, উত্তেজনার ঢেউ, আলতো করে কানের পাশে শ্বাস ফেলার মতো একধরনের দ্যোতনা। জাহিদ এখনো দেখতে সুদর্শন, হয়তো ২৫ বছর আগের সেই তরুনের মতো নয়, তবে ৫০ উর্ধ একজনের তুলনায় জাহিদ এখনো অনেক ভালো দেখতে। কিন্তু বিছানায়? শেষ কবে তাঁর স্বামী তাকে ছুঁয়েছে সাদিয়া ইসলাম মৌ-এরমনে নেই। শেষ কবে নাদিয়া চোখ বন্ধ করে কাউকে অনুভব করেছেন, ভুলে গেছে। বয়স, সংসার, সন্তানদেরর দায়িত্ব, সমাজের নিয়ম—সব কিছু যেনো গলার ফাঁস হয়ে আটকে আছে। হয়তো পনেরো বছর? না... দশ? কে জানে!


রাতের খাবার টেবিল বসে আছে চারজনেই। পুস্পিতা আর পুন্যের হাতে ফোন। খেতে খেতেও মোবাইলেই ডূবে থাকে ওরা। আর জাহিদ হাসান চুপচাপ খেয়ে যান। কোন কথা নেই, আলাপ নেই। শুধু সুনসান নিরবতা। এই নিরবতা সূচের মতো সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর বুকে বিঁধে। খাওয়া শেষ করে পুষ্পিতা আর পুণ্যে উঠে যার যার রুমে চলে যেতেই অনুভূতিহীন পাথরের জাহিদ হাসান জিজ্ঞেস করে, 

— “আজ দুপুরেও তুমি বাসায় ছিলে?”
— “সবসময়ই থাকি।”
— “না মানে, দারোয়ান বলল তুমি নাকি গত কয়েকদিন বাসার নিচেও নামো নাই?”
— “আমার নামার দরকার হয় না।”
— “হুম...দরকার না হলেও নামা তো উচিৎ। একটু এদিকসেদিক ঘুরলে তোমারই ভালো লাগবে”
— “আমার ভালো লাগবে না। আমার কিছুই ভালো লাগে না ইদানীং।
— “হূ
— একটা কথা জিজ্ঞেস করি, জাহিদ?”
— “হ্যাঁ?”
— “তুমি কি এখনো আমাকে একজন নারী হিসেবে দেখতে পাও?”
— “মানে?”
— “মানে এই যে এত বছর আমরা একসঙ্গে...আমার প্রতি যে টান ভালোবাসা তোমার আজ থেকে ১০ বছর আগেও ছিলো তাঁর কিছু কি এখন আছে?
— “একটা বয়সের পর সকল দম্পত্তি এসবে অবস্ত হয়ে যায় মৌ। জীবন তো চিরকাল একটা জায়গায় থেমে থাকে না।
— “তোমার আমার সম্পর্ক এখন শুধু অভ্যস্ততার? কোন স্পার্ক নেই? ভালোবাসা নেই?
— “আমি তা বলি নি।  
— “তাই যদি না হয় তবে, তুমি আমাকে ছুঁয়ো না কেনো? শেষ কবে একটু আদর করে গাঁয়ে হাত রেখেছিলে মনে আছে? শেষ কবে আমাকে নারী হিসেবে ভেবেছো খেয়াল আছে?”
জাহিদ খাওয়া থামিয়ে দিয়ে বিরক্ত চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,  
— “তুমি জানো কাজের চাপ কত... বয়সটাও তো কম হলো না...আর এখন তো শুধু তুমি আর আমি না। বাচ্চারা আছে। আমি তোমাকে কি আদর করবো! শেষ কবে নিজেকে একটু সময় দিয়েছি তাওতো আমার খেয়াল নেই। আমরা এখন শুধু পুরুষ আর নারী নই, আমরা এখন দায়িত্ববান মা-বাবাও। জীবনটাই এমন মৌ। সব কিছুই একসময় শুধু অভ্যস্ততা”
— “ক্যামেরার সামনে যখন প্রেমের নাটকে নায়িকা দিকে প্রেমের চাহনি দিয়ে দেখো! সেখানে এসব হিসাব করো। সেই নায়িকার জায়গায় কখনো আমায় দেখো?   আমার শরীরের ক্ষেত্রেই কি কেবল বয়সের হিসেব?”
— “মৌ, প্লিজ... সারাদিন কাজের পরে এসে ডিনারে এসব কথা ভালো লাগে না। তুমি নিজেও করো নাটক সিনেমা, আমিতো কখনো তোমাকে বাঁধা দেই নি। তুমি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ মৌ। মানছি আমার তাতে দায় আছে। স্বামী হিসাবে তোমাকে আমি পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি না। কিন্তু তাই বলে তো জীবন থামিয়ে রাখলে হবে না। বেঁচে থাকতে শিখ। ”

সাদিয়া ইসলাম মৌ হাসলেন, ঠোঁটে তিক্ততা। — “আমি এখনো জেগে আছি, জাহিদ। বেঁচে আছি। আমার শরীরটাও বেঁচে আছে।”

[Image: Downloads7f4a956fa0bc9626.md.jpeg]
[+] 8 users Like Orbachin's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
নীরবতার শরীর - by Orbachin - 11-05-2025, 12:34 AM
RE: নীরবতার শরীর - by Davit - 18-09-2025, 09:54 AM



Users browsing this thread: